#মিসেস_চৌধুরী
#Part_09,10
#Writer_NOVA
09
বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখতে ব্যস্ত আকশি।আজকাল তার কিছুই ভালো লাগে না।অবশ্য দুদিন আগে ফিহাকে দেখার পর থেকেই এসব সমস্যা হচ্ছে। কেন জানি খুব শূন্য শূন্য লাগে জীবনটা।পড়াশোনায় ভীষণ ভালো ছিলো আকশি।সবসময় শুধু পড়া আর পড়া।যার কারণে কখনও মেয়েদের সময় দেওয়া তো দূরে থাক তাকানোর সময়টুকু হয়নি।ওর সমাবয়সীরা যখন মাঠে ফুটবল খেলছে কিংবা কোথাও বসে আড্ডা দিচ্ছে সেখানে আকশি পড়ার টেবিলে বই নিয়ে বসে আছে। যার কারণে ওর বন্ধুও তেমন ছিলো না।নবম শ্রেণিতে আদিয়াতের সাথে পরিচয়। আজও সেই বন্ধুত্ব অটুট আছে।বন্ধুর মতো বন্ধু একটা হলেই যথেষ্ট। দশটার প্রয়োজন নেই।
সবকিছুতে আকশির এখন ফিহাকে মনে পরে।হঠাৎ করে ফিহার হাসি হাসি মুখ মনে পরে যায়।ওর চাহনি,কথা বলার স্টাইল, মায়াবী চেহারা, সেই ইনসেন্ট ফেস সবকিছু যেনো ওর চোখে ভাসছে।নিজের মাথার পেছনের চুলগুলো মুঠ করে ধরে কয়েকটা ঝারা মারলো। তারপর মুচকি হাসলো।
আকশিঃ আমি বুঝতে পারছি না বারবার আমার ঐ মেয়েটার কথা মনে পরছে কেন?সবচেয়ে সুন্দর ছিলো ওর হাসিটা।আমি বোধ হয় পাগল হয়ে যাবো।কি ভাবছি আমি?ভাবনায়, কল্পনায়,স্বপ্নে সব জায়গায় শুধু ঐ মেয়েটা।ওর হাসির ঝংকার এখনো আমার কানে বাজছে।আমি যে কিছুতেই তাকে ভুলতে পারছি না।এবার মনে হয় সত্যি কোন মেয়ের প্রেমে পরলাম।তাও মেয়েটার হাসি দেখে।
পাগলীরে তোর মুখের হাসিতে,
পরবো আমি প্রেমের ফাঁসিতে।
তুই কি আসবি দেখিতে??
আমায় একটু ভালবাসিতে।
পাগল করা তোর ঐ চাহনীতে,
আমি হাজারবারও পারিবো মরিতে
ভাবনার সাগরে ফেলে জল
শুধু একটিবার আসবি বল।
(লেখনীতেঃ নোভা)
নিজের মনে কবিতা আবৃত্তি করে আপন মনে হেসে উঠলো আকশি।নাহ্ সত্যি তাকে প্রেমের ভূতে ধরেছে।সেটা হলো ফিহার প্রমের ভূত।সেটাকে কি করে সামলাবে তা আকশি জানে না।এই দুই দিনে সারা দিন রাত ফিহার ওপর নজর রেখেছে সে।এতে করে আকশি ফিহার কোন বেড হেবিটতো পাইনি বরং আরো দূর্বল হয়ে পরেছে ।সবজায়গায় ফিহাকে দেখে,কোন মেয়ে কথা বললেই মনে হয় ফিহা কথা বলছে।এমনকি স্বপ্নে পর্যন্ত ফিহার হাসির শব্দ শুনতে পায়।তার মানে আমাদের আকশি মহাশয় পুরো দমে ফিহা নামক অসুখে অসুস্থ হয়ে পরেছে।ফিহার মিটিংয়ের শুরুতে ইনোসেন্ট ফেস মনে করে মিটমিট করে হেসে উঠলো আকশি।ঠিক তখনি ওর পাশে এসে দাঁড়ালো আদিয়াত।ভ্রু কুঁচকে আকশির দিকে তাকিয়ে আছে সে।অথচ আকশি দ্বীন-দুনিয়া ভূলে ফিহার ভাবনায় মগ্ন।আদিয়াত শেষে আকশিকে জোরে একটা ধাক্কা দিলো।ভাবনা থেকে ফিরে ওর দিকে তাকালো আকশি।
আকশিঃ কি হলো এভাবে ধাক্কা মারলি কেন?
আদিয়াতঃ পাগলের মতো হাসছিস কেন? আমি কয়েক মিনিট ধরে তোর পাশে এসে দাঁড়িয়ে আছি। অথচ তুই কি জানি ভেবে নিজের মনে হেসেই চলেছিস।তোর কি হয়েছে বলতো?দুই দিন ধরে তোর মতি গতি আমার ভালো ঠেকছে না।
আকশিঃ ক ক কই আমার আবার কি হবে?আমি ঠিক আছি।আমার কিছু হয়নি।(আমতা আমতা করে)
আদিয়াতঃ এই তুই কি লুকাচ্ছিস আমার থেকে।একদম মেয়েদের মতো ন্যাকামো করবি না।তোর ভাব-ভঙ্গি আমার স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।সেদিন তোদের অফিস থেকে আসার পর থেকে তোর আচার-আচারণ কিছুই আমার সুবিধাজনক মনে হচ্ছে না।কি রকম কি রকম জানি করিস?
আকশিঃ আমি ঠিকই আছি।শুধু তোর মাথাই গিয়েছে।
আদিয়াতঃ এক মিনিট, এক মিনিট।তুই আবার প্রেমে পরিস নি তো।তোর মাঝে আমি প্রেমে পরার লক্ষ্যণ গুলো খুঁজে পাচ্ছি।
আকশিঃ এসব ফালতু পেচাল বাদ দিয়ে আমি যে কাজে পাঠিয়েছিলাম তার খবর বল।
আদিয়াতঃ ঐ মেয়েটা সম্পর্কে এতো কেন জানার আগ্রহ তোর?আমার কাছে ব্যাপারটা কি রকম জানি রহস্য রহস্য লাগছে।
আকশিঃ তোর রহস্য তোর কাছে রাখ।আর কাজের কথায় ফিরে আয়।সকল ইনফরমেশন জলদী করে দে।আমার পরবর্তী স্টেপ নিতে হবে।
আদিয়াতঃ দিচ্ছি দিচ্ছি। মেয়েটার ইনফরমেশনের জন্য মনে হচ্ছে তোর জানটা বের হয়ে যাচ্ছে।
আকশি বারান্দা থেকে চলে এলো।ওর পেছন পেছন আদিয়াতও রুমে ঢুকলো। আকশি সোফায় বসে ল্যাপটপ ওন করতে করতে বললো।
আকশিঃ বেশি বকবক না করে বলতো।
আদিয়াতঃ মেয়েটার নাম ফিহা।
আকশিঃ ফিহা,বাহ্ খুব সুন্দর নাম তো।
(বিরবির করে)
আদিয়াতঃ কিছু বললি??
আকশিঃ না না কিছু বলি নি।তুই বলতে থাক।
আদিয়াতঃ ফিহা ছোট থেকে এতিমখানায় বড় হয়েছে। আপন বলতে এতিমখানার মানুষ। সাথে আছে ওর এক বেস্ট ফ্রেন্ড। পাবলিক ভার্সিটিতে নিজের খরচে পড়াশোনা করেছে।পড়াশোনার পাশাপাশি বেশ কয়েকটা টিউশনি করতো।তারপর ম্যানেজমেন্টে অনার্স পাস করে সেই এতিমখানায় বাচ্চাদের টিচার হিসেবে যোগ দেয়।
আকশিঃ হুম তারপর।বাবা কি করে চিনলো ফিহাকে?
আদিয়াতঃ প্রায় সময় আঙ্কেল মানে তোর বাবা, ফিহা যে এতিমখানায় চাকরী করতো সেখানে বাচ্চাদের জন্য পোশাক, খাবার নিয়ে যেতো।সেখানেই ফিহাকে দেখতে পায় আঙ্কেল। তার অনেক পছন্দ হয় ফিহাকে।ভাই-ভাবী মারা যাওয়ার পর অনিয়াকে লালন-পালন করা টাফ হয়ে যাচ্ছিলো।তাই আঙ্কেল ফিহাকে নিয়ে আসে।কিন্তু ফিহাকে কি পরিচয় দিবে সেটা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পরেন তিনি। তখন তার মাথায় একটা বুদ্ধি চলে আসে।তিনি সবার কাছে প্রচার করে দেন ফিহা তোর স্ত্রী। অনিয়া তোর ও ফিহার সন্তান। আর তোদের দুই বছর আগে বিয়ে হয়েছে। এতে করে কেউ ফিহার দিকে আঙুল তুলে কথা বলতে পারেনি,কেউ বাজে মন্তব্য করেনি।যেহেতু তুই দুই বছর লন্ডনে ছিলি তাই ব্যাপারটা কোন ঘোলাটে হয় না।সবাই খুব সহজে বিশ্বাস করে নেয়।
আকশিঃ কিন্তু বাবা ওকে রাজী করালো কিভাবে?যতটা মনে হলো ফিহার টাকার কোন লোভ নেই।
আদিয়াতঃ তুই ঠিক ধরেছিস।ফিহাকে আঙ্কেল অনেক টাকা দিবো বলেছিলো।কিন্তু ফিহা সাফ সাফ মানা করে দেয়।সে নিজেকে মিথ্যা পরিচয়ে গড়তে পারবে না।কিছুতেই ফিহা রাজী হচ্ছিল না।কিন্তু অনির দিকে তাকিয়ে রাজী হয়েছে। অনিকে কোন টাকা ছাড়া লালন-পালন করার দায়িত্ব নেয় সে। আঙ্কেল অনিকে দেখে রাখার জন্য ফিহাকে বেশ মোটা অঙ্কের টাকা দিতে চেয়েছিলো।ফিহা সেটা নিতে রাজী হয়নি।বরং আঙ্কেলকে সোজা সাপটা ভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে সে মাতৃত্বকে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতে পারবে না।বেচারী প্রথমে কোনকিছু তে রাজী হতে চাই নি।শুধুমাত্র অনির মুখেের দিকে তাকিয়ে সব মেনে নিয়েছে। ফিহা চায়নি অনিও ওর মতো এতিম হয়ে বেড়ে উঠুক।এই হলো ফিহার যাবতীয় বায়োডাটা।
আকশিঃ আই সি।তাহলে তো এবার মিসেস চৌধুরীকে একটু জ্বালাতন করাই যায়।দেখি চেষ্টা করে, মিথ্যে মিসেস চৌধুরীকে সত্যিকারের মিসেস চৌধুরী বানাতে।
মনে মনে কথাগুলো বলে টেডি স্মাইল দিলো আকশি।ওর মনে এখন শয়তানি বুদ্ধি এসে ভিড় করেছে।
আদিয়াতঃ মিটমিট করে হাসছিস কেন?
আকশিঃ সময় হলে জানতে পারবি।এখন আমি তোকে কিছু বলবো না।
আদিয়াতঃ তোর ভাব-সাব আমি কিছু বুঝছি না আকশি।আমায় এখন একটু বুঝিয়ে বলবি তোর মনে কি চলছে?
আকশিঃ আমি জানি না ওকে ভালবেসেছি কি না।তবে ওর জন্য আমি অন্য রকম কিছু ফিল করছি।আমি খুব জলদী সব ঠিক করে তোকে জানাবো আদিয়াত।(মনে মনে)
আদিয়াতঃ তুই হঠাৎ, হঠাৎ কোথায় হারিয়ে যাস বল তো?
আকশিঃ এক জায়গায় যেতে হবে তারাতাড়ি চল।
আদিয়াতঃ কোথায় যাবো?
আকশিঃ বেশি কথা বলিস না। গেলেই দেখতে পারবি।
ল্যাপটপ বন্ধ করে আদিয়াতকে টানতে টানতে কোথায় জানি নিয়ে গেলো আকশি।আদিয়াত বার বার ওকে জিজ্ঞেস করছে কোথায় যাবে?কিন্তু আকশির একি উত্তর গেলেই দেখতে পারবি।আপাতত আকশির সাথে যাওয়া ছারা আদিয়াতের অন্য কোন উপায় নেই।
মন খারাপ থাকলেই ফিহা অফিসের কেবিনের আবছা সবুজ রঙের কাচের সামনে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে থাকে।অনিয়াকে নিয়ে আবদুল সাহেবে বাইরের বাগানে গিয়েছে। সাথে টেবলেটও যোগ দিয়েছে। ফিহার একা একা ভালো লাগছে না।হঠাৎ করে একটা ছেলে পেছন থেকে ওর চোখ হাত দিয়ে আটকে ধরলো।ছেলেটার হাতে নানা রংয়ের অনেকগুলো হার্ট শেইপ বেলুন।
#চলবে
#মিসেস_চৌধুরী
#Part_10
#Writer_NOVA
হঠাৎ করে কেউ পেছন থেকে ওর চোখ হাত দিয়ে আটকে ধরলো।ব্যক্তিটার হাতে অনেকগুলো নানা রংয়ের হার্ট শেইপ বেলুন।ফিহার নাকে মন মতোয়ারা একটা পারফিউমের ঘ্রাণ আসছে।কেন জানি পারফিউমের ঘ্রাণটা নাকে আসতেই মুহূর্তে মনটা ভালো হয়ে গেল তার।ছেলেটা কানের কাছে মুখটা এনে লো ভয়জে বললো।
—Many many happy returns of the day.Happy birthday too you,my dear Mrs.Chowdhury.May Allah bless you.Now you are my sweet hurt.Don’t wary dear I am always with you.Because you are only mine.Take care yourself.Allah Hafiz.❤️❤️
ফিহা এই ভয়েজটা সে আগেও কোথাও শুনেছে।কিন্তু কোথায় শুনেছে তাতো মনে নেই। চোখ ধরে থাকা ব্যাক্তিটা কে সেটা ফিহা জানে না।তবে নিজের চোখকে তার হাত থেকে ছুটাতেও ইচ্ছে করছে না।এই মানুষটাই আজ এমন বিশেষ দিনে তাকে সর্বপ্রথম জন্ম দিনের শুভেচ্ছা জানালো।ফিহা নিজের মনের মাঝে অন্য রকম একটা ফিলিংস খুঁজে পাচ্ছে।
আস্তে আস্তে চোখের বাঁধন ঢিলে হয়ে এলো ফিহার।কিন্তু ফিহা এখনো চোখ বন্ধ করে আছে।বেশ কিছু সময় পর চোখ খুলে অবাক হলো ফিহা।কারণ ওর আশেপাশে কাউকে দেখতে পেলো না সে। ফিহার অবাক সাত আসমানের চূড়ায় উঠলো যখন সে দেখলো দরজা ভেতর থেকে লক করা।সারা কেবিনের এদিক সেদিক মানুষটাকে খুঁজতে লাগলো সে।কিন্তু কাউকে দেখলো না।
ফিহাঃ আশ্চর্য কে ছিলে এখানে?আমার চোখ ধরেছিল কে?আমাকে জন্মদিনের উইশ করে গেল।এটা কি ভ্রম ছিলো।না,এমন টাতো হওয়ার কথা নয়।তাহলে কে এসেছিলো এখানে?তার লো ভয়েজটা আমার কাছে অন্যরকম কিছু মনে হলো কেন?যদি কেউ এসে থাকতো তাহলে গেলো কোথায়?এতো তাড়াতাড়ি তো যাওয়ার কথা নয়।আমি স্পষ্ট দেখতে পারছি দরজাটা ভেতর থেকে লক করা।সে আসলো কি করে আর গেলোই কিভাবে?আমি কি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছি নাকি।আমার মাথা ঘুরছে।কি হলো আমার সাথে?হঠাৎ করে কি ম্যাজিক হয়ে গেলো।আমার যে জন্মদিন সে জানলোই বা কি করে?
মাথায় হাত দিয়ে ডোভেনে বসে পরলো ফিহা।সবকিছু মাথার ওপর দিয়ে গেছে তার।হঠাৎ টেবলের দিকে তাকাতেই ফিহার চোখ দুটো রসগোল্লার মতো বড় বড় হয়ে গেল।চেয়ারের সাথে বেধে রাখা হয়েছে অনেকগুলো রং-বেরঙের হার্ট শেইপ বেলুন।ফিহা প্রায় দৌড়ে সেখানে চলে গেল।একটা টকটকে লাল বেলুনে ছোট একটা চিঠির খাম।চিঠির খামটা হাতে নিয়ে ভেতর থেকে চিঠিটা বের করলো।চিঠির ভাজ আস্তে আস্তে খুললো ফিহা।ওর কাছে মনে হচ্ছে সবকিছু স্বপ্ন। চিঠির মধ্যে লেখা ছিলো।
“This is only for you. My little surprise. You are my sweet hurt dear.Because you are only me Mrs. Chowdhury.”
চিঠিটা হাতে নিয়ে থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে ফিহা।ওর কাছে মনে হচ্ছে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছে। একটু পরেই সব আগের মতো হয়ে যাবে।নিজের গায়ে চিমটি কেটলো সে।ব্যাথা পেয়ে মৃদু শব্দও করলো।কিন্তু এখনো ঘোর কাটেনি ফিহার।বুকের বা পাশটা সমান তালে ঢিপঢিপ শব্দ করেই যাচ্ছে। কে হতে পারে? এই চিন্তায় বিভোর সে।তার তো কোন বয়ফ্রেন্ডও নেই যে এভাবে হুট করে এসে উইশ করে যাবে।কিছু একটা ভেবে দরজা খুলে বাইরে উঁকি দিলো ফিহা।যে যার যার কাজে ব্যস্ত।হঠাৎ ওর সামনে
একজন পিয়নকে দেখতে পেয়ে ডাক দিলো ফিহা।
ফিহাঃ এই যে শুনুন।
—জ্বি বলুন।
ফিহাঃ আমার কেবিন থেকে কি কাউকে বের হতে দেখেছেন?
—ম্যাম, আমি অনেক সময় ধরে এখানে আছি।কিন্তু আপনার কেবিনে কাউকে ঢুকতেও দেখিনি আবার বের হতেও দেখেনি।
ফিহাঃ তাহলে কি করে ভেতরে আসলো সে?
(বিরবির করে)
–কিছু বললেন ম্যাম??
ফিহাঃ না কিছু না।আপনি এখন আসতে পারেন।
—ওকে ম্যাম।
ফিহাঃ উনার কণ্ঠটাও এতো চেনা চেনা মনে হলো কেন?পুরো চেহারাও তো দেখলাম না।ক্যাপ পরা ছিলো বলে মুখটা দেখতে পায়নি।নিচের দিকে তাকিয়ে সব কথার উত্তর দিলো।অদ্ভুত লাগলো তো ব্যাপারটা।আমার চেহারার দিকে তাকালো না কেন?
নিজের মনে কথাগুলো বলে পেছন দিকে ঘুরতে ঘুরতে বললো
ফিহাঃ আপনার সাথে আমার—–যাক বাবা, কোথায় গেলো?মাত্র তো আমার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলো। এই লোকটাও তো হাওয়া হয়ে গেলো।আমার সাথে আজ হচ্ছেটা কি?আজ সবকিছু অদ্ভুত, অদ্ভুত লাগছে।ভূতের পাল্লায় পরলাম নাকি আমি।
মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্নের ঝুড়ি নিয়ে কেবিনে ঢুকলো ফিহা।চেয়ারে বসে দুই হাতে মুখ ঢেকে পুরো অঙ্ক মিলানোর চেষ্টা করতে লাগলো।
সিঁড়ি বেয়ে খুব জলদী করে নেমে পরলো আদিয়াত।আরেকটু সময় থাকলে সে ধরা পরে যেতো ফিহার কাছে। আদিয়াতের গায়ে অফিসের পিয়নের পোশাক,মাথায় বিশাল বড় ক্যাপ।তখন ফিহা আদিয়াতকেই ডাক দিয়ে কথা জিজ্ঞেস করেছিলো।আদিয়াত বুঝে যায় যে ফিহা ওর দিকে কেমন করে জানি তাকাচ্ছে। মানে সন্দেহ করছে।বেশ কয়েকবার ফিহা ওর মুখ দেখার জন্য উঁকি ঝুঁকিও মেরেছে।কিন্তু মুখ দেখতে পারে নি।
আদিয়াতঃ এই আকশির জন্য যে আমাকে আরো কত কিছু করতে হবে আল্লাহই জানে।আর এক মিনিট থাকলেই ধরা খেয়ে যেতাম।তারপর নির্ঘাত চোর ভেবে গণ ধোলাই দিতো।আকশিটা শেষ পর্যন্ত আমাকে ওদের অফিসের পিয়নের ড্রেসও পরালো।একবার ফিহার কেবিন থেকে নিচে নামুক ও।আজ ওর খবর আছে। আকশির একদিন কি আমার যতদিন লাগে।এই ছেলেটার কখন কি হয় আমি নিজেই বুঝি না।
আপন মনে কথা বলতে বলতে আদিয়াত অফিসের পেছনে এসে দাঁড়ালো। তখনি পেছন দিক থেকে পাইপ বেয়ে নিচে নেমে এলো আকশি।ফিহাকে পেছন থেকে চোখ আটকিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা আকশিই জানিয়েছে। আর আদিয়াতকে পিয়নের পোশাক পরিয়ে বাইরে পাহারা দিতে রেখে গিয়েছিলো।ফিহার রুমের দক্ষিণ দিকে একটা ছোট জানালা আছে। যেটায় কোন গ্রীল নেই।অবশ্য অনেক উচুতে থাকার কারণে গ্রীল বা কাচ লাগানোর প্রয়োজন মনে করেন নি আকশির বাবা।জানালা না বলে ছোট খুপরী বললেও ভূল হবে না।পাইপ বেয়ে উঠে সেই জানালা দিয়ে কেবিনে প্রবেশ করা যায়।তাই আকশি টুপ করে চোরের মতো সবার অগোচরে বেলুন নিয়ে ফিহার কেবিনে ঢুকে ওকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে ফিরে এসেছে।
আকশিঃ বাপ রে আরো কত কি যে করতে হবে?
শরীরের ধূলা ঝারতে ঝারতে আকশি কথাটা বললো।আদিয়াতের দিকে তাকাতেই দেখে আদিয়াত ওর দিকে চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে।
আকশিঃ কি হয়েছে? চোখ দুটোকে এমন করে রেখেছিস কেন?মুখটাও তো পটকা মাছের মতো ফুলিয়ে রেখেছিস।
আদিয়াতঃ ইচ্ছে করছে তোর মাথাটা সামনের ঐ ইট দিয়ে ফাটিয়ে ফেলতে।আমাকে শেষ পর্যন্ত তুই তোদের অফিসের পিয়ন বানিয়ে ফেললি।
আকশিঃ ওহ এবার বুঝেছি তোর মুখটা পটকা মাছের মতো ফুলানো কেন?তুই পারমানেন্টভাবে পিয়নের চাকরীটা চাচ্ছিস ভাই। দেখ আমি তো এখন এই কোম্পানির মালিক নই তাই আমাকে এসব বলে লাভ হবে না।তুই বরং এই ব্যাপার নিয়ে ফিহার সাথে কথা বল।ফিহা চাইলে তোকে দয়া মায়া করে পিয়নের পোস্টে চাকরী দিতে পারে।ও যদি নাও দেয় তাহলে তুই কান্না করিস না।আমি যখন মালিক হবো তোকে তখন অবশ্যই পিয়নের পোস্টে একটা চাকরী দিবোই দিবো।(এক চোখ মেরে)
এমনিতে আদিয়াত আকশির ওপর রেগে বোম হয়ে ছিলো।আর এখন আকশির কথাগুলো ঠিক আগুনে ঘি ঢালার মতো ওর মনে কাজ করলো।
আদিয়াতঃ শালা,তোর জন্য এতকিছু করছি আর তুই আমাকে কি না তোর কোম্পানিতে পিয়নের চাকরী দিবি।আজ তোর একদিন কি আমার একদিন।আমার বাপের টাকা কি কম পরছে নাকি?তোর অফিসে আমাকে পিয়নের চাকরী করতে হবে।আমি আমাদের এতো বড় কোম্পানি ছেরে তোর পিছনে সময় নষ্ট করছি।আর তুই কি না বলছিস আমাকে পিয়নের চাকরী দিবি।যার জন্য করি চুরি, সেই বলে চোর।তুইও তো এই প্রবাদ বাক্যের মতো করলি।যা তোর সাথে কোন কথা নেই। (রেগে)
আদিয়াত রেগে চলে যেতে নিলে আকশি ওর হাত ধরে ফেলে।আকশি মিটমিট করে হাসছে।একটু বেশি রাগানো হয়ে গেছে আদিয়াতকে।এখন নিজেদের রাগ মিটিয়ে না নিলে পরে আরো দুরত্ব বেড়ে যেতে পারে।সেটা ভেবে আকশি বললো।
আকশিঃ ধূর আমি তো মজা করছিলাম।আর তুই সত্যি ভেবে নিয়েছিস।তুই না থাকলে আজ আমি সবার আগে ফিহাকে বার্থ ডে উইশ করতে পারতাম না।
আদিয়াতঃ ফিহার যে আজ বার্থ ডে সেটা তুই জানলি কি করে?
আকশিঃ ঐদিন মিটিংয়ে ফাইল চেক করে জানতে পারি।ওর নামের জন্য ফাইল ওপেন করলেও ওর নাম জানতে পারি নি।কিন্তু তখন বার্থ ডে মনে রাখি।তাই আজ উইশ করে দিয়েছি।এমনভাবে উইশ করেছি যে আজ সারাদিন ওর সাথে কি হয়েছে সেটা ভেবে কোন কাজে মনোযোগ দিতে পারবে না।
আদিয়াতঃ আমাকে একটা সত্যি কথা বলবি??
আকশিঃ হুম বল।
আদিয়াতঃ তুই কি ফিহাকে ভালবাসিস?
আকশিঃ হুম।(অন্য দিকে তাকিয়ে)
আদিয়াতঃ সত্যি ?।
আকশিঃ হুম?।
আদিয়াতঃ ভাই তাহলে অবশেষে তুইও কারো প্রেমে পরলি।আমারতো বিশ্বাস হচ্ছে না।
আকশিঃ তোর বিশ্বাসের জন্য আমি কি করতে পারি?
আদিয়াতঃ ধূর এটাতো কথার কথা।আমার এমনি তোর ওপর সন্দেহ হচ্ছিল। তুই যখন ফিহাকে দালানের পাইপ বেয়ে বেলুন নিয়ে গিয়ে উইশ করে এলি তখনি আমি সিউর হয়ে গেছি।
আকশিঃ হবিই তো।তুই তো আবার প্রেমে পি.এইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেছিস।
আদিয়াতঃ একটা কথা।তুই যে গ্যাস বেলুন কোমরের সাথে বেঁধে ওপরে উঠলি তখন যদি বাতাস বইতো তাহলে তোর অবস্থা কি হতো ভাব তো।তোকে তো বেলুনসহ উড়িয়ে নিয়ে যেত।অবশ্য তোকে তো আকাশে তুলতে পারবে না।তোর যা বডি।
(মুখ টিপে হেসে)
আকশিঃ খুব মজা নিচ্ছিস।আমার তো ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছিলো।কি করে যে উঠলাম তা ভেবে এখন আমার হাত-পা কাঁপছে।
আদিয়াতঃ বলতে হবে তোর ভালবাসার পাওয়ার আছে।যে ছেলে একতলার থেকে দোতালায় উঠতে চাইতো না সে পাইপ বেয়ে চার তালায় উঠে গেছে। ভাবা যায় এগুলো।ভালবাসার মানুষের জন্য কতকিছু করে আসলি।সবে তো শুরু। আরো কত কি যে দেখতে হবে রে।
—-কে কে রে ঐ খানে কথা বলে কে??
দারোয়ানের গলার স্বর পেয়ে দুই বন্ধু পরিমরি করে উল্টো দিকের গেইট দিয়ে দৌড়।তাদের আর পায় কে?নিজের অফিসের দারোয়ানের ধাওয়া খেয়ে আকশি এখন আপাতত রাস্তা দিয়ে দিশাহারা হয়ে দৌড়াচ্ছে।
অন্য দিকে ফিহা চিঠির খামের এক কোণা ঠোঁট দিয়ে ধরে রেখে ভেবেই চলেছে।কে দিতে পারে এটা?মানুষটাই বা কে ছিলো?সবকিছু তার কাছে এখন ধোঁয়াসা, ধোঁয়াসা লাগছে।আজ সারাদিন তার এই কথা চিন্তা করতে করতেই কাটবে।
#চলবে