#রঙ_বেরঙের_অনুভূতি,০৯,১০
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু
(৯)
সময়ের সাথে নোহানের মাঝে পরির্বতন আসে। নোহান যতবার সুহানিকে কষ্ট দিতে যায় ততবারই মনে একটা করে প্রশ্ন এসে জমা হয়। দিয়ার শেষ বলা কথাটা “সুহা” ছিলো, নোহানের কথার উত্তরের কথাটাও সুহা ছিলো। স্বাভাবিক ভাবেই নোহানের মনে হয়েছে দিয়ার খু”নি সুহানিই। কিন্তু কেন এখন সেটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না।
সুহানিও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দিয়ার মৃ”ত্যু রহস্য উদঘাটন করার। কিন্তু কোনোকিছুই খুঁজে পাচ্ছে না। কে দিয়াকে মা”র”তে পারে সেটাই বুঝতে পারছে না। দিয়ার কোনো শত্রু ছিলো বলো সুহানির জানা ছিলো না। তাহলে কেন দিয়াকে এভাবে প্রান হারাতে হয়েছে। তার উত্তরটা এখনো পুরোটাই রহস্যাভৃত।
নোহান সুহানির সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। মাঝে কেটে গেছে আরো একটা মাস। নোহানের নিরবতা সুহানিকে আরো কষ্ট দিচ্ছে। বিনা কারনে,বিনা দোষে দোষী হয়ে আছে এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না সুহানি।
সুহানি রোজকার দিনের মতোই অফিসে যাবে বের হয়েছে। এমন সময় পেছন থেকে একটা গাড়ি এসে খুব জোরে ধাক্কা মারলো। সুহানি মুখ থুবড়ে পড়ে গেলো রাস্তায়। র’ক্ত গড়িয়ে পড়ছে, সুহানির চোখটা আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে আসছে। সুহানির মনে হচ্ছে ওর প্রান পাখিটা আর বেশিক্ষন নেয়,এখনি মনে হয় প্রানটা উড়ে চলে যাবে। নিভু নিভু চোখে দেখতে পেলো,কেউ একজন ওকে জড়িয়ে ধরে পাগলামি করছে। তাকে স্পর্শ করার আগেই ও অজ্ঞান হয়ে গেলো।
অন্যদিকে..
কেউ একজন অট্রহাসিতে ফেটে পড়লো।
– বলেছিলাম না সুহানি শিকদার। আমার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে আসলে অ’কা’লে ঝরে যেতে হবে,দিয়া শিকদারের মতো। দিয়া তো ম’রে’ই গেছে তোমাকেও যে ম’র’তে হতো। নাহলে আমার সব প্ল্যানটা শেষ হয়ে যেতো। একবার যদি সবকিছু তোমার হাতে চলে আসে তো তাহলে আমি যে বড্ড বিপদে পড়ে যাবো। তাই তোমাকেও চলে যেতে হলো। দুই বান্ধবী উপরে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করো।
আবারো হাসিতে ফেটে পড়লো। সত্যি না মিথ্যা।কিসের হবে জয়। ষড়যন্ত্র না সত্য কোনটা জিতে যাবে।সুহানিও কি চলে যাবে দিয়ার কাছে। জিতে যাবে কি ওই ষড়যন্ত্রকারী।
নোহান হসপিটালের ও.টির সামনে বসে আছে। আজ এলোমেলো লাগছে নোহানকে ৩ মাস আগে এই একিরকম ভাবে দিয়াকে র’ক্তা’ক্ত ভাবে দেখেছিলো। দিয়াকে বাঁ’চা’তে পারেনি এবারেও কি সুহানিকেও পারবে না। নোহানের কোনো কিছুই ভালো লাগছে না। সুহানির অপারেশন চলছে।
নোহানের কাঁধে কেউ একজন হাত রাখলো। নোহান পেছনে ফিরে তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। ছেলেদের নাকি কাঁদতে নেয়, কিন্তু ছেলেরাও তো মানুষ তাদেরও তো প্রান আছে,তাদেরও তো মন আছে। কাছের মানুষকে হারানোর কষ্ট আছে,বুকে একরাশ বেদনা আছে,যন্ত্রনা আছে আর এই সবকিছুই প্রকাশিত হতে পারে কান্নার মাধ্যমে। কান্না করা ভালো সেটা ছেলে হোক বা মেয়ে। বিশেষ করে ছেলেরা তারা কাঁদতে না পেরে আরো গম্ভীর হয়ে পড়ে এটা ক্ষতিকর।
নোহান কাঁদতে কাঁদতে বললোঃ দিদিয়া আমার সাথেই এরকম কেন হয় আমি কি করেছি। আমার ভাগ্যটা এতটা খারাপ কেন। আমার কাছে যেই থাকে তারই ক্ষতি হয়ে যায় কেন বল না।
নোহাঃ ভাই শান্ত হ। দ্যাখ এখানে তোর কোনো দোষ নেয়। এখানে তোর কি হাত আছে বল।
নোহানঃ হ্যা সবকিছুই আমার দোষ আমিই খারাপ। নাহলে দ্যাখ প্রথমে বাবা-মা,তারপরে দিয়া আর তারপরে সুহানি আমার জন্য বিপদে পড়ে গেছে।আমিই খারাপ আমারই সব দোষ।
নোহাঃ ভাই নিজেকে সামলা। দ্যাখ বাবা মায়ের সাথে যেটা হয়েছে ওটা একটা অ্যাক্সিডেন্ট। আর দিয়ারটা খু’ন।আর সুহানির টাও অ্যাক্সিডেন্ট তাহলে এখানে তোর হাত থাকলো কিভাবে?
নোহানঃ সবকিছু আমার জন্যই হচ্ছে। আমি জানি।
নোহাঃ চুপ একদম চুপ। ডক্টর আসছেন দাঁড়া কথা বলি।
নোহা এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলোঃ ডক্টর সুহানি কেমন আছে।
ডক্টরঃ অবস্থা খুবই গুরুতর। ৪৮ ঘন্টা না কাটা পর্যন্ত কিছুই বলা যাবে না।
ডক্টর চলে গেলো। নোহা নোহানের কাছে গিয়ে বললোঃ ভাই এবার বল তো কি হয়েছে। আর সুহানিকে ই বা তুই কোথায় পেলি।
নোহানঃ সুহানি অফিসে আসছিলো আর আমি ওর পেছনেই গাড়িতে ছিলাম হঠাৎ দেখলাম একটা গাড়ি দ্রুত এসে সুহানিকে ধাক্কা দিয়ে চলে গেলো। সুহানি র’ক্তা’ক্ত হয়ে রাস্তায় পড়ে গেলো।আর আমি এসব দেখেও কিছূই করতে পারলাম না।
নোহান নিজের হাত দিয়ে চুলগুলো কে টানতে লাগলো।
নোহাঃ ভাই বুঝলাম না।সুহানির পেছনে ছিলি কেন?
নোহানঃ দিদিয়া তোকে বলা হয়নি আমি সুহানি কে বিয়ে করেছি।
নোহা চমকে উঠলো। নোহান সুহানিকে বিয়ে করেছে,এসবের কিছুই জানে না।
নোহাঃ ভাই এসব কি বলছিস তুই?
নোহানঃদিদিয়া তোকে পড়ে সবটা বলবো কিন্তু এখন একটু চুপ করে থাক।
৩দিন পর….
নোহাকে নোহান সবটা বলে দিয়েছে।
নোহাঃ ভাই এটা কিন্তু তোর ঠিক হয়নি।তুই কিছু না জেনে সুহানিকে বিয়ে করে নিলি কেন,একবার ভাবলি না কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল।
নোহানঃ দিদিয়া আমি তখন ওই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে কি করবো কখনোই বুঝে উঠতে পারিনি। আমি সুহানির উপর রেখে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিশোধের আগুনে দগ্ধ হয়ে ওর জীবনটা নরক বানাতে উদ্ধৃত হয়েছিলাম।তবে সুহানি কোনো না কোনো ভাবেই এই ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত তার শাস্তি ওহ পাবেই । আমার দিয়ার মৃ’ত্যু’র প্রতিশোধ আমি নেবোই।
নোহান গটগট করে চলে গেলো। নোহা ওর ভাইয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। কোন অজানা যুদ্ধে যেতে উঠেছে সবাই কেউ জানে না।
হসপিটালে..
৪৮ঘন্টার আগেই সুহানির জ্ঞান ফিরে আসে। আজকে নোহান সুহানিকে বাড়িতে নিয়ে যাবে,ডক্টর বলেছিলেন কিছুদিন রাখার জন্য কিন্তু নোহান রাজি নয়।
সুহানিকে নোহান কোলে করে ঘরে নিয়ে আসলো। সুহানি পুরোটা সময় নোহানের দিকে তাকিয়ে ছিলো। ওহ ভালো করেই এই দুদিন মানুষটাকে দেখেছে কিভাবে অস্থির হয়ে উঠেছিলো। সুহানি এটাও জানে এটা ওর জন্য নয় দিয়ার মৃ’ত্যু’র প্রভাবেই এরকম করছিলো নোহান।
নোহান সুহানিকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বললোঃ আমি তোমার খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি।
সুহানিঃ খাবো না আমি
নোহানঃ তোমাকে জিজ্ঞেস করিনি আমি।
সুহানিঃ আমিও আপনাকে আমাকে বাঁচাতে বলিনি।কেন বাঁচালেন আমাকে এই নরক যন্ত্রনার থেকে মৃ”ত্যু টাই ভালো ছিলো।
নোহান সুহানির কাছে গিয়ে বললোঃ তোমাকে এত সহজে ম’র’তে দিচ্ছি না আমি,তোমাকে তিলে তিলে শে’ষ করবো। শারিরীক যন্ত্রনা না মানসিক যন্ত্রনায় তোমাকে শে’ষ করবো মিসেস নোহান শিকদার।
নোহান চলে যায়। সুহানি হাসলো, আর কিছুই তো শেষ হবার নেয় যা হবার হয়েই গেছে। নিজের বোন তূল্য বান্ধবীর খু’নী হিসাবে তার দিকে আঙুল উঠেছে। সে কি পারবে কখনোই এই আঙ্গুলটাকে নিজের দিক থেকে সরাতে নাকি সারাজীবন মিথ্যা টাকে বয়ে বেড়াতে হবে।
অন্যদিকে…
– তাহলে আমার ধারনা এতদিন ভুল ছিলো। সুহানি কিছুই জানে না এখনো পর্যন্ত। এবারেই তো আসবে মজা। কাঁটা দিয়ে কিভাবে কাঁটা তুলতে হয় এবার দেখবে তোমরা। সুহানি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে নাও,তুমি না সুস্থ হলছ মজা হবে কিভাবে। কিভাবে আসল খেলাটা জমবে। সুহানি তুমি আর নোহান কখনোই আমার তৈরি করা জ্বাল থেকে বের হতে পারবে না। হা হা হা হা হা।
#চলবে….
#রঙ_বেরঙের_অনুভূতি
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু
(১০)
সুহানি আগের তুলনায় একটু সুস্থ মনের ভিতরে অনেকগুলো প্রশ্ন জমা হয়ে আছে। সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত কিছুই করতে পারবে না।সমস্ত কিছু ওকে জানতেই হবে।
সুহানি নিজের ভাবনার মাঝেই ছাড়লো,তখন নোহা এসে ওকে ডাক দিলোঃ কি হয়েছে কি ভাবছো।
সুহানি মুখে হাসি ফুটিয়ে বললোঃ না দিদিয়া কিছুই না।
নোহাঃ শরীর কেমন এখন।
সুহানিঃ আগের থেকে অনেক ভালো।
নোহাঃখুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে চিন্তা করো না।
সুহানিঃ আচ্ছা দিদিয়া একটা কথা জিজ্ঞেস করবো।
নোহাঃবলো।
সুহানিঃ দিয়ার খু’ন টার কোনো তদন্ত হয়নি।
নোহা মাথা নাড়িয়ে বললোঃ না। নোহান করাই নি।
সুহানিঃ কেন?
নোহাঃ জানি না আমি অনেক বার বলেছিলাম কিন্তু ওহ শোনেনি। কারনটা আমিও বুঝে উঠতে পারিনি।
সুহানিঃ আর ওদের বিয়ের কথাটা।
নোহাঃ সেটা তো দিয়া চাইনি তাই।
সুহানিঃ ওহ।
নোহাঃ তুমি আর পুরানো কথা টেনে মন খারাপ করো না।নতুন করে সবকিছু শুরু করো নোহানকে নিয়ে সংসার করো।
নোহা চলে যায়, সুহানি তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো। নতুন করে শুরু করবো,জীবনটাই যে নতুন মোড় নিয়েছে আবার কিভাবে নতুন করে শুরু করবে আর সংসার।যেই বিয়েটা একটা মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত,একটা প্রতিশোধের নেশায় করা সেটা দিয়ে আর যাই হোক সংসার করা যায় না। খুব তাড়াতাড়ি এই সত্যিটা বের করে নোহানকে মুক্তি দিয়ে দেবে।তারপর সারাজীবনের জন্য এই শহর থেকে অনেক দূরে কোথাও চলে যাবে, যেখানে এই অতীতের কোনো ছায়াও থাকবে না।
পরেরদিন…
নোহা,নোহান কেউই বাড়িতে নেয়। সুহানি বসে বসে অঙ্ক মেলাতে চেষ্টা করছে। ডিজাইনের স্টুডেন্ট অঙ্ক কি আর সহজে মেটাতে পারে। সবটা খালি উল্টো পাল্টা হয়ে যাচ্ছে। অনেক গুলো গোলকধাঁধা তৈরি হয়েছে।
*সেইদিন কি এমন হয়েছিলো,দিয়া অফিসে না গিয়ে ফার্ম হাউসে গেলো।
*কার কি এমন শত্রুতা ছিলো,যে দিয়াকে প্রানে মে’রে দিলো।
* আর কেনই বা দিয়া শেষ কথাটা “সুহা” নিয়েছিলো কি কারন।
এই সবকিছুর মাঝে সুহানির নামটা চলেই আসছে। অদ্ভুত। এসবের কোনো কিছুই ওহ জানে না তবুও ওর নামটা জড়িয়ে যাচ্ছে।মানে এমন কিছু আছে যেটার জন্য সুহানির নামটা এখানে এসে যাচ্ছে কিন্তু কি?
রাত্রিবেলা…
নোহান সুহানির রুমে এসেছে। সুহানি উশখুশ করতে কিছু একটা বলবে বলে।
নোহানঃ বলো কি বলবে।
সুহানি আমতা আমতা করে বলল ঃ আমি কি কয়েকদিনের জন্য আমার বাড়িতে যেতে পারি।
নোহান সুহানির দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে বললোঃ আচ্ছা কালকে ড্রাইভারকে বলবো তোমাকে দিয়ে আসবে।
সুহানি খুশি হয়ে যায়। নোহান সুহানির হাসি মুখটার দিকে একবার তাকিয়ে চলে গেলো নিজের রুমে।
পরেরদিন সকালে….
সুহানি ওর বাড়িতে চলে যায়। ওকে দেখেই ওর মা ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে দেয়।আদরে্য মেয়েকে এতদিন না দেখে না কথা বলে ওনারা কিভাবে ছিলেন সেটা ওনারাই ভালো জানেন।
সুহানিঃ মা তোমার মেয়ে ম’রে যায়নে যে এইভাবে কান্না করতে হবে।
সুহানির মা রাগী চোখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললোঃ মার খাবি তুই।
সুহানিঃ মা বাপি আর ভাই কোথায়।
সুহানির মাঃ তোর বাপি অফিসে আর তোর ভাই স্কুলে গেছে।ভেতরে আয়।
সুহানিকে ভেতরে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসিয়ে দিয়ে বললোঃ মারে তুই কতটা রোগা হয়ে গেছিস।
সুহানি চোখ মুখ শক্ত করে বললোঃ আমাকে রোগা মনে হচ্ছে তোমার।আগের থেকে ওয়েট বেড়ে গেছে।
মাঃ মায়ের সাথে ফাজলামি।
সুহানি ওর মাকে জড়িয়ে ধরে বললোঃ মা তোমার হাতে অনেকদিন রান্না খাইনি। খাওয়াবে না।
মা চোখ মুছতে মুছতে মুছতে বললেনঃ তুই বস আমি রান্নার ব্যবস্থা করছি।
মা রান্নাঘরে চলে গেলো। সুহানি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।মা বাপিকে কতটা কস্ট দিয়েছে ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। মা এমনি যতই রাগ করে থাকুক না কেন। সন্তানকে কাছে পেয়ে আর নিজেদের সামলে রাখতে পারেন না।সমস্ত কিছু ভুলে বুকে টেনে নেয়।
মা রান্নাঘরে রান্না করছিলো আর সুহানি একটা করে কথা বলছিলো। মা রান্না করে সুহানিকে নিজের হাতে খাইয়ে দিলো।
বিকালে…
কলিং বেলের শব্দ শুনে সুহানি দরজা খুলে দেখলো তার আদরের একমাত্র ছোট ভাইটা দাঁড়িয়ে আছে। সুহান তার দিদিকে এতদিন পর দেখে নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলো না জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।
সুহান ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে বললোঃ দিদিভাই এতদিন কোথায় ছিলি জানিস তুই আমার একটুও ভালো লাগছিলো না।দিদিভাই আমি আর তোর সাথে ঝগড়া করবো না তূই প্লিজ আর আমাকে ছেড়ে যাবি না। আমি তোর সব কথা শুনবো।আমি ভালো ছেলে হয়ে থাকবো।দুস্টুমি করবো না প্লিজ তুই আর কোথাও যাবি না।
সুহানিঃআচ্ছা যাবো না এবার তো থাম।
সুহানি সুহানকে ভেতরে নিয়ে এসে বসালো। এতবড়ো ছেলেটা বাচ্চাদের মতো কান্না করেছে তাও আবার দিদির জন্য যার সাথে প্রতিদিন ঝগড়া করতো তার জন্য। সুহানি তার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে হেসে দিল ভাই বোনের সম্পর্ক গুলোই এরকম দুষ্টু মিষ্টি।
সুহান সুহানিকে ছেড়ে একটুও যাচ্ছে না হাতটাকে শক্ত করে ধরে আছে। মনে হচ্ছে ছেড়ে দিলেই চলে যাবে। সুহানি ওর ভাইকে খাইয়ে দিল।সুহান ওহ চুপচাপ খেয়ে নিলো।ওদের মা ওদের কাজকর্ম গুলো দেখে আড়ালে চোখের পানি মুছলেন।সুহান সেটা খেয়াল না করলেও সুহানি করেছে। সুহানি ভাবতে থাকে মেয়েদের ভাগ্যটা এরকম কেন। এক বাড়িতে জন্মাতে হয় আর এক বাড়িতে ম’র’তে হয়। আর ওর ভাগ্যটা আরোই খারাপ।
সন্ধ্যাবেলা, পরিবেশটা একদম থমথমে। সুহানির বাবা মুখটা গম্ভীর করে বসে আছেন।কোনো কথা বলছেন না সুহানির একটু ভয় লাগছে এখনোই তার বাবা কে এতটা গম্ভীর লাগে নাই।
মাঃকি হলো তুমি চুপ করে আছো কেন?
বাবাঃ তোমার মেয়েকে জিজ্ঞাসা করো।কি এমন কারন যার জন্য সে নিজের বান্ধবির বরকে বিয়ে করলো।
সুহানি অশ্রুসিক্ত নয়নে বললোঃ বাপি দিয়া মার বেঁ’চে নেয়। আর নোহান মনে করে আমি ওই সবকিছুর জন্য দায়ী তাই আমাকে বিয়ে করেছে।
বাবা মা দুজনেই চমকে উঠলো।
বাবাঃ কি বলছিস এসব।
সুহানি সবটা বললো।বাবা সুহানিকে জড়িয়ে ধরলো। সুহানি কান্না করছে। মায়ের চোখেও পানি।
বাবাঃ মা রে এতটা কষ্টের মাঝে তুই ছিলি সেটা আমি কখনোই বুঝতে পারিনি।আমাকে মাফ করে দে, আমি তোর জন্য কিছুই করতে পারিনি।
সুহানিঃ বাপি এখানে তোমার কোনো দোষ নেয়,, সমস্ত দোষটাই আমার ভাগ্যের।
বাবাঃ একটা কথা জিজ্ঞেস করছি।
সুহানিঃ হ্যা বাপি বলো।
বাবাঃ এই সম্পর্কের বেড়াজাল থেকে কি তুই বের হতে চাস।
সুহানি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললঃ আমার চাওয়া আর না চাওয়াতে কখনোই কিছু যায় আসে নি।তবে একটা কথাই বলবো যে সম্পর্ক টা প্রতিশোধের নেশায় তৈরি সেটা আর যাই হোক কোনো সম্পর্ক নয়।
বাবাঃ যেই সিদ্ধান্তটাই নিস ভেবে চিন্তে নিস। তুই না চাইলেও নোহান তোর স্বামী।আর এই সত্যটা তোকে মানতেই হবে।
সুহানিঃ অপেক্ষা করো বাপি, সত্যিটা বের করে এনে আমি এই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসবো।
বাবাঃ পারবি তো।
সুহানি অবাক হয়ে তার বাবার দিকে তাকালো।
সুহানিঃ বাপি এসব কি বলছো।
বাবাঃ মারে বিয়ে একটা পবিত্র সম্পর্ক।এই বাঁধনে আবদ্ধ দুই মানুষ সবসময়ই অপর মানুষের প্রতি দূর্বল হয়ে যায়।
সুহানি কিছুই বললো না।কি বলবে,নোহান ওর স্বামী সেটাও যে ওর মানতে বড্ড কষ্ট হয়, আর ভালোবাসা, অনুভূতি গুলো তো কারোর নিজেদের হাতে থাকে না। সবটাই হয়ে যায় না চাইলেও। সুহানি ও কি নোহানের প্রতি দূর্বল হয়ে পড়বে নাকি কোনো অদৃশ্য কিছু বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে ওদের পথে। সবটাই সময়ের খেলা,সময় তার নিজস্ব গতিতে চলবে আর আমাদেরও চালিয়ে নিয়ে যাবে এটাই জীবন।
রাত গভীর…
নিকোটিনের নেশায় পেতে উঠেছে নোহান শিকদার। বুকের ভেতর অসহ্য দহন হচ্ছে।দহন কিসের জন্য সেটা নোহান ভালো করেই জানে, ছোটো বেলা থেকে ওর সব প্রিয় জিনিস গুলোই ওর জীবন থেকে হারিয়ে যায়, আর যাকে আঁকড়ে ধরে নতুন করে বাঁচতে চেয়েছিলো সেই দিয়াই জীবন থেকে চলে গেলো।আবারো জীবনটাকে অগোছালো করে দিলো। রঙহীন একটা মানুষের পরিনত হয়েছে নোহান যার জীবনে নেয় কোন অনুভূতি।
আবারো একটা নতুন দিন, কিন্তু দিনটা কি নতুন কিছুর সূচনা করবে নাকি আবারো কোনো অদৃশ্য যুদ্ধে মেতে উঠবে সবাই।
#চলবে…