চেরি_ব্লসমের_সাথে_এক_সন্ধ্যা #পর্ব: ৩৪,৩৫

0
787

#চেরি_ব্লসমের_সাথে_এক_সন্ধ্যা
#পর্ব: ৩৪,৩৫
#লেখা: ইফরাত মিলি
_৩৪___________

মিতুলের মন ভালো না। প্রায় পঁচিশ মিনিট ধরে বসে আছে গার্ডেনের দোলনায়। ঘরে ঢুকবে তার কোনো উপায় নেই। কারণ ফ্রেডি এসেছে বাড়িতে। ও বিকাল বেলা গার্ডেনে এসেছিল একটু গার্ডেনের ফুলগুলোর সাথে সাক্ষাৎ করতে। সাক্ষাৎ শেষে ঘরে ঢুকে দেখলো ফ্রেডি হাজির হয়েছে। ফ্রেডিকে দেখেই আবার গার্ডেনে ব্যাক করেছে ও। পরে ঘরে ঢুকবে ঢুকবে করেও আর ঢুকতে পারলো না। কারণ, জায়িন এবং ফ্রেডি আড্ডা পাতলো ঠিক হলরুমে। এত জায়গা থাকতে হলরুমেই কেন আড্ডা পাততে হবে তাদের? মিতুল কিছুতেই ফ্রেডির মুখোমুখি হতে চায় না। তাই হলরুম পেরিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিজের রুমে যাওয়ার কথা দুঃস্বপ্নেও ভাববে না। মিতুল ঠিক করলো যতক্ষণে না ফ্রেডি বাড়ি থেকে যাচ্ছে, ততক্ষণে ঘরে যাবে না ও। এই গার্ডেনেই থাকবে। রাত হয়ে গেলেও এখানে বসে থাকবে। কিন্তু এখানে বসে থাকতে আর ভালো লাগছে না ওর। দোলনা থেকে নেমে গার্ডেনে পায়চারি করলো কিছুক্ষণ। তারপর আবার এসে দোলনায় বসলো। ভালোই লাগছে না কিছু। ও জোহানকে ভাবার চেষ্টা করলো। কারণে-অকারণে এখন শুধু জোহানকে ভাবতে ইচ্ছা করে ওর। কেন এই রোগ ওর মাঝে উদয় হলো কে জানে। কালকে রাতে কতক্ষণ যে লুকিয়ে লুকিয়ে জোহানকে দেখেছে তার হিসেব নেই। কালকে রাতে জোহান লনের ইজি চেয়ারে বসে নিজের গিটার নিয়ে টুংটাং করছিল। আর ও বারান্দায় দাঁড়িয়ে জোহানকে দেখেছে চুপি চুপি। ভাবা যায়, জোহানকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেছে ও? ভাবা যায় কি না জানে না। ও ভাবতে পারছে না।

হঠাৎ কিচেনের জানালায় চোখ পড়তে ক্যামিলাকে দেখতে পেল মিতুল। দৌঁড়ে জানালার কাছে এলো ও। বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“ফ্রেডি চলে গেছে?”

ক্যামিলা বললো,
“হুম, ও তো চলে গেছে। ফ্রেডির কথা এত ভাবছো কেন তুমি?”

“কে ভাবে ওই অসভ্যটার কথা? আমি? ওর কথা মনে পড়লেও আমার গা জ্বলে যায়।”
বলে জানালা থেকে সরে এসে ঘরে ঢুকলো মিতুল। তারপর কিচেনে চলে এলো। কিচেনে ঢুকতেই ওর পা থমকে গেল। জায়িনকে দেখে বড়ো সড়ো রকমের একটা ধাক্কা খেলো ও। জায়িন কিচেনে? ফ্রেডিকে নিয়ে ক্যামিলার সাথে যা বললো তা কি শুনে ফেলেছে জায়িন? ইশ! ক্যামিলাকে অমন কথা বলার আগে পুরো কিচেনে একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া উচিত ছিল।

মিতুলের মুখে ফ্রেডির সম্পর্কে ওই রকম কথা শুনে রাগ হলো জায়িনের। নিজের বন্ধুর সম্পর্কে অমন কথা শুনতে কারোরই ভালো লাগার কথা না। জায়িন মিতুলের কাছে এগিয়ে এসে বললো,
“লিসন মিতুল, ফ্রেডি অসভ্য নয়। আর ও কারো গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দেওয়ার মতো ব্যক্তিও নয়। তুমি শুধু শুধুই ওর সম্পর্কে এরকম কথা ভাবো। এটা অতিরিক্ত। তোমার এই অতিরিক্ত চিন্তা ধারায় চেঞ্জ আনা দরকার।”

বলে মিতুলের পাশ কাটিয়ে কিচেন থেকে চলে গেল জায়িন। ভেবেছিল মিতুলকে নিয়ে ঘুরতে বের হবে আজকে। কিন্তু মিতুল ফ্রেডিকে নিয়ে যা বললো, তাতে মুড পাল্টে গেছে ওর। যাবে না আজ মিতুলকে নিয়ে ঘুরতে। ওর ফ্রেন্ডের সম্পর্কে এই রকম কথা বলার সাহস হয় কী করে মিতুলের?

মিতুল পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। জায়িন ওকে এত্ত বড়ো কথা বললো? বলে কি না ওর অতিরিক্ত চিন্তা ধারায় চেঞ্জ আনা দরকার! অতিরিক্ত চিন্তা করে ও?

ক্যামিলা মিতুলের অবস্থা বুঝতে পেরে বললো,
“জায়িনের কথায় কিছু মনে করো না মিতুল।”

“জায়িন আমাকে অপমান করেছে ক্যামিলা। ও অপমান করেছে আমায়!”
বলেই কিচেন থেকে বেরিয়ে এলো মিতুল। এক নম্বরের একটা অহংকারী জায়িন। সেই প্রথম থেকে অহংকারীর পরিচয়ই দিয়ে যাচ্ছে শুধু। মিতুল জায়িনকে মনে মনে কথা শোনাতে শোনাতে রুমের দিকে আসছিল। জোহানের রুমের সামনে আসতেই হঠাৎ থেমে যেতে হলো ওকে। বন্ধ দরজার আড়াল থেকে জোহানের হাসির শব্দ ভেসে আসছে। মিতুল কান পাতলো। কার সাথে হাসাহাসি করছে জোহান? কোনো মেয়ের সাথে? কোনো মেয়ের সাথে মোবাইলে হেসে হেসে কথা বলছে জোহান? ব্যাপারটা বোঝার জন্য মিতুল একেবারে দরজার সাথে মিশে কান পাতলো।
না কোনো কথা শুনতে পাচ্ছে না। কেবল হাসির শব্দই শুনতে পাচ্ছে। দুই তিন মিনিট টানা হাসির শব্দ শোনা গেল। এরপর হঠাৎ থেমে গেল রুমের ভিতরের হাসি। কী হলো ব্যাপারটা? হঠাৎ হাসি থেমে গেল কেন জোহানের? মিতুল আরও মনোযোগ সহকারে কান পাতলো। একেবারে দরজার সাথে কান মিলিয়ে রাখলো। বিশ-ত্রিশ সেকেন্ড একেবারে নীরব কেটে গেল। এরপর শব্দ হলো একটা। আর সেই শব্দের সাথেই খুলে গেল জোহানের রুমের দরজা। মিতুল আতঙ্কে দুই পা ছিটকে গেল দরজার কাছ থেকে।

জোহানও অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দরজায়। মিতুল? মিতুল ওর দরজায় শব্দ করেছে? মিতুল দাঁড়িয়ে ছিল ওর দরজার সামনে? ও জিজ্ঞেস করলো,
“তুমি এখানে কী করছো? আমার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলে কেন?”

মিতুল বুঝতে পারছে না জোহান কী করে টের পেল ও এখানে দাঁড়িয়ে আছে। ও তো কোনো শব্দ করেনি। নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে ছিল। তাহলে? দরজার সাথে একদম মিশে দাঁড়ানোর জন্য কোনো শব্দ হয়েছিল না কি?

“হেই, কিছু বলছো না কেন? তুমি কী করছিলে আমার রুমের সামনে?”

মিতুল কী বলবে বুঝতে পারছে না। কী বলবে জোহানকে? তুমি কোনো মেয়ের সাথে পিরিতের আলাপ পারছিলে কি না, সেটা জানার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম আমি। এটা বলবে? না না। এমন কিছু বলা তো একেবারেই সম্ভব না।
মিতুল কিছুই বললো না। কিছু না বলে একরকম পালিয়ে এলো ওখান থেকে।

জোহান অবাক চোখে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল।

______________

সন্ধ্যা নাগাদ রেডি হয়ে রুম থেকে বের হলো জোহান। আজকে বন্ধুরা মিলে পার্টি করবে ক্লাবে। জোহান যাওয়ার আগে মিতুলের কাছে এলো একবার। রুমে পেল না মিতুলকে। বারান্দায় এসে পেল।
মিতুল চেয়ারে বসে লনে চেরি ব্লসমের দিকে তাকিয়ে আছে। জোহান মুখ দিয়ে শিষ বাজিয়ে মিতুলের মনোযোগ আকর্ষণ করলো। মিতুল তাকালো জোহানের দিকে। জোহানের গায়ে কালো লেদার জ্যাকেট। চোখে কালো সানগ্লাস। বাদামি চুল গুলো যথারীতি এক নিয়মে কপাল জুড়ে পড়ে আছে।

“আমাকে কেমন লাগছে তুলতুল?”

মিতুল একটু হেসে বললো,
“চমৎকার লাগছে তোমাকে।”

জোহানের মুখে হাসি ফুঁটলো। এসে মিতুলের পাশের চেয়ারে বসে বললো,
“ইউ নো, আজকে ক্লাবে যাচ্ছি আমি।”

“তো যাও, আমাকে কেন বলছো?”

জোহান হঠাৎ গলায় চিন্তিত ভাব এনে বললো,
“আমি নিজেকে নিয়ে খুব টেনশনে আছি তুলতুল।”

মিতুল অবাক হয়ে বললো,
“কেন?”

“কী বলবো তোমায়? আগেও তো বলেছিলাম তোমাকে। ক্লাবে গেলেই তো দুর্দশায় পড়তে হয় আমাকে। পাগল হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয় আমার। ক্লাবের সব মেয়েরা এসে ঘিরে ধরতে চায় আমাকে। আমায় পটানোর চেষ্টায় থাকে সব মেয়েরা।”

জোহানের কথা শুনে মিতুলের মুখ আঁধারে ছেয়ে গেল। সব মেয়েরা এসে ঘিরে ধরে জোহানকে? মিতুলের খুব খারাপ লাগলো ব্যাপারটা।

জোহান বললো,
“থাক, বাদ দিই আমার ওসব হৃদয়বিদারক কাহিনী। এবার তুমি বলো, তুমি তখন কী করছিলে আমার রুমের সামনে?”

“তোমার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে কী করা যাবে আর? খেয়ে ফেলা যাবে তোমার রুমটাকে? রুমের ভিতরে তোমার হাসাহাসি শুনে কেবল দাঁড়িয়ে ছিলাম ওখানে। আর কিছুই না।”

“ওহ, তাই? আচ্ছা, বলো তো কেন হাসছিলাম আমি?”

“কেন হাসছিলে সেটা আমি কী করে বলবো? সেটা কি আমার জানার কথা?”

“হঠাৎ করে একটা ঘটনা মনে পড়ে গিয়েছিল, সে জন্য হেসেছিলাম। ঘটনাটা আমার এক ফ্রেন্ড এবং ক্লাবকে কেন্দ্র করে। দুই মাস আগের ঘটনা। সব বন্ধুরা মিলে ক্লাবে গিয়েছিলাম। আমার যে বন্ধুকে কেন্দ্র করে কাহিনী, ওই বন্ধুর থেকে ট্রিট ছিল। যে যার পছন্দের ড্রিংকস করতে পারবে, তার বিল মিটাবে ও। অবশ্য ও কোনো খুশিতে ট্রিট দেয়নি। ও ট্রিট দিয়েছিল দুঃখে। ব্রেকআপের দুঃখে। তিন চার মাসের প্রেম ছিল ওদের। ওর গার্লফ্রেন্ড ওর সাথে ব্রেকআপ করে চলে যায়। সেই দুঃখে ট্রিট দিয়েছিল সেই রাতে। মানুষ খুশিতে ট্রিট দেয়, আর আমার বন্ধু দিয়েছিল দুঃখে। আহারে আমার বন্ধু!” বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো জোহানের।

মিতুলেরও খুব কষ্ট লাগলো জোহানের বন্ধুর জন্য। চোখ-মুখ করুণ করে বললো,
“আহারে! তারপর? তারপর কী হলো তোমার বন্ধুর?”

জোহান হঠাৎ হেসে উঠলো।
“তারপর? তারপর আমরা ক্লাবে গেলাম। ক্লাবে ঢুকতে না ঢুকতেই এক রমণীর চোখ পড়লো আমার শোকাহত বন্ধুর উপর। ও দেখতে অনেক হ্যান্ডসাম কি না। রমণী নানা ভাবে চেষ্টা করে গেল আমার বন্ধুর আকর্ষণ পাওয়ার জন্য। কিন্তু কোনো লাভ হলো না। আমার বন্ধু ওই রমণীর দিকে ফিরেও তাকালো না। তাকাবে কী, আমার বন্ধু তো তার সদ্য প্রাক্তনের খাতায় নাম লেখানো গার্লফ্রেন্ডের শোকে কাতর ছিল। রমণী খানিক বিরতি নিলো। কিন্তু হাল ছাড়লো না। এদিকে আমার বন্ধু ড্রিংক করতে করতে অর্ধ মাতাল হলো। ওকে সামলাতে সামলাতে আর কেউ ড্রিংকসই করতে পারলো না। সবার ড্রিংকসের বারোটা বাজলো। ওদিকে হাল না ছাড়া রমণীটি হাঁটি হাঁটি পা পা করতে করতে চলে এলো আমার বন্ধুর নিকট। তখন আমার বন্ধু অর্ধ মাতাল থেকে পুরোপুরি মাতাল। রমণী বোধহয় এই সুযোগটিই কাজে লাগাতে চেয়েছিল। এতক্ষণ দূরে থেকে আকর্ষণ পাওয়ার চেষ্টা করছিল, কিন্তু এবার একেবারে কাছে চলে এলো। রমণীটি এসে ওর কাছে বসতে না বসতেই ও সেই রমণীর উপর বমি করে দিলো!”
এ পর্যন্ত বলেই হো হো করে হেসে উঠলো জোহান। ওর অশান্ত হাসির ঝংকার উঠলো বারান্দায়। বেশ কিছুটা সময় লাগলো ওর সেই হাসি থামতে।
হাসি থামার পর বললো,
“বুঝলে, মেয়েটির মুখ তখন দেখার মতো ছিল। আমি শিওর, মেয়েটি জীবনে আর কখনও এমন অপমানের স্বীকার হয়নি।”
জোহান একটু থেমে আবারও বলে উঠলো,
“ও এরপর আরও কাহিনী আছে। মেয়েটির ড্রেস নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আমার প্রিয় রিকার্ডো মায়া করে মেয়েটিকে টিসু এগিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু রিকার্ডোর মায়া মেয়েটি বুঝলো না। টিসু না নিয়ে মেয়েটি ওকে ‘রাবিশ’ বলে চলে গিয়েছিল।”
জোহান এবার আর হাসলো না। রিকার্ডোর সাথে মেয়েটি অমন করায় মেয়েটির উপর যেন ও বিরক্ত, তেমন একটা ছাপ পড়লো ওর মুখে।

মিতুল খুব মনোযোগ দিয়ে জোহানের কথা শুনলো। প্রথম দিকে জোহানের বন্ধুর জন্য ওর খারাপ লেগেছিল। কিন্তু এবার লাগলো মেয়েটির জন্য। মেয়েটি এত চেষ্টা করেও মন আকর্ষণ করতে পারলো না? শেষ পর্যন্ত অপমান নিয়ে ফিরতে হলো তাকে? কথাটা ভেবে মিতুলের বেশ খারাপ লাগছে। ও সেটা জোহানকে বুঝতে না দিয়ে বললো,
“আচ্ছা, এটা তোমার কোন ফ্রেন্ড ছিল? নাম কী তার? তাকে দেখেছি আমি? একদিন যে আমাকে তোমার বন্ধুদের পার্টিতে নিয়ে গিয়েছিলে, সেই পার্টিতে ছিল সে?”

“অবশ্যই ছিল। ওর নাম হেনরি।”

“ও…সে?”

জোহান মাথা নাড়লো।

মিতুল বললো,
“কিন্তু তাকে দেখে তো মনে হয়নি তার ব্রেকআপ হয়েছে।”

“আরে মিতুল, একটা মানুষকে দেখে কি বোঝার উপায় আছে তার ব্রেকআপ হয়েছে, কি হয়নি? আমার ব্রাদারের দিকেই দেখো। আমার ব্রাদারকে দেখলে কি বোঝা যায় তার দুই দুই বার ব্রেকআপ হয়েছে?”

মিতুলের মুখ হা হয়ে গেল।
“কী? তোমার ব্রাদারের প্রেম ছিল?”

“ওহ তুলতুল! প্রেম না থাকলে ব্রেকআপ হয় কীভাবে? এই সামান্য ব্যাপারটুকু জানো না তুমি?”

মিতুলের মানতে কষ্ট হচ্ছে অহংকারী জায়িনেরও দুই দুইটা রিলেশন ছিল। দুই দুইটা গার্লফ্রেন্ড ছিল। অহংকারীটার তো অহংকারেই মাটিতে পা পড়ে না, প্রেম করেছে কীভাবে? অহংকারের দাপটে ঠিক ভাবে প্রেম করতে পারেনি বলেই বোধহয় ব্রেকআপ হয়ে গেছে।
ধুর, কীসব ভাবছে! প্রেম করলে ব্রেকআপ হতেই পারে। এ তো স্বাভাবিক। হোক সেটা কোনো অহংকারীর স্যাড লাভ স্টোরি।

মিতুল হঠাৎ করে বললো,
“আচ্ছা, তুমি তো ক্লাবে শুধু তোমার বন্ধুর কাহিনীই শোনালে। তোমার কাহিনীর কী হবে? আমাকে যে বলে বেড়াও ক্লাবে গেলে সব মেয়েরা তোমাকে ঘিরে ধরে। তুমি পাগল হয়ে যাও মেয়েদের যন্ত্রণায়। তাহলে ওই দিন মেয়েরা ঘিরে ধরেনি তোমায়? আর ওই মেয়েটা তোমার মতো একজন ওয়ার্ল্ড হ্যান্ডসাম রেখে, তোমার বন্ধুর পিছনে পড়লো কেন? সব মেয়েদের তো তোমার পিছনেই লাইন দেওয়ার কথা।”

জোহান সময় নিলো না। বেশ দ্রুতই বললো,
“লাইন দেবে কী করে? আমি কি লাইন দেওয়ার কোনো রাস্তা রেখেছি। মাস্ক এবং ক্যাপ। এই দুটো জিনিসকে আমি আমার সেফটি হিসেবে কাজে লাগিয়েছি। মাস্ক, ক্যাপ পরে মুখ ঢেকে রেখেছিলাম আমি। যার কারণে কোনো মেয়ে চিনে উঠতে পারেনি আমাকে। নয়তো আমার বন্ধুর কাহিনী দেখার সময় থাকতো না আমার। নিজের কাহিনী রচনা করতে হতো। বুঝলে?”

“না, বুঝলাম না।”

“উহ তুলতুল, তুমি আসলেই অবুঝ। আমি এখন কথা বাড়াতে চাই না তোমার সাথে। আমি ক্লাবের পিক পাঠাবো তোমার কাছে। তাতেই দেখে নিয়ো।”
বলে জোহান চেয়ার ছেড়ে উঠে বারান্দা থেকে যাওয়া দিলো।
মিতুল পিছন থেকে ডাকলো,
“শোনো।”

জোহান পিছন ফিরে বললো,
“হোয়াট?”

মিতুল কঠিন গলায় বললো,
“যদি কোনো মেয়ের সাথে ছবি পাঠাও তবে খবর আছে তোমার।”

জোহান মিতুলের ওয়ার্নিং শুনে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল মিতুলের দিকে। তারপর বললো,
“তুমি ধীরে ধীরে বুঝদার হয়ে উঠছো মিতুল।”
বলে হেসে চলে গেল জোহান।

মিতুলের হার্টবিট বাড়তে শুরু করলো। ও জোহানকে কী বলে ফেললো এটা?

(চলবে)

#চেরি_ব্লসমের_সাথে_এক_সন্ধ্যা
#পর্ব: ৩৫
#লেখা: ইফরাত মিলি

____________

মিতুল বারান্দায় বসে গুনগুন করছিল। এর মাঝেই দেখলো জোহানের গাড়ি প্রবেশ করছে বাড়ির ভিতর। কিছুক্ষণ আগেই তো জোহান ক্লাবে যাবে বলে বেরিয়ে গেল। তাহলে আবার ফিরে এলো কেন?
মিতুল ব্যাপারটা বুঝতে দৌঁড়ে নিচে চলে এলো। প্রবেশ দরজার সামনে মুখোমুখি হলো জোহানের।

“কী ব্যাপার? তুমি না ক্লাবে যাবে বলে বের হলে, তাহলে ফিরে এলে কেন? কোনো সমস্যা হয়েছে?”

“হ্যাঁ। আমার যে সকল বন্ধুদের ক্লাবে যাওয়ার কথা ছিল, তার ভিতরে একজনের এক্সিডেন্ট হয়েছে!”

মিতুল আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে বলে উঠলো,
“এক্সিডেন্ট? কার এক্সিডেন্ট হলো? তার অবস্থা কি মারাত্মক?”

“ওহ মিতুল, তুমি তো এমন করে বলছো যেন আমার ফ্রেন্ড বিমান এক্সিডেন্ট করেছে। ওর কোনো গুরুতর এক্সিডেন্ট হয়নি। সাইকেল এক্সিডেন্ট করেছে।”

“সাইকেল?”

জোহান হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়লো।

মিতুল জিজ্ঞেস করলো,
“আঘাত পায়নি সে?”

“হাত একটুখানি ছিলে গেছে।”

মিতুল দুঃখ প্রকাশ করলো,
“আহারে! ওনার জন্য…”

“মিতুল…” মিতুলের কথার মাঝে রেশমী সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ডেকে উঠলো ওকে।

মিতুল থেমে গেল। ডাক অনুসরণ করে সিঁড়ির দিকে তাকালো।

“আমার রুমে এসো।” রেশমী মিতুলকে রুমে আসতে বলে চলে গেলেন।

ভয়ের দানা জমতে শুরু করলো মিতুলের মনে। রেশমী আন্টি কেন ডাকছে? জোহানের সাথে এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলেছে সেজন্য?
মিতুল জোহানকে বললো,
“আচ্ছা, তোমার কী মনে হয়? তোমার মম কেন ডাকছে আমাকে?”

“কেন ডাকছে সেটা আমি জানবো কী করে? গিয়ে দেখো।” কণ্ঠে বিরক্তি ঝরিয়ে চলে গেল জোহান।

মিতুলের নিজের উপর নিজের বিরক্ত লাগছে। কী দরকার ছিল বারান্দা থেকে এখানে এসে জোহানের সাথে কথা বলার? রেশমী আন্টি ডেকে নিয়ে কী বলবে এখন? ও নিশ্চিত এতক্ষণ জোহানের সাথে কথা বলছিল সে ব্যাপারেই কিছু বলবে রেশমী আন্টি।
মিতুল ভয়ে ভয়ে রেশমী আন্টির রুমের সামনে এসে দাঁড়ালো। ভয় করছে ওর। বুঝতে পারছে না এত ভয় পাচ্ছে কেন। এখানে ভয় পাওয়ার কী আছে? রেশমী আন্টি যদি সত্যিই এই ব্যাপার নিয়েই কিছু বলে, তবে মুখের উপর জবাব দেবে। বলবে,
“জোহানের সাথে কথা বলা কি আমার অপরাধ? একটা মানুষের সাথে কথা বলা অপরাধ হিসেবে গণ্য হলো কবে? কে এই অপরাধের উদ্ভাবন করেছে? তুমি?”

হ্যাঁ, বলে দেবে মুখের উপর। মিতুল আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো। ও নিশ্চিত ছিল রেশমী আন্টি জোহানকে নিয়ে প্রশ্ন করবে। কেন কথা বলেছে, কী কথা বলেছে এসব জিজ্ঞেস করবে। কিন্তু রেশমী আন্টি তা করলেন না। তিনি বললেন,
“কানাডা এসে আমাদের বাড়িতে থাকতে তোমার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো মিতুল?”

রেশমী আন্টির প্রশ্নে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল মিতুল। ও কী ভাবলো, আর রেশমী আন্টি কী বললো! এত দিন পর এ কী প্রশ্ন করছেন রেশমী আন্টি? কানাডা এসেছে কতদিন হয়ে গেছে। এখন এতগুলো দিন পর এই প্রশ্ন করছে রেশমী আন্টি? কিন্তু হঠাৎ কেন জিজ্ঞেস করছে এসব কথা? এর কী উত্তর দেবে এখন? মিতুল মনে মনে কথা সাজিয়ে ফেললো। একটু হাসার চেষ্টা করে বললো,
“অসুবিধা? অসুবিধা হবে কেন? আমার তো এখানে থাকতে এমন একটা ফিল হচ্ছে, যেন আমি নিজ বাড়িতে আছি। মোটেই অসুবিধা হচ্ছে না আমার।”

মিতুল মনে মনে নিজেকে বাহবা না দিয়ে পারলো না। বললো,
‘বাহ, মিতুল বাহ। এক্সট্রা লবণ দিয়ে খুব সুন্দর বুঝই তো দিতে পারিস তুই।’
মনে মনে হাসলো মিতুল।

রেশমী আন্টি ওয়ার্ডোবের দিকে এগিয়ে গেলেন। দুটো চকলেট বক্স এবং একটা সাইড ব্যাগ বের করে মিতুলের কাছে এলেন। চকলেট এবং ব্যাগ মিতুলের হাতে দিয়ে বললেন,
“ব্যাগটা পছন্দ হয়েছিল। তাই তোমার জন্য কিনে আনলাম। পছন্দ হয়েছে তোমার?”

রেশমী আন্টির ব্যবহারে আবেগে জর্জরিত হলো মিতুল। রেশমী আন্টি ওর জন্য ব্যাগ, চকলেট কিনেছে? ও আপ্লুত কণ্ঠে বললো,
“থ্যাঙ্ক ইউ আন্টি। খুব খুব পছন্দ হয়েছে আমার।”

রেশমী আন্টি হেসে চুমু খেলো মিতুলের কপালে। রেশমী আন্টির প্রতি যে ধারণা সৃষ্টি হয়েছিল, তা নিমেষে ভেঙে গুঁড়িয়ে গেল মিতুলের। এত ভালো একজন মানুষকে ও কালকে খারাপ ভেবেছিল। ছি! নিজের ভাবনার প্রতি নিজেরই রাগ হচ্ছে এখন।

______________

আজকের দিনটি ফুরফুরা ধরনের লাগছে মিতুলের। নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশ। মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। গাছে গাছে চোখ জুড়ানো ফুলের সমারোহ। আর সেই সাথে আবার রঙিন প্রজাতির ওড়াউড়ি। সব মিলিয়ে এক রোমাঞ্চকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। ওখানে আবার ওক গাছের ডালে নীল পালকের একটি পাখি লেজ নাড়াতে নাড়াতে কণ্ঠে মিষ্টি সুর তুলে ডাকছে। মিতুলের কাছে বেশ লাগছে কিন্তু পাখির ডাকটা। মিতুল মোবাইল বের করে ছবি তুললো পাখিটার। পাখিটা সেই অনেকক্ষণ ধরে এখানে বসে আছে। উড়ে যাচ্ছে না। মিতুলের মনে হচ্ছে ওকে সঙ্গ দিতেই বসে আছে পাখিটা। বাহ! এই কানাডার পাখি গুলোও দেখছে খুব বুদ্ধিমান। মিতুল এসে দোলনায় বসলো।
সকাল বেলা উঠে একবার এই গার্ডেনে এলেই মন ভালো হয়ে যায় ওর। যদিও কালকে থেকে ওর মন খুব ভালোই আছে। জোহান ওর জন্য আতশবাজির ব্যবস্থা করেছিল, সেটা ভাবতেই বার বার পুলকিত হয় ও। তাছাড়া রেশমী আন্টি যে আচরণ করলো কাল। রেশমী আন্টির এতগুলো দিনের মধ্যে সব থেকে বেশি আন্তরিক আচরণ বোধহয় কালই ছিল। কালকের পর থেকে রেশমী আন্টির প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আরও বেড়ে গেছে ওর। সত্যিই খুব ভালো রেশমী আন্টি। তার দেওয়া চকলেট খেয়ে টেস্ট করেছে রাতে। বেশ ইয়াম্মি চকলেট। ওর হঠাৎ ইচ্ছে হলো জোহানকেও এই মজাদার চকলেট খেতে দেয়। আচ্ছা জোহান এখন কোথায় আছে? মিতুল ঘাড় ঘুরিয়ে জঙ্গলের দিকে তাকালো। জোহান সম্ভবত এখন জঙ্গলের ভিতর নিজের টাইম হাউজে আছে। কারণ, রুমে দেখেনি জোহানকে। মিতুল বুঝতে পারে না বাড়ি ছেড়ে টাইম হাউজে থাকায় কী এমন মজা আছে? একা একা একটি ঘরে কার ভালো লাগে থাকতে? জোহান কীভাবে থাকে? ও হলে জীবনেও থাকতে পারতো না।
মিতুল দোলনা থেকে নেমে পায়ে পায়ে এগিয়ে এসে জঙ্গলের রাস্তা ধরলো।
হাঁটতে হাঁটতে এসে গেল জোহানের টাইম হাউজে। এসে বেশ অবাকই হলো আজকে। জোহানের টাইম হাউজের দরজা পুরোপুরি খোলা। এর আগে যতবার এসেছে, ততবারই দেখেছে দরজা বন্ধ। আজকে দরজা খুলে রেখেছে যে, কাহিনী কী?
মিতুল কোনো শব্দ না করেই ধীর পা ফেলে ঢুকলো জোহানের টাইম হাউজের ভিতর।
কিচেন থেকে জোহান এবং আরও একটা পুরুষালি কণ্ঠ ভেসে আসছে। কণ্ঠটি বেশ পরিচিত পরিচিত ঠেকছে। কার কণ্ঠ? মিতুল ধীর পায়েই এগিয়ে এলো কিচেনের দিকে। কিচেনে উঁকি দিয়ে দেখলো জোহানের সাথে সাদাত আঙ্কল। সাদাত আঙ্কলকে দেখে অবাক হলো মিতুল। সাদাত আঙ্কল? সাদাত আঙ্কলের কণ্ঠ চিনতে পারেনি ও? ওর নিজেকে এই মুহূর্তে অকর্মণ্য মনে হলো। সাদাত আঙ্কলের কণ্ঠ কীভাবে না চিনে পারে ও?
মিতুল কিছুক্ষণ চুপি চুপি তাকিয়ে রইল বাবা-ছেলের দিকে। বাবা-ছেলে মিলে অমলেট তৈরি করছে। ভীষণ হাসাহাসি চলছে দুজনের মাঝে। বাহ! সুন্দর একটা দৃশ্য! ও এসেছে তা কেউ টের পায়নি। চায়ও না আর টের পাক ও এসেছে। বাবা এবং ছেলের ভালোবাসার মাঝে নিজেকে ঢোকানো একেবারেই অনুচিত মনে হচ্ছে ওর কাছে। মিতুল চুপি চুপি বেরিয়ে এলো টাইম হাউজ থেকে। মনে হচ্ছে সাদাত আঙ্কল নিজের ছেলেদের প্রতি ভীষণ যত্নশীল। খুব ভালোবাসে ছেলেদেরকে। তা না হলে এত ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও ছেলেকে এমন ভাবে সময় দিতো?
মিতুল টাইম হাউজ থেকে কিছুটা দূর চলে আসতেই পিছনে খুবই ছোটো করে শুনতে পেল জোহানের ডাক,
“হেই তুলতুল!”

মিতুলের পা না চাইতেই দাঁড়িয়ে গেল। জোহান কীভাবে টের পেল ও এখানে এসেছে? ও তো কোনো শব্দ করেনি টাইম হাউজে থাকতে।

জোহান দৌঁড়ে এলো মিতুলের কাছে।
“হেই, আমাকে না জানিয়ে চুপিচুপি চলে যাচ্ছ কেন আমার টাইম হাউজ থেকে?”

“তুমি তোমার ড্যাডের সাথে ছিলে, তাই ভাবলাম তোমাদের ডিস্টার্ব না করি।”

“বুঝলাম। কিন্তু তুমি এসেছিলে কেন আমার টাইম হাউজে?”

মিতুল হকচকিয়ে গেল। কেন এসেছিল ও জোহানের এখানে? নিজেই তো জানে না সঠিক। জোহানকে কী বলবে?
মিতুল কিছু বলার আগে জোহানই বলে উঠলো,
“আমাকে ছাড়া থাকতে পারছিলে না, তাই না? মিস করছিলে খুব, তাই না?”

জোহানের কথা শেষ হতে না হতেই মিতুল বললো,
“মোটেই না। তোমাকে মিস করবো কেন? তোমার টাইম হাউজে একটা জিনিস হারিয়ে ফেলেছি আমি। সেটাই খুঁজতে এসেছিলাম।”

“ও আচ্ছা। একটা জিনিস হারিয়ে ফেলেছিলে আমার টাইম হাউজে? তো কী জিনিস হারিয়ে ফেলেছো তুমি? নিজের মন?”

মিতুলের হৃৎপিণ্ড যেন আচমকা দুলে উঠলো। হার্টবিট বাড়তে শুরু করলো দ্রুত। আর দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব না জোহানের সামনে। এখনই বাড়ি চলে যাবে এখান থেকে।
মিতুল ঘুরে হাঁটা দিলেই জোহান এসে পথ আটকে ধরলো।
“কী হলো? কিছু না বলে চলে যাচ্ছ কেন? বলো, কী হারিয়ে ফেলেছো তুমি এখানে?”

মিতুল টের পাচ্ছে ও দুর্বল হয়ে পড়ছে। জোহানের সামনে কিছুতেই আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না। ও কিছু না বলে জোহানকে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়া দিলো।
জোহান আবারও বাধা দিলো ওকে। রুখে গেল ওর পা। জোহান একটু ঝুঁকে বললো,
“ব্যাপার কী মিতুল, বলো তো? আজকে এভাবে পালিয়ে বেড়াচ্ছ কেন তুমি?”
জোহানের প্রশ্নের কোনো উত্তর এলো না মিতুলের থেকে। জোহান বললো,
“আচ্ছা, যাক বাদ দিই এসব। শোনো, কালকে তো ক্লাবে যাওয়া হয়নি। তাই আজকে ক্লাবে যাচ্ছি আমি। ক্লাবের কোনো মেয়ের সাথে ছবি তুলে তোমাকে পাঠানোর দুঃসাহস কি দেখাতে পারি আমি? না কি…”

মিতুল জোহানের কথার মাঝেই বলে উঠলো,
“তোমার যা খুশি তাই করো।”
বলেই পাশ কাটিয়ে দৌঁড়ে চলে এলো ও।

জোহান পিছন থেকে ডাকলো,
“হেই তুলতুল! তুমি তো দেখছি সত্যিই পালিয়ে যাচ্ছ। কেন? আমার থেকে পালাচ্ছো কেন? আমাকে মিস করো বলেই তো এসেছিলে, তাহলে আবার পালিয়ে যাচ্ছ কেন?”

______________

আব্বুর সাথে ফোনে কথা হচ্ছিল মিতুলের। এর মাঝেই নিচ থেকে ভেসে আসে রেশমী আন্টির উচ্চৈঃকণ্ঠস্বর। মিতুল প্রথমে গ্রাহ্য করতে চাইলো না সেসব। কিন্তু রেশমী আন্টির চ্যাঁচানো গলা থেকে থেকে ভেসে আসছিল কানে। এবার আর গ্রাহ্য না করে পারলো না ও। ভয় হলো ওর। হঠাৎ কী হলো যে রেশমী আন্টি এমন চ্যাঁচামেচি করছেন?
মিতুল আব্বুকে বললো,
“আব্বু আমি পরে ফোন করবো তোমায়। নিচে একটা জরুরি কাজ আছে আমার। এখন রাখি আমি।”

মিতুল আব্বুকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দিলো। তারপর দ্রুত পায়ে ছুটে এলো। হলরুমে নামার আগে ওর পা সিঁড়িতেই থমকে গেল। প্রথমেই চোখ পড়লো জোহানের উপর। রেশমী আন্টির সামনে কিছুটা মাথা নত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে জোহান। মাথা একটু নুইয়ে রাখলেও হলরুমের আলোক বাতিতে ওর মুখ দেখা যাচ্ছে। মুখের জায়গায় জায়গায় লাল দাগের উপস্থিতি! মিতুলের অন্তর কেঁপে উঠলো! আবারও মার খেয়েছে জোহান?

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here