#সে_আসবে_বলে(৪র্থ পর্ব)
লেখাঃ Md. Nazmul Huda
সকালে আবিদ পুলিশের ফোন পেয়ে বাসায় যায়। যাওয়ার সময় মনে মনে ভাবতে লাগলো কথার আচরণ ইদানীং কেমন যেন সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। আমি আমার মাকে খুঁজে পাচ্ছি না, টেনশনে মরে যাচ্ছি অথচ কথা এমন বিহেভিয়ার করছে যেন কিছুই হয়নি। আচ্ছা ও কিছু করে নি তো মায়ের সাথে? পরক্ষণেই ভাবলো না কথা তো সেরকম মেয়ে না। হয়তো কিছু কারণে ওর মাকে অসহ্য লাগতে পারে। তাই বলে এতটা কি? যে তার সাথে কিছু করার কথা ভাবতে পারে? কিছুই বুঝতে পারে না আবিদ।
পুলিশ আবিদের সাথে দেখা করে কথার বিষয় কিছু ইনফরমেশন জানতে চাইলো। আবিদ ইতস্তত করছিলো ওদের সবকিছু বলবে কিনা। কিন্তু ভাবলো আপতত কিছু বলবে না। যদি কথা এসবে জড়িত না হয়ে থাকে তাহলে শুধু শুধু পুলিশের ঝামেলায় ওকে জড়ানো ঠিক হবে না। মেয়ে মানুষ অযথাই পুলিশের হয়রানির স্বীকার হবে। আবিদ সিদ্ধান্ত নিলো কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। এর মধ্যেও যদি ওর মা না ফিরে তাহলে ও আর কোনো কিছুই ভাববে না। পুলিশ কে কথার সবকিছু খুলে বলবে।
আবিদ কথাকে দুদিন ওর বাবার কাছে থাকতে বলে এসেছিলো। কিন্তু সকাল ১০ টার দিকে কথা বাসায় চলে আসে। আবিদ তখন নিজের খাওয়ার জন্য খিচুড়ি রান্না করছিলো। কথাকে আসতে দেখে তেমন একটা খুশি হলো না। কথা এসে আবিদকে জড়িয়ে ধরলো।
– তোমাকে না বললাম বাবার কাছে দুদিন থাকতে? চলে আসলে যে?
– বাবার শরীর এখন ঠিক আছে। আর তাছাড়া তোমাকে ছাড়া একটুও থাকতে পারছিলাম না। এইজন্য তাড়াতাড়ি চলে আসলাম। কাল আবার গিয়ে বাবাকে দেখে আসবো।
– আচ্ছা ঠিক আছে। ফ্রেশ হয়ে আসো।
– আচ্ছা। কিন্তু তুমি কি আমাকে দেখে খুশি হও নি?
– এরকম কেন বলছো?
– না মনে হচ্ছে।
– না সেরকম কিছুই না। তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো। একসাথে খাবো।
কথা কিছু না বলে একটু হেসে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
কথা আর আবিদ দুজনে খাবার টেবিলে খাবার খাচ্ছে। আবিদ কথার মুখে খাবার তুলে খাইয়ে দিচ্ছে। হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো। বিরক্তি নিয়ে কথা উঠতে যাবে তখন আবিদ কথাকে বসতে বলে নিজে উঠে গেলো। দরজা খুলে নিজের মাকে দেখে আবিদ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে নি। দরজার সামনে বসেই মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। এদিকে কথার মাঝে কোন ভাবান্তর দেখা গেলোনা। সে বিরক্তি নিয়ে খাবার খেতে লাগলো।
– কোথায় ছিলে তুমি মা? কোথায় কোথায় না খুঁজেছি তোমায়! আমাকে রেখে তুমি এভাবে চলে যেতে পারলে?
– আরে পাগল আমি তো দুদিনের জন্য বেড়াতে গেছিলাম। কেন বউ মা কে তো বলেই গেছিলাম।
আবিদ কিছুটা রেগে কথার দিকে তাকায়। ততক্ষণে আবিদের মা ব্যাগ নিয়ে বাসার ভেতরে ঢোকে। আবিদ পুলিশ কে ফোন করে জানিয়ে দেয় যে তার মাকে ফেরত পেয়েছে।
– আর বলিস না। আমার এক স্টুডেন্ট খুব করে অনুরোধ করেছে ওর বাসায় যেতে। অনেকদিন ধরে বলছিলো তাই ভাবলাম যে দুদিনের জন্য একটু ঘুরে আসি।
– একটা ফোন তো করতে পারতে?
– আমার কি ফোন আছে? আর তোর নাম্বার টাও তো মুখস্থ নেই। কদিন আগেই নতুন ফোন নিয়েছিস। সেই নাম্বার টা মুখস্থ করা হয়নি। তাছাড়া বউ মাকে বলে গেছিলাম। কিন্তু মনের মধ্যে কেমন যেন অস্থির লাগে। মনে হচ্ছে তুই আমার জন্য হয়তো চিন্তা করছিস। এইজন্য চলে আসলাম।
– ঠিক আছে। ফ্রেশ হয়ে এসো যাও। আমার খুব খিদে পেয়েছে। আমাকে খাইয়ে দাও।
আবিদের মা নিজের ঘরে চলে গেলো। আবিদ এই মূহুর্তে কথাকে কি বলবে বুঝতে পারছে না। ওর মনে হচ্ছে কথাকে দুইটা থাপ্পড় দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিতে। কিন্তু সেটা করতে পারলো না। তাছাড়া মা এসব জানলে খুব কষ্ট পাবে। তাই পরিস্থিতি যতটা সম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেস্টা করলো।
রাতে খাওয়া দাওয়া করে আবিদ কথার কাছে জিগ্যেস করলো,
– মা কি তোমাকে বলে গেছিল?
– হুম।
– তার মানে তুমি জানতে মা কোথায় আছে?
– কেন? আমি কি তোমার মা কোথায় বেড়াতে যাচ্ছে সেই ঠিকানা নোট করে রেখে দিয়েছি নাকি?
– না তা না। কিন্তু আমাকে বলতে তো পারতে যে মা ঠিক আছে।
– আমি কি জানতাম নাকি যে এত এত সিন ক্রিয়েট করবে?
– তোমার একবারো মনে হয় নি যে আমি এতটা চিন্তায় আছি, আমাকে মায়ের ব্যাপারে বলা উচিত?
– এত ন্যাকামি আমার ভালো লাগে না। বুঝলে?
কথা আর কিছু না বলে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। কথার আচরণ আবিদের খুবই খারাপ লাগে। কিন্তু মুখ ফুটে কিছুই বলে না। কারণ ওর মা যদি বুঝতে পারে তার জন্য আবিদ আর কথার মাঝে ঝামেলা হচ্ছে তাহলে নিশ্চিত যে সে আর এখানে থাকবে না। গ্রামের বাড়ি চলে যাবে।
দেখতে দেখতে ছয় মাস চলে যায়। কথার এমন আচরণ আরো বাড়তে থাকে। আবিদ চুপচাপ সহ্য করে যায়। ওর মাকে বেশি একটা বুঝতে দেয় না। কিন্তু কথা আবিদের মা-কে ও অপমান করে। আবিদ কথাকে কিছু বললে সে বাবার বাড়ি চলে যায়। পরে আবিদের মা গিয়ে আবার নিয়ে আসে। আবিদের মা গ্রামে চলে যায়। কিন্তু পরদিনই আবিদ গিয়ে নিয়ে আসে।
কথা ভাবতে থাকে কিভাবে আবিদের মাকে গ্রামে আবার পাঠানো যায়। কিছুদিন পরে কথা সবাইকে জানায় যে সে কন্সিভ করেছে। এই খবর শুনে সবাই বেশ খুশি হয়। কিন্তু কথা পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দেয় যে যদি আবিদের মা এখানে থাকে তাহলে সে এই সন্তানকে কোনোভাবেই পৃথিবীতে আনবে না।
– দেখো আবিদ। আজ তুমি হয় তোমার মা কে বেছে নাও, নাহলে আমাকে আর আমার সন্তানকে বেছে নাও।
– এটা কি রকম শর্ত কথা?
– জানিনা। যদি তুমি আমাদের চাও তাহলে তোমার মাকে গ্রামে পাঠিয়ে দাও। নাহলে আমি আমার বাবার বাড়ি চলে যাচ্ছি। এই সন্তানকে ও রাখবো না। কারণ আমি চাই না ও বাবা ছাড়া বড় হোক আর পৃথিবীর সবার কাছে অবহেলিত থাকুক।
– এটাই কি তোমার শেষ কথা?
– হুম।
– আচ্ছা মাকে গ্রামে পাঠিয়ে দিবো।
আবিদের কথা শুনে কথা খুব খুশি হয়ে আবিদের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এদিকে আবিদের কথা শুনে ওর মা ভীষণ কষ্ট পায়। পরে ভাবে সবার কাছেই তার সন্তান খুব প্রিয় হয়। তাই আজ আবিদ ও তার সন্তানের জন্য নিজের মাকে দূরে করে দিচ্ছে। তাই সে সিদ্ধান্ত নিলো যে সে গ্রামেই থাকবে। যে সন্তানের জন্য এতকিছু করলো আজ তার সুখের জন্য এইটুকু করতে না পারলে আর কেমন মা হলো?
আবিদের মা গ্রামে চলে যায়। আবিদের মা গ্রামে থেকে খুব মিস করতে লাগলো। তার ছেলের বউ প্রেগন্যান্ট অবস্থায় তো তার সেবা করার কথা। কিন্তু আজ সে অনেক দূরে। আবিদ মাঝে মধ্যে মাকে দেখে আসে।
কথা খুব খুশি। আবিদ তার ভীষণ যত্ন নেয়। বলতে গেলে এক প্রকার মাথায় তুলে রাখে। দেখতে দেখতে কাঙ্ক্ষিত সময় চলে আসে। কথাকে হস্পিটালে নিয়ে যায় আবিদ।
জ্ঞান ফিরে কথা দেখে আবিদ ওর মাথার কাছে ওর হাত ধরে বসে আছে।
– আমাদের বাচ্চা কোথায় আবিদ? ও কেমন আছে?
– আমাদের খুব সুন্দর একটা পরীর মতো মেয়ে হয়েছে। একদম তোমার মতো দেখতে।
আবিদের কথা শুনে খুশিতে কথার চোখ থেকে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। মাতৃত্বের স্বাদ যে এত মধুর হয় কথা আজ বুঝতে পারলো। আবিদ কথার হাতটা আকড়ে ধরে বসে আছে। কথাও আবিদের হাতটা খুব শক্ত করে ধরে আছে। আজ কথা খুব খুশি।
আবিদের মা কথার পাশ থেকে উঠে চলে গেলো। আবিদ কথার কপালটা ধরে বললো….
– তোমার শরীরটা কেমন লাগছে।
– তুমি যে আমার পাশে আছো তাতেই আমার খুব ভালো লাগছে। আর আজ আমি মা হয়েছি। শত কষ্টের পরেও আমার খুব ভালো লাগে আবিদ।
– হুম প্রত্যেকটা মা তার জীবনের বিনিময়ে হলেও তার সন্তানকে আগলে রাখে। সন্তানের কান্না শুনলেই মায়ের বুকটা ফেটে যায় কথা। কিন্তু সন্তানকে না পেলে মায়ের খুব কষ্ট হয় কথা।
– আচ্ছা ওকে একটু আমার কাছে এনে দিবে?
-উহু সম্ভব না। তোমার কাছে আর কোনো দিন আসতে পারবে না কথা।
(আবিদের চোখের পানি ফোটা কথার কপালের উপরে পরলো।)
– মানে? আমার কাছে আসবে না কেনো? কি হয়েছে ওর?
কথা খুব শব্দ করে কান্না শুরু করলো…..
[চলবে…….]