#মিসেস_চৌধুরী
#Last_Part
#Writer_NOVA
৩ মাস পর…….
সময় বহমান।সে তার নিজ গতিতে চলবেই। শুধু সময়ের সাথে পরিস্থিতি নামক বস্তুটা বদলে যায় নানাভাবে।পাওয়া, না পাওয়া হাজার আক্ষেপ নিয়ে ছুটে চলে আমাদের জীবন।আকশি ও ফিহার বিয়ের ২ মাস ২৪ দিন চলছে।স্বামী, বাচ্চা,টেবলেট ও শ্বশুর নিয়ে ছোট একটা সংসার ফিহার।যার যার জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরেছে সবাই। তিন মাস আগের ঘটনায় দুই চৌধুরীর রাগ ভাঙাতে ফিহাকে বেশ নাকানিচুবানি খেতে হয়েছে।হাজার মেহনত করে,মাথার ঘাম পায়ে ফেলে টানা ৫ দিন পর ফিহা, আকশি ও আনিস চৌধুরীর রাগ ভাঙাতে সক্ষম হয়েছে। তখনকার কথাগুলো মনে পরলেই ফিহা আপনমনে হেসে উঠে।আকশি, আনিস চৌধুরী ফিহার সাথে কথা বলতো না,মুখটা গম্ভীর করে রাখতো।অবশেষে ফিহা বিয়েতে রাজী হলো সব ঠিক হয়ে যায়।ঘরোয়া ভাবেই বিয়ে হয়ে যায় আকশি ও ফিহার।যারা জানতো ফিহা চৌধুরী বাড়ির বউ তারাই শুধু বিয়েতে উপস্থিত ছিলো।আবদুল সাহেব, আনিস চৌধুরী, সাফান ও আদিয়াত এই চারজনের সামনে পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয় ফিহা ও আকশি।আজ ফিহা সত্যিকারের মিসেস চৌধুরী। আকশি সারাদিন অফিস সামলায়।আর ফিহা বাসায় থেকে সংসার।পুরো অফিসের মানুষ জানে ফিহা ও আকশির বিয়ে ২ বছর আগে হয়েছে। তাদের কে বিয়ের ব্যাপারটা জানানো হয়নি।জানলে হয়তো কিছু আজাইরা পাবলিক ফিহাকে নানাভাবে বিরক্ত করতে উঠে পরে লাগতো।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল নেমেছে। দোলনায় অনি ঘুমোচ্ছে। ফিহা বেডে বসে একটা বিশাল বড় ছবির এলব্যাম উল্টে পাল্টে দেখছে।এই এলব্যামটা ফিহার বিয়ের দিন আদিয়াত গিফট করেছিলো।আদিয়াতের মোবাইল ক্যামেরায় বিভিন্ন সময়ে আকশি, ফিহা ও অনির তোলা সেই ছবিগুলো আছে।আরো অনেক ছবি তুলেছিলো ওদের আগেচরে। সেগুলো বের করে একসাথে এলব্যাম করে ফিহাকে গিফট করেছিলো।ফিহা ১ম বার ছবিগুলো দেখে পুরো শর্কড হয়ে ছিলো।গুরুত্বপূর্ণ মোমেন্টের ছবিগুলো আজ স্মৃতি।
ফিহাঃ না চাইতেও অনেক কিছু পেয়েছি আমি।আমার মতো একটা মেয়েকে এতো ভালবাসবে তুমি সেটা আমি কখনও ভাবিনি।সেদিন সাফান ঠিক কথায় বলেছিলো তুমি আমায় অনেক ভালো রাখবে।আজ ভেবে দেখলাম সাফান সত্যি বলেছে।আমি যদি তোমাদের ছেরে সেদিন চলে যেতাম তাহলে হয়তো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভূল করতাম।আমি কতটা বোকা কাজ করতে বসেছিলাম।পুরোনো কথাগুলো ভাবলে নিজের প্রতি রাগ উঠে।তাও তুমি আমায় খুশি মনে মেনে নিলে।জানো এখন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হয় নিজেকে।একটা মিথ্যা সম্পর্ক দিয়ে শুরু হয়ে আজ সত্যি সম্পর্কে বাঁধা পরে গেছি।
ফিহা আপন মনে বিরবির করে কথা বলছে।হঠাৎ অনি ঘুম থেকে উঠে গেল। অনি এখন দাঁড়াতে পারে।নিজ চেষ্টায় এক পা এক পা করে হাঁটতেও পারে।তবে দুই এক পা হেঁটে ধপ করে পরে যায়।মুখে সবসময় মা,বাবা, দাদা।এখনো ঘুম থেকে উঠে মা, মা বলে চিৎকার করে কাঁদছে। ফিহা জলদী করে অনিকে কোলে তুলে নিলো। অমনি সে চুপ হয়ে গেল।অনি যেদিন প্রথম বার ফিহাকে মা বলে ডেকেছিলো,ফিহা মনে হয় খুশিতে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিল। মা ডাকটা যে কি?সেটা একমাত্র যার সন্তান নেই সে বুঝে।অনির মুখে মা ডাক শুনে ফিহা নিজেকে স্বার্থক মনে করে।
ফিহাঃ আমার ছোট্ট পরীটা উঠে গেছে। এখন আমার মা-মণি কি খাবে?কি খাবে?(একটু ভাবার ভান করে)হুম মনে পরেছে।এখন আমার মাম্মাম ফিডার ভর্তি সুজি খাবে।আমার লক্ষ্মী মা-মণি।খাওয়ার সময় একটুও দুষ্টুমী করবে না।
অনিঃ মা মা মা মা ই ই ই।
ফিহাঃ আমিই তোমার মা।এতবার বলে মুখ ব্যাথা করতে হবে না।এই চৌধুরী বাড়ির সাথে পরিচয়টা তো তোমার জন্য হয়েছে মা-মণি।নয়তো আজ কোথায় থাকতাম আল্লাহ জানে। আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য করে।আমি এখন আমার এই ছোট্ট পরীটার সত্যিকারের মা।এই টেবলেট গেলো কোথায়?ওকে তো অনেকক্ষণ ধরে দেখছি না।
???
এদিক সেদিক তাকিয়ে ফিহা টেবলেটকে খুঁজতে লাগলো। অনিয়াকে কষ্ট করে আধা ফিডার সুজি খাইয়ে নিচে নেমে এলো।অনিকো কোলে নিয়ে রান্নাঘরে গেল।দুই কাপ চা তৈরি করে শ্বশুর আনিস চৌধুরীর রুমে গেল ফিহা।
ফিহাঃ আসবো বাবা?
আনিসঃ আরে বউমা এসো।আমি না বলেছি তোমার অনুমতি নিতে হবে না। এই পুরো বাড়ি এখন তোমার দায়িত্বে।তুমি যেখানে খুশি সেখানে যেতে পারবে।
ফিহাঃ আপনার চা।
রুমে এসে এক কাপ চা আনিস চৌধুরীর দিকে বাড়িয়ে দিলো।অনিকে পাশে বসিয়ে ফিহা আরেক কাপ হাতে তুলে নিলো।
আনিসঃ আকশি এখনো আসছে না কেন?
ফিহাঃ অনির আব্বুর কথা বলছেন বাবা?অনির আব্বু তো বললো আজ আসতে একটু দেরী হবে।গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে আজ।সাফান ফোন করে আমায় বলে দিলো।আমি তো সবকিছু সামলাতে পারিনি।এখন ১ম থেকে সব গুছিয়ে নিচ্ছে তিনি।
আনিসঃ তুমি আমাদের জন্য যা করেছো তাই বা কম কিসের? তোমাকে তার যথাযথ মর্যাদা দিতে পেরে আমি এখন মরেও শান্তি পাবে।তোমায় যদি আকশির বউ না করতে পারতাম তাহলে সারাজীবন নিজের ভেতরে ভেতরে অপরাধ বোধ নিয়ে বেঁচে থাকতাম।তোমার সংসার আল্লাহ চৌধুরী বাড়িতে লিখে রেখেছে তুমি কি আর এসব ছেড়ে যেতে পারবে বউমা??
ফিহাঃ একটা প্রবাদ আছে না যদি থাকে নসিবে, আপনা আপনি আসিবে।আমাকে আল্লাহ অনির আব্বুর জন্য বানিয়েছে আমি কি অন্য বাড়ি যাবো বাবা।তার বাম পাঁজরের হার থেকে আমি তৈরি। সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপারে থাকলেও তার জন্য আমাকে এখানে আসতেই হতো।
আনিসঃ আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া।তিনি আমার কাছে আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দিয়েছেন।
এবার শান্তিতে চোখ বুজতে পারলেই আমার মুক্তি। ছোট ছেলের সংসার দেখে মরতে পারছি এটাই বা কম কিসের? আমিতো আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম।আমি ভেবেছি আকশি কখনও আমার বুকে ফিরে আসবে না।
ফিহাঃ বাবা,টেবলেটকে কোথায়?
আনিসঃ টেবলেটকে আমি সার্ভেন্টের সাথে বাজারে পাঠিয়েছি।বাড়িতে থাকতে থাকতে ও বোর হয়ে যাচ্ছে। তাই ভাবলাম বাজার থেকে ঘুরে আসুক ভালো লাগবে।
ফিহাঃ বাবা,একটা কথা জিজ্ঞেস করা ছিলো?
আনিসঃ হ্যাঁ,মা বলো।
ফিহাঃ আপনারা এতো নাম থাকতে কুকুরের নামটা টেবলেট কেন রাখলেন?
আনিসঃ আকশি টেবলেট খেতে ভীষণ পছন্দ করতো।যেখানে টেবলেটের পাতা দেখতো সেখান থেকেই খেয়ে নিতো।ওর জন্য ঔষধের পাতা লুকিয়ে রাখতাম।তারপরেও খুঁজে নিয়ে খেয়ে নিতো।একবার সমস্যা হয়ে গেলো।কিছু দিন হসপিটালে এডমিটও ছিলো।ইনজেকশনের ভয় দেখিয়ে এই টেবলেট খাওয়ার অভ্যাস ছারিয়েছি।যেহেতু ওর পছন্দ ছিলো টেবলেট তাই যখন কুকুর ছানা কিনে আনলাম তখন এটার নাম টেবলেট রেখে দিলো।ছোট বেলার কথাগুলো মনে হলে এখনো লজ্জা পায় আকশি।
ফিহাঃ অদ্ভুত, কেউ টেবলেট খেতে এতো পছন্দ করে।আমারতো দেখলেই ভয় করে।এত বড় বড়। ওগুলো গিলতেও কষ্ট হয়।
আনিস চৌধূরী বিনিময়ে মুচকি হাসলো।অনি তার দাদাভাইয়ের সারা বেড জুড়ে হামাগুড়ি দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কখনও এটা ধরে তো কখনো ঐটা।পুরো রুম জুড়ে তার রাজত্ব। বড্ড দুষ্ট হয়ে গেছে সে।কারো কথা শুনে না।এটা টান দিয়ে ফেলে দিবে,ঐ টা ছুড়ে মারবে।ফিহাকে জ্বালিয়ে মারে।তবু্ও ফিহা একটুও বিরক্ত হয় না।মিনিটের মধ্যে সারা রুম তোলপাড় করতে ওস্তাদ অনি।দুষ্টুমী করে খিলখিল করে হাসে।
ফিহাঃ মা-মণি ঐটা দাদাভাইয়ের চশমা।ধরে না ভেঙে ফেলবে তো।এতো দুষ্টুমী করো কেন তুমি?
আনিসঃ একদম বাবার মতো হয়েছে। আকশিও এমন দুষ্টুমী করতো।ওকে সামলাতে আমার হাল-বেহাল হয়ে যেতো।
ফিহাঃ অনেক দুষ্ট হবে বাবা।এখনি হামাগুড়ি দিয়ে এটা, সেটা ভেঙে ফেলে।বকা দিলে খিল খিল করে হাসে।কোন কথা শুনে না।ভীষণ বজ্জাত।এখনি যা দুষ্টুমি করে।আরো বড় হলে আল্লাহ জানে কি করবে?
আনিস চৌধুরী অনিকে কোলে বসিয়ে দিলেন।অনি থাবা মেরে তার থেকে খালি চায়ের কাপটা নিয়ে নিলো।কাপ হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগলো।
ফিহাঃ মা-মণি রেখে দেও।
আনিসঃ থাক বউমা।ভেঙে ফেললে নতুন কিনে নিবো।
ফিহাঃ তার জন্য নয় বাবা।ভেঙে গেলে কাচের টুকরো দিয়ে ব্যাথা পাবে তো।
আনিস চৌধুরী অনির সাথে সময় দিতে লাগলো।আজকাল দিনগুলো তার ভালোই যায়।সারাদিন অনির সাথে হেসে,খেলে কাটায়।ফিহা নিজ হাতে রান্না করে।টেবলেট অনিকে পাহারা দেওয়া,ওর সাথে খেলা করা,সারা বাড়ি ঘুরে দেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকে।সবার দিন আনন্দে কাটে।বর্তমানে অনি হাতের কাপটা বেডে ফেলে দাদাভাইয়ের চোখ থেকে চশমা কেড়ে নিলো।
ফিহাঃ নাহ অনি।তুমি বাবাকে বড্ড বেশি জ্বালাতন করছো।চলো তোমায় শীতের কাপড় পরিয়ে দেই।এটা তো নষ্ট করে ফেলছো।
আনিসঃ আরেকটু থাকুক আমার কাছে। তুমি বরং শীতের কাপড় দিয়ে যাও আমি পরিয়ে দিবো।
ফিহাঃ আচ্ছা বাবা।আপনি রাখুন ওকে।আমি রাতের খাবারের ব্যবস্থা করি।একটু সাবধানে রেখেন।চোখের আড়াল হলেই দুষ্টুমীতে মেতে উঠবে।আমি শীতের কাপড় দিয়ে যাচ্ছি।
???
অনির শীতের কাপড় দিয়ে,ফিহা কিচেনে রান্না করতে চলে গেল।দিনকাল ভীষণ ভালো কাটছে তাদের। আদিয়াত এখন নিজেদের ব্যবসা সামলায়। এক মাস পর আদিয়াত ও অনন্যার বিয়ে।সাফান, চৌধুরী কোম্পানিতে ভালো পোস্টে চাকরী করে।সবসময় আকশির সাথেই থাকে।সাফান চাকরীতে যোগ দেয়ার কিছু দিন পর ছোট-খাটো অনুষ্ঠানে করে সারার সাথে বিয়ে হয়েছে। সারার বাবা অবশ্য এই বিয়েতে প্রথমে মত দিতে চাইনি।কিন্তু আকশি ও ফিহা অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে বিয়েতে রাজী করেছে।রিয়ানা এখন জেলে।দুধের ফিডারে ঘুমের ঔষধ পেয়ে পুলিশের কাছে প্রমাণ সহ কমপ্লেন করেছে আকশি।রিয়ানা যাতে টাকা দিয়ে বের না হতে পারে তার জন্য ডাবল টাকা দিয়ে পুলিশকে হাত করে রেখেছে আকশি।
সন্ধ্যায় ক্লান্ত শরীর নিয়ে অফিস থেকে ফিরলো ফিহা।টেবলেট ড্রয়িং রুমের আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। অনি এখনো আনিস চৌধুরীর কাছে আছে।এই সময়টা অনি ওর দাদার কাছেই থাকে।আকশি ফ্রেস হয়ে ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে দেখলো ডেসিং টেবিলের ওপর ধোঁয়া ওঠা গরম কফি।মুচকি হেসে মগ হাতে নিয়ে চুমুক দিলো।ওমনি সারাদিনের ক্লান্তি উধাও হয়ে গেল।এই আড়াই মাসে নেশা হয়ে গেছে এটা।অফিস থেকে এসে ফিহার হাতের বানানো কফি না খেলে ভালো লাগে না।
রাতের খাবার একসাথে খেয়ে যে যার যার রুমে ঘুমাতে চলে গেলো।ফিহা অনিকে ঘুম পারাতে চাইলো।কিন্তু অনি দুষ্টুমী শুরু করেছে।ফিহা অনিকে নিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। অনি বারান্দার গ্রিল ধরে খেলছে।পেছন থেকে এক জোড়া হাত এসে ফিহাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।কানের কাছে এসে গুণগুণ করে গান গাচ্ছে সে।মি.আকশি কি গান শুনচ্ছে ফিহাকে চলুন আমরাও একটু শুনে আসি?।
♪♪♪♪♪♪♪♪♥♥♥♪♪♪♪♪♪♪♪♪
তোর চেয়ে আর কে বেশি, বাসবে আময় ভালো
আঁধার ভরা জীবনে, তুই তো আশার আলো।
তুই তো আমার সব রে পাগল,তুই তো আমার সব,
তুই তো আমার বেঁচে থাকার, বড় অনুভব। (×২)
জীবন যখন থমকে দাঁড়ায়, নানারকম বাহানায়
তুই সে জড়িয়ে আমায়, বাঁধিস নতুন ভরসায়।(×২)
তুই তো আমার সব রে পাগল,তুই তো আমার সব,
তুই তো আমার বেঁচে থাকার, বড় অনুভব। (×২)
তোরি চোখে দেখি আমি,ছোট্ট সুখের পৃথিবী,
মনের ভেতর থাকিস রে তুই, হয়ে প্রেমের ছবি।(×২)
তুই তো আমার সব রে পাগল,তুই তো আমার সব,
তুই তো আমার বেঁচে থাকার, বড় অনুভব। (×২)
♪♪♪♪♪♪♪♪♪♥♥♥♪♪♪♪♪♪♪♪♪
???
গানের গলা খারাপ নয় আকশির।ফিহা মনোযোগ সহকারে স্বামীর গান শুনছে।গান শেষ হতেই ফিহা বেশ কয়েকবার গলা ঝেড়ে বললো।
ফিহাঃ হঠাৎ জনাব গান গাইলো যে।সারাদিন অফিস করে ক্লান্ত হয়ে কারো আবার গান গাইতেও মন চায়।
আকশিঃ না, মন চাইলো তাই গাইলাম।কেন গাইতে পারি না।তা কেমন হলো?
ফিহাঃ চলে কোনরকম।তবে বেশি ভালো নয়।
ফিহা মুখ টিপে হেসে কথাটা বলে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো আকশি চোখ দুটো ছোট ছোট করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
ফিহাঃ এভাবে তাকিয়ে থাকার কিছু হয়নি।যা সত্যি তাই বলেছি।আজ ভালোবাসা মনে হচ্ছে উথলে পরছে।ঘটনা কি মি.চৌধুরী??(ভ্রু উঁচু করে)
আকশিঃ কোন ঘটনা নেই মিসেস চৌধুরী। আমার মন চাইলো আমার বউকে গান শুনাতে তাই শুনালাম।
ফিহাঃ নেও ধরো তোমার মেয়েকে।আমি বিছানা করবো।এখন একটু তাড়াতাড়ি ঘুমাও।নয়তো সকালে অফিস যেতে চাইবে না।
অনিকে আকশির কোলে দিয়ে চলে যেতে নিলো।আকশি ফিহার এক হাত ধরে হেচকা টান দিতেই আবার সামনে চলে এলো।
ফিহাঃ কি হলো এটা?আমি রুমে যাবো।
আকশিঃ একটু পরে।আমরা এখন একসাথে চাঁদ দেখবো।
ফিহাঃ মেয়ের ঠান্ডা লেগে যাবে অনির আব্বু।তোমার যে মাঝে মাঝে কি হয় আমি নিজেও বুঝি না।
আকশিঃ আমাদের মেয়ে অলরেডি কিছু সময় পর ঘুমিয়ে যাবে। আচ্ছা ফিহা একটু ভাবো তো।গত চারটা মাসে কি থেকে কি হয়ে গেলো।কোথায় তুমি ছিলে আর কোথায় আমি।
ফিহাঃ এসব কথা শোনার টাইম নেই আমার। তোমার সাথে এখন কথা শুরু করলে তুমি শেষ করার নাম নিবে না।তারপর দেখা যাবে আগামীকাল অফিস করতে তোমার কষ্ট হবে।
আকশিঃ ভালোবাসি মিসেস চৌধুরী। তুমি না এলে হয়তো আমাদের জীবনটাই এলোমেলো হয়ে যেতো।
ফিহাঃ আমিও ভালোবাসি মশাই আপনাকে।এখন আপনি কি আমার হাতটা দয়া করে ছারবেন।মেয়েটা এখানে থাকলে নির্ঘাত ঠান্ডা লেগে যাবে।
(কোমড়ে দুই হাত রেখে কঠিন গলায়)
আকশিঃ এখন তো আমার নিজের মেয়ের ওপর হিংসে হয়।তুমি সবসময় অনিকে নিয়ে থাকো। আমার কথা চিন্তাও করো না।(মুখ গোমড়া করে)
ফিহাঃ তুমি আবার রাগও করতে পারো।ভূলে যেয়ো না আমার মিসেস চৌধুরী হওয়ার পেছনে অবদান শুধু আমার মেয়ের অন্য কারো নয়।তাই ওর সাথে হিংসে করা ছেড়ে দেও।
আকশিঃ তা ঠিক।এই ছোট্ট পরীটা না থাকলে হয়তো তোমাকে পেতাম না।অনি বড় হলে কি তুমি ওকে জানাবে আমরা ওর বাবা-মা নয়?
ফিহাঃ প্রশ্নই উঠে না।অনি আমাদের পরিচয়ে বড় হবে।ও জানবে আমরাই ওর বাবা-মা। বড় হয়ে ও যদি অন্য কারো থেকে জানে তাহলে জানুক।কিন্তু আমরা কখনও জানাবো না।এতে অনি নিজের সাথে যুদ্ধ করা শুরু করবে।হীনমন্যতায় ভুগবে। যেটা আমি কখনও চাই না।
আকশিঃ তোমাকে আমি এই জন্য এতো ভালোবাসি মিসেস চৌধুরী। সাথে আমাদের ছোট মা-মণি তো আছেই।তোমরাই আমার এখন সব।
ফিহাঃ আমারও।(মুচকি হেসে)
আকশি ও ফিহা দুজন চোখ বন্ধ করে অনির মাথায় চুমু খেলো।ফিহা অনিকে একহাতে জরিয়ে রেখেছে। আর আকশি ওদের দুজনকে এক হাতে জড়িয়ে ধরেছে।আর অনি পরী অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।
ভালো থাকুক এরকম ছোট পরিবারগুলো।সেই কামনাই করি আমরা সবাই। ছোট ছোট খুশিগুলো নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করুক।
______________(সমাপ্ত)_______________