#সে_আসবে_বলে(৩য় পর্ব)
লেখাঃ Md. Nazmul Huda
ফোন পেয়ে আবিদ তড়িঘড়ি করে বাসার দিকে ছুটলো। একে তো মা-কে না পেয়ে মাথায় কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। তার ওপর এখন আবার বাসায় নতুন করে আবার কি হলো।
উফফ আর ভাবতে পারছে না আবিদ। কোনো রকমে বাসায় পৌঁছে দেখলো কথার মাথায় ব্যান্ডেজ করা। সে সোফার ওপর চুপচাপ বসে আছে। পাশের ফ্ল্যাট থেকে দু তিনজন মহিলা এসে ওর পাশে বসে আছে। আবিদ কে দেখে তারা যে যার মতো করে চলে গেলো। আবিদ দৌঁড়ে কথার কাছে গেলো।
– কি হয়েছে তোমার কথা? মাথায় আঘাত পেলে কি করে?
– তাতে তোমার কি? তোমার কাছে তো তোমার মা ই সব। এছাড়া সারা দুনিয়ায় কোনো কিছুই তোমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ না।
– এসব কি বলছো তুমি? সব ব্যাপারে মা’কে কেন টানো আজকাল? হয়েছে টা কি তোমার?
– ও আচ্ছা। তাহলে এটা বলো আমি কতবার ফোন করেছি তোমায়? পিক করো নি কেন?
আবিদ এবার অনুতপ্ত হলো। মায়ের চিন্তায় কথার ফোন তুলে নি। কথা অনেকবার ফোন দিয়েছে। কিন্তু আবিদ সেটা কে গুরুত্ব দেয় নি। ভেবেছে এমনিই ফোন করে বাসায় আসতে বলবে। সকালে অবশ্য এরকমই করেছিলো কথা। এইজন্য আবিদ এবারেও তেমন ভেবেছিলো।
– আমি স্যরি। আমি আসলে বুঝতে পারিনি। ভেবেছিলাম সকালের মতো অকারণে ফোন দিয়ে বাসায় আসতে বলবে। এমনিতেই আমি মা-কে নিয়ে ভীষণ টেনসড।
– সেজন্যই বললাম। মায়ের চিন্তায় তুমি আমার কথা ভুলে গেছো। তোমার কাছে আমার কোনো মূল্যই নেই।
– এরকম কোনো ব্যাপার না কথা। আমি তোমাকে খুবই ভালোবাসি। আর মাকে ও খুব ভালোবাসি। আমার কাছে তোমরা দুজনেই গুরুত্বপূর্ণ। দুজনেই মূল্যবান। কিন্তু দুজন সম্পূর্ণ আলাদা। তুমি বারবার দুজনকে এক জায়গায় কেন নিয়ে আসো বলো তো? মায়ের স্থান মায়ের কাছে, স্ত্রীর স্থান স্ত্রীর কাছে। তুমি এটা কেন বুঝতে পারো না??
– আমি এত কিছু বুঝি না। তুমি আমার থেকে অন্য কাউকে বেশি ভালোবাসলে আমি সেটা কখনোই মেনে নিবো না। আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি আবিদ।
এটা বলে আবিদ কে জড়িয়ে ধরলো কথা। আবিদ ও আলতো করে কথার পিঠের ওপর হাত রাখলো। আবিদ বুঝতে পারছে না এই মুহূর্তে কথাকে ঠিক কি বলা উচিত। সব স্ত্রী ই তার স্বামী কে ভালোবাসে।।আর স্ত্রী রা বেশি ভালোবাসলে স্বামী রা-ই বেশি খুশি হয়। কিন্তু এটা কেমন ভালোবাসা?
আবিদ কথাকে বুকের ওপর থেকে সরিয়ে দিলো। কথাকে জিজ্ঞেস করলো,
– এখন এটা বলো যে মাথায় ব্যথা কিভাবে পেয়েছো? বেশি কেটেছে? আর বাসার অবস্থা এমন কেন?
– আসলে তোমাকে ফোনে না পেয়ে আমার খুব খারাপ লাগছিলো। এইজন্য বাসার জিনিসপত্র গুলো ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলাম। তখন শ্যাম্পুর বোতল ভেঙে গিয়ে ফ্লোরে শ্যাম্পু পড়ে গেছে। আর তাতেই পা স্লিপ করে পড়ে যাই। আর পড়ে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের কোণায় মাথায় বারি লাগে।
– ওহ আচ্ছা। বেশি আঘাত লেগেছে?
– না বেশি লাগে নি। সামান্য কেটে গেছে। পাশের বাসার ভাবি ফার্স্ট এইড করে দিয়েছে।
– অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। হোক রাগ, ঘৃণা বা ভালোবাসা।
এটা বলে আবিদ ওয়াশরুমে চলে গেলো কথাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে। কিন্তু কথা যা বলার জন্য আবিদ কে এতবার ফোন দিয়েছিল সেটাই বলা হয়নি। আবিদ তো ইদানীং কথার তেমন কোনো কথাই শুনছে না। আগে ওর প্রতিটি কথা খুব মনযোগ দিয়ে গুরুত্ব সহকারে শুনতো। বিষয় টা কথার খুব খারাপ লাগে। ওর মায়ের প্রতি রাগ আরো বেড়ে যায়। চলে গিয়েও আবিদকে পুরোপুরি কাছে পেতে দেয়না।
আবিদ বের হওয়ার পরে কথা আবিদের কাছে গিয়ে বললো,
– আবিদ তুমি কি আমাকে ইগনোর করছো?
– না তো। এরকম মনে হচ্ছে কেন?
– আমার কোনো কথাই পুরোপুরি ভাবে শুনতে চাও না।
– তুমি শোনার মতো কথা বলোই না আমার সাথে। এইজন্য আমার মনে হয় তোমার সাথে যত কম কথা বলা যায় ততই আমার জন্য ভালো।
আবিদের কথা শুনে কথার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো। আবিদ কিছু না বলে সেখান থেকে চলে গেলো। কথা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চোখ মুছে আবিদকে বললো,
– আসলে আমার বাবার শরীর টা খুবই খারাপ। আমাদের যেতে বলেছে। এইটা বলার জন্যই তোমাকে এতবার ফোন দিয়েছি। আসলে আমি একাই যেতে পারতাম। কিন্তু বাবা অসুস্থ মানুষ সে আবার কি না কি ভাবে তাই তোমাকে নিয়ে যাবো।
আবিদ আর বেশি কিছু না বলে রেডি হতে শুরু করলো। আর কথাকেও রেডি হতে বললো। কথা আবিদকে বেশ কয়েকবার খেতে বললো। কিন্তু আবিদ না খেয়েই বের হল। তাই কথাও না খেয়ে বের হলো। পুরো রাস্তায় আবিদ একটা কথাও বলে নি কথার সাথে। এতে কথার বেশ রাগ হয়। সে মনে মনে ভাবে যে ওর শাশুড়ী কে যে ভাবেই হোক ওদের থেকে দূরে রাখতে হবে।
বাসায় গিয়ে আবিদ সবার সাথে বেশ ভালো ভাবে কথা বললো। এটা দেখে কথা মনে মনে খুব খুশি হয়। দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পরে আবিদ আর কথা দুজনে কথার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে। তখন আবিদ বলে,
– কথা?
– হুম বলো।
– তোমার বাবা মায়ের সাথে আমি ভালো আচরণ করলে তোমার অনেক ভালো লাগে। তাই না?
– অবশ্যই। এটা কি জিগ্যেস করার মতো কোনো প্রশ্ন?
– হুম তাই তো। আচ্ছাহ আমি যদি তোমার বাবা মা কে অপমান করি তাহলে কেমন লাগবে?
– অনেক বেশি কষ্ট পাবো। তোমার জন্য আমার মনে যে ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা আছে সেটা কমে যাবে।
– তাহলে তুমি আমার মায়ের সাথে খারাপ আচরণ করলে সেটা আমার কেমন লাগে? আমার কি কষ্ট হয়না? আমার কি তোমার ওপরে থাকা শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা কমে যাবে না?
– অবশ্যই না। কারণ আমার বাবা মা তো তোমার মায়ের মতো সারাক্ষণ পিছনে লেগে থাকে না। সব কাজে ভুল ধরে না। প্রাইভেসি নষ্ট করে না।
আবিদ কথার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছুই বলে না। কারণ ওকে বুঝিয়েও লাভ নেই। বুঝার হলে এতদিনে বুঝত।আবিদ চুপচাপ কি যেনো ভাবছে। হঠাৎ করে কথাকে বললো…
– চলো বাবাকে নিয়ে মেডিকেলে যাই।
– না লাগবে না। ভাইয়া আসতেছে সে নিয়ে যাবে।
– আরে সে না হয় আসলো। এতক্ষন বসে থাকবে?
– তুমি তোমার মাকে নিয়ে ভেবে থাকো।
– এইটা কোন ধরনের ব্যবহার। বাবাকে রেডি করো।
কথাকে এসব বলে একটা গাড়ি ফোন দিয়ে আসতে বললো।
কথার বাবাকে মেডিকেলে নিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বললো। ডাক্তার কতগুলো টেস্ট দিয়েছে। আবিব বাবার টেস্ট নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে লাগলো।
ডাক্তার বললো কথার বাবাকে মেডিকেলে এডমিট করাতে। ডাক্তারের কথা অনুযায়ী মেডিকেলে এডমিট করালো। কথা বাবার পাশে বসে কান্না করে যাচ্ছে। আর আবিদের কাছে বারবার জিজ্ঞেস করছে বাবার কি হয়েছে। আবিদ তেমন কিছুই বলছে না। শুধু বললো “বাবার শরীরটা একটু দূর্বল তাই এডমিট করাতে বলেছে।
রাতে কথার ভাইয়া আসলো। ভাইয়া এসে বললো আবিদ আর কথাকে বাসায় চলে যেতে। কিন্তু কথা বাসায় যাবে না। বাবার কাছেই থাকবে। তাই আর কিছু বললো না আবিদ।
আবিদ শুধু একটা কথাই ভাবছে…
” কথা কত সুন্দর করে বাবা মাকে ভালোবাসে। কিন্তু আমার মায়ের ভাগ্যে নেই ছেলের বউয়ের ভালোবাসা পাওয়ার। আমার মা তো অন্যায় করেনি। কিন্তু কথা কেনো আমার মাকে ওর মায়ের মত ভালোবাসতে পারল না।”
এরই মধ্যে কথা বলে উঠলো…
– কি ব্যাপার আবিদ? তোমাকে যে আমার বাবা হাতের ইশারায় ডাকতেছে। তুমি এভাবে চুপচাপ আছো কেন। আমি বুঝতে পারছি না তুমি এমন কেন করতেছ আমার বাবার সাথে। বাবা ডাকতেছে তার কাছে যাও একটু কথা বলো।
আবিদ কথার বেডের পাশে গিয়ে বললো..
– বাবা কিছু বলবেন?
রাত তো অনেক হয়েছে কিছু একটা খেয়ে আসো। তোমরা সবাই না খেয়ে আছো। তুমি খাওনি কথাও খায়নি বাইরে গিয়ে খেয়ে আসো। খেয়ে কোনভাবে এখানে একটু ঘুমাও। সকালে না হয় বাসায় চলে যাবে তোমরা।
– আমি খাব না। কথাকে নিয়ে আচ্ছি।
রাত্রে বারোটা বেজে গেছে। একপাশে দাঁড়িয়ে কথা বলতেছি পুলিশ অফিসারের সাথে। কথা বলে শেষ করে পিছনে ফিরতে যাব তখন দেখি কথা আমার পিছনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। আর আমার কথাগুলো শুনছে।
আমি কিছুটা থমকে গেলাম। আমি যেসব বলেছি ওসি সাহেবের সাথে তা যদি কথা শুনে ঝামেলা হয়ে যাবে।
[চলবে…….]