ভালোবাসায়_বন্দিনী #পর্ব_৪৩

0
2839

#ভালোবাসায়_বন্দিনী
#পর্ব_৪৩
#জান্নাতুল_নাঈমা

.
প্রায় পনেরো দিন লেগেছে মাহের আর মাহেরের বাবা নিয়াজ খানকে পটাতে৷ অথচ আসল লোককেই পটাতে পারেনি সাদমান। নয়ন এর সেই এক কথা এতো বাচাল ছেলে সে বিয়ে করবেনা। এ কথা রুদ্রর কানে যেতেই রুদ্র নয়নকে ফোন করে সুখনীড়ে আসতে বলে। হৈমী আর নয়ন কে সামনে বসিয়ে জিগ্যেস করে, ‘আমি যদি একটা বাচাল মেয়ে বিয়ে করে সংসার করতে পারি তাহলে তুমি কেনো পারবেনা’? উত্তরে নয়ন বলে ‘আপনার মতো ধৈর্য্য আমার নেই ভাইয়া’ ওদের দুজনের কথা শুনে হৈমীতো ক্ষেপে আগুন হয়ে যায়। কি সর্বনাশে ব্যাপার তাঁর নিজের স্বামী, তাঁর নিজের বেষ্ট ফ্রেন্ড মিলে তাঁকে এভাবে অপমান করছে সে কিনা বাচাল? এই দিন দেখার জন্য নয়নকে বেষ্ট ফ্রেন্ডের জায়গা আর তাঁর স্বামীকে বাবা হওয়ার সুখ এনে দেওয়ার জন্য এতো কষ্ট করছে সে?

রুদ্র নয়নকে বেশ বোঝায়। সাদমান ছেলে হিসেবে কেমন তাও জানায়। যেহেতু সে রুদ্রর বন্ধু সেহেতু তাঁর বিষয়ে রুদ্রর থেকে ভালো কেউ জানেনা। একটু দুষ্টামি, ফাজলামি যাই করুক তেমন কোন খারাপ রেকর্ড নেই৷ কোন মেয়ের সাথে গভীর সম্পর্কেও জরায়নি সে৷ সব শুনে নয়ন কিছু বলেনা বাড়ি চলে যায় রুদ্রও তাঁকে সময় দেয়। নয়ন চলে যাওয়ার পর রুদ্র রুমে এসে দরজা লাগিয়ে হৈমীর দিকে তাকাতেই মুচকি হাসে৷ হৈমী রেগে বোম হয়ে আছে বেশ বুঝে সে। রাগের কারণও তাঁর জানা। তাই হৈমীর পাশে গিয়ে বসে বলে,

—- বউ একটু বাচাল হলেও সমস্যা নেই বউ তো অনেক কাজের এই যে আমার বাচ্চা কে কতো যত্নে আগলে রেখেছে। বলেই পেটে আলতোভাবে হাত রাখে।

এক ঝটকায় হাত সরিয়ে দেয় হৈমী৷ বিছানা থেকে আস্তে করে ওঠে দাঁড়ায়। কোমড়ে হাত রেখে যেতে যেতে বলে,
—- এই বাচাল মেয়ের সাথে আপনার থাকতে হবেনা। আমি আর আপনি আজ থেকে আলাদা থাকবো। আর ঐ নয়নের বাচ্চা কে বলে দেবেন সে যেনো আমার সামনে না আসে৷ আমি আর আমার বাচ্চা আজ থেকে একা।

রুদ্র ওঠে গিয়ে হৈমীকে পিছন থেকে কোলে তুলে নেয়। তারপর বাথরুম ঢুকে গিয়ে তাকে মোড়ায় বসিয়ে দিয়ে বালতি থেকে মগে পানি নিয়ে তাঁর মাথায় ঢেলে দেয়। চেঁচিয়ে ওঠে হৈমী রুদ্র গম্ভীর গলায় বলে,
—- উহুম কোন কথা না। গোসলের টাইম হয়ে গেছে।

—- করবোনা গোসল আমি বলেই ওঠে যেতে নিলে রুদ্র জোর করে বসিয়ে দেয়৷ চোখ গরম করে তাকাতেই হৈমী চুপ করে বসে থাকে। রুদ্র তাঁর গায়ে সাবান মাখতে মাখতে বলে,

—- গোসল করে খেয়ে দেয়ে যেখানে খুশি যাও। যাবেতো ঐ এ ঘর ওঘর বাপের বাড়ি এতো ঢং কিসের?

হৈমী কিছু বলেনা আর মন তাঁর খারাপ হয়ে গেছে। রুদ্র নিজের মতো তাঁকে গোসল করিয়ে দিয়ে কাপড় পড়তে হেল্প করে। বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলাকে মেসেজ করে খাবার পাঠাতে বললে এলা নিজেই খাবার নিয়ে আসে। রুদ্র নিজেও গোসল সেরে বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখে বউ তাঁর খাবার বেড়ে বসে আছে। মৃদু হেসে তাঁর পাশে গিয়ে বসে দুজন একসাথেই খেয়ে নেয়।
.
অবশেষে নয়ন রাজি হয় বিয়েতে। তাঁদের বিয়ের দিনও এসে পড়ে। হৈমীরও ডেলিভারির সময় ঘনিয়ে এসেছে৷ এ সময় হাঁটা চলা একেবারেই কষ্টকর তবুও নয়নের বিয়ে সে কি করে মিস দেয়? কিন্তু রুদ্রও জানিয়ে দেয় নয়নদের বাড়ি গিয়ে থাকা যাবেনা। বিয়ের দিন খুব সকালে যাবে নয়নকে ওঠিয়ে দেওয়ার পরই এসে পড়বে তাঁরা। নিজের শারীরিক কন্ডিশন বুঝে হৈমীও আর বায়না করেনা৷
.
পার্লারের মেয়েরা নয়নকে সাজাচ্ছে। বড় পেটটা নিয়ে বসে থাকতে পারছেনা আর হৈমী৷ বিছানায়ও মানুষ জন বসে আছে৷ তাঁর কেমন ফাপর লাগছে। নয়নকে বলে রুম ছেড়ে বেরিয়ে যায় সে। বেশী কথা বলতে পারেনা হাঁপিয়ে যায়। বেশী হাঁটাহাঁটিও করতে পারেনা। ফোনও সাথে নেই যে রুদ্র কে ফোন দেবে। প্র্যাগ্নেন্ট হওয়ার পর থেকে রুদ্র কে ছাড়া এক মূহুর্ত থাকাও যেনো দায় হয়ে পড়েছে। একটু খারাপ লাগলেই রুদ্রর সান্নিধ্য পেতে ইচ্ছে করে খুব। এ পৃথিবীতে তাঁর জন্য সবথেকে নিরাপদ মানুষ রুদ্র। সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা রুদ্রর বুক তা বুঝার আর বাকি নেই তাঁর।

ওড়না দিয়ে কপালের ঘাম মুছে ধীরপায়ে হাঁটে হৈমী। কোন রুমে যাবে বুঝতে পারছেনা। যেখানেই যায় সেখানেই গিজগিজে মানুষ। আশেপাশে চেয়ে দেখে সবাই ব্যাস্ত৷ না পেরে একহাতে দেয়াল ধরে আরেক হাতে কোমড়ে রেখে ঘনঘন শ্বাস নিতে থাকে। তাঁকে অমন অবস্থায় দেখে ছুটে আসে মাহের৷ সে বাবুর্চিদের ওখানে ছিলো। কাজের ফাঁকেই নজরে পড়ে হৈমীকে। কাছে এসে জিগ্যেস করে,
—- হৈমী তোমার কোন সমস্যা হচ্ছে রুম থেকে বের হয়েছো কেনো? শরীর খারাপ লাগছে?

—- মাহের ভাইয়া আমাকে একটা ফাঁকা রুমের ব্যবস্থা করে দাও৷ আমার খুব শরীর খারাপ লাগছে। দম বন্ধ লাগছে খুব৷

মাহের বুঝতে পেরে দ্রুত সূচনাকে ফোন দেয়৷ সূচনা তাঁর শাশুড়ী মায়ের সাথে কাজ করছিলো। মাহের তাঁকে ফোন দিয়ে সবটা জানাতেই সূচনা এসে হৈমীকে তাঁর আর মাহেরের রুমে নিয়ে যায়৷ বিছানায় আধশোয়া ভাবে বসয়ে দেয় হৈমীকে সূচনা।

কিছুক্ষনের মধ্যে মাহের এক গ্লাস ঠান্ডা পানি নিয়ে এসে হৈমীকে দেয়। হৈমী কোন কথা না বলে পানিটা খেয়ে নেয়। তাঁর খুব পানি পিপাসা পেয়েছিলো। পানি খেয়ে একটু ঠিক লাগে৷ সূচনা ফ্যানের পাওয়ার বাড়িয়ে দিয়ে হৈমীর পাশে বসে জিগ্যেস করে,
—- খুব খারাপ লাগছে?

—- না ঠিক আছি তোমার ফোনটা একটু দেবে আপু? ওনাকে ফোন করবো।

সূচনা ফোন এগিয়ে দিলো। হৈমী দ্রুত ফোন করলো রুদ্র কে। শরীর খারাপ লাগছে শুনে রুদ্র তাঁকে স্বান্তনা দিয়ে বলে দশমিনিটের মধ্যে এসে যাবে৷ মাহের নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হৈমীর দিকে চেয়ে আছে নিষ্পলকভাবে। ‘এই বাচ্চা টা নাকি কদিন পর এক বাচ্চার মা হয়ে যাবে’ ভাবতেই অদ্ভুত এক ভালোলাগা কাজ করছে তাঁর। ঠোঁটে অজান্তেই হাসি ফুটে ওঠলো। সূচনা মাহেরের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো সে তৃপ্তি নিয়ে চেয়ে তৃপ্তিময় হাসি হাসছে৷ মানুষ টা কতো অদ্ভুত ভালোবাসার মানুষ কে পায়নি অথচ না পাওয়া সেই মানুষ টার পূর্নতায় তাঁর কতো সুখ। একেই বোধহয় সত্যিকারের ভালোবাসা বলে। মাহেরের দিকে চেয়ে ভাবলো সূচনা।

সূচনার তাকানো দেখে মাহের অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। কাজের বাহানা দিয়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। তাঁর অবস্থা দেখে চাপা এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে সূচনা৷
.
বিয়ে শেষ হতেই রুদ্র আর দেরী করেনা বেরিয়ে যায় হৈমীকে নিয়ে। শরীরটা বেশ খারাপ হয়ে গেছে হৈমীর। ডক্টরকে ফোন করে সব জানাতেই ডক্টর বলে, রেষ্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে ভয়ের কিছু নেই। বাড়ি ফিরে সর্বপ্রথম তয়ালে ভিজিয়ে হৈমীর পুরো শরীর মুছে দেয় রুদ্র। তারপর দুজন মিলে শুয়ে পড়ে। কিন্তু ঘুম হয়না কারোরি সারারাত পেটে ব্যাথায় ছটফট করে যায় হৈমী৷ রুদ্র শুধু আল্লাহর কাছে সাহায্য চায়। তাঁর হৈমীর কষ্টটা যেনো একটু কমিয়ে দেয় উপরওয়ালা সেই দূয়াই করে যায় সর্বক্ষণ। স্ত্রীর গর্ভকালীন সময়ের বেদনা যদি ভাগ করে নেওয়ার কোন উপায় থাকতো রুদ্র তাহলে সেই উপায় যে কোন মূল্যেই হোক কাজে লাগাতো। একটা বাচ্চা তাঁর মা কে যেমন মা বলবে বাবাকেও তেমন বাবা বলবে৷ সে বাবা,মা উভয়েরই সন্তান হবে। অথচ তাঁকে পৃথিবীতে আনার জন্য সমস্ত লড়াই কিনা শুধু মাকেই করতে হবে? কান্না পায় রুদ্রর সহ্য হয়না হৈমীর এই কষ্ট। প্রতিটি পুরুষ কতো ভাগ্যবানই না হয়। একটা মেয়ে তাঁর দেহের সাথে কতো লড়াই করেই না তাঁর স্বামীকে বাবা ডাক শোনার ভাগ্য দেয়।
ইসলাম ধর্মে মা হিসেবে নারীকে সর্বশ্রেষ্ঠ ঘোষণা করা হয়েছে। রুদ্র তাঁর স্ত্রীর গর্ভকালীন কষ্ট দেখে স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা বাড়িয়েছে দ্বিগুন৷ মায়েদের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধাবোধ তৈরী হয়েছে সীমাহীন৷ এ পৃথিবীর প্রতিটি পুরুষ যদি তাঁর স্ত্রীর গর্ভকালীন যন্ত্রণার এক ভাগও উপলব্ধি করতে পারে তাহলে কোনদিন সে তাঁর স্ত্রী কে ছোট করে দেখবেনা। কোনদিন তাঁর স্ত্রী কে অসম্মান করার কথা ভাবতেও পারবেনা৷ স্ত্রীর প্রতি স্নেহ, ভালোবাসা, সম্মান থাকবে অটুট।

শেষরাতের দিকে যখন হৈমী ঘুমিয়ে যায়। রুদ্র তাঁর ঘুমন্ত চোখে,মুখে চুমু খেয়ে বিরবির করে বলে ‘মা আর স্ত্রীর মতোন ত্যাগ এ পৃথিবীতে আর কেউ করতে পারেনা’।
.
সারাদিনের ব্যাস্ততা কাটিয়ে রাতে যখন বিছানায় গা এলিয়ে দেয় ভাগ্যকে বড় স্বার্থপর মনে হয় সূচনার। তাঁর গভীর দীর্ঘশ্বাসের শব্দ মাহেরের কান অবদি ঠিকই পৌঁছায়। আজো তাঁর ব্যাতিক্রম ঘটেনি। তাঁর এই দীর্ঘশ্বাসের কারণ জানার ইচ্ছে হলেও জানতে পারেনি মাহের। দুজনের মাঝে বেশ দূরত্ব রয়েছে। মাহের সূচনার গা ঘেঁষে শুয়ে প্রতিদিন যে কথাটি বলে সেটি বললো,
—- স্বামী-স্ত্রীর মাঝে এতো দূরত্ব বজায় রেখে ঘুমানো উচিত নয়।

বিনিময়ে সূচনা তাঁকে এক দীর্ঘশ্বাস উপহার দিলো৷ মাহের আজ না পেরে বলেই ফেললো,

—- বিয়ের আগে আমাদের মধ্যে যে সম্পর্ক গড়ে ওঠেছিলো বিয়ের পর সেই সম্পর্কে ইতি টেনেছেন আপনি?

ইতস্ততভাবে ওঠে বসলো সূচনা। ফোনে ফ্ল্যাশ অন করে মাহেরের দিকে আলো দিয়ে জিগ্যেস করলো,

—- আল্লাহ তায়ালা আমাকে ভালোবাসার জন্য কি কাউকে পাঠায়নি মাহের?

মাহেরও ওঠে বসলো সূচনার থেকে ফোন নিয়ে বালিশের ওপর রাখলো৷ দুজনের কেউই দুজনের মুখ স্পষ্ট দেখতে পারছেনা৷ কিন্তু একে অপরের কথোপকথন শুনতে পাচ্ছে।

—- হঠাৎ এ প্রশ্ন?

—- সবাইকে ভালোবাসার জন্য সবার মা থাকে,বাবা থাকে। বাবা,মায়ের পর আসে স্বামী, সন্তান। হৈমীকে দেখুন মা নেই বাবা নেই কিন্তু ভালোবাসার জন্য রুদ্র কে ঠিক পাঠিয়ে দিয়েছে উপরওয়ালা। অপ্রকাশিত ভাবে আপনিও ওকে ভালোবাসেন। তাঁর কোল আলো করেও কদিন পর ফুটফুটে এক বাচ্চা আসবে। তাঁর ভালোবাসার কোন অভাব নেই। অথচ আমাকে দেখুন মা মারা যাওয়ার পর খালামনির কাছে মানুষ হলাম৷ বাবা তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী এবং সে ঘরের সন্তান নিয়েই ব্যাস্ত৷ কোনদিন একটা খোঁজ নিয়ে দেখলেননা তাঁর প্রথম সন্তান বেঁচে আছে না মরে গেছে। বিয়ের সময় কয়েকটা পোশাক আর গয়না পাঠিয়ে দিয়েই দায় এড়ালেন। মেয়েকে কার কাছে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে মেয়ে কোন বাড়ির বউ হচ্ছে সেসব দেখাতো দূরের কথা জানতেও চাইলেন না৷ মা মরে যাওয়ার পর বাবা কেনো এতো পর হয়ে যায় বলতে পারেন? মায়ের অনুপস্থিতিতে সন্তান কেনো এতো অবহেলিত? আমার এক বান্ধবীর বাবা নেই মা আছে। সে তাঁর মাকে নিয়েই ভীষণ সুখী। কই তাঁর মা তো বাবার অনুপস্থিতিতে তাঁর সন্তান কে অবহেলা করছেনা৷ পুরুষ রা কেনো এতো স্বার্থপর হয় বলতে পারেন? এতো পাষাণ হৃদয় কেনো হয় পুরুষদের? পুরুষরা পাষাণ হলেও সহ্য করা যায় কিন্তু বাবারা পাষাণ হলে কি সহ্য করা যায় মাহের?

সূচনার প্রতিটা কথা, প্রতিটা প্রশ্ন মাহেরের বুকে তীরের মতো বিঁধল। তাঁর অভিযোগে কোথাও না কোথাও সেও রয়েছে। তাঁকে যেনো কাঠগোড়ায় দাঁড় করিয়েছে আজ সূচনা৷ কিন্তু কেনো?

—- আল্লাহ তায়ালা সবার ভাগ্যে সবটা রাখেনা সূচনা। আপনার মা নেই তো কি হয়েছে আমার মা কি আপনার মা নয়? আমার বাবা কি আপনার বাবা নয়? তাঁরা কি আপনাকে ভালোবাসেনা?

নিঃশব্দে চোখের অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে সূচনা। তাঁর ভিতরের কষ্টটা হয়তো সে কোনদিন মাহেরকে বুঝাতে পারবেনা৷ সূচনার নীরবতা দেখে মাহের প্রশ্ন করলো,

—- আপনাকে সবাই খুব ভালোবাসে সূচনা। কিন্তু আপনি সেটা বুঝতে পারেন না।

—- আপনি বাসেন? ভাঙা আওয়াজে প্রশ্ন করলো সূচনা৷

একটু দমে গেলো মাহের। মাহেরের উত্তর না পেয়ে তাচ্ছিল্যে হাসলো সূচনা৷ বললো,

—- আপনার মনে তো অন্য কেউ রয়েছে এমন প্রশ্ন করা উচিত হয়নি আমার৷ অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ুন৷

সূচনা শুতে যাবে তখনি মাহের শান্ত গলায় বললো,

—- আমার শেষ জীবনের সঙ্গীকে যদি আমি ভালোই না বাসতে পারি তাহলে মানুষ হিসেবে আমি খুবই জঘন্য একজন। আমি আমার স্ত্রীকে যথেষ্ট ভালোবাসি, আমি আমার স্ত্রীকে যথেষ্ট রেসপেক্ট করি। তাই তাঁর ইচ্ছেকে অবমূল্যায়ন করিনা কখনোই।

চমকে ওঠলো সূচনা৷ বুকের ভিতরটায় কি যেনো চেপে ধরলো তাঁর। প্রশ্ন করে ফেললো কিসের ইচ্ছে?

উত্তরে মাহের বললো,

—- যেদিন আমায় বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন সেদিনের প্রতিটি কথা স্মরণ করুন৷

ধীরে ধীরে সবকথা স্মরণ করে সূচনা। বিস্ময় চোখে তাকায় মাহেরের দিকে। মাহের এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজ স্থানে শুয়ে পড়ে। অভিমানে কান্না পায় সূচনার। সেও শুয়ে পড়ে। মাহের তাঁর গা ঘেঁষে শুতেই সে সরে যায়। তীক্ষ্ণ গলায় বলে,

—- আপনিও স্মরণ করুন সেদিনের কথাগুলো। খুব তো বলেছিলেন আপনার স্ত্রী যদি একটা সন্তান চায় তা দিতে বাঁধ্য আপনি৷ তাহলে এখন কেনো বাঁধ্য হচ্ছেন না?

মৃদু হাসে মাহের। দুহাতে বুকে জরিয়ে নেয় সূচনাকে। মৃদু স্বরে বলে,

—- আমার বউ তো তাঁর ইচ্ছের কথা জানায়নি তাহলে বাঁধ্য হবো কি করে?

হুহু করে কেঁদে ওঠে সূচনা। মাহের চমকে যায়। কান্নার কারণ জিগ্যেস করার আগেই সূচনা বলে,

—- আমাকে একটা বাচ্চা দিবেন প্লিজ? আমার একটা বাচ্চা চাই৷ নিঃস্বার্থ ভালোবাসা চাই আমার। প্লিজ মাহের মা ডাক শুনতে দিন আমায়৷ আমি আমার নিজের মা কে প্রাণখুলে ডাকতে পারিনি। কিন্তু আমি আমার বাচ্চার প্রাণখোলা মা ডাক শুনতে চাই।

সূচনার কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিলো মাহের৷ চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,

—- বাচ্চার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা পেতে হলে আগে বাচ্চার বাবার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা পেতে হবে।বাচ্চার বাবার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা না পেলে বাচ্চাও নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসবে না।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here