অনুভূতিটা_অদ্ভুত “পার্ট ০৩”
#লাবিবা_ওয়াহিদ
,
রাতে ছাদে বসে কালকের পায়ে ব্যান্ডেজ যেখানে ছিলো সেখানে হাত দিয়ে আনমনে ভাবছি প্রতিটা ঘটনা। এমন অদ্ভুত সব ঘটনা আমার সাথে ঘটেছে? আচ্ছা এই ভূত টূত কিছু করেনি তো? আরে ধুর কিসব উল্টা পাল্টা ভেবেই চলেছি এটা কি করে সম্ভব। ভূত দানব বলতে কিছুই নেই। তবে জ্বিন তো আছে। নাহ জ্বীন ট্বীন কেন এসব করতে যাবে ওদের কি খেয়ে দেয়ে কাজ নেই। তবুও কাল জঙ্গলের বিষয় টা কিছুতেই ভুলতে পারছি। কে সেই মেয়ে যার কান ফাটানো চিৎকার আর আমি আমার রুমে গেলামই বা কখন? সব, সব আমায় কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।
এসব চিন্তা করতে করতেই দুই হাত মাথায় চাপ দিয়ে ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকলাম। হঠাৎ পরিবেশ কেমন ঠান্ডা হয়ে গেলো। এমন সময়ই কেউ মিষ্টি সুরে বলে, “এতো রাতে ছাদে কি করছেন আপনি?”
কন্ঠটা শুনে আমি চট করে মাথা উঠিয়ে এদিক সেদিক তাকালাম। কই কেউই তো নেই তার উপর অন্ধকার আমাদের ছাদেই বা কি করে আসবে? আমার উত্তর না পেয়ে সে আবারও বলে উঠে,”চুপ করে কি খুঁজছেন?”
এমন মধুর আচরণ হয় বলে আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না। কথা বলার ধরণ কন্ঠ সব মিলিয়ে মন ছুঁয়ে যাবার মতো কিন্তু কেউই যে নেই আমি কি ঠিক শুনছি নাকি নিতান্তই আমার মনের ভুল?
আর কন্ঠটা শুনছি না এতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম এই ভেবে যে হয়তো আমার মনের ভুল। আবার কিছুক্ষণ আনমনে কিছু ভাবতে লাগলাম হঠাৎ আবার সেই কন্ঠ!
– চুপ থাকতে ভালোবাসেন?
তার কথায় টাস্কি খেয়ে গেলাম। কেমন যেনো অনুভূতি হচ্ছে সে আমার পাশেই। পাশে তাকিয়ে কাউকেই দেখতে পেলাম না। নিজের অজান্তেই শান্ত স্বরে বলে ফেলি “হুম।”
সে যেনো মৃদ্যু হাসলো। তারপর বলে,
– আপনি কি কোনো বিষয় নিয়ে সংশয়ে আছেন?
আবার পাশে তাকালাম। এবার ছায়ার মতো কিছু দেখা যাচ্ছে। আমার থেকে ২-৩ হাত দূরে সে বসে আছেন। আমি তার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বললাম, “আপনি কে আর অনুমতি ছাড়া আমাদের ছাদে কি করছেন? জানেন না অনুমতি না নিয়ে ছাদে চোরের মতো আসা টা অন্যায়?”
সে আমার কথায় কিছুটা হাসলো তবে এই হাসির কোনো শব্দ নেই। তাকে দেখে অবাক লাগছে। একজন মানুষের কন্ঠসর আর হাসি এতোটা নিঁখুত কি করে হয়?
– আমার কোথাও আসা যাওয়ার অনুমতি লাগে না তবুও দুঃখিত।
– ঠিক আছে। এখন বলুন আপনি কে আর এখানে কি করছেন? এক মিনিট আপনি কোনো চোর টোর নন তো? চুরি করার ধান্দা থাকলে আগেই বলে রাখি এখান থেকে বেচে ফিরতে পারবেন না হুম।
– আপনি যেমন টি ভাবছেন তেমন টি নয়। আর যদি চুরির ধান্দাই থাকতো তাহলে আপনার সাথে বসে কথা বলতাম না। আমার আম্মি আব্বা আমায় চুরির শিক্ষা দেন নি।
তার কথা যথেষ্ট ভদ্রতা এবং যুক্তিসম্পন্ন। কোনো চোরের তো এমন ভদ্রতা থাকার কথাই নয়। আর তার প্রতিটা কথারই যুক্তি আছে। সত্যিই তো যদি সে চোরই হতো তাহলে তো এখানে বসে থাকতো না উল্টো নিজে চুরি করে ধরা খেলে আমাকেই মেরে সাবাড় করে দিতো।
– কি এতো ভাবছেন আপনি?
– না কিছু নয়। আপনি কিন্তু আমার কথা এড়িয়ে যাচ্ছেন।
– কোথায় এড়িয়ে গেলাম? আপনায় তো সঠিক উত্তরই দিচ্ছি।
– না দিচ্ছেন না আপনি।
– ঠিক আছে বলুন আমি যথাসম্ভব সঠিক উত্তর টা দেওয়ার চেষ্টা করবো।
– আপনি কে?
– সেটা অজানাই থাক?
– কিন্তু কেন?
– সেটা বলা যাবে না সব বলা যায়না কিছু অজানা থাকাই ভালো।
– তাহলে এটা বলুন আপনি এখানে কেন এসেছেন?
– যদি বলি আপনাকে সঙ্গ দিতে?
– মানে?(অবাক হয়ে)
– না কিছু না মজা করছিলাম।
– আমার সঙ্গী লাগবে না আপনি আসতে পারেন।
– কেন লাগবে না ভুল কি আমার?
– ভুল আপনার নয় আমার।
সে যেনো আমার কথার মানে বুঝতে পারে। কিছুক্ষণ দুজনের মাঝেই নিরবতা চলে। নিরবতা ভেঙ্গে সে বলে, “কখনোই হতাশ অথবা নিজেকে দোষী ভাববেন না। মনে রাখবেন মহান আল্লাহ তায়ালা কখনোই অন্যায় সহ্য করেন না। তার উপর ভরসা রেখে আগামী দিনের পথে এগিয়ে যান বিপদ আসলে সাহসীকতার সাথে সেটা জয় করুন। আর কখনোই তার থেকে ভরসা হারাবেন না।”
তার কথা গুলো শুনে আমি তার দিকে অবাক হয়ে তাকালাম। সে কি করে বুঝলো আমার মনের কথা? বুঝলো কিভাবে যে আমি নিজের প্রতি বিরক্ত, হতাশ! আমার এমন দৃষ্টি দেখে সে আবার বলে,”অনুমান করে কথাগুলো বলেছি।”
আবারও অবাক না হয়ে পারলাম না। সে স্পষ্ট আমার মনের কথা বুঝতে পারছে আর বলছে অনুমান? নাহ এর পরিচয় আমার যে জানতেই হবে।
– আপনি….
সে আমায় বলতে না দিয়ে বলে,”অনেক রাত হয়েছে যান গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। এতো রাতে ছাদে থাকা টা ঠিক নয়।”
– আমার বাড়ির ছাদ আমি যখন ইচ্ছে আসবো যখন ইচ্ছে যাবো আপনার কিছু বলতে হবে না।
– আপনি নিশ্চয়ই ভুলে যাচ্ছেন কালকের বিষয় টা। কাল আপনার সাথে ঘটা দুর্ঘটনাটি আবার হোক সেটা আপনি চাচ্ছেন।
তার কথায় আমি আরও বেশি অবাক হয়ে গেলাম। সে কি করে এতোসব জানলো? অথচ এই বিষয়টা নিয়েই আমি অধিক চিন্তিত।
– আপনি কি করে জানলেন?
– আমি সব কিছুর সাক্ষী ছিলাম।
– মানে? আপনি কি করে…
যে আমার কথার উত্তর না দিয়ে বলে, “সেই জঙ্গলে সন্ধ্যার পর কখনোই একা আসা যাওয়া করবেন না। এতে করে আপনার যেকোনো বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। এখন বাসায় চলে যান বিপদ সবসময়ই আপনার নিকটে।”
তার কথায় চারপাশে কেমন যেনো জোরে বাতাস বইতে শুরু করে। আমি ভয়ে বাসায় নিজের রুমে চলে আসি। নিজের রুমের দরজা ঠিক মতো লক করে বিছানায় পা তুলে গুটিশুটি মেরে বসে পড়লাম। বাইরে থেকে কেমন আত্মা কাঁপানো শব্দ কানে এসে বারি খাচ্ছে। ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। কি হচ্ছে আমার চারপাশে কিছুই যে বুঝে উঠতে পারছি না। চুপচাপ আল্লাহর নাম মনে জপতে শুরু করলাম চোখ বন্ধ করে। হঠাৎ কেমন যেনো মনে হলো কেউ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তাড়াতাড়ি চোখ খুলে দেখলাম রুমের একটা জানালা খোলা আর বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। আমার ফিল হচ্ছে কেউ জানালা দিয়ে এতোক্ষণ আমায় দেখছিলো। ভয়ে আমি উঠে আর জানালা লাগানোর সাহস পেলাম না। পরিবেশ শান্ত রাখতে আয়াতুল কুরসি পড়তে শুরু করলাম চোখ বন্ধ করে। আস্তে আস্তে পরিবেশ কেমন স্বাভাবিক হয়ে গেলো। চোখ খুলে দেখি সেই জানালা টা বন্ধ। কিন্তু এটা কি করে সম্ভব কিছুক্ষণ আগে তো সেটা খোলা ছিলো। কি জানি বাবা কি হচ্ছে। আল্লাহ রক্ষা করুন আমাকে এসব যে আমি নিতে পারছি না।
এসব ভাবতে ভাবতেই শুয়ে পড়লাম। সকালে শরীরে ঠান্ডা কিছু অনুভব হতেই লাফ দিয়ে উঠে বসলাম। দেখি আমার শরীর ভেজা। মাথা উঁচু করে তাকাতেই খেলাম এক থাপ্পড়! গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে দাদিম্মির দিকে তাকালাম। হ্যাঁ দাদিম্মি আমার গায়ে পানি ঢেলেছে সাথে থাপ্পড়ও দিয়েছে। কিন্তু কেন তা বুঝতে না পেরে অসহায় দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
সে হুংকার দিয়ে বলে,” কিরে নবাব্জাদী বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে আর আপনি পরে পরে ঘুমাচ্ছেন? এদিক দিয়ে নাস্তা বানাবে কে শুনি? তোকে এই বাড়িতে ঠাই দিয়েছি কি পরে পরে ঘুমানোর জন্য অকর্মার ঢেকি। যেমন মা তেমনই তার মেয়ে। কেন যে ওই মুখপুরি কে ছেলের বউ হিসেবে আনলাম।”
– দাদিম্মি তুমি আমায় যা খুশি বলো আমার মাকে নিয়ে একটা টুঁশব্দও করবে না। তুমি নিজেও একজন মেয়ে সেটা কি ভুলে যাচ্ছো? নিজে একজন মেয়ে হয়ে অন্য একজন মেয়েকে এসব বলতে বিবেকে বাধে না? আমার মা যদি এতোই খারাপ হতো তাহলে তোমার মেয়ে কই? কেন এতো বছর তোমার খোঁজও নিয়ে দেখলো না যে তুমি সুস্থ আছো নাকি মরে গেছো? নিজের স্বভাবের জন্যই আজ ফুপি তোমার থেকে দূরে খোঁজ নেয়না। যেদিন নিজেকে শুধরাতে পারবে সেদিনই তোমার কাছে সবাই আসবে।
আমার কথা শেষ হতে না হতেই দাদিম্মি আমার চুল ধরে খাট থেকে টেনে টুনে নামালো। তার চোখ দিয়ে যেনো আগুন গলগলিয়ে পড়ছে। আমি চুলের ব্যথায় চেঁচাচ্ছি আর বারবার দাদিম্মিকে বলছি,”দয়া করে আমায় ছেড়ে দাও আমার লাগছে খুব ও আল্লাহ!!!”আমার আকুতি মিনুতি যেনো দাদিম্মির কান পর্যন্ত ঢুকলো না। খাট থেকে নিচে চুল ধরে নামিয়ে দিলো এক ধাক্কা। তার ধাক্কায় আমি ছিটকে দূরে গিয়ে পড়লাম। দাদিম্মি আমায় যেই মারতে যাবে এমন সময়…..
,
,
,
,
,
,
,
চলবে!!!