সমর্পণ,প্রথম পর্ব

0
1284

#সমর্পণ,প্রথম পর্ব
#মুক্তা_রায়

গাছে জল দিতে দিতে থেমে যায় মেয়েটির হাত।কদিন আগে দেখেছিল ছেলে শালিকটা কিভাবে যেন আদর করছে মেয়ে শালিকটাকে।মানুষও এমন করে আদর করে?তাকে কেউ আদর করবে না এমন করে?
বুকে জড়িয়ে দেহের সব উষ্ণতা দেবে না তাকে?কথাটা মনে হতেই লাল হয়ে গিয়েছিল।প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে মেয়েটি বাগানের ওই গাছগলোর মতোই যৌবনে এসে বসন্তের স্বপ্ন দেখে।আজ দেখে শালিকদুটি ঘর বাঁধছে।সে ঘর বাঁধবে না?এবার নিজের মনেই হেসে ফেলে মেয়েটি।গরীব ঘরের মেয়ের এমন স্বপ্ন দেখা সাজে না।বাবার ডাক শোনে। © মুক্তা রায়

– অমা,ভাত বাড়।আমি চট করে স্নানটা সেরে আসি।আজ দিনটা মন্দা গেল-ছুটি চলছে, বাসে ভীড় কম।গেলহপ্তায় ব‍্যাবসা ভালো হয়েছিল-বাড়ি যাচ্ছিল সব ছুটিতে, ভীড় যেন উপচে পড়ছিল।
একনিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে রতনবাবু কুয়োতলায় চলে যান।কুয়োতলার একপাশে ঘেরা দিয়ে মেয়েদের স্নানের জায়গা।কুয়োরপাড়টা অবশ্য পাকা।তবে কোন্ যুগের বাঁধানো পাড়ে মাঝে মাঝে চলতা উঠে গেছে।ছেলেরা অবশ‍্য কুয়োতলাতেই স্নানটা সারে।কুয়োতলার পেছনে বাঁশঝাড়ের পাশে সেনেটারি ল‍্যাট্রিন, পঞ্চায়েতের দেওয়া।করণদিঘির কাছের গ্রাম।রোজ সকালে সাইকেলে করে দুই চটেরব‍্যাগ ভরা মাল নিয়ে করণদিঘি যান রতনবাবু।সেখান থেকে বাসে রায়গঞ্জ বাসডিপো।সেখানে শুরু হয় তাঁর ব‍্যাবসা।বাসে বাসে বাদামভাজা, চিঁড়েভাজা, লজেন্চুস, ছোলাভাজা বিক্রি করেই সংসার চলে তাঁর।

বাবা-মেয়ের সংসার রতনবাবুর।বছর পাঁচেক আগে স্ত্রী গত হয়েছে।মেয়ের বছর সাতেক পর একটা ছেলে হয়েছিল।আঁতুড়েই মারা যায়।এদিকে স্ত্রীরও শরীর ওই বাচ্চার জন্ম দিতে গিয়ে ভেঙ্গে যায়।শেষের কটা বছর তো জয়া বিছানায় বলতে গেলে।যেটুকু জমিজমা ছিল স্ত্রীর অসুখেই চলে গেছে।এখন খালি এই দশকাঠা জায়গার ওপর বসতবাড়িটুকুই সম্বল।তারই একপাশে সব্জির বাগান করেন বাবা-মেয়ে মিলে।কটা বাঁশঝাড়ও আছে।বাপমেয়ের চলে যায় কায়ক্লেশে।বিকেলে বাড়ি ফিরে একটু বিশ্রাম নিয়েই বাবা-মেয়েতে মিলে বসে যান ব‍্যাবসার মাল বানাতে।ছুটির দিন থাকলে মেয়েটা দুপুরে অনেক কাজ এগিয়ে রাখে।এমন লক্ষ্মী কাজের মেয়ে বড় কম দেখা যায়।সেই ছোটর থেকেই খেটে যাচ্ছে মেয়েটা!কত বাচ্চা থেকে রান্নাবান্না, ঘরসামলানো, মায়ের দেখাশুনো করেছে।তাও পড়ায় কত ভালো!তিনি মেয়েকে সব বইপত্র কিনে দিতে পারেন না।স্কুলের দিদিমণিরা ওকে বইপত্র দিয়ে সাহায্য করেছেন।এবার মেয়েটা স্টার পেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছে বিজ্ঞান বিভাগে। © মুক্তা রায়

– শরীর যে তোমার কী হয়েছে!আর দুটো ভাত দিই তোমায়?মৌরলা মাছের চচ্চড়ি করেছি-
– দে দুটো।রাস্তায় অখিল মাষ্টারের সাথে দেখা।বললেন জয়েন্টটা দিলে পারতো।ঠিক চান্স পেতো-
– কী হবে জয়েন্ট দিয়ে বাবা?চান্স পেলে দু্ঃখ বাড়তো বই কমতো না।খরচ কিভাবে চলত?তার চেয়ে রায়গঞ্জে ইংরেজি অনার্স নিয়ে ভর্তি হলে বি.এ পাশ করেই এস.এস.সিতে বসতে পারবো।গতবছর থেকে শিক্ষক নিয়োগে এই পরীক্ষাটা শুরু হয়েছে।ইংরেজিতে শুনেছি ভ‍্যাকেন্সি বেশি-
– কত শখ ছিল তোর বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার মা!
রতনবাবুর গলায় হতাশা।সবাই বলছে এমন মেয়ে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার একটা কিছু হতোই।কিন্তু তিনি নিরূপায়।খরচ চলবে কী করে?যেখানে সাধারণ কলেজের ভর্তির ফি যোগাড় করাই কঠিন!তারপর অনার্সের মাষ্টারের খরচ-
অপু বাবার মনের কথা ধরতে পারে।বাবা তার পড়াশুনো নিয়ে চিন্তিত।বাবার কত স্বপ্ন ছিল তাকে ডাক্তার করার!
– তুমি ভেবো না বাবা।আমার কিছু জমানো টাকা আছে,স্কলারশিপ আর টিউশনির।ওতে ভর্তিটা হয়ে যাবে।বইপত্রও কিছু কিনে নেব।যে দু-চারটে টিউশনি আছে ওতে আমার কলেজের খরচটা চলে যাবে।কাল তো ভর্তি।আমিই যেতে পারবো।তোমার ব‍্যাবসা-
– না মা, কাল তোর সাথে কলেজে যাব-
পরদিন বাবা-মেয়ে মিলে কলেজে গেল।রতনবাবু দাড়ি কামিয়ে সবচেয়ে ভালো পোশাকটা পরলেন।মেয়ে পরলো পূজোর চূড়িদারটা।মনে মনে চিন্তা করছে কলেজে কী পরে যাবে।সব মিলিয়ে বাইরে পরার সালোয়ার কামিজ আছে তিনটে।গোটা চারেক সুতীর শাড়ি আছে মায়ের।কলেজে পরার মতো শাড়ি তার নিজের আছে তিনটে।দুটো ভীষণ দামি শাড়ি বনানী দিদিমণির দেওয়া,যেটা কলেজে পরা যাবে না।সব ধুয়ে পাট করে রেখে দিয়েছে কলেজে যাবার জন্য।ভালো রেজাল্ট করায় স্কুল থেকে তাকে ঘড়ি দিয়েছে।শুধু একটা সাইডব‍্যাগ কিনতে হবে।আগেরটার অবস্থা করুণ।আজ ফেরার পথে ফুটের থেকে কিনে নেবে।সাথে একজোড়া স‍্যান্ডেল।বাবাকেও একটা কিনে দেবে। © মুক্তা রায়

ইংরেজি অনার্স নিয়ে ভর্তি হয়ে মনে মনে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে অপু।তার থেকে কত কম নম্বরের ছেলেমেয়েরা ফিজিক্সে বা ম‍্যাথসে অনার্স নিচ্ছে।সব ভেবেই ইংরেজি অনার্স নিলো।তাদের স্কুলের বনানী দিদিমণির দাদা স্নেহাংশু চৌধুরী এখানকার ইংরেজির অধ‍্যাপক।বনানী দিদিমণি বলেছেন উনি তাকে দেখিয়ে দেবেন।বইপত্রের সাহায্য পাবে অপু।দেখা যাক কী হয়।
শুরু হয়েছে অপুর আরেক তীব্র জীবনসংগ্রাম।সকাল নটায় বেরিয়ে হেঁটে বা পটলকাকার ভ‍্যানে আসে করণদিঘি।সেখান থেকে বাসে রায়গঞ্জ।যেদিন স‍্যারের কাছে পড়া থাকে সেদিন একেবারে বাবার সাথে সকালে বেরিয়ে পড়ে।টিউশন নিয়ে কলেজ সেরে তবে বাড়ি ফেরা।ভোরে উঠে বাবার জন্য রান্না করতে হয় অপুকে।বাবার হোটেলে খাবার সহ‍্য হয় না, খরচও বেশি।বিকেলে তো আছেই মাল তৈরি করা।বাড়ি ফিরে খেয়েদেয়ে গাছের পরিচর্যা একটু করতে হয়।বাবাও করেন।নইলে যে চলে না।তরকারিটুকু বাড়িতে হলে কিছুটা অন্তত সাশ্রয় হয়।কখনো সখনো বাগান আর বাড়ি পরিষ্কারের জন্য লোকও লাগানো হয়।বাবা বাগানের চারদিকে বাঁশের বেড়া দিয়েছেন।সারাদিন বাড়িতে কেউ থাকে না।ছাগলগরুতে খেতে পারে গাছগুলো।মুরগিও চারাগাছ ঠুকরে নষ্ট করে।
কলেজে অপুর শান্ত-স্নিগ্ধ স্বভাবের সাথে বুদ্ধি ও মেধার দীপ্তি, নিদারুণ জীবনসংগ্রাম তাকে জনপ্রিয় করে তুলেছে।তবে কলেজে অপু চুপচাপই থাকে।ভোটে দাঁড়াতে বলেছিল অনেকে,রাজী হয়নি। কোথায় তার সময় পার্টি-পলিটিক্স করার?ওসবে জড়াতে চায় না।বনানী দিদিমণির দাদা স্নেহাংশু চৌধুরী বলেছেন তার দারিদ্র্যের নাগপাশ কাটতে পারে একমাত্র শিক্ষায়।শিক্ষাই তার পাখির চোখ।এই লক্ষ্য ভেদ করতেই হবে।স‍্যার এত ভালো যে তার কাছ থেকে তো কোন টিউশন ফি নেনই না, উল্টে তাকে বলেছেন যে দু’দিন ওনার কাছে পড়তে আসবে অপর্ণা, ওনার বাড়িতেই যেন খেয়ে যায়।লজ্জা পায় অপু।কিন্তু বৌদির ডাক অগ্রাহ্য করতে পারে না।স্নেহাংশুবাবুরা এখানকার বনেদী মানুষ।রায়গঞ্জে বিশাল বাড়ি।করণদিঘির ওদিকে প্রচুর জমিজমা, বাজারে অনেক দোকানভাড়া আছে।বনানীদিরও স্বামী ডাক্তার।তবে বিয়ের আগের চাকরিটা উনি ছাড়েননি।বলেন নিজের স্বাতন্ত্র্য থাকা দরকার।শুধু টাকাই কী সব?বায়োলজির টিচার।স‍্যার আর বনানীদির পরিবারের সাথে কেমন করে যেন জড়িয়ে পড়েছে অপু।তাকে সবাই এমন আপন ভাবে যে বলার নয়!তবে অপুর সবচেয়ে প্রিয় বৌদি।ঠিক যেন অপুর মা।বৌদির সাথে দুদণ্ড কথা না বললে শান্তি নেই।উনিও তাকে ভালোবাসেন মেয়ের মতো।মাঝেমধ্যে তাকে বলবেন,’ কলেজফেরৎ আজ আমার কাছে চলে আসবি।কাজ আছে।’এলেই তাকে নিয়ে যাবেন শপিং করতে।কসমেটিকস থেকে জামাকাপড়-কিছু বাদ নেই।জোরজবরদস্তি কিনে দেবেন।না নিতে চাইলে রাগ করেন ভীষণ।বনানীদিও তাকে বলেছেন,’ বৌদি কিছু দিতে চাইলে না করিস না ওকে।তোকে পেয়ে বৌদি যে কতটা স্বস্তি পেয়েছে জানিস না তুই।’অপুও ব‍্যাপারটা শুনেছে।আর কিছু বলে না।শুধু দু’-চারটে জিনিস বৌদিকে কিনে দেয় ইদানিং।বৌদি চোখ পাকালে হেসে বলে,’ টিউশনির টাকা পেয়েছি।’শনি আর বুধ-এই দুদিন গোটা ছয়েক ইলেভেনের মেয়ে তার কাছে এসে পড়ে।বায়োলজি আর ইংরেজি।তাদের স্কুলেরই মেয়ে।মাসে পনেরশ টাকা পায়।

সেদিন পড়া হয়ে গেলে বংশীদা তাকে ডেকে বাড়ির ভেতর নিয়ে যায়।আনমনে দোতলায় ওঠার সিঁড়ি ভাঙ্গতে গিয়ে হঠাৎ ধাক্কা।পড়েই যেত যদি না সুঠাম দুটো হাত অপুকে ধরে ফেলত।এক মূহুর্ত্তের জন্য অপু আঁকড়ে ধরে স্থির হয়ে ছিল ওই হাতদুটোর মালিককে।তার পরই দে দৌড় ওপরে।পেছন থেকে ভরাট গলার তরল হাসি শুনতে পায়,কিন্তু পেছনে ফিরে তাকাবার সাহস তার নেই।লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে যেতে অপু একধরনের মাদকতাভরা বুনো গন্ধ টের পায়।এটাই কী ছেলেদের গায়ের গন্ধ?অদ্ভুত একটা গন্ধ!এখন গায়ে কাঁটা দিচ্ছে তার।উষ্ণ একটা বক্ষ।জোরসে বুকে চেপে তাকে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচিয়েছে।তবে রক্ষাকর্তার মুখটা দেখতে পায়নি অপু। © মুক্তা রায়

সেদিন খেতে খেতে বৌদির কাছে শুনলো বৌদির ছেলে এসেছে।দিল্লিতে ডাক্তারীর পোস্ট গ্র‍্যাজুয়েশন করছে সার্জারি নিয়ে।এম.বি.বি.এসে গোল্ডমেডেল পেয়েছিল।অপুর মনে হল ওই ছেলেটাই বৌদির ছেলে নয়তো?বৌদি অপুর মায়ের চেয়েও বয়সে বড়।কিন্তু দিদিমণির বৌদিকে যে বৌদি বলতে হয়।
– কবে তোদের কলেজ বন্ধ হবে রে অপু?আট তারিখ,না?ষষ্ঠীর দিন-
– হ‍্যাঁ বৌদি-
– গতবার কত করে বললাম পূজোয় আসার জন্যে।এলি না।এবার মাফ করব না।বাবাকে নিয়ে আসবি।উনি প্রসাদ গ্রহণ করবেন।তুই থেকে যাবি আমার কাছে পূজোর কদিন।অনেক কাজ করতে হবে।আরতিদিকে সাহায্য করবি ভোগ রান্নায়।তুই তো বামুনের মেয়ে।বনানীর তো জানিসই অ্যাপেনডিক্স অপারেশন হয়েছে।আমাকেই সবদিক সামলাতে হবে।প্রেশারটা হাই।বাপ্পা বলে পূজোর দরকার নেই।কিন্তু বংশের পূজো,না করলে চলে?
– অবশ‍্যই আসবো বৌদি।গেলবার জ্ঞাতি অশৌচ ছিল পূজোতে,তাই-
– ঠিক আছে,ও আসবে।কিন্তু তার আগে পড়াটা রেডি কর।খুললেই তো টেস্ট-
– হ‍্যাঁ হ‍্যাঁ, স‍্যার-
স‍্যারকে দেখে খেতে খেতেই উঠে দাঁড়ায় অপু।
– আরে বোস রে মা।এটা ক্লাস নয় যে উঠতে হবে-
বলেই চেয়ারটা টেনে খেতে বসেন স্নেহাংশুবাবু। © মুক্তা রায়
– বাপ্পাটা কোথায় গেল?
– আর বল না, এমন অশান্ত ছেলে!এত বড় হল, ছেলেমানুষি, চঞ্চলতা কমলো না!সারাটা সকাল সকলের পেছনে লাগলো!তোমার পড়ার ঘরেও হানা দিত,বহু কষ্টে রুখেছি।এখন গেল জিম না ইনডোর কোথায় যেন।সেখান থেকে আবার কোথায় সাঁতার কেটে বাড়ি ফিরবে।বিকেলে করণদিঘির ওদিকে যাবে ভলিবল খেলতে।আচ্ছা, ও সুস্থিরমতো ডাক্তারী করতে পারবে?
– তোমার ছেলে ছোটর থেকেই যন্ত্র।রুগীদের সাথে খেলবে ফুটবল-ভলিবল।ইনির আবার কার্ডিওলজি নাড়াঘাঁটার ইচ্ছে!তাহলেই হয়েছে।ডাক্তারের দুষ্টুমিতে রুগীরা হার্টফেল করবে-

স‍্যারের কথা শুনে মুচকি হাসে অপু।বাকীরাও হাসছে।সত্যি সত্যি এত বড় ছেলে এমন দুষ্টুমি করে?তখনই খেয়াল করল বৌদির চুলটা কালো নয়, ব্রাউন।ঘাড় অবধি ছাঁটা চুল।শার্প-ডিম্বাকৃতি মুখে বেশ আকর্ষণীয় লাগছে।অবাক হয়ে তাকাতেই বৌদি হেসে বললেন,
‘ ছেলে কালার করে দিয়েছে।ওর বাবা ঘুমোচ্ছিল, হাফ গোঁফ কেটে দিয়েছে।ফলে তোদের স‍্যারকে বহু সাধের গোঁফ সাশ্রু নয়নে বিদায় দিতে হয়েছে।’অপু এতক্ষণে খেয়াল করল।তাই তো!স‍্যারের গোঁফটাতো নেই!শুনলো বোনকে নালিশ করলে স‍্যারের বোন বলেছে,’বেশ হয়েছে।হেডঅফিসের বড়বাবুর গোঁফ যাওয়াই ভালো।’লক্ষ্য করল বংশীদার টাকে চকচক করছে স্টিকার।বিশাল হার্টের মধ্যে ‘লাভ মি’ লেখা।ডগির কপালে বৌদির বিন্দিয়া।বৌদি গল্প করলেন কোন্ ফাঁকে তেলের শিশির মধ্যে একটু জল মিশিয়ে রেখেছে।পানুর মা সকালে রান্না চাপিয়েছে।যেই তেল ঢেলেছে কড়াতে ,অমনি ধমাধম বোম ফাটা শুরু।পানুর মা ভয়ে রান্নাঘর থেকে দৌড়।এমনতর নানাবিধ দুষ্টুমিতে বাড়ি ভরপুর।আরও যে কত হবে!
সব শুনে হেসে ফেলে অপু।তাকে হাসতে দেখে বৌদি চোখ পাকান। © মুক্তা রায়
– সাবধান অপু।আজ আমি রক্ষা করেছি।পরদিন দেখবি তোদের কপালেও দুঃখ আছে।কত ছাত্রছাত্রীকে ও বাঁদরনাচ নাচিয়েছে!দেড়টা বছর আসেনি বলে তোরা রক্ষা পেয়েছিস।
তবে অপুর কপালে দুঃখ সেদিনই লেখা ছিল।স‍্যারের বাড়ি থেকে বেরোতেই পেছন থেকে হ‍্যাঁচকা টান।দেখে গোটানো ফুলহাতা চেকশার্ট পরা সেই দুটো হাত।ত্রস্ত চোখে তাকাতেই দু’চোখ ভরে গেল অপুর।ভারী সুন্দর মিষ্টি একটা মুখ।নির্মল,পবিত্র, মায়াভরা দুটি পদ্মচোখ।মুখে স্নিগ্ধ হাসি।সব মিলিয়ে দারুণ সৌম্য চেহারা।এই ছেলে এত দুষ্টু সেটা বিশ্বাস করাই কঠিন।তাকে হাঁ করে তাকাতে দেখে ছেলেটা বলে-
– চার লাখ চুয়াল্লিশ হাজার চারশ চুয়াল্লিশ-
– মানে?
– তোমার সংখ্যা।আমার রূপ নেহারি এর আগে ঠিক চার লাখ চুয়াল্লিশ হাজার চারশ তেতাল্লিশজন মুগ্ধ হয়েছে।দিব‍্যি আছো!রথ দেখাও হল আবার কলা বেচাও হল।আমার ভালো বাবা-মাকে পেয়ে কাজ দিব‍্যি হাসিল হচ্ছে!পড়াও হচ্ছে আবার পেটেও পড়ছে!আমার নামে মুখরোচক গপ্পো শুনতে শুনতে হাত চেটে খাওয়া হল,না?কী মজা!
– না মানে বৌদি খেয়ে যেতে বলেন-
– বৌদি কে?ও মা?তা পিসিমা,চলুন।যাওয়া যাক কলেজে-
– আপনি তো-
– আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না।সাইকেলের পেছনে উঠতে পারো?
– হ‍্যাঁ-
– ওঠো-
হুকুম দিল যেন ছেলেটা।অপুও কিছু না বলে সাইকেলের পেছনে ওঠে।অবাক হয়।সব ছেলেরা যেখানে বাইকে করে ঘোরে সেখানে এই ডাক্তার ছেলেটা ধ‍্যাড়ধেড়ে সাইকেলে ঘুরছে!কলেজের সামনে এসে অপুকে নামিয়ে দিয়ে নিমেষে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল বাপ্পা।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here