#চেরি_ব্লসমের_সাথে_এক_সন্ধ্যা
#পর্ব: ২৬,২৭
#লেখা: ইফরাত মিলি
_২৬___________
জোহানের প্রতি থাকা অভিমান, রাগ যেতে যেতেও গেল না মিতুলের। ‘হিজাবে তুমি সুইট’! কথাটা দ্বারা তো জোহান রীতিমতো অপমান করলো। হিজাবের প্রশংসা করেছে জোহান। ওর প্রশংসা তো করেনি! বরং অপমান করেছে। জোহান নিজের কথা দ্বারা এটাই বোঝালো যে, ওকে শুধু হিজাবেই সুইট দেখাচ্ছে। হিজাবের কারণেই ও সুইট শুধু। যদি হিজাব না থাকতো তাহলে সুইট লাগতো না। হ্যাঁ, জোহান এটাই বোঝাতে চেয়েছে। হিজাব ছাড়া ও অসুন্দর সেটাই বোঝালো জোহান। বাহ চমৎকার! শুনতে চেয়েছিল একটু প্রশংসা। হিজাবের নয় তাও, লেহেঙ্গার। লেহেঙ্গাতে সুন্দর লাগছে সেটা শুনতে চেয়েছিল। জোহান সে প্রশংসা তো করলো না। হিজাবে যাও একটু প্রশংসা করার মতো করে বললো, তাও আসলে ইনডিরেক্টলি অপমান ছিল!
মিতুল ভাবতে পারছে না, জোহান অপমান করার এত টেকনিক জানে! আধুনিক সব টেকনিক ওর। এমন ভাবে অপমান করবে যে এটা অপমান ছিল, না প্রশংসা ছিল, সেটা বুঝে ওঠাই দায়। বুদ্ধিমানরা একটু বুদ্ধি খাটালেই বুঝতে পারবে। যেমন ও বুঝলো। কিন্তু যারা একেবারে সহজ-সরল মস্তিষ্কের, তারা? তারা তো সরল মনেই ওর এই কথাকে প্রশংসা ধরে নিতো। জোহান নিজের আধুনিক টেকনিক নিয়ে মানুষের সাথে খেলা শুরু করেছে? প্রশংসার নামেও অপমান করছে? জোহানের প্রতি রাগ আবার বৃদ্ধি পেতে শুরু করলো মিতুলের। চাইলেই জোহানের এমন অপমানের হাড়ভাঙা জবাব দিতে পারতো ও, কিন্তু দিলো না। জোহানের সাথে তর্ক-বিতর্ক করতে ইচ্ছা করছে না। ও মনে মনেই শুধু জোহানের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে গেল।
জোহানের ওকে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল লেকে। লাঞ্চ টাইমে লেকে যাওয়ার কথা বলেছিল জোহান। ওকে যে নিয়ে যাবে সেটা ওভাবে সরাসরিও বলেনি। বলেছিল,
“বিকেল বেলা আমি লেক ঘুরতে যাচ্ছি। এটা বলছি না যে তোমাকে আমার সাথে নেবো। তোমার যদি আমার সাথে যাওয়ার ইচ্ছা থাকে, তবে গ্যারেজে গিয়ে উপস্থিত থেকো।”
জোহানের কথা তখন অতটা খেয়াল করেনি। কিন্তু এখন বুঝতে পারছে জোহানের ওই কথায়ও অপমান লুকিয়ে ছিল। তখন গুরুত্ব দিয়ে জোহানের কথা শুনলে তখনই বুঝে যেত সেটা।
মিতুলের খুব অসহায় লাগছে এখন। জোহানের সাথে আজকে বের হওয়াই অনুচিত ছিল। এমন ভাবে অপমানগুলো করলো জোহান? থাক, ওসব অপমানের কথা না হয় এবার বাদই দিলো। লেকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে, লেকে তো নিয়ে যাবে ঠিকঠাক। না সেটাও তো করলো না। লেকে যাওয়ার কথা বলে রেস্টুরেন্টে নিয়ে এসেছে। রেস্টুরেন্টে কেন নিয়ে এসেছে?
“আমাদের তো লেক ঘুরতে যাওয়ার কথা। রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামালে কেন?”
জোহান সিটবেল্ট খুলতে খুলতে উত্তর দিলো,
“আমি প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত। আমি খাবো এখন।”
“খাবে মানে? প্রায় আমার সাথে সাথেই তো লাঞ্চ করলে তুমি। এখনই আবার এত খিদে পেয়ে গেছে তোমার?”
“একজন মানুষের খিদে পেতে এক মিনিটও লাগে না মিতুল, তাতে সে আগে যতই খেয়ে থাকুক না কেন। খাওয়ার পরপরই আবার এক মিনিটের ভিতরই খিদে পেতে পারে। এটা স্বাভাবিক। আর আমি লাঞ্চ করেছি তো প্রায় কয়েক ঘণ্টা হয়ে গেছে। আমার খিদে পাওয়া তো আরও খুব বেশি স্বাভাবিক।”
মিতুলকে খিদে নিয়ে বাণী শোনানো হলে জোহান নেমে গেল কার থেকে।
মিতুলেরও নামতে হলো। বিশাল একটা রেস্টুরেন্ট ওদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। খাওয়ার জন্য এই রেস্টুরেন্টে কেন এলো জোহান? কার্লের রেস্টুরেন্টে গেলে কি ওর শরীরের মাংস ক্ষয়ে ক্ষয়ে পড়তো?
গাড়ি থেকে নেমেই জোহান বললো,
“জানো, আমি দিনে মাত্র এক বেলা খাই।”
“এক বেলা? আমি তো দেখি তুমি ছয়-সাত বার খাও। ঘরেও খাও, বাইরেও খাও।”
“দেখো, বেশি বেশি বলছো তুমি। ছয়-সাত বার কে খায়? আমি? বড়ো জোর তিন কী চার বার খাই আমি। তাও শুধু টুকিটাকি খাবার। তুমি যেটাকে ভাবো আমি ব্রেকফাস্ট করছি, আসলে সেটা ব্রেকফাস্ট নয়। ব্রেকফাস্ট টাইমে কী খাই আমি? কী খেতে দেখেছো আমাকে? আমি কি তোমাদের মতো এত কিছু খাই? আমি এক গ্লাস ওয়াটার পান করি শুধু। এ পর্যন্তই আমার ব্রেকফাস্ট সমাপ্ত।”
জোহানের কথায় মিতুল থ হয়ে গেল। জোহান না কি এক গ্লাস পানি পান করে শুধু! ও নিজেই দেখলো কত কী খেতে।
“এরপর আসো লাঞ্চে। লাঞ্চ! তুমি এখানে আসার পর আমাকে কতদিন লাঞ্চ করতে দেখেছো? আজকেই কেবল দেখছো, রাইট? শুধু আজকেই দেখার কথা। কারণ, আমি লাঞ্চ করিই না। আমার জীবনে এটাই আমার প্রথম লাঞ্চ। এর আগে কোনো দিন আমি লাঞ্চ করিনি। তুমি দেখেছো আমাকে কোনোদিন লাঞ্চ করতে?”
মিতুল আরও বিস্মিত হলো। ওর এসব বিশ্বাস হচ্ছে না। এমনটা কি কখনো হতে পারে? ও এর আগে জোহানকে লাঞ্চ করতে দেখেনি। দেখবে কী করে? সবাই মিলে এক সাথে বসে তো আর খাবার খায় না। এর আগে জোহান লাঞ্চ করলেও সেটা তো ওর জানার কথা নয়, দেখার কথা নয়।
“এখন আসে ডিনারের কথা। ডিনার! হ্যাঁ, এই ডিনারই এমন একটা সময়, যে সময় আমি খাবার খাই। এটাই হলো আমার দিনে এক বেলা খাবার পূরণের সময়। এই এক বেলাই খাই আমি। এছাড়া একটু-আধটু যা খাই ওগুলো তো হিসাবের কাতারেই ধরা উচিত নয় তোমার। ওই সময়গুলোতে কী এমন খাই আমি?”
“রেস্টুরেন্টে এসে যে এত এত খাবার খাও, সেগুলো?”
“ওগুলোও হিসাবের বাইরে রাখা উচিত তোমার। ওগুলো হিসাবের ভিতরে রাখাটাও অন্যায়।”
মিতুল কিছু বললো না। চুপ থাকলো। চুপ থাকাটাই বেটার মনে হলো ওর কাছে। জোহানের সাথে কথা বলে পারা সম্ভব নয়।
রেস্টুরেন্টে প্রবেশ দরজার কাছে এসে গেছে। জোহান আরও কিছু কথা শোনানোর জন্য মুখ খুলতে নিয়েছিল, কিন্তু তার আগেই পিছন থেকে একটা উচ্ছ্বসিত মেয়ে কণ্ঠ ডেকে উঠলো ওকে।
“হেই জোহান!”
মেয়েটির ডাকে পিছন ফিরলো জোহান, সাথে সাথে পিছন ফিরলো মিতুলও। পিছন ফিরতে না ফিরতেই দেখা গেল একটি মেয়ে প্রায় ঝড়ের গতিতে দৌঁড়ে এসে জড়িয়ে ধরেছে জোহানকে।
চোখের সামনে এত দ্রুত বেগে একটা জড়িয়ে ধরার ইতিহাস রচনা হতে দেখে মিতুলের মুখ হা হয়ে গেল। ওর চোখে ঘোর। একটা মেয়ে ওর সামনে জোহানকে এভাবে জড়িয়ে ধরলো?
দীর্ঘ একটি হাগের পর মেয়েটি জোহানকে ছাড়লো। জোহান বলে উঠলো,
“তুমি? কবে এসেছো কানাডা? নিউ ইয়র্কে তোমার স্টাডি শেষ?”
মেয়েটি হাস্যজ্জ্বল মুখে হালকা মাথা নাড়িয়ে বললো,
“ইয়াহ, আমার স্টাডি কমপ্লিট। এখানে এসেছি প্রায় দশ দিন হয়ে গেছে। মনে মনে ভাবছিলাম তোমার সাথে দেখা করবো, কিন্তু হয়ে উঠছিল না ঠিক। কিন্তু দেখো, আজকে অপ্রত্যাশিত ভাবে আমাদের দেখা হয়ে গেল।”
জোহান একটু হেসে এক হাত দিয়ে মেয়েটিকে আগলে ধরে বললো,
“অনেক দিন পর দেখা। বেশ কিছু সময় এক সাথে কাটানো যাক।”
বলে মেয়েটাকে নিয়ে ফুরফুরা মেজাজে রেস্টুরেন্টের ভিতর চলে গেল ও। মিতুল যে ওর সাথে আছে সেটা ভুলেই গেল যেন।
মিতুল রেস্টুরেন্টের দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে রইল। অপমান, অবহেলায় পাথর হয়ে গেছে ও। জোহান কী করলো এটা? মেয়েটাকে নিয়ে এভাবে নাচতে নাচতে চলে গেল? ও যে সাথে আছে সে হুঁশ খেয়ালও নেই জোহানের? ওকে হিসাবের খাতাতেই ধরলো না? এত বড়ো অপমান করলো? এত বড়ো? মিতুলের হঠাৎ কান্না পাচ্ছে। খুব বেশিই কান্না পাচ্ছে। অপমানে মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছা করছে। এই কানাডা আসার পর শুধু অপমানই পেয়ে গেল ও। এত অপমান সহ্য করা যায়? নিজের সাথে এনে এভাবে অগ্রাহ্য করে চলে যেতে পারলো কী করে জোহান? একবার ফিরেও তাকালো না ওর দিকে!
জোহানের প্রতি যেমনি রাগ হচ্ছে, তেমনি আবার ঘৃণাও হচ্ছে। কানাডা আসার পর সবথেকে বেশি অপমান পেয়েছে এই জোহানের থেকে। মনে হয় যেন ওকে অপমান করার জন্যই জন্মগ্রহণ করেছে জোহান। এত অপমান কী করে করতে পারে একটা মানুষকে? মনুষ্যত্ব বোধ নেই কোনো? যদি থাকতো তাহলে ওকে এতটা ছোটো করে মেয়েটাকে নিয়ে এভাবে চলে যেতে পারতো না একা একা। না, আর জীবনেও জোহানের সাথে কোথাও বের হবে না। আজ থেকে জোহানের সঙ্গ ত্যাগ করলো। আর কখনো জোহানের মুখোমুখিও হবে না। জোহানের মুখ দেখতেও ঘৃণা হবে। মিতুল রেস্টুরেন্ট থেকে মুখ ঘুরিয়ে হাঁটতে শুরু করলো। আত্মসম্মান আছে ওর। এত বড়ো অপমানের পরও যে সেধে সেধে জোহানের কাছে যাবে এমন মেয়ে নয় ও।
মিতুল এখান থেকে কতক দূর হেঁটে একটা ট্যাক্সি নিলো। ওর গন্তব্য কার্লের রেস্টুরেন্ট। এ সময় কার্লই ওর একমাত্র ঔষধ। জোহানের এই অপমান ভুলে থাকতে, এবং নিজের রাগ সংবরণ করতে কার্লকে দেখা প্রয়োজন ওর।
রেস্টুরেন্টে ঢুকে বসতেই জোহানের খেয়াল হলো মিতুল ওর সাথে নেই। জোহান এদিক-ওদিক তাকিয়ে খুঁজতে লাগলো মিতুলকে।
“কী খুঁজছো জোহান?” জোহানকে এদিক ওদিক তাকাতে দেখে প্রশ্ন করলো টারা।
“কিছু না। তুমি এখানে বসো। আমি এক্ষুণি আসছি।”
বলে জোহান রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এলো। রেস্টুরেন্টের সামনেও নেই মিতুল। জোহান একঝলকে আশপাশ দেখে নিলো। নেই মিতুল। কোথায় চলে গেল এই পাগল মেয়েটা? জোহান পকেট থেকে মোবাইল বের করে দ্রুত কল দিলো মিতুলের নাম্বারে। অস্থির লাগছে ওর। কল রিসিভ হলো না। রিং হয়ে কেটে গেল।
আশ্চর্য! কল রিসিভ করছে না মেয়েটা?
জোহান আবারও কল দিলো। এবার দেখলো ফোন সুইচ অফ! ফোন সুইচ অফ করে ফেলেছে? জোহানের এবার ভালো যন্ত্রণা হলো। অস্থির অস্থির লাগছে ওর। কোথায় চলে গেছে মিতুল? বাড়ি?
ওর মনে হলো না যে মিতুল বাড়ি গেছে। কোথায় গেছে তাহলে? জোহানের মাথায় হঠাৎ করে কার্লের নামটা চলে এলো। আবারও কার্লের কাছে গেছে?
জোহান বাইরে গিয়ে আর আসছে না দেখে টারা উঠে এলো ব্যাপারটা দেখতে। দরজার কাছাকাছি আসতেই দেখতে পেল জোহান কার নিয়ে চলে যাচ্ছে।
দশ কী পনেরো মিনিট লাগলো কার্লের রেস্টুরেন্টে আসতে। মনে মনে যা ধারণা করেছিল সেটাই। কার্লের কাছেই এসেছে মিতুল। জোহানের রেস্টুরেন্টের ভিতর ঢুকতে হয়নি। দরজার কাছে দাঁড়িয়েই ব্যাপারটা দেখলো। এখান থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে মিতুল বসে আছে মাঝের সারির একটা চেয়ারে। সামনেই দেখা যাচ্ছে কার্লকে। এখানে দাঁড়িয়েই বেশ ভালোভাবেই বোঝা যাচ্ছে দুজনের মাঝে হাসাহাসি চলছে তুমুল বেগে। ওই হাসি সহ্য হলো না জোহানের। কী পরিমাণ অসহ্যকর ওই হাসি! জোহানের রাগ হলো। এই রাগ ওর কেবল মিতুলের উপর। ওর সাথে এক রেস্টুরেন্টে গিয়ে, ওকে না বলেই উল্টো আরেক রেস্টুরেন্টে চলে এসেছে মিতুল? মিতুলের প্রতি একটু বেশিই রাগ হলো জোহানের। এতটাই রাগ হলো যে ও নিশ্চুপ চলে এলো দরজা থেকে। জোরপূর্বক আর টেনে আনলো না মিতুলকে। থাকুক মিতুল কার্লের সাথে!
____________
রাত দশটা।
মিতুলের সামনে জোহানের দেওয়া লাল লেহেঙ্গা এবং আজকে মাথায় পরে যাওয়া হিজাব। বিছানার উপর বিছিয়ে রেখেছে এগুলো। ওর ডান হাতে একটা কাঁচি। কাঁচিটা ক্যামিলার কাছ থেকে মিথ্যা বলে এনেছে। লেহেঙ্গা কাটবে এ কথা বলে তো আর কাঁচি আনতে পারে না। তাই একটা মিথ্যা কথা বলে এনেছে। জোহানের দেওয়া লেহেঙ্গা কাটতে চলেছে ও। হ্যাঁ, কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলবে এটা। কীসের জন্য আর এটা রেখে দেবে? আজকে যেই অপমান করেছে জোহান! তাতে ওর দেওয়া লেহেঙ্গা কেটে টুকরো টুকরো করাই তো উচিত, তাই না?
মিতুল লেহেঙ্গাটা কাছে টেনে নিলো। ‘বিসমিল্লাহ’ বলে কাঁচিটা লেহেঙ্গার উপর চালিত করতে গিয়েও থেমে গেল আবার। হঠাৎই হাত কেমন দুর্বল হয়ে পড়েছে ওর। মন এই বলছে এখনই কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলবে এই লেহেঙ্গা। আবার এই চুপসে যাচ্ছে।
মিতুল কতক্ষণ চেষ্টা করেও শেষমেশ কাঁচি চালিত করতে পারলো না লেহেঙ্গার উপর। এমনটার জন্য এমনিতেই অসহায় লাগছিল, এর মাঝেই আবার জোহানের কল এলো। জোহানের কল দেখেই মিতুলের ভিতরে চাপা রাগ সব উতলে উঠলো।
কল ধরবে না ধরবে না করেও শেষপর্যন্ত রিসিভ করলো। এমন সময় রিসিভ করলো যে আর একটু হলেই কেটে যাচ্ছিল কলটা।
মিতুল চুপচাপ কল রিসিভ করে কানে লাগিয়ে রাখলো। আগ বাড়িয়ে কিছু বললো না। জোহানের রুক্ষ কণ্ঠ শোনা গেল,
“এখনই গার্ডেনে এসো। হারি আপ।”
কথাটা বলেই কল কেটে দিলো জোহান।
মিতুল জোহানের ব্যবহার দেখে অবাক। না না অবাক নয়, হতবাক। গার্ডেনে যাওয়ার জন্য আদেশ দিচ্ছে? আবার আদেশ শুরু হয়ে গেছে ওর? ওর মেজাজ খারাপের উপর আরও খারাপ হলো।
জোহান দিনকে দিন নিজের মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এর ফয়সালা করতে হবে। তুমুল আকারে ঝগড়া বাঁধাবে আজ জোহানের সাথে। সব অপমানের শোধ নেবে এক সাথে।
মিতুল তিরিক্ষি মেজাজ নিয়ে চলে এলো গার্ডেনে। জোহানকে দেখতে পেল পাইন গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো।
মিতুলকে ঘর থেকে নামতে দেখে সোজা হয়ে দাঁড়ালো জোহান। আজকে সারাদিন মিতুলের সামনেও আসেনি ও। একটা কথাও বলেনি। ভেবেছিল টানা পাঁচদিন কোনো কথা বলবে না মিতুলের সাথে। কিন্তু অত ধৈর্য ধরা সম্ভব হলো না। নিজের রাগটা প্রকাশ করতেই হবে। না হলে শান্তি আসবে না মনে।
মিতুল জোহানের কাছে এসে রাগটা চেপে রেখে শান্ত ভাবে বললো,
“কেন ডেকেছো বলো?”
জোহান কাট কাট গলায় বললো,
“আমি যা বলতে চাই তা এখানে বসে হবে না। আমি চাই না বাড়ির কেউ ব্যাপারটা টের পাক। এর জন্য নিরিবিলি পরিবেশ দরকার। আমার সাথে সাথে এসো।”
বলে জঙ্গলের রাস্তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল জোহান। মিতুল বাগড়া দিলো,
“দাঁড়াও।”
জোহান দাঁড়িয়ে যায়।
“আমি তোমার সাথে কোথাও যাব না। যা বলার এখানে বললে বলো, না বললে আমি চললাম।”
জোহান পিছন ফিরে তাকালো। মুখে রাগের প্রলেপ। বাচ্চা বাচ্চা মুখে রাগের প্রলেপটা অদ্ভুত ভাবে সুন্দর লাগছে।
“আপোষে এসো। নয়তো ভালো হবে না ব্যাপারটা। তোমার ওই নরম মুখে আমার এই শক্ত হাতের ঘুষি খুব খারাপ ভাবে লাগতে পারে। তোমার ওই ফুলো নাকটা চ্যাপ্টা হয়েও যেতে পারে।”
মুখের উপর ওয়ার্নিং ছুঁড়ে জোহান এগিয়ে চললো জঙ্গলের রাস্তার দিকে।
মিতুলের সারা শরীর জ্বলছে জোহানের কথায়। ওকে ভয় দেখায়! ঘুষির ভয় দেখায়! হ্যাঁ, দেখবে জোহানের ওই হাতে কতটা জোর আছে।
মিতুল রাগের উপর ভর করেই এগিয়ে চললো জোহানের পিছন পিছন।
মিতুল ভেবেছিল টাইম হাউজে পৌঁছে ও প্রথম বুলি ছুটাবে মুখ থেকে। কিন্তু জোহান সেই সুযোগটা কেড়ে নিলো। টাইম হাউজের সামনে এসেই জোহান প্রথমে বলে উঠলো,
“তুমি আজকে রেস্টুরেন্টে গেলে আমার সাথে। অথচ আমার কোনো পারমিশন না নিয়ে তুমি ওই রেস্টুরেন্ট থেকে অন্য রেস্টুরেন্টে চলে গিয়েছো চুপচাপ। কেন? আনসার মি।”
চাপা একটু গর্জন টের পাওয়া গেল জোহানের গলায়। যা মিতুলকে অধিক রাগিয়ে তুললো।
“পারমিশন? তোমার কাছে পারমিশন নিয়ে এখন আমার ঘোরা ফেরা করতে হবে? কে তুমি? প্রেসিডেন্ট? এক পাগলের কারখানার প্রেসিডেন্ট তুমি? ওয়ার্ল্ড হ্যান্ডসাম, তাই না? এতটা ওয়ার্ল্ড হ্যান্ডসাম হয়ে গেছো যে দাপটে মাটিতে পা পড়ে না তোমার। বাতাসে বাতাসে উড়ে বেড়াও তুমি। আর মানুষকে কীভাবে কোত্থেকে অপমান করবে তার টেকনিক খুঁজে বেড়াও হাওয়ায় দোল খেতে খেতে।
আমাকে তোমার কী মনে হয়? কী ভাবো তুমি আমাকে? যখন-তখন উঠতে-বসতে অপমান করবে, হেয় করবে, আর আমি সেসব মেনে নেবো? কে অধিকার দিয়েছে আমাকে কথায় কথায় অপমান করার? তুমি…”
জোহান যেন আকাশ থেকে পড়লো।
“অপমান? আমি তোমাকে কথায় কথায় অপমান করি? কখন, কীভাবে অপমান করলাম তা ডিটেইলসে বলো আমাকে।”
“মানুষকে অপমান করে পরে একেবারে সাধু হয়ে যাও তুমি। এমন একটা ভাব করো যেন ভাজা মাছটি উল্টে খেতে পারো না। আরে ভাজা মাছ কী? তুমি তো জ্যান্ত একটা তিমিকেও নাড়িয়ে-চারিয়ে দেখতে পারো। কীভাবে, কোথায় অপমান করেছো মনে নেই তোমার সেসব? ও কে ব্যাপার না, দিচ্ছি তাহলে মনে করিয়ে। রেস্টুরেন্টের সামনে অপমান করেছো আমায়। তুমি রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলে আমাকে, অথচ একটা মেয়ে আসাতে তুমি সেই আমাকেই ফেলে রেখে রেস্টুরেন্টে ঢুকে গেলে ওই মেয়ের সাথে। এমন একটা ভাব করলে যেন তুমি আমাকে চেনোই না। এটা কি অপমান নয়?”
“আমি তোমাকে ফেলে যাইনি। তোমার কথা জাস্ট ক্ষণিকের জন্য আমার মাথা থেকে চলে গিয়েছিল।”
“মিথ্যা কথা বলো না। একদম মিথ্যা বলো না জোহান। তুমি ইচ্ছা করে অমন একটা ভাণ করেছো। সবকিছু প্ল্যান ছিল তোমার। আমাকে অপমান করবে বলে আগে থেকেই প্ল্যান সাজিয়েছিলে। আমাকে লেকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেছো তুমি। আসলে তোমার খিদে-টিদে কিছুই পায়নি। আর ওই মেয়েটা? ওই মেয়েটাও তোমার সাজানো ছিল। আমাকে অপমান করবে বলে তুমি মেয়েটাকে সাজিয়ে এনেছো। ওই রেস্টুরেন্ট, তোমার খিদে, আর ওই মেয়ে, সব তোমার সাজানো নাটক।”
জোহান কঠিন গলায় ডেকে উঠলো,
“মিতুল!”
মিতুল কিছু বললো না। জোহানের দিকে তাকিয়ে শুধু রাগে ফুঁসছে।
জোহান একটু শান্ত কণ্ঠে বলার চেষ্টা করলো,
“যখন আমি বলেছি আমি কিছুক্ষণের জন্য তুমি সাথে ছিলে সেটা ভুলে গিয়েছিলাম, তখন সেটাকে এত প্যাঁচাচ্ছ কেন?”
মিতুলও একটু শান্ত ভাবে বলার চেষ্টা করলো,
“ও কে ফাইন। মেনে নিলাম সত্যিই তুমি একটু সময়ের জন্য আমাকে ভুলে গিয়েছিলে। কিন্তু কেন ভুলে গেলে? ওই মেয়েটার উষ্ণ আলিঙ্গনে সব কিছু ভুলে গিয়েছিলে?”
কথা বলতে বলতে কখন যে মিতুলের শান্ত কণ্ঠ অশান্ত হয়ে উঠলো তা ওর নিজেরই খেয়াল রইল না।
“দেখো, মেয়েটা আমার খুবই ক্লোজ ফ্রেন্ড। আমি আমেরিকা যাওয়ার পর ওর সাথে আমার মিট হয়েছিল। অনেক দিন যাবৎ ওর সাথে আমার যোগাযোগ ছিল না। যোগাযোগ না থাকার ব্যাপারে ভুলটা আসলে আমারই ছিল। এতদিন পর নিজের একজন ক্লোজ ফ্রেন্ডকে দেখে তোমার কথা ক্ষণিকের জন্য ভুলে যাওয়া স্বাভাবিক।”
এবার মিতুলের গলার জোর একটু বেশি বেড়ে গেল,
“হ্যাঁ, সবকিছুই তো তোমার কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার। একটা মানুষকে উঠতে-বসতে অপমান করাও তোমার কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার। আমাকে অপমান করে ওই মেয়েটাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টের ভিতর চলে যাওয়াও তোমার কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার। তোমার…”
মিতুলের কথার মাঝেই কথা বলে উঠলো জোহান,
“হ্যাঁ, এ সবকিছুই স্বাভাবিক। অস্বাভাবিক শুধু তোমার করা কাজ। আমার সাথে ঘুরতে গিয়ে, আমাকে রেখে আমার কাছ থেকে কার্লের কাছে চলে যাওয়া অবশ্যই অস্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। কেন গিয়েছিলে কার্লের কাছে? কী কাজ তোমার ওর কাছে?”
“কথায় কথায় কার্লকে টানবে না। তোমার আমার মধ্যে কথা হচ্ছে, এখানে তুমি কার্লকে টানছো কেন? কার্লের মতো একটা ইনোসেন্ট ছেলেকে কেন তুমি নিজের ঝগড়ায় জড়াও? কে অধিকার দেয় তোমাকে?”
জোহান তাচ্ছিল্য করে বললো,
“ইনোসেন্ট? কার্ল ইনোসেন্ট ছেলে? কবে থেকে ইনোসেন্ট হয়ে গেল ও তোমার কাছে?”
“অবশ্যই কার্ল ইনোসেন্ট। প্রথম দেখাতেই বোঝা যায় কে কীরকম। আর আমি প্রথম দেখাতেই বুঝেছিলাম ও ইনোসেন্ট, তোমার মতো নয় একেবারেই।”
“হোয়াট ডু ইউ মিন?” বলতে বলতে এক পা সামনে এগিয়ে এলো জোহান।
“আমার মতো নয় মানে? আমাকে প্রথম দেখে তোমার কী মনে হয়েছিল? কী ভেবেছিলে আমার সম্পর্কে?”
জোহান যেমন ওকে মুখের উপর ওয়ার্নিং ছুঁড়ে দিয়েছিল, মিতুলও তেমনি ওর মুখের উপর বলে দিলো,
“বদমাইশ!”
খুব আস্তে করেই উচ্চারণ করলো ও।
“বডমাইশ?” খুব সহজেই উচ্চারণ করলো জোহান। এমন ভাবে বললো যেন ‘বদমাইশ’ শব্দের সাথে অবগত সে।
তা দেখে মিতুলের ঝটকা লাগলো। জোহান জানে বদমাইশ কী? কীভাবে জানলো? কে শেখালো ওকে এই বাংলা?
জোহান আরও এক পা এগিয়ে এলো মিতুলের সামনে।
“প্রথম থেকেই তুমি আমাকে বডমাইশ ভাবো?”
মিতুল নিজের কথা হারিয়ে ফেলছে। কেন যেন ভীতু হয়ে পড়লো আচমকা।
“দে-দেখো আমি…”
মিতুল হঠাৎ কথায় মোড় এনে ফেললো,
“দেখো, আমাদের এখন বাড়ি ফেরা উচিত। চলো বাড়ি যাই।”
জোহান যে দুই পা এগিয়ে এসেছিল, এবার তা সরে গেল।
“বাড়িতে যেতে হলে যাও। আমাকে বলার তো কোনো দরকার নেই। আমি আমার ছোট্ট টাইম হাউজে নাইট টাইম কাটাবো।”
মিতুলের কপালে ভাঁজ পড়লো।
“মানে? তুমি বাড়ি ফিরবে না?”
“না।”
মিতুলের গলায় আগের তেজ ফিরে এলো।
“না মানে? তুমি কি খেলা শুরু করেছো আমার সাথে? একেকবার তুমি এখানে নিয়ে আসবে আমাকে, তারপর বলবে তুমি বাড়ি ফিরবে না। এটাকে কি মগের মুল্লুক পেয়েছো? তুমি এমন বাজে স্বভাবের কেন বলো তো? একটা মানুষকে নিজের সাথে এই জঙ্গলে নিয়ে এসে, তাকে আবার এই জঙ্গল পেরিয়ে দিয়ে আসবে না? আমাকে এই জঙ্গল পেরিয়ে বাড়ি নিয়ে যাওয়া তো তোমার নৈতিক দায়িত্ব। কোনো কথাই শুনবো না আমি। তোমার আমাকে এই জঙ্গল পেরিয়ে বাড়ি নিয়ে যেতেই হবে। আজ তো তুমি আহত নও। কোনো ছাড় দেবো না আমি। চলো, বাড়ি চলো।”
“যাব না।”
“দেখো, আমার মেজাজ এমনিতেই খারাপ। যা বলছি তাই করো, আমাকে বাড়ি নিয়ে চলো।”
“আমি যাব না। তোমার একার যেতে ভয় করলে সিসকে ফোন করো।”
“কেন? আমি ক্যামিলাকে কেন ফোন করবো? ক্যামিলার সাথে আমি এখানে এসেছি? তুমি আমাকে বাড়ি নিয়ে যাবে, বাস।”
জেদ ধরলো মিতুল।
“আমি তো বললাম আমি যাব না। এক কাজ করো, তোমারও আজকে বাড়ি ফেরার দরকার নেই। তুমিও থেকে যাও আমার সাথে। আমার এই টাইম হাউজ তো ছোটো নয়। তুমিই বলেছো এখানে আমি আমার বউ-বাচ্চা নিয়েও থাকতে পারব। তাহলে তোমার এখানে থাকতে তো সমস্যা হবে না। লিভিং রুমের কাউচটা সম্পূর্ণ দিয়ে দেবো তোমাকে।”
জোহানের কথায় মিতুলের মেজাজ পুরোপুরি বিগড়ে গেল।
“তুমি যাবে কি না বলো?”
“না।”
জোহানের কথাটা বলতে যত সময় লাগলো, মিতুলের রাস্তা ধরে হাঁটা শুরু করতে সময় লাগলো না।
রাগের মাথায় কোনো দিক না তাকিয়েই হনহন করে হেঁটে যেতে লাগলো।
জোহান হেসে দিলো মিতুলের এত রাগ দেখে। পিছন থেকে ডেকে বললো,
“হেই তুলতুল, সাবধানে যেও। দেখো, পথে কোনো ভূতের সাথে যেন সাক্ষাৎ না হয়। ভূত দেখে আবার উল্টো ব্যাক করো না যেন আমার কাছে। ভয় পেয়ে যে ছুটে এসে আমার বুকে মুখ লুকাবে, সেটা পারবে না কিন্তু। আমার বুকে মুখ লুকাতে চাওয়া মেয়ের সংখ্যা কিন্তু অনেক। লম্বা লাইন লেগে আছে। তুমি দুই-তিন হাজার মেয়ের পিছনে পড়ে থাকবে।”
কথাগুলো বলে জোহান নিজেই হেসে ফেললো।
জোহানের একটা কথাও মিতুলের কানে ঢুকেছে বলে মনে হয় না। ওর চলার গতি আগের মতোই। অনেকটা দূরেই চলে গেছে ইতোমধ্যে। দেখা যাচ্ছে এতটুকুনি ফ্ল্যাশ লাইটের আলো এগিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ সামনের দিকে। আর ওই আলোর সাথে সাথেই এগোচ্ছে মিতুল।
রাগের মাথায় অনেকটা পথই হেঁটে এসেছে। কিন্তু এই জায়গাটায় এসেই মিতুলের পা থেমে গেল হঠাৎ। গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। ওর রাগ কেটে গিয়ে এখন আতঙ্ক জমতে শুরু করলো।
চারিদিক থমথমে। একটা পাখিও ডাকছে না। মিতুলের বুক ভয়ে ধুকপুক করতে শুরু করেছে। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। রাগের মাথায় এভাবে একা চলে তো এলো এতদূর, কিন্তু এখন? এখন কী করবে? আর এক পা সামনে এগোনোরও শক্তি পাচ্ছে না যে। পিছন ফিরে একটু তাকিয়ে দেখবে ঠিক টাইম হাউজ থেকে কতদূর চলে এসেছে, সেই সাহসটুকুও এখন নেই ওর। এই অন্ধকার জঙ্গলের সর্বত্র নিকষ কালো রঙের ঘনঘটা। কেবল মোবাইলের এই এক চিলতে আলো নিয়ে এগিয়ে চলছে ও। সামনে তাকাতেই ওই দূরে ঝাপসা আলো দেখতে পেল। সম্ভবত গার্ডেনেরই লাইট। মিতুল একটু সাহস খুঁজে পেল। আবারও দুর্বল পা দুটো নিয়ে এগিয়ে চললো ও।
চলে এলো আরও খানিকটা পথ। যতই হাঁটছে পথ যেন শেষ হচ্ছে না। মিতুল দ্রুত পায়ে এগিয়ে চলছিল, কিন্তু আবারও থেমে গেল হঠাৎ। ও থামার সাথে সাথে ওর পিছনেও কিছু একটা যেন থেমে গেল। কারো পথচলা রোধ হলো যেন। আতঙ্কে, ভয়ে মিতুলের আত্মা শুকিয়ে গেল। ঘাম ছুটলো শরীর থেকে। গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল নিমেষেই। চারিদিকে নিস্তব্ধতা। কানে তালা লেগে যাওয়ার মতো সেই নিস্তব্ধতা। মিতুল এই নিস্তব্ধ অরণ্যে শুধু নিজের আতঙ্কগ্রস্ত হৃদয়ের স্মৃতিটুকুই ধরতে পারলো। কিছু একটা আছে ওর পিছনে? ওর থেকে দুই তিন পা দূরত্বেই যেন দাঁড়িয়ে আছে। কী দাঁড়িয়ে আছে পিছনে? কে দাঁড়িয়ে আছে? আদৌ কোনো মানুষ? না কি কোনো হিংস্র জানোয়ার? মিতুলের সাহসের থলি আতঙ্কে চুপসানো। পিছন ফিরে ব্যাপারটা দেখার মতো শক্তি-সাহস ওর নেই। কিন্তু তবুও মাথাটা আস্তে আস্তে পিছন ফিরলো।
পিছনে ফিরতেই গগনবিদারী চিৎকার করে দুর্বল শরীরটা নিয়ে ছিটকে পড়ে গেল মিতুল।
(চলবে)
#চেরি_ব্লসমের_সাথে_এক_সন্ধ্যা
#পর্ব: ২৭
#লেখা: ইফরাত মিলি
____________
জোহানকে দেখে মিতুলের ধীরে ধীরে স্বস্তি ফিরে এলো। চোখ বন্ধ করে জোরে একটা শ্বাস নিলো ও। এখনই ভয়ে ওর জান চলে যাচ্ছিল। আর একটুর জন্য বেঁচে গেছে। কোনো হিংস্র প্রাণী, বা কোনো অন্য মানুষ ছিল না। জোহান…জোহান ছিল এটা। মিতুলের বুক চিরে আবারও স্বস্তির নিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো।
জোহান মিতুলের উপর মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট ধরে রেখেছে।
“তোমার মতো এত ভীতু মেয়ে জীবনে দেখিনি আমি।”
জোহানের উস্কানিমূলক কথায় মিতুল চোখ তুলে তাকালো। ওর দু চোখে সদ্য আতঙ্ক কেটে যাওয়ার ছাপ। জোহান মিতুলের মুখটা দেখছে। ক্লান্ত একটি মুখ। ঘেমে একাকার।
জোহান এগিয়ে এসে মিতুলের দিকে এক হাত বাড়িয়ে দিলো। মিতুল একবার জোহানের বাড়িয়ে দেওয়া হাত, আর একবার জোহানের মুখ দেখলো।
“কী? আমার হাত ধরে উঠতে সমস্যা আছে?”
“আই উইল কিল ইউ!” ক্রোধ ঝরে পড়লো মিতুলের কণ্ঠে।
“কী? মারবে? মারবে আমাকে? মনে হচ্ছে না আমাকে মারার অবস্থায় আছো তুমি। দুর্বল দেখাচ্ছে তোমায়।”
মিতুলের মুখে এবার রাগ ফুঁটে উঠলো। একটি ক্লান্ত মুখে রাগের প্রতিফলন কেমন হয় সেটা আগে জানা ছিল না জোহানের। আজকে দেখলো।
মিতুল জোহানের হাত ধরে উঠলো না। ওর মোবাইল ওর পাশে পড়ে গিয়েছিল। মোবাইলটা কুঁড়িয়ে নিজে নিজেই উঠে দাঁড়ালো।
“যে জোরে চিৎকার করেছো, সে চিৎকার যদি বাড়ির লোক অথবা আমার প্রতিবেশীদের কানে যায় তাহলে তো আমি বিপদে পড়বো। ভাববে আমি এই জঙ্গলের ভিতর মার্ডার করে বেড়াই। তারপর পুলিশ আসবে, জিজ্ঞাসাবাদ করবে…বলতে পারো কত ঝামেলা হবে?”
“তুমি নিজের ঝামেলার কথা ভাবছো? এদিকে যে আমার জানটাই চলে যাচ্ছিল তোমার জন্য, সেটা? সেটার কী করবে? পুলিশ না আসলেও আমি পুলিশ ডাকবো। তোমার নামে অ্যাটেম্পট টু মার্ডার কেস করবো আমি।” ধীরে ধীরে মিতুলের কণ্ঠ তেজি হয়ে উঠলো।
“এজন্যই বলে মানুষের ভালো করতে নেই। তুমি ভয় পাবে বলে তোমাকে সাহায্য করতে এলাম। আর উল্টো তুমি আমাকে পুলিশে ধরিয়ে দেবে? অবশ্য এটা পারবে না তুমি। আমাকে পুলিশে দিলে তুমি নিজেই দুঃখ পাবে। কাঁদবে তুমি।”
মিতুল শ্লেষপূর্ণ কণ্ঠে বললো,
“কাঁদবো? আমি? তোমাকে পুলিশে দিলে কেন, তুমি মরে গেলেও আমার দুঃখ হবে না।”
বলে মিতুল হাঁটতে শুরু করলো।
জোহান পিছন পিছন আসতে আসতে বললো,
“কিন্তু তুমি মরে গেলে আমার ভীষণ দুঃখ হবে। তুমি তো আমাকে ঝগড়াটে বানিয়ে দিয়েছো। এখন ঝগড়া করার জন্য তোমাকে দরকার আমার সবসময়। তুমি মরে গেলে আমি ঝগড়া করবো কার সাথে? আমার যে সে ভেবে এখনই দুঃখ লাগছে।”
মিতুল পায়ের চলন অব্যাহত রেখে বললো,
“কেন? আমাকে কেন দরকার তোমার? ওই মেয়েটা আছে না, যাকে আজকে খুব করে জড়িয়ে ধরেছিলে? ওর সাথে ঝগড়া করো গিয়ে।”
“কখন আমি জড়িয়ে ধরলাম? ধরলো তো ও।”
“কী ভাবো? আমার চোখ নেই? তুমিও ধরেছো মেয়েটাকে। নিজ চোখে দেখেছি।”
“তো ওকে জড়িয়ে ধরেছি বলে কি তোমার হিংসা হচ্ছে? তুমি কি চাও তোমাকেও জড়িয়ে ধরি আমি?”
মিতুলের পা থেমে গেল। ফুলো নাক নিয়ে পিছন ফিরে বললো,
“মুখ সামলে কথা বলো জোহান! নয়তো কথা বলা শিখিয়ে দেবো।”
বলে চলার গতি আগের থেকে আরও বাড়িয়ে দিলো।
জোহান পিছনে হাঁটতে হাঁটতে বললো,
“হেই তুলতুল, আমি তো সুন্দর করে কথা বলতে পারি। কোনো কথা বলতে তো আমার সমস্যা হয় না। এরপরেও আমাকে কথা বলা শিখিয়ে দিতে হবে তোমার? ওহ বুঝেছি, তুমি আরও অনেক অনেক কথা শুনতে চাও আমার কাছে, তাই না? আচ্ছা বলো, কী কথা শুনতে চাও তুমি?”
মিতুলের ভীষণ রাগ লাগছে জোহানের এসব কথা শুনে। ও ঠিক করলো ও আর মুখই খুলবে না। জোহান পিছনে বসে কথা বলতে বলতে শেষ হয়ে গেলেও ও মুখ খুলবে না আর।
___________
ঘুম ভাঙতে না ভাঙতেই মিতুলের মন খুব ভালো হয়ে গেল। ওর মন এত ভালো হয়ে যাওয়ার একটা বিশেষ কারণ আছে। আর এই বিশেষ কারণের সবটুকু জুড়েই কার্ল। একটু আগে কার্ল ফোন দিয়ে জানিয়েছে বিকেলে ওর সাথে একটা কফি শপে দেখা করবে। কার্ল এর আগে কখনো ওকে এভাবে দেখা করার জন্য ডাকেনি। এই প্রথম ডাকলো। আর এই জন্যই ও এত এক্সাইটেড। কেন ডাকলো কার্ল?
মিতুল ঠিক করেছে আজকে কার্লকে শাড়ি পরে দেখাবে। সেই কবে এডমন্টন মল থেকে শাড়ি কিনেছিল কার্লকে পরে দেখাবে বলে। কিন্তু দেখানোই হয়ে ওঠেনি। আজকেই শাড়ি পরে দেখাবে। এটাই যেন একদম শাড়ি পরার সঠিক সময়। মিতুল মনে মনে হেসে উঠলো।
মিতুল দুপুর থেকেই সাজসজ্জা শুরু করে দিয়েছে। শাড়ি পরতে একটু ঝামেলা হয়েছে। তবে শেষমেশ ঠিকঠাক পরে উঠতে পারলো। ভাগ্যিস ছোটো মামনি একদিন শাড়ি পরানো শিখিয়েছিল। নয়তো শাড়ি পরতে পরতেই আজকের দিন কাভার হয়ে যেত। তারপরেও বোধ হয় শাড়ি পরা ঠিকঠাক ভাবে হতো না। মিতুল মনে মনে ধন্যবাদ জানালো ছোটো মামনিকে।
আজকে সব থেকে বেশি সময় নিয়েছে মেকআপ করায়। গত কালকে যত না যত্ন করে সেজেছিল, তার দ্বিগুন যত্ন করে সেজেছে আজকে। আজকে কাজলও পরেছে চোখে। কানাডা আসার পর আজকের আগে কখনো কাজল পরেনি। আজকে পরলো। কাজল পরতে ওর ভালো লাগে না তেমন। কিন্তু খুব শখ করে আজ কাজল পরেছে চোখে। হাতেও পরেছে চুড়ি। সম্পূর্ণ রেডি হওয়ার পর আরও একবার আয়নায় নিজেকে খুঁটিয়ে দেখলো মিতুল। নিজের প্রশংসা নিজে না করে পারলো না। খুব সুন্দরই দেখাচ্ছে। মিতুল লজ্জা মেখে হাসলো।
সত্যিই যে খুব সুন্দর লাগছে তার প্রমাণ রুম থেকে বের হয়েই পেল। প্রথমেই দেখা হলো জায়িনের সাথে। অহংকারী জায়িনের মুখে নিজের প্রশংসা শুনে সত্যিই ভারী অবাক হয়েছে মিতুল। তবুও নিজের বিস্ময়াভাবকে বুঝতে না দিয়ে, ধন্যবাদ জানিয়ে জায়িনকে অতিক্রম করে এলো।
এরপর দেখা হলো ক্যামিলার সাথে। ক্যামিলা অধিক প্রশংসা করলো। যেন সুন্দর লাগার কথাটা একটু বাড়িয়েই বললো। তাতে মিতুলের বেশ লজ্জা লাগলো। মিতুল ক্যামিলাকেও জায়িনের মতো ধন্যবাদ জানিয়ে অতিক্রম করে এলো।
এরপর একেবারে ঘর ছেড়ে বেরোনোর মুখে দেখা হয়ে গেল জোহানের সাথে। মিতুলের অগাধ বিশ্বাস জোহান আজ প্রশংসা করতে বাধ্য। ও বেশ ভাব নিয়ে দাঁড়ালো জোহানের সামনে।
জোহান মিতুলকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিলো একবার। মিতুলের চোখে-মুখে খুশি খুশি ভাব। মিতুল যে বেশ ফুর্তিতে আছে তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। জোহান গাম্ভীর্য মুখে বললো,
“এটা কী পরেছো?”
“শাড়ি।” খুশি খুশি মনে উত্তর দিলো মিতুল।
“এটা যে শাড়ি সেটা জানি আমি। তুমি এটা কেন পরেছো? জানো কেমন লাগছে তোমাকে দেখতে? জোকারের মতো লাগছে। মনে হচ্ছে আমার সামনে একটা জোকার দাঁড়িয়ে আছে। এক্ষুণি শাড়ি চেঞ্জ করে ফেলো গিয়ে।”
জোহানের কথা শুনে ভীষণ রকমের শক খেলো মিতুল। জোকারের মতো লাগছে মানে? জোহান আজকেও প্রশংসার বদলে অপমান করলো? এত ঘাড় ত্যাড়া এই জোহান? যেখানে ওর অহংকারী ভাই পর্যন্ত প্রশংসা করলো, সেখানে এই বদমাইশটা কিছুতেই স্বীকার করলো না যে ওকে সুন্দর লাগছে! এতটা খারাপ জোহান!
“জোকারের মতো লাগছে আমাকে? জোকার বললে তুমি আমায়? আমার আজকে মেজাজ খারাপ করার কোনো ইচ্ছা নেই। যদিও মেজাজ ইতোমধ্যে খারাপ করে দিয়েছো অনেকটা। আমি সেটাকে আর গুরুতর খারাপ করতে চাইছি না। তাই তোমার কথার উপযুক্ত জবাবটা আমি দিলাম না। কিছু বললাম না তোমাকে। কারণ, আমি খুবই ভালো মুড ধরে রাখতে চাইছি এখন। বুঝেছো?”
বলে হাসিখুশি মুখ নিয়ে জোহানকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল মিতুল।
জোহান ভাবছে এত সেজেগুজে কোথায় যাচ্ছে মিতুল? কার্ল জোনাস? নিশ্চয়ই কার্লের কাছেই যাবে। নয়তো নাক ফুলো তুলতুলের মুখ এত খুশি প্রবণ লাগতো না!
মিতুল কার্লের দেওয়া ঠিকানায় চলে এসেছে।
কফি শপের ভিতর ঢুকতেই কার্লকে নজরে পড়লো। ব্ল্যাক শার্ট কার্লের গায়ে। বেশ সুন্দর লাগছে কার্লকে।
মিতুল এগিয়ে এলেই কার্ল বললো,
“গুড আফটারনুন রাবা!”
মিতুলও হাসি মুখে বললো,
“গুড আফটারনুন।”
কার্ল এতক্ষণ মিতুলের ড্রেসের দিকে নজর দেয়নি। শাড়ি পরা দেখে বললো,
“ওয়াও! ইউ লুকিং ভেরি ভেরি বিউটিফুল ইন দ্য বেঙ্গলি ড্রেস।”
মিতুল লজ্জা পেল। কার্লের মুখে প্রশংসা শুনে নিজের শাড়ি পরা স্বার্থক মনে হলো ওর। লজ্জা মাখা মুখে বললো,
“থ্যাঙ্কস কার্ল!”
মিতুল চেয়ার টেনে বসলো। কার্ল এর মাঝে অবাক কাণ্ড করলো। মোবাইল বের করে হুট করে কয়েকটা ছবি তুলে ফেললো মিতুলের।
মিতুল পড়লো এবার আরও বেশি লজ্জায়। মিতুলের চিন্তা হচ্ছে, লজ্জায় না আবার গাল দুটোতে লাল আভা ফুঁটে ওঠে।
কার্ল একজন স্টাফকে ডেকে দুই কাপ ব্ল্যাক কফি অর্ডার করলো। তারপর মিতুলের উদ্দেশ্যে বললো,
“শারি কি আমাকে দেখাবে বলে পরেছো?”
কার্লের কথায় মিতুল এবার মরে যায় যায় অবস্থা। ইশ, কার্ল এমন একটা প্রশ্ন করতে পারলো কী করে? মিতুলের গাল এবার সত্যিই লজ্জায় লাল হলো। লজ্জায় আর কিছু বলতেই পারলো না ও।
কার্লই আবার বললো,
“শারি কি ব্যাংলাডেশ থেকে নিয়ে এসেছো? না কি এখান থেকে কিনেছো?”
মিতুল এবার কথা বললো,
“এখান থেকেই কিনেছি। ওয়েস্ট এডমন্টন মল থেকে।”
“ওয়েস্ট এডমন্টন মল থেকে শপিং করে ফেলেছো ইতোমধ্যে? কার সাথে গিয়েছিলে? জোহ্যানের সাথে?”
“না না ওর সাথে যাইনি। ওর বড়ো ভাইয়ের সাথে গিয়েছি। তার নাম জায়িন আহমেদ!”
“জাইইইন?”
মিতুল মাথা নাড়িয়ে বললো,
“ইয়াহ।”
“সেও নিশ্চয়ই জোহ্যানের মতো ইন্টারেস্টিং পারসন?”
মিতুল জায়িনের সম্পর্কে কিছু বলবে বলে মুখ খুলেছিল, এর মাঝেই পিছন থেকে একটি মেয়েলি কণ্ঠ মৃদু সুরে ডেকে উঠলো কার্লকে।
“কার্ল!”
মেয়েটির কণ্ঠ থামিয়ে দিলো মিতুলকে। মিতুল শব্দ অনুসরণ করে পিছন ফিরে চাইলো।
দরজা থেকে এক পা সামনে দাঁড়ানো একটি মেয়ে। পরনে শর্টস এবং ব্লু শার্ট। মাথা ভর্তি কোঁকড়ানো রেড হেয়ার। মুখে প্রশস্ত হাসি। মিতুলের চোখ ফ্রেমে এতক্ষণ শুধু মেয়েটিই ছিল, এবার কার্লও যোগ হলো। কার্ল মেয়েটির কাছে যাচ্ছে। মেয়েটিকে এগিয়ে আনতে গেল না কি?
কার্ল মেয়েটির কাছে যেতেই মিতুল বিস্ময়ে অভিভূত হলো। মিতুল দেখলো ওর চোখের সামনে কার্ল হাসি মুখে মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরেছে নিজের বুকে। মিতুলের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। মুখ ছেয়ে গেল গাঢ় কালো অন্ধকারে।
কার্ল এবং মেয়েটি একে অপরকে ছেড়ে দিলো। এরপর মেয়েটি চুমু খেলো কার্লের ঠোঁটে।
মিতুলের মনে হলো ওর হৃদয় ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে! কী দেখছে ও? জেগে জেগে কোনো দুঃস্বপ্ন?
কার্ল মেয়েটির হাত ধরে মিতুলের কাছে নিয়ে এলো।
মিতুল বিস্ময়াবিষ্ট চোখে তাকিয়ে দেখছে কার্ল এবং মেয়েটিকে। কার্ল আনন্দঘনিত কণ্ঠে বললো,
“রাবা, আমি তোমাকে বলেছিলাম না, আমার খুবই স্পেশাল একজন মানুষের সাথে মিট করাবো তোমায়? ইট’স শি!”
মেয়েটি মিতুলের দিকে হ্যান্ডশেকের জন্য হাত বাড়িয়ে দিলো,
“হ্যালো রাবা! আই অ্যাম অলিভার ব্যাটসন। তোমার সাথে দেখা করে আনন্দিত আমি।”
মিতুলের হাত-পা অবশ লাগছে। মেয়েটি ওকে আগে থেকে চেনে? মিতুল খুব কষ্টে এক হাত উঠিয়ে হ্যান্ডশেক করলো। মুখে জোরপূর্বক হাসি আনার চেষ্টা করে বললো,
“আমিও আনন্দিত।”
কার্ল বললো,
“থার্ড মিটে তোমাকে বলেছিলাম একটা বিশেষ কারণ আছে যার জন্য আমি টরোন্টো থেকে এডমন্টনে এসেছি। বিশেষ কারণটা কী, সেটা সেদিন বলিনি। বলেছিলাম পরে একদিন বলবো। আমার সেই বিশেষ কারণটা হলো এই অলিভার। শি ইজ মাই লাভ, মাই ফিউচার ওয়াইফ। উই’আর গেটিং ম্যারিজ সুন।”
কার্লের কথা মিতুলের হৃৎপিণ্ডে এসে আঘাত করলো! রক্তাক্ত হয়ে গেছে ওর হৃৎপিণ্ড। বুকে রক্তের স্রোত বয়ে যাচ্ছে! ফিউচার ওয়াইফ? ম্যারেজ? লাভ?
(চলবে)