#ভালোবাসায়_বন্দিনী
#পর্ব_১৮
#জান্নাতুল_নাঈমা
রুদ্র রুম ছেড়ে বেরিয়ে যেতেই হৈমী ছুটে বাথরুম গিয়ে চোখে, মুখে পানি দিলো। বুকের ভিতর টা অস্বাভাবিক ভাবে ধুকধুক করছে তাঁর। কেমন অদ্ভুত শিহরন খেলে যাচ্ছে পুরো শরীর জুরে। জোরে জোরে কয়েকদফা শ্বাস নিয়ে দুহাত ভিজিয়ে গলায় হাত চেপে ধরে রইলো।পুরো গলা জুরে যেনো ঝিঁঝি ধরে আছে। গলার সাথে যেনো কিছু লেপ্টে আছে এখনো এই অনুভব টা যতোক্ষণ না যাচ্ছে ততোক্ষণ কিছুতেই শান্তি পাবে না সে। আরো কয়েকবার হাত দিয়ে গলা মুছে বাথরুম থেকে বেরিয়ে তয়ালে দিয়ে চোখ, মুখ মুছে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
নিজেকে দেখে এ মূহুর্তে নিজেরই ভীষণ অচেনা লাগছে। আয়নায় যেনো দু চোখ স্থির রাখা যাচ্ছে না ইশ কি যন্ত্রণা ভেবেই দু হাতে চোখ, মুখ ঢেকে ফেললো। রুদ্র যাওয়ার আগে বলে গেছে “সুন্দর করে মাথায় কাপড় দিবে যেনো বউ বউ ভাব আসে এমনভাবে বের হবে। আর যদি না হও তাহলে বাঘের হাতে পুচকো বিড়ালের হেরে যাওয়ার দৃশ্য দেখবে সবাই। হৈমী দ্যা সুপার ওমেন তখন হেরো ওমেন হয়ে যাবে”
রুদ্রর কথা মনে পড়তেই নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে ওড়না মাথায় চাপালো। আর যাই হোক সে হেরে গেছে আর সেটা সবাই জেনে যাবে এটা হতে পারে না। যা হয়েছে এর শোধ পরে নেওয়া যাবে ভেবেই লম্বা এক শ্বাস ছাড়লো। সাজ গোজ ঠিকঠাক করে নিয়ে ওড়নাটা বেশ ভালোভাবে মাথায় চাপিয়ে রুম থেকে বের হলো হৈমী।
সোফায় নয়ন বসে আছে পাশেই মাহের চুপচাপ বসে আছে পরী মাহেরের কোলে বসে চকলেট খাচ্ছে। ওদের দেখে হৈমীর ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে ওঠলো ।ঝড়ের বেগে সেখানে গিয়ে কোমড়ে দু হাত গুজে বললো,
— কি ব্যাপার চকলেট কি পরী একাই খাবে? আমারটা কোথায় হুম? নয়নের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বললো “আসতে এতো লেট? তোর সাথে কোন কথা নেই কাট্রি”।
নয়ন ওঠে দাঁড়ালো সেও তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে হৈমীর হাতটা চেপে ধরে বললো,
— রুমে চল কথা আছে।
— কি বলবি তুই আসছে আমার কথা শোনাতে সড় তো। কাল থেকে ফোন করছি তুই ধরেছিস? তোর সাথে কোন কথা নেই। বলেই নয়নের হাত ছাড়িয়ে মাহেরের পাশে গিয়ে বসলো হৈমী। তারপর মাহেরের দিকে চেয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে বললো,
— ভাইয়া আমার চকলেট কোথায়?
মাহেরের বুকের ভিতর যে কি যন্ত্রণা বয়ে যাচ্ছে তা হয়তো কাউকে বোঝাতে পারবে না সে। বুকের উপর পাথর চেপে আজ সে সুখনীড়ে এসেছে শুধুমাএ হৈমী খুশি হবে বলে। কিন্তু হৈমী এভাবে তাঁর কাছে আসলে সে যে অনেক বেশী ভেঙে পড়বে। এক ঢোক গিলে নিয়ে পকেট থেকে দুটো কিটকাট চকলেট বের করে মৃদু হেসে বললো,
— এগুলো তোমার।
— ওয়াও থ্যাংকিউ কিউট ভাইয়া। বলেই চকলেট দুটো হাতে নিয়ে নয়নের দিকে চেয়ে ভেঙচি কাটলো হৈমী।
নয়ন বিরক্তি চোখ, মুখে বললো,
— এবার চল কথা আছে।
হৈমীও ওঠে পড়লো মাহেরের দিক চেয়ে বললো,
— তুমি বসো আমি গিটার নিয়ে আসছি আজকে আমরা অনেক আড্ডা দিবো অনেক মজা করবো। ঐ রোবট টা কে সঙ্গে নেবো না ওকে নিরামিষ একটা। বলেই নয়নের হাত ধরে নিয়ে নিজের রুমের দিক গেলো।
মাহেরের দু চোখ ভরে এলো পরী মাহেরের গালে আলতো হাত রেখে বললো,
— বয়ফেলেন তুমি কি মোটা হয়েচো?
মাহের নিজেকে সামলে নিয়ে জোর পূর্বক হেসে বললো,
— কেনো লিটল ওয়াইফ এটা বলছো কেনো?
— তোমাল গাল দুটো মোটা লাগচে তো,চোখ দুটোও মোটা লাগচে।
অতিরিক্ত কান্নার ফলে মাহেরের এই অবস্থা বাচ্চা মেয়েটা খেয়াল করেছে অথচ হৈমীর চোখে সেটা পড়েনি। পড়বে কি করে সে কি কখনো সেভাবে তাঁর চোখের দিকে চেয়েছে?সেভাবে কখনো লক্ষ করেছে তাঁকে? করেনি তো আর কখনো করবেও না। যদি মাহের তাঁর মনের কথা রুদ্র আসার আগেই হৈমীকে জানাতো, যদি হৈমী তাঁর চোখের ভাষা পড়তে পারতো, বুঝতে পারতো তাহলে কি হৈমী তাঁর ভালোবাসাকে গ্রহণ করতো?খুব জানতে ইচ্ছে করে তাঁর যে ইচ্ছের কোন মূল্য নেই। যে ইচ্ছের কোন নাম নেই ভেবেই বুকচিরে এক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।
.
হৈমী গিটার নিয়ে বাইরে আসতেই দেখলো রুদ্র মাহেরের সাথে কথা বলছে আরো কয়েকজন ছেলে বসে আছে সোফায় চেয়ারে। নয়ন বিরক্ত হয়ে হৈমীর পিছন পিছন হাঁটছে। রুমে নিয়ে গিয়ে শুধু নয়নকে জরিয়ে ধরে অনেকগুলো সরি বলেছে হৈমী৷ তাকে ছাড়াই বিয়ে টা হয়ে গেলো অথচ দুজনেরই দুজনের বিয়ে নিয়ে কতোশত প্ল্যান ছিলো। জীবনটা আসলে প্ল্যান মাফিক চলে না তাই যদি চলতো তাহলে কারো জীবনে অপূর্ণতা থাকতো না। সরির পাল্লা শেষ করে বলেছে আজ রাতে তাঁর সাথে থাকতে বাকি কথা রাতে বলবে। নয়নকে কিছু বলার সুযোগই দেয়নি বলেছে সব রাতে শুনবে। আপাতত এনজয় করি সবাই মিলে।
.
রুদ্র গম্ভীর মুখে রোবটের মতো বসে টুকটাক কথাবার্তা বলছে। মাহেরও চুপচাপই বসে আছে। হৈমী গিটার নিয়ে সেখানে যেতেই রুদ্রর কয়েকজন বন্ধুরা তাকিয়ে রইলো হৈমীর দিকে। একজন আরেকজনের কানের কাছে ফিসফিস করে বলতে লাগলো এটাই হৈমী এটাই রুদ্রর বউ। হৈমী তাদের তাকানো আর ফিসফাস দেখে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বললো,
— কি দেখছেন আর ফিসফাস করছেন কেনো আপনারা? আমি জানি আমি যথেষ্ট সুন্দরী একটা মেয়ে। ফিসফিস না করে সরাসরি বললেই আমি খুশি হবো। বাই দ্যা আপনাদের ফাটা কপাল, শুনেন ফিসফাস করুন যাই করুন ভুলেও ক্রাশ খাবেন না আবার তাহলে ছ্যাঁকা খাওয়ার হাত থেকে আপনাদের কেউ বাঁচাতে পারবে না। এই আমিও না কারন এই যে রোবটের মতো সটাং হয়ে বসে আছে (রুদ্রর দিক ইশারা করে) এই লোকটা কালকেই আমাকে তিন ধমক দিয়ে তিন কবুল বলিয়েছে তাই আমি এখন তাঁর বাগদত্তা।
বুকটা হুহু করে ওঠলো মাহেরের। রুদ্র বিরক্তি চাহনীতে তাকালো হৈমীর দিকে। নয়ন রুদ্রর বিরক্ত বুঝতে পেরে হৈমীর কাঁধে হাত রেখে চুপ করেত বললো।এদিকে রুদ্রর বন্ধু রা হৈমীর কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে। কাকে বিয়ে করেছে রুদ্র বাপরে বাপ এত্তো কথা বলে কেউ আর কিসব কথা ভেবেই রুদ্রর দিকে তাকালো।রুদ্রর মুখোভঙ্গি দেখে সবাই এক ঢোক গিলে হৈমীর দিকে চেয়ে এক স্বরে বললো,
— আসসালামু আলাইকুম ভাবি!
হৈমী শান্ত হলো খানিকটা সালামের জবাব দিয়ে বললো,
— ওওও আপনারা ওনার ভাই? কই নয়না আপুর বিয়েতে তো দেখিনি যাইহোক এসেছেন বেশ ভালো হয়েছে। বলেই মাহেরের দিকে চেয়ে বললো,”মাহের ভাইয়া গান ধরো তো একটা এরা সবাই জানুক তুমি কতো ভালো গান গাইতে পারো” বলতে বলতেই মাহেরের পাশে গিয়ে বসলো হৈমী।
মাহের পরে গেলো বেশ অস্বস্তি তে রুদ্র থাকা অবস্থায় হৈমী রুদ্রর পাশে না বসে মাহেরের পাশে বসেছে৷ রুদ্র একটু অন্য ধাচের মানুষ এর জন্য হয়তো অন্যরকম কিছু হতে পারে তাছাড়া রুদ্রর বন্ধু রাও মাইন্ড করতে পারে। তাই চট করে মাহের ওঠে পড়লো বেশ অস্বস্তি নিয়েই বললো,
— আজ গান থাকুক হৈমী। আজ তোমাদের জীবনের একটা বিশেষ দিন। সকলেই এসেছে কথা বলো পরিচিত হও আমি একটু বাইরে যাচ্ছি। গান না হয় অন্যদিন হবে।
হৈমী গিটার টা নিজের কোল থেকে সোফায় রেখে চট করে ওঠে মাহেরর হাতে ধরে বাচ্চা দের মতো বায়না শুরু করলো,
— একটা গান করো না,,, প্লিজ প্লিজ প্লিজ।
রুদ্র এতোক্ষণ চুপ থাকলেও এবার বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়লো। চোয়াল শক্ত হয়ে এলো তাঁর। নয়ন ভয়ে এক ঢোক গিলে দ্রুত হৈমীর কাছে গিয়ে মাহেরের থেকে হৈমীর হাত ছাড়িয়ে নিলো। রুদ্রর বন্ধু রা হৈমীর আচরন দেখে রুদ্রর দিকে তাকাচ্ছে বার বার।আর ভাবছে রুদ্রর মতো সিরিয়াস একজন মানুষ এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করে বসলো কেনো? এটুকু সময়ে বেশ বুঝেছে মেয়েটার স্বভাব রুদ্রর থেকে পুরোই বিপরীত এবং বোশী বাচ্চামো।
— তুই এমন করছিস কেনো? তোর বিয়েতেও বুঝি ভাইয়া কে গান গাইতে নিষেধ করবি তুই? তখন তো ঠিকি ধেই ধেই করে নাচবি আর গান শুনবি। আর আমার বেলায় নিষেধ তাইনা। নাকি তোর আগে আমার বিয়ে হইছে বলে হিংসা করছিস আরে ইয়ার টেনশন নিস না তোকেও বিয়ে দিয়ে দিবো। বলেই রুদ্রর বন্ধু দের দিকে চেয়ে বললো, আপনারা সিঙ্গেল তো সবাই ? বললো হৈমী।
মাহের অসহায় চোখে তাকালো হৈমীর দিকে। রুদ্র দুহাত মুঠ করে রেখেছে রাগে। রুদ্রর বন্ধু রা জোর করে হাসছে আর আমতা আমতা করছে।এমনভাবে হৈমী জিগ্যেস করলো যেনো তাঁর এক বান্ধবী কে রুদ্রর সবগুলো বন্ধুর সাথে বিয়ে দিয়ে দেবে আজ।
হৈমী একাই এতোগুলো ছেলের অবস্থা নাজেহাল করে ছেড়েছে শুধুমাএ মুখ চালিয়ে । তাই মুখ বন্ধ করার জন্য রুদ্র হৈমীর দিকে এগুতে নিতেই দাদু এসে পড়লো।
— কি করছো তোমরা? গান, বাজনা পড়ে হবে বাচ্চা দের খাওয়া শেষ এবার তোমরা আসো। রুদ্র দাদু ভাই তোমার বড় ভাই এসেছে। বললো দাদু।
মাহের স্বস্তির এক শ্বাস ছাড়লো দাদু সঠিক টাইমে এসেছে নয়তো হৈমীকে রুদ্র এখন ঠিক কি বলতো, কি করতো ভাবতেই মাহেরের বুক মুচড় দিয়ে ওঠছে। বেশ চিন্তা হচ্ছে তাঁর রুদ্রর মতো বদমেজাজি গম্ভীর ছেলের সাথে হৈমীর মতো সহজসরল ছেলেমানুষি স্বভাবের মেয়েটা সারাটাজীবন কাটাতে পারবে তো ?
.
বাইরে তাবু টাঙানো হয়েছে ৫০জনের জন্য চেয়ার টেবিলের ব্যাবস্থা,খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানেই খেতে দেওয়া হয়েছে সবাইকে।
হৈমী খাচ্ছে না শুধু খাবার নাড়াচাড়া করছে। কারন তাঁর মুখোমুখি রুদ্র বসেছে বেশ কঠোর চাহনীতেই চেয়ে দেখছে তাঁকে। যার ফলে খাবার গলা দিয়ে নামছে না। মেজাজ টা খারাপ লাগছে “এভাবে চেয়ে থাকার কি আছে অসহ্য সিনেমার ভিলেনদের থেকেও ভয়ংকর চাহনী উফফ!ভাবলো হৈমী।
.
খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হতেই রেদওয়ান শেখ ফোন করে জানিয়েছে তাঁর জরুরি মিটিং পড়ে গেছে তাই রাতে এসে দেখা করে যাবে। রাদিফ এসে হৈমীর সাথে দেখা করে গিফ্ট দিয়ে তাঁদের সাথে বসেই দুপুরের খাবার খেয়ে গেছে।
এখন সবাই রেষ্ট নিচ্ছে। রুদ্রর পরিচিত সকলেই হৈমীর সাথে অল্পস্বল্প পরিচিত হয়ে চলে গেছে। নিরবের বউ মিতুও এসেছিলো তার সাথেও বেশ আড্ডা দিয়েছে হৈমী৷ মিতু তো হৈমীকে ভীষণ পছন্দ করেছে যা নিরব বললো রুদ্র কে।
.
ফোনে কথা বলছে রুদ্র। মাহের পরী আর এলার সাথে গল্প করছে। হৈমী আবারো গিটার নিয়ে এলো বসার রুমে। সাদমান রুদ্রর পাশ থেকে ওঠে হৈমীর পাশে গিয়ে জিগ্যেস করলো,
— কি পিচ্চি গিটার বাজিয়ে শোনাবে নাকি?
— না গো ভালো ভাইয়া এটা মাহের ভাইয়ার। আমরা সবাই ভাইয়ার কাছে প্রতি শুক্রবার গান শিখি তাই ভাইয়া এটা এখানেই রেখে যায়। এখন ভাইয়া আমাদের গান গেয়ে শোনাবে তাই নিয়ে এলাম।
— বাহ দারুণ তো লেটস এনজয় বলেই হৈমীর দিকে হাতের তালু মেলে দিলো হৈমীও হাতে হাত মেলালো।
নয়ন এসব দেখে হৈমী আর সাদমানের কাছে এসে বললো,
— তুই কিন্তু বাড়াবাড়ি করছিস হৈমী।
— কেনো বাড়াবাড়ি কিসের নতুন বউ গান শুনতে চেয়ে কি মহাভারত অশুদ্ধ করে ফেলেছে নাকি? টিটকারি দিয়ে বললো সাদমান। নয়ন তীক্ষ্ণ চোখে সাদমানের দিকে একবার চেয়ে আবারো হৈমীর দিকে চেয়ে কিছু বলতে নিবে তার আগেই হৈমী গিটার নিয়ে মাহেরের কাছে চলে গেলো।
.
সকলের জোরাজোরি তে স্পেশালি নিজের প্রিয়তমার আবদার ফেলতে পারলো না মাহের।যদিও প্রিয়তমা এক পাক্ষিক তবুও তো প্রিয়তমা,তবুও তো ভালোবাসার মানুষ। হয়তোবা তাঁর ভালোবাসা একপাক্ষিক তবুও তো ভালোবাসে। তাহলে ভালোবাসার মানুষ টির আবদার কি করে ফেলে দেয়? বুক চিরে এক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো মাহেরের।
এতো হইহট্টগোল ভালো না লাগলেও হৈমীর মুখের খুশিটাতে তৃপ্তি পাচ্ছে খুব । এই হাসি,এই খুশিতেই তো এতোগুলো দিন নিজে সুখ পেয়েছে, খুশি হয়েছে তবে আজ হবে না কেনো শুধুমাএ সে অন্যকারো হয়ে গেছে বলে? নাহ এমন ভালোবাসা তো সে বাসেনি ভালোবাসা কখনোই কোন পরিস্থিতি তে ফুরিয়ে যায় না ভালোবাসা তো অমর, ভালোবাসা তো অফুরান। ভাবনার মাঝে হৈমী তাঁর সামনে একদম কাছে এসে দাঁড়ালো। বুকের ভিতরটা বেশ চাপ দিলো মাহেরের বুকটা কেমন যেনো অস্থির হয়ে গেলো খুব দুহাত মুঠ করে ফেললো। হৈমী গিটার এগিয়ে দিয়ে বললো,
— এই যে গায়ক সাহেব কোন বাহানা দিবে না বলছি৷ আর দিলেও এই হৈমী সেটা শুনবে না। গান গাইবে ব্যাস।বলেই মাহেরের ডানহাত নিয়ে গিটারে রাখলো।
কষ্টে বুকের ভিতর টা ভারী হয়ে এলো তাঁর। অসহনীয় লাগছে, নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মানুষ বলে মনে হচ্ছে, কি করে বোঝাবে তাঁর যন্ত্রণা সামনের মানুষ টা কে।
নয়ন বেশ বিরক্ত হলো আর যাই হোক নিজের ভাইয়ের কষ্ট সহ্য করা যায় না। কাঁটা ঘায়ে যেনো নুনের ছিটা দিচ্ছে। ভালোবাসার মানুষ কে অন্যকারো হতে দেখা কি কম কষ্টের?সেখানে আবার তাঁর ভাই কে ভালোবাসার মানুষের অন্যকারো হওয়া উপলক্ষে গান গাইতে বলা হচ্ছে। এগুলো কি সহ্য করা যায়? হৈমীকে বেশ বিরক্ত লাগছে নয়নের। দরকার পড়লে সব সত্যি জানিয়ে দেবে হৈমীকে তবুও নিজের ভাইকে মানসিক অত্যাচার করতে দেবেনা কাউকে। বেশ রাগ নিয়েই নয়ন হৈমী আর মাহেরে দিকে এগিয়ে গেলো। হৈমীর বাহুতে বেশ শক্ত করে চেপে ধরে বললো,
— কোন গান হবে না তুই আমার সাথে চল।
— আহ লাগছে এভাবে ধরেছিস কেনো? তুইও কি রোবট, কাঠ মিশ্রন হলি নাকি?
বোনের রাগ দেখে মাহের এক ঢোক গিললো। সত্যিটা বলে দেবে না তো? হৈমীকে ওভাবে ধরায় নিশ্চয়ই ব্যাথা পাচ্ছে ইশ নয়ন টাও না বড্ড বাচ্চা। ঠোঁটের কোনায় জোর পূর্বক হাসির রেখা টেনে মাহের বললো,
— আরে তোরা কি করছিস আমি গান গাইবো তো বলেই গিটারটা হাতে নিলো। নয়নের দিকে চেয়ে বললো,যা তোরা বোস সামনে গিয়ে।
হৈমী খুশিতে লাফিয়ে ওঠলো নয়ন তীক্ষ্ণ চোখে ভাইয়ের দিকে একবার হৈমীর দিকে একবার তাকালো। মাহের মৃদু হেসে বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
— যা গিয়ে বোস পাগলী একটা!
সকলেই সোফায় বসা হৈমী আর নয়ন গিয়ে চেয়ারে বসলো। হৈমীর হাসিখুশি মুখটা তৃপ্তি সহকারে দেখে নিলো মাহের। রুদ্রর দিকে একবার তাকালো সে ফোনে কথা বলতে ব্যাস্ত। চোখ বন্ধ করে এক গভীর শ্বাস নিলো মাহের পুরনো কিছু স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে আসতেই বুকটা হুহু করে ওঠলো। পরী, এলা সকলেই দাঁড়িয়ে আছে কেউ কেউ বসে আছে। বাচ্চা দের মাঝে দাদু আর আসেনি। রুদ্রর পাশে আবির নিরব বসে আছে। সাদমান মাহেরের পাশেই দাঁড়ানো ফোনের রেকর্ড সিস্টেম চালু করে রেখেছে সে।
হৈমী ইশারা করে সমানে গান গাইতে বলছে সে কি খুশি তাঁর চোখে,মুখে। তা দেখে চোখ বুজে তৃপ্তির শ্বাস ছেড়ে গিটারে সুর তুললো মাহের,
Yeh dua hai meri rab se
Tujhe aashiqon mein sabse
Meri aashiqui pasand aaye
Meri aashiqui pasand aaye
Yeh dua hai meri rab se
Tujhe aashiqon mein sabse
Meri aashiqui pasand aaye
Meri aashiqui pasand aaye
Meri aashiqui pasand aaye
Tum hi ab kuchh kaho
Suljhaun kaise yeh mushkil
Haan tum hi ab kuchh kaho
Suljhaun kaise yeh mushkil
Jhooth bol ke hi
Rakh lo na tum mera yeh dil
Chaho to tod dena
Toota hi nahi yeh kab se
Yeh dua hai meri rab se
Tujhe aashiqon mein sabse
Meri aashiqui pasand aaye
Meri aashiqui pasand aaye
Meri aashiqui pasand aaye
Katra katra jee raha hoon
Lamha lamha mar raha hoon
Kaise khud ko main sambhalun tu bata
Tere bin hai soona soona
Mere dil ka kona kona
Tu kya jaane kaise itne din jiya
.
সকলেই চলে গেছে শুধু নয়ন আর রুদ্র রয়েছে সুখনীড়ে। বিকাল গড়িয়ে এখন সন্ধ্যা। কয়েকজন বাচ্চা রা বেশ ক্লান্ত হয়ে সন্ধ্যায়ই ঘুমিয়ে পড়েছে। আর কয়েকজন পড়তে বসেছে।কেউ কেউ আর্ট করছে কেউ কেউ আচার খাচ্ছে। বেশ গরম নয়নের অভ্যাস সন্ধ্যায় গোসল করা তাই সে গোসলে ঢুকেছে। হৈমী রুমে বসে একা একা বোরিং হচ্ছিল তাই রুম ছেড়ে বরে হলো। এদিক সেদিক ঘুরে রুদ্রকে খুঁজে পেলো না কিন্তু রুদ্র তো এ বাড়িই রয়েছে। রুদ্র যায়নি কারন তাঁর বাবা আসবে আটটার দিকে তাই ছাদে বসে সিগারেট খাচ্ছে সে।
খুঁজতে খুঁজতে ছাদে গিয়েই পেলো সে রুদ্র কে। কিন্তু আশ্চর্য বিষয় হলো সে রুদ্রর খোঁজ কেনো করছিলো? খুঁজতে খুঁজতে ছাদেই বা কেনো এলো?
কথাটা ছাদে গিয়ে রুদ্র কে দেখেই মাথায় নাড়া দিলো হৈমীর। রুদ্র পায়ের ওপর পা তুলে কাঠের চেয়ারে বসে সিগারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছে। হৈমীর হাত,পা কাঁপতে শুরু করেছে তখনকার ঘটনা মনে পড়তেই। এগিয়ে যেতে বুক ধুরু ধুরু করছে পিছিয়ে যেতেও ইচ্ছে করছে না। কখনো কখনো মন আসলে কি চায় তা ঠিক ভাবে বুঝে ওঠতে পারে না মানুষ। কেমন এক দোটানায় ভুগছে হৈমী। তবে প্রেমে পড়ার শুরুর দিকে একটা দোটনা থাকা খুবই সাধারণ ও স্বাভাবিক একটি বিষয়। মনের মধ্যে বারবার একটি প্রশ্ন উঁকি দেয়, আমি যাকে ভালোবাসি সেও কি আমাকে ভালোবাসে? কিন্তু হৈমীর মনে ভালোবাসার প্রশ্ন না এলেও সে ভালোবাসার অদৃশ্য এক দোটনায় পড়েছে। তাহলে কি সে প্রেমে পড়ে গেছে?
— কাম হেয়ার। (গম্ভীর আওয়াজে বললো রুদ্র)
হৈমী দোটনার মাঝে পড়ে হঠাৎ রুদ্রর কথা শুনে কেঁপে ওঠলো। মনে মনে ভাবলো “সত্যি কি পিছনে চোখ নিয়ে ঘুরেন ওনি আমায় দেখলো কি করে”?
— আই সেইড কাম হেয়ার। ধমকে বললো রুদ্র।
হৈমী আবারো কেঁপে ওঠলো কাঁদো কাঁদো মুখ নিয়েই এগিয়ে গেলো রুদ্রর সামনে। রুদ্র গম্ভীর চোখ মুখে চেয়ে সিগারেটে দুটো টান দিলো। হৈমী তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে নিজের দুহাত নিজেই মোচড়াতে শুরু করলো।
— চেয়ার টেনে বসো পাশে। গম্ভীর গলায় বললো রুদ্র।
— না বসবো না আপনি এসব কি ছাইপাস খাচ্ছেন? আপনিতো পুরোই খারাপ লোক ভালো কি কিছু নেই আপনার মধ্যে? বর্ডারে কোমড় ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আমতা আমতা করে বললো হৈমী।
— আছে তো।
— ভালো কিছুতো দেখিনা।
— সময় হলেই দেখাবো।
এক ঢোক গিললো হৈমী। প্রচন্ড অস্বস্তি লাগছে তাঁর রুদ্র কে সিগারেট খেতে দেখে।তাই ঝাঁঝালো গলায় বললো,
— আপনি এটা ফেলবেন আমার কষ্ট হচ্ছে কি বিচ্ছিরি গন্ধ বলেই ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললো।
রুদ্র আরামসে আরো কয়েকটান দিলো সিগারেটে। যেনো সে মজা পাচ্ছে এবার সিগারেট খেতে। এতোক্ষণ যেনো নুন ছাড়া তরকারি খেলো এখন নুন মিশিয়ে বেশ লাগছে। গোপন হাসিটা যেনো হৈমী সহজেই ধরে ফেলেছে তাই হুটকরেই রুদ্রর হাত থেকে কৌশলে সিগারেট টা নিয়ে নিচে ফেলে দিলো। রুদ্রর মুখ টা সাথে সাথে ভয়ংকর হয়ে গেলো চেয়ার ছেড়ে ওঠে আচমকাই সে এমন এক কাজ করলো যে হৈমী ভয়ে মা মা গো বলে চিৎকার শুরু করে দিলো। ভয়ে চোখ, মুখ লাল বর্ন ধারন করলো। প্রানপনে রুদ্রর হাত ধরে উপরে ওঠার চেষ্টা করছে অথচ রুদ্র নিচু হয়ে এক হাত বর্ডারে রেখে আরেক হাতে হৈমীর এক হাত ধরে রেখেছে।হৈমী রুদ্রর হাত ধরে ঝুলছে আর চোখ,মুখ খিচে চিৎকার করছে।
চলবে।