অনুভূতিটা_অদ্ভুত “পার্ট ০৫”
#লাবিবা_ওয়াহিদ
—————
রুমে একটি দেখি ফুপি নেই। সারা বাসা খুঁজেও তাকে পেলাম না কোথায় গেলো? রান্নাঘরে আসার আগে তো রুমেই দেখে আসলাম হঠাৎ করে কোথায় উধাও হয়ে গেলো। সারা বাসায় তন্নতন্ন করে খুশিও পেলাম না। আচ্ছা ছাদে নেই তো? গিয়ে দেখি পেলেও পেতে পারি।
ভেবেই যেই এক পা এগোবো ওমনি কাল রাতের কথা মনে পড়ে গেলো। সেসব পাত্তা না দিয়ে সোজা ছাদে চলে গেলাম। ছাদে এদিক সেদিক খুঁজে ছাদের এক কোণে একটা প্রতিবিম্ব দেখা যাচ্ছে। আস্তে আস্তে সেই প্রতিবিম্বের দিকে গেলাম। দেখে বোঝা যাচ্ছে সে একটা মেয়ে এবকং আকাশের দিকে মুখ করে চেয়ে আছে। তার পিছে দাঁড়িয়ে কাপা কাপা হাতে কাধে হাত রাখলাম। এতে করে সামনের মেয়েটা আমার দিকে ফিরে তাকালো। আমি হাফ ছেড়ে বাচলাম ফুপিকে দেখে। ফুপি আমায় ছাদে দেখে জিজ্ঞেস করে,”কি আয়ু তুই ছাদে কি করছিস?”
– না তোমাকে খুঁজতে আসলাম তা তুমি এতোরাতে ছাদে কি করছো?
ফুপি আমার দিকে একপলক তাকিয়ে পূর্বের মতোই আকাশের দিকে তাকালো এবং আমি তার পাশে দাঁড়ালাম।আমি উত্তরের অপেক্ষায় ফুপির দিকে তাকিয়ে আছি। চাঁদের আলোয় পুরো ছাদ ঝলমলে হয়ে আছে। ফুপির সুন্দর্য যেনো আরও দ্বিগুণ হারে বেড়ে গেলো। আমি অবাক হয়ে তার সুন্দর্য দেখছি। এতোটা সুন্দরি কাউকে দেখেছি বলে মনে হয়না ফুপি অনেকক্ষণ পর আকাশের দিকে তাকিয়েই বলে,”বাইরের এই সুন্দর্য দেখে লোভ সামলাতে পারিনি তাই ছাদে চলে আসছি তোকে না বলে।”
– ওহ আচ্ছা ফুপি তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি যদি অনুমতি দাও।
– হুম নির্দ্বিধায় বলতে পারিস।
– তোমার চেহারায় বয়সের ছাপ কেন পড়েনি?
ফুপি মুচকি হেসে বলে,”আমি এতো বয়স্ক নই আপাতত ২৭ বছর বয়সী তরুণী আমি।”
আমি অবাক তার দিকে তাকালাম আমি তো এতোক্ষণ কতোই না বড় ভেবেছিলাম ফুপিকে কিন্তু তার এই সুন্দর্যে কেউ বিশ্বাস করবে না তার বয়স ২৭! আমি আবার বলি,”তাহলে তো নিশ্চয়ই তোমার বিয়ে হয়েছে। আচ্ছা ফুপাকে আনলে না যে?”
আমার কথায় ফুপি নিমিষেই মুখ কালো করে ফেলে। তার ভেতরের কষ্টটা যেনো তার চেহারায় ফুটে উঠে। আমি অবাক না হয়ে পারলাম না। আমি তো তাকে কষ্ট দিয়ে কিছু বলিনি? শুধু জিজ্ঞেস করেছি বিয়ে আর ফুপার কথা। এখন নিজেরই অনুতপ্তবোধ লাগছে। আমার একটা প্রশ্নের জন্যই ফুপির কষ্ট বাড়িয়ে দিলাম। ফুপি আমার অনুতপ্ত বোধ দেখে একটা শুকনো হাসি দিয়ে বলে, “হ্যাঁ আমার বিয়ে হয়েছে তাও আমার ভালোবাসার মানুষটির সাথে। যাকে ভালোবাসার জন্য কোনো সংখ্যা পরিমাপ করা যেতো না। তার হাত ধরেই তো আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছিলাম কিন্তু ভাগ্যের টানে তোর টানে আমায় আবার ফিরতে হলো।”
আমি ফুপির দিকে তাকিয়ে রইলাম এবকং বললাম,”তো ফুপাকে কেন আনলে না?”
ফুপি আড়ালে চোখ মুছলো কিন্তু আমার চোখে সে ধরা পড়ে গেলো তবুও কিছু বললাম না। ফুপি আগের মতোই শুকনো হাসি দিয়ে বলে,”সে আমায় বাসা পর্যন্ত দিয়ে চলে গিয়েছে।”
কেন যেনো মনে হচ্ছে ফুপির হাসির পিছের কষ্টটা উপলব্ধি করতে পারছি। কি এতো কষ্ট তার যার জন্য এভাবে নিজের কষ্টগুলোকে লুকিয়ে রাখিছে প্রতিনিয়ত? মনের মধ্যে হাজার খটকা থাকলেও কিছু জিজ্ঞেস করলাম না ফুপিকে। কিছুক্ষণ দুজনের মাঝে নিরবতা থাকলো। নিরবতা ভেঙে ফুপির দিকে তাকিয়ে বললাম,”খুব ভালোবাসো না ফুপাকে?”
ফুপি আকাশের দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিকভাবেই উত্তর দিলো,”হুম যার সকল পরিমাণকে হার মানাবে।”
মুগ্ধ হয়ে তাকালাম ফুপির দিকে। ভালোবাসা সম্পর্কে আমার তেমন কোনো ধারণা নেই তবে ফুপির এমন ভালোবাসা দেখে নিজেরই অবাক লাগছে। কি করে একটা মেয়ে নিজের সবটা দিয়ে একজন মানুষকে ভালোবাসতে পারে। এভাবেই কিছুক্ষণ থেকে ফুপি বলে উঠে,”আচ্ছা চল রুমে যাওয়া যাক এখানে থাকা ঠিক হবে না।”
– তুমি যাও আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই যাচ্ছি।
– ঠিক আছে আয়।(মুচকি হেসে)
বলেই ফুপি চলে গেলো। আমি আরো কিছুক্ষণ সেখানে রইলাম। আবার সেই ঠান্ডা অনুভূতি চারপাশ টা কেমন অজানাভাবে ঠান্ডা হতে শুরু করে। আবার সেই কন্ঠসর,
– আসসালামু ওয়ালাইকুম।
তার সালামে আমি অনেকটাই মুগ্ধ হয়ে গেলাম। কিন্তু অপূর্ব তার কন্ঠ। চারপাশটা এক অজানা সুগন্ধিতে ভিরে গেলো। আমি চোখ বুঝে নিশ্বাস নিচ্ছি। নিশ্বাসের সাথে সাথে যেনো মনের ভেতরের বেদনা গুলো নিশ্বাসের সাথে বেরিয়ে যাচ্ছে। আমাকে চুপ থাকতে দেখে সে আবার বলে,
– সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব।
আমি সাথে সাথে চোখ খুলে ফেলি তারপর লজ্জাসুরে সুরে সালামের উত্তর দিলাম এবং নিজেও সালাম দিলাম। তিনি সালামের উত্তর দিয়ে বলেন,”এতোরাতে এখানে কি করছেন?”
– যদি বলি আপনার অপেক্ষা করছিলাম।
– মজা নিচ্ছেন?
– উহু একদম নয়।
– তাই?
– হুম। এতোক্ষণ আসেননি কেন?
– আপনার সাথে কেউ ছিলো তাই আসা হয়নি।
– কেন অন্যকেউ থাকলে কি সমস্যা হয়?
– সেটা আপনার ছোট মাথায় ঢুকবে না।
আমি গাল ফুলিয়ে বলি,”মোটেও না হুহ আমার মাথা ইয়ায়া বড়।”
সে মৃদ্যু হাসলো। অদ্ভুত তার সেই হাসি একদম নিঁখুত।
– যদি এতোই বড় হতো আশেপাশে কি হচ্ছে তা নিয়ে অবশ্যই বিবেক দিয়ে ভাবতেন।
তার কথায় অবাক হয়ে গেলাম। কি বললো এটা?
– মানে?
– ঘটে বুদ্ধি থাকলে কথার মানে বের করে দেখান।
– অপমান করছেন?
– আস্তাগফিরুল্লাহ! আমি তো শুধু আপনায় সাহায্য করছি।
– এতোই যেহেতু সাহায্য করে থাকেন তাহলে জিলাপির মতো কথা প্যাঁচান কেন সোজাসাপ্টা বলুন।
– আরে রাগছেন কেন? নিজেকে সংগত করুন।
– আগে আপনার নাম বলেন আর আপনাকে কেন দেখতে পাইনা সেটাও বলেন?
– জানাটা কি খুব প্রয়োজন?
– হ্যাঁ।
– তাহলে বাদ দিন আমি যাচ্ছি আল্লাহ হাফেজ।
– আরে আরে কোথায় যাচ্ছেন আমি কি বলেছি আপনাকে যেতে?
হঠাৎ পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে গেলো। আশেপাশে তাকিয়ে চিৎকার করে বলছি,”এইযে শুনুন, কোথায় আপনি, সামনে আসুন”। কিন্তু আফসোস কোনোরকম রেসপন্স পেলাম না। মন টা খুব খারাপ হয়ে গেলো। এভাবে কেন চলে গেলো? আমার কি দোষ কেন এমন করলেন উনি? বলা নেই কওয়া নেই হুট করে চলে গেলো?
এভাবে মন খারাপ করে রুমে চলে আসলাম। রুমে এসে ফুপিকে পেলাম না আরেকরুমে গিয়ে দেখি সে সেই রুমে শুয়ে আছে। আমি দরজা ভিজিয়ে নিজের রুমে চলে আসি। মন টা আজ বড্ড খারাপ। একবার ধন্যবাদটাও দিতে পারলাম না রাগ করে চলে গেলেন। আচ্ছা তার এভাবে চলে যাওয়া টা মেনে নিতে কেন পারছি না? মাত্রই তো একদিনের পরিচয়।
নিজেকে বেশ একা একা লাগছে। মনের মধ্যে কেমন শূন্যতা অনুভব হচ্ছে। নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে দু এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো। নিজেই অবাক হয়ে গেলাম। আমি কাঁদছি কেন? কাঁদার মতো তো কিছুই ঘটেনি তাহলে কাঁদলাম কেন? এটা কেমন শূন্যতা যার জন্য এভাবে নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো? কেন হচ্ছে এমনটা?এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়লাম।
আমি এক বিশাল ফুলের বাগানে রয়েছি এবং নাম না জানা ফুলে হাত বুলিয়ে সুগন্ধি নিচ্ছি। কি সুন্দর পরিবেশ, নিল আকাশ ফুরফুরে আবহাওয়া। হঠাৎ সব অন্ধকার হয়ে গেলো। আমি চারপাশে তাকিয়ে চিৎকার দিচ্ছি অন্ধকার কেন হলো বলে। এক ভয়ংকর চেহারার লোক আমার সামনে এসে দাড়ালো এবং ভয়ংকর হুংকার দিয়ে হাসতে থাকে। আমি ভয়ে চিৎকার দেই৷ হঠাৎ লোকটা দানবের ন্যয় বড় হয়ে যায়। তারপর ইয়ায়ায়া বড় হা করে আমাকে খেতে আসছিলো এমন সময়ই চোখ বন্ধ করে চিৎকার দিয়ে বললাম,”বাচাও কেউউউউউউ”
,
,
,
,
,
চলবে!!!