#রঙ_বেরঙের_অনুভূতি,০৬
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু
সুহানি রোজকার দিনের মতোই আজকে অফিসে গেছে। নিজের ডেস্কে বসে আছে,তখনি অফিসের একজন স্টাফ শাওন এর ডেস্কে এসে বসলো। সুহানি সৌজন্য মূলক হাসি দিয়ে বললঃ কিছু বলবেন।
শাওন মিস্টি হেসে বললোঃ তোমাকে অনেকদিন দেখছি একাই থাকে তাই একটু কথা বলতে আসলাম,আমরা তো কলিগ তাই না।
সুহানিঃ হ্যা অবশ্যই।
সুহানি আর শাওনের গল্প জমে গেলো। নোহান কাজ করতে করতে হঠাৎ চোখ পড়লো ল্যাপটপের দিকে, সুহানি আর শাওন হেসে হেসে কথা বলছে কেন জানো রাগ উঠে গেলো, রাগে গজগজ করতে করতে সুহানির ডেস্কে কল দিয়ে তাড়াতাড়ি আসতে বললো। নোহানের রাগী গলা শুনে সুহানি তাড়াতাড়ি নোহানের কেবিনে গেলো। নোহান পুরো রেগে লাল হয়ে আছে। সুহানি আসতেই গর্জে ওঠে বললোঃ এটা অফিস আড্ডা মারার জায়গা না।
সুহানি বুঝতে পারলো নোহান কেন এরকম কথা বলছে।
সুহানিঃ সরি
নোহানঃ আর কখনো না দেখি।
সুহানি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে চলে যায়।
এভাবেই কেটে যায় আরো কয়েকটি দিন..
শাওন আর সুহানির মাঝে একটা ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছে। তবে ওরা অফিসে থাকলে কথা বলে না খুব একটা। সুহানি অফিস থেকে বের হয়ে শাওনের সাথে কথা বলতে বলতে যাচ্ছে। হূট করে শাওনের কিছু একটা মনে পড়ায় শাওন চলে যায়,আর সুহানি একা একা হাঁটতে থাকে। দূর থেকে সবকিছু লক্ষ্য করছিলো নোহান,মনের ভেতরে ওদের দুজনকে দেখে রাগে লাল হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ নোহানের চোখ পড়ে একটা গাড়ির দিকে যেটা তুমুল বেগে ছুটে আসছে সুহানির দিকে, নোহান সুহানির কাছে দৌড়ে যাবে তখনি দেখলো একটা হাত ওকে সরিয়ে নিয়েছে, নোহানকে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো সুহানির কিছু হয়নি দেখে কিন্তু পরের দৃশ্যটা দেখে রাগে চোয়ালে শক্ত হয়ে গেলো।
রাগে গজগজ করতে করতে বললোঃ শাওন।
সুহানিকে শাওন টেনে নিয়েছিলো এর ফলে শাওন আর সুহানি অনেকটা কাছাকাছি চলে আসে। নোহানের হুংকারে শাওন সুহানিকে ছেড়ে সরে রং দাঁড়িয়ে বললোঃ সুহানি তুমি ঠিক আছে।
সুহানিঃ হুম ঠিক আছি ধন্যবাদ বাঁচানোর জন্য।
নোহান সুহানির দিকে কটমট করে তাকিয়ে মনে মনে বললোঃ ধন্যবাদ বাঁচানোর জন্য,ওই ছেলেকে কে বলেছিলো বাঁচানোর জন্য আমি কি ছিলাম না নাকি, অ্যাক্সিডেন্ট হলে হতো আমি দেখতাম। দূর কি ভাবছি।
নোহান নিজের ভাবনার উপরে নিজেই বিরক্ত। কি ভাবছে নিজেই জানে না। সুহানির উপরে যত রাগ পড়ছে,মনে হচ্ছে ওকে আ’ছা’ড় মারতে।
শাওন মিস্টি হেসে বললোঃ সুহা চলো আমি তোমাকে পৌঁছে দিই।
নোহান বিরক্ত হয়ে বিরবির করে বললোঃ সুহা তোমাকে পৌঁছে দিই ঢং,আমি কি মরে গেছি নাকি যতসব আদিখ্যেতা।
নোহান নিজেকে স্বাভাবিক করে বললোঃ শাওন তুমি চলে যাও আমি সুহানিকে নিয়ে যাচ্ছি।
শাওনঃকিন্তু স্যার।
নোহানঃ কোনো কিন্তু না শাওন,সুহানির বাড়ি আর আমার বাড়ি একদিকে তাই।
শাওনঃ ওকে স্যার, সুহা আসছি ভালো করে গিয়ো আর পোঁছে একটা কল দিয়ো।
সুহানি ঢোক গিলে নোহানের দিকে তাকালো। শাওনের উপর রাগ হচ্ছে খুব এই ছেলেকে এখুনি এইসব কথা বলতে হলো।নোহান তো পারে কাঁচা গিলে খাই ওদেরকে।
সুহানিকে নিয়ে নোহান চলে যায়।আর শাওন ওহ ওর বাড়ি চলে যায়।
অন্যদিকে….
– একবার বেঁচে গেছো বলে ভেবো না বার বার বেঁচে যাবে। সুহানি শিকদার তোমাকে আমি ছাড়বো না আমার সাজানো বাগানে তোমাকে আমি কাঁটা হয়ে থাকতে দেবো না।
নোহান গাড়ি চালাতে চালাতে বললোঃ তোমার মনে হচ্ছে না তুমি বাড়াবাড়ি করছো।
সুহানি অবাক হয়ে বললোঃ কিসের জন্য
নোহানঃ শাওনের সাথে মেলামেশাটা।
সুহানি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললঃ আপনার থেকে খারাপ কিছু করিনি। আপনি কি করেছেন একসাথে ২টো জীবন নিয়ে খেলছেন,দিয়া কে ঠকাচ্ছেন সাথে আমার জীবনটাও নরক করে দিচ্ছেন। আপনি তো দিয়াকে ভালোবাসেন তাহলে কেন আমাকে বিয়ে করলেন কেন আমার জীবনটা নষ্ট করছেন।
নোহানের রাগটা তরতর করে বেড়ে গেলো।গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিলো।সুহানি বার বার গাড়ি আসতে দিতে বলছে কিন্তু নোহান গাড়ি চালিয়ে দ্রুত বাড়িতে গিয়ে গটগট করে নিজের ঘরে চলে গেলো।সুহানির সবকিছুই মাথার উপর দিয়ে গেলো।নোহান নিজের ঘরে সবকিছু ভাঙচুর করতে লাগলো।
নোহানঃ সুহানি নরকের কি দেখেছো,এবার শুরু হবে। তোমার জীবনটা আমি ছাড়খার করে দেবো প্রমিস।
সুহানি বাড়িতে ঢুকেই শুনতে পেলো ভাঙচুরের আওয়াজ হচ্ছে আর মেডরা ভয়ে কুকড়ে আছে।
সুহানিঃ কী হয়েছে?
একজন মেডঃ স্যার ভাঙচুর করছে।
সুহানিঃকেন?
মেডটাঃ স্যারের রাগ উঠলে এটা প্রায় সময়ই করে থাকেন। আজকে মনে হচ্ছে প্রচন্ড পরিমানে রেগে আছে।
সুহানিঃ অদ্ভুত মানুষ তো রাগ উঠেছে তাই বলে ভাঙচুর করবেন। ওয়েট আমি দেখছি।
মেডটা ভয়ে ভয়ে বললোঃ না ম্যাম যাবেন না স্যার প্রচুর রেগে আছে, আপনারও ক্ষতি করতে পারে। স্যারের রাগ উঠলে নিজের উপরে কন্ট্রোল থাকে না।
সুহানি মেডটার কথা না শুনে নোহানের ঘরের দিকে চলে যায়। দরজায় কড়া নেড়ে বললোঃ মিস্টার শিকদার দরজাটা খুলুন, আমার রাগটা জিনিস পত্রের উপরে তুলছেন কেন আমার উপরেই তুলুন।
নোহান দরজাটা খুলে সুহানির হাতটা ধরে টেনে নিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।
নোহানঃ কেন এসেছো এখানে?
সুহানি একটা ঢোক গিলে বললোঃ বলছিলাম আপনি শুধু শুধু কেন জিনিসপত্রের উপরে রাগ ঝাড়ছেন।
নোহানঃ ওকে তাহলে তোমাকে এভাবে আছাড় মারি।
সুহানিঃ এই আপনি এত রগচটা কেন বলুন তো।
নোহান ভ্রূ কুঁচকে তাকালো সুহানির দিকে। সুহানি আবার বলতে লাগলোঃ আল্লাহ ভালো জানেন দিয়া কি দেখে আপনাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো।
নোহান সুহানির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললঃ যখন তুমি পড়বে তখন তুমি বুঝবে।
সুহানিঃ কখনোই না আপনার মতো লোককে আমি কখনোই ভালোবাসবো না। আমি আপনাকে ঘৃনা করি। আই হেইট ইউ মিস্টার শিকদার।
নোহান ধাক্কা দিয়ে সুহানিকে মেঝেতে ফেলে দিয়ে বললোঃ ৩০মিনিটের মধ্যে গোটা ঘরটা যেন পরিষ্কার হয়ে যায়।
কথাটা বলেই গটগট করে চলে যায় নোহান। সুহানি মেঝেতে বসে চোখের পানি মুছে বললোঃ কেন অপরাধের দায়ে আমাকে এতবড়ো শাস্তি দিচ্ছেন আমি জানি না।তবে আমি কখনোই আমার বোন তুল্য বান্ধবীর ঘর ভাঙ্গতে চাই না। আমি সবসময় চাই আপনারা ভালো থাকুন। আমি আপনাদের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি হিসাবে আস্তে চাই নি, কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে আমি আপনাদের মাঝে চলে আসলাম।
সুহানি চোখটা মুছে ঘরটা পরিষ্কার করলো। কাঁচের টুকরোর আঘাতে হাত-পা ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেলো সুহানি। কিন্তু মনের ক্ষতের থেকে বেশি ক্ষত করতে পারেনি এই কাঁচের টুকরো গুলো।
সুহানি কাঁচের অবস্থা গুলো দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো, ওর জীবনটাও এভাবে কাঁচের টুকরোর মতো হয়ে গেছে। ভেঙে ছাড়খার হয়ে গেছে জীবনটা। এই জীবন কি কখনোই আর জোড়া লাগবে।
সুহানি ঘরটা পরিষ্কার করে,নিজের ঘরে চলে যায়। আঘাত গুলো থেকে রক্ত বের হচ্ছে, নিজের আঘাত নিজেকেই সামলাতে হবে,কেউ এসে ঠিক করে দেবে না।তাই হাতে,পায়ে মলম লাগিয়ে নিল।
সুহানির মনে পড়ে দিয়া আর নোহানের বিয়ের ঘটনা।
দিয়াঃ সুহা আমি বিয়ে করছি।
সুহানিঃ কাকে?
দিয়াঃ নোহানকে।
সুহানি একটু অবাক সাথে খুশি হয়েছিলো।
দিয়াঃ তুই তাড়াতাড়ি কাজি অফিসে আয়।
সুহানি দিয়ার কথা শুনে তাড়াতাড়ি চলে যায়। খুশিতে দিয়াকে জড়িয়ে ধরে, নোহান আর দিয়ার বিয়ের প্রধান সাক্ষী ছিলো সুহানি। আর সেই আজকে নোহানের দ্বিতীয় স্ত্রী। সুহানির ভাগ্য ওর সাথে এ কোন খেলায় মেতে উঠেছে,এই খেলার পরিনতিই বা কি?সেটা সুহানি জানে না। শুধু জানে ওকে প্রতিটা পদে পদে ক্ষত বিক্ষত হতে হবে। জীবনটা কেমন জানো আস্তে আস্তে রঙহীন হয়ে উঠেছে। কখনোই কি এই রঙহীন জীবনে রঙের আর্বিভাব ঘটবে।
রাতে, নোহান খাবার টেবিলে এসে দেখলো সুহানি আসেনি।
নোহান একজন মেডকে বললঃ তোমাদের ম্যাডাম কোথায়।
মেডঃ স্যার ম্যাম বললো খাবেন না।
নোহান কিছু একটা ভেবে বললোঃ তুমি ডেকে আনো,বলো আমি ডাকছি।
মেডটা তাই করলো। সুহানি হাতে-পায়ে ব্যথা নিয়েই ডাইনিং রুমে পৌঁছালো।
নোহানঃ আসোনি কেন?
সুহানিঃ খাবার খেতে ভালো লাগছে না তাই।কেন ডাকলেন বলুন।
নোহানঃ তুমি যাও। ( মেডকে উদ্দেশ্য করে বললো।)
নোহানের কথা শুনে মেডটা চলে যায়। তারপর নোহান সুহানির দিকে তাকিয়ে বললোঃ আমাকে খাবার পরিবেশন করে দাও।
সুহানি নোহানের কথায় কোনোরকম প্রতিক্রিয়া না করে চুপচাপ খেতে দিতে লাগলো। নোহানের একটু অবাক লাগলো,সুহানি একটুও কথা না বলে কাজ করছে।
সুহানিঃ খেয়ে নিন।
নোহানঃ তুমি খাবে না।
সুহানি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললঃ আর আমার খাওয়া বাদ দিন।আপনি খেয়ে নিন।
সুহানি ওখান থেকে চলে যায়, নোহান সুহানির যাবার দিকে তাকিয়ে থাকে। কেন জানো ওর ও খেতে ইচ্ছা করছে না।না খেয়ে উঠে চলে গেলো নোহান।
সবটাই দূর থেকে লক্ষ্য করছিলেন বাড়ির সবথেকে পুরানো কাজের লোক রহিম চাচা। তিনি কিছু একটা ভেবে তৃপ্তির হাসি হাসলেন।
সুহানি নিজের ঘরে গিয়ে কান্নায় ভেংগে পড়লো। অনেকক্ষন পরে,, দরজায় টোকা পড়ার আওয়াজে দরজাটা খুলে দেখলো নোহান দাঁড়িয়ে আছে
সুহানিঃ আপনি এখানে?
নোহানঃ হুম দেখতে এলাম কি করছো।
সুহানিঃ ভালো লাগছে না এখন যান আপনি।
নোহানঃ না আজকে এই ঘরেই থাকবো।
সুহানির চোখগুলো বড়ো বড়ো হয়ে গেলো।
সুহানিঃ কি সব বলছেন আপনি।
নোহানঃ হুম সরো।
সুহানিকে সরিয়ে নোহান ভেতরে এসে বিছানায় বসলো।নোহান বিছানায় বসে পা দোলাচ্ছে আর সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছে। সুহানি নোহানের দিকে তাকিয়ে নোহানের মতলবটা বোঝার চেষ্টা করছে।
হুট করেই নোহানের চোখ পড়ে সুহানির ফোনের দিকে। তারপর সুহানির দিকে তাকিয়ে বললোঃ তোমার ফেসবুক আইডির নাম কি?
সুহানিঃ কেন?
নোহানঃ দাও,নাহলে আমি তোমার ফোন থেকেই দেখে নিচ্ছি।
সুহানিঃ না বলছি। সুহানি হাসান ( বিঃ দ্রঃ- হালদার পদবীটা পরিবর্তন করে হাসান রাখা হয়েছে)
নোহান নিজের ফোনটা বের করে ফেসবুকে ঢুকে সুহানি হাসান বলে সার্চ দিলো।
নোহান ফোনের দিকে তাকিয়েই বললোঃ কি পিক দেওয়া আছে।
সুহানিঃ আমার পিক আছে।
নোহান সুহানির দিকে একপলক তাকিয়ে আইডিটাতে ঢুকলো। আইডি লক করা আছে, নোহান রিকুয়েস্ট দিয়ে সুহানিকে এক্সসেপ্ট করতে বললো। সুহানি অনিচ্ছা সত্ত্বেও রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করলো। নোহান সুহানির দিকে তাকিয়ে জিতে গিয়েছি এরকম একটা ভাব করে দাঁত বের করলো।
আইডিতে ঢুকেই মেজাজটা গরম হয়ে গেলো। সুহানির প্রোফাইল ছবিতে নাইস,কিউট, সুইট, বিউটি ফুল,জোস ইত্যাদি ইত্যাদি কমেন্ট লেখা আছে।
নোহান বিছানায় নিজের ফোনটাকে আছাড় মেরে। সুহানির কাছে গিয়ে ওর হাত দুটোকে চেপে ধরে বললঃ ছেলেদের মুখে প্রশংসা শুনতে খুব ভালো লাগে তাই না।
সুহানি ব্যথায় ককিয়ে উঠলো,নোহানকে কাকুতি মিনতি করে বললোঃ ছাড়ুন আমার লাগছে।
নোহানঃ লাগুক, ছবিগুলো সব ডিলেট করবে নাহলে আমি আইডিটাই ডিলেট করে দেবো।
সুহানির হাতটা ছেড়ে দিয়ে,ফোনটা নিয়ে চলে গেলো। সুহানি যন্ত্রনায় কেঁদে দিলো।
পরেরদিন সকালে…
সুহানির হাত-পায়ের ব্যথাটা বেড়ে গেছে। গায়ে হালকা জ্বরও আছে। এখন কোনো মতেই নোহানের ঝাড় খেতে ইচ্ছুক নয়,তাই চুপচাপ রেডি হয়ে অফিসে চলে গেলো।
নোহান সুহানিকে খেয়াল করলো,সুহানির চোখগুলো কেমন লাল হয়ে আছে। মুখটাও ফ্যাকাশে লাগছে। কিন্তু কিছুই জিজ্ঞাসা না করে বেড়িয়ে গেলো।
সুহানি অফিসে বসে আছে,শাওন এসে বললোঃ কি হয়েছে সুহা তোমার।
সুহানি মেকি হাসি দিয়ে বললঃ কিছুই না।
শাওনঃ না কিছু তো একটা হয়েছে,নাহলে এরকম লাগছে কেন তোমাকে।
সুহানিঃ কি হবে আমার।
শাওনঃ দেখি কি হয়েছে,জ্বর টর নাকি।
সুহানির মাথায় হাত দিয়ে বললোঃ আরে গা তো অনেক গরম। চলো ডাক্তার দেখাবে।
সুহানিঃ না তার কোনো দরকার নেয়। আমি ঠিক আছি।
শাওনঃ না তার কোনো দরকার নেয় বললেই হলো চলো।
সুহানির হাত ধরে শাওন নিয়ে চলে যায়। এই গোটা বিষয়টা নোহানের পাশাপাশি আরেকজন খেয়াল করেছে। নোহান রাগে ফেটে পড়লো,আর অপর পাশের মানুষটার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।
ওদিকে শাওন সুহানিকে নিয়ে ডক্টরের কাছে আসলো।ডক্টর সুহানিকে দেখে বললোঃ আপনার হাতে তো ওইগুলো কাঁচের আঘাতের চিহ্ন কি করে এইগুলো হলো।
সুহানিঃ কাঁচের টুকরো পরিষ্কার করতে গিয়ে হয়েছে।
ডক্টরঃ ওহ,সময়মতো ঠিকমতো মেডিসিন নিলে এসব কিছুই হতো না। কাটা জায়গাগুলোর ব্যথা থেকেই জ্বরটা এসেছে। আর মনে হচ্ছে আপনি নিজের খেয়াল রাখেন না ঠিকমতো,নিজের খেয়াল রাখবেন। আপনার শরীর ভীষন ভাবে দূর্বল। আর যে মেডিসিন গুলো দিয়েছি ওইগুলো খাবেন ঠিক মতো।
সুহানি আর শাওন ডক্টরের কাছ থেকে চলে আসলো।
শাওনঃ কি হয়েছে সত্যি করে আমাকে বলবে প্লিজ।
সুহানিঃ কিছু না।
শাওনঃ আমাকে বলবে না তো।
সুহানিঃ সময় হলেই ঠিক জানতে পারবে, অপেক্ষা করো
শাওনঃ ওকে। তবে নিজের খেয়াল রেখো।
সুহানি আর শাওন বের হয়ে যেতেই নোহান ডক্টরের চেম্বারে ঢুকলো।
ডক্টরঃ আরে নোহান তুমি?
নোহানঃ হ্যা একটা দরকারে আসলাম।
ডক্টরঃ কি দরকার বলো।
নোহানঃ এখনি যে একটা মেয়ে এসেছিলো সুহানি হাসান, ওহ কিসের জন্য এসেছিলো একবার যদি বলতেন?
ডক্টর অবাক হয়ে নোহানের দিকে তাকালো, নোহান একটা মেয়ের খবর নিচ্ছে তাও এভাবে।
নোহানঃ বলুন
ডক্টরঃ হুম, আসলে সুহানির গায়ে জ্বর, কাঁচের টুকরোর আঘাতের ফলে এই জ্বরটা এসেছে আর শরীরও দূর্বল ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করে না মনে হয়। কিন্তু কেন বলো তো।
নোহানঃ কিছু না। থ্যাঙ্ক ইউ বলার জন্য।
নোহান চলে যায়। নোহানের নিজের খারাপ লাগছে ওর জন্য সুহানির এরকম হয়েছে। পরক্ষনেই মনে হলো ওহ তো এটাই চাই সুহানি কষ্ট পাক তাহলে কেন ওর খারাপ লাগছে। কেন নিজের মনে খারাপ লাগছে উত্তরটা ওর অজানা।
সুহানি আর অফিসে ফিরে না গিয়ে বাড়ি চলে আসে। সুহানিকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসতে দেখে রহিম চাচা বললোঃ সুহানি মা তুমি চলে আসলে এত তাড়াতাড়ি।
সুহানিঃ আসলে চাচা শরীরটা ভালো না।
রহিমঃ কি হয়েছে।
সুহানিঃ মাথা ব্যথা করছে।
রহিমঃ আচ্ছা তুমি ঘরে যাও আমি চা করে আনছি।
সুহানি মাথা নাড়িয়ে ঘরে চলে গেলো। কিছুক্ষন পর,রহিম চাচা চা নিয়ে সুহানির ঘরে এসে বললোঃ এই নাও মা চা।
সুহানি চা টা নিয়ে খেতে লাগলো। রহিম চাচা ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
সুহানিঃ চাচা কিছু বলবেন?
রহিমঃ হুম শুনবে।
সুহানিঃ বলুন।
রহিমঃ জানো মা বিয়েটা বিধাতার লিখন। তোমার নোহান বাবার সাথে বিয়ের কথা ছিলো তাই তোমাদের বিয়ে হয়েছে, তাই তোমার এক হয়েছো।
সুহানি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললঃ বিয়ে না অন্য কিছু চাচা। আপনার নোহান বাবা কেন আমাকে বিয়ে করেছে সেটাই তো আমি জানি না।
রহিমঃ কোনো কাজ করার পেছনে নিশ্চয়ই কোনো কারন থাকে। আমিও জানি না কি কারন তোমাকে বিয়ে করার তবে যেটা হয় ভালোর জন্যই হয় মা।
সুহানিঃ কিসের ভালো চাচা, আমার বান্ধবীর জীবনে সবথেকে বড়ো শত্রু হয়ে উঠেছি। তার স্বামীর ভাগে ভাগ বসিয়েছি এতে কিসের ভালো।
রহিমঃ সবকিছুই কোনো না কোনো কারনে হয় অপেক্ষা করো সবকিছু জানতে পারবে।
সুহানিঃ আচ্ছা চাচা একটা কথা বলুন তো দিয়া কোথায়?
রহিমঃ তোমাদের বিয়ের একমাস আগে থেকে দিয়া মায়ের কোনো খোঁজ খবর পাইনি। কোথায় আছে কেউ জানি না। হয়তো নোহান বাবা জানে, নোহান বাবা দিয়া মায়ের ফিরে না আসার পর থেকে কিরকম একটা হয়ে যায়। সারাদিন দরজা বন্ধ করে বসে থাকতো। আসতে আসতে স্বাভাবিক হয় তারপর তোমাকে বিয়ে করে আনে। আর আমাদের সকলকে চলে যেতে বললো।
সুহানি বুঝে উঠতে পারছে না। এই এতগুলো মাস ধরে দিয়া কোথায়। কোনো নেগেটিভ-পজেটিভ কোনো ভাবনাই মাথায় আসছে না।সবটা আবারো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
#চলবে…