#ভালোবাসায়_বন্দিনী
#পর্ব_৩৩
#জান্নাতুল_নাঈমা
জায়নামাজ বিছিয়ে দাঁড়াতে যাবে তখনি ফোন বেজে ওঠে। হৈমী চুপচাপ মাথায় কাপড় দিয়ে নিজেকে ভালোভাবে ঢেকে জায়নামাজে দাঁড়িয়েছে৷ রুদ্র বললো,
— ওয়েট করো একসাথে শুরু করবো। বলেই গিয়ে ফোন রিসিভ করলো। রাদিফ কি বললো বোঝা গেলোনা। রুদ্র বললো,
— বিশমিনিট পর আসছি। বলে দাও সবাইকে।
ফোন রেখে হৈমীর পাশে দাঁড়ালো। হৈমী চুপ থাকলেও তাঁর নিঃশ্বাসের চঞ্চলতা ঠিক বুঝতে পারছে রুদ্র। কিন্তু কিছু বললো না৷ একসাথে নামাজ পড়ে নিয়ে জায়নামাজ যথাস্থানে রেখে বিছানায় গিয়ে বসলো। আর হৈমীকে ইশারা করলো পাশে বসতে। হৈমীর ভয় যে অনেকটাই কেটে গেছে বেশ বুঝলো রুদ্র। মনে মনে হাসলো খুব। স্বামী স্ত্রীর মাঝে যখন শয়তান ঢুকে যায় তখনি তাঁদের মধ্যে শুরু হয় বাড়াবাড়ি রকমের ঝগরা,বিবাদ। আর এসব ঝগরা বিবাদ মিটানোর কর্তব্য একজন স্বামীরই হওয়া উচিত। কারন ‘স্বামী-স্ত্রীর মাঝে শয়তানে ঝগড়া লাগিয়ে দেয়, যাতে তারা একজন থেকে আরেকজন পৃথক হয়ে যায়।’ [সহীহ মুসলিম : ৫০৩৯] আর রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে পুরুষেরা! তোমরা নারীদেরকে সর্বদা সদুপদেশ দাও। কেননা তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে বুকের বাম পাঁজরের বাঁকা হাড় দিয়ে। তুমি যদি তাকে সোজা করতে চাও, তাহলে তা ভেঙ্গে যাবে। আর যদি একেবারে ছেড়ে দাও তাহলে সে বাঁকাই থাকবে।’ [বুখারি : ৫১৮৬]তাহলে হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী স্ত্রীলোকদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে বাম পাঁজরের বাঁকা হাড় দিয়ে (রূপকার্থে)। তাদের আচরণের মাঝে কিছুটা বক্রতা থাকবেই। অপরদিকে কেউ সেই বক্রতাকে একেবারে সোজা করার কল্পনা করা নিষ্ফল ও অলীক ধারণা। সেরকম কিছুতে তা ভেঙ্গে যাওয়ার আশংকা আছে বলে হাদিসে সতর্ক করা হয়েছে।
তাই নারী তথা স্ত্রীর বক্রতাকে মেনে নিয়েই হেকমত ও কৌশলের সাথে ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়ে তাদেরকে মানিয়ে নিয়ে ঘর সংসার চালিয়ে যাওয়াই স্বামীর কর্তব্য।
রুদ্রও শান্ত ভঙ্গিতে ঠান্ডা মাথায় সবটা ঠিক করার চেষ্টা করছে। যদিও তাঁর ভুল একটাই তা হলো নিজের পেশার গোপনীয়তা রাখা। হৈমীর একহাত চেপে ধরলো রুদ্র। হৈমীর চোখ দুটো পানিতে টলমল করছে৷ সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বললো,
— আমি NSI তে আছি তিনবছর যাবৎ।
চোখ তুলে তাকালো হৈমী। যার অর্থ সে কিছুই বুঝেনি। রুদ্র খানিক সময় নিয়ে বললো,
— তুমি হয়তো জানোনা আমি অনার্স কমপ্লিট করার পর শখ করেই পুলিশে আবেদন করি। তারপর ট্রেনিংয়ে চলে যাই। বাড়ির সবাই জানে আমি পড়াশোনা চলাকালীন পুলিশে জব নিয়েছিলাম একটা সময় এসে জবটা ছেড়েও দেই। এর বাইরে কেউ কিছু জানতো না। এখনো জানে না শুধুমাএ বাবা ছাড়া। ওনি জেনেছে তাও খুব অল্প দিন হলো৷ আমি চাইনি আমার প্রফেশন বিষয়ে কাউকে জানাতে। গোপনীয়তা বজায় রেখে কাজ করতে করতে এর মধ্যে ডুবে গেছি আমি। মনে হয় কি দরকার সবাইকে জানানোর? তাছাড়া আমার প্রফেশন সম্পর্কে কেউ জানে না বলেই হয়তো আমি মানুষের মতলব খুব সহজে ধরে ফেলতে পারি৷ যদি জানতো তাহলে আমার কাছে তাঁরা যেভাবে নিজেদের প্রকাশ করে, যেভাবে মিশে সেভাবে হয়তো মিশতো না আর আমি আমার নিজের কাজে সফলতাও পেতাম না খুব একটা। তো যাইহোক সময় কম অল্প সময়ে আমার গাধী বউটাকে বোঝাতে চাই। আর হ্যাঁ পুলিশের জবটা ছাড়ার কারন ছিলো এন এস আই তে জয়েন করা।
হৈমী ভ্রু কুঁচকে তাকালো। তা দেখে রুদ্র দুষ্টু হাসি হাসলো। আর বললো,
— জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (National Security Intelligence) সাধারণত এনএসআই (NSI) নামে পরিচিত। এনএসআই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ এর প্রধান গোয়েন্দা সংস্থাতে আছি আমি।
হৈমীর চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো৷ বিস্ময় চোখে চেয়ে দেখতে লাগলো রুদ্র কে। রুদ্র বাঁকা হেসে বললো,
— কি ভয় পেয়ে গেলে? ভয় পাওয়ার কিছু নেই বরং গর্ব করা উচিত তোমার হাজব্যান্ড কে নিয়ে। কি সৌভাগ্য তোমার তাইনা? তোমার মতো মাথামোটার কপালে এমন ইন্টেলিজেন্ট জামাই জুটেছে।
হৈমী ক্ষেপে গিয়ে হাত ছাড়াতে নিতেই রুদ্র একটান দিয়ে নিজের ওপর ফেললো। টাল সামলাতে না পেরে দুকাধে খামচে ধরলো হৈমী। রুদ্র একহাতে পেট জরিয়ে ঘারে আলতো করে ঠোঁট ছুয়িয়ে দিলো।
হৈমী সড়ে যেতে নিয়েও পারলো না। রুদ্র জরিয়ে ধরে বললো,
— চুপ করে থাকো এখানটায় আমার কথা এখনো শেষ হয়নি। একদম নড়াচড়া করবে না। তাহলে বুকের ভিতর এমন ভাবে চেপে ধরবো যে আমার বুকেই তোমার মরণ হবে।
হৈমী চুপ হয়ে গেলো চোখ বন্ধ করে রুদ্র কে দুহাতে জরিয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে চুপ করে রইলো। আর মনে মনে আওড়ালো হোক না মরণ আপনার বুকে ক্ষতি কি তাতে? মনের কথা মনে রেখেই ভারী এক নিঃশ্বাস ছাড়লো৷ তৃপ্তিময় হাসি দিলো রুদ্র। সেও স্বস্তির এক শ্বাস ছেড়ে বলতে শুরু করলো,
— যা বললাম তা যেনো আর কারো কানে না যায়। দাদু,বাবা আর সাদমান ছাড়া এবিষয় কেউ জানেনা৷ রাদিফ ভাইয়া হয়তো জানে সে জানলেও কখনো কোন প্রশ্ন করবেনা৷ কিন্তু তুমি কাউকে কিছু বলবে না। এটা আমার আদেশ। গতকাল আমাকে এট্যাক করা হয়েছিলো। এসব প্রফেশনে ঝুঁকি থাকে। আমরা সবসয়ম অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করি। ধামাচাপা দেওয়া অন্যায়গুলো আমরা সম্মুখে প্রকাশ করি।রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও অখন্ডতা, জঙ্গি তৎপরতা,বাইরের দেশের হুমকির বিষয়গুলি দেশের ভিতরে ট্যাকল দিয়ে গোয়েন্দা তথ্য জোগাড় করে বিশ্লেষণ করা, প্রয়োজন অনুসারে সরকারকে জানানো; এসব আরো নানাবিধ কাজে নিয়োজিত থাকি আমরা। সবসময় সতর্ক থাকতে হয় চোখ কান খোলা রেখে চলতে হয়৷ ব্যাক্তিগত জীবনে যেনো এর কোন প্রভাব না পড়ে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হয়। তুমি অনেকটাই ছোট এতো জটিলতা বুঝবে না। তাই আপাতত জানাতে চাচ্ছিলাম না৷ কিন্তু কাল যখন আমাকে এট্যাক করা হয় তখন বাবাই বলে তোমাকে সবটা জানাতে আমি সিদ্ধান্তও নেই জানাবো। কিন্তু তাঁর আগেই তুমি শুরু করে দাও ঝামেলা।
হৈমী মাথা তুললো এবং অপরাধীর মতো মুখ করে তাকালো রুদ্রর দিকে। রুদ্র বললো,
— এখন মন খারাপ করে কি হবে তখন যদি একটু চুপ থাকতে তাহলে কি এতোসব হতো? ব্যাঙ এর মতো লাফাতে শুরু করেছিলে।
— দেখুন আপনি কিন্তু অপমান করবেন না বলে দিলাম। তাহলে আমি সবাইকে বলে দেবো আপনার বিষয়ে।
রুদ্র হৈমীকে একটানে বিছানায় ফেলে দুহাত বিছানার সাথে চেপে ধরে মুখোমুখি মুখ নিয়ে চোখে চোখ রেখে বললো,
— এই তো আমার তোতাপাখির মুখে বুলি ফুটেছে তো, তারপর???
হৈমী হাত ছুটাতে চেষ্টা করতে করতে খিল খিল করে হেসে ওঠলো৷ আল্হাদী কন্ঠে বললো,
— তারপর আপনার অনেক সমস্যায় পড়তে হবে। অনেক মজা হবে। বলেই মুখ কাত করে হাসি লুকাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।
— তাই,,না,, বলেই রুদ্র হৈমীর গলায় মুখ ডুবিয়ে দিয়ে একের পর এক কিস করতে থাকলো। হৈমীর পুরো শরীর শিউরে ওঠলো সহ্য করতে না পেরে দুহাতে রুদ্রর পিঠে খামচে ধরলো। আর খামচিটা লাগলো ব্যান্ডেজের ওপর।
রুদ্র সড়ে যেতেই হৈমী পাশ ফিরে শুয়ে চোখ বুজে ঘমঘন শ্বাস নিতে থাকলো৷ এদিকে রুদ্রর পিঠে অসম্ভব পরিমাণ ব্যাথা করছে ব্লিডিং হচ্ছে কিনা জানার জন্য হৈমীকে বললো,
— হৈমী দেখোতো পিঠে ব্লিডিং হচ্ছে কিনা?
হৈমী চমকে তাকালো রুদ্রর দিকে। নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে ওঠে বসলো। ওড়না ঠিক করে নিয়ে রুদ্রর দিকে এগিয়ে গেলো। পিঠের দিক বসতেই রুদ্র কাবলী খুলে ফেললো। হৈমী দেখলো অল্প রক্ত বেরোচ্ছে । যা দেখে মাথাটা তাঁর এক চক্কর দিলো। কাঁপা গলায় বললো,
— ররক্ত বের হচ্ছে।
রুদ্র তারাতাড়ি কাবলী টা পড়ে নিয়ে হৈমীর দুগালে আলতো করে ধরে বললো,
— কিছু হয়নি এসবে অভ্যেস আছে আমার। আমি ডক্টরের কাছে যাচ্ছি তুমি রেডি হতে থাকো পার্লারের লোকজন এসে গেছে৷ আর শুনো ওষুধ গুলো খেয়ে নিও। অতিরিক্ত মেক আপ করবে না ভূতের মতো লাগলে খবর আছে। গলায় মেকআপ করবে না একদম কেমন?
— আমি যাবো আপনার সাথে।
— আরে বোকা যেতে হবে না৷ এর থেকেও বড় বড় এক্সিডেন্ট একা সামলেছি। শুনো সুখনীড়ের সবাই এসে পড়বে একটু পর, তুমি ওদের সাথে সময় কাটাবে আমি ঠিক টাইম এসে পড়বো।
হৈমী মন খারাপ করে বসে রইলো৷ রুদ্র এবার কঠোর গলায় বললো,
— যা বলছি তাই যেনো হয় এর বাইরে গেলো আজ রাতে খবর আছে। এমনিতেও আছে অবাধ্য হলে মারাত্মক খবর হয়ে যাবে। বলেই কাবলী পড়ে নিয়ে চুল আচড়ে পিছনে ব্যান্ড দিয়ে বেঁধে হাত ঘড়ি পড়ে নিলো। হৈমীকে বললো কাবার্ডের ভিতর থেকে ওয়ালেট বের করে দিতে৷ হৈমী তাই করলো।
.
রুম থেকে বের হতেই সকলে চেপে ধরলো হৈমীকে। কাল রাতে কি হয়েছে? কেনো রুদ্র তাঁর গায়ে হাত তুলেছে আরো নানা প্রশ্ন। সবার করা প্রশ্নে হৈমী উত্তর দিলো,
— আসলে ওনার কোন দোষ নেই। আমিই না বুঝে অকারনে ওনাকে ভুল বুঝছিলাম আর ওনাকে তো তোমরা চেনোই মুখ কম হাত চলে বেশী। তাই আমার মতো মাসুম বাচ্চা টাকেও ছাড়েনি। বলেই মুখ ভাড় করে নয়নাকে বললো,
— আপু কিছু খেতে দাও খুব খিদে পেয়েছে।
সুরভী বেগম ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলো,
— রুদ্র কোথায় গেছে?
— কি যেনো কাজ আছে বললো। ঠিকসময় এসে যাবে বলে বেরিয়ে গেছে। বললো হৈমী।
আর কেউ কথা বাড়ালো না। সকলেই সকালের নাস্তা করে নিয়ে হৈমীকে পাঠিয়ে দিলো রুমে সাথে নয়ন আর পার্লারের লোকজন।
.
এতো ভীরে নয়নার খুব ফাঁপর লাগছে। আজকে আবার গা গুলাচ্ছে কেমন। রাদিফ কে বলাতে সে প্র্যাগ্নেন্সি কীট এনে দিয়েছে। নয়না লজ্জায় সেই যে রুম থেকে বেরিয়েছে আর রুমে যায়নি। কিন্তু এখন তাঁর বেশ অস্থির লাগছে রুমে না গিয়ে উপায় নেই। জ্ঞান হারানোর সম্ভবনা বেশী তাই ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো উপরে।
.
সূচনা রুমে বসে আছে। তাঁর কিছুই ভালো লাগছে না৷ গতরাতের কথা ভাবছে সে৷ আর ভাবছে মাহেরের সাথে মেলামেশা কমাতে হবে৷ নতুন করে আর কোন মায়ায় সে জরাতে চায় না৷ যে হৃদয়ে একবার ক্ষতবিক্ষত হয়েছে সে হৃদয় আরো একবার ক্ষতবিক্ষত করতে চায় না সে। কারন মাহের রুদ্রর থেকেও বেশী ভালোবাসে হৈমীকে। তাই মাহেরের প্রতি অনুভূতি জাগানোর মতো মারাত্মক ভুল সে করবেনা।
— আসবো?? দরজায় দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলো মাহের।
সূচনা মাহেরকে দেখে বেশ অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। ভালোভাবে ওড়নাটা ঠিক করে নিয়ে বললো,
— জ্বি আসুন।
মৃদু হেসে এগিয়ে এলো মাহের সূচনা চেয়ার টেনে বসতে বললো মাহের বসলো। সূচনা বিছানায় বসলো। বললো,
— কিছু বলবেন?
— সবাই বাইরে আপনি একা রুমে বসে আছেন তাই ভাবলাম গল্প করি আপনার সাথে৷
সূচনা মলিন হাসি দিলো। মাহের বললো,
— দেখি আপনার হাতের মেহেদীর রঙ কেমন হয়েছে? দেখালেন না তো।
সূচনা আমতা আমতা করে হাত বাড়িয়ে দিলো।
— বাহ বেশ সুন্দর লাগছে। তা সাজগোজ করবেন না সব মেয়েরা তো সাজগোজ নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে। হৈমী কিন্তু সাজের বেশ পাগল। আপনিও ওদের সাথে যোগ দিতে পারতেন।
— আমি সাজগোজ পছন্দ করিনা।
— হুমহ! আপনাকে সাজ ছাড়াই সুন্দর লাগে। মানতে হবে বেয়ান আমার ন্যাচারাল সুন্দরী।
— আর হৈমী? চোখ তুলে চেয়ে প্রশ্ন করলো সূচনা।
মাহেরর চোখ মুখের উজ্জ্বলতা কিছুটা কমে এলো৷ সে নিজে সবকিছু ভুলে অন্যকিছুতে মগ্ন থাকতে চায় তাই সূচনার সাথে গল্প করে তাঁকেও এসব ডিপ্রেশন থেকে দূরে নিতে চেয়েছিলো কিন্তু সূচনা তা হতে দিলো না। তবুও মাহের থেমে থাকলো না নিজেকে শক্ত করে নিয়ে মৃদু হেসে বললো,
— সেও সুন্দরী।
— কে বেশী সুন্দরী??
— সুন্দরের আবার কম বেশী কি? মিস. আমরা সবাই সুন্দর। যেমন আমি সুন্দর, আপনি সুন্দরী, হৈমী সুন্দরী, রুদ্র সুন্দর।
হেসে ফেললো সূচনা৷ মাহেরও হেসে ফেললো সেই সাথে লক্ষ করলে সূচনাকে হাসলে মারাত্মক সুন্দর লাগে৷ অথচ মেয়েটা হাসেই না। তাই বললো,
— আপনি হাসলে আপনাকে অপরূপা লাগে।
লজ্জা পেলো সূচনা বললো,
— হুম তবে আপনার চোখে হৈমীর থেকে কম অপরূপা আমি।
— নাহ কথাটা ভুল৷ আমার কাছে মনুষ্য জাতির সৌন্দর্য ফুলের মতোনই বরং তার থেকেও বেশী৷ যেমন ধরুন গোলাপ ফুল সুন্দর। কিন্তু আমি কিন্তু গোলাপ ফুলকেই সবচেয়ে বেশী সুন্দর মনে করিনা। আমি সব ফুলেরই আলাদা আলাদা সৌন্দর্য দেখতে পাই। গোলাপের সৌন্দর্য যেমন আমাকে একরাশ মুগ্ধতা দেয় তেমনি শিউলি ফুলের সৌন্দর্য, সেই সাথে তীব্র ঘ্রান আমাকে মাতাল করে ফেলে। বিকেলে কাশফুল বাগানে যেয়ে দেখবেন মারাত্মক এক স্নিগ্ধ অনুভূতি উপহার দেবে। আবার সূর্যমুখী ফুলের আঙিনায় যেয়ে দেখবেন সৌন্দর্য যেনো ডুবিয়ে মেরে ফেলতে চাইবে আপনাকে। ঠিক এরকমই প্রত্যেকটা ফুলের মধ্যেই রয়েছে মারাত্মক ভিন্নমাত্রার সৌন্দর্যে ভরা৷ যা মনের ভিতর ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতির জন্ম দেয়।
ঠিক সেরকমই মানুষের মধ্যেও কম বেশী সৌন্দর্য নেই বরং একেকজনের মধ্যে রয়েছে একেকরকম সৌন্দর্যে ভরা। কেউ কারো থেকে কম সুন্দর বা সুন্দরী নয়। বরং প্রত্যেকটা মানুষের মাঝেই রয়েছে মারাত্মক রকমের সৌন্দর্য। যা সবাই দেখতে পারে না, সবাই অবুভব করতে পারে না সবাই উপলব্ধিও করতে পারেনা৷ প্রত্যেকটা মানুষই অপরূপ,অপরূপা। কারো থেকে কেউ কম নয়। তবে ভিন্ন৷
মাহেরের কথায় কি ছিলো জানা নেই সূচনার কিন্তু ঘোর লাগাতে যথেষ্ট ছিলো৷ এতো সুন্দর মনোভাব কোন পুরুষের হতে পারে জানা ছিলো না তাঁর। কি আছে কি নেই জানে না সে শুধু জানে সামনের মানুষটার মনের সৌন্দর্যের কোন তুলনা হয়না। এ মূহুর্তে মনে হচ্ছে পৃথিবীর মধ্যে বসবাসরত সবচেয়ে খাঁটি পুরুষ টি তাঁর সামনে রয়েছে৷ বাহ্যিক দিক থেকে মানুষ টা যতোটা খাঁটি ভিতরের দিক থেকে হাজারগুন বেশী খাঁটি।
চলবে।