অস্তিত্বের খোজে,পর্বঃ ২২

0
2241

অস্তিত্বের খোজে,পর্বঃ ২২
নাফিসা মুনতাহা পরী



– ভোরে আযানের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার। শুভ্র ঘুমাচ্ছিল তখনও……. আমি ওয়াসরুমে গেলাম দেন ফ্রেস হয়ে ওযু করে আসলাম।
– শুভ্রের গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে আস্তে আস্তে শুভ্র….. শুভ্র বলে ডাকলাম।


– হুম বলে চোখ খুলল। শুভ্র পরীকে দেখে বলল কিছু বলবা! বলেই পাশ ফিরে আবার শুইল।

– শুভ্র ওঠো আমার সাথে নামায পড়বে আসো……

– এত্ত সকালে,,,,,,,! আর একটু ঘুমাইনা?

– না,,,,,,, একদম বাহানা করবা না বলেই ওর গা থেকে কম্বল কেড়ে নিয়ে বললাম এক্ষুনি মানে এখুনি উঠবা



– একদিন না যেতেই আমায় শাসন করছো পরী?

– হ্যাঁ করছি,,,,,,,,,,,, জলদি ওঠো। আমি ওয়েট করে আছি তো…..

– পরীর কথা শুনে শুভ্র উঠে ওয়াশরুমে গেল এবং ফ্রেস হয়ে ওযু করে এসে পরীর সাথে সালাত আদায় করে আবার সুয়ে পড়ল।



– শুভ্র সুয়ে পড়লে আমি একটু বাহিরে গেলাম। কেউ ওঠেনি এখনো……. তাই আমাদের জন্য ২ কাপ কফি বানালাম এবং রুমে চলে আসলাম। এসে দেখি মহাশয় এখনও পরে পরে ঘুমাচ্ছে।



– এসিটা অফ করে জানালা গুলো খুলে দিলাম। চিন্তা করছি ওকে ডাকব কিনা….. ঘুমাচ্ছে তো!


– কিছুক্ষন পর শুভ্র জেগে উঠে বলল,,,,,,,,পরী এসি অফ করছো কেন! আমার গরম লাগছে তো?

– কম্বল গায়ে দিয়ে কেন এসি চালাও। অপচয় করতে নেই জানোনা?

– পরে তোমার লেকচার সুনাইও,,,,,,,,,,, প্লিজ এসিটা ছাড় বলেই শুভ্র চুপ করে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল।

– কি আর করা,,,,,,,, সব জানালার থাই বন্ধ করে এসি অন করে ওর পাশে বসলাম। কফি আর আমাদের কারো খাওয়া হলনা।



– সকাল ৮ টার দিকে আবার ওর গায়ে হাত বুলিয়ে দিয়ে আস্ত আস্তে করে ডাকলাম।

– শুভ্র চোখ খুলে বলল পরী তোমার ঘুম থেকে একজনকে ডাকার স্টাইল একদম আলাদা। এভাবে কেন ডাকো?

– কারন একজন মানুষ যখন ঘুমায় তখন তাকে তাড়াহুড়া করে ডাকলে তার ব্রেনে প্রবলেম হতে পারে তাই এভাবে ডাকা।

– বাহ্,,,, আমার বউ দেখি অনেক বুদ্ধিগুণ সম্পন্ন……..




– শুভ্র সব ব্যাপারেই ফাষ্ট। কোন অলসতা ওর মধ্য নেই,,,,,, এই ব্যাপার টা আমার খুব ভাল লাগে।
– শুভ্র উঠে গোসল করতে ওয়াসরুমে চলে গেল।

– আমি কফির কাপ ২ টা নিয়ে নিচে আসতেই পলা আন্টি বলল,,,,,,,,,, পরী,,,,,,! শুভ্র কি তোমার সাথে খারাপ কিছু করছে গতকাল রাতে?


– না তো পলা আন্টি! আপনি এমন কথা কেন বলছেন?

– না ও তোমাকে ওর রুমে নিয়ে গেল তো তাই।

– অহ,,,,,,, নাস্তা রেডী করেছেন?

– পরীর ভাবসাব ঠিক ঠেকতেছে না পলার। ব্যাপার কি! যে মেয়ে ওকে ২ চোখে দেখতে পারেনা সে এত্ত তার কেয়ার কেন করছে?




– শুভ্র গোসল সেরে রুমে এসে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডী হয়ে নিচে এসে দেখল পরী সব নাস্তা রেডী করে দিচ্ছে।

– My sweet hart কি করছো?

– আমি শুভ্রের দিকে না তাকিয়েই বললাম কাজ করছি শুভ্র!



– শুভ্র এসে চিয়ারে বসে বলল বাহ্ এত্ত নাশতা! তুমি বানাই ছো পরী!

– আমি বেশ লজ্জা পেয়ে গেলাম,,,,,,,, না মানে পলা আন্টি বানিয়েছে শুভ্র।

– পরী,,,,,,,,, ! তুমি কি একটুও রান্না করতে পার না?

– একটু একটু পারি,,,,,,, তবে সব না।

– ওকে,,,,,, মা ফিরলে মার কাছ থেকে রান্না শিখে নিবা। আর হ্যাঁ আজ তুমি রান্না করবা। যে রকমই হোকনা কেন,,,,,,, পলা আন্টির কাছ থেকে বা কারো কাছ থেকে সাহায্য নিবা না। আমি লান্স টাইমে বাসায় খেতে আসব কিন্তু!

– ওকে ট্রাই করব,,,,,, খারাপ হলে কিন্তু আমার দোষ নেই আগে থেকেই বলে রাখছি।

– আচ্ছা যেমন পারো করো বলে পরীকে নিয়ে নাস্তা সেরে শুভ্র অফিসে চলে গেল।



– পরী তোমার ভাব সাব ভাল ঠেকছেনা কিন্তু,,,,,, শুভ্র তোমার কাছে এত্ত প্রিয় কবে থেকে হল হুম।


– জানিনা আন্টি,,,,,, মনে হয় ভালবেসে ফেলছি শুভ্রকে বলেই রান্না ঘরে এসে বিভিন্ন জিনিস জোগাড় করতে লাগলাম।


– পরী,,,,,,, আমি রান্না করছি। তুমি বসে বসে দেখ আমার রান্না।

– না আন্টি ও বলল না! আমাকেই রাধতে হবে!



– মার্টন,ডাল, সবজি, ভাত,ইলিশ ভূনা আর সালাদ বানালাম। জানিনা ওর কেমন লাগবে।
– সব রেডী করে গোসল দিয়ে নামায পরে শুভ্রর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।



– দেড়টার দিকে শুভ্র আসল। দেন ফ্রেস হয়ে খাবার টেবিলে এসে খাবার গুলো দেখে বেশ খুশিই হল।
– বাহ্ ভালই রান্না করছো তো!

– আমি বললাম,,,,,,,,,, তোমার ভাল লাগলেই সব স্বার্থক।

– শুভ্র খাইতে বসে শুধু সুষিয়ে সুষিয়ে খাচ্ছে আর একটু পর পর পানি খাচ্ছে।

– শুভ্র ঝাল কি বেশি হইছে!

– আমিতো ঠিকঠাকই ঝাল দিছি তাহলে কেন এমন করছে।
– একটু পর শুভ্রর মুখ লাল হয়ে গেল আর কপালের রগ গুলো নীল হয়ে গেল।


– পরী,,,,! ফ্রীজ থেকে মিষ্টি নিয়ে আসতো?


– আমি দৌড়ে মিষ্টি নিয়ে এলাম ফ্রীজ থেকে।

– শুভ্র মুখে মিষ্টি পুরে আমার দিকে তাকি একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল তুমি যানো না আমি ঝাল একদমই খাইতে পারিনা!

– আমি লজ্জা আর ভয়ে চুপসে গেছি……. আমি যা ঝাল ক্ষোর আর বর আমার ঝালই খেতে পারেনা। ভাবা যায় এগ্লা!



– স্যরি আমি জানতাম না। আর ভুল হবেনা এবার থেকে।
“”

– দেখ পরী,,,,,,,, আমি কখনও মিথ্যা প্রসংসা করি না। একদম মুখে বলে দেই। নেক্সট বার কখনও ভুল করবা না। আমি কি পছন্দ করি না করি সেটাও তোমাকেই খেয়াল রাখতে হবে…… যেমনটা আমি রাখি। মাঝে মাঝে মিসটেক হলে সমস্যা নাই কিন্তু সব সময় নো মিসটেক বুঝছো!


– আমি চুপ করে থাকলাম। কারন আমি জানি শুভ্র যতটা আঘাত করে তার থেকে হাজার গুন ভালবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিবে। এই গুনটাই সব থেকে বেশি পছন্দ আমার। তাই ও প্রসংসা না করলেও আমার যায় আসেনা।


– ওকে,,,,,, বলে খেতে লাগলাম আমি।

– শুভ্র আমার খাওয়া দেখছে….. বেচারা খেতে পারছেনা একদমই।

– শুভ্র আমিতো রান্নাতে কম ঝাল দিছি….. আমি এর থেকেও বেশি ঝাল খেতে পারি।

– এই জন্যই তোমার ঘটে একটুও বুদ্ধি নাই পরী……. শুধু ভুল ডিসেশন নাও।

– কি ভুল ডিসিশন নিলাম আমি?

– আগে খাওয়া কমপ্লিট কর তার পর তর্ক করতে এসো।

– লও ঠেলা….. তর্ক করলাম কেমনে…….

– শুভ্র আর কোন কথা না বলে উঠে গিয়ে ফ্রীজ থেকে দই নিয়ে আসল…… আর সেটা দিয়ে বাকি ভাত টা খেয়ে বলল এবার পারফেক্ট।

– শুভ্রতো দেখছি পাক্কা মিষ্টি ক্ষোর।



– খাবার শেষ করে উঠতেই শুভ্র বলল পরী তোমার ভাষা গুলো একদম বিশ্রী ও গুলো চেঞ্জ করবা। ভাষা গুলো শুনতে খুব খারাপ লাগে। অর্থনীতি নিয়ে গ্রাজুয়েশন করছো কিন্তু ভাষার ব্যাবহার এরকম তাহলে খুব খারাপ দেখায়। আর আমাদের বাচ্চারাও এরকম ভাষা শিখবে তোমার থেকে তাই ভাষার বিকৃতি একদম করবা না।



– উমমমম বলে কি….. একদিন না হতেই এত্ত শাসন!.
পরী,,,, তোর কপালে দুঃখ আছেরে….. কার পাল্লায় পড়ছিস। আগেই জানতাম শুভ্র কড়া ধরনের মানুষ কিন্তু এতটা কড়া সেটা জানতাম না।



– পলা আন্টিরে ডাক দিয়ে সব গুছাতে বলে নিজের রুমে আসলাম। খাটে বসে ধুমছে গান শুনছিলাম।
– এমন সময় শুভ্রের মাসেজ….. রুমে যেতে বলছে।



– আমি গান অফ করে শুভ্রর রুমে গিয়ে দেখি ও কি যেন ল্যাপটপে দেখছে আর মুচকি মুচকি হাঁসছে…..
– আমাকে দেখেই চট করে সব কিছু অফ করে দিয়ে আমার দিকে তাকাল।

– কি দেখছিলা?

– না তেমন কিছু না বলেই শুভ্র ওয়াশরুমে চলে গেল।

– আমার মনে সন্দেহ জেগে উঠল….. ও আসলে কি দেখছিল বলেই ল্যাপটপ চট করে খুললাম। কিন্তু বার বার পাসওর্য়াড চাচ্ছে। ধুর,,,,,,,, এখন কি পাসওর্য়াড……. আমি কেমনে বলব।


– এমন সময় শুভ্র বলে উঠল সন্দেহ জিনিসটা খুব খারাপ পরী। যেটা সংসার জিবনটাকে একনিমিষেই ফিনিশ করে দেয়। তোমার কিছু জানা থাকলে আমায় বল,,,,,,, আমি কিছুই লুকাবো না তোমার কাছ থেকে……

– আমার অত্যন্ত লজ্জা লাগল,,,,,, শুভ্রর কাছে ধরা পড়েছি বলে।



– পরী রেডী হও তোমাকে আজ ডক্টর দেখাব। তোমার শরীর নাকি খারাপ তাই।

– কই না তো….. আমি বেশ আছি।


– এত্ত কথা বল কেন,,,,,, যা বলছি তাই কর। জলদি রেডী হও।
“”
– বাহিরে তো প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে,,,,,,, এখন যাওয়া কি ঠিক হবে?
আসলে একটা দিন সময় পাইছি তাই সময় নষ্ট করতে চাচ্ছিনা। শুভ্রর পাশে পাশে থাকার বাহানা আরকি!



– শুভ্র আমার কাছে এসে বলল ২০ মিনিট সময় দিচ্ছি যাও রেডী হও।

“””””””””””
– ওর ধমক সুনে সুড় সুড় করে আমার রুমে এসে ইচ্ছা মত গালি দিয়ে রেডী হলাম। সাথে একটা ব্যাগে একসেট ড্রেস নিলাম। কারন আমিও কম না মনে মনে ফন্দি এঁটেছি।


– শুভ্র গাড়ীতে ওয়েট করছে অনেকক্ষন থেকে কিন্তু পরীর আসার নাম নাই।


– পরীকে রেডী হয়ে নিচে নামতে দেখে পলা বলল কই যাও পরী?

– আন্টি শরীরটা কয়েকদিন থেকে খুব খারাপ লাগছে তাই ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি।
– পলা আর কিছু বলল না।


– আমি গাড়ীতে উঠতেই শুভ্র বলে উঠল,,,,, তুমি কবে বড় হবে পরী! সময় মেইনটেইং করে চলতে হয়। আর সাথে এত্ত বড় ব্যাগ নিছ কেন?

– আমি ওর কথার জবাব দিলাম না। কিছুক্ষন পর একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম…. তুমি আছ তো,,,,,, তাই আমার কোন চিন্তা নাই।

– শুভ্র আর কোন কথা বলল না….. গাড়ী স্টার্ট দিল দেন আমরা চলতে লাগলাম।

– প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে….. আমি শুধু একটা প্লেস খুজছি আমার প্লান অনুযায়ী। পেয়েও গেলাম…. মানুষ জন একদম নেই। কারন যে কাজ করতে যাচ্ছি গালে ২ টা চড়ও পড়তে পারে তাই নিরবশূন্য রাস্তায় খুজছিলাম।



– শুভ্র,,,,,,শুভ্র গাড়ী থামাও প্লিজ……


– শুভ্র চট করে ব্রেক কষে বলল প্রবলেম কি তোমার!

– আমি ওর কথার কোন উত্তর না দিয়ে ডোর খুলেই বৃষ্টির মধ্য দৌড়……… অনেক দুর অবদি চলে এসেছি।


– শুভ্র পরীর কান্ড দেখে হতবাক হয়ে গেল। পরী কি শুরু করে দিল। ডক্টরের কাছে না যাওয়ার বাহনা।



– জোরে একটা চিৎকার দিয়ে বললাম ইয়া…….হু আমি সাকসেস।
– ২ টা হাত মেলে দিয়ে দৌড়াতে লাগলাম। আমার বৃষ্টিতে ভিজতে খুব খুব খুব ভাল লাগে।


– শুভ্র গাড়ীতে বসেই কান্ডগুলো দেখছে,,,,,, চোখ বড় বড় করে। তাতে আমার কিছু যায় আসে না আমিতো আজ ভিজবই। আমাকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাওয়া! যাওয়া বের করছি……


– প্রচন্ড বৃষ্টি আমাকে পাগল করে দিচ্ছে। শুভ্রটা থাকলে আরো ভাল হত। কিন্তু ও গাড়ীতেই বসে আছে আর আমাকে দেখছে।
– অনেকক্ষন ভিজলাম মনের আনন্দে।



– শুভ্র জানালার গ্লাস খুলে আমাকে ইশারা করল ওর কাছে যেতে।


– আমি দৌড়ে ওর কাছে এসে বললাম শুভ্র কিছু টাকা দাও তো…..


– কেন! টাকা দিয়ে কি করবা?


– আমিতো পুরাটাই ভিজে গেছি তাই গাড়ীর সিট ভিজে যাবে। আমি একটা রিক্সা নিয়ে বাসায় যাব। তুমি বাসায় চলে যাও।



– পরীর কথা শুনে শুভ্র চোখ গরম করে বলল থাপ্পড় খাওয়ার খুব সখ উঠছে! আমি যদি গাড়ী থেকে একবার বের হই তাহলে কিন্তু তোমার কপালে সেই দুঃখ আছে।



– শুভ্রর রাগীত চেহারা দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। যাহ্ বেশি বলে ফেললাম নাকি।


” ধুর,,,,,,,,, কিসের বেশি বলা মনে করে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে বললাম ভয় দেখাচ্ছো কেন,,,,,,,,, ভালবেসে বলতে পারোনা!

আবার একটু হেঁসে বললাম,,,, শুভ্র তোমার রাগী লুকটা জাষ্ট ওয়াও। তুমি এত্ত সুন্দর কেন শুভ্র। আমি যত দেখি ততই ফিদা হয়ে যাই। উফ্ আমার বরটা এত্ত কিউট♥♥♥♥♥



– এই মেয়ে আজ জ্বর বাধিয়েই ছাড়বে দেখছি। পরী,,,,, এখুনি গাড়ীতে ওঠো….. আমাকে চটাও না বলছি।

– এইরে শুভ্রতো চটে গেছে তাই সুড় সুড় করে গাড়ীতে উঠলাম।


– শুভ্র কিছু না বলে গাড়ী ঘোড়াতেই ওর হাত চেপে ধরে বললাম আমি বাসায় যাব না শুভ্র……..

– শুভ্র এবার চটে গিয়ে বলল,,,,, সবার সামনে বৃষ্টিতে ভিজা একদম অপছন্দ করি আমি। কারন সাবার সামনে ভিজা শরীরে বেশ খারাপ দেখায়। কখনও যেন আর এমন দেখি না।


– আচ্ছা আর করবোনা। কিন্তু বাসায় যাবনা। বাকিটা সময় তোমার সাথে ঘুড়বো।

“পরী যে আজ ডাক্তারের কাছে গেলনা সেটার জন্য যে কত বড় মাষুল দিতে হবে সেটা ও নিজেও জানে না।



– শুভ্র কিছু না বলে আবার ড্রাইভ করতে লাগল।
– একটা চায়ের টং দোকানের সামনে এসে থেমে ছাতা নিয়ে নেমে গেল শুভ্র। দোকানে কেউ ছিলনা। শুধু দোকানি ছিল।

– কাকা কেমন আছেন?(শুভ্র)

– বৃদ্ধ বয়সী দোকানিটা শুভ্রকে দেখে মুচকি হাঁসি দিয়ে বলল আরে শুভ্র,,,,,, ভাল আছি বাবা। তুমি কেমন আছো।

– জ্বী কাকা ভাল আছি। ২ কাপ চা দেন। একদম কড়া বলেই পরীকে ইশারা করল ওখানে যেতে।

– শুভ্র দোকানির সাথে হেঁসে কথা বলছে আর দোকানি চা বানাচ্ছে।
– আমি দোকানে গিয়ে বললাম চাচা আমার টা কড়া রং চা দেন। মিষ্টি একদম হালকা।


– ওরা দু জনেই আমার দিকে তাকালো। আমি কিছু মনে না করে শুভ্রর কাছে গিয়ে বসলাম।

– আমাকে চা দিতেই আমি চা নিয়ে বৃষ্টির মধ্য দাড়িয়ে চা খেতে লাগলাম। অদ্ভুত রকম সুখ। বৃষ্টির ফোটায় চায়ের রং ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে। তবুও বেশ লাগছে।



– শুভ্র আর কিছু না বলে চায়ে চুমুক দিল।

– মেয়েটা কে শুভ্র?(দোকানি)


– আপনার বউমা কাকা…….

– তুমি কাকা বল আর মেয়েটা চাচা বলছে কেন?

– কারন ও মুসলিম তাই তাই চাচা বলছে।

– দোকানি চুপ করে গেল। তার মাথায় হয়ত কিছু ঢুকছে না।
– দোকানি বলল বাচ্চা মেয়ে তাই ওরকম করছে।


– শুভ্র চায়ে চুমুক দিয়ে পরীর দিকে তাকাল। সদ্য কুড়ি তে পা দেওয়া একটা মেয়ে পরী। যার বাচ্চামো স্বভাব এখনো যায়নি।

– পরী চা শেষ করে ফাকা গ্লাসটা বৃষ্টির পানিতে ধরে আছে।


– পরী,,,, কি করছো? ঠান্ডা লেগে যাবে তো এখানে আসো(শুভ্র)


– চায়ের গ্লাসে বৃষ্টির জল জমাচ্ছি শুভ্র! তোমাকে ভিজাবো বলে। তুমিতো ভেজনি তাই।

– পরীর কথা শুনে দোকানি উচ্চ স্বরে হেঁসে উঠল। শুভ্র বেশ লজ্জা পেল। এই মেয়ে কবে মানুষ হবে! কোথায় কি বলতে হয় জানে না।


– আমি দৌড়ে এসে চায়ের গ্লাসটা রেখে দোকানি কে বললাম শুকরিয়া চাচা। চা টা বেশ ছিল…. আমার খুব ভাল লেগেছে।



– আমি জলদি গাড়ীতে এসে উঠলাম। শুভ্রর মোড ভাল তাই আর সমস্যা নাই বলেই ব্যাগ থেকে ড্রেস বের করে চেঞ্জ করে নিলাম। ভিজা কাপড় গুলো ব্যাগে রেখে দিলাম।



– শুভ্র দোকানিকে ৫০০ টাকার একটা নোট দিয়ে বলল কাকা পুরটা রেখে দিন।


– দোকানি শুভ্রের হাত ধরে বলল বাবা জিবনে আমাকে এত্ত সুন্দর করে শুকরিয়া বলে বলেনি যে চাচা চা টা বেশ ছিল,,,, আমার খুব ভাল লেগেছে।
কথাটা শুনে আমার মন ভরে গেছে বাবা। টাকা দিয়ে আমাকে ছোট করনা। তোমরা সারা জিবন সুখে থাক।


– শুভ্র আর কিছু না বলে ছাতা নিয়ে গাড়িতে এল।
– শুভ্র তো অবাক পরী এর মধ্য ড্রেস চেঞ্জ করে ফেলেছে।


– কখন এসব করলে! সব তোমার প্লান ছিল তাই না?

– আমি একটা মুচকি হাসি দিলাম শুধু।


– পরীর চুল দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে যা শুভ্রকে খুব টানছে। শুভ্র একদম পরীর কাছে গিয়ে ওর ঠোটের কাছে ঠোট আনতেই পরী চোখ বন্ধ করে ফেলে। পরীর নিঃস্বাস ভারি হয়ে আসছে সেটা দেখে শুভ্র নিজেকে সরিয়ে নিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগল।

– আমি চোখ খুলে বললাম শুভ্র দাওনা একটা কিস♥♥♥♥


– পরী,,,,,,,,,,! আজ তুমি আমার একটা কথাও শোননি তাই তোমার জন্য আজ আমার কোন আদর নাই।

– শুভ্র আমার ওড়না টা নিয়ে বলল চুল গুলো ভাল করে মোছ পানি পড়ছে।


– ধ্যাততেরি বলেই চুল গুলো মুছতে লাগলাম।
— বিকাল হয়ে গেছে বৃষ্টিও থেমে গেছে।
– অচেনা একটা জায়গায় শুভ্র আমাকে নিয়ে আসল। জায়গাটা অনেক সুন্দর। আমি নেমে প্রকৃতি উপভোগ করতে লাগলাম। শুভ্র একটু দুরে গিয়ে ফোনে কার সাথে যেন কথা বলতে লাগল। আমরা সন্ধ্যা অবদি সেখানে থাকলাম। তার পর শুভ্র আমাকে নিয়ে শপিং করতে গেল।



– সব ওর পছন্দ মত কিনছে আর আমি বসে আছি পাশে।

– স্যার ম্যাডাম কিছু পছন্দ করছেনা যে,,,,,,,,,,সব আপনিই করবেন?

– শুভ্র শাড়ী হাতে নিয়েই বলল আমার পছন্দই ম্যাডামের পছন্দ।

– ওরা আমাকে বলল খুব সৌভাগ্য করে এমন বর পাইছেন ম্যাডাম। কারও বর সময় দিতে চায়না কিন্তু আপনার বর একদম সব নিজে পছন্দ করে কিনে দিচ্ছে।


– আমি শুধু শুভ্রের দিকে তাকালাম। আর ও একমনে ড্রেস চুজ করছে।




– ড্রেস, জুয়েলারি, সু সব মাচিং করে নিল।প্রায় ১৮ সেট। শুভ্রের জন্য নিল ৫ সেট। কয়েকটা আমার সেটের সাথে মাচিং করা।


– শুভ্র,,,,,,,,! অর্পিতা, মা ওদের নামে নিলে হত না?


– সেটা তোমাকে বলতে হবেনা পরী। ২৩ সেটের মধ্য তোমার আর আমার জন্য ১০ বাঁকি গুলো ওদের জন্য। আমাদের গুলো মাচিং করা। যেদিন আমি যেটা পরব সেদিন তুমিও মাচিং করে পড়বা ওকে।

– বাহ্ কি প্লান তোমার। ফ্যাশন ডিজাইনার হলে তোমাকে আরও বেশি মানাতো।


– হুম,,,,,, বলে শুভ্র আমার হাত ধরে নিচে নেমে গাড়িতে উঠে আবার গাড়ি স্টার্ট দিল।


– ফোনে দেখলাম রাত ১০ টা বেজে গেছে। সপিং করতে করতে এত্ত রাত হয়ে যাবে বুঝতেই পারিনি।



– শুভ্র আমরা কই যাচ্ছি! বাসায় যাব না?

– না,,,,,,, গেলেই দেখতে পারবে।

– আমি ওর গায়ে হেলান দিয়ে রাস্তা দেখছিলাম। একটা রেস্টুরেন্টে এসে গাড়ি দাড়াল। শুভ্র গাড়ি পার্কিং করে আমার হাত ধরে উপরে নিয়ে গেল। আমরা গিয়ে একজায়গায় বসে পড়লাম। অনেক হাইফাই রেস্টুরেন্ট। সব কিছু হাইফাই। শুভ্র খাবার অর্ডার দিল। এবারও ওর পছন্দের খাবার অর্ডার দিল।

– আমি খালি ওর দিকে তাকিয়ে মহা ভাবনায় পরে গেলাম। এত্ত গুলো মানুষের সামনে খাব কিভাবে!



– খাবার চলে আসল। পরী,,,,,, একদম স্ট্রেজ নিবানা। আরামে আস্তে আস্তে খাবা। সমস্যা হলে আমাকে অনুসরন কর আমি কিভাবে খাচ্ছি,,,,ওকে…..


– দেখছি আমার প্রবলেম সব বোঝে শুভ্র।


-আমাদের খাবার আলাদা কেন শুভ্র?

– কারন তুমি ঝাল খাও যেটা আমি খেতে পারিনা তাই আলাদা বলে খেতে শুরু করল।

– আমি ওকে অনুসরন করে আস্তে আস্তে খাচ্ছি।

“এমন সময় শুভ্র বলে কয়েকজন ডেকে উঠল।

– শুভ্র দেখল ওর কয়েকটা ভার্সিটির ফ্রেন্ড সাথে আকিক ও আছে। এরা কই থেকে আসল।


– দোস্ত কেমন আছিস বলেই ওরা কাছে এসে বসল।

– আমি চট করে উঠে শুভ্রর কাছে দাড়ালাম। শুভ্র কিছু বলল না আর আমাকে।

– দোস্ত এটা কে,,,,,,,,, তোর গার্লফেন্ড? বলেই ওরা সবাই হেঁসে উঠল। শুধু আকিক চুপ করে আছে।


– শুভ্র উঠে ওর জায়গায় আমাকে বসিয়ে দিয়ে আমার জায়গায় ও বসে কিছু বলতে যাবে এমন সময় ওর একটা ফ্রেন্ড বলে উঠল যেই শুভ্র কোন মেয়েকে পাত্তা দিত না তার আজ এই পরিনিতি বলেই হেঁসে উঠল ওরা।

– হাই মিস. আপনার নাম টা জানতে পারি?

– ওর নাম পরী।(আকিক)

– কিরে আকিক তুই ওকে চিনিস?

– আকিক আর কিছু বলল না শুধু পরীর দিকে তিক্ষ্ণ ভাবে চেয়ে থাকে।



– এই তোরা কে কি খাবি বলেই ওয়েটার কে ডাকল শুভ্র।

– এই ফাঁকে শুভ্র আমার খাবার গুলো পার করে দিল আমার কাছে এবং ওরটাও নিল।

– ওরা আড্ডা দিচ্ছে আর খাচ্ছে আর আমি একমনে খাচ্ছি। কিন্তু আকিক একভাবে পরীর দিকেই তাকিয়েই আছে।


– পরী খুব সুখে আছো?(আকিক)

– আকিকের কথা সুনে আমি থমকে গেলাম। কারন শুভ্র যদি একবার রেগে যায় তাহলে সব শেষ।

– শুভ্র আমাকে বলল ,,,,,,,, প্রশ্নর উত্তর দাও পরী।

– আমি শুভ্রের দিকে তাকাতেই ও আমাকে আস্বাস দিল ইশারা করে।

– আমি আকিকের দিকে তাকিয়ে বললাম আলহামদুলিল্লাহ্ খুব ভাল আছি ভাইয়া।

– শুভ্র এবার বলল ও আমার গার্লফ্রেন্ড না,,,,,, পরী আমার বিবাহিত স্ত্রী।

– কিরে মেয়েটার কথা সুনে মনে হল ও মুসলমান। জাতপাত না দেখেই বিয়ে করেছিস?

– আমি মাথা নিচু করে বসে আছি। কি আর খাব এরা একের পর এক প্রশ্ন আমাকে করেই যাচ্ছে। বৌদি এটা বৌদি ওটা নানা প্রশ্ন।

– যে মেয়ে নিজের জাত ত্যাগ করে তার আবার কিসের সম্মান।( আকিক)

– কথাটা সুনে আমার চোখে পানি চলে আসল। টপ করে ২ ফোঁটা পড়েও গেল।

– শুভ্র চোখ গরম করে আকিকের দিকে তাকাল।

– আরে পরী আমিতো ফ্যান করলাম তোমার সাথে বলেই আকিক হেঁসে উঠল।


– খাওয়া কমপ্লিট করে আমরা বাহিরে আসলাম।


“ওর ফ্রেন্ড গুলো চলে যাওয়ার সময় বলল দোস্ত ঝাক্কাস একখান বউ পাইছিস। দেখলেই পরাণ জুড়িয়ে যায়।


– শুভ্র এবার চটে গেল,,,,,,,আমি ওর হাত ধরলাম। ও আর কিছু বলল না।


– এই আকিকের জন্যই সেদিন আমায় অনুরোধ করছিলা? যাতে ওর বিরুদ্ধে এ্যাকশন না নেই। দেখছো ওর ব্যবহার! শয়তানটা এতদিন জেলে পঁচে মরত তুমি সেদিন না আটকালে। ব্যাটা বজ্জাত ফাজিল কোথাকার।(শুভ্র)


– শুভ্র ছাড়তো এসব বলে ওর হাত ধরে গাড়ির কাছে এসে গাড়িতে উঠলাম।


– আমারা বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। রাস্তায় শুভ্র ইচ্ছা মত ওর ফ্রেন্ডদের মনের সুখে গালি,বকা যাইচ্ছা তাই বলতে লাগল।

-আমিতো ভয়ে চুপ। একটা কথা বললেই সব রাগ আমার উপর এসে পরবে।



এমন সময় ধাম করে বিকট একটা শব্দ হল। সামনে দেখলাম একটা লোক গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে ছিটকে পড়ল। গাড়ি সম্পূর্ন থেমে গেল…………..
চলবে—–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here