অতঃপর মিঠিকথা,১,২,৩,৪

0
2294

অতঃপর মিঠিকথা,১,২,৩,৪
শানজানা আলম

কলেজ থেকে বাসায় ফিরতে প্রায় সাড়ে পাঁচটা বেজে যায় মিঠির।
আজ একটু বেশিই দেরী হয়ে গেলো। তরুর জন্মদিন ছিল, সবাই একত্রে রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলো।
মেইন দরজাটা খোলা।
ড্রয়িংরুমে ঝাড়বাতির হলদে আলো দেখা যাচ্ছে সিড়ি থেকেই, তার মানে হলো বাসায় বিশেষ কেউ এসেছে।
বাসায় ঢুকে মিঠি দেখলো দুজন মহিলা বসে আছে। দুজনই স্থূল এবং ফর্সা। একজনের দুহাতে ভীষণ মোটা দুটো গোলাপবালা। পেস্ট কালার ওড়না পরে আছেন।
আরেকজন বাদামী ওড়নায় মাথা ঢেকেছেন।

মিঠির মা ডাকলেন, মিঠি এদিকে আয় তো, ট্রে টা ড্রয়িংরুমে দিয়ে আয়।
–কি আশ্চর্য মা, আমি মাত্র বাসায় ঢুকলাম, তুমি দিয়ে আসো।

–না, তুই দিয়ে আয়।

মিঠি মুখ কালো করে দিয়ে চলে আসতে লাগলো।
গোলাপবালা পরিহিতা মহিলা বললেন, তোমার নাম মিঠি?

–জি?

–কি পড়ছো?

-বিবিএ, ফার্স্ট ইয়ার।

-সিটি কলেজ?

-জি?

-রোজই এমন সন্ধ্যা হয় ফিরতে?

মিঠি বিরক্ত হলো, ওর ফিরতে সন্ধ্যা হয় কি না সেটা জিজ্ঞেস করার ইনি কে!

তারপরেও উত্তর দিলো, মাঝে মাঝে হয়।

আচ্ছা তুমি ফ্রেশ হও তাহলে!

মিঠি নিজের রুমে চলো গেলো।
এদের আসার কারণ জানা গেলো রাতের খাবারের পর।
মা এসে জানালেন, এই দুই মহিলা তিন তলার শায়লা আন্টির চাচাতো বোন।
এদের একজনের একটা ছেলে আছে, তার জন্য মেয়ে খুঁজছে।
শায়লা আন্টি মিঠির কথা বলেছিলো, তাই তারা মিঠিকে ইনফর্মালি দেখে গেলেন। তাদের খুব পছন্দ হয়েছে।
ছেলেটা ভালো চাকরি করে। একটাই ছেলে। ভাই বোন নেই।
বাবা মা আর ছেলে। নিজেদের ফ্ল্যাট আছে। ছেলে পড়াশোনা করেছে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে।

মিঠি চোখ বড় বড় করে শুনলো! তারপর বললো, এক ছেলে, বাবা মায়ের এক্সপেকটেশন অনেক বেশি, আমি এখানে বিয়ে করবো না।
আর থার্ড ইয়ারে ওঠার আগে পাত্র দেখবা না মা!

-পাত্র তো চাইলেই পাওয়া যাবে না। বিয়ের পরে পড়বি, তোর আপুরা পড়েছে না?

-পড়েছে, কিন্তু সবাই টানাটানি করে সার্টিফিকেট নিয়েছে, কেউ ভাল কিছু করতে পারেনি।
বড়পা তো মাস্টার্স এ ভর্তি হয়েও ক্লাশ করতে পারছে না।
মেজ আপার ইয়ার ড্রপ।
বাবু ছাড়া তো আর কেউ নেই বিয়ে দেওয়ার। আমাকে একটু পরে বিয়ে দিও।

মিঠির মা কথা বাড়ালেন না। অভিজ্ঞতা থেকে তিনি দেখেছেন, বিয়ে যখন হবে, তখম একশটা বাঁধা থাকলেও হবে। যেটা হবে না, সেটা সব রেডি করা অবস্থায়ও ভাঙতে পারে। ছেলেটাকে পছন্দ হয়েছে।
শায়লা ভাবি মোবাইলে দেখিয়েছেন। হাইট ভালো, মোটাও না, পাতলাও না। গায়ের রঙ শ্যামলা। চশমা পড়ে।
বায়োডাটায় লেখা নাম মোঃ জামিলুর রেজা।
অফিসের নামটা দেখা হয়নি খেয়াল করে।
একটু খোঁজ নেওয়াতে হবে।

মিঠি যার পর নাই বিরক্ত শায়লা আন্টির উপর।
শায়লা আন্টি তাদের বিল্ডিংয়ের তিন তলায় এসেছেন মাস তিনেক হলো। এমনিতে ভালো, কিন্তু গসিপবাজ।
এই এখন টিপিক্যাল আন্টিগিরি শুরু করেছে।
মা টেবিলের উপর ছেলেটার বায়োডাটা রেখে গেছে, আরে ধূর, দেখার কি আছে। মিঠি এখন বিয়ে করবে না।

★★★

রেজা বাসায় ঢুকেছে অনেকক্ষণ। মা দুবার ঘুরঘুর করে গেছেন। নিশ্চয়ই কোন মেয়ের খবর আছে। আপাতত তার
মা এবং খালাদের একটাই কাজ, বিভিন্ন জায়গা থেকে মেয়ের খবর জোগাড় করা।
রেজা মনে মনে হাসলো, কি আগ্রহ নিয়ে যে খালামণিরা কাজটা করে।

মা, কিছু বলবে?

রেহানা বেগম কোন ভণিতায় না গিয়ে বললেন, একটা মেয়ের ছবি আছে এই খামে, বায়োডাটা করা নেই, সিটি কলেজে অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পরে, আমার ভাল্লাগছে, দেখে আসছি। তুই চাইলে শুক্রবার এ শায়লার বাসায় চা খেতে আসতে বলবো। আমরাও যাবো।

-আচ্ছা রাখো, দেখছি!

রেহানা বেগম বিছানার পাশে সাইড টেবিলে ছবি রেখে চলে গেলেন।

রেজা অনেকক্ষণ মুভি দেখলো, বেশ ভালো একটা সিরিজ শুরু করেছে। শেষ না করে আরাম পাবে না। ঘুমাতে যাওয়ার সময় খামটা খুলে দেখলো, আহামরি কিছু না, তবে ছিমছাম পরিপাটি ছবি, তাও ভালো সেলফি প্রিন্ট করে পাঠায়নি।
দেখা করা যেতে পারে।

সকালে কথা বলে নিবে, এখন মা ঘুমিয়ে পড়েছে।
রেজাও ঘুমিয়ে গেলো।

২-
মিঠির বাবা, আমি তোমার ছোট মেয়েকে নিয়ে পারি না, কত বললাম, শায়লা ভাবীর বাসায় ছেলেটা আসছে, একটু শাড়ি পড়ে চল, আধ ঘন্টা থাকত না হয়, তা না, যাবেই না।
এমন হলে আগে বলত! – মিঠির মা মিনারা জোরে জোরে বলছেন মিঠি যেন শুনতে পায়।

মিঠি শুনলো কিন্তু উত্তর দিলো না। বাবা কি বলছে শোনা গেলো না। মিঠি গায়ে একটা কাঁথা টেনে মুড়ি দিয়ে শুয়ে রইলো।

গত পরশু বুধবারে রেজার আম্মা জানিয়েছেন তারা শুক্রবারে আসবেন। মিঠি বলেছে, আসবে!
তো?
মিঠির মা কথার টোন বুঝতে পারেনি।
এখন মিঠি বলছে সে আসবে তো আমার কি?
শায়লা আন্টি তার আত্মীয়, আসতে পারে না? আমি যাবো না!

মিঠির মা পরাস্ত হয়ে গেলেন শায়লা ভাবীর বাসায়।
গিয়ে বললেন, মিঠি বাসায় নেই!
জরুরি ভিত্তিতে টিচার ডেকেছে ফর্ম ফিলাপের বিষয়ে, তাই সেখানে গিয়েছে!

রেজা আর রেজার মা একটু বিব্রত হলেও শায়লা ভাবী সামলে নিলেন।
তিনি বললেন, রেজা তুমি ছাঁদে ঘুরে এসো। ভালো লাগবে।

মিঠিদের বাড়িটা চার তলা। নিচতলা গ্যারেজ।
সার্ভেন্ট কোয়ার্টার ছিল একসময়। মিঠির দাদা ছিলেন সচিব। কিন্তু বাবা তেমন কিছু করতে পারেন নি। ছাত্র ভালোই ছিলেন, কিন্তু এক ছেলে বলে ঠিক মাথায় যেতে পারেননি।
বিভিন্ন ব্যবসার চেষ্টা করে শেষে ক্ষান্ত হয়ে বাড়িতে বসে পড়াশোনা করেন।
দাদার রেখে যাওয়া এই বাড়ির ভাড়া আরও বাড়ির সামনে কয়েকটা দোকানের ভাড়া দিয়ে তিনি চলেন।

মেয়েদের কম বয়সেই বিয়ে দিয়েছেন মিঠির মা। বয়স কম, সুন্দরী থাকা অবস্থায় ভালো সম্বন্ধ আসে, দাবি দাওয়া থাকে না। তিন মেয়ের মধ্যে দুজন পার হয়েছে, বাকি মিঠি শুধু।
বাবু ছেলে, ক্লাশ সেভেনে পড়ে।

যাই হোক, মিঠিরা থাকে চারতলায়, দোতলা তিনতলা ভাড়া দেওয়া।
বাড়িটা ধানমন্ডি ২ এর কাছাকাছি।
চারপাশ দেয়াল করা। ভেতরে বড় বড় কয়েকটা রেইনট্রি গাছ, একটা কদম গাছ, একটা বকুল গাছ, সাথে আম আর কাঠাল গাছও আছে। সিজনাল ফুল গাছ লাগায় মিঠির বাবা। কামিনি, গন্ধরাজ আর স্থলপদ্ম, বোতলব্রাশ গাছ বাগানের শোভা বাড়িয়ে চলেছে।
বড় গাছগুলোতে বড় মানিপ্ল্যান্টের পাতা জড়িয়ে আছে।

বাড়িতে ঢুকে রেজার ভালো লেগেছিলো, ঢাকা শহরের পুরোনো বাড়িগুলোতে কত গল্প লুকিয়ে আছে মনে হয়।
এবাড়িতে আত্মীয়তা হলে খারাপ হয় না।
বেড়াতে ভালো লাগবে।

এখন একটু বিব্রত লাগছে। রেজা জিজ্ঞেস করলো, নিচে যাওয়া যায় আন্টি?

মিঠির মা বললো, হ্যা কেন যাবে না, তুমি ঘুরে দেখে এসো বাবা।

রেজা নিচে নেমে কিছুক্ষণ বাগানে ঘুরলো।
তারপর ভাবলো ছাদে যাবে।

মিঠির মা শায়লা আন্টির বাসায় যেতেই মিঠি বাবলের পাইপ আর শ্যাম্পু নিয়ে ছাদে উঠে গেলো। ছাদের পানির ট্যাংকের উপরে মিঠি একটা বসার জায়গা আছে।
ওখানে বসে ও বাবল ওড়ায়, বই পড়ে, গান শোনে।
এখন মেজাজ খারাপ আছে, বাবল ওড়ালে মাথা ঠান্ডা হবে!

রেজা ছাদে উঠে দেখলো ট্যাঙ্কির কর্ণারে বসে পা ঝুলিয়ে মিঠি বাবল ওড়াচ্ছে।
কি সুন্দর দৃশ্য। মিঠি একটা সাদা স্কার্ট পড়ে বসে আছে। গায়ে একটা পাতলা চাদর জড়ানো।
চুলগুলো এলোমেলো ভাবে পাঞ্চ করা পেছনে।
সেই ছবির সাদামাটা মেয়েটা এত মিষ্টি দেখতে হবে আশা করেনি রেজা। তবে এক্ষেত্রে মিঠির মা একটু চালাকি করেন, তার মেয়েরা সুন্দরী, তিনি ইচ্ছে করে সাধারণ ছবি পাঠান। তারপর মেয়ে দেখতে এসে পাত্রপক্ষ খুশি হয়ে যায়।
আগের দুবার এমনই হয়েছে। তবে তখন মেয়েদের তিনি সাজিয়ে এনেছিলেন।
তবে এখনকার পরিস্থিতি ভিন্ন।
এক কথায় এই আটপৌরে দুরন্ত মিঠিকে ভীষণ ভালো লেগে গেলো রেজার।

কিন্তু মেয়েটির মা মিথ্যে কথা বলেছে।
একটাই কারণ হতে পারে, মেয়ে আসতে চায়নি, তিনি বিব্রত ও অপ্রস্তুত হয়েছেন। যাক, মিঠিকে তো দেখা হয়ে গেলো, চুপচাপ আসার কারণে মিঠি টের পায়নি ঠিক। উত্তরমুখী হয়ে বাবল ওড়াতে ব্যস্ত ছিল, রেজা পশ্চিম দিকের সিড়ি থেকে উঠে দেখেছে।
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রেজা তিনতলায় চলে গেলো।

বাসায় গিয়ে জানিয়ে দিলো, মিঠিকে বিয়ে করতে তার আপত্তি নেই, দেখাশোনা আর লাগবে না। এখন অন্য আয়োজন করে ফেলা হোক!

মিঠি যখন শুনলো, তার বিয়ে প্রায় ঠিক, তখন সে বেঁকে বসলো।
কিছুতেই বিয়ে করবে না এখন।
মা অনেক বুঝালো, শায়লা আন্টি কম চেষ্টা করলো না।
কিন্তু মিঠি রাজী না তো নাই।
এটা কেমন কথা, আমি তো ছেলে দেখি নাই, এখন এমন বিয়ে হয় নাকি!

শেষে মা ব্লাকমেইল শুরু করলেন।
দেখো মা, এই বাড়িটা অনেক বড় কিন্তু পুরোটা তোর বাবার না, তোর ফুপু এত বছর ঝামেলা কম করেনি, কিন্তু আমরা দেখেও দেখি নাই, এখন যদি ডেভেলপারকে দিয়ে দিতে হয়, তোর বিয়ে কোথায় বসে আয়োজন করবো, আমাদের তো লাখ লাখ টাকা খরচ করার সামর্থ্য নাই।
বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু হলেও ২/৩ বছর লাগবে, তখন তোর বয়স বেশি হয়ে যাবে আম্মা, এমন ছেলে যদি না পাই!

মিঠি বললো, আমার বয়স উনিশ, ৩/৪ বছরে এমন কিছু হবে না মা।

যাইহোক একটু দেখা কর! দেখা করলেই তো বিয়ে হয়ে যায় না।
সেটা অবশ্য ঠিক। মিঠি ঠিক করলো একটু দেখা করে আসবে।।

★★★

তরু মিঠি ইপা রনি সাজিদ পায়েল আর রূপক, এরা একটা গ্রুপ। খুব কাছের বন্ধু। সবাই ধানমন্ডির আসেপাশেই থাকে।
স্কুল থেকে একসাথে।
মিঠি জরুরি ভিত্তিতে সবাইকে আট নম্বরে আসতে বললো।
চা হাতে হাতে নিয়ে সরোবারের ঘাটে বসলো সবাই।
মিঠি বিষয়টা খুলে বললো, কি করা যায়, বিয়েটা ভাঙতে হবে!

তরু বললো, এত কাহিনি করে লাভ নাই, বিয়া কইরা ফেল, করতেই হবে তো!

ইপা বললো, তুই এত স্বার্থপর তরু! বলে বাদাম ওয়ালাকে ডাকলো, ওই পিচ্চি দশ টাকার বাদাম…..

-দশ টাকার বাদামে কি হবে ইপস, রনি জিজ্ঞেস করলো।

পায়েল এক কথায় বলে দিলো, ওনাকে ডাক, ধোলাই দিয়া দি! কাম শ্যাষ! পপকর্ণের প্যাকেট উত্তেজনায় ছিড়তে গিয়ে নিয়ে পরে গেলো অনেকটা।

মিঠি সব শুনে বললো, তোরা সিরিয়াসলি নিচ্ছিস না।
এখন বিয়ে করা মানে বোঝো, সব ওই ব্যাটার কথা মতো করা লাগবে!

সাজিদ মিঠিকে একটু একটু পছন্দ করে, ও বললো, শোন আমাকে নিয়ে যা, আলাপ করিয়ে দে, তোর বিএফ, ব্যস, উনি আর আগাবে না!

এটা করা যায়, আলাপের দরকার নাই, গিয়ে বলব, আমার অ্যাফেয়ার আছে! ওকে ডান-মিঠি মাকে ফোন করে বললো, ওই ছেলেকে এখনি ধানমণ্ডির কোন রেস্টুরেন্টে আসতে বলো!

এখনি আসবে মানে কি, তুই তো সেজেগুজে যাসনি, আর ওর অফিস আছে না!

ওকে, তাহলে সন্ধ্যায় আসতে বলো!

-আচ্ছা বলছি!

★★★

মিঠি এত সহজে রাজি হবে, দেখা করতে এটা রেজা বোঝেনি! যে বাসায় থেকেও মা কে মিথ্যে বলাতে পারে, সে এত সহজে আসবে! তবুও রেজা চলে গেলো!
রেস্টুরেন্টে বসতে হলোনা বেশিক্ষণ, মিঠি চলে এলো।
একটা সবুজ সবুজ ছাপা সালোয়ার কামিজ পরে এসেছে, বাহ, আজকে অন্যরকম ভালো লাগছে।

মিঠি এসে বসলো! রেজা বললো, কেমন আছেন?
মিঠি উত্তর দিলো না।
আবার জিজ্ঞেস করলো, কফি বা জুস কি নিতে চান?
অর্ডার করি?
মিঠি কথা বললো না!
রেজা আবার বললো, আপনি কি কিছু বলবেন না?

এবার মিঠি বললো, দেখুন আমি এনগেজড, আমি এখন বিয়ে করতে পারবো না!

রেজা বলল, ওহ আচ্ছা। ঠিক আছে।

মিঠি বললো, আমি যাই!

রেজা বললো, এত তাড়াতাড়ি উঠলে রেস্টুরেন্টের লোকজন কি মনে করবে, একটা কফি খেয়ে যান।আমি অর্ডার করছি।

মিঠি ভাবলো, আচ্ছা ঝামেলা তো শেষ একটা কফি খেতে কতক্ষণ লাগবে। যাই হোক এত তাড়াতাড়ি ফিরে গেলে মাও সন্দেহ করবে।

কফি চলে এলো! কফি খেতে খেতে রেজা জিজ্ঞেস করলো , আপনার ফিয়াসে কি করেন? সরি একটু ব্যক্তিগত প্রশ্ন হয়ে গেলো।

-আমার সাথেই পড়ে!

রেজার এবার খেয়াল করলো , মিঠি মিথ্যে বলছে। মিথ্যে বলার সময় গলা একটু কেঁপে যায়।
ও কফি খেতে খেতে ঠিক করে ফেললো, দেখা যাক, মিঠি কি কি করে!

রেজা আবার বললো, ওহ আচ্ছা, সিরিয়াস কিছু না তাহলে!

-সিরিয়াস না মানে কি!

–আপনার সহপাঠী চাকরি পেতে পেতে আপনার বিয়ে হয়ে যাবে কোথাও না কোথাও। তাই আমাকে বিয়ে করতেই পারেন কোন সমস্যা নেই।আর আজকাল অ্যাফেয়ার না থাকাটাই বরং অদ্ভুত। বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ডও একটা ট্রেন্ড বলতে পারেন।

—মানে আমার রিলেশন আছে, এটা জেনেও আপনি বিয়ে করতে চান? বিয়ে ভাঙবেন না? তাই তো!

–+মানে আপনি না করতে চাইলে তো জোর করা যাবে না, তবে আমার আপত্তি নেই। আপনি আপনার বাসায় বলুন। তারা না করলে তখন দেখা যাবে।

—আমি আপনাকে বিয়ে করবো না।

মিঠি উঠে দাঁড়ালো, রেজা বললো, হুম, আমাকে অপছন্দ করার কারণটা কি? আপনার অ্যাফেয়ার?

-হু!

—অ্যাফেয়ারের বিষয়টি কিন্তু ইস্যু না। আমি কিন্তু পাত্র হিসেবে খুব একটা খারাপ না।

–আমি আপনাকে খারাপ বলিনি। বলেছি বিয়ে করবো না।

–ওকে, একটা কথা জানতে চাই, আপনি সেদিন বাসায় থেকেও দেখা করতে আসেননি, এটা কি এই অ্যাফেয়ারের জন্যই?

মিঠি একটু চমকালো, উনি জানলো কিভাবে, মা বলেছে? বলার কথা না তো!

-আচ্ছা ঠিক আছে, আপনার যখন আমাকে পছন্দ হলোই না, তখন আর কথা বাড়িয়ে লাভ নেই! ভালো থাকুন, শুভকামনা রইলো।

-ধন্যবাদ, আমি আসছি!

মিঠি চলে গেলো! একটু নিশ্চিন্ত লাগছে।
এখন আর কথা আগাবে না।

রেজা অনেকক্ষণ বসে আরো দু কাপ কফি খেয়ে ফেললো! তারপর বাসায় গিয়ে জানালো, মিঠিকে তার খুব ভালো লেগেছে, এনগেজমেন্ট এর দিন এর বিষয়ে কথা বলতে।

-৪

মিঠি শুনলো রেজা বিয়েতে হ্যা বলেছে, মা খুব খুশি। মিঠি যে না বলছে, সেটা শুনছে না। এখন বোঝানোর চেষ্টাও করছে না। মিঠি বাবার কাছে গেলো, বাবা উল্টো ইমোশনাল কথা শুরু করলেন।

এনগেজমেন্ট দু সপ্তাহ পরে, ঘরোয়া ভাবে আংটি পড়িয়ে যাবে।

মিঠির আপুদের সাথে কথা বলা দরকার, কিন্তু তার সব বড়লোক জামাই পেয়ে সংসার নিয়েই ব্যস্ত, মিঠির সমস্যা কেউ বুঝতে চাইবে না।
অতঃপর মিঠি সবাইকে ডাকলো আবার। এবার ধানমন্ডি ৩২ এ, পা ছড়িয়ে সবাই বসে পড়লো। পায়েল বললো, আগেই বলছিলাম, ধইরা ছ্যাচা দি, বিয়া করার শখ মিটে যাবে।
তুই ছ্যাচড়া ব্যাটা বিয়া করার আর মেয়ে পাস না!
শুনলি যে বিএফ আছে, তাও বিয়া করা লাগবে!

মিঠি বললো, কিভাবে বিয়ে ভাঙবি তোরা জানো!
এখন বিয়ে করা সম্ভব না, অন্তত আরো তিন বছর পরে দেখা যাবে!

রনি বললো, একটা আইডিয়া আছে, সাতাশ নম্বরের পেছনে “শেফ চাওমিন” নামে একটা রেস্টুরেন্ট হইছে, একটু এক্সপেন্সিভ, চল ওনাকে ওখানে ডাকি, তারপর ইচ্ছা মতো অর্ডার করি, একদিন বিল দিয়েই বেচারা পালাবে!

মিঠি বললো, ভালো আইডিয়া দে, ছ্যাচড়ার মতো খাই খাই করিস না তো!

তরু বললো, নট এ ব্যাড আইডিয়া মিঠি, উনি নিজেও তো ছ্যাচরা। তোর সাথে সাজিদকে দেখাবি, একটু হাসাহাসি করবি, উনি বুঝে যাবে! তারপর নিজেই বিয়ে ভাঙবে!

আইডিয়া সবারই পছন্দ হলো!

ইপা বললো, নম্বরটা দে তো, মিঠি মাকে ফোন করে রেজার নম্বর নিয়ে নিলো। মিঠির মা খুশি মনে নম্বর দিয়ে দিলেন!

ইপা ফোন করলো রেজাকে। রেজা একটা মিটিং এ ছিলো।
দুবার ধরতো পারলো না।
তৃতীয়বার বের হয়ে ফোন ধরলো!

– হ্যালো দুলাভাই? কেমন আছেন?

– কাকে চাচ্ছেন? কে দুলাভাই?

-কেন, আপনি, রেজা দুলা না? মিঠির সাথে বিয়ে ঠিক হইছে?

-ওহ আচ্ছা, তো তুমি কে শ্যালিকা?

কঠিন মাল তো, শ্যালিকা বলছে!
-জিজু, আমি ইপা, মিঠির বোজম দোস্ত! আমি একা না আরো কয়েকজন আছি!
-ওহ হো! আচ্ছা! আমাকে ফোন করলে হঠাৎ?

-জিজু, ট্রিট দেন! আমরা সবাই ধানমন্ডিতে আছি, আপনি আইসা পড়েন। মিঠিকেও নিয়া আসি!

নিশ্চয়ই কোন মতলব করছে, এই বয়সে এমন আমরাও করেছি, রেজা হাসলো মনে মনে।
তারপর বললো, আমিও আমার বন্ধুদের নিয়ে আসি??

-পরে পরে, আগে আপনি একা আসেন!
শেফ চাওমিন, ধানমন্ডি ২৭ এ।

রেজা ভাবলো এড়িয়ে যাবে, পরে মনে হলো দেখি না কি করে! তাই বললো, এখনি তো পারবো না, সন্ধ্যার পরে আসি?

-ওকে ওকে জিজু, ডান!
আমরা আসব কিন্তু, ভুয়া দিয়েন না!

রেজা হেসে বললো, শ্যালক শ্যালিকাকে প্রথমেই ভুয়া দিই কি করে!

★★★

সন্ধ্যার পরে ওরা সবাই চলে এলো শেফ চাওমিনে। প্লান হলো, সাত জন সবাই তিনটা আইটেম অর্ডার করবে, মোটামুটি ১৫০০০ এর কাছাকাছি বিল করাতে হবে।
ভাইজান যেন ইয়া নফসি করে পালায়।

রেজা সরাসরি অফিস থেকে এসেছে।
রেস্টুরেন্টের কমলা হলুদ আলোয় অফিসের ফর্মাল পোশাকে রেজাকে দেখতে ভালো লাগছিল। খুব একটা ফর্সা নয়, লম্বা, স্পষ্ট চোখ, মিঠি আঁড়চোখে খেয়াল করছিলো।।হাতে একটা শপিং ব্যাগ!
একবার মনে হলো, সরাসরি কথা বলে চলে যাই!

রেজা মিঠিকে দেখলো একবার, জিন্স আর লাল রঙের কুর্তি পড়ে এসেছে, কোন কারনে সাজে নি একদমই!
তবে ভালো লাগছে দেখতে। মিঠির চোখগুলো কালো নয়, একটু বাদামি। মাঝে মাঝে অচিনপুরের রাজকন্যা মনে হয়!

রেজা আসার সময় রেস্টুরেন্টের পেজে ঘুরে দেখেছে, সবই এক্সপেন্সিভ মেনু, ওদের প্ল্যান হলে হতে পারে টাকা খরচ করানো! এর বেশি কিছু হবে না!

যাই হোক আগে আলাপ পরিচয় সাড়লো সবার সাথে,ইপা জিজুউ বলে এমন আহ্লাদী করলো, মিঠির বিরক্ত লাগতে লাগলো।
ইপা বললো, জিজু কি ভালো, এই জায়গায় বলতেই নিয়ে এসেছে, তোর বিএফ তো কোথাও নিয়ে যায় নি!
বলে চোখ টিপ দিলো!
রেজার মনে হলো, ওরা সবাই বাচ্চাদের মতো শিখিয়ে দেওয়া অভিনয় করছে।

ওয়েটার চলে এলো!
রেজা ছেড়ে দিলো ওদের হাতে, বলো কে কি খাবে?
পায়েল আর রনি বললো, চারটা ফ্রাইড রাইস, চারটা বিফ সিজিলিং, ফিস উইথ রেড সস তিনটা, থাই স্যুপ স্পেশাল তিনটা, চারটা অনথন, চারটা স্প্রিং রোল, ইপা বললো, মাশরুম??
-ওহ মাশরুম উইথ সিফুড কি যেন দেখেছি!

যাই হোক ওটাও চারটা!

আরো আইটেম চারটা করে অর্ডার দেওয়া হলো!
ওয়েটারের হাতের কাগজটা ভরে গেলো লিখতে লিখতে। রেজা বললো, এগুলো তো ওয়ান স্টু ফোর, চারটা করে বেশি হয়ে যাবে না?

আরে জিজু খাওয়াবেএ, ইপা বলে উঠলো!

মিঠি বিরক্ত হয়ে বললো, ইপা এত জিজু জিজু করিস না তো, বিরক্ত লাগছে।

রেজা বললো, ওকে, ফাইন, এখানে এত খাবার নষ্ট হবে, কেউ খেতে পারবে না।
ওয়েটারকে একশ টাকা বখশিশ দিয়ে বললো, পাশের বিল্ডিংএ একটা বুফে রেস্তোরা আছে, ওখানে চলো। যত আইটেম মন চায় খাবে।
ওরা সব বেলুনের মত চুপসে গেলো!
এখান থেকে চলে যাবো!

হু, অর্ডার দেখে মনে হচ্ছে তোমাদের অনেক কিছু খেতে ইচ্ছে করছে, ওখানে চলো যাই।
এই টাকায় ওখানে মোর আইটেম পাবে।

-টু মাচ স্মার্ট, নিজেকে খুব চালাক ভাবে, মিঠি মনে মনে ভাবলো!

কই ওঠো চলো, দেরী হলে আইটেম ফুরিয়ে যেতে পারে!
মিঠি চলো!

অগত্যা সবার উঠতে হলো!
বুফেটা ভালো ছিলো, রেজার বাজেট ক্রস করলো না! মিঠি ছাড়া সবাই হুড়মুড় করে খেয়ে ফেললো!

রেজা বিষয়টা খেয়াল করলো!
তবে কিছু বললো না!

বের হওয়ার সময় বললো, মিঠিকে আমি পৌছে দিয়ে যাই?
অবশ্য যদি তোমরা বলো!

একজন এত কিছু খাওয়ানোর পরে তাকে না করাটা অভদ্রতা।
তাই মিঠিকে নিয়ে রেজা রিক্সা নিয়ে নিলো।

মিঠি কোন কথা বলছিলো না।

অনেকক্ষণ পরে রেজা বললো, প্ল্যান তো এটাও মাটি হয়ে গেলো! পরেরটা কি হবে?

উফফ, অসহ্য লোকটা, সব বুঝে ফেলছে আবার খোঁচা দিচ্ছে!

আমাকেই আপনার বিয়ে করতে হবে??

হু

কেন??

কারণ তোমাকে ভালো লাগছে, তোমার বাসা থেকেও রাজি।
তোমারও আপত্তির কারণ দেখছি না।আমি তো এতোটা খারাপ না মনে হয়!!

মিঠি কথা বাড়ালো না। উনি খারাপ না, মিঠি এখনি বিয়ে করতে চায় না। সেটা কাকে বোঝাবে!
বাসার সামনে এসে মিঠি নামলো।
রেজা শপিং ব্যাগটা দিলো মিঠিকে।

মিঠি বললো, আমি কিছু নেবো না।

নাও, তোমার জন্যই আনা,, ভালো লাগবে তোমার!

মিঠি অনিচ্ছায় নিলো! থ্যাঙ্কস দিলো খুব আস্তে!

রেজা দাঁড়ালো না, ওই রিক্সা নিয়েই চলে গেলো।

মিঠি নিজের রুমে ঢুকে প্যাকেটটা খুলে অবাক হয়ে গেলো।
তিনটা আলাদা শেপের বাবলের বটল, পাইপ সহ আর একটা টকটকে লাল গোলাপ!

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here