#মিসেস_চৌধুরী
#Part_13,14
#Writer_NOVA
13
মিটিং শুরু হয়ে গেছে আরো ২০ মিনিট আগে।এক এক করে সব ক্লায়েন্ট বক্তব্য রাখছে।আদিয়াত মনোযোগ সহকারে গুরুত্বপূর্ণ ইনফরমেশনগুলো টুকে নিচ্ছে। আকশি মহাশয়ের কথা কি বলবে?তিনি তো কিছু সময় পর পর আড়চোখে ফিহাকে দেখতেই ব্যস্ত।ফিহার মনটা আনচান করছে অনিয়ার জন্য। কেন জানি বার বার মনে হচ্ছে অনিয়ার কোন বিপদ হবে?কথায় আছে না মায়ের মন সবার আগে বিপদ সংকেত পায়।সন্তানের বিপদের ইঙ্গিত মায়ের মনে ঘন্টা বাজায়।ফিহা হয়তো অনিয়াকে জন্ম দেয়নি।কিন্তু এতোদিন লালন-পালন করে তো ওর প্রতি দূর্বল হয়ে গেছে। আল্লাহ হয়তো এই কারণে অনির সাথে ফিহার মনের কানেকশন জুড়ে দিয়েছে।
আকশি বেশ কিছু সময় ধরে খেয়াল করছে ফিহা মিটিংয়ে মনোযোগী নয়।খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা ভাবছে।
আকশিঃ আজ ফিহার কি হলো?অনান্য সময় তো ওকে বেশ গম্ভীর দেখায়।কিন্তু আজ মনে হচ্ছে কিছু একটা নিয়ে অনেক চিন্তিত।কি ভাবছে এতো?হাব-ভাব তো ভালো ঠেকছে না।আমি যতটুকু জেনেছি ফিহা সামান্য ব্যাপার নিয়ে কখনও চিন্তা করে না।মেয়েটা নাকি বেশ স্ট্রোং।ভেতরে ভেতরে ভয় পেলোও কখনও মুখে তা বুঝতে দেয় না।কিন্তু আজ কি হলো ওর?আমি ফিহাকে এভাবে নিতে পারছি না।ফিহা কি আমাদের ব্যক্তিগত কোন কারণ নিয়ে টেনশনে আছে।না, আমাকে জানতেই হবে।(মনে মনে)
ফিহা এক ধ্যানে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।অনিকে ঘুম পারিয়ে রেখেছে।টেবলেট পাহারা দিচ্ছে। তারপরও মনটা কু-ডেকেই যাচ্ছে। কোন কিছুতে শান্তি লাগছে না।
ফিহাঃ আমার অনিকে নিয়ে ভয় কেন করছে?আমার মনে হচ্ছে আমার মেয়ের নিশ্চয়ই কোন ক্ষতি হবে।টেবলেট তো ওর পাশে আছে।তারপরেও কেন ভয় করছে আমার।কিছু সময় পর পর বুকটা ধক করে উঠছে।একটা শব্দ হলেই মনে হচ্ছে আমার অনিয়ার সাথে খারাপ কিছু হচ্ছে। কোথায় আগে তো এরকম কখনও মনে হয়নি।অস্থির, অস্থির লাগছে ভেতরটা।আল্লাহ তুমি আমার মেয়েটাকে দেখো।অনি আমার কাছে চৌধুরী বাড়ির আমানত।তাছাড়া আমার নিজের মেয়ে।হ্যাঁ,যে যাই বলুক।আমি কারো কথা শুনবো না।অনিয়া আমারি মেয়ে। ওর কিছু হলে আমি নিজেকে মাফ করতে পারবো না।বাবা আমাকে বিশ্বাস করে ওর দায়িত্ব দিয়েছে।আমি যদি সেটা পালন করতে না পারি তাহলে আমার নিজেকে শেষ করা ছারা অন্য কোন উপায় থাকবে না।আল্লাহ যত কষ্ট দেওয়ার,যত বিপদ দেওয়ার আমাকে দিয়ো।কিন্তু তোমার কাছে আমার আর্জি দয়া করে আমার অনির কোন ক্ষতি তুমি হতে দিও না।(মনে মনে)
ফিহার চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে।এই মনে হয় টুপ করে পরে যাবে।পৃথিবীর সব মা এমনি হয়।নিজের চাইতে বেশি সন্তানের জন্য ভাবে।তাই তো আল্লাহর পর মা কে সম্মান করতে বলা হয়েছে।মায়ের দোয়া আল্লাহ অবশ্যই কবুল করবে।মায়ের পদতলে সন্তানের বেহশত। কিন্তু কোন মা তার সন্তানকে পায়ের নিচে কখনও রাখে না।শত, হাজার কষ্টের মধ্যেও নিজের বুকে পরম যত্নে সন্তানকে আগলে রাখে।নিজের জীবন যায় যাক কিন্তু সন্তানের কিছু হতে সে দিবে না।এই জন্যই তো মায়েরা পৃথিবীর সবচেয়ে আপনজন।সবার ওপরে আমাদের মা।তার ওপরে কাউকে মর্যদা দেয়নি আল্লাহ। ভালবাসি তোমাকে মা।তোমার মতো আর কেউ আমাদের জন্য এত ভাবে না।এতো ভালোবাসা দিয়ে বুকে আগলে রাখে না।এই জন্য আল্লাহ এতো মর্যদা দিয়েছে মা-কে।একজন মা সন্তানের জন্য যতটা কষ্ট স্বীকার করে তা আর কেউ কখনও করে নি, করবেও না।
আকশিঃ আদি, এই আদি।ঐ আদি বজ্জাতের কাঁদি।
আদিয়াতঃ কি হয়েছে এত ডাকছিস কেন?দেখছিস না মিটিং চলছে।এখন কথা বলে মান-সম্মানের মাথা খাস না।যদি তারা বুঝতে পারে আমরা কথা বলছি তাহলে রুম থেকে বের করে দিবে।কতবড় পানিশমেন্ট এটা ভেবেছিস?এই বয়সে এসব মানা যায়।
আকশিঃ তোর বক্তৃতা বন্ধ করবি।নিজে যে এক লাইনের বদলে পুরো রচনা শুনিয়ে দিচ্ছিস। সেই বেলা কিছু হয় না।আর আমি সামান্য ডাক দিয়েছি তাতেই এতো কিছু হয়ে গেলো।শালা,হারামী,শয়তান।
আদিয়াতঃ গালি না দিয়ে কি জন্য ডেকেছিস তা বল?
আকশিঃ ফিহার মনটা মনে হচ্ছে অনেক খারাপ।
আদিয়াতঃ তো আমি কি করবো?তোর বউ মন খারাপ করে আছে সেটা ঠিক করার দায়িত্ব তোর, আমার নয়।আপতত মন খারাপের কথা ছাড়।মিটিংয়ে মনোযোগ দে।একটা গুরুত্বপূর্ণ টপিকে কথা হচ্ছে। তোদের বিজনেসের জন্য অনেক দরকারী।
আদিয়াতঃ তোর মিটিংয়ের পেচাল বন্ধ কর। আমার এখন ফিহার জন্য চিন্তা হচ্ছে। ফিহাকে আমি এইভাবে নিতে পারছি না। আমার ভীষণ খারাপ লাগছে।
আদিয়াতঃ ভাই আমার এখন একটু চুপ কর।মিটিং থেকে বের হওয়ার কোন ইচ্ছে আমার নেই।
আকশিঃ তুই একটু ভেবে দেখ ফিহা শুধু শুধু কারণে মন খারাপ করে না।ফিহা খুব শক্ত গঠনের মানুষ। সামান্য ব্যাপারে মন খারাপ করবে এমন মেয়ে তো ফিহা নয়।
আদিয়াতঃ আল্লাহ বাচাও আমায়।?♂️?♂️
আকশিঃ আমার কথাটা শোন।
আদিয়াতঃ আরেকটা কথা বললে আমি তোর নামে কমপ্লেন করবো।
আকশিঃ ??
???
রিয়ানা খুব সাবধানে সিকিউরিটি সামলিয়ে ভেতরে ঢুকলো। হাতের সাইড ব্যাগে কড়া ডোজের ঘুমের ঔষধ। এতোটা কার্যকরী যে মৃত্যুর সম্ভাবনা একশ পার্সেন্ট।তা যদি ছোট কোন বাচ্চাকে দেওয়া হয় তাহলে ২৮ মিনিটের মধ্যে মৃত্যু পুরো নিশ্চিত। আজ তার অপমানের বদলা নিবে।তবে সেটা অনিয়ার ওপর নিবে।সেদিন ফিহার কাছে অপমানিত হয়ে এতটা প্রতিশোধ পরায়ন হয়েছে যেকোন মূল্যে ফিহার ক্ষতি চায়।যেহেতু এখন ফিহার চৌধুরী বাড়ি থাকার মূল কারণ হলো অনিয়া।তাই অনিয়াকেই মেরে ফিহাকে শিক্ষা দিবে।
ফিহাঃ খুব সাহস তোর ফিহা।এবার তোর বড়মুখ আমি বের করবো।তোর কলিজার টুকরো অনিয়াকে আমি দূরে সরিয়ে দিবো।তোর চৌধুরী বাড়ি এখনো মাথা উঁচু করে থাকার কারণটাই আমি দূরে সরিয়ে দিবো। এক ঢিলে আমি তিন পাখি মারবো।অনিয়া শেষ হবে,ফিহা জেলে যাবে,পুরো কোম্পানি আমার হাতে আসবে।আমার যে এতো খুশি লাগছে।এখন ফিহা মিটিংয়ে। সবাই কাজে ব্যস্ত।অনিয়া নির্ঘাত রুমে একা।কিন্তু ঐ বজ্জাত টেবলেটের কি ব্যবস্থা করবো সেটা একটু ভাবতে হবে।আইডিয়া পেয়ে গেছি।
কিছু একটা ভেবে খুশি মনে হাঁটতে লাগলো। চুপিচুপি ফিহার কেবিনে সামনে এসে দাঁড়ালো। দরজাটা হালকা ফাঁক করে দেখলো অনি দোলনায় ঘুমাচ্ছে। ওর দোলনার পাশে টেবলেট চোখ বন্ধ করে মুখ গুঁজে শুয়ে আছে। ঘুমিয়ে আছে নাকি জেগে আছে তা বুঝতে পারলো না রিয়ানা।কিন্তু ওর মনে তো এখন শয়তানি বুদ্ধি উঁকি ঝুঁকি মারছে।কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে রিয়ানা বিকট একটা শব্দ করলো।কি হয়েছে তা দেখার জন্য টেবলেট এক দৌড়ে বাইরে চলে এলো।এটায় ছিলো রিয়ানার টেবলেটকে সরানোর বুদ্ধি।এই সুযোগে রিয়ানা আড়াল থেকে বের হয়ে রুমে ঢুকে পরলো।দরজাটা আটকে দিলো।আস্তে আস্তে এগিয়ে যেতে লাগলো অনিয়ার দোলনার দিকে।
টেবলেট ফিরে এসে দেখলো দরজা বন্ধ। পশু,পাখি তার মনিবের বিপদ নাকি আগের থেকে টের পায়।দরজার উপরের দিকে কিছুটা সাদা কাচ লাগানো।ঐ কাচ দিয়ে তাকালে ভেতরের সব দেখা যায়।কিন্তু এতো ওপরে টেবলেট দেখবে কি করে?আশেপাশে কিছু একটা খুঁজতে থাকে। একসময় পেয়েও যায়।দরজার থেকে কিছুটা দূরে একটা হালকা পাতলা ছোট টুল দেখতে পায়। টেবলেট সেটাকে মাথা দিয়ে ধাক্কাতে ধাক্কাতে দরজার সামনে নিয়ে আসে।তারপর সেটায় উঠে সাদা কাচটার দিকে উঁকি দেয়।ততক্ষণে রিয়ানা অনির ফিটারে দুধ গুলে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে ফেলেছে।বাঁকা হেসে অনির দিকে এগুতে থাকে।
রিয়ানাঃ আর কিছু সময় পর সব শেষ হয়ে যাবে।ঘুমিয়ে নেও ছোট্ট মা-মণি।তোমার মা সেদিন খুব বড় মুখ করে আমায় অপমান করেছিলো।সেই মুখ আজ আমি গুড়িয়ে দিবো।এই রিয়ানাকে অপমান ও পাঙ্গা নেওয়ার মজা আমি হারে হারে টের পাইয়ে দিবো।
এক পা এক পা করে এগুচ্ছে রিয়ানা।মুখে তার বিশ্ব জয় করা হাসি।টেবলেট দরজার বাইরে থেকে ঘেউ ঘেউ করছে।ওর চোখেও আজ ভয়।কিন্তু সাউন্ড প্রুফ থাকায় রিয়ানা টেবলেটের চেঁচামেচি শুনতে পাচ্ছে না।সাধারণত এদিকে কেউ আসে না।যে যার যার কাজে ব্যস্ত।টেবলেটের গলার আওয়াজ কেউ পাচ্ছে না।
#চলবে
#মিসেস_চৌধুরী
#Part_14
#Writer_NOVA
পূর্ব দিগন্তে ডিমের কুসুমের মতো সূর্যটা উঁকি দিচ্ছে। একটু পর হয়তো তার কিরণ সারা ভূবন আলোকিত হয়ে উঠবে।ফিহা খুব শক্ত করে নিজের সাথে অনিয়াকে মিশিয়ে রেখেছে।আজ অনেক দিন পর সূর্য উদয় দেখছে ফিহা।অনিয়া তার মায়ের বুকে মুখ গুঁজে পরম নিশ্চিন্তে অঘোরে ঘুমোচ্ছে। ফিহা মায়াবী চোখে অনিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আজ ফিহা অফিস যাবে না।সারাদিন অনিয়ার সাথে সময় কাটাবে।অফিসের কাজের জন্য আজকাল অনির দিকে খেয়াল দেওয়া হয় না।টেবলেট ওর ছোট ঘর আরামে ঘুমাচ্ছে। এই বোবা প্রাণীটার ওপর দিনকে দিন ফিহার মায়া বেড়েই যাচ্ছে। আর অনিয়া তো এখন ওর কলিজার টুকরো। ঘুমন্ত মেয়ের দিকে তাকিয়ে ফিহা একা একা কথা বলছে।
ফিহাঃ পাগলী মেয়ে আমার।ভোর সকালে উঠে আমাকে জ্বালিয়ে এখন ঘুমানো হচ্ছে। আমি নাহয় নামাজ পরতে উঠেছি কিন্তু তোমার কেন উঠতে হবে।দিনকে দিন মা-মণি তোমার পাঁজি পানা বেড়েই যাচ্ছে। আমি সাথে না থাকলে ঘুমের থেকে জেগে যাও।এটা কিন্তু ভালো কথা নয়।
আনিসঃ কার সাথে কথা বলছো ছোট বউমা?
ফিহাঃ আরে বাবা আপনি?কখন এলেন?কিছু লাগবে?আমায় ডাক দিলেই হতো।নয়তো কাউকে পাঠাতেন।আপনি কেন কষ্ট করে উঠে এলেন।
আনিসঃ তুমি ব্যস্ত হয়ো না মা।আমি ঠিক আছি।
ফিহাঃ এত সকাল করে কেন উঠেছেন বলুন তো।নামাজ পরে শুয়ে থাকলেও তো পারেন।এত সকালে তো এখনো সূর্যও উঠেনি।
আনিসঃ শুয়ে, বসে থাকতে থাকতে বোর হয়ে যাচ্ছি বউমা।সারাদিন তো এসবের মধ্যেই থাকি।একা এতবড় বাড়িতে থাকতে আর ভালো লাগে না।আমার দিদিভাই কেমন আছে?
ফিহাঃ আপনার দিদিভাই আজ রাতে ঘুমায়নি।কিছু সময় পর পর কান্না করে উঠেছে।আযানের আগে একটু চোখ লাগিয়েছিলো কিন্তু আমি নামাজ পরতে উঠার সাথে সাথে জেগে গেছে। এখন আবার ঘুমালো।
আনিসঃ রাতে কান্না করেছে কেন?(চিন্তিত সুরে)
ফিহাঃ জানিনা বাবা।কখনও তো এমন করে না।আজ কিছু সময় পর পর ফুঁপিয়ে কান্না করে উঠেছে।কিন্তু কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।
আনিসঃ দিদিভাই হয়তো কিছুতে ভয় পেয়েছে।তাই এরকম বিহেভ করছে।
ফিহাঃ আমিও বুঝতে পারছি না আসলে কি হয়েছে? দুই দিন ধরে এতো ব্যস্ত ছিলাম যে ওর দিকে ভালোমতো খেয়ালও দিতে পারি না।সেজন্য আজ আমি ঠিক করেছি অফিসে যাবো না।সারাদিন অনিকে ও আপনাকে সময় দিবো।অফিসে থাকার দরূণ আপনার যত্নও নিতে পারি না।কি খান,কি করেন কিছুই জানি না।আজকে আমি বাড়িতে থেকে নিজের হাতে সবকিছু রান্না করবো আর আপনাদের দুজনের কেয়ার করবো।আজ অফিসে না গেলে কি কোন সমস্যা হবে বাবা?
অানিসঃ এটা কেমন কথা হলো বউমা?তোমার সংসার,অফিস,তোমার বাবা, তোমার মেয়ে।সবকিছু যেখানে তোমার সেখানে আমি বলার কে?
ফিহাঃ বাবা এসব কিছু আমার কাছে আমানত।আমার কোন হক নেই তাতে।
আনিসঃ কি বলো তুমি বউমা?আমি সবকিছু তোমার হাতে তুলে দিয়েছি।এখন আমার যা ছিলো আর যা আছে সব তোমার।আমার এসবে কোন অধিকার নেই। এবার শান্তিমত দুচোখ বন্ধ করতে পারলেই আমার মুক্তি।
ফিহাঃ এতো বিশ্বাস করেন আমায়।(ছলছল চোখে)
আনিসঃ নিজের থেকেও বেশি তোমায় ভরসা করি বউমা।অনি দিদিভাই ঘুমিয়ে গেছে। ওকে বিছানায় শুইয়ে দেও।বড্ড জ্বালাতন করে তোমায়?
ফিহাঃ যত দিন যাচ্ছে আমার প্রতি পাগল হয়ে যাচ্ছে। কোথাও অনিকে ছারা যেতে পারি না।এখন তো আমার ওয়াস রুমে যাওয়া দায় হয়ে পরেছে।আমার সাথে সবসময় লেপ্টে থাকে।আগে তাও কারো কোলে যেতো। কিন্তু এখন আমায় ছারা কিছু বুঝে না।
অনিকে বিছানায় রেখে গায়ের ওপর হালকা করে কম্বল মেলে দিলো।যদি ততটা শীত নয়।তবুও ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা আছে।আনিস চৌধুরী মুগ্ধ চোখে ফিহার দিকে তাকিয়ে আছে।
আনিসঃ অনি তোমায় অনেক বিরক্ত করে তাই না বউমা।যার জন্য তোমার মাঝে মাঝে ওর, আমার ওপর রাগ হয়।
ফিহাঃ ছি ছি বাবা কি বলেন এসব?কোন মা কি তার মেয়ের ওপর বিরক্ত হতে পারে।আর কোন মেয়ে কি তার বাবার ওপর রাগ করে থাকতে পারে।অনি যেমন আমার মেয়ে তেমনি আপনিও আমার বাবা।এটা সত্যি যে আমি অনির নিজের মা নয় কিংবা আপনি আমার নিজের বাবা নন।কিন্তু আমি সেটা মানি না।আপনি আমার নিজের বাবা,অনি আমারি মেয়ে। আপনাদের দুজনকে ছেড়ে আমি কোথাও যাচ্ছি না।
আনিসঃ আমি আমার অনি দিদিভাইয়ের জন্য একজন সত্যিকারের আদর্শ মা আর নিজের জন্য একটা মেয়ে নিয়ে এসেছি।আমার আর কিছু চাই না।
আজ যদি আমার আকশি থাকতো তাহলে আমি তোমাকে সত্যিই নিজের ছোট বউমা বানিয়ে নিতাম।
ফিহাঃ ওহ্ এখন মেয়েকে ভালো লাগছে না।তাই বউ বানানোর চিন্তায় আছেন।তার মানে দাঁড়ালো আপনি আমায় একটুও ভালোবাসে না।আমি ঠিক বলেছি না বাবা?আমি মনে হয় আপনাদের যত্ন নিতে পারছি না।যার কারণে মেয়ে থেকে বউ করবেন ভাবছেন।
(মুখ গোমরা করে)
আনিসঃ আমি তা বুঝাইনি বউমা।তুমি আমার বউমা এবং মেয়ে দুটোই।তোমারজায়গায় আজ অন্য কোন মেয়ে থাকলে হয়তো আমার সবকিছু নিঃশ্ব করে পালিয়ে যেতো।কিন্তু তুমি তা করো নি।এই বুড়ো বাপ আর এতিম বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে অবিবাহিত হয়েও সমাজের কাছে বিবাহিত হওয়ার দাগ লাগিয়েছো।নিজের জন্য একটুও ভাবো না।
ফিহাঃ বাবা,আপনি আবারও উল্টো পাল্টা কথা বলছেন।আপনাকে না আমি বলেছি একদম নিজেকে এত ছোট ভাববেন না।আর অনিকে কখনও এতিম বলবেন না।অনির মা ফিহা চৌধুরী এখনও বেঁচে আছে।তাই আমার অনি এতিম নয়।আপনি নিজেকে কেন একা ভাবেন বলুন তো।আপনার মেয়ে ফিহা যতদিন আছে ততদিন আপনারা কেউ নিঃস্ব বা একা নন।কথাটা মনে রাখবেন।
আনিসঃ বাহ বাহ আমার মেয়ে দেখছি আজকাল আমার ওপর রাগও করে।
ফিহাঃ হুম, বাবার ওপর মেয়ে রাগ করতেই পারি।এবার আমাকে বলুন বাবা, কি খাবেন? চা নাকি কফি?
আনিসঃ এক কাপ চা হলে ভালো হতো।
ফিহাঃ তাহলে আপনি বসুন আমি চা করে আনছি।আপনি এখানেই বসে থাকবেন।কোথাও যাবেন না কিন্তু। আজ একটু ঠান্ডা পরেছে। ঠান্ডার মধ্যে আপনার হাঁটা চলা কম করতে হবে।
আনিসঃ আমি আমার দিদিভাইয়ের সামনেই বসে আছি। তুমি গিয়ে চা নিয়ে এসো।
ফিহা খুশি মনে চা তৈরি করতে চলে গেল।আনিস চৌধুরী বড় করে দীর্ঘ শ্বাস ছারলো। নিজের মনের মাঝে তিনি আনন্দ খুঁজে পাচ্ছেন।যাক, তিনি নিজের ও অনির জন্য একজন খাঁটি মনের মানুষ খুঁজে পেয়েছেন।এর থেকে বেশি আর কি লাগে?
ফিহা চা তৈরি করে নিয়ে এলো।বউ শ্বশুর মিলে কিছুখন ব্যবসা বাণিজ্যের কথা বললো।ফিহা নিজ হাতে আনিস চৌধুরীকে ঔষধ খাইয়ে বিশ্রাম করতে ঘরে পাঠিয়ে দিলো।ফিহার শ্বশুর চলে যেতেই ভেবেছিলো একটু ঘুমাবে।তাই বিছানায় অনির পাশে বালিশে মাথা হেলিয়ে দিলো।কিন্তু বেশ কিছু সময় এপাশ ওপাশ করেও ফিহা ঘুমাতে পারলো না।তাই উঠে আলতো করে অনির কপালে চুমু খেতে গিয়েও থেমে গেল।
ফিহাঃ ছোট বেলায় গুরুজনদের বলতে শুনেছিলাম ঘুমন্ত বাচ্চাকে কিসি করতে নেই। তাহলে নাকি বাচ্চারা অনেক পাঁজি, রাগী ও জিদ্দি হয়।যদিও আমি এসব মানি না।তারপরেও আমি তোমাকে ঘুমের মধ্যে কিসি দিবো না। তুমি আমার মানিক চাঁদ। মাশাল্লাহ, কত কিউট দেখতে আমার পরীটা।ঘুমন্ত মানুষকে নাকি অনেক সুন্দর লাগে।বাচ্চাদের তো আরো বেশি। আমার পরীকে না দেখলে আমি কখনও এটা বিশ্বাস করতাম না।ঘুমিয়ে থাকলে চেহারাটা আরো বেশি মায়াবী লাগে।ইচ্ছে করে সারা মুখে আদরের পরশ দিয়ে দিতে।এই মায়াবী চেহারা দেখে আমি সারাজীবন পার করে দিতে পারবো।আমার কোন কষ্ট হবে না।বরং আমি তোমার মুখের হাসির জন্য সারা দুনিয়ার কাছে নিজের জীবন বাজি রাখতে রাজি আছি।কারণ আমি এই ছোট্ট সোনামণিটার মা।
মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে কথাগুলো বললো ফিহা।
দুধ গুলিয়ে ঘুমের মধ্যে অনিকে খাইয়ে দিলো।
তারপর উঠে চলে এলো টেবলেটের ঘরের কাছে।রুমের উত্তর পাশে খুব সুন্দর একটা ছোট্ট ডগ ঘর।সেটায় টেবলেট থাকে।
ফিহাঃ টেবলেট আর কত ঘুমাবি বল তো?কত বেলা হয়ে গেছিস তুই জানিস।যদিও আজকে অফিস যাবো না।কিন্তু আমার যখন ঘুম আসছে না তাহলে তোকেও আমি ঘুমাতে দিবো না।উঠ না।এতো পরে পরে ঘুমালে চলে।আমি ভাবলাম তোকে নিয়ে বাইরের বাগানে ঘুরতে যাবো।আর তুই এখনো আলসেমি করে শুয়ে আছিস।আমাকে আজ রান্না করতে হবে।তিন বেলার খাবার আজ আমি রান্না করবো।তুই যদি আজ আমার সাথে বাইরে না যাস তাহলে তোর দুপুরের খাবার মাইনাস।
ফিহার এতগুলো কথার একটাও বোধ হয় টেবলেটের কানে ঢুকলো না।কারণ সে যেহেতু শুনেছে আজ ফিহা অফিস যাবে না সো টেবলেটের আজ কোন কাজ নেই। তাই সারাদিন পরে পরে ঘুমাবে।টেবলেট ফিহার দিকে ঘুম ঘুম চোখে একবার তাকিয়ে হাই তুললো।তারপর আবার মুখ গুঁজে চোখ বন্ধ করে নিলো।মোট কথা ফিহার কোন কথাকেই সে পাত্তা দেয়নি।এখন সে আরামচে ঘুমাবে।ফিহা টেবলেটের ওপর বিরক্ত হয়ে রুম থেকে বিরবির করতে করতে চলে গেল।
ফিহাঃ ধূর,টেবলেট টা এলো না।ও এলে আমি একটু বাইরে যেতাম।আপাতত এখন আমার মেয়ে উঠবে না।একা একা বাইরে যেতেও ভালো লাগছে না।কি করব, কি করব?বাড়িতে তো কোন সার্ভেন্ট ও জেগে নেই। আবদুল চাচাকে ফোন দিয়ে আজকে অফিস সামলাতে বলে দিতে হবে।আমি এখন কি করবো?(একটু ভেবে)পেয়েছি!!! পুরো বাড়িটা আমার এখনো ঘুরে দেখা হয়নি।আমি বরং এখন পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখি।কিন্তু কোথা থেকে শুরু করবো।আচ্ছা, অনিল ভাইয়া ও লিয়া ভাবীর রুমটা আগে ঘুরে দেখলে কেমন হয়?ইয়েস ঐ রুমেই আগে যাবো।
যেমন ভাবা তেমন কাজ।ধীর গতিতে অনিলের রুমের দিকে হাঁটতে লাগলো ফিহা।রুমের দরজায় ছিটকিনি লাগানো।তালা মেরে রাখা হয়নি।কেউ এদিকে আসে না বলে তালা মারার প্রয়োজন মনে করে না।দরজার ছিটকিনি খুলে ফিহা ভেতরে প্রবেশ করলো।রুমটা ঘন কালো কুচকুচে অন্ধকার। বাইরের ছিটেফোঁটা আলোয় হাতরে লাইটের সুইচ খুঁজে লাইট জ্বালালো।বহুদিন ব্যবহার না করায় রুমে একটা গুমোট গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তবে পুরো রুম সাজানো গোছানো।দেখে মনেই হয় না রুমে কেউ থাকে না।
পুরো রুমে চোখ বুলাতে বুলাতে একটা ছবির কাছে এসে চোখ আটকে গেল।ধীর পায়ে সেই ছবির সামনে এসে দাঁড়ালো ফিহা।দেয়ালে টাঙানো বিশাল বড় একটা ফ্রেম।যেখানে অনিল,লিয়া ও অনিয়া আছে।লিয়াকে এই প্রথম দেখলো ফিহা।অসম্ভব সুন্দরী, চোখের মণি দুটো ধূসর রঙের।ছবিতে লিয়া ঘুমন্ত অনিয়াকে কোলে নিয়ে আছে।অনিয়া তখন খুব ছোট। লিয়া দুই হাতে জাপটে ধরে রেখেছে অনিকে।আর অনিল, লিয়াকে এক হাতে জরিয়ে ধরেছে।লিয়ার মাথার সাথে হালকা করে নিজের মাথা হেলিয়ে রেখেছে।দুজনের পরনে হালকা আকাশি কালার ড্রেস। ফিহার কাছে ছবিটা পৃথিবীর বেস্ট ছবি মনে হলো।কারণ এখানে একটা ছোট্ট পরিবার আছে।বাবা,মা এবং তাদের ছোট সোনামণি। এর থেকে ভালো ছবি আর কি হতে পারে?তবে আফসোস তারা সারাজীবন এভাবে থাকতে পারলো না।
#চলবে