ভালোবাসায়_বন্দিনী #পার্ট_৩৬

0
2180

#ভালোবাসায়_বন্দিনী
#পার্ট_৩৬
#জান্নাতুল_নাঈমা

রুদ্রর কথা শুনে লজ্জায় মুখটা কাচুমাচু করে শাড়িটা গায়ে জরিয়ে ওঠিয়ে পড়লো হৈমী। রুদ্র বাঁকা হেসে বালিশে মুখ গুঁজে আবার ঘুমানোর জন্য চোখ বুজলো।

হৈমী কাবার্ড থেকে জামা বের করে বাথরুম গিয়ে শাওয়ার নিয়ে নিলো। রুদ্র আবারো ঘুমিয়ে পড়েছে। হৈমী আয়নার সামনে বসে চুল আঁচড়াচ্ছে আর বিরবির করে রুদ্র কে বকা দিচ্ছে। বকার পাল্লা শেষ করে মাথায় ওড়না চাপিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। নিচে গিয়ে দেখলো রেদওয়ান শেখ আর রাদিফ চা খাচ্ছে আর পেপার পড়ছে। সুরভী বেগম আর নয়না রান্না ঘরে। রুদ্রর নানা বাড়ির কয়েকজন সোফায় বসে রেদওয়ান শেখ আর রাদিফের সাথে গল্প করছে। হৈমী তাদের গুড মর্নিং বলে এগিয়ে গেলো রান্না ঘরে। নয়না হৈমীকে দেখেই বললো,

— বাবাহ নতুন বউয়ের ঘুম ভাঙলো তাহলে?

— আমার তো অনেক আগেই ঘুম ভাঙে আপু আজ লেট হয়ে গেছে৷ আমিও কাজ করবো কি কাজ করতে হবে বলে দাও আমায়।

সুরভী বেগম বললেন,

— কাজ করতে হবে না মা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখো শুধু।

তখনি রুদ্রর দাদি রান্নাঘরে ঢুকলো গলা বাড়িয়ে বললো,

— কেনো কাজ করতে হবে না কেনো? পোয়াতি মেয়ে রে কাজ করাতে তোমার অসুবিধা নাই আর এই মেয়ে কাজ করলেই যতো অসুবিধা।

সুরভী বেগম বিরক্তিতে চোখ, মুখ কুঁচকে তরকারি চড়ালেন। নয়না মাছ ভাজি করছে। সে আর এসব কথায় কান দিলো না। হৈমী দাদির দিকে একবার নয়নার দিকে একবার চেয়ে বললো,

— আপু আমি করছি তুমি গিয়ে রেষ্ট নাও। সত্যি তো তোমার রেষ্টের প্রয়োজন।

— আরে বাবা সমস্যা নেই আমি কি অসুস্থ নাকি। আর একদম শুয়ে বসে থাকা যায় নাকি এই সামান্য কাজ করতে আমার কোন সমস্যা হচ্ছে না।

নয়নার কথা কেটে দাদি বললো,

— পোয়াতি মানুষ মাছ ভাজো গন্ধ সহ্য করতে পারো? আসলেই কি পোয়াতি নাকি সত্যি করে বলোতো?

— মা আপনি এখান থেকে যান। আপনার খাবার রুমে পাঠিয়ে দিবো। আমাদের কাজ করতে দিন। বললো সুরভী বেগম।

নয়নার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। দাদির কথাবার্তা তাঁর একটুও পছন্দ না৷ হৈমী বুঝতে পেরে নয়না কে ইশারা করলো, ‘বাদ দেওতো ঝগরাটে বুড়ি একটা’ হৈমীর মুখোভঙ্গি দেখে হেসে ফেললো নয়না।

দাদি এদের কাছে পাত্তা না পেয়ে রাদিফের কাছে গিয়ে কানপড়া দিতে শুরু করলো।

— দেখ দাদুভাই তোর বউয়ের বাচ্চা পেটে এখন সাবধানে থাকতে হবো। তা না তোর বউ রান্ধে আর রুদ্রর বউ দাঁড়াই থাকে। যে কয়মাস তোর বউয়ের সমস্যা এই কয়মাস তোর বউয়ের রান্না করতে হবোনা বলে দিস। বাড়িত যখন আরেক বউ আছেই তোর বউয়ের এতো কাজ করন লাগবো কেনো?

রুদ্র সিঁড়ি থেকেই সবটা শুনতে পেলো। রাদিফ দাদিকে কিছু বলতে নেবে তখনি রুদ্র নামতে নামতে বললো,

— ভাবির যদি রান্না করতে সমস্যা হয় দশটা কাজের লোকের ব্যবস্থা করে দিলেই পারেন আপনি। আমার বউকে তো কাজ করার জন্য বা রান্না ঘরের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য এ বাড়িতে নিয়ে আসিনি। তাছারা আগামীকালই এ বাড়ি থেকে বিদায় নিচ্ছি। আমার বউয়ের অনেক দায়িত্ব আছে সেগুলো বাদ রেখে রান্নার দায়িত্ব তাকে আমি নিতে দেই কোন মুখে? ভাই বরং বাড়িতে এবার কাজের লোকের ব্যবস্থা করুক।

কথাগুলো বলা শেষ করেই রেদওয়ান শেখের পাশে বসলো রুদ্র। গলা উঁচিয়ে হৈমীকে কয়েক ডাক দিতেই হৈমী রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এলো রুদ্র তাকে এক কাপ কফি বানাতে বললে সে আবার রান্না ঘরে চলে গেলো। দাদির মুখটা চুপসে গেছে। সে চুপ করে বসে আছে। রাদিফ বললো,

— রুদ্র দাদির কথা ধরিস না বয়স হয়েছে যা বুঝে তাই বলে।

রুদ্র তাচ্ছিল্যের এক হাসি দিলো। তারপর রেদওয়ান শেখের উদ্দেশ্যে বললো,

— সুখনীড়ে কাজ ধরেছি। আপনার আর মায়ের জন্য যে রুম টা থাকবে সেটা আপনি গিয়ে দেখে আসবেন। পছন্দ হলে জানাবেন আমাকে অপছন্দ হলেও জানাবেন। রাদিফের দিকে চেয়ে বললো,

— এ বাড়ির প্রতিটা সদস্যর জন্যই ও বাড়ি রুম বরাদ্দ করা থাকবে। আর প্রতিটা সদস্যদের জন্যই আমার দরজা চিরকাল খোলা। একটু থেমে আবার বললো,

— আগামিকাল রাতেই হৈমীকে নিয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেব সেখান থেকে যাবো সেন্ট মার্টিন। একমাস একটু ঘুরাফেরা করে আসি। এই একমাস সুখনীড়ের কাজগুলো দুজন মিলে দেখবে৷ সাদমান ওদের বলা আছে ওখানে দাদুও আছে তোমাদের বলে রাখলাম গেলে ভালো হয়।

রেদওয়ান শেখ ছেলের কথা শুনে খুশি হলেন। কিন্তু ছেলে এ বাড়ি থাকবেনা ভেবে মনটাও খারাপ হয়ে গেলো কিন্তু প্রকাশ করলো না৷

দাদি চোরের মতো বসে কথা শুনছে আর ভিতরে ভিতরে হিংসেয় জ্বলছে। হৈমী এসে রুদ্র কে কফি দিতেই রুদ্র কফি নিয়ে এক চুমুক দিলো। হৈমী আবারো রান্নাঘরের দিকে যেতে নিলে রুদ্র বললো,
— কোথায় যাচ্ছো?

হৈমী পিছন ঘুরে বললো,
— রান্না ঘরে আপু আর মা কাজ করছে আমি দেখছি। আপনি গল্প করুন আমি যাই।

রুদ্র দাদির দিকে একপলক চেয়ে হৈমীকে আদেশের সুরে বললো,
— রুমে যাও। কোন কাজ নেই।

— আপনি চুপ থাকেন নয়তো আপনি রুমে গিয়ে বসে থাকেন। আজাইরা কথা বলেই গটগট পায়ে রান্নাঘরে ঢুকে গেলো।

দাদি মুখ ফসকে বলেই ফেললো,

— তোর বউ কোন জমিদারের বেটি যে তাঁর রান্না ঘরে থাকোন যাবো না৷

— জমিদারের বউ তাই যাবেনা রান্না ঘরে আপনার কোন সমস্যা৷

— আহ দাদি তুমি কেনো ওকে ক্ষেপাচ্ছো। রুদ্র আসলে দাদি তোকে ক্ষেপানোর চেষ্টা করছে। বললো রাদিফ।

রুদ্র রহস্যময় হাসি হেসে কফির মগে চুমুক দিলো। রেদওয়ান শেখের ফোন আসাতে সে কথা বলতে বলতে বাইরে চলে গেছে৷
.
নয়ন বাদে সব আত্নীয়রাই চলে গেছে। নয়নার জন্য থেকে গেলো সে। দুপুরের দিকে রাদিফ আর মাহের নয়নাকে ডাক্তার দেখিয়ে কিছু টেষ্ট করিয়ে বাড়ি নিয়ে আসে। মাহের নিচে সোফায় বসে আছে। নয়নাও ভীষণ ক্লান্ত সেও বসে পড়লো৷

হৈমী রাদিফ,মাহের আর নয়নাকে পানি দিলো। মাহের হৈমীর দিকে না তাকিয়েই গ্লাস নিলো। পানিটা খেয়ে গ্লাস ফেরতও দিলো না তাকিয়ে। হৈমী বেশ খেয়াল করছে গতকালের পর থেকে মাহের তাকে এড়িয়ে চলছে৷
.
পাঁচ টা বাজে। রুদ্র ফোনে কথা বলছে, হৈমী তাঁর পেট জরিয়ে ধরে শুয়ে ঘুমাচ্ছে। সে কথা শেষে ফোন রেখে হৈমীকে একটু টেনে তাঁর বুকের ওপর নিলো দুহাতে জরিয়ে ধরে বিরবির করে বললো,

— ননসেন্স একটা এতো ঘুম বাদ দিয়ে লাফাতে লাফাতে গল্প করতে যাচ্ছিলো। এখন কেমন পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে দেখো। নিজের ভালোটাও বুঝে না এই মেয়ে। আমার ভালো কি করে বুঝবে কে জানে। ভেবেই এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
.
মাগরিবের আজান দিতেই হৈমীর ঘুম ভাঙলো। রুদ্র তাঁকে দুহাতে আবদ্ধ করে রেখেছে বুঝতেই হাত সড়িয়ে ওঠে বসলো। মুখে হাত দিয়ে হাই দিতে দিতে বললো,

— আল্লাহ আজান দিয়ে দিছে আর আপনি আমাকে ডাকেননি? আপনি আসলেই একটা অসভ্য লোক। সারাক্ষণ গা ঘেষে থাকার ধান্দা।

— ফ্রেশ হয়ে এক কাপ কফি নিয়ে আসো যাও। চোখ খুলে আড়মোড়া ভেঙে বললো রুদ্র।

— আহ ঠ্যাকা পড়ছে আমার সারাদিন কফি কফি করেন কেনো এতো? এতোই যখন কফি খেতে ইচ্ছে হয় দোকানে গিয়ে খান সারাদিন কফি বানাতে পারবো না আমি।

রুদ্র তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে হাতে ধরে একটান দিলো। টাল সামলাতে না পেরে হৈমী রুদ্রর কাঁধ খামচে ধরলো৷

— আজকে বেশীই অবাধ্যতা করছো তুমি।

— এ্যাঁ আপনি আমাকে শুধু ব্যাথাই দিচ্ছেন। আমার হাতটা বুঝি এবার ভেঙেই গেলো।

রুদ্র সে কথায় পাত্তা না দিয়ে একহাতে কোমড় জরিয়ে আরেক হাতে হৈমীর সামনে আসা চুলগুলো সড়িয়ে নেশানেশা চোখে চেয়ে নেশাভরা গলায় বললো,

— কফি নাই দিলে অন্যকিছু তো দিতেই পারো।

হৈমী ওঠতে নিতেই রুদ্র আরেকটু চেপে নিলো। দুজনের শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দে দুজনই যেনো দিশেহারা হয়ে যাচ্ছে। রুদ্র মোহময় চোখে চেয়ে আবদার করলো ইশারায়। হৈমী লজ্জায় মিইয়ে যাচ্ছে না পারছে ছাড়াতে না পারছে কাছে থাকতে। কিন্তু এও বুঝে গেলো রুদ্র তাঁকে ছাড়বেনা৷ চোখ বন্ধ করে ঘনঘন শ্বাস নিতে থাকলো সে। রুদ্র গাঢ় চোখে চেয়ে বললো,

— বউ যদি আবদার পূরণ না করে তাহলে কে করবে শুনি? নাকি এখন বাইরে যেতে হবে?

চমকে তাকালো হৈমী। খানিকটা রাগ নিয়েই ছেড়ে দিলো হৈমীকে। হৈমীতো অবাক কারন সে চাইছিলো না রুদ্র তাঁকে ছাড়ুক তবুও ছেড়ে দিলো? রুদ্র বিছানা ছেড়ে ওঠে যেতে নিতেই হৈমী হাত আঁটকে ফেললো। রুদ্র ঘাড় বাঁকিয়ে তাকাতেই হৈমী ঠোঁট উলটে কাঁদো কাঁদো ভঙ্গিতে চেয়ে রইলো। রুদ্র চোখ ফিরিয়ে নিলো অন্যদিক চেয়ে বললো,

— এসব ঢং করে লাভ নেই। এতোদিনে যে মেয়ে তাঁর হাজব্যান্ডকে জাষ্ট একটা লিপকিসই করতে পারলোনা ঠিকভাবে সেই মেয়ের সাথে আর যাই হোক হানিমুন হবে না। ভাবছি হানিমুন টা অন্যকারো সাথেই করি।

হৈমীর মাথা গরম হয়ে গেলো। আর যাই হোক এমন কথা সহ্য করা যায় না। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে রুদ্রর চুলগুলো খামচে ধরলো। রুদ্র তবুও কিছু বললোনা৷ তাই হৈমী রুদ্রর চুলসহ মাথায় কামড়াতে শুরু করলো। এমন আজব পাগলামি দেখে হৈমীর দুহাত আঁটকে বিছানায় চেপে ধরলো। হৈমী রাগে ফুঁসছে। রুদ্র মুখোমুখি হয়ে কঠিন চোখে চেয়ে বললো,

— মেরে হাড়গোড় ভেঙে দেবো একদম। এসব কি পাগলামি হুম? একটা কিস করার সাহস নাই আবার রাগ দেখাও তাইনা?

হৈমী অগ্নি দৃষ্টিতে চেয়ে ওঠতে নিতেই রুদ্র তাঁর উপর ওঠে গিয়ে বিছানার সাথে চেপে ধরলো। দুহাত চেপে ধরে বললো,

— আচ্ছা দেখি কার জেদ বেশী আর কার গায়ের জোর বেশী তোমার না আমার৷

দুজনের মধ্যেই অমন অবস্থায় বেশ ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে গেলো৷ রুদ্র যখন তাঁর সমস্ত ভার হৈমীর ওপর দিয়ে সমস্ত শক্তি খাটাতে লাগলো হৈমী তখন থেমে গেলো। তা দেখে শব্দ করে হেসে ওঠলো রুদ্র। বললো,

— কি হলো মিসেস? হেরে গেলেতো?

মিনমিন করে কেঁদে ওঠলো হৈমী। রুদ্র হাসতে হাসতে হাঁপিয়ে গেলো৷ হৈমীর কান্নার বেগ বাড়ে তো রুদ্রর হাসির শব্দ বেড়ে যায়। হাসতে হাসতে চোখে পানি এসে গেলো রুদ্রর কোনরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে তাকালো হৈমীর দিকে। হৈমীর অভিমানী সে চোখ মুখ দেখে ভালোলাগার শিহরণ বয়ে গেলো তাঁর পুরো শরীর জুরে। উন্মাদের মতো মুখ ডুবিয়ে দিলো হৈমীর গলায় একের পর এক চুমু দিতে দিতে অস্থির করে ফেললো হৈমীকে এবং নিজেকে। একসময় থেমে গিয়ে চোখ তুলে তাকালো মৃদু হেসে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো মুখের দিকে। হৈমী রুদ্রর পিঠ খামচে ধরে উপরের ঠোঁট দিয়ে নিচের ঠোঁট চেপে ধরে আছে মৃদু কাঁপছে সে। রুদ্র আলতো হেসে সে ঠোঁটে ঠোঁট ছোয়াতে নিতেই হৈমী মুখ সড়িয়ে ফেললো আর রুদ্রর মুখ গিয়ে ঠেকলো হৈমীর চুলে। সাথে সাথে খিলখিল করে হেসে ওঠলো হৈমী৷

এমন কান্ডে রুদ্র ক্ষেপে গিয়ে হৈমীকে ছেড়ে দিয়ে বিছানা থেকেই ওঠে পড়লো। প্রচন্ড রাগ হয়েছে তাঁর। সে যে বেশ রেগে গেছে খুব বুঝলো হৈমী। মুচকি হেসে মাথা চুলকে নিজেই নিজেকে কয়টা বকা দিয়ে সেও ওঠে পড়লো।
.
রুদ্র ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। হৈমী এতো করে জিগ্যেস করলো কোথায় যাচ্ছে? তবুও একটা জবাবও দিলো না। ব্যার্থ হয়ে সে ঘরে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলো। তারপর রুম থেকে বেরিয়ে গেলো নয়নার ঘরে৷ সেখানে নয়নাকে পেলো না। তাই নিচে যেতেই দেখলো রাদিফ নয়নাকে নিজ হাতে জুস খাওয়াচ্ছে। তা দেখে মনে মনে হাসলো বললো,’আহারে কি প্রেম’ আর নিচে গেলো না সে। নয়নকে মেসেজ করে জিগ্যেস করলো, ‘তুই কোথায়’? নয়ন উত্তরে বললো,’জামাইয়ের আদর খাওয়া শেষ হলে ছাদে আয় আমরা আড্ডা দিচ্ছি ‘।
.
ছাদে যেতেই দেখলো মাহের সূচনা আর নয়ন বর্ডারে বসে গল্প করছে তিনজনই। হৈমী বড় বড় পা ফেলে কোমড়ে হাত গুঁজে মাহেরের সামনে দাঁড়ালো। চোখ পাকিয়ে বললো,

— বাব্বাহ আমাকে ছাড়াই আড্ডা হচ্ছে? আর এই যে আপনি কি হয়েছে হুম? আমাকে এড়িয়ে চলছো কেনো?কোন পাকা ধানে মই দিয়েছি আমি তোমার?

মাহের থতমত খেয়ে গেলো। হৈমীকে এ মূহুর্তে ভীষণ অন্যরকম লাগছে। তাঁর সৌন্দর্য যেনো দ্বিগুণ বেড়ে গেছে একদিনের ব্যবধানেই। তারওপর ডাগর ডাগর চোখ জোরা দিয়ে কেমন চোখ পাকিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে কথা বলছে। অসম্ভব সুন্দরী লাগছে। এ মূহুর্তে তাঁর হৃদস্পন্দন থেমে গেছে বলা যেতে পারে।

নয়ন হৈমীকে একটানে তাঁর কাছে নিয়ে বললো,

— কাল অপমানিত হয়েও তোর শিক্ষা হলো না? শোন তুই এখন ম্যারিড আমার ভাই থেকে দূরে থাকবি। লোকে ভালো চোখে দেখেনা স্পেশালি তোর দাদি শাশুড়ী।

মাহেরের গলা শুকিয়ে এসেছে অন্যের বউ কে দেখে এমন অনুভূতি হওয়াটা সত্যি ভীষণ লজ্জাদায়ক। তাঁকে পালাতে হবে যে করেই হোক এখান থেকে পালাতে হবে তাঁকে। তাই কাউকে কোন উত্তর না দিয়ে বসা থেকে ওঠে দ্রুত পা বাড়ালো নিচের উদ্দেশ্যে। হৈমী আশ্চর্য হয়ে ছুটলো মাহেরের পিছনে। মাহের সিঁড়ি দিয়ে নামছে পিছন পিছন হৈমীও নামছে আর বলছে,

— মাহের ভাইয়া ও মাহের ভাইয়া তুমি কি আমার ওপর রেগে আছো? তুমি তো কখনো আমার ওপর রাগ করো না তাহলে আজ কেনো রেগে আছো? দাদি তো আমাকেও কথা শুনিয়েছে আমি তো কারো ওপর রাগ করিনি তুমি কেনো রাগ করছো। আচ্ছা আমার জন্য কথা শুনতে হয়েছে তো আমি সত্যি সরি এই কান ধরছি আর জীবনে তোমাকে ছুবো না। তোমরা তো কোনদিন নয়ন আর আমাকে আলাদা করে দেখোনি তাইতো আমিও তোমাদের আলাদা নজরে দেখিনা। বলতে বলতেই পা ফঁসকে সিঁড়ি তে মুখ থুবরে পড়লো সে।

কথা থামিয়ে ব্যাথায় আর্তনাদ করে ওঠলো। মাহের নিচ থেকে উপরে তাকাতেই হৈমীকে ও অবস্থায় দেখে হৈমী বলে এক চিৎকার দিলো। হৈমী এক হাতে সিঁড়ির রেলিং খামচে আরেক হাতে কপালে চেপে ধরে আছে।

মাহেরের অন্তর আত্মা কেঁপে ওঠলো। পুরো পৃথিবী যেনো থমকে গেলো তাঁর। কান দিয়ে গরম বাতাস বের হয়ে যাচ্ছে যেনো। কোনরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে ছুটে গিয়ে হৈমীকে জাবটে ধরলো৷ পাগলের মতো চিৎকার করে বলতে লাগলো,

— এই মেয়ে এভাবে কেনো ছুটে এলো। আল্লাহ রক্ষা করো এতো রক্ত বলেই নয়ন আর নয়না কে চিৎকার করে ডাকতে লাগলো। হৈমী ব্যাথায় ডুঁকরে কেঁদে ওঠলো। মাহের যেনো পাগল প্রায় দিশেহারা হয়ে গিয়ে কি করবে বুঝে ওঠতে পারলোনা হৈমীকে ওখান থেকেই কোলে করে নিয়ে নিচে নেমে গেলো৷

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here