চেরি_ব্লসমের_সাথে_এক_সন্ধ্যা,৩৮,৩৯

0
733

#চেরি_ব্লসমের_সাথে_এক_সন্ধ্যা,৩৮,৩৯
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ৩৮
____________

আজকে খুব সকালে ঘুম থেকে উঠলো মিতুল। বাড়ির কেউ তখনও ওঠেনি। মিতুল চুপি চুপি ক্যামিলার রুমে গিয়ে ক্যামিলাকে জাগালো। ক্যামিলার সাহায্য নিয়ে নিজ হাতে খাবার তৈরি করলো। রান্না মোটামুটি ভালোই জানে ও। রান্না করেছে মূলত জোহানের জন্য। রাতেই ওর মাথায় হঠাৎ জোহানকে রান্না করে খাওয়ানোর ভূতটা চেপেছিল। কাল রাতে বোধহয় কিছু খায়নি বেচারা জোহান। জোহানের জন্য ওর বড্ড মায়া বেড়ে গেছে কালকের পর থেকে। মায়া করে জোহানের জন্য রান্না করেছে ও। বাড়ির সবাই জেগে গেলেও কেউ টের পেল না ও রান্না করেছে। সবাই ভাবছে ক্যামিলা রান্না করেছে। রান্না শেষ হলে মিতুল দ্রুত খাবার নিয়ে বেরিয়ে পড়লো জোহানের টাইম হাউজের উদ্দেশ্যে।
জায়িন বারান্দার শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট দেখতে পেল মিতুল জঙ্গলে ঢুকছে।

খুব খুশি মনে খাবার নিয়ে জোহানের টাইম হাউজের দিকে যাচ্ছে মিতুল। জোহানকে নিজের হাতের রান্না খাওয়াবে ভাবতেই মনে অন্যরকম প্রশান্তি হচ্ছে। কালকে রাতে জোহানের টাইম হাউজে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই ক্যামিলাও গিয়েছিল টাইম হাউজে। ও আর ক্যামিলা অনেক সময় ধরে টাইম হাউজে থাকার পর বাড়িতে ফিরেছিল। জোহান ফেরেনি। টাইম হাউজেই ছিল রাতে।
মিতুল টাইম হাউজে এসে দরজা বন্ধ দেখলো। ভেবেছিল ভিতর থেকে লক করা। কিন্তু দরজায় মৃদু ঠ্যালা দিতেই দরজা খুলে যায়। মিতুল হাসি হাসি মুখে প্রবেশ করলো ঘরের ভিতরে। বেড রুম থেকে জোহানের কণ্ঠ ভেসে আসছে। সেই সাথে সাদাত আঙ্কলের। মিতুল আর এক পা’ও সামনে বাড়াতে পারলো না। দরজা থেকে মাত্র দুই কদম সামনে এগিয়ে ছিল। সেই দুই কদমেই থেমে গেল। সাদাত আঙ্কল এখানে উপস্থিত। না না অসম্ভব। জোহানের জন্য ও খাবার নিয়ে এসেছে সেটা কিছুতেই সাদাত আঙ্কলের সামনে প্রকাশ করতে পারবে না। মিতুল তড়িৎ গতিতে খাবারের ট্রে নিয়ে বেরিয়ে এলো টাইম হাউজ থেকে। যে খাবার নিয়ে এসেছিল, তা আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাবে বাড়িতে। কিছুতেই সাদাত আঙ্কলের সামনে পড়বে না ও।

জোহানের চোখ বেড রুমের জানালা থেকে বাইরের দিকে পড়তেই দেখলো মিতুল তড়িঘড়ি করে রাস্তা ধরে বাড়ির দিকে যাচ্ছে।
জোহান বেড রুমে বসেই উচ্চৈঃকণ্ঠে ডেকে উঠলো,
“হেই তুলতুল!”

মিতুল জায়গাতেই থমকে গেল। জোহানের ডাক! জোহানের কেন ডাকতে হবে ওকে? এখান থেকে চুপিচুপি চলে যেতে চাইলেই জোহান টের পেয়ে যায় কীভাবে? মিতুল জোহানের কণ্ঠ অনুসরণ করে জানালার দিকে তাকালো। জোহানকে জানালার কাছেই দাঁড়ানো দেখলো।
জোহান আবারও উচ্চৈঃকণ্ঠে বললো,
“চলে যাচ্ছ কেন তুমি? ভিতরে এসো।”

মিতুল দিগভ্রান্ত অবস্থায় পড়লো। কিছুতেই চায়নি এখন এখানে এভাবে সাদাত আঙ্কলের সামনে পড়তে। কিন্তু এই জোহান সেটা হতে দিলো না। এখন এখান থেকে চলে গেলে কী ভাববে সাদাত আঙ্কল? মিতুল উপায়ন্তর না পেয়ে আবার টাইম হাউজে ফিরে এলো। খাবার নিয়ে একেবারে জোহানের বেড রুমে প্রবেশ করলো ও। জোহান এখন বেডে হেলান দিয়ে আধ শোয়া অবস্থায় আছে। আর ওর পাশে বসে আছে সাদাত আঙ্কল। মিতুলের অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ হচ্ছে। সাদাত আঙ্কল কী ভাববেন ও এখানে এসেছে বলে?
জোহান মিতুলের হাতের ট্রে দেখে বললো,
“হোয়াট ইজ দিজ?”

মিতুল এবার আরও অস্বস্তির গভীরতায় ডুবে গেল। জোহানের কি এই প্রশ্ন না করলেই হতো না? মিতুল তোতলাতে তোতলাতে বললো,
“খা-খাবার এনেছিলাম। ভাবলাম রাতে কিছু খাওনি তাই…”
মিতুল ঠিক করে কিছু বলতেই পারলো না।

জোহান কেমন করে একটু হাসলো যেন। তারপর ড্যাডকে বললো,
“তুমি জানো ড্যাড, মিতুল কিন্তু খুব ভালো ট্রিটমেন্ট করতে পারে। আই থিংক ও একজন ডক্টর হলে খারাপ হতো না।”

মিতুলের হৃদয় কেমন ছ্যাত করে উঠলো। জোহান কি ওর ড্যাডকে বলে দেবে কালকে ও জোহানের প্রাথমিক ট্রিটমেন্ট করেছিল? ইশ না! ও চায় না এটা। জোহান যেন কিছু না বলে ওর ড্যাডকে।
জোহান ট্রিটমেন্টের ব্যাপারে বললো না আর কিছু। হঠাৎ করে জিজ্ঞেস করলো,
“আচ্ছা ড্যাড, মম কি খুব বেশি রেগে আছে?”

সাদাত আঙ্কল বললেন,
“না, খুব বেশি নয়।”

আরও কিছু টুকিটাকি কথা হলো বাবা, ছেলের মাঝে। মিতুলের এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে একদমই ভালো লাগছিল না। বাবা, ছেলের কথার মাঝে নিজেকে উটকো ব্যক্তি মনে হয়েছে ওর। সাদাত আঙ্কলের অফিসে যেতে হবে বলে অল্পতেই চলে যান জোহানের টাইম হাউজ থেকে।

জোহান মিতুলকে সটান দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো,
“আমার জন্য খাবার নিয়ে এসে ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে? খাবার কি আমাকে খাওয়াতে এনেছো? না কি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে বলে এনেছো?”

“তোমাকে খাওয়াবো বলেই এনেছি।”

মিতুল জোহানের কাছে এসে বেডের উপর রাখলো ট্রে।
জোহান দেখলো মিতুল ওর জন্য চিকেন পাৰ্ম এবং লাসানা নিয়ে এসেছে।
মিতুল বললো,
“তোমার জন্য নিজ হাতে তৈরি করেছি এগুলো।”

জোহান একটু অবাক হলো।
“তুমি?”

মিতুল মাথা নাড়লো। জোহানের দিকে চিকেন পার্মের প্লেট এগিয়ে দিয়ে বললো,
“খেয়ে দেখো কেমন হয়েছে।”

“হঠাৎ করে আমার জন্য তুমি নিজ হাতে খাবার তৈরি করেছো যে, কারণ কী?”

মিতুল একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। কিন্তু দ্রুতই উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করলো,
“এমনিই ইচ্ছা হলো তাই।”

জোহান একটু বাঁকা চোখে তাকিয়ে বললো,
“এমনিই?”

“এমনি নয়তো কী? খাবার বানানোর পেছনে আবার কোন কারণ থাকবে? দোষ হয়ে গেছে আমার খাবার বানানোয়? ঠিক আছে, তাহলে দাও নিয়ে চলে যাচ্ছি। আর আমি তো চলেই গিয়েছিলাম। তুমিই তো আবার ডাকলে।”

“না ডাকলে জানতাম কী করে যে তুলতুল আবার আজকাল আমার জন্য নিজ হাতে খাবার তৈরি করছে? ডাকলাম বলেই তো জানতে পারলাম। বাই দ্য ওয়ে, তুমি আমার জন্য খাবার নিয়ে এসে, তা আমাকে না খাইয়ে আবার পালিয়ে যাচ্ছিলে কেন সে সময়? ইদানিং এত পালানো শুরু করলে কেন তুমি? কালকে বিকেলেও দেখলাম তুমি আমার টাইম হাউজে এসে আবার পালিয়ে যাচ্ছ। আজকেও দেখলাম তাই। কেন? পালাও কেন তুমি?”

“দেখো জোহান, আমি কোথায় যাব, কী করবো, না করবো, এগুলো একান্ত আমার নিজের ব্যাপার। এগুলো নিয়ে প্রশ্ন করার অধিকার তোমার নেই। সুতরাং এগুলো নিয়ে প্রশ্ন না করলেই খুশি হবো আমি।”
মিতুলের মাঝে একটু রাগের উপস্থিতি লক্ষ্যনীয়।

জোহান আর কথা বাড়ালো না মিতুলের সাথে। চিকেন পাৰ্ম নেওয়ার জন্য হাত বাড়ালেই, মিতুল আবার নিয়ে নিলো প্লেটটা। বললো,
“আমি কেটে দিচ্ছি।”

মিতুল চিকেন পাৰ্ম পিস করে কেটে দিলো।
জোহান কাঁটা চামচ দিয়ে এক পিস মুখে পুরলো।
মিতুল প্রশংসা শোনার জন্য বসে আছে। ও জানে ওর বানানো চিকেন পাৰ্ম সুস্বাদু হয়। ভাইদের কাছ থেকে কত প্রশংসা শুনেছে চিকেন পাৰ্ম নিয়ে।
মিতুল মনে মনে আকুলতা নিয়ে বসে রইল। কেটে গেল সময়। কিন্তু জোহানের থেকে কোনো প্রশংসা এলো না। মিতুলের মাঝে রাগ রাগ ব্যাপারটা বেড়ে উঠছে। জোহান এখনও কেন প্রশংসা করছে না? মিতুল আর ধৈর্য ধরতে পারলো না। কাঠ গলায় বললো,
“আমার তৈরিকৃত খাবার কি খুব খারাপ হয়েছে?”

“না, একেবারে খারাপ হয়নি। মোটামুটি ভালোই হয়েছে।”

মিতুল গর্জে উঠলো,
“মানে? ‘একেবারে খারাপ হয়নি’, ‘মোটামুটি ভালোই হয়েছে’ মানে কী এসবের? তুমি এটা বোঝাতে চাইছো যে, আমার বানানো খাবার ভালো হয়নি?”

মিতুল জোহানের কিছু বলা পর্যন্ত অপেক্ষা করলো না। বসা থেকে দাঁড়িয়ে নিজেই ফের বলে উঠলো,
“হাউ ডেয়ার ইউ! আমার বানানো খাবারের বদনাম করো তুমি? জানো কত মানুষ আমার রান্নার প্রশংসা করেছে? আমার মা, আমার আব্বু, আমার ভাইয়েরা, আমার কাজিনরা, আমার সকল আত্মীয় স্বজনরাই আমার রান্না খেয়ে প্রশংসা করেছে। আর তুমি আমার রান্নার বদনাম করছো?”

“তারা তো তোমার রিলেটিভস। সে জন্য তোমাকে মিথ্যা করে হলেও…”

“জোহান…” মিতুল তীব্র ক্ষোভে চিৎকার করে উঠলো।

“কী? যেটা সত্যি সেটাই তো বলছি।”

মিতুল আক্রোশিত হয়ে বাংলাতে বলে উঠলো,
“তুমি জীবনেও শুধরাবে না আসলে। বদমাইশ, বদমাইশই থেকে যাবে। তোমার পুরো শরীর জুড়েই শয়তানিপনা কিলবিল করছে। তোমাকে পুকুরে চুবিয়ে মারার ইচ্ছাটা চলে গিয়েছিল আমার। কিন্তু সেটা যেতে যেতেও হুট করে ফিরে এসেছে আবার। তোমাকে একদিন সত্যি সত্যিই পুকুরে চুবানি খাওয়াবো আমি।”
বলেই জোহানের হাত থেকে চিকেন পাৰ্মের প্লেটটা কেড়ে আনলো ও। জোহানের জন্য যা খাবার এনেছিল তা সব গুটিয়ে টাইম হাউজ থেকে বেরোনোর পথে চলতে লাগলো। আর এক পা বাড়ালেই টাইম হাউজ থেকে বাইরে চলে যাবে। পা বাড়িয়েও থেমে গেল ও আবার। হঠাৎ করে মনে হলো, ও একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে। কালকে জোহান মনে এত কষ্ট পেয়েছে, আর আজকে ও এরকম আচরণ করলো! এটা কি ঠিক হলো? হাত থেকে প্লেট পর্যন্ত কেড়ে এনেছে! এত নিষ্ঠুর কবে হয়ে গেল ও? কারো হাত থেকে খাবারের প্লেট কেড়ে আনার মতো নিষ্ঠুরতা কী করে করলো ও? মিতুলের অপরাধ বোধ হচ্ছে।
ফিরে এলো আবার জোহানের কাছে।

জোহান ভ্রু নাড়িয়ে বললো,
“কী? চলেই তো গেলে, আবার ফিরে এলে কেন? আমি তো ডাকিনি তোমায়।”

মিতুল কিছু না বলে জোহানের দিকে ট্রে এগিয়ে দিলো।

জোহান একটু অভিমানের সুর ধরে বললো,
“খাবো না আমি। নিয়ে যাও তুমি তোমার খাবার।”

মিতুলের মেজাজ আবার বিগড়ে গেল,
“শোনো, বেশি ভাব দেখিয়ো না। বড্ড বেশি ভাব দেখাও তুমি। খেলে বলো। নাহলে সত্যি সত্যিই নিয়ে চলে যাব।”

জোহান একটু দমে গেল। বললো,
“ঠিক আছে, খাব আমি।”
তারপর একটু থেমে আবার বললো,
“এক কাজ করো, তুমি নিজ হাতে খাইয়ে দাও আমায়।”

মিতুল অবাকের তুঙ্গে উঠে বললো,
“কী? খাইয়ে দেবো তোমায়?”

“হ্যাঁ, দিতেই পারো। এতে এত অবাক হওয়ার কী আছে? আমি একজন রোগী! একজন রোগীকে তুমি খাইয়ে দিতেই পারো।”

“কে রোগী? কোথায় রোগী? আমি তো কোনো রোগী দেখতে পাচ্ছি না।”

“দেখতে পাচ্ছো না মানে? তোমার সামনেই তো জলজ্যান্ত একজন রোগী বসে আছে।
ইট’স মি। আমাকে কি তোমার রোগী বলে মনে হয় না? দেখো…”
জোহান নিজের মুখের ক্ষত দেখাতে গিয়ে, ভুলে ক্ষত রেখে অন্য জায়গায় অঙ্গুলি করে বললো,
“এই যে ক্ষত! তা কি তুমি দেখতে পাচ্ছো না? এরপরও কি তোমার সন্দেহ আছে আমি একজন রোগী কি না?”

“এই সামান্য একটু আঘাত পেয়ে তুমি নিজেকে রোগী বলে দাবি করো? তুমি নিজেকে রোগী বললেই তো আর রোগী হয়ে যাবে না। তুমি সম্পূর্ণ সুস্থ একজন মানুষ। তাই সময় নষ্ট না করে নিজের টা নিজে খেয়ে নাও।”

বলেই মিতুল বেরিয়ে গেল।

_______________

মম রাগ করে আছে। জোহানের ভালো লাগছে না। আজকে সারাদিনে রুম থেকে বের হয়নি মম। তার খাবার রুমে পাঠানো হয়েছে। রুমে বসেই খেয়েছে।
কালকের মতো এর আগে এমন ঝগড়া ঝাটি আর হয়নি। এর আগে মম এটা সেটা নিয়ে বকাঝকা করলেও ও চুপ ছিল। মাঝে মধ্যে ইচ্ছা হলে দুই একটা কথার উত্তর দিতো, না হলে দিতো না। কিন্তু মম রাগ করে থাকতো। যা জোহানকে শান্তিতে থাকতে দেয় না। জানে মমের ওর প্রতি অবহেলা আছে, কিন্তু ও মমকে খুব ভালোবাসে। তাই মমের এমন রাগ করে থাকাতে কষ্ট হয় ওর।
জোহান মমের রাগ ভাঙানোর জন্য এলো। বন্ধ দরজায় নক করে নরম কণ্ঠে বললো,
“মম, আর ইউ অ্যাংগ্ৰি? ওপেন দ্য ডোর।”

ভিতর থেকে মমের কোনো উত্তর এলো না। জোহান বললো,
“আই অ্যাম স্যরি মম! আমি চাইনি কালকে ওরকম একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে। রাগ করে থেকো না তুমি।”

এবার মমের কণ্ঠ শুনতে পেল। মম কাঠ গলায় বললেন,
“আমি রাগ করে নেই জোহান। আমার মাথায় পেইন করছে। তাই আমি রুম থেকে বের হচ্ছি না। তুমি এখন যাও এখান থেকে।”

জোহান বলার মতো কিছু পাচ্ছে না। কষ্ট হচ্ছে। বলার জন্য ওর কাছে শব্দ ভাণ্ডারের ব্যাপক অভাব পড়েছে। ও শুধু একটি বাক্যই বললো,
“আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি তোমার রাগ ভেঙে যাবে।”
বলেই দরজার কাছ থেকে সরে পড়লো।

মিতুল আড়ালে দাঁড়িয়ে জোহানের সব কথা শুনেছে। হঠাৎই আবার মন খারাপ হলো ওর। জোহানের কষ্টের পালা যে আবার বেড়ে যাচ্ছে সেটা বুঝতে পারলো। সকালেও জোহান ঠিক ওর আগের চেনা জোহানের মতোই ছিল। চঞ্চল। এখন আবার এমন! জোহানকে এভাবে দেখতে খারাপ লাগছে ওর। ও চায় না জোহান এরকম থাকুক।
মিতুল জোহানের কাছে চলে এলো। জোহান মমের ওখান থেকে সোজা লনে চলে এসেছে।
সূর্য ঢলে পড়েছে পশ্চিম আকাশে। পড়ন্ত বিকেলের সোনালী রোদ্দুর নিঝুম মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। জোহান ইজি চেয়ারে বসে আছে।
মিতুল ইজি চেয়ারের দিকে এগিয়ে এলো। বসলো জোহানের পাশের চেয়ারে। জোহান চুপচাপ। প্রথম কথা বললো মিতুল,
“এই জোহান, ঘুরতে যাবে আমায় নিয়ে?”

জোহানের থেকে সরাসরি উত্তর এলো,
“না।”

“কেন?”

জোহান চেয়ার থেকে উঠতে উঠতে বললো,
“মন ভালো নেই আমার। যাব না আমি।”
জোহান হেঁটে কয়েক পা দূরে চলে এলেই, মিতুল পিছন থেকে দৌঁড়ে এসে পথ আগলে ধরলো ওর।
“আরে চলো না। গেলে মন ভালো হয়ে যাবে। চলো।”

জোহান মিতুলকে ঠেলে সরিয়ে দিলো সামনে থেকে।
“যাব না আমি।” বলতে বলতে ঘরের দিকে যেতে লাগলো।

মিতুল পিছন থেকে বললো,
“সত্যিই যাবে না?”

জোহান একই উত্তর দিলো,
“না।”

(চলবে)

#চেরি_ব্লসমের_সাথে_এক_সন্ধ্যা
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ৩৯
____________

মিতুলের মন, মেজাজ দুটোই খারাপ। ও নিজ থেকে জোহানকে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলেছে, আর জোহান ওর মুখের উপর না বলে দিলো? এই জোহান কোনো দিনই আসলে শুধরাবে না। কোনো চান্স নেই শুধরানোর।
চেরি ব্লসম ট্রির নিচে দাঁড়িয়ে আনমনে কথাগুলো ভাবলো মিতুল। চেরি গাছগুলো একেবারে স্থির। একটা দুটো পাপড়িও ঝরছে না। মিতুলের মনে হলো ওর মন খারাপ বলে গাছগুলোও মন খারাপ করে রেখেছে। মিতুল নিচে পড়ে থাকা পাপড়ি থেকে একটা পাপড়ি তুলে নিলো। পাপড়িটা একেবারে শুকিয়ে কুঁচকে গেছে। মিতুল এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল পাপড়িটার দিকে।
পিঠে হঠাৎ কিছুর তীক্ষ্ণ আঘাতে ওর দৃষ্টি সরে গেল পাপড়িটার থেকে। ও আশেপাশে তাকাতে লাগলো। কী এসে লাগলো ওর পিঠে? মিতুল নিচে খোঁজাখুঁজি করতে একটা ছোটো আকৃতির মসৃণ পাথর দেখতে পেল। ও তুলে নিলো পাথরটা। ওর বুঝতে বাকি নেই এই পাথরটা কীভাবে ওর পিঠে এসে পড়েছে। এটা নতুন কিছু নয়। মিতুল বারান্দার দিকে তাকালো। জোহান বদমাইশটা দাঁড়িয়ে আছে। মিতুলের ইচ্ছা করলো পাথরটা ছুঁড়ে মেরে জোহানের মাথা ফাটিয়ে দেয়। কিন্তু ওর হাতে যে জোর আছে তাতে এই পাথর বারান্দা পর্যন্ত উড়ে যেতে পারবে না। ও জোহানকে অগ্রাহ্য করার চেষ্টা করলো। আগের মতো নিজ ধ্যানে মনোযোগ দিলো।
কিছুক্ষণ পরই খুব কাছেই কারো হেঁটে আসার পদধ্বনি হলো। মিতুল তাকিয়ে দেখলো না কে এগিয়ে আসছে ওর কাছে। শুনতে পেল জোহানের গলা,
“দুই মিনিট সময় দেবো। এর মধ্যে গ্যারেজে উপস্থিত দেখতে চাই।”

মিতুল পাশ ফিরে তাকালো। জোহান ঘরের দিকে পা বাড়িয়েছে ইতোমধ্যে।
মিতুলের মন খুশিতে নেচে উঠলো। তাহলে ঘুরতে নিয়ে যাবে জোহান?
মিতুল দৌঁড়ে রুমে চলে এলো। ওয়ারড্রোব থেকে একটার পর একটা ড্রেস বের করে দেখতে লাগলো। কোনটা পরবে বুঝছে না। অনেক যাচাই-বাছাই করে একটা ভায়োলেট কালারের গাউন সিলেক্ট করলো। জোহানের দেওয়া দুই মিনিট সময় অনেক আগেই অতিবাহিত হয়ে গেছে। মিতুল সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করলো না। আরও সময় নিয়ে সাজলো। রুম থেকে বের হলো ত্রিশ মিনিটের মাথায়। সন্ধ্যা কেটে রাত নেমে গেছে। মিতুল খুশি খুশি মন নিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এর মাঝেই রেশমী আন্টির কণ্ঠ ওর রক্ত হিম করে দিলো।
“মিতুল, কোথায় যাচ্ছ?”

মিতুল আর এক পা সামনে এগোনোর শক্তি পেল না। পিছন ফিরে তাকাবে সে সাহসও রইল না। তবুও ফিরলো।
রেশমী আন্টি সিঁড়ির মাথায় দাঁড়িয়ে আছে।
ভয়ে মিতুলের হৃৎপিণ্ড কাঁপছে। রেশমী আন্টি রুম থেকে বের হয়েছে? এমন সময় কেন বের হলো যখন ও জোহানের সাথে বাইরে যাবে? কী বলবে এখন রেশমী আন্টিকে? জোহানের সাথে ঘুরতে যাচ্ছে কী করে বলবে সেটা?
রেশমী আন্টি সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে আবারও জিজ্ঞেস করলেন,
“কোথায় যাচ্ছ তুমি?”

মিতুল এবার আর উত্তর না দিয়ে পারলো না। কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
“আ-আসলে আন্টি…জোহানের সাথে বাইরে ঘুরতে যাচ্ছি। আমিই ওকে বলেছিলাম ঘুরতে যাওয়ার কথা। ও বলেনি।”
মিতুল আজ বানিয়ে মিথ্যা বলতে পারলো না। সত্যি কথাটাই মুখ ফুঁটে বেরিয়ে গেল। ও ভয়ে ভয়ে আছে। রেশমী আন্টি নিশ্চয়ই এখন বলবেন, জোহানের সাথে ঘুরতে যাওয়ার দরকার নেই।

রেশমী আন্টি কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন।
মিতুল বুঝতে পারছে না রেশমী আন্টি কী থেকে কী বলে ফেলে আবার।
রেশমী মিতুলকে অবাক করে দিয়ে বললেন,
“ঠিক আছে যাও।”

মিতুল সত্যিই অনেক অবাক হয়েছে। রেশমী আন্টি পারমিশন দিলেন? খুশিতে গদগদ হয়ে গেল ও। পুলকিত কণ্ঠে বলে উঠলো,
“থ্যাঙ্ক ইউ আন্টি।”
বলেই প্রায় দৌঁড়ে বের হলো ঘর থেকে।
গ্যারেজে এসে জোহানের গাড়ি না দেখে ভাঁজ পড়লো কপালে। জোহানের গাড়ি কোথায়? জোহান ওকে না নিয়ে চলে গেল না কি? দেরি করেছে বলে না নিয়েই চলে গেল?
মিতুল কল দিলো জোহানের কাছে। কল রিসিভ হতেই মিতুল বললো,
“তুমি এত খারাপ কেন বলো তো জোহান? আমাকে না নিয়েই চলে গেলে কী করে? না হয় একটু দেরিই করেছি, তাতে কী এমন হয়েছে? কীভাবে এটা করতে পারলে তুমি?”

জোহান ফোনের ওপাশে বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
“প্রায় ত্রিশ মিনিট ধরে রাস্তায় গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি তোমার জন্য।”

“রাস্তায়? তুমি তো বললে গ্যারেজে আসতে।”

জোহান আর কোনো প্রতিউত্তর না দিয়ে কল কেটে দিলো।
মিতুল বাড়ি থেকে বের হতেই জোহানের গাড়ি দেখতে পেল। গাড়ির ভিতরে জোহান বসে আছে। মিতুল কোনো কথা না বলে গাড়িতে এসে বসলো।

“কোথায় যাচ্ছি আমরা?” মিতুল হঠাৎ প্রশ্ন করলো।

“একটা ক্যাফেতে।”

“কেন? ক্যাফেতে কেন?”

“আমার ফ্রেন্ডসরা আছে সেখানে।”

“ও।”
মিতুলের মাথায় হঠাৎ একটা ভাবনা উদয় হলো।
“আচ্ছা, সেদিন ক্লাবে তো তুমি একা ছিলে না। তোমার বন্ধুরাও ছিল। তাহলে ওই চারজন তোমাদের এত জনের সাথে পেরে উঠলো কীভাবে?”

“আমরা সব বন্ধুরা ছিলাম না।”

“তাহলে?”

“আমি, রিকার্ডো এবং শ্যেন ছিলাম। তিনজন ছিলাম আমরা।”

“রিকার্ডো, শ্যেনও কি আহত হয়েছে তোমার মতো?”

“সেটা গিয়েই দেখো।”

ক্যাফেতে এসে রিকার্ডোর মুখ দেখে মিতুলের মুখ করুণ হয়ে গেল। জোহান যে আঘাত পেয়েছে, তার থেকে বেশি আঘাত পেয়েছে রিকার্ডো। শ্যেনের অবস্থা রিকার্ডো এবং জোহানের থেকে ভালো। রিকার্ডোকে দেখে মিতুলের সত্যি সত্যিই খুব খারাপ লাগছে। ছেলেগুলো এভাবে মারতে পারলো? দয়া-মায়া নেই ওদের মাঝে?

রিকার্ডো মিতুলকে করুণ মুখ করে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো,
“ইট’স ও কে মিটুল। ওদের থেকে আমরা বেশি মেরেছি ওদের।”

“তাই?”

রিকার্ডো গর্বের সাথে মাথা নাড়লো।

জোহান নিজের গিটার নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। ক্যাফেতে গান গাইবে ও। মিতুলের পিছন থেকে যাওয়া দিলেই মিতুল জোহানকে থামালো।
“জোহান…”

“কী?”

“একটা কথা বলি?”

“কী কথা? বলো।”

মিতুল ইতস্তত করে বললো,
“আজকে একটা স্যাড গান গাও।”

জোহানের ভ্রু কুঁচকে গেল।
“স্যাড সং?”

মিতুল মাথা নাড়লো।
“হুম, একটা স্যাড সং শুনতে ইচ্ছা করছে। গাও না।”

জোহান হঠাৎ একটু নুয়ে মিতুলের কানে কানে বললো,
“আমি আহত বলে তুমি কষ্ট পাচ্ছ তুলতুল? তোমার হৃদয়ে ব্যথা হচ্ছে?”

জোহানের কথা শুনে মিতুলের বুকে সত্যি সত্যিই একটা চিনচিনে ব্যথার উপদ্রব শুরু হলো। ও দ্রুত মাথা ঘুরিয়ে সোজা হয়ে বসলো। অস্থিরতা শুরু হলো ওর মাঝে। কী বলে জোহান?

___________

কয়েকটা দিন খুব ব্যস্ত ভাবে পার করলো জোহান। সারাদিনই গান নিয়ে থেকেছে। ঘুমাতে গিয়েছে গিটার নিয়ে, জেগেছেও গিটার নিয়ে।
মিতুল দেখতো জোহান বাড়ির ভিতরে হাঁটতে হাঁটতেও গান আওড়াতো মুখে। বাড়িতে ছিল না বেশি। বেশিরভাগ সময়ই বাইরে থেকে রিহার্সেল করেছে, আর টাইম হাউজে থেকেছে। নির্জন জায়গায় না কি গান বিষয়ক ব্যাপারটা বেশি ভালো জমে।
মিতুলও ভেবে দেখেছে কথাটা সত্যি। মিতুল এখন জোহানের রুমের দিকে হেঁটে চলেছে। আজকে এক বিশাল কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে এডমন্টন সিটিতে। সেখানে পার্টিসিপেট করবে জোহান। মিতুলও যাবে জোহানের সাথে। সকাল থেকেই বেশ উৎফুল্ল ও। কত শিল্পীরা আসবে কনসার্টে। কত কত গান হবে, ড্যান্স হবে। ভাবতেই ক্ষণে ক্ষণে উত্তেজনার ঘনঘটা শুরু হচ্ছে ওর মাঝে।
মিতুল জোহানের রুমের দরজা একটুখানি ফাঁক করে উঁকি দিলো।
জোহান আয়নার সামনে বসে নিজের রূপসজ্জায় ব্যস্ত। মিতুল ডিস্টার্ব করলো না ওকে। দরজা বন্ধ করে আবার চলে এলো। ওর হঠাৎ জানতে ইচ্ছা করলো কনসার্টে রেশমী আন্টি যাবে কি না। কনসার্ট যেহেতু এডমন্টনেই, যাওয়া তো উচিত তার। একবার ব্যাপারটা যাচাই করে দেখবে না কি? যেমন ভাবনা তেমন কাজ।
মিতুল রেশমী আন্টির রুমে এলো।
রুমে রেশমী আন্টি একা। বেডে হেলান দিয়ে বইয়ে মুখ ডুবিয়ে রেখেছে। মিতুল রুমে প্রবেশ করেছে সেটা বুঝতে পারলেন তিনি। বই থেকে মুখ উঠালেন। মিতুলকে দেখে একটু হাসলেন।
মিতুলের কুণ্ঠাবোধ হচ্ছে। তবুও মুখে জোরপূর্বক একটু হাসি আনলো। এগিয়ে এসে বসলো রেশমী আন্টির পাশে।
রেশমী বললেন,
“কী খবর?”

মিতুল আবারও একটু হাসার চেষ্টা করে বললো,
“না তেমন কিছু নয়। ব্যাপার হলো…আজকে রাতে তো বিশাল কনসার্ট হচ্ছে এডমন্টন সিটিতে। জোহানও তো পারফর্ম করবে সেখানে। তুমি যাবে না?”

রেশমীর মুখে হঠাৎ একটা গাম্ভীর্যের ছাপ পড়লো। তিনি বললেন,
“না মিতুল, আমি যাব না। আসলে আমার কিছু কাজ আছে শপে।”

“শপ?”

মিতুল রেশমী আন্টির থেকে শুনলো রেশমী আন্টিদের নিজস্ব একটা গ্রোসারি শপ আছে। মিতুল ক্যামিলার সাথে একদিন গিয়েওছিল সেই শপে। অথচ তখন ও জানতোই না ওটা রেশমী আন্টিদের শপ ছিল। মিতুলের হঠাৎ রেশমী আন্টিদের আরও বেশি ধনী মনে হলো। একটা বড়ো গ্রোসারি শপের মালিক, কম কথা নয়। এত এত টাকা দিয়ে কী করবে তারা? মিতুল এ নিয়ে আর মাথা ঘামালো না। ওর ভাবনা এখন রেশমী আন্টিদের টাকা নিয়ে নয়। রেশমী আন্টি কনসার্টে যাবে না বলে একটু মনোক্ষুণ্ণ হয়েছে ওর। রেশমী আন্টি কনসার্টে গেলে জোহান নিশ্চয়ই খুব খুশি হতো। মিতুল বললো,
“তাহলে তুমি যেতে পারবে না কনসার্টে?”

“না মিতুল।”

“ঠিক আছে। তাহলে এখন যাচ্ছি আমি।”

মিতুল চলে এলো। দেখতে পেলো জোহান ওর রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
মিতুল দৌঁড়ে এলো জোহানের কাছে। বললো,
“তুমি রেডি?”

জোহান ওর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বললো,
“মমের কাছে গিয়েছিলে তুমি?”

“হ্যাঁ।”

“কেন?”

“জানতে গিয়েছিলাম উনি কনসার্টে যাবেন কি না তোমার পারফরম্যান্স দেখার জন্য।”

জোহান হাঁটতে শুরু করলো। মিতুলও ওর সাথে সাথে হাঁটছে। জোহান বললো,
“মম কখনোই কোথাও যায় না আমার কনসার্ট দেখতে। আমার গান তার পছন্দ নয়। আমার গান করার ব্যাপারটা ভালো লাগে না তার।”

“কেন? তুমি তো খুব ভালো গান করো। তাহলে আন্টি পছন্দ করেন না কেন?”

“জানি না। ছোটো বেলা থেকেই গানের প্রতি ঝোঁক ছিল আমার। তখন আমার সাত বছর বয়স। মম, ড্যাডের ম্যারিজ অ্যানিভ‍্যারসারিতে গান গেয়েছিলাম আমি। মম-ড্যাডকে নিয়ে নিজে লিখেছিলাম গানটা। অ্যানিভ‍্যারসারির গিফট হিসেবে। গান শোনার পর মম আমার গানকে ‘অহেতুক’ বলে সম্মোধন করেছিল। বলেছিল, আমি কীসব গাইলাম। এসব অহেতুক ব্যাপার রেখে শুধু পড়াশোনায় ফোকাস করতে।”

মিতুলের মুখ কালো হয়ে গেল একেবারে। সেই সাথে মনও মিশে গেল কালো ঘোলাটে রঙে। বললো,
“রেশমী আন্টির তোমাকে উৎসাহ দেওয়া উচিত ছিল। তুমি সেদিন খারাপ গাইলেও রেশমী আন্টি একটু মিথ্যা করে হলেও প্রশংসা করতে পারতো! তা না করে উনি…”
মিতুল আর কিছু বলতেই পারলো না।

“শুধু এটুকুই নয় মিতুল। আমার চৌদ্দ তম জন্মদিনে আমি ড্যাডের কাছে গিটার চেয়েছিলাম জন্মদিনের গিফট স্বরূপ। ড্যাড কিছুদিন পরই গিটার কিনে দিয়েছিল। এ নিয়ে মম রাগারাগি করে ড্যাডের সাথে। এবং এক মাস পরে আমি বাইরে থাকাকালীন সময়ে আমার রুম থেকে গিটারটি নিয়ে ভেঙে ফেলে।”

জোহানের কথা শুনে মিতুল চলতে চলতেই দাঁড়িয়ে পরে।
“কী ভেঙে ফেলেছিল?”

জোহানও দাঁড়িয়েছে মিতুলের সাথে। বললো,
“হ্যাঁ, ভেঙে ফেলে। বাড়ি এসে আমি আমার ঘরে গিটার দেখতে পাইনি। পরে ক্যামিলার কাছ থেকে জেনেছিলাম মম আমার গিটার ভাঙচুর করে গার্ডেনে ফেলে রেখেছে। আসলে সে বছর এক্সামে একটা সাবজেক্টে একটু খারাপ করেছিলাম আমি। এক্সামের এক মাস আগে ড্যাড আমাকে গিটারটি দিয়েছিল। মম তখনই বলেছিল গান বাজনা নিয়ে থাকলে আমার পড়া লেখার দুর্গতি হবে। এক মাস পর যখন এক সাবজেক্টে রেজাল্ট একটু খারাপ করলাম, তখন মম সেটাকেই গিটার ভাঙার কারণ হিসেবে দাঁড় করালো। আর বললো, গান বাজনা নিয়ে পড়ে থাকলে এরকমই হবে প্রতি বার। ভালো রেজাল্ট করতে পারব না আমি।”

জোহানের জন্য খুব কষ্ট লাগলো মিতুলের। মনে হলো কষ্টে হৃদয় চৌচির হয়ে যাচ্ছে ওর। রেশমী আন্টির প্রতি বিশাল আকারে একটা ঘৃণার পাহাড় তৈরি হলো ওর মনে। বললো,
“একটা মানুষ লেখাপড়ার পাশাপাশি শখের বশে কিছু একটা করতেই পারে। কত মানুষই তো লেখা পড়ার পাশাপাশি কত কী করে। কত মানুষ তো টিউশনির পেছনেও সময় ব্যয় করে। তাতে কী হয়। রেশমী আন্টির এমন করাটা মোটেই উচিত হয়নি।”

“তোমারও কিন্তু এমন করা উচিত হচ্ছে না তুলতুল।”

“কেন? কী করেছি আমি?”

“এখানে যদি এভাবে দাঁড়িয়ে থাকো, তাহলে আমার কনসার্টের কী হবে? এখানেই তো সময় পার করে দেবে তুমি।”

“ওহ হ্যাঁ, চলো।”

গ্যারেজে চলে এসেছে ওরা। ক্যামিলা আগে থেকেই উপস্থিত গ্যারেজে। মিতুল এবং ক্যামিলা যাবে জোহানের সাথে। ক্যামিলা পিছনের আসনে উঠে বসলো। মিতুলও পিছনের আসনে ক্যামিলার পাশে
বসার জন্য ওঠা দিলেই, জোহান ওর হাত টেনে ধরলো।
“কী ব্যাপার? তুমি কোথায় যাচ্ছ? তুমি তো আমার সাথে বসবে। আমার পাশেই থাকতে হবে তোমার সবসময়। আগে বা পিছনে থাকার সুযোগ দেবো না তোমাকে।”

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here