সমর্পণ,তৃতীয় পর্ব

0
768

#সমর্পণ,তৃতীয় পর্ব
#মুক্তা_রায়

ষষ্ঠীর দিন সকালে স‍্যারের বাড়ি গিয়ে আটকা পড়ে যায় অপু।কোনমতে বাবাকে খবর পাঠায় সুধীরকে দিয়ে।বৌদির শরীরটা ভালো নেই।প্রেশার হাই।বাপ্পা মাকে শুইয়ে রেখেছে।দিদিমণির তো আগের থেকেই শরীর খারাপ।অতএব ঠাকুর বরণ থেকে সব দায়িত্বই এসে পড়ে অপুর ওপর।ভাগ‍্যিস সপ্তমী থেকে দু’-তিনদিন থাকবে বলে কিছু কাপড় নিয়ে এসেছিল সঙ্গে করে।নিজেদের বাড়ির কাজও সেরে রেখেছিল।নইলে যে কী বিপদে পড়ত! © মুক্তা রায়
একদিকে ঠাকুরদালানে পূজোর কাজ, অন‍্যদিকে বাড়ির অতিথি ও অভ‍্যাগতদের দেখাশুনো-দুদিকে সামলাতে হচ্ছে অপুকে।বৌদির মাসতুতো বোন এসেছেন স্বামী, এক মেয়ে আর ননদদের দুই মেয়েকে নিয়ে।কিন্তু কাজে কেউ হাত দেয় না।সাজগোজ, খাওয়াদাওয়া, ফূর্তি নিয়ে ব‍্যস্ত।ননদদের দুই মেয়ের আবার বাপ্পার দিকে নজর।বাপ্পা অপুকে অ্যাসিস্ট করতে করতে এই নিয়ে মজা করে।

– দেখো পিসি,আমার কত কদর!শুধু তুমিই কদর বোঝ না-
– তাই তো দেখছি।তোমার একটা স্বয়ম্বর, না না, স্বয়ংস্ত্রী সভা ডাকা দরকার।কাকে বউ করবে?
– দেখি, নবমীর রাতে ডাকবো ভাবছি-
কী যে করে আর কী যে বলে ছেলেটা!দুষ্টুমির তো মাষ্টার!মাসী,মেসো,তাঁদের মেয়েরা, বাড়ির আর সব লোকজন-কার পেছনে না লাগছে?এমনকি ভোগ রান্নার আরতি কাকিমা, ঠাকুরমশাই, ওনার সহকারীর পেছনে পর্যন্ত লেগেছে!অপুর বাবা মেয়ের সাথে দেখা করার জন্য প্রতিদিন আসছেন একবার করে।বৌদির নির্দেশে পানুর মা ওনাকে ভোগ বেড়ে খেতে দিচ্ছে।খাওয়ার সময় বৌদি নিজে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন।তারপর দেন ভোজন দক্ষিণা একশটা টাকা।রতনবাবু না করলে বলেন,’ এতো নিতেই হবে আচার্যিমশাই।পূজোয় ব্রাহ্মণ ভোজন করিয়ে তো খালি হাতে যেতে দিতে পারি না।’ রতনবাবু এঁদের সৌজন্য-ভদ্রতায় মুগ্ধ।
অপু কাজের থেকে মুখ তুলতে পারে না।পূজোর কাজের জন্য বৌদির দেওয়া ছাপাশাড়িগুলো পরে সারাদিন মন্দিরে।কখনো রান্নায় সাহায্য করে তো কখনো বা গিয়ে পূজোর কাজ।আবার প্রসাদ বিলিতেও লেগে যায়।ছুটোছুটির অন্ত নেই।বাপ্পা তাকে হেসে বলেছিল,’ শাটল্ কক ‘।এরইমধ্যে তিনটে মেয়ে অতিষ্ঠ করে খায় তাকে।শাড়ির কুঁচি ঠিক করে দে, চুল বেঁধে দে,খাবার এনে দে।হাজার রকম ফরমাশ।মুস্কিল হল যখন মাসীর ননদদের ছোট মেয়েটা তাকে ফরমাশ করল একটা ডিমের অমলেট করে এনে দিতে।নিরেমিষ খেয়ে খেয়ে বলে মুখে ছাতা পড়েছে।

– দেখো বোন,আমি তো পূজোর কাজ করছি।ডিম ধরলে আবার স্নান করতে হবে-
– করলে করবে।তাও ডিম এনে দাও-
– এনে দিচ্ছি।তবে বৌদি শুনলে কষ্ট পাবেন।বাড়িতে মায়ের ঘট বসেছে।এঁরা নিষ্ঠাভরে পূজো করেন-
– তোমাকে লেকচার মারতে হবে না।এক সাধারণ গাঁয়ের মেয়ের এত লেকচার সাজে না।করতে এসেছ তো ঝিগিরি।দেখলাম তো তোমার মাইনে নিল তোমার বাবা হাত পেতে-
– কাকে কী বলছ বান্টিদিদি?ও কর্তাবাবুর ছাত্রী।ওর বাবাকে ব্রাহ ভোজন করিয়ে ভোজন দক্ষিণা দিলেন বৌদিমণি।
রান্নার মাসী পানুর মা কথাটা না বলে পারে না।দেখছে মেয়েটার মুখ কান্না কান্না।ষষ্ঠী-সপ্তমী গেল-মেয়েটা একটু সেজেগুঁজে ঠাকুর দেখতে যেতে পারলো না!দু’হাতে বাড়ি সামলাচ্ছে।বিনিময়ে পাচ্ছে বৌদিমণির ওই কলকাতার বোনটার আর ওর মেয়েদের ঠেস মেরে মেরে কথা!এখন তো পায়ে পাড়া দিয়ে অপমান পর্যন্ত করল! © মুক্তা রায়
– ঠিক আছে।আমি এনে দিচ্ছি।তুমি বাদ দাও মাসী ওসব কথা-
তাড়াতাড়ি অবস্থা সামাল দেবার চেষ্টা করে অপু।জানে ওরা ভীষণ মুখরা।
– ও তোমার বোনের মেয়ে?তাই এত দরদ তোমার!পড়ে তো মফস্বল কলেজে, তার এত লেকচার!লাগবে না।হোটেল থেকে কিনে খাবো কালকের মতো-
জোর গলায় বললেও মামণির কথা শুনে ভয় পায় বান্টি।মামণি মানে বাপ্পার মাকে সমীহ করে চলে ওরা তিনজনই।সরে যায়।ইচ্ছে আছে মৌকা বুঝে শোধ তুলবে এর।
– তুমি এসব কথা কাউকে বলতে যেও না মাসী,আমার অশান্তি ভালো লাগে না-
– তাই বলে এদের অত‍্যাচার মুখ বুজে সহ‍্য করবে?
– দেখো এরা অতিথি।দু’দিনের জন্য এখানে বেড়াতে, আনন্দ করতে এসেছে।ওদের আনন্দে বাধ সাধবো কেন?
– অতিথি না কচু।বেড়ালনী গো বেড়ালনী।মাছের জন্য ছোঁকছোঁক করছে!এসেছিল না এক বেড়ালনী পূজোয় ঘুরতে?সোনার সংসারটায় আগুন ধরিয়ে গেছে!বৌদিমণিকে যে বাঁচানো গেছে-যথেষ্ট।ছোড়দাবাবু কী এমনি এমনি এত হাসিমজা করে বাড়ি মাথায় করে?আমি কী বুঝি না?
– তোমাদের ছোড়দাবাবু ছোটর থেকে আমুদে,না?
– একেবারে গুঁড়ির থেকে গুণ্ডা!আমি বলতাম গোপাল ভাঁড়-এত হাসিতো!তবে বড় বুঝদার ছেলে।কাউকে টের পেতে দেয় না এত বড় তফাৎটা হয়ে গেছে সংসারে।

ঘটনাটা জানে অপু।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।তারপর আবার কাজে মন দেয়।রাত সাতটায় সন্ধিপূজো।তার যোগাড় করতে হবে।তাড়াতাড়ি ভোগের ঘরে এসে ঢোকে।
– তোর কথাই ভাবছিলাম মা।তুই না থাকলে তো চোখে অন্ধকার দেখতাম।পুরুতমশাইয়ের সঙ্গী কানাইটা একেবারে আনাড়ি।নে–পনিরটা বসা তাড়াতাড়ি।আগে পাঁচরকমের ভাজাটা ভেজে নে।শেষে কাঁচামুগ ডাল আর সাদাভাত।আমি পায়েসটা নামিয়েছি।একটু পান খেয়ে আসি।সারাদিন আগুনের তাতে আছিস।একটু সরবৎ খা-
– না না।সন্ধিপূজো হলে পর উপোস ভাঙ্গবো-
– যা চাওয়ার চেয়ে নিস সন্ধিপূজোর সময়-
হেসে বাইরে জিরোতে গেলেন আরতি কাকিমা।নিশ্চিন্ত।মেয়েটা তো আছে। © মুক্তা রায়

এদিকে বাপ্পাও উপোস করে পূজোর কাজ করছে।সন্ধ্যায় আর একবার স্নান করে পাজামা-পাঞ্জাবী পরে এসেছে।অপূর্ব দেখাচ্ছে।বান্টি আর দিয়া চোখ ফেরাতে পারছে না।এদিকে অপু ভাজা, পনির, ডাল নামিয়ে ভাত বসিয়ে দিয়ে আরতি কাকিমাকে দেখতে বলে ছুটে এসেছে প্রদীপ সাজাতে।একশ আটটা প্রদীপ সাজাতে হবে সন্ধিপূজোর সময়।এসে দেখে বাপ্পা ফল কাটছে।অপু তাড়াতাড়ি করে নৈবেদ্য আর পুষ্পপত্র সাজায়।খেয়াল করল হাঁ করে দুটো মেয়ে চোখ দিয়ে গিলছে বাপ্পাকে।নিজেরই কেমন লজ্জা করছে।দৌড়ে চলে যায় ভোগের ঘরে।কাকিমা ডাকছেন।দুজনে মিলে বার কেজির আতপচালের ভাত নামালো।কাকিমা বললেন,’ এখন কেউ নেই।পূজোটা হতে দে।প্রসাদের জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যাবে।’

সব রান্নাই শেষ সেদিনের মতো।এত এত রান্না অপু নিজে কোনদিন করেনি।বড় জোর দশ-পনের জনের রান্না।এখানে আরতি কাকিমার কাছে বেশি পরিমাণে রান্নার কায়দাটা শিখলো।কী সুশৃঙ্খলভাবেই না হয়ে গেল সব!শেখার কী শেষ আছে?
– কাল সকাল সকালেই শুরু হবে মা।ঘি ভাতের সাথে একুশ রকমের ব‍্যঞ্জন লাগবে।তোমার মতো গুণী শক্তসমর্থ মেয়ে এই বাড়ির বউ হলে ভালো হয়।নইলে এত নিয়ম মেনে পূজো দেবার ক্ষমতা আছে কারও?ওই তো দেখলাম আত্মীয়-স্বজনের ছিরি!কেউ কুটোটি হাত দিয়ে দেখলো না!উল্টে তোমার ওপর হুকুম চালায়।
– বাদ দাও কাকিমা।যাই গে প্রদীপগুলো সাজাই।তুমি ভোগটা বাড়তে থাকো।ঠাকুরমশাই ডাকলেন বলে-
আবার দৌড়ে ঠাকুরদালানে আসে ভোগের ঘর থেকে অপু।ঠাকুরদালানের পাশেই ভোগের ঘর।দেখে বাপ্পা প্রদীপ জ্বালানো শুরু করেছে।
– কী পিসি?ওদিকটা হল?
– হ‍্যাঁ-
বাপ্পার মুখে পিসি ডাক শুনে বান্টি-দিয়া দারুণ খুশি।
– ও তোমার পিসি বুঝি বাপ্পাদা?কাজের মেয়েদের সম্মান দিয়ে অনেকে এসব বলে ডাকে-
কথাটা বলেই দিয়া অপুকে বলে-
– এই মেয়ে,শুধু তো দৌড়দৌড়ি করে কাজের পোজ দেখাচ্ছো।কাজের বেলায় লবডঙ্কা।ছেলেটাকে দিয়ে খাটাচ্ছো খালি!প্রদীপগুলো জ্বালাও-
– হ‍্যাঁ, এই তো জ্বালাচ্ছি-
অসহায় চোখে বাপ্পার দিকে তাকায় অপু।কষ্ট পায়।বাপ্পা একটা প্রতিবাদ পর্যন্ত করল না!দুদিক থেকে দুজনে প্রদীপগুলো জ্বালাতে শুরু করে।চারদিক আলোয় আলোময়।সস্নেহে অপুর দিকে তাকিয়ে হাসে বাপ্পা।ওর কষ্টটা ভালোভাবেই জানে।কত যে অবমাননা সইতে হচ্ছে মেয়েটাকে!দীর্ঘশ্বাস ফেলে নীরবে। © মুক্তা রায়
পরদিন ফটো তুলছেন বাপ্পার মেসো।কে যেন অপুকে টান মেরে সামনে দাঁড় করালো।সঙ্গে সঙ্গে সরে গেল তিন মেয়ে।ওরা সার্ভেন্টদের সাথে ফটো তুলবে না।সুপ্রিয়বাবু নিজের মেয়েকে নরমেগরমে বুঝিয়ে নিয়ে এলেন, কিন্তু দিদির দুই মেয়ে মামাকে পাত্তাই দিল না।তাঁর স্ত্রীরও সায় আছে।উল্টে তাকেই ধমক দিল।অবাক হন সুপ্রিয়বাবু।দুই বোনের কত তফাৎ!একদিকে ভগবতীর মতো সর্বংসহা দিদি,যিনি মানুষে মানুষে ফারাক জানেন না।বউকে বলতে পারেন না,’ তোমার সাথে তোমার মাসতুতো দিদির ফারাকটা দেখো।তোমার বাবার যতই পয়সা থাকুক, কাপড়ের হোলসেলের ব‍্যাবসা।আর বসুধাদির ঠাকুর্দা সেকালের নামকরা ব‍্যারিস্টার, বাবা জাজ।তাঁর একমাত্র মেয়ে-একমাত্র ওয়ারিশ।তোমার বাবার ব‍্যাবসা তো তোমার দুই দাদার দখলে।আমার ব‍্যাঙ্কের চাকরিটা যা ভরসা।’এইটে পড়া মেয়েকে বোঝান,
‘ দিদিদের মতো হলে তো চলবে না মামণি।সবাইকে নিয়ে একসাথে এগিয়ে চলার নিয়মটা না জানলে জীবনে শুধু কষ্টই পেতে হয়।ওই দেখ অপুদিদিকে, উচ্চমাধ্যমিকে স্টার নিয়ে পাশ করে ইংরেজি অনার্স পড়ছে।আবার কী সুন্দর রান্না করে!’ মেয়ে শুনে হাত ধরে অপুকে নিয়ে এল।দুজনের ফোট তুললেন সুপ্রিয়বাবু।

বাপ্পা সবাইকে নিয়ে যাবে পূজো দেখানোর জন্য।বৌদি অপুকে ডেকে পাঠালেন তাঁর ঘরে।
– কটা দিন তো সাজার সময়ই পেলি না।যা না, কাঞ্জিভরমটা পরে যা ওদের সাথে ঠাকুর দেখতে।আমার ঘরে গিয়ে একটু সেজে নে।
সেজে বেরিয়েছে অপু।বৌদির চোখের যেন পাতা পড়ে না।বাপ্পার কথাই ঠিক।সত্যি অপু ছাইচাপা আগুন‌।আটপৌরে সাধারণ মেয়ের মধ্যে লুকিয়ে আছে যেন রূপসী রাজকন‍্যে।যাদুকাঠির ছোঁয়ায় জেগে উঠেছে।বৌদি এসে জড়িয়ে ধরেন অপুকে।মাথায় চুমু খেয়ে নজর বাঁচান।তক্ষুণি মাথায় একটা সম্ভাবনার কথা এসেই মিলিয়ে যায়।ইচ্ছাটা তাঁর বহুদিনের।এদিকে রূপ দেখে মুখ কালো অনেকের। © মুক্তা রায়

– দেখ দিদি, যারতার সাথে আমার বাড়ির মেয়েরা যেতে পারবে না।কোথাকার উটকো হাঘরের মেয়ে!তারই খবরদারিতে থাকতে হচ্ছে আমাদের-
– আহ্ শিলু!কী হচ্ছে কী?মেয়েটা শুনলে দুঃখ পাবে।
তাড়াতাড়ি অবস্থা সামাল দিতে আসেন সুপ্রিয়বাবু।
– দুঃখ পেলে পাক।আমরা যাব না ও গেলে-
– দেখ শিউলি, দুঃখের বুলডোজার আমাদের চোখে সবাইকে সমান করে দিয়েছে।আমরা মানুষ দেখি,তার পরিচয় দেখি না।মানুষের পরিচয় তার স্বভাবে।আমার অপুর মতো মেয়ে রায়গঞ্জে দুটো নেই-
– থাক বৌদি,আমরা সবাই গেলে ঠাকুরদালানে থাকবে কে?তোমরা ঘুরে এসো-
বাপ্পা সেজেগুঁজে নেমে এসে শোনে অপু যাবে না।তবে সবার মুখ দেখে বোঝে কিছু হয়েছে।মাও যাবেন না বলছেন।বোঝার কিছু বাকী থাকে না বাপ্পার।নিঃশব্দে উঠে গাড়িতে স্টার্ট দেয়।আবার বাপ্পার দিকে করুণ চোখে তাকায় অপু।কেমন নিঃশব্দে চলে গেল ছেলেটা সব বুঝেশুনেও!তাই তো করবে ও।তার সাথে ওর দুদিনের পরিচয়।ওরা ওর কতদিনের পরিচিত।ওরাই বলেছে কলকাতায় থাকতে বাপ্পা ওদের কাছে কত গেছে।

কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পড়েছে অপু।হঠাৎ বোঝে মাথায় কেউ হাত বুলোচ্ছে।তাকাতেই দেখে বাপ্পা।
ওরা তবে ফিরেছে?এত রাতে বাপ্পা তার ঘরে কেন?
– খাওনি, না?আমার ওপর রাগ করেছ?
মাথা নীচু করে অপু।চোখে জল।বাপ্পা দেখে সাজ এলোমেলো, দামি শাড়িটা লাট হয়ে বসে আছে।চোখ কেঁদে কেঁদে লাল, ফোলা।সব মিলিয়ে যেন বৃষ্টিভেজা গোলাপের কুঁড়ি।আরও সুন্দর-কমনীয়! © মুক্তা রায়
– চল-
– কোথায়?
– ঠাকুরদালানে-
– কেন?এত রাতে!
– প্রশ্ন নয়,চল-
ঠাকুরদালানে বাপ্পা অপুকে হাত ধরে নিয়ে আসে।নিঃস্তব্ধ নবমীর রাত।বিদায়ের বাঁশি বাজলো বলে‌।বাপ্পাও দ্বাদশীর দিন ফিরে যাবে দিল্লি।দেবীর সামনে রাখা সিঁদুরের কৌটো থেকে খানিকটা সিঁদুর নিয়ে অপুকে পরায় বাপ্পা।
– আসনে আসীন জগন্মাতা শ্রীশ্রীদুর্গা সাক্ষী।আজ সর্বান্তকরণে কায়মনোবাক্যে তোমায় গ্রহণ করলাম‌।যতই ঝড়ঝাপ্টা আসুক জীবনে-যাই ঘটুক না কেন আমাদের সম্পর্ক বদলাবে না।দিম্মা বলতেন স্বামীস্ত্রীর সম্পর্ক জন্মজন্মান্তরের।সেই সম্পর্কেই দুজনে বাঁধা পড়লাম।
বলেই একটা ফুলের মালা নিয়ে পরিয়ে দেয় অপুকে।ওর মাথায় দিয়ে দেয় ঘোমটা।অপু মন্ত্রমুগ্ধের মতো মালাটা বাপ্পাকে পরিয়ে দেয়।
– আমাদের কেউ আলাদা করতে পারবে না।দেখো তুমি-
বুকের মধ্যে তুলে নিয়েছে অপুকে বাপ্পা।নিজের হাতে ওকে খাইয়ে দিয়েছে মিষ্টি।
– আমাদের মধ্যে যে বহু ব‍্যবধান-
– মনের দিক দিয়ে তো আমরা এক?বাহ‍্যিক ব‍্যবধান কখনোই বড় হতে পারে না।তুমি বড় হও সোনা, নিজের পায়ে দাঁড়াও।আমিও প্রতিষ্ঠিত হই-
– কিন্তু-
– চিন্তা কর না।তোমার স্বামী সব ঠিক করে দেবে।এখন তুমি আমাকে দেবে না তোমায়?
– দেবো-
– এই যে তুমি বললে, এতেই তোমায় পেয়ে গেলাম আমি।তোমায় বুকে করে চুমু খেয়ে রাতটা কাটাবো।সহবাস করতে চাই না।সহবাস করলে মনে হবে লোকচক্ষুর আড়ালে বিয়ে করে তোমায় ভোগ করলাম আমি-
– তুমি যে কথাটা বললে এতেই আমার শান্তি।তুমি আমার শরীরকে নয়,আমাকে চাও।এতে সুখী আমি।তোমায় সব দিয়ে সত্যি খুশি হব-
– না সোনা।আমি ডাক্তার।আমি জানি এখন সংযম খোয়ালে অসুবিধায় পড়তে পারো তুমি।আমার কাছে প্রোটেকশনের কিছু নেই।তোমাকে কষ্ট দেব না এক মূহুর্ত্তের সুখের বিনিময়ে।
দৃঢ় গলা বাপ্পার।অপু অবাক হয়।মানুষটা কী দিয়ে তৈরি?

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here