হিয়ার মাঝে-লুকিয়ে,২৬,২৭

0
446

উপন্যাস : হিয়ার মাঝে-লুকিয়ে,২৬,২৭
কলমে: চন্দ্রা।
পর্ব:২৬

আমাদের মতো হতদরিদ্রদের বিলাসবহুল জীবন কল্পনা করা, গভীর নিদ্রায় মাঝপথে ভেঙে যাওয়া সুখ স্বপ্নের মতো।
সুখের স্বপ্ন দেখা নিষিদ্ধ আমাদের জন্য।

তাই? স্বপ্ন দেখতেন কি পয়সা লাগে অখিল দা?

তা লাগে না। তবে সুখের স্বপ্ন দেখতে সুস্থ একটা মন লাগে।আর দারিদ্র্যতার যাতাকলে পিষ্ট হয়ে মনটাই সুস্থ থাকে না। ধুঁকতে থাকে অবিরাম রাস্তার রোগা কুকুরদের মতো।
রেজিষ্ট্রার খাতাটা বন্ধ করে রেখে রিতি তাকায় অখিলেশের দিকে। মুখের উপর সবসময়ের জন্য মুমূর্ষু রোগীর মতো ভাব টা ধরে রাখে অখিলেশ।রিতির খুবই মায়া হয় লোকটার প্রতি।আজ সকল কর্মচারীদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয়েছে।অখিলেশকে দিতেই ঘটলো বিপত্তি। টাকাগুলো এখনো দুজনের মাঝামাঝি টেবিলে পরে আছে। অখিল নিতে পারবে না টাকাটা।বোনের কাজ করে বেতন নিতে দ্বিধা তার।তার উপর এখনো মাস পেরোয়নি।

তাহলে টাকাটা নেবেন না আপনি? কঠিন কন্ঠে বলল রিতি।

এত কড়া সুরে ভয় পাই আমি বোনটি। হাসি ফোটে অখিলেশের মুখে।রিতি নিজের কাঠিন্য ধরে রাখতে অক্ষম হয়ে পড়ে।

ঠিক আছে তাহলে নিতে হবে না টাকা।এই অপরাধে আপনাকে আমি শাস্তি দেবো কঠিন শাস্তি।মুখে ছদ্ম গাম্ভীর্য বজায় রেখে বলে রিতি।অখিলেশ এবার সত্যিই একটু ভীত হয়।
শাস্তি পরিমানটা কি বলা যাবে?

অবশ্যই।দু মাসের মধ্যে আমি বুটিক হাউস, তাঁত কলের কোথাও উঁকিও দিতে পারবো না।সব দায়িত্ব আপনার। আমার বিজনেস পার্টনার এর বকেয়া সাক্ষর গুলো ও সব আপনাকে এনে দিতে হবে।
আঁতকে উঠে অখিলেশ।সে এই সবের কিছুই ভালো জানে না।

কিন্তু লঘু দোষে গুরুদন্ড হয়ে যাবে না বোনটি?

কোথায়?আমি তো গুরু দোষে লঘু দন্ড দিলাম অখিলদা।অবাক হওয়ার ভান করে রিতি। অখিলেশ আর কথা বাড়ায় না।এই মেয়ের কোনো মতি গতি ঠিক নেই আবার কি বলে বসে।বাড়িতে গিয়ে একটা ব্যাবস্থা করতে হবে। বিরূপাক্ষ বা দাদাভাইয়ের হাতে পায়ে ধরে যদি কিছু করা যায়।

ভালো কথা অখিলদা,, আপনার গ্রামের বাড়ির ঠিকানাটা তো জানলাম না এখনো।বলতে পারেন,,,গিয়ে উঠবো না।

অখিলেশ হাসে মনে মনে।মহাশয়ার অভিমান হয়েছে একটু একটু।
একটা কাগজে নিজের ঠিকানাটা লিখে দিয়ে অফিসরুম থেকে বেরিয়ে আসে অখিলেশ।

রিতি কাগজটা চোখের সামনে মেলে ধরে রহস্যময় হাসি হেসে নিজের ব্যাগে ভরে রাখে।
******
তাঁতকলে অফিস রুম বলে বিশেষ কোনো জায়গা নেই তবে।কাজের জায়গার পাশে একটা সাদামাঠা কাঠের টেবিলের একপাশে একটা চেয়ার ও অন্যপাশে বড়ো একটা বেঞ্চ
পেতে রাখা।রিতি বসেছে চেয়ার পেতে।এখানে বেশি সময় থাকে না সে কারন অধিকাংশ পুরুষ ছেলেরা কাজ করে এখানে।যতই মালকিন হোক আর যাই হোক সব পুরুষই তো ধোঁয়া তুলসীপাতা নয়।তাদের তাকানোর ধরনও একরকম না।রিতির অস্বস্তি লাগে খুব বেশিক্ষণ থাকতে।

হন্ত দন্ত হয়ে ছুটে এলো ইকবাল। কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম শার্টের হাতায় মুছে রিতির দিকে তাকিয়ে সালাম দিলো অনুগত হয়ে।রিতি সৌজন্য হেসে উত্তর দেয় সালামে।বসতে ইশারা করে।

ইকবাল ভাই আপনাকে আমার একটা অনুরোধ রাখতে হবে।

আপা এটা কি বলেন? আপনি হুকুম দেন শুধু।

ছিঃ ছিঃ ইকবাল ভাই হুকুম করবো ক্যানো?এটা কোনো অফিসিয়াল কাজ নয়।

আপনি বলেন কি করতে হবে?

পূর্ণ বয়স্ক চারজন মানুষের দুই মাসের জন্যে চারজন মানুষের কতটুকু চাল,ডাল,তেল ইত্যাদি খরচ হতে পারে বলে মনে হয় আপনার?
ধাঁধায় পড়ে ইকবাল।রিতি মৃদু হেসে জটিলতা থেকে মুক্তি দেয় ইকবালকে। অবশেষে হিসাব নিকাশ করে বেশ অনেক গুলো টাকা ইকবালের হাতে দিয়ে নিজের ব্যাগ থেকে একটা ঠিকানা লিখিত কাগজ দিয়ে বলে,,তাহলে ইকবাল ভাই,,,ভোরে ভোরে বেরিয়ে যাবেন আল্লাহর নাম নিয়ে।ওবাড়ির কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবেন অখিলেশ বাবু পাঠিয়েছেন।আর নগদ টাকা গুলো উনার মায়ের হাতে দিয়ে আসবেন।

ইকবাল সাদরে গ্রহণ করে রিতির দেওয়া দ্বায়িত্ব।কর্মে সে প্রভুভক্তই বটে।

*****
এই এদিকে শুনে যা তো একটু।

একপিস কেকে সবে একটুকরো কামড় বসিয়েছে রিতি।বাহাতের ছোট্ট পিরিচে ডান হাতের কেক টুকু রেখে হেঁটে আসে বিরূপাক্ষের কাছে।
বাঁধ সাধে জয়া,,,
কি এত জরুরি দরকার ভাই?মেয়টা দুপুরে খায়নি কিছু।আগে খেয়ে নে তো রিতি।

একবেলা না খেলে কেউ মরে না বৌদিদি।কিচেনের দরজা থেকে বলে বিরূপাক্ষ।

বালাই সাঁট,,মরা,ছাড়া বলতে নেই কাল সন্ধ্যেয়।ভীত হয় জয়া।

বৌদিদি আমি আসছি তো। পেছন ঘুরে বলে রিতি।
বিরূপাক্ষের পিছু পিছু হেঁটে উপরে উঠে যায় রিতি। নিজের ঘড়ে গিয়েই মোবাইলে কিছু একটা দেখায় রিতিকে।ভ্রুকুঁচকে ফোনটা নিজের হাতে নিয়ে দেখতে থাকে রিতি।

এসব কি ?আর আমাকে ক্যানো দ্যাখাচ্ছ?

তোকেই তো দেখাবো।তোরই তো বেশি দরকার।প্রমাণ চাইছিলি না?দ্যাখ ভালো করে, বনলতার কাছে আমার যে আংটি টা আছে তার পিক। ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে বিরূপাক্ষ।
রিতির ললাট মসৃন হয়।ফোনটা বাড়িয়ে ধরে বিরূপাক্ষের দিকে।

তুই এতটা হিংসুটে রিতি ?আমি ভাবতেও পারিনি।কি ভেবেছিস এইসব ভুল ভাল স্টেপ নিয়ে,ভুলভাল কথা বলে ওকে আমার থেকে দূরে রাখবি?তা আমি হতে দেবো না।তোর চোখের সামনে দিয়ে ওকে সামাজিক মর্যাদায় ঘড়ে তুলবো।দেখি তুই কি করিস।কুটনী মেয়ে কোথাকার?তোর কুটনামী বের করছি আমি,,

এহেনো কটু বাক্যে রিতির হয়তো দুঃখ কষ্টের সীমা অতিক্রম করার কথা কিন্তু সঠিক ভাবটা বোঝা গেলো না।ভেতরে ভেতরে যাই হোক উপরে সে ফিক করে হেসে উঠলো।বিরূপাক্ষের ক্রোধের আগুনে ঘি ঢাললো সেই হাসি টুকু।

কথার কি ছিরি তোমার রূপদা,,,বিদেশ থেকে আসলে, কোথায় কথায় কথায় ইংরেজি শব্দের ঝড় বৃষ্টি তুলবে তা না করে এই সব ভাষা ব্যবহার করছো? এঁদো গাঁয়ের অশিক্ষিত বৌদের মতো?
বিরূপাক্ষ ক্ষেপে ওঠে রিতির প্রগলভতায়।রিতির কানের পাশ দিয়ে নিজের বাহাতটা গলিয়ে দিয়ে গলার পেছন দিকটা চেপে ধরে। অত্যধিক জোরে এবং হুট করে ধরাতে রিতির সারা মাথাটা ব্যাথায় দপ দপ করে ওঠে।এতটা কাছে দুজনের অবস্থান যে, একেকজনের নিঃশ্বাস পরছে একেকজনের মুখে।

তোর মিথ্যা সন্দেহের জন্য আমার বনলতা কেঁদেছে।আমাকে ভূল বুঝছে আর তুই বত্রিশ দাঁত বের করে হাসছিস?
এতক্ষণে রিতির চোখের কার্নিশে জল থৈ থৈ করে উঠলো।বিরূপাক্ষ ভড়কে গেলো তা দেখে।

যাকে চেনো না,জানো না তার চোখের জল না দেখেও তুমি এতো উতলা?এত উদ্বেগ তোমার মধ্যে।আর যে লাঞ্ছিত,ব্যাথিত হয়ে সারাক্ষণ, সারাদিন হৃদয়ে রক্ত ঝড়িয়ে চলেছে তার বাঁধ ভাঙা কষ্টে তোমার কিছুই যায় আসে না? তুমি তো পাষাণ নও।ব্যাথা,বেদনা, অনুভূতি তো সবই আছে।তবে বঞ্চিতের খাতায় শুধু আমার নামটাই লিখে রেখেছো ক্যানো?কই আমি তো তোমাকে অবাঞ্চিত ভেবে বঞ্চিত করিনি রূপ দা। ভালোবেসেছি নিঃস্বার্থ ভাবে। তুমি আমাকে না ছুঁয়েও ছুঁড়ে ফেলেছো আস্তাকুঁড়ের ঝঞ্জাল ভেবে। কিন্তু আমিতো আবার উঠে দাঁড়িয়ে নিজেকে রূপে গুণে সাজিয়ে তুলেছি শুধু তোমার জন্য। ঠাকুরের পায়ের প্রসাদী ফুলটার মতো মাথায় তুলে নিয়েছি।
বিরূপাক্ষ হতবাকের শেষ সীমানায়। চোখের রাগত দৃষ্টি স্বাভাবিক হয়ে আসে। হাতের শক্ত বাঁধন আলগা হয়।রিতি নিজের ডান হাতটা দিয়ে বিরূপাক্ষের সদ্য উঁকি মারা ছোট ছোট দাঁড়ি গজানো বাম গালে রাখে,,,

বিশ্বাস হয়না না? একবার চেয়ে দেখো না কি চাই তোমার?একমুহুর্ত ও ভাববো না। তোমার পায়ে অর্পণ করবো আমার তিলে তিলে অতি যত্নে গড়ে তোলা সবকিছু।
রিতির হাতের শীতল পরশ,সাথে ফ্যাসফেসে ভাঙা গলার অমন আকুল আবেদন বিরূপাক্ষকে দিশেহারা,বাকহারা করে ফেলে।সাবধানী হয়ে ওঠে ভীষণ।দ্রুত রিতির কাঁধে রাখা হাতটা টেনে সরিয়ে নিয়ে দু পা পিছিয়ে যায়।

রিতি অশ্রুসিক্ত নয়নে সেদিকে তাকিয়ে থাকে মিনিট খানেক।তার রূপদা অপরাধীর মতো মাথা নত করে রেখেছে।বিরূপাক্ষে অবাক করে দিয়ে ঘড় কাঁপিয়ে পাগলের মত হেসে ওঠে রিতি।হাসতে হাসতে লুটোপুটি খায় বিছানায়,,,
বিরূপাক্ষ বুঝে উঠতে পারলো না হচ্ছেটা কি?

হাসি থামিয়ে উঠে দাঁড়ায় রিতি বিরূপাক্ষের বিভ্রান্তি ভরা মুখের পানে চেয়ে বললো,,ক্যামন দিলাম বলো?আমার অভিনয়কে আবার সত্যি ভেবে প্রেমের সাগরে হাবুডুবু ডুবু হাবু খেও না যেনো।আর একটা কথা কি জানো,,,আমার এই মাখন নরম পেলব দেহে যে প্রথম প্রেমের আঁচড় কাটবে সে তুমি নও।এত বছর ধরে যে নিজের অঙ্গনে যে সৌন্দর্যের প্রাসাদ গড়েছি একনিষ্ঠতা দিয়ে ।সে প্রাসাদ আদরে আবদারে তছনছ করার মানুষ টা তুমি নও রূপদা।

কি বলতে চাস তুই ?পুনরায় কঠিন কন্ঠে বলে বিরূপাক্ষ।হঠাৎ করেই রাহুলের মুখটা ভেসে ওঠে চোখে।

আমি যে জায়গাটা চাই সেটা শুধু আমার নামটাই জপবে।অন্য নারীর বসবাস সেখানে থাকবে না।

তুই থামবি রিতি?

আরে এত রাগ করো ক্যানো? বর হও আর ভাই হও যাই হও না ক্যানো সবার আগে তুমি আমার বড়োমার ছেলে।যাকে নিয়ে জীবন কাটাবে তাকে একটু বাজিয়ে দেখবো না?বড়োমার কত আদরের ধন তুমি, তোমাকে যার হাতে দেওয়া হবে তার বৈশিষ্ট্য জানবো না?

তাই বলে তুই ওকে হার্ট করে কথা বলবি?রাগ কমে আসে বিরূপাক্ষের।

অত হার্ট ফার্ট হয় ক্যানো তোমার লতা পাতা।আর হ্যা আমাকে সমঝে চলো একটু!তাকেও বলো আমাকে যেনো একটু পাত্তা দিয়ে চলে।
কারন আমি গদি না ছাড়লে কারো সাধ্য নেই বড়োমা, জেঠুকে মানিয়ে এখানে বসবে।সে তোমার সুন্দর বনের হিংস্র বাঘিনী হোক আর চঞ্চলা চপলা , শান্ত শিষ্ট হরিণী হোক।

ঠোঁটের কোনে ভুবন মোহিনী হাসির ছটা কমে না রিতির। বিরূপাক্ষ আর কিছু বলতে সাহস পায়না।কারণ সবটা বিচার বিশ্লেষণ করলে এটাই দাঁড়ায়,রিতি স সন্মানে বিরূপাক্ষকে ডিভোর্স না দিলে মা,বাবা কিছুতেই মেনে নেবে না বনলতাকে।
এতদিনে যে খামখেয়ালি পনা ছিলো এখন তা কিছুতেই সম্ভব নয়।মা বাবাকে কষ্ট দেওয়া আর সম্ভব নয় তার পক্ষে।তাতে যদি দু,দুটো বিয়ে করেও যদি চিরকুমার থাকতে হয় তো থাকবে।
ফাজিল মেয়ে কোথাকার,,কোনো ভদ্র পরিবারের মেয়েদের ভাষা যে এত অশ্লীল হয় জানা ছিলো না। দাঁতে দাঁত পিষে বলে বিরূপাক্ষ
রিতি রং চড়িয়ে হাসে,,দেখোনি তো এখন দেখে নাও মন প্রান ভরে, চোখ ভরে।হাসতে হাসতে বেরিয়ে যায় রিতি। কিন্তু দরজার ওপাশে গিয়ে সেই হাসিটা কি আদৌ ধরে রাখতে পারে?হয়তো না।
বিরূপাক্ষ বিমূর্তের মতো কিছু ক্ষন তাকিয়ে রয় সেদিক পানে। হাতের ফোনটাতে ডায়াল করে বিশেষ নম্বরে।ওপাশে হ্যালো বলতেই বুকের ভেতর মুচড়ে ওঠে বিরূপাক্ষের ,,,

তুমি কেঁদেছো বনলতা,,,

*****
ছাদের রেলিং এ হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অখিলেশ। দৃষ্টি নিবদ্ধ আকাশপানে। ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে বেরোনো ধোঁয়ার কুণ্ডলী বাতাসে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে।আজ বিকেলে যখন বুটিক হাউস থেকে বাড়িতে ফিরছিলো তখন স্কুলের কাছা কাছি আসতেই মাঠ থেকে ডাক দেয় প্রদীপ।ব্যডমিন্টন খেলছিলো সমবয়সী ছেলেরা। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চোখ যায় মাঠের পেছন দিকের বড়ো পুকুর টার ঐ পাড়ে।বসত বাড়ি দেখা যায় কয়েক ঘড়।এদিকটা আগে দেখেনি অখিলেশ।সাজানো গোছানো ছিমছাম পরিবেশ। প্রদীপের কাছে জিজ্ঞেস করতেই ও বললো ওখানে নাকি দূর থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত যেসব স্কুল শিক্ষক আসেন তাঁরা ভাড়া করে থাকেন।জল,কল, বিদ্যুতের পাকা ব্যবস্থা রয়েছে। অখিলেশ দেখলো ছাদ থেকে কেউ একজন শুকনো কাপড় তুলছে। বাচ্চাদের পোশাকও আছে।ওর বুকের মধ্যিখানে দ্রিম দ্রিম আওয়াজ হলো। কিন্তু না স্পষ্ট ভাবে দেখার আগেই সেই স্যালোয়ার কামিজ পরিহিত মেয়েটা নেমে গেলো ছাদ থেকে। কিন্তু সন্দিহান করে রেখে গেলো অখিলেশ কে।তবে কি নিরুপমা তার এত কাছে এসে রয়েছে?
প্যান্টের পকেটে ফোনটা বাজতেই ঘোড় কাটে অখিলেশের।হাতের প্রায় পুড়ে যাওয়া সিগারেটের ফিল্টার টা নিচে ফেলে পা দিয়ে পিষে ফেলতে ফেলতে ফোনটা রিসিভ করলো।মা হয়তো টাকার জন্য ফোন করেছে কিন্তু ও কি বলবে?
কিছুক্ষণ চললো মা ছেলের কথোপকথন।বেশ কয়েক বছর পরে মায়ের কন্ঠে হাসির আভাস পেলো অখিলেশ। বুকটা ভরে উঠলো শান্তি সুখে‌।আপন, স্বজনদের আনন্দ বুঝি এভাবেই বুক জুড়ে খুশির প্রতিফলন ঘটায়?কি যে এই পোড় খাওয়া জীবনে আগুনের রং টুকুকে উদিত সূর্যের লালিমায় রূপান্তর করলো তার হাসির আড়ালের লুকানো মুখশ্রী মনে পরতেই বিষাদিত হয়ে উঠলো মনটা।অখিলেশের ভুরুর মধ্য ভাজ পরলো কয়েকটা।রাগকে ডেকে আনার চেষ্টা করেও বার বার ব্যর্থ হলো সে।মন ছেয়ে গেলো এক অপার মমতা আর কৃতজ্ঞতা বোধে।মেয়েটা আসলেই অনেক ভালো। শিশুর মতো নিস্কলুষ মন তার। কিন্তু এত ভালোর যে আজকাল কেউ মূল্য দিতে জানে না বোনটি।নাহলে বিরূপাক্ষের মতো বুদ্ধিমান ছেলে তোমায় কষ্ট দেয়? নিজের মনে আওড়ায় অখিলেশ।

চলবে,,,,

ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।
ভালো থাকবেন সবাই।

উপন্যাস :হিয়ার মাঝে-লুকিয়ে ছিলে।

কলমে: চন্দ্রা!

পর্ব:২৭

বিশিষ্ট অর্থপেডিক ড: আবুল কালাম আজাদ এর ব্যাক্তিগত চেম্বারে বসে আছে রিতি এবং বিরূপাক্ষ।সদ্য ব্যান্ডেজ খোলা হাতের এক্স-রে রিপোর্ট দেখছেন ড: সাহেব।

ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে অবশেষে তাকালেন সামনে টেবিলের অপর প্রান্তে বসা পেশেন্ট এবং তার সঙ্গিনীর দিকে।

মি:রায় চৌধুরী,, এভরিথিং ইজ ফাইন। দেওয়া ইজ নো রিজন টু ওয়্যারি।হাওএভার,ডু নট পুট স্পেশাল প্রেসার অন দ্যা হ্যান্ড নাউ।ভরাট গলায় কথা গুলো বলে থামলেন ড: আবুল কালাম আজাদ।

ওকে ড:,থ্যাঙ্কইউ ড:।কথাটা বলেই একটু ঝুঁকে করমর্দন করতে হাত বাড়ায় বিরূপাক্ষ তখই ঘটে বিপত্তি,মুখ দিয়ে উ করে শব্দ করে আবার হাতটা গুটিয়ে নেয়। ততক্ষণে বিরূপাক্ষের হাতটা ধরে নিয়েছে রিতি,,,একটু সাবধানে,,কি যে করো না তুমি? উদ্বিগ্ন রিতি।
ড:এর গম্ভীর মুখে একটু হাসি খেলে যায়,,,
ধীরে ইয়াং ম্যান ধীরে।এত অস্থির হলে চলে?এতবড়ো একটা দূর্ঘটনা থেকে উঠলো হাতটা।
বিরূপাক্ষ নিজের নির্বুদ্ধিতায় নিজেই লজ্জিত।
*****
ফোনে রিং টোন বাজতেই ড: এর চেম্বার থেকে বেরিয়ে পরেছে বিরূপাক্ষ।স্ক্রিনের উপর চেনা নম্বরটা দেখেই ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসির রেখা মিললো।

হ্যালো,,বনলতা!

হ্যা,, আপনার হাতের ব্যান্ডেজ খোলা হয়েছে?কি বললেন ডক্টর?

হ্যা খুলেছি কিন্তু তুমি কি করে জানলে?

আপনার সঙ্গের মেয়েটা বুঝি আপনার স্ত্রী?মলিন শুনায় বনলতার কন্ঠ।সে মলিনতা ছুঁয়ে যায় বিরূপাক্ষ কে। কিন্তু অবাক হয় অত্যধিক।

তুমি দেখেছো আমাদের?

আমার কথার উত্তর দিন প্লিজ!

হ্যা ওই তো রিতি। কিন্তু তুমি কোথায় বলোতো?যদি এখানেই থাকো তো একবার দেখা করো প্লিজ।অনুনয় করে বিরূপাক্ষ।

আমি তো আপনার ছায়ার মতো পাশে আছি।সবই দেখি,দেখছি আর দেখবোও আজীবন।আমি সামনে এলে আপনার স্ত্রী অভিমান করবে না?অশান্তি হবে না আপনার?

কি বলবে ও? তুমিও আমার স্ত্রী।সে তো মেনে নিয়েছে।

রাজা কি না আপনি?রাজার তো আবার রাণীর অভাব পরে না। বিরূপাক্ষ স্পষ্ট টের পায় বনলতার অভিমান।মুচকি হেসে বলে,,,
রাণী তো আছে কত শত, কিন্তু আমার সুয়োরাণী যে বনলতা।তার তুলনা কি কারো সাথে চলে? একবার দেখা করো না?

না গো।এখনি নয়।সময় হলেই হবে। এখন তাহলে রাখছি।রাতে কথা হবে।বিরূপাক্ষের মুখটা মলিন হয় নিমিষেই ওপ্রান্তে বনলতা বলে ওঠে,,অমন মলিনমুখো বাঁদর রাজা কিন্তু বনলতার পছন্দ নয়।হাসির শব্দ তুলে লাইন কাটে বনলতা। বিরূপাক্ষ ঝটকা খেয়ে এদিক ওদিক চোখ বুলায়।তেমন কেউ নেই।কথার তালে হেঁটে হেঁটে ওয়াশ রুমের দিকে চলে এসেছে।রিতির দেখা মেলে দরজায়।সে অনেক আগেই বেরিয়ে এসেছিলো।

তুই এখানে?কি করছিস এত সময় ধরে?

ওয়াশ রুমে মানুষ কি কি করে রূপ দা।চারটে অপশন বলো আমি একটাতে টিক চিহ্ন দেবো।
বিরূপাক্ষ ভ্রু কুঁচকে তাকায়।রিতি মুখ চেপে হেসে বলে,, আচ্ছা চলো পরে বলো! বিরক্ত মুখে উল্টো হাঁটে বিরূপাক্ষ রিতি চলে পেছন পেছন।এক ফাঁকে বিরূপাক্ষের হাতের হালকা জিনিসগুলো নিয়ে নেয় নিজের হাতে।ড:যে মেডিসিন গুলো চেঞ্জ করে দিয়েছিলেন সেগুলো কিনে নেয় হাসপাতালেরই সামনের ফার্মেসী থেকে।

****
আকাশে মেঘের ফাঁকে ফাঁকে একটু আধটু রোদ।ঘড়ের সামনে পরিস্কার ঝকঝকে একটুকরো ফাঁকা উঠোনে ছোট্ট মোড়ায় বসে আছে ছোট্ট অদ্রিকা।সবে মা এসে স্নান করিয়ে এখানে বসিয়ে দিয়ে গিয়েছেন।একহাতে বাটিতে নুডলস্ আর অন্য হাতে কাঁটা চামচ দিয়ে নুডলস্ উঠিয়ে মুখে পুরছে অদ্রিকা।আনাড়ি হাতে সরসরে নুডলস্ উঠতেও চায়না। কিন্তু নিজের হাতে খেতেই হবে তার,ঘড়ে দিদা আছেন, কিন্তু তাঁর হাতে খাবে না।আর মায়ের তো স্কুলের টিফিন টাইম শেষ হয়ে যাবে।অগত্যা মেয়ের হাতে বাটি ধরিয়ে দিয়ে নিজে দুটো খেয়ে নিচ্ছে নিরুপমা।
ছোট্ট অদ্রিকা ডাকলো উচ্চস্বরে,,,দিদা আমার জলের পট দাও।একটু পরেই ঘড় থেকে বেরিয়ে আসেন নিরুপমার মা অনিতা দেবী।ছ-সাত বছরের মেয়ে অদ্রিকা, কিন্তু কথায় কোথাও কোনো জড়তা বা অপরিপক্বতা নেই।স্পষ্ট ভাবে কথা বলে সে,, নতুন জায়গায় এসেও কোনো অসুবিধা বা সংকোচ হয়নি মায়ের মতোই।অসুবিধায় পরেছেন নিরুর মা অনিতা দেবী। শহুরে বিলাসবহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত হলে যা হয় আরকি।

কি ব্যাপার দিদো খাচ্ছো না ক্যানো?আমি খাইয়ে দেই?
মুখের মধ্যে চামচ পুরে ডানে বামে মাথা নাড়ে অদ্রিকা।অনিতা দেবী পাশের মোড়ায় বসে মিষ্টি হেসে হাত রাখেন অদ্রিকার পিঠে।এরই মধ্যে খাওয়া দাওয়া সেরে বেরিয়ে আসে নিরুপমা,,
কিরে মা,,তোকে বললাম আরেকটু ভাত নিতে।তা নিসনি তাইনা?

সময় নেই মা রাতে খাবো অনেকক্ষণ বসে।আজ আসতে একটু দেরী হবে মা।মনিকে নিয়ে আশে পাশে হেঁটে এসো তুমি।হেসে মায়ের সাথে কথা বলে মেয়ের পাশ ঘেঁষে বসে মাথায় একটা চুমু খায়।তার পর এগিয়ে যায় স্কুলের দিকেই।টিফিন শেষের ঘন্টাটা বাজছে।
অনিতা দেবী মেয়ের গন্তব্যের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস মোচন করেন।কি শৌখিন মেয়ে ক্যামন হয়ে গেছে,,আরো কত কি দেখতে হবে, ভগবান।

দিদা তোমার কি মন খারাপ করছে?

কই নাতো দিদো!ক্যানো মন খারাপ করবে বলো? তুমি আছো তো আমার কাছে।

কিন্তু তুমি ও তো আমার কাছে আছো কিন্তু মায়ের জন্য মন খারাপ করছে ক্যানো বলো?মলিন মুখে বললো অদ্রিকা।
অনিতা দেবী দাঁড়িয়ে কোলে তুলে নেয় তাঁকে তারপর ছোট্ট উঠোনে হেঁটে হেঁটে গল্প করে খাইয়ে দেয় পুরো খাবার টুকু।এখন ঘুমাবে অদ্রিকা দুপুরে ঘুমানো অভ্যেস তার। বিকালে যাবে ঘুরতে।

*****”
মূল শহরেরই একটা অভিজাত রেস্টুরেন্টের সামনে রিকশা থেকে নামলো দুজন।দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলেছে ,খিদেয় পেট গুড়গুড় করছে বিরূপাক্ষের। অতিরিক্ত খিদে সে সইতে পারে না কখনোই।রিতির অবশ্য হোটেল-রেস্টুরেন্টে খেতে রুচি হয়না তা সে যতই অভিজাত হোক আর পরিচ্ছন্নতার পরিচয় বহন করুক না ক্যানো। তবুও নিমরাজি হয়ে বিরূপাক্ষের মতে মত দিয়েছে।মানুষটা পেটে খিদে নিয়ে ঘুরবে তাতো হয়না।নিজে অভুক্ত থাকার অভ্যেস আছে বলে অন্যকে অভুক্ত রাখতে হবে?

ভেতরে বসতেই মেন্যু কার্ড দিলো রিতির হাতে।রিতি খানিক্ষণ অসহায়ের মতো চেয়ে থেকে বললো,,আমি তো মাটন খাইনা। তুমিই অর্ডার দাও তোমার পছন্দ মতো। বিরূপাক্ষ তেমন প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে নিজের জন্যই অর্ডার করে দু তিনটে আইটেম।এক হোটেল বয়কে পাশে ডেকে নিয়ে কি যেনো বললো কানে কানে তারপর এসে বসলো খাবারের সামনে।
পাঁচ সাত মিনিট অতিক্রম করছে কিন্তু খাবারে হাত দিলো না বিরূপাক্ষ,,,

কি হলো খেয়ে নাও! বাড়িতে যেতে এমনিতেই রাত হবে অনেক।মিন মিন করে বললো রিতি।

বিরূপাক্ষ চোখ বড়ো করে তাকায় রিতির কাঁচুমাচু মুখের দিকে,মনে মনে হাসি পায় তার।বাড়িতে বৌদিদি বলেছিল রিতি নাকি হোটেলের ভাত মাংস খেতে চায় না।বেয়ারা দুটো প্লেট রাখলো রিতির সামনে।একটাতে বড়ো একটুকরো কেক অন্যটায় স্যান্ডউইচ,রোল। ফালুদার গ্লাসটা আগেই রেখে গিয়েছিলো।

কি হলো এবার খাওয়া শুরু কর,বাড়িতে যেতে রাত হবে তো।
রিতি কি যেনো ভাবছে খাবারের দিকে চেয়ে।

এত ভাবিস না।ওতে মাংসের ছোঁয়া টোয়া নেই।সব ভেজিটেবল স্যান্ডুইজ,রোল।

রিতির হঠাৎ করে মনের মধ্যে ময়ূরী নাচে পেখম মেলে।রূপদা তার জন্য কত ভাবে? কিন্তু খাবে কি করে ভেতরে যদি অতবড়ো খুশির ময়ূর টা জায়গা দখল করে নেয় অন্য কিছু সেখানে ধরে?
কাঁচ ভাঙার আওয়াজ হতেই রিতির ভাবনাচ্ছেদ হলো।আশে পাশের দুই,চার টেবিলে কয়েকজন মানুষ তাকিয়ে আছে বিরূপাক্ষের দিকে।বাহাতে নিজের শার্টের জল ঝাড়ছে বিরূপাক্ষ।রিতি উঠে ওর পাশে ছুটে যায়।

কি হলো বলো?ব্যাথা পেয়েছো তুমি?রিতি অস্থির।
বিরূপাক্ষ সেদিকে তাকিয়ে বলে কোমল কন্ঠে,ডান হাতে এখনো শক্তি পাচ্ছি না রে।

রিতি থমকে যায় বিরূপাক্ষের অসহায় মুখ ভঙ্গি দেখে। নিজের প্রতি প্রচন্ড রাগ হয়।ও কি করে ভুলে বসলো রূপদাকে বড়ো মা ভাত মেখে দেয়। শুধু বাঁহাত দিয়ে কি করে ঝোলের সাথে ভাত জরিয়ে খাবে রূপদা।বেয়ারা কাঁচ পরিষ্কার করে টেবিলের জল মুছে পরিষ্কার করে দিয়ে গিয়েছে।রিতি ভাতের মধ্যে মাটন দিয়ে হাত দিয়ে নেড়ে চেড়ে মিশিয়ে দেয় রূপের অনুমতি ছাড়াই।পাশের টেবিলের একজোড়া যুবক যুবতীর মধ্য থেকে মেয়েটা হাসছে মুখ টিপে তাচ্ছ্যল্যের হাসি।চামচ আর কাটাচামচের যুগে মানুষ কিভাবে হাত দিয়ে ভাত মেখে খায়?এহেনো ছোট, গর্হিত কর্ম যেনো সে জীবনেও দেখেনি।রিতির চোখ এড়ায়নি ব্যপারটা কারন একটু আগেই ঐ মেয়েটা নিজের বয়ফ্রেন্ড কে পাশে বসিয়ে বিরূপাক্ষকে যেনো চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিলো।রিতি ভাত মাখা শেষ করে বিরূপাক্ষের হাতে চামচ ধরিয়ে দিয়ে বলে,, এবার ধীরে সুস্থে খাওতো।সত্যিই দেরী হয়ে যাচ্ছে।
বেসিন থেকে হাত ধুয়ে এসে সরাসরি দাঁড়ায় ঐ টেবিলের সামনেই।ছেলে মেয়ে দুটো একটু ভরকে যায় রিতিকে তাদের পাশে দাঁড়াতে দেখে। মেয়েটার দিকে ঝুঁকে বললো রিতি,, নিজের আনন্দ প্রকাশ এবং অন্যকে আনন্দ দেওয়ার জন্য হাসিটা ব্যবহার করবেন শুধু।অন্যথায় বিপদে পরে যাবেন খুব।আর এই যে রোমিও,,জুলিয়েট কিন্তু হলুদিয়া পাখি হয়ে উড়ে গিয়ে অন্য ডালে বাসা বাঁধবে।ডানা গুলো একটু ছেটে ছুটে নেবেন মাঝে মধ্যে।

এ ইউ? তর্জনী উঁচিয়ে শাসায় মেয়েটা রিতি দ্বিগুণ গতিতে আঙুল উঁচু করে,,,

এ তুই,,পটি করার পর ঐটাও কি চামচ দিয়ে করিস?রিতি এসে খাওয়ায় মন দেয়।

অপমানে মেয়েটার ফর্সা মুখটা লাল হয়ে যায় আর রোমিও ব্যাটা হা করে বসে থেকে বুঝার চেষ্টা করে আসলে হলুদিয়া পাখি দেখতে ক্যামন।আর তার ডানা ইবা কতটা লম্বা?
বিরূপাক্ষ হাসে ঠোঁট কামড়ে। মেয়েটা পারেও বটে।কাউকে ছাড় দেয় না।

স্কুল ছুটির পরে বাজারে গিয়েছিলো নিরুপমা। শীতের শাকসবজি তে ভরপুর বাজার।গ্রামে তো আর অভাব নেই কিছুর।
এখানে যদিও কোন মহিলা বা মেয়েরা হাটে বাজারে যায়না কিন্তু নিরুর উপায় নেই।কাকেই বা বলবে। চৌধুরী সাহেব বলেছিলেন প্রয়োজনে যেনো তার বাড়ির কাজের ছেলেটাকে ডেকে নেয় কিন্তু ওতে নিরুর সংকোচ হয়। এদিকে আসার জন্য কোনো যানবাহন না পেয়ে দুহাতে দুটো ব্যাগ নিয়ে হেঁটে চলেছে নিরু।ব্যাগের ওজন বেশি না হলেও পা দুটো যেনো ভেঙে আসছে। হাঁটার অভ্যাস নেই কি না?চলতে চলতে হঠাৎ থমকে দাঁড়ায় নিরু।নদীর দিকে যে পথটা বাঁক নিয়েছে সে পথ থেকেই উঠে আসলো একটা ছেলে। পেছনের দিকে দেখে নিরু।নেভী ব্লু ফুল হাতা শার্ট আর কালো প্যান্ট পরিহিত ব্যক্তির ঝাঁকড়া চুল গুলো পেছনে একটু লম্বা। চলন ভঙ্গি খুব চেনা চেনা লাগছে নিরুর সাথে বুকের ভেতর এক নিরোধ উত্তেজনা।কে ঐ ব্যাক্তি মনের মধ্যে প্রশ্নের খই ফুটছে। সামনের মানুষটা আচমকা দাঁড়িয়ে ঘুরে তাকায়।নিরুর বুকের মধ্যে হাজারো রকমের অনুভূতির সংমিশ্রণে এক অসহ্যকর অনুভূতির দামামা বাজে।যাকে ঘিরে হৃদয়ের আঙিনায় সুগন্ধি ফুলের বৃক্ষ ভরে থাকে ষড় ঋতু জুড়ে,কান্নারা সব অশ্রু ঝরায় তার নামে,বেদনা গুলো আঁধারে ঢাকে যার চোখের তারার কল্পনাতে সেই মুখটা এতদিন বাদে যদি আচমকা সামনে এসে পরে তো কেউ কি পারে সুস্থ্য স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে?ধীর পায়ে নিরুপমার কাছে এগিয়ে এসেছে অখিলেশ সেই অতিপরিচিত চেনা গন্ধ,যে গন্ধে মাতাল হয়ে একসময় দুজন মিশে যেতো দুজনাতে।

অনেকখানি শুকিয়ে গিয়েছো নিরু!একধ্যানে চেয়ে থেকে বললো অখিলেশ।

নিরু নিজেকে স্বাভাবিক করতে তৎপর হয়ে ওঠে,,,
তুমিও তো।চুলে পাক ধরেছে এত তাড়াতাড়ি? ঠোঁটের কোনে জোর করে হাসি ঝুলায় নিরু।

বয়স নেহায়েৎ কম হয়নি।

তবুও চুল পাকার বয়সটা হয়নি তো।

চুল পাকতে বয়স লাগে না নিরু,,,যাক সে কথা ক্যামন আছো বলো?

তারপর চলতে থাকে দুজনার অনবরত কথোপকথন।পা থেমে নেই। মুখের সাথে পা চলছে সমানতালে।নিরুর হাতের ব্যাগ দুটো অখিলেশের হাতে।পেছন থেকে দেখলে মনে হবে।স্ত্রী অনেক দিন বাপের বাড়িতে ছিলো তাই স্বামী তাকে নিয়ে বাড়িতে ফিরছে।কেউ বুঝতে পারবে না তাদের মুখের ভাষা যাই থাক,ভেতরে ভেতরে চলছে এক কঠিন দ্ন্দ্ব।যাই হয়ে যাক মনের আকুলতা পাশের মানুষটির সামনে উন্মোচন করা যাবে না,কিছুতেই না। দু’জনের মধ্যে কোনো সংকোচ,দ্বিধা কিছুই নেই।এ যেনো কতদিনের অভ্যাস।

*****
বাড়িতে যাওয়ার জন্য বাসস্ট্যান্ড এসে যখন পৌঁছোলো রিতি বিরূপাক্ষ তখন ঘড়িতে ছয়টার কাটা ছুঁই ছুঁই।ফিরতে রাত দশটা বাজবে। শপিং মলের কাছে কি একটা জরুরী কাজ ছিলো বিরূপাক্ষের। রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে সেখানেই গিয়েছিলো দু’জনে।তাই এত দেরী।কাউন্টারে টিকিট নেওয়ার জন্য সবে ঢুকেছে বিরূপাক্ষ।রিতির ফোনে কল আসে।ওপাশের কথাগুলো শুনতে শুনতে রিতির নাকের পাটা ফুলে ওঠে রাগে। অজানা ভয় চোখের মাঝে ঢেউ খেলে।কলটা কেটে ছুটে যায় বিরূপাক্ষের কাছে,,

রূপদা একটু শুনবে? নির্লিপ্ত ভাবে বলে রিতি।

বিরূপাক্ষ এগিয়ে আসতেই বলে আমতা আমতা করে,,
আমার না শরীরটা ক্যামন যেনো লাগছে।এত জার্নি নিতে পারবো না মনে হয়।

মানে কি রিতি?কি বলতে চাইছিস? হালকা ধমক দেয় বিরূপাক্ষ।

আমরা আজ না যাই প্লিজ!

না যাই মানে কি?থাকবি কোথায় রাতে?তোর কেউ আছে এদিকে?রিতির অনুনয়ে কোমল হয় বিরূপাক্ষ।

চলোনা আবাসিক হোটেলে একটা রাত থাকা যায় কি না?

পুনরায় উল্টো হাঁটে বিরূপাক্ষ।মনে মনে বিরক্তি প্রকাশ করে নিজস্ব সীমার কুট কথা গুলো উচ্চারণ করে মায়ের উদ্দেশ্যে।একা একা এসে কাজ সেরে যেত অনায়াসেই কিন্তু মায়ের উদ্ভট চিন্তা ধারা বলে কথা,,,সাজিয়ে গুছিয়ে পাঠিয়ে দিলো এই শয়তান মেয়েটাকে।আপদ কোথাকার? এসেছে অব্দি জ্বালিয়ে মারছে একটা কিছু নিয়ে।

এত গালাগালি করোনা রূপদা।পেট ভরে গেলে রাতে আর খাওয়া হবে না আমার।

বিরূপাক্ষ বিচলিত হয়ে পরে,,হাড় বজ্জাতটা আবার মনের কথাও শুনতে পারে নাকি?

কথা কম বলে পা চালা। বিরূপাক্ষ পকেক থেকে মোবাইল ফোনটা বের করে কাউকে বললো কোনো ভালো হোটেলের ব্যবস্থা করতে‌।রিতি ও পাশের ব্যক্তির নামটা শুনে বুঝে নিলো বিকাশে শপিং মলে যে ছেলেটার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো সেই ছেলেটাই।মনে মনে প্রার্থনা করলো যাতে সুস্থ মতো একটা ব্যবস্থা হয়ে যায়।তাহলেই শান্তি ও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে একসাথে।

বিকেলের মোলায়েম আলোয় আশেপাশে একটু ঘুরে ছোট্ট অদ্রিকার হাত ধরে সবে বারান্দায় উঠেছেন অনিতা দেবী।একটা প্লাস্টিকের চেয়ার পেতে বসে ছিলো অখিলেশ, দাঁড়িয়ে আমতা আমতা করে নমস্কার করলো অনিতা দেবীকে।
প্রত্যুত্তরে অনিতা দেবীর অবাক এবং বিস্ময়ী দৃষ্টি শুধু বিচরণ করলো অখিলেশের শান্ত অথচ রুক্ষ মুখমন্ডলে।সহসা কোনো জবাব দিতে পারলেন না। অখিলেশ খানিকটা চমকে ওঠে আগে দেখা অনিতা দেবী আর এই অনিতা দেবীর মধ্যকার পার্থক্য দেখে। ললাটের মসৃন ফর্সা ত্বকে এখন আর রবি রঙা সিঁদুরের টিপটা জল জল করছে না।চেহারায় বয়সের ছাপটা নিয়মের তুলনায় অনেক বেশি। নিরুপমা এসে জলের গ্লাস সামনে ধরতেই অখিলেশ লুফে নেয়।যেনো এ সুযোগেই ছিলো এতক্ষণ।ঢকঢক করে কয়েক ঢোক গিলে নিয়ে গ্লাসটা ফেরত দিয়ে বলে,,,
আমি তাহলে আসি নিরু,,

এতক্ষণ কত শত কথা দুজনে বলেছে কিন্তু কাঙ্খিত আদুরে ডাকটা ভালোবাসার মানুষটির মুখে শুনতে পায়নি।এখন যেনো আর চোখে বাঁধ মানতে চাইছে না। নিজেকে সামলাতে কোনো ভাবে বললো,,আচ্ছা। মুহূর্তের মধ্যে শোয়ার ঘড়ের দরজার মধ্যে বিলীন যায় নিরু। অখিলেশকে বোকা বনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অনিতা দেবী মুখ খোলেন,,,
আরেকটু বসো বাবা,, কতদিন বাদে দেখা তোমার সাথে।কথা বলি একটু।
অখিলেশ বসে ধীরে সুস্থে,,

ভালো আছো তো অখিল? তোমার পরিবার পরিজন সুস্থ আছেন?

আজ্ঞে হ্যা,,

*****
শীতের স্নিগ্ধতা শহুরে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। রাস্তায় থাকতে যতটা ঠান্ডা লাগছিলো এখানে তা নেই।খুব নামী দামী দামী হোটেলের ব্যবস্থা হয়নি ঠিকই কিন্তু যা পেয়েছে একেবারে মন্দ নয়। হোটেলের রিসিপশন থেকেই বিদায় নিয়েছে বিরূপাক্ষের বন্ধু গোছের ছেলেটা।রিতির ভালো লেগেছে ছেলেটার আলাপ বা আচার আচরণ। কথায় কথায় বৌদি বলে মাথা ধরিয়ে দিয়েছে তবে রিতির নয় বিরূপাক্ষের।রিতি বেশ এনজয় করেছে ব্যাপারটা।
একটাই রুম পেয়েছে তাও ভাড়া ডবল দেওয়ার শর্তে।রুমে প্রবেশ করতেই বললো বিরূপাক্ষ,,,এখানে তোর বিছানা বালিশের ব্যবস্থা রাখিসনি তো, কোথায় শুবি?

রিতি ছোট রুমটাতে চোখ বুলিয়ে দেখে একপাশে দেওয়াল ঘেঁষে ডবল সোফাসেট রাখা। নিজের ব্যাগটা সেই সোফায় রেখে বললো স্বাভাবিক ভাবেই,,এখানেই শুয়ে পরবো শাড়ির আঁচল গায়ে জড়িয়ে। তুমি খাটেই শুয়ে পরো।

এত সহজে রিতির হার মানাটা বিরূপাক্ষের মনঃপুত হলো না বোধহয়।

যা শীত পরেছে শাড়ির আঁচলে মানাবে?

কি আর করবো বলো?শখ করে বর নিয়ে এলাম হোটেলে রাত কাটাতে।একটু কষ্ট তো করাই যায় তাইনা? তুমি তো আরামে থাকো।

আচ্ছা বেশ বেশ,,,শুয়ে দ্যাখ। তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে বিরূপাক্ষ। কিন্তু একবার যদি জানতে পারতো রিতি শুধু ওর নিরাপত্তার কথা ভেবে আজ এখানে এই কষ্ট মেনে নিয়েও থাকছে তাহলে কি ঠোঁট বিস্তৃত হাসিটা থাকতো ঠোঁটের কোনে?রিতি ফ্রেশ হতে ওয়াশ রুমে ঢুকতেই বিরূপাক্ষ ল্যান্ড লাইনে ফোন করে রাতের খাবারের অর্ডার করে দিলো। ছোট্ট ড্রেসিং টেবিলের সামনে রিতির ফোনটা সমানে বেজে চলেছে। বিরূপাক্ষ উঠিয়ে দেখে আননোন নম্বর থেকে কল।রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে কথা ভেসে আসে,,,দিদি আপনি আর দুশ্চিন্তা করবেন না।আমরা ব্যবস্তা করেছি ছোটদা বাবু এখন বিপদমুক্ত।আর কিছু শোনার অপেক্ষায় না থেকে লাইন কাটে ছেলেটা। বিরূপাক্ষ খানিকক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।মাথাটা ফাঁকা হয়ে আছে তার।ছোট দা বাবুর বিপদ মানে গ্রামে তাকেই ছোটদা বলে অনেকে আর রঘুনাথ কে বড়দা। এবার বিরূপাক্ষ বুঝতে পারে রিতি নিজেই বাড়িতে ফেরার জন্য মরিয় হয়ে উঠেছিলো কিন্তু কি এমন হলো যে,,বাস স্ট্যান্ড থেকে আবার এখানে থাকতে চলে এলো?আর ভাবার সময় পায় না রিতি বেরিয়েছেন মুখ মুছতে মুছতে। সামনের ছোট এলোমেলো চুল গুলো তে জলের বিন্দু উজ্জ্বল আলোয় মুক্ত দানার মতো দেখাচ্ছে।ঘোর লাগা চোখে দেখছে বিরূপাক্ষ। সারা দিনের ধকল সব বোধহয় চুলের উপর দিয়ে গিয়েছে। কিন্তু দারুণ সতেজ লাগছে রিতিকে ।তার ইচ্ছা করছে জল বিন্দু গুলো নিজে জিভ দিয়ে শুষে নিতে কিন্তু ভাবনার সুতা ছিন্ন হয় রিতির মৃদু স্বরে,, আমার ফোনটা দাও।

হ্যা,,ধর।তোর ইনফর্মার ফোন করেছিলো। আমার বিপদ কেটে গেছে। দুশ্চিন্তা করতে না করেছে।বিরূপাক্ষের ধারালো দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে হিমসিম খায় রিতি। ঝট করে ঘুরে দাঁড়ায়।এই ভয়টাই পাচ্ছিলো ওয়াশ রুমে বসে।শেষ রক্ষা হলো না শেষে।ধরা কি পরতেই হয় আজ?

রাতের মধ্যপ্রহর ‌দূরের বাঁশ বনে কোথাও একটা ডাহুক ডাকছে থেকে থেকে। অখিলেশ নিজের ব্যালকনির ইজি চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে একের পর এক টান দিয়ে চলেছে জলন্ত সিগারেটের ফিল্টারে। বিকেলে নিরুর ওখান থেকে বেরিয়ে আসার মুখে দেখা হয়েছিলো বাচ্চা মেয়েটার সাথে।
কি মায়াবী চেহারা তার।মায়ের আদোল পায়নি একটুও তবে কি পিতার আদোলে তৈরী করেছেন বিধাতা। অখিলেশ মেয়েটিকে কাছে ডাকতেই পোষা ময়নাটির মতো একদম কোল ঘেঁষে দাঁড়ালো।তৎক্ষনাত কোলে তুলে নিয়ে নির্দিধায় স্নেহের পরশ দিলো গুলু মুলু গাল দুটোয়।বিড়াল ছানার মতো নরম তুলতুলে ছোট্ট দেহটাকে বুকে চেপে ধরতেই এক অন্যরকম অনুভুতি হলো অখিলেশের।নিজেকেই ঐ সন্তানের পিতার আসনে বসাতে ইচ্ছে হলো খুব।যখন মায়ের ডাকে সারা দিয়ে বললো চিকন সুরে,, আঙ্কেল মা ডাকছে আমি যাই?
তখন এক অন্য অনুভূতি হলো।মনে হলো,এমন একটা ছোট্ট পুতুলের কন্ঠঝংকার শোনার আরাধনা হয়তো সব পিতাই করে। আলগোছে নামিয়ে দিয়ে পুনরায় ফিরে তাকালো অখিলেশ।সাধ আর একবার যদি নিরুপমার দেখা পাওয়া যায়। কিন্তু না নিরু তো আলোই না বাচ্চাটার দরজার আড়ালে হারিয়ে গেলো।শত দুঃখ কষ্টের মাঝেও এমনকি নিরুকে হারিয়েও অখিলেশ উপরওয়ালাকে কখনো দোষারোপ করেনি।সব মেনে নিয়েছে ভাগ্য বলে কিন্তু আজ খুব নালিশ জানাতে ইচ্ছে করছে সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে।নিরুর গর্ভের ঐ ফুটফুটে সন্তানের বাবা ডাক শোনার সৌভাগ্য তাকে ক্যানো দিলেন না?সে কি পারতো না স্ত্রী হিসেবে নিরুকে নিয়ে একটা সুখের সংসার গড়তে?যেখানে সর্বদা বিচরণ করতো অমন একটা শিশুর নিষ্পাপ শিশুর পদযুগল? চোখের জল সমানে গড়িয়ে চলেছে চিবুক বেয়ে।অখিলেশ নিজের ছোট বেলার একটা ছবি টাঙানো দেখেছে একদম দরজার সামনে।কত বয়স ই বা হবে হয়তো অদ্রিকার মতো বয়স। অখিলেশ ভেবে পায়না সেই ছবির সাথে এই মেয়েটার মুখচ্ছবির এত মিল ক্যানো?নাকি নিজের মনের অপরিতৃপ্ত সাধ বা বাসনার প্রতিফলন মাত্র।

****
রাত কত হয়েছে জানে না রিতি। গভীর ঘুমের মধ্যে দম বন্ধকর ভারী কিছুর উপস্থিতি টের পায় নিজের দেহের উপর। ঘুম খানিক আলগা হতেই নিজের ঠোঁট দুটোতে উষ্ণ কিছু অনুভব করে সাথে একটা উদ্ভট গন্ধ। বিরূপাক্ষ রিতির ওষ্ঠদ্বয় নিজের ওষ্ঠগত করে নিয়েছে রিতির ঘুমের মধ্যেই। উন্মাদ বিরূপাক্ষ নিজের কর্মে লিপ্ত।রিতি বাঁধা দিতে গিয়েও দেয়না।অনাঘ্রাতা কুমারী শরীর তার। মোহাচ্ছন্নের মতো ভাবে বিরূপাক্ষ হয়তো এজন্যই ভালোবেসে তাকে নিজের কাছে শুতে বলেছিলো।রিতি দোনা মোনা করেও নিজের বাহুদ্বয় দিয়ে আঁকড়ে ধরে বিরূপাক্ষ কে। ভালোবাসার স্পর্শে আঁখি দুটি মুদে গেছে তার। বুকের আঁচল কখন সরে গেছে জানে না।বিরূপাক্ষের ঠোঁট দুটো ততক্ষনে নেমে গিয়েছে রিতির মুখ ছেড়ে গলার ভাঁজে নেমে গিয়েছে।রিতির সাথে পরিচয় নেই এই অনুভুতির,এই শিহরণের।অস্পষ্ট স্বরে উচ্চারণ করে রূপ দা,,,প্রতিউত্তরে বিরূঊ উচ্চারণ করলো,বনলতা,,,
মোহাচ্ছন্ন দৃষ্টি স্পষ্ট হয় রিতির,
সকল দেনা পাওনার খাতা ততক্ষনাৎ বন্ধ করে ,বিরূপাক্ষকে এক ঝটকায় সরিয়ে উঠে পরে। নিজের শাড়ির আঁচল জড়াতে জড়াতে দৌড়ে যায় ছোট্ট ব্যালকনিতে।দুহাতে মুখ ঢেকে বসে পরে মেঝেতে।এত বড় অপমান সইবে কি করে ও।যে নারীর স্বামী গভীর কামোত্তেজনায় স্ত্রীর বুকে মুখ গুঁজে অন্য নারীর নাম জপে সে নারীর নারীত্বের সম্মান কি আর অবশিষ্ট থাকে।এর চেয়ে বেশি যন্ত্রণা কি সে নারী আত্মঘাতী হলে পাবে?হয়তো না।

চলবে,,,,,

ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।
ভালো থাকবেন সবাই।শক্তি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here