#রংধনুর_স্নিগ্ধতা
#পর্ব_৭,৮
#নবনী_নীলা
” তুমি কি সবসময় লুকিয়ে লুকিয়ে আমার ছবি তুলো?”, রুমে পা রাখার সাথে সাথে প্রশ্নটা কানে এলো স্নিগ্ধার। ভীষন অসস্তিতে পড়ে গেলো সে। আদিল সকালে তখন প্রশ্ন না করায় সে ভেবেছিলো হয়তো লোকটা কিছুই দেখেনি কিন্তু নাহ্ সে ভুল ছিল। এইযে রুমে পা ফেলতে না ফেলতেই প্রশ্ন ছুড়ে মারলো।
কিন্তু স্নিগ্ধা ও কম যায় না। সে প্রশ্ন না শোনার ভান করে আদিলকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতেই আদিল ফট করে স্নিগ্ধার হাত ধরে ফেললো। স্নিগ্ধা অগ্নিমূর্তি হয়ে তাকালো তারপর গম্ভির গলায় বললো,” আমার হাত ছাড়ুন।”
সেই গাম্ভীর্যতা উপেক্ষা করে আদিল স্নিগ্ধার কোমড় জড়িয়ে রেখে হাত ছেড়ে দিলো তারপর ঠোঁটের কোন মৃদু হাসি রেখে বললো,” লুকিয়ে লুকিয়ে ছবি তুলছো, তাহলে কি ভালোবাসতে শুরু করেছো আমায়?”
স্নিগ্ধা তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে থেকে বললো,” নাহ্। আপনাকে ভালোবাসা আমার পক্ষে সম্ভব না। আপনার কাছে তো আপনি যেটা চান তার মূল্যই বেশি, কখনো জানতে চেয়েছেন অন্য মানুষটি কি চায়? আমাকে বাড়িতে বলতে গেলে আটকে রাখা হয়েছে, বের হতে দিচ্ছে না। কেনো? কারণ আপনি না করেছেন। কিন্তু কেনো? এমন বন্দি জীবন কাটানো আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি চার বছরের অবুঝ অভ্র নই যে আমাকে এইভাবে বন্দি করে রাখবেন।”
আদিল একটা নিশ্বাস ফেলে তাকালো। স্নিগ্ধা রীতিমত রেগে আগুন। আদিলকে চুপ করে থাকতে দেখে স্নিগ্ধা আবার বললো,” কি হলো? বলছেন না।, কেনো আমি বাইরে যেতে পারবো না?”
আদিল একটু ঝুঁকে এসে থমথমে গলায় বললো,” কে বলেছে তুমি বাইরে যেতে পারবে না? অবশ্যই পারবে। কিন্তু আমি তোমার সঙ্গে যাবো।”
স্নিগ্ধা এবার ভ্রু কুঁচকে তাকালো। তারপর কঠিন গলায় বললো,” কি আশ্চর্য! আপনি আমার সঙ্গে যাবেন মানে? আমি একা একা চলাফেরা করতে পারি না নাকি?”
” হয়তো পারো কিন্তু আমি তোমাকে একা একা চলা ফেরা করতে দিবো না। আমাকে তো খেয়াল রাখতেই হবে। তাই না? নয়তো আমার ডেঞ্জারাস শাশুড়ি আমার হাড় ভেঙে ফেলবে।”, আদিলের এমন খাপ ছাড়া কথায় স্নিগ্ধা বিরক্তির নিশ্বাস ফেলে তাকালো। তারপর ফট করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দ্বিতীয় কোনো বাক্য না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। প্রচন্ড রেগে আছে সে।
স্নিগ্ধা চলে যেতেই জিম রুমে আসলো। জিম ভয়ে ভয়ে ভিতরে এসে দাড়াতেই আদিল জিজ্ঞেস করলো,” সুনেয়রার সাথে কনট্যাক্ট করতে পেরেছো?”
জিম না সূচক মাথা নাড়তেই আদিল চোয়াল শক্ত করে ফেললো। তারপর চাপা কণ্ঠে চোখ রাগিয়ে বললো,” তোমাকে আমি কি বলেছিলাম? সুনেয়রার সাথে আমার কথা বলা প্রয়োজন। নাম্বার না পেলে আদার ওয়েতে কনট্যাক্ট করার উপায় বের করো।”
জিম নিচু স্বরে বললো,” তার ম্যানেজারের নাম্বার পেয়েছি কিন্তু তাতে লাভ হবে না। স্যার, বুঝতেই পারছেন যার বাবা রাজনৈতিক দলের একজন বিশিষ্ট পদে রয়েছেন। তার সাথে যোগাযোগ করাটা আমাদের জন্যে এতো সহজ হবে না। ।”
আদিল রাগ সামলে বললো,” সহজ না হলেও করতে হবে, জিম। আর কোনো ওয়ে নেই। হ্যা একটা তো আছেই, আমি নিজের হাতে ওই বাস্টার্ডটাকে শেষ করতে পারি।”
” স্যার, এতো উত্তেজিত হবেন না।”, শান্ত গলায় বললো জিম।
” আমি উত্তেজিত হবো না? ঐ বাস্টার্ডটা এখন অভ্র আর স্নিগ্ধার ক্ষতি করবে বলছে। আমার সামনে আরেকবার পরলে তো ওকে আমি মেরেই ফেলবো।”, রেগে গিয়ে বললো আদিল।
” স্যার, মিস সুনেয়রা যদি দেশে থাকতেন আমাদের জন্য ব্যাপারটা অনেক সহজ হতো কিন্তু আমি যতটুকু জেনেছি উনি দেশের বাইরে আছেন। আপাদত ওনার ঘনিষ্ট একজনের ইনফরমেশন পেয়েছি।”
আদিল চুপ করে থেকে বললো,” হুম সেটাই আমাদের কাজে লাগাতে হবে।” আদিলের কথা শুনে জিম হাতের ট্যাবটা এগিয়ে দিয়ে পুরো বিষয়টা বললো।
__________
স্নিগ্ধা অভ্রর ঘরে গাল ফুলিয়ে বসে আছে। সে নিজের বাড়িতে যেতে চায়।
অভ্র ভিডিও গেইম খেলতে ব্যাস্ত। স্নিগ্ধা ভ্রু কুঁচকে স্ক্রিনে তাকিয়ে আছে। হুট করে আদিল রুমে ঢুকেই স্নিগ্ধার পাশে বসে পড়লো। সঙ্গে সঙ্গে স্নিগ্ধা কিছুদূর সরে বসলো। আদিলকে দেখলেই তার রাগ হচ্ছে। আদিল বেশ আন্দাজ করতে পারছে স্নিগ্ধার রাগ। তাই অভ্রকে ডাকলো,” অভ্র। অভ্র…… অভ্র”
অভ্র ভ্রু কুঁচকে আদিলের দিকে তাকালো তারপর গাল ফুলিয়ে আবার গেইম খেলতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। এই জনাবের তো আবার নাম বদলে যায়। কি নাম হয়েছে আজকে? আদিল কয়েকবার ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকলো। কোনো সাড়া নেই। বাহ্ এরা সবাই মিলে তাকে বয়কট করছে? ম্যাডাম তো তার দিকে তাকাচ্ছে পর্যন্ত না ।
আদিল ফোস করে একটা নিশ্বাস ফেলে বললো,” অভ্র তুমি কি ঘুরতে যেতে চাও? না যেতে চাইলে থাকো আমি চলে যাচ্ছি।” বলেই আদিল উঠে পড়লো।
কথাটা শুনে অভ্র আর স্নিগ্ধা দুজনেই ভ্রু কুঁচকে একবার আদিলের দিকে তাকালো কিন্তু উত্তরে কিছু বললো না। আদিল দরজা পর্যন্ত গিয়ে থামলো। কেউ কোনো রেসপন্স করছে না কেনো? অভ্র আগে তো ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনে লাফিয়ে উঠতো। আদিল ঘাড় ঘুরিয়ে আড় চোখে পিছনে তাকালো। তারপর আবার জিজ্ঞেস করলো,” তার মানে সত্যিই যেতে চাও না?”
স্নিগ্ধা মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকালো। কিন্তু অভ্র আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,” কোথায় যাবো?”
আদিল মৃদু হেসে স্নিগ্ধার দিকে ইশারা করে বললো,” ওদের বাড়িতে।” স্নিগ্ধা অন্যদিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থায় ভ্রু কুঁচকে ফেললো। অভ্র মহা আনন্দে লাফিয়ে উঠে বললো,” ইয়ে! আমি যাবো।”
আদিল পরক্ষনেই বললো,”কিন্তু, ও মনে হয় আমাদের নিবে না।”
অভ্র নাচা বন্ধ করে হা করে তাকিয়ে রইল তারপর ছুটে স্নিগ্ধার কাছে গিয়ে বলল,” তুমি আমাদের নিবে না। চলো না যাই।”
স্নিগ্ধা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। লোকটা যে প্রচুর মাথা খাটিয়ে প্রতিটা কাজ করে সেটা প্রতি মুহুর্তে সে টের পাচ্ছে। সামনের মানুষটা বাধ্য তার কাছে হার মেনে নিতে। স্নিগ্ধার রাগ দেখিয়ে বসে থাকবার উপায় নেই। যেতে না চাইলে অভ্র কান্নাকাটি শুরু করবে সেটা সে চায় না। শেষে উপায় না পেয়ে স্নিগ্ধা রাজি হলো।
স্নিগ্ধা রুমে যাচ্ছিলো তৈরি হবে বলে। জিমকে দেখে স্নিগ্ধা থামলো। ঐ বুদ্ধিমান লোকটা থেকে কথা বের করা না গেলে একেই তার হাতিয়ার বানাতে হবে। স্নিগ্ধা জিমের সামনে ভ্রু কুঁচকে দাড়িয়ে পড়লো। জিম চোখের পাতা দুবার ফেলে বললো,” ম্যাডাম আপনার কিছু প্রয়োজন?”
স্নিগ্ধা দৃষ্টি তীক্ষ্ণ করে বললো,” আপনাকে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। উত্তর না দিলে সত্যি বলছি আপনার কপালে দুঃখ আছে।”
হটাৎ স্নিগ্ধার এমন আচরণে জিম চিন্তিত মুখে তাকালো। কিন্তু সে শান্ত গলায় বললো,” কি জানতে চাচ্ছেন বলুন।”
জিম এতো সহজে বলতে রাজি হয়ে যাওয়ায় স্নিগ্ধা একটু চিন্তা করে বললো,” আচ্ছা, তাহলে বলুন। আমাকে এই বাড়ি থেকে বের হতে দেয় না কেনো? আর কালকে ওনার এতো দেরী হয়েছে কেনো আসতে? আর হাতে কি হয়েছিলো? উনি কাউকে মেরেছিলেন?”
জিম চুপ করে রইলো। স্নিগ্ধা এমন প্রশ্ন করবে সেটা সে বুঝতে পারে নি। সে প্রতিউত্তরে বললো,” সরি, আপনার একটা প্রশ্নের উত্তরও আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব না। আবরার ফাইয়াজের প্রাইভেসি রক্ষা করা আমার দায়িত্ব।”
” বলবেন না মানে? বলতেই হবে। ওই আবরার ফাইয়াজকে কিছু করতে পারি না তাই বলে আপনাকে পারবো না? আপনার বারোটা বাজিয়ে ছাড়বো আমি। বলুন বলছি।”, ভয় দেখিয়ে বললো স্নিগ্ধা। কিন্তু কোনো লাভ হলো না। জিম দুঃখিত মুখে বললো,” আমার পক্ষে আপনাকে কিছু বলা সম্ভব নয়। সময় হলে স্যার নিজেই বলবে। একটু অপেক্ষা করুন।”
স্নিগ্ধা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। বাহ্ অসভ্য লোকটা তার আশেপাশের সবাইকে নিজের মতন ট্রেনিং দিয়ে রেখেছে। পেট থেকে যদি একটাও কথা বের হয়। ইচ্ছে করছে!! উফ! শান্ত হ স্নিগ্ধা। বুদ্ধি খাটা। এরা চালাক হলে তুই কি কম নাকি?
স্নিগ্ধা আবারো পথ আটকে বললো,” আচ্ছা একটা কিছু বলে যান। এইভাবে আমার মাথায় প্রশ্ন জমা হতে থাকলে আমি তো পাগল হয়ে যাবে।”
জিম নিরবে নিঃশ্বাস ফেলে বললো,” আপনার করা প্রথম প্রশ্নটির সাথে শেষ প্রশ্নটির যোগ আছে। এবার বুদ্ধি দিয়ে বের করুন। এর চেয়ে বেশি কিছু আমি বলতে পারবো না।” এতোটুকু বলে জিম স্নিগ্ধাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো।
স্নিগ্ধা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। রাগে বির বির করে বললো,” যেমন শেয়াল তেমনি তার ছানা। বলছিলাম কিছু বলে যেতে, আমাকে ধাঁধা ধরিয়ে দিয়ে যেতে বলেছি?”
স্নিগ্ধা রাগে গজগজ করতে রুমে গেলো। শেষে কোন প্রশ্নটা করেছিলো। সেটাই তার মাথায় আসছে না। সে কি এদের মতন কথা মেপে মেপে বলে যে পরের লাইনে ফাঁদ পেতে রাখবে। আজব মানুষজন।
স্নিগ্ধা আনমনে রুমে এলো তারপর নিজের ব্লাউজ নিয়ে ওয়াশরুমের চলে গেলো। প্রথম প্রশ্নটা করেছিলো তাকে বাড়ির বাইরে যেতে দেওয়া হয় না কেনো? তারপর কি বলেছিল? ভাবতে ভাবতেই ব্লাউজ পড়ে সে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো। তারপর আনমনে শাড়ী পড়তে লাগলো।
শাড়ির কুচি হাতে নিয়ে আবারো সে চিন্তায় পড়ে গেলো। শেষের প্রশ্নটা কি ছিলো যে রাতে বাড়ি দেরী করে ফিরেছে কেনো? নাহ্, এইটার সাথে কিসের যোগ থাকবে। অদ্ভূত। আর কয়েকদিন এদের সঙ্গে থাকলে নির্ঘাৎ পাগল হয়ে যাবে সে। ভাবতে ভাবতে কুচি ঠিক করে পড়লো। তারপর আঁচলটা ঠিক করে ব্লাউজের ফিতা বাঁধতে গিয়ে বিপাকে পড়লো।
স্নিগ্ধার এইবার অসহ্য লাগছে। একে তো এই আবরার ফাইয়াজ শেয়াল কোথাগার আবার সঙ্গে নিয়ে ঘুরে জিম নামের এই শেয়াল ছানা। দুজন মিলে তাকে পাগল করে দিবে।
স্নিগ্ধা চুলগুলো একপাশে এনে আবারো ব্লাউজের ফিতা আটকাতে চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না। স্নিগ্ধা রাগে গরগর বললো,” কি আজব বাড়ি! এইখানে তো এই একজন মেয়েই আছে। আর সেটা আমি নিজেই। এইবার আমার ফিতা বেধে দিবে কে?”
হটাৎ স্নিগ্ধার মনে হলো কে যেনো তার হাত থেকে ফিতাটা নিয়ে বেধে দিয়েছে। মুহূর্তেই স্নিগ্ধা থমকে গেলো। কি হলো এইটা? চমকে উঠে পিছনে ফিরতেই তার মুখ হা হয়ে রইলো। তার সামনে আদিল দাড়িয়ে আছে। তাহলে কি সে তার ফিতে বেধে দিয়েছে?
স্নিগ্ধার বিস্ময় না কাটতেই আদিল বললো,” এরপর থেকে তোমার কোনো প্রয়োজনে আমাকে ডাকবে।”
স্নিগ্ধার সঙ্গে সঙ্গে চোখ গেলো দরজার দিকে। দরজা তো লাগানো তাহলে এই লোক ভিতরে এলো কি করে।নাকি প্রথম থেকেই ছিলো, সে খেয়াল করেনি। তার মানে এতোক্ষণ কি সে আদিলের সামনে শাড়ী বদলেছে। ভেবেই পীলে চমকে উঠলো তার। দু পা পিছিয়ে গিয়ে কাপা কাপা গলায় বললো,” আপনি ভিতরে এলেন কি করে?”
আদিল মৃদু হেসে বলল,” আমি তো এখানেই ছিলাম।” মৃদু হাসির মাঝে হালকা দুষ্টুমির ছাপ দেখে শিউরে উঠলো স্নিগ্ধা।
[ #চলবে ]
#রংধনুর_স্নিগ্ধতা
#পর্ব_৮
#নবনী_নীলা
আদিল মৃদু হেসে বলল,” আমি তো ভিতরেই ছিলাম।” কিন্তু সেই মৃদু হাসির মাঝে হালকা দুষ্টুমির ছাপ দেখে শিউরে উঠলো স্নিগ্ধা।
” ভিতরে ছিলেন মানে? আপনি এতক্ষণ তাহলে….”, বলতে বলতে লজ্জায় থেমে গেলো সে। শাড়ির আঁচলটা শক্ত করে মুষ্টিবন্ধ করে ফেললো। এবং সারা শরীরে এক শীতল শিহরণ অনুভব করলো।
আদিল এগিয়ে এসে ফিচেল গলায় বলল,” হুম্, আমি এতক্ষন তোমাকেই দেখছিলাম।”
স্নিগ্ধা রাগে দাতে দাত চেপে বলল,” অসভ্য।”
আদিল বুকের কাছে হাত ভাজ করে বললো,” আচ্ছা আমি অসভ্য? আর তুমি যে আমার সামনে শাড়ি বদলে নিলে তার বেলায়?”
স্নিগ্ধা নিচের ঠোঁট কামড়ে অন্য দিকে তাকিয়ে ছিলো। আদিলের কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো তারপর কাপা কাপা বললো,” আমি কি দেখেছি নাকি যে আপনি ভিতরে ছিলেন।”
আদিল ঠোঁট চেপে হাসি থামিয়ে বললো,” হুম, আমিও তো বেলকনিতেই ছিলাম। এমন কিছু ঘটবে জানলে রুমেই থেকে যেতাম।”
স্নিগ্ধা আস্তে আস্তে চোখ খুলে আদিলের দিকে তাকালো। বেলকনিতে ছিলো মানে? তাহলে কি কিছু দেখেনি। স্নিগ্ধা আড় চোখে তাকিয়ে বললো,” তার মানে আপনি মাত্র রুমে এসেছেন?”
আদিল এগিয়ে এসে ঝুকে স্নিগ্ধার চোখের দিকে তাকালো তারপর চাপা হাসি দিয়ে বললো,” তোমার কি মনে হয় এর আগে এলে, আমি নিজেকে সামলে নিতে পারতাম? এতটাও ডিসেন্ট হাসব্যান্ড তুমি পাও নি।”
স্নিগ্ধা চোখ পিট পিট করে তাকালো। তারপর মনে মনে বললো,” হ্যা, সেটা তো ধীরে ধীরে টের পাচ্ছি। অসভ্য লোক একটা।” আদিল মৃদু হেসে সোজা হয়ে দাড়ালো তারপর বললো,” জলদি রেডি হয়ে নাও।” তারপর রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আদিল চলে যেতেই স্নিগ্ধা বুকে হাত রেখে সস্থির নিশ্বাস ফেললো।
_________
স্নিগ্ধাকে বাড়িতে দেখে স্পৃহা খুশিতে আত্মহারা। মামা বাড়ি থেকে ফিরে এসে সে পুরো ঘটনাটা জানতে পেরেছে। আদিল অভ্র আর স্নিগ্ধাকে বাড়িতে ড্রপ করে গেছে। যদিও আয়েশা খাতুন তাকে রাতে ফিরতে বলেছেন।
অভ্র ফরিদার সাথে খেলতে ব্যাস্ত। স্পৃহা সূযোগ পেয়ে স্নিগ্ধাকে টেনে রুমে নিয়ে এলো তারপর নিজের সামনে বসিয়ে জিজ্ঞেস করলো,” আচ্ছা তুই কি করে এমন সুন্দর একটা জামাই পেলি বলতো? সবাই তো বলছে তোদের নাকি আগে প্রেম ছিল। আসলেই কি প্রেম করেছিস? আমাকে তো বললি না।”
স্নিগ্ধা ভ্রু কুঁচকে বললো,” হ্যা আমার তো মাথা খারাপ যে আমি ওনার সাথে প্রেম করতে যাবো।”
স্পৃহা আড় চোখে তাকিয়ে বললো,” নাহ্, তুই মিথ্যে বলছিস। আপু বল না।”
স্নিগ্ধা মলিন চোখে তাকিয়ে রইলো। কি যন্ত্রণায় পড়া গেলো। স্নিগ্ধাকে স্পৃহা আরো বললো,” যাই বলিস। এমন সুন্দর মতোন জিজু পেয়ে আমি কিন্তু অনেক খুশি। কালকে সেতু আর মিলা আসবে। জিজুকে দেখতে।”
স্নিগ্ধা ভ্রু কুঁচকে তাকালো তারপর বললো,” দেখতে আসবে মানে? উনি কি শোপিস যে দেখতে আসবে?”
স্পৃহা মিট মিট করে হেসে বলল,” কেনো তোর কি হিংসে হচ্ছে?”
স্নিগ্ধা এইবার কড়া চোখে তাকালো। স্পৃহা ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে বললো,” আচ্ছা সরি। রাগ করিস না। কিন্তু ঐ বাচ্চাটা? বাচ্চা হয়ে গেলো কবে তোর? সবাই তো অবাক এমন খবরে।”
স্নিগ্ধা চুপ করে আছে। স্পৃহা বক বক করছে। মাঝে মাঝে সে ভাবে এরা কি করে আপন বোন হলো। দুজনেই দুজনের সম্পূর্ন বিপরীত। স্পৃহা বক বক করে আজ তার কানের বারোটা বাজবে সেটা খুব ভালো করেই টের পাচ্ছে সে।
আদিল শাশুড়ির কথা মতন রাতে এই বাড়িতে ফিরলো। স্নিগ্ধার বাবা এতক্ষণ তার সাথে কথা বললেন। স্নিগ্ধার বাবার সাথে কথা বলে আদিল যা বুঝলো সেটা হলো লোকটা শান্ত সভাবের। তার মানে স্নিগ্ধার এমন চুপচাপ সভাব সে তার বাবার কাছ থেকে পেয়েছে।
আদিল কথা শেষে স্নিগ্ধার রুমে যাবে এই সময়ে স্পৃহা নীচে নামছিলো। আদিলকে দেখে থমকে গিয়ে বললো,” আপনি আবরার ফাইয়াজ মানে আমার জিজু?”
আদিল মাথা নেড়ে বললো,” হুম?”
স্পৃহা হেসে উঠে বললো,” আমি আপনার একমাত্র শালিকা।”
আদিল মনে করে বললো,” তোমার নাম স্পৃহা, রাইট? হুম শুনেছি। তা কোথায় যাচ্ছো তুমি?”
স্পৃহা গাল ফুলিয়ে বললো,” নিচে যাচ্ছি। কি করবো বলুন? আপনার বউটা এতো পাজি। আমাকে রুম থেকেই বের করে দিলো। বলছে আমার কথা শুনে তার নাকি মাথা ব্যাথা করছে।”
স্পৃহার অভিযোগ শুনে আদিল হেসে ফেললো তারপর বললো,” আচ্ছা আমি তাহলে গিয়ে দেখে আসি।”
স্পৃহা নিচে নেমে যেতে যেতে বলল,” হ্যা, দেখে আসুন আর কষ্ট করে একটা মাথা ব্যথার ট্যাবলেট খাইয়ে দিবেন।” বলতে বলতে স্পৃহা নিচে নামলো।
জিম ড্রয়িং রুমে বসে নিজের কাজে ব্যাস্ত ছিল কিন্তু এই মুহুর্তে তার ভীষণ বিরক্তি লাগছে। এই বাড়ির কাজের মেয়ে ফরিদা চা নিয়ে এসে তখন থেকে আজে বাজে বক বক করছে। জিম সেসব কথার কোনো উত্তর দিচ্ছে না। হটাৎ ফরিদা বললো,” আফনে অনেক সুন্দর। আমি টিভিতে সিআইডি দেখি ঐখানে লোকেরা এমন কোর্ট টাই পইরা থাকে।”
জিম এমন মন্তব্যে ভ্রু কুঁচকে ফেললো। ফরিদার পিছন থেকে স্পৃহা বলে উঠলো,” তাই নাকি। ফরিদা আপা? কথাটা তো মাকে জানাতে হচ্ছে।”
ফরিদা ভুত দেখার মত করে পিছনে তাকালো। তারপর স্পৃহার কড়া দৃষ্টি চোখে পড়তেই সঙ্গে রান্না ঘরে ছুটে গেলো। জিম তার সামনে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটির দিকে এক পলক তাকালো তারপর আবার নিজের কাজে মন দিলো।
স্পৃহা ভ্রু কুঁচকে তাকালো। কে এই লোকটা পুরো সালমান খানের বডিগার্ড ছবির বডিগার্ড সেজে বসে আছে। পার্থক্য শুধু ফিগারটা নরমাল। স্পৃহা একটা ভ্রু তুলে বললো,” এই যে কে আপনি?”
জিম স্পৃহার দিকে না তাকিয়েই বললো,” আমি আবরার ফাইয়াজের পার্সোনাল অ্যাসিস্টেন্ট।”
স্পৃহা চকিত হয়ে তাকালো। তারপর জিমের একদম সামনে বসে পড়লো তারপর বলল,” তার মানে আপনি সব জানেন?”বলেই জিমের সামনের ল্যাপটপটা টেনে নিয়ে গেলো। জিম হতবাক হয়ে তাকালো। তারপর ভ্রু কুঁচকে বললো,” এটা কি হলো?”
স্পৃহা ফিক করে হেসে বললো,” আপনি আমাকে আপু আর জিজুর লাভ স্টোরিটা বলুন। তারপর এইটা ফেরত পাবেন।”
জিম হতভম্ব এ কেমন বিপদে পড়তে হলো তাকে? জিম ভ্রু কুঁচকে বললো,” লাভ স্টোরি মানে?”
স্পৃহা মুচকি হেসে বললো,” লাভ স্টোরি মানে বুঝেন না?”
জিম হাত বাড়িয়ে স্পৃহার কাছ থেকে নিয়ে বললো,” না বোঝার কি আছে?”
স্পৃহা মিট মিট করে হেসে বললো,” তাহলে বলুন।”
জিম ল্যাপটপ অন করতে করতে বললো,” বলার মতন কিছুই নেই। প্রথম দেখায় প্রেম দ্বিতীয় দেখায় বিয়ে, তারপর গল্প শেষ।”
স্পৃহা হা করে তাকালো। এটা গল্প ছিলো নাকি এক কথায় প্রকাশ? স্পৃহা মনে মনে জিমকে বকা দিয়ে উঠে গেলো। এমন রোবট মানব সে এই জনমে দেখেনি।
স্নিগ্ধা রুমে বসে জিমের বলা কথাটা ভাবছে। সবটা মিলিয়ে বিষয়টা যা দাড়ালো সেটা হলো। আদিল সে রাতে একজনকে মেরেছে। হয়তো এর কোনো পুরনো হিস্টোরি আছে।
কিন্তু তাকে বাড়ি বাড়ি থেকে বের হতে দেয় না। তারমানে কেউ কি তার ক্ষতি করবে? কিন্তু কেনো কেউ তার ক্ষতি করতে যাবে। আর এই কয়েকদিনে কে এমন তার ক্ষতি করতে চাইবে। পুরো বিষয়টা বানোয়াট নয় তো? রহস্য কিছু তো আছেই। সেটা এতো সহজ না সে যতটা ভাবছে।
স্নিগ্ধার রূমের দরজায় টোকা পড়তেই সে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। দশ মিনিট না যেতেই আবার চলে এসেছে স্পৃহা। নাহ্, এইবার সে দরজা খুলবে না। স্নিগ্ধা চুপ চাপ গিয়ে বিছানায় বসে রইলো। কিছুক্ষণ পর আবার টোকা পড়লো। স্নিগ্ধা ভিতরে থেকে বললো,” আবার কি জন্যে এসেছিস?”
কোনো উত্তর না দিয়ে আবার দরজায় টোকা পড়লো। স্নিগ্ধা রেগে গিয়ে উঠে পড়লো। অকারণে ডেকেছে তো সত্যি মার লাগাবে স্পৃহাকে। কিন্তু দরজা খুলে স্নিগ্ধা অবাক হয়ে তাকালো। আদিল তার সামনে দাড়িয়ে। আদিল স্নিগ্ধার ঘরে ঢুকে বললো,” আমি ভেবেছিলাম রাগটা শুধু আমাকেই দেখাও কিন্তু ভুল ভেবেছিলাম। তুমি তো দেখি সবাইকেই রাগের উপর রাখো।”
স্নিগ্ধা ভ্রু কুঁচকে তাকালো। আদিলকে এখন তার রহস্য মানব মনে হচ্ছে। যার চারিপাশে রহস্যে ঘেরা। কিন্তু কোনোটাই স্পষ্ট নয়।
[ #চলবে ]