ভালোবাসায়_বন্দিনী #পর্ব_৩২

0
2291

#ভালোবাসায়_বন্দিনী
#পর্ব_৩২
#জান্নাতুল_নাঈমা

ড্রাইভার শরীফ কে পাঠিয়ে দিয়েছে ড.সুবর্ণা কে নিয়ে আসার জন্য। ড্রয়িং রুমে মাথা নিচু করে বসে আছে রুদ্র। সুরভী বেগম বেশ বকাঝকাই করলেন তাঁকে। রেদওয়ান শেখ কিছু বলার ভাষা পেলেন না। ছেলেকে বার বার বোঝানো সত্যেও হৈমীকে সবটা তো বলেইনি বরং মেয়েটার গায়ে হাত তুলেছে। বড্ড চিন্তায় পড়ে গেলেন তিনি। সব ঠিক থাকলেও ছেলের মাথা টা কেনো যে ঠিক থাকে না বুঝে পাননা তিনি। এতো রাগ, এতো জেদ তাঁর ছোট ছেলের হবে কখনো কল্পনাও করতে পারেননি। সুরভী বেগম মুখ ভাড় করে রুদ্রর পাশে বসে আছে। রেদওয়ান শেখ ড্রয়িংরুমে হাঁটাহাটি করছেন। উপরে হৈমীকে জরিয়ে ধরে বসে আছে নয়ন আর নয়না। রাগের বশে যখন হৈমীর গলা চিপে ধরেছিলো রুদ্র হৈমী নিভু নিভু চোখে অল্প আওয়াজ করতেই রুদ্রর হুশ ফিরে। আর ছেড়ে দেয় হৈমীকে। হৈমীও নেতিয়ে পড়ে বিছানায়। বিষয়টি আর চাপা থাকে না। এক এক করে সকলের কানেই কথাটা পৌঁছে যায়। তবুও ভয়ে কেউ টু শব্দটিও করেনা। একমাএ সুরভী বেগম বাদে।
.
ডক্টর সুবর্ণা এসে হৈমীকে দেখে কিছু মেডিসিন লিখে দেয়। শরীফ যায় মেডিসিন আনতে। রুদ্র চুপ করে বসে আছে। সুবর্ণা সকলকে বাইরে যেতে বলে। সকলে চলে যায়। রুমে এখন হৈমী, রুদ্র, আর সুবর্ণা ছাড়া কেউ নেই। হৈমীর গায়ে একটা পাতলা কাঁথা টেনে দিয়ে গেছে নয়না। মেয়েটার শরীর হালকা কাঁপছে। সেই কাঁপুনি দেখে ভ্রু কুঁচকে রুদ্র তাকালো সুবর্ণার দিকে।

— কি আমাকে মেরে ফেলবি তোর বউয়ের অসুস্থতা দুমিনিটে সাড়াতে পারলাম না বলে? বললো সুবর্ণা।

রুদ্র হৈমীর পায়ের কাছে বসে ছিলো। সুবর্নার কথা শুনে বিরক্তি চাহনীতে চেয়ে আবার চোখ মেঝেতে স্থির রাখলো। সুবর্ণা রুদ্রর পাশে বসে রুদ্রর হাতের ওপর হাত রেখে বললো,

— রাগ টা একটু কমা রুদ্র। এই রাগটাই তোর জীবনে কাল হয়ে দাঁড়াবে। আগামীকাল থেকে তোরা দুজন নতুন জীবন শুরু করবি৷ আর আজকে এসব ঘটালি। মেয়েটার মনের অবস্থা কি হয়েছে একবারো ভেবে দেখেছিস?

রুদ্র ওঠে পড়লো। সুবর্ণা লক্ষ্য করলো রুদ্রর কাবলীর পিঠের অংশ ভেজা। কালো কাপড় হওয়াতে পানি না রক্ত বোঝা যাচ্ছে না৷ তাই ভ্রু কুঁচকে ব্যাস্ত গলায় জিগ্যেস করলো,

— এই তোর পিঠে কি হয়েছে?

হৈমীর চিন্তায় খেয়ালই ছিলো না নিজের ব্যাথার কথা। সুবর্ণার কথায় তখনি কাবলী খুলে ফেললো। সুবর্ণা পিঠ দেখে আতঁকে ওঠে বললো,

— হায় আল্লাহ এসব কি? সত্যি করে বলতো কি হয়েছে? দেখি এখানে বোস ব্যান্ডেজ করতে হবে আবারো। কতোটুকু কেটেছে দেখি সেলাই করা লাগছে নাকি?

— এতো কথা বাদ দিয়ে কাজটা কর। তিনটে সেলাই পড়েছে।

সুবর্না ব্যান্ডেজ খুলতে খুলতে বললো,

— কাহিনী কি বলতো? জামাই বউ মিলে মারপিট করছিস নাকি?

— প্রাইম মিনিস্টার কে হুমকি দেওয়ার খবর নিশ্চয়ই শুনেছিস সেটারই ইনভেস্টিগেশনে গিয়েছিলাম। প্রাইম মিনিস্টারের বাড়ি থেকে ফেরার পথেই এট্যাক করা হয়। আমি ৯৫% নিশ্চিত ছিলাম এসবে জরিত ওনার নিজের লোকদের মধ্যেই কেউ। বাকি ৫% আমাকে এট্যাক করার পর নিশ্চিত হয়েছি। বাড়ির ঝামেলায় সাথে লোক নিতে পারিনি একাই গিয়েছিলাম। ফেরার পথে গাড়িতে ওঠতে যাবো তখনি এসব ঘটনা। বাড়ি ফিরেও শান্তি নেই সত্যি এখন আফসোস হচ্ছে ওর জায়গায় অন্য কোন মেয়ে হলে আজ এই পরিস্থিতি দাঁড়াতো না। সব যে খুলে বলবো তাঁরও উপায় নেই কখন মুখ ফস্কে কার সামনে কি বলে দেবে আর বিপদে পড়তে হবে আমাদের পুরো টিমের৷ নিচু গলা সবটা খুলে বললো রুদ্র।

সুবর্ণা এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। বললো,

— ডোন্ট ওয়ারি এতো চাপ নিচ্ছিস কেনো? সবটা খুলে বুঝিয়ে বল বুঝতে পারবে এতোটাও অবুঝ ও নয়। আর আফসোস করছিস কেনো? ভালোবেসে আফসোস করার মানে টা সিরিয়াসলি বুঝলামনা।

রুদ্র আড় চোখে তাকালো হৈমীর দিকে। চাপা এক শ্বাস ছেড়ে বললো,

— হুম ভালোবাসি ভালোবাসি বলে ওর বদ অভ্যেস গুলোকে ভালোবাসবো এমনটা তো না তাইনা।

— মানুষ যাকে ভালোবাসে তাঁর সবকিছুকেই ভালোবেসে ফেলে৷ তাঁর সকল বদ অভ্যেস গুলোকেও তখন ভালো লাগতে শুরু করে।

— ধরে নে আমি ডিফারেন্টভাবে ওকে ভালোবাসি। আমি ওকে ভালোবাসি, ওর বদ অভ্যেস গুলো কে নয়। ঘন্টাখানেক আগে যে অবস্থা শুরু করেছিলো ওর জায়গায় অন্যকেউ হলে হাত,পা ভেঙে বসিয়ে রাখতাম।

— হয়েছে গলা টিপে আধমরা তো করেই দিয়েছিস। আর কি বাকি রেখেছিস। দেখ রুদ্র রাগটা একটু কমা। আজ বউ হয়েছে কাল বাচ্চা হবে। আমার তো টেনশন হচ্ছে রাগের মাথায় বাচ্চার গায়ে একদিন হাত তুললেই তো বাচ্চা শেষ।

কথার ফাঁকে নতুন করে ব্যান্ডেজ করে দিলো সুবর্ণা। ড্রাইভার শরীফ আসার পরই সুবর্ণা বিদায় নিলো এবং জানালো কাল সপরিবারে আসবে।
.
গা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এসেছে হৈমীর। সুবর্ণা চলে যাওয়ার পর বলে বলে ওঠিয়ে অল্প খাওয়িয়ে ওষুধ খাওয়িয়ে দিয়েছিলো। তবুও জ্বরের মাএা বেশী। হঠাৎই কেমন নিশ্চুপ লাগছে সবকিছু। ঘুম আসছে না। পাশে মেয়েটার এভাবে পড়ে থাকা যেনো হজম করতে পারছে না রুদ্র। কথা শুনতে ইচ্ছে করছে খুব। গতরাতের ঘুমের ঘোরে করা পাগলামীগুলোও খুব মিস করছে৷ আবারো রাগ হচ্ছে তাঁর। কেনো চুপ হয়ে গেলো সব কিছু? কেনো হৈমী ঘুমের ঘোরে তাঁর কাছে আসছে না? খুব কাছে কেনো আসছে না?

মনের সাথে যুদ্ধ করে নিজের ভিতরের সব রাগ দূরে ঠেলে দিয়ে কাঁথা সড়ালো রুদ্র। হৈমী ঘুমের তালে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে রইলো। তা দেখে রাগ হলো রুদ্রর প্রচন্ড রাগ। ঘুমের ঘোরে কিসের অভিমান? কাছে কেনো আসছে না? কাঁথা দিয়ে হৈমীকে ঢেকে দিলো আবারো৷ পাশ ফিরে শুয়ে বিরবির করতে লাগলো,

— কেমন লাগে রুদ্র এবার বোঝ বউয়ের গায়ে হাত তোলার কতো জ্বালা। কি দরকার ছিলো এতো রিয়্যাক্ট করার? একটা চড়েই কি সীমাবদ্ধ থাকা উচিত ছিলো না? তুই একটু বাড়াবাড়িই করে ফেললি।

ভাবনায় ছেদ পড়লো হৈমীর উষ্ণ হাতের পরশে। পাশ ফিরে তাকালে দেখলো হৈমী এক হাতে তাঁর পিঠ জরিয়ে আছে। ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে ওঠলো রুদ্রর। কাঁটা জায়গায় হালকা ব্যাথা অনুভব হতেই আলতো করে হাত ধরে সড়িয়ে দিলো। তারপর হৈমীর দিকে ফিরে নিজেও কাঁথার ভিতর ঢুকে পড়লো। হৈমীর শরীরের সকল উষ্ণতা যেনো নিজের মধ্যে অনুভব করতে পারছে সে। যেই অনুভূতি তে রয়েছে কিছু কষ্ট কিছু সুখ। কিছু কষ্টটাকে ধ্বংস করে খুব সুখ সৃষ্টি করতে ইচ্ছে হলো তাঁর। তাই হৈমীর দিকে ঝুঁকে কপালে আলতো করে চুমু খেলো। তারপর গালে তারপর গলার লালচে কালো দাগটায় অসংখ্য চুমুতে ভরিয়ে দিলো। ঘুমের ঘোরে নড়েচড়ে ওঠলো হৈমী। রুদ্র তবুও থামলো না মন ভরে পুরো মুখ,গলায় চুমু খেতে লাগলো। এভাবে একসময় হৈমীর বুকে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে গেলো।
.
ভোরের দিকে ঘুম ভেঙে যায় হৈমীর। চোখ খুলে রুদ্র কে ওভাবে দেখে চমকে ওঠে। হাত দিয়ে সড়াতে নিতেই রুদ্ররও ঘুম ভেঙে যায়। রুদ্রর জেগে যাওয়া দেখে ভয় পায় হৈমী৷ ভিতর থেকে কান্না চলে আসে তাঁর। সেই কান্না অশ্রু হয়েও ঝড়ে পড়তে শুরু করে।
রুদ্র ভ্রু যুগল কুঁচকে কিছুক্ষন চেয়ে সরে যায়। হৈমী ধীরভাবে ওঠে বসে। আশে,পাশে চেয়ে ওড়নাটা নিয়ে গায়ে জরিয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াতেই রুদ্র বলে,

— রুমের বাইরে বের হবে না।

হৈমী কিছু বললো না রুদ্রর দিকে তাকালো না অবদি। বাথরুম গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে বেলকোনিতে গিয়ে চেয়ারে বসলো। মনে তাঁর হাজারো প্রশ্ন কিন্তু উত্তর নেই। কাল রাতের কথা মনে পড়তেই বুকটা হুহু করে ওঠছে। নিজেকে বড্ড একা লাগছে। চারদিকে যেনো রয়েছে শুধুই শূন্যতা। বুকের ভিতরটাও খুব খালি খালি লাগছে। বার বার মন মনকে প্রশ্ন করছে ‘মানুষ চিনতে তুই সত্যি ভুল করলি হৈমী? সারাক্ষণ বকবকিয়ে যেসব বলে যাস মানুষ টাকে, মানুষ টা সত্যি তাই’?
.
আটটা বাজে। রুদ্র ঘুম থেকে ওঠে ফ্রেশ হয়ে এসে বেলকোনিতে চেয়ে দেখলো হৈমী এখনো সেখানেই বসে আছে। কাছে গিয়ে হৈমী বলে ডাকতেই হৈমী পিছন ফিরে তাকালো। তাঁর সে চাহনী দেখে বুকের ভিতর খুব চাপ দিলো রুদ্রর। কিন্তু প্রকাশ করলো না। গম্ভীর গলায় বললো,

— ওঠে রুমে এসো।

হৈমী নিঃশব্দে ওঠে দাঁড়ালো। যা রুদ্রর ভিতর টা একদিকে যেমন পোড়ালো অন্যদিকে রাগিয়ে দিলো ভীষণ। রুদ্র কে পাশ কাটিয়ে হৈমী চলে গেলো রুমে।সারাক্ষণ বকবক করা মেয়েটার এমন নিশ্চুপ আচরণ হজম করতে পারছে না রুদ্র। দুহাত মুঠ করে হৈমীর পিছন পিছন গেলো। হৈমী বিছানায় বসতেই রুদ্র থেমে গেলো সেই সাথে অপ্রস্তুত হয়ে গেলো দুজনই।

খানিক সময় নিয়ে রুদ্রও বসলো বিছানায়৷ হৈমী কিছুটা সরে যেতে নিতেই রুদ্রর মেজাজ গরম হয়ে গেলো। শতচেষ্টা করেও নিজের ভিতরের রুদ্র টা কে চেপে রাখতে পারলো না। হৈমীর পিঠে একহাতে খুব শক্ত করে ধরে মুখোমুখি মুখ করে কঠিন স্বরে বললো,

— সমস্যা টা ঠিক কোথায়? এমন কেনো করছো? কেনো কথা বলছো না?

হৈমী ভয় পেয়ে গেলো আবারো। গলা দিয়ে স্বর বের করতে পারলোনা একটুও। চোখ বেয়ে শুধু নোনাপানি বেরিয়ে এলো। রুদ্র যেনো পাগল হয়ে গেলো৷ এক হাতে হৈমীর চোখের পানি মুছে আরেক হাতে সর্বশক্তি দিয়ে নিজের দিকে চেপে বলে যাচ্ছে,

— কথা বলো, কথা বলো বলছি। চুপ করে আছো কেনো?

হৈমী ভয়ে কাচুমাচু হয়ে নিচু গলায় বললো,

— আমি দাদুর কাছে যাবো। আমি থাকবো না এখানে৷

— হৈমী,,, চিৎকার করে ওঠলো রুদ্র।

হৈমী এবার শব্দ করেই কেঁদে ওঠলো। রুদ্রর প্রতি চাপা ভয়টা এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে রুদ্রর সব আচরনই তাঁর কাছে অস্বাভাবিক লাগছে।

কান্নার বেগ বেড়েই চলেছে। ক্লান্ত হয়ে পড়লো রুদ্র। মাথা তাঁর কাজ করছে না। ছেড়ে দিলো হৈমীকে। ওঠে দাঁড়ালো সিদ্ধান্ত নিলো রুম ত্যাগ করবে অতঃপর বাড়ি। রুম ছেড়ে বেরিয়েও গেলো। রুদ্র বের হওয়ার সাথে সাথে হৈমী পাগলের মতো নিজের ফোন খুঁজতে লাগলো৷ বালিশের নিচে ফোন পেয়েই তারাতারি ফোনটা নিয়ে দাদুর নাম্বার খুঁজতে লাগলো।

এদিকে রুদ্র সদর দরজা অবদি যেয়েও ফিরে এসেছে। আজকে বিয়ের অনুষ্ঠান কতোলোকজন আসবে৷ আজকের রাতটা নিয়ে কত-শত পরিকল্পনা ছিলো তাঁর। সবকিছু এভাবে নষ্ট হয়ে যাবে? নাহ হৈমীর সাথে এখুনি এই মূহুর্তে খোলাখুলি কথা বলতে হবে সবটা জানাতে হবে হৈমীকে। সত্যি তো স্বামী-স্ত্রীর মাঝে এতো গোপনীয়তা থাকা অনুচিত। সম্পর্কের মাঝে গোপনীয়তা মানেই সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি।

মনের ভাবনাকে শতভাগ প্রশ্রয় দিয়ে চলে যায় উপরে। হৈমী সবেই দাদুর নাম্বার ডায়াল করেছে।তখনি রুদ্র রুমে ঢুকে তাকে দেখেই ভয়ে থড়থড় করে কাঁপতে থাকে হৈমী৷ কাঁপাকাপিতে ফোনটাও পড়ে যায় নিচে৷ রুদ্র ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে এসে ফোন তুলতেই দেখে দাদুর নাম্বার ডায়াল করেছে। তাই বলে,

— দাদু তো আসছেই কেনো ফোন দিয়েছো এখন।

— আআমি এখানে থাকবো না। চলে যাবো আমি। আআপনি খুব খারাপ, খুব খারাপ। ভয়ে ভয়ে তোতলাতে তোতলাতে বললো হৈমী।

রুদ্র দ্রুত ফোন কেটে দিলো। রাগের বশে মেঝেতে ফোনটা ছুঁড়েও ফেললো। তা দেখে হৈমীর ভয় আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। ডুঁকরে কেঁদে ওঠলো সে।

কান্নার শব্দে হৈমীর দিকে চেয়ে দেখলো রুদ্র। এসব কি হচ্ছে বুঝতে পারছেনা সে। আজকের দিনে এমন টা না হলেও তো পারতো ভেবেই দুহাতে নিজের চুলগুলো টেনে ধরে চিৎকার করে ওঠলো।

— কেনো এমন করছো? কেনো ভয় পাচ্ছো?

হৈমী বিছানায় জড়োসড়ো হয়ে বসে পড়লো। মাথা কাজ করছে না তাঁর। রুদ্রর চোখ গুলো দেখে ভীষণ ভয় লাগছে তাঁর। রুদ্র ধীরে ধীরে কয়েক পা এগুতেই হৈমী কেমন করে পিছিয়ে গেলো। হৈমীর এমন অস্বাভাবিক আচরন দেখে রুদ্র হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে হৈমীর অনেকটা কাছে চলে যায়। হৈমী একদম পিছিয়ে যাওয়ার ফলে পিঠ দেয়ালের সাথে ঠেকে পড়লো। রুদ্র এগিয়ে গিয়ে দুহাতে হৈমীর গাল চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে বললো,

— এমন করো না হৈমী প্লিইইজ। আমাকে শান্ত থাকতে দাও। আমায় শান্ত করো তুমি। নয়তো খারাপ কিছু ঘটে যাবে। খুব খারাপ কিছু।

এমন কথা শুনে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠলো হৈমী। মনে হতে লাগলো তাঁর জীবনটা নরকে পরিণত হচ্ছে। যতো দিন যাচ্ছে ততো নরকে ডুবে যাচ্ছে সে।

— হৈমীহ,,, তুমি ভয় পাচ্ছো কেনো? তুমি তো খুব সাহসী কেনো ভয় পাচ্ছো বলো? আমি গুন্ডা মাস্তান এসব ভেবে ভয় পাচ্ছো? ভয় পেওনা সব টা বলবো আমি তোমায় তুমি শুধু একটু শান্ত হও। বলেই আরেকটু এগিয়ে কপালে চুমু খেলো।

হৈমীর শরীরটা ঘিনঘিন করে ওঠলো। কেনো জানি রুদ্রর কথা স্পর্শ কোন কিছুই হজম হচ্ছে না তাঁর। তাঁর এই অনীহা বুঝতে অসুবিধা হলো না রুদ্রর। পুরুষ মানুষের জেদ তখন আরো দ্বিগুণ বেড়ে যায় যখন নিজের করা স্পর্শে তাঁর স্ত্রী অনীহা দেখায়। সেই জেদ টুকু বজায় রাখার জন্য হলেও স্ত্রীর ওপর নিজের অধিকারটুকু ফলাতে পিছুপা হয় না পুরুষ মানুষ। রুদ্রও পিছুপা হলো না। সামান্য করা কপালে চুমুতে অনীহা প্রকাশ করার শাস্তি কি হতে পারে বুঝিয়ে দিলো রুদ্র হৈমীকে।
.
হৈমী নিঃশব্দে কেঁদেই যাচ্ছে। তাঁর কান্নায় রুদ্রর রাগ তরতর করে বেড়েই চলেছে। যদি দিন না হতো আর আজ অনুষ্ঠান না থাকতো তাহলে আজ পুরোপুরিই অধিকার সে ফলাতো। কিন্তু প্রথম অবস্থায় এভাবে কিছু পেতে চায় না। তাই শুধু কিস করে রাগ দমন করতে পারলো না, হৈমীর কামিজের এক পার্ট ওঠিয়ে পেটে সাজোরে এক কামড় দিলো। চাপা আর্তনাদ করে ওঠলো হৈমী। চোখ তুলে তাকালো রুদ্র। হৈমীর মুখটা দেখে মনে হলো কি করছে সে এসব, নিজের রাগ কেনো নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেনা? যতো যাই হোক হৈমীতো তাঁর মতো বুঝদার নয়। তাহলে সেও কেনো এমন অবুঝ হচ্ছে ? এমন পাগলামি করছে? নাহ যেভাবেই হোক রাগটা নিয়ন্ত্রণে আনতেই হবে। নয়তো কিচ্ছু সমাধান হবে না।

হৈমীকে কোলে তুলে নিয়ে বাথরুম ঢুকে গেলো রুদ্র। ঝর্না জুরে দিয়ে একসাথে ভিজতে শুরু করলো দুজন।
.
এদিকে পার্লারের লোক এসে হাজির অথচ বর, কোনের পাত্তা নেই। কেউ সাহস করে ডাকতেও আসছে না।বাধ্য হয়ে সুরভী বেগমই ডাকতে এলেন।কিন্তু ভিতর থেকে সাড়া পেলেন না। তাই ফিরে গিয়ে রাদিফকে বললেন রুদ্রকে ফোন করতে।

রুদ্র শাওয়ার নিয়ে তয়ালে পড়ে বেরিয়ে এসে হৈমীর জামাকাপড় সাথে তাঁর নিজের কাপড় নিয়েও আবার ভিতরে ঢুকে পড়লো।নিজে পোশাক পড়ে ওযূ করে নিয়ে হৈমীকে পোশাক পড়ে ওযূ করে বের হতে বলে নিজে বেরিয়ে পড়লো। উদ্দেশ্য দুজন একসাথে ফজরের কাযা নামাজ আদায় করা তারপর দুরাকাত নফল নামাজও আদায় করা।

“রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রাগ আসে শয়তানের কাছ থেকে। শয়তান আগুনের তৈরি। আর আগুন নেভাতে লাগে পানি। তাই যখন তোমরা রেগে যাবে, তখন অজু করে নেবে। ’ আর মুসলিম শরীফের এক হাদিসে আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে রাগের সময় নিজেকে সামলে নিতে পারে, সেই প্রকৃত বাহাদুর। আরেক হাদিসে বলা হয়েছে, রাগ দেখানোর সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, আল্লাহতায়ালা তাকে কিয়ামতের দিন পুরস্কৃত করবেন”

ছোট বেলা থেকেই রুদ্র নামাজ পড়ে। তাঁর মধ্যে ভালোগুন, খারাপ গুন উভয়ই রয়েছে। তবে সে সবসময় উপরওয়ালায় বিশ্বাসী। নিজের যেটুকু ভুল রয়েছে সেটুকু শোধরাবে সে কিন্তু তাঁর জন্য নিজের অর্ধাঙ্গিনীর ভুলটা ভাঙিয়ে দিতে হবে। তাঁর অর্ধেক অঙ্গই যদি ঠিক না থাকে তাহলে তাঁর জীবন কি করে সঠিকভাবে এগোবে?

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here