অস্তিত্বের খোজে,পর্বঃ ৩০

0
2044

অস্তিত্বের খোজে,পর্বঃ ৩০
নাফিসা মুনতাহা পরী



– পরের দিন সকালে নিশু এসে আবার দরজায় অনেকবার নক করল।


– আমি গভীর ঘুমে মগ্ন। দরজায় শব্দের চোটে ঢুল ঢুল চোখে উঠে দরজা খুলে দিয়ে আবার এসে শুয়ে পড়লাম।



– নিশু ফ্লোরে ওর ভাঙ্গা গিটার দেখে রেগে পরীর কাছে গেল। ঘুমন্ত পরীকে দেখে ওর এক নিমিষেই সব রাগ পানি হয়ে গেল। কি নিষ্পাপ ছোট্ট একটা মেয়ে। এরে দেখলে কে বলবে এর এত্ত তেজ। কাল রাতে পরীকে ঠিকমত দেখতে পারেনি নিশু। সকালের শুভ্র আলোতে পরীকে দেখতে চমৎকার লাগছে। নিশু গিটারের ভাঙ্গা অংশ গুলো পরিষ্কার করে বাহিরে চলে গেল।



– আমি ঘুমাতে অনেক দেরি করেছি বলে একটু বেলা করে ঘুম ভাঙ্গল আমার। যা রে এত্ত দেরি করে ঘুম ভাঙ্গল আমার বলেই রাতের সব কথা মনে পরে গেল।

দরজা খুলল কেডাই বলেই বের হলাম রুম থেকে। নাহ্ পুরো বাসায় কেউ নেই। আমিতো ভয়ে শেষ। এ সত্যি পাচারকারী দল না তো!



– কিছুক্ষন পর দরজা কেউ খুলতেই আমি লুকিয়ে পড়লাম সোকেসের আড়ালে। ওমা এতো নুরজাহান খালাম্মা। আমি জলদি দৌড়ে ওনাকে গিয়ে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলাম।



– কি হইছে পরী! তুমি কি ভয় পেয়ে গেছ?(নুরজাহান)


– আমি ওনাকে সব খুলে বললাম।


– উনি শুনে হেঁসে বলল ওটা নিশু ছিল। ওদের এই বাসা। আমি এখানেই কাজ করি। আমিই ওকে বলছিলাম তোমাকে দেখে আসতে। আর ও তুলেই নিয়ে আসছে।


– আমি ছেলেটির দিকে তাকিয়ে দেখলাম মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, জিন্স প্যান্ট এবং ট্রী শার্ট পড়া । দাড়িয়ে আছে একটু দুরে। দেখতে ভালয় স্মার্ট ছেলেটি,,,,,,তাতে আমার কি!
চোখ সরিয়ে খালাম্মাকে বললাম আমি বাসায় যাব এক্ষুনি,,,,, চলেন!


– এই মেয়ে আজ থেকে এখানেই তোমার থাকা। এই অবস্থায় তোমাকে আমরা ওখানে রাখি কি ভাবে।( নিশুর মা)


– কিন্তু পরী থাকতে নাছোড় বান্দা। অবেশেষে চুক্তি হয় যত টাকা পরীর পিছে খরচ হবে সেসব টাকা ধার হিসেবে পরী নিচ্ছে যা পরে শোধ করে দিবে।


– খালাম্মা আপনি আমার ফোন আর ব্যাগটা এনে দিয়েন বাসা থেকে তাহলে।


– আচ্ছা বলে পরীকে একটা রুমে নিয়ে গেল নুরজাহান।


– নিশু দুর থেকে দেখছে শুধু পরীকে।



– একদিন নিদ্রা সিড়ি দিয়ে নামছিল এমন সময় পা স্লিপ খেয়ে পড়তেই শুভ্র ধরে ফেলল। শুভ্র নিদ্রার পিছনে নামছিল।


– কৌশকের তোহ্ মনে হয় জিবন শেষ নিদ্রার পরে যাওয়া দেখে।


– বৌদি এত্ত দ্রুত কেউ নামে! এই সময় সাবধানে চলতে হয় জানোনা বলে নিদ্রাকে নিচে নেমে দিয়ে শুভ্র বের হয়ে যায় অফিসে।


– শুভ্রর বার বার মনে পড়ছে পরীতো যে বাচ্চামো কাজ নিয়ে মেতে থাকে ওর যদি বৌদির মত কিছু হয় তাহলে ওকে কে সাহায্য করবে। আল্লাহ্ ওকে হেফাযতে রেখ।

পুরোটা দিন শুভ্রর কোন কাজে মন বসল না। অস্থিরতা যেন ওকে ঝেকে বসেছে। ।



– অনিতা শুভ্রকে বারবার কল দিচ্ছে কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না। অনিতা প্রচন্ড দুঃশ্চিন্তা করছে। কোন সমস্যা হলো না তোহ্। রাত ১০ টা পার হয়ে যাচ্ছে।


– রাত ১১ টার দিকে শুভ্র বাসায় ফিরে। রুমে এসে দেখে ওর মা বসে আছে খাটে।


– স্যরি মা অনেক দেরি করে ফেলছি।


– তোর কান্নার যখন এতই সখ রুমের ভিতর বসে থেকে কাঁদতে পারিসতো শুভ্র! এত্ত রাত অবদি বাহিরে কেন থাকবি। তোর অনুপস্থিত কারো জন্য যন্ত্রনা দায়ক বাবা।


– মায়ের কাছে ধরা পরে গেছে শুভ্র। তাই ওখানেই বসে পড়ল শুভ্র।


– অনিতা দৌড়ে এসে শুভ্রর পাশে বসে বলল কি হল তোর শুভ্র! কষ্ট হচ্ছে,,,,,আমায় বল।


– শুভ্র এবার ওর মাকে জড়িয়ে ধরে নিশব্দে চোখের জল ফেলাতে লাগল।

মা! পরী আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে। প্রার্থনা কর মা,,,,, ওর সাথে যেন আমার না দেখা হয় আর কোনদিন। কারন আমি ওকে আর শান্তিতে বাঁচতে দিবনা। ওর প্রতিটা আঘাত ৩ গুন ফিরে দিব।


– অনিতা যা ভয় করেছে তাই ফলে গেছে। শুভ্রকে আর আটকানো যাবেনা এর থেকে সেটা অনিতা ভালভাবে বুঝে গেছে।


– দেখ শুভ্র! পরী ছোট মেয়ে ও একটা ভুল করেই ফেলেছে। তাই বলে ওকে এত্ত শাস্তি তুই দিতে পারিস না। আমার কথা শোন বাবা মেয়েটার দুনিয়াতে কেউ নেই তুই ছাড়া।


– ও ছোট! ওর বাচ্চামোর ভিমরতি আমি ছুটিয়ে দিব,,,,,,,, জাষ্ট একবার পাইনা কেন বলে শুভ্র ওয়াসরুমে চলে গেল।


– শুভ্রর চলে যাওয়া শুধু অনিতা চেয়ে চেয়ে দেখল।




– পরী আর কোন দিন নিশুর সাথে একটা কথাও বলেনি। যদিও নিশু বলার অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু কোন লাভ হয়নি।

শুভ্রর পিক দেখা,,,,, পিকের সাথে কথা বলা নামায কালাম পড়া বাসায় টুকিটাকি সবার সাথে কথা বলা। আর রাতে না ঘুমানোর আগ পর্যন্ত শুভ্রর কথা ভেবে কান্না করা এভাবেই জিবন চলছে।



আমি একদিন নিশুর রুমের সামনে দিয়ে যেতেই দেখি ওর রুম খোলা। নিশুর বেড়ালটা মিউ মিউ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি রুমের ভিতর ঢুকলাম। সব কিছু খুব সুন্দর করে সাজানো। অনেক ছবি দেয়ালে টাঙ্গানো আছে।

আমি একটা একটা ছবি গুলো দেখতে লাগলাম। সব ফ্রেন্ড রা মিলে অনেক পিক উঠানো। হঠাৎ একটা ছবির দিকে চোখ আটকে গেল। হুম এটাতো শুভ্র! অনেক আগের পিক। এধরনের পিক শুভ্রর ল্যাপটপে দেখছিলাম।

আমি একটা চিয়ার নিয়ে ওর উপরে উঠে ছবিটা নামিয়ে নিচে নামার সময় উষ্ঠা খেয়ে পড়তেই নিশু এসে আমাকে ধরে ফেলে। আমিতো ভাবছি আজ শেষ।



– পরী! তুমি কি বলতো এভাবে কেউ রিক্স নেয়!
কি তোমার প্রয়োজন সেটা কি আমাকে বলা যেত না…….. আমি যদি এখানে না থাকতাম তাহলে কি হত আজ!

এখুনি কি হয়ে যেত বলেই খাটে এনে বসায় পরীকে।
অনেক কথা শুনাতে লাগল পরীকে নিশু।



– আমি ছবিটার দিকে আঙ্গুল দিয়ে ওকে বললাম এটা কে হয় আপনার?


– নিশু অবাক হয়ে যায় এতদিনে পরী ওর সাথে কথা বলছে।

আমার ফ্রেন্ড শুভ্র। মাধ্যমিক অবদি একসাথে পড়েছি। তারপর দেশের বাহিরে চলে যায়। এখন নাকি অনেক বড় পদে কর্মরত আছে। অনেকদিন দেখা হয়না।

তুমি কি ওকে চিনো!




– আমি কোন কথা না বলে রুম থেকে বের হয়ে আসলাম। না কিছু বলা যাবেনা নিশুকে। এসে খালাম্মা কে বললাম শুভ্রর ব্যাপারে যেন নিশুকে কিছু না বলা হয়।



– শুভ্র অফিসে সবার সাথে মিটিং এ অ্যাটেন্ড করেছে। সব বড় বড় অফিসার গন রয়েছে। প্রায় দেড় ঘন্টা মিটিং শেষে শুভ্র বের হতেই একটা কল আসে ওর ফোনে। শুভ্র কলটা রিসিভ করে একটু দুরে গিয়ে কথা বলতে শুরু করে।



– স্যার! ম্যাম একবার ফোন অন করেছিল। কিন্তু তখন
আপনি অসুস্হ ছিলেন তাই এটার ব্যাপারে আর এগুনো হয়নি।



– দেখ আমি কিছু শুনতে চাইনা। যত টাকা তোমরা চাও তত দিব। কোন দরাদরি করব না। আমি শুধু জাষ্ট আমার স্ত্রী পরীকে চাই। সেটা যেভাবেই হক। পাতালে থাকলে সেখান থেকেও খুজে আনেন। আর যেই সিসি ফুটেজ পাঠিয়েছিলাম সেটা দেখে ট্রাক্সি নাম্বার তো কালেক্ট করে এটা দেখা সম্ভব যে ট্রাক্সিটা পরীকে কোথায় নামিয়ে দিয়েছে?


– স্যার! সেটাও করেছি কিন্তু তেমন ভাল সাড়া পাওয়া যায় নি। ট্রাক্সি ডাইভারটি পেশাটা ছেড়ে দিয়ে আরও কিছু মাস পর দেশের বাহিরে কাজ করতে চলে গেছে।


– দেখেন তার ফ্যামিলির মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। সব কি আমাকে বলে দিতে হবে! আপনাদের তাহলে কাজ কেন দিছি?


– স্যার প্লিজ রেগে যান না। আশা করি খুব শিঘ্রই ভাল কিছু information দিতে পাবর। একটু ধর্য্য ধরেন স্যার।


– এবার যেন না শুনিনা বলেই শুভ্র কল কেটে দেয়।

পিছন দিক থেকে শুভ্রকে কেউ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। I Love you শুভ্র।

– মেয়েটা একটা মুসলিম ছিল তাই সে তোমাকে ছেড়ে গেছে। আমি তোমাকে এত্ত ভালবাসি তাও তুমি কেন বোঝনা বলে শুভ্র কে ছেড়ে দিয়ে নিতু শুভ্রর সামনে এসে দাড়ায়।



– শুভ্র এমনি টেনশনে আছে তার ভিতর এমন কাহিনী পরীর বিরুদ্ধে তাই অত্যন্ত ক্ষেপে গিয়ে নিতুকে একটা ঠাশশশ্ করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।

এই মেয়ে তোমাকে কত বার বলেছি তুমি আমার সামনে আসবে না! তবুও বেহায়ার মত কেন আবার আসছো?



– নিতু গালে হাত দিয়ে বলল তোমার বউ তো তোমাকে দাম দেয়না অবদি আর তুমি আমার সামনে তেজ দেখাও। যে মেয়ে তার স্বামীকে রেখে চলে যায় তাকে বেশ্যা ছাড়া আর কি বলা যায় শুভ্র!



– এবার শুভ্রর নিতুর গলা চিপে ধরে বলে ঐ পরীই অনুরোধ করেছিল তোমাকে জেলে না দেওয়ার জন্য তাই তুমি সেদিন বেঁচে গিয়েছিলে। তাছাড়া মানসম্মান জলাঞ্জলি দিয়ে হাতে হারিকেন ধরে জেলে পচে মরতে হত তোমায়। আর ওকে এধরনের কথা বল!



– শুভ্র! একটা মুসলিম মেয়ের সাথে তুমি কোন ভাবেই সম্পর্ক রাখতে পারবেনা। আর সে যদি তোমায় এতই ভালবাসে তাহলে ছেড়ে গেল কেন? গিয়ে দেখ অন্য ছেলের সাথে তলে তলে টেম্পু চালায়। আমাকে শিখাতে এসো না এধরনের মেয়েদের সম্পর্কে। আমি মানুষ চিনে খাই বুঝছো?



– আমি পরীকে সে দিন বলেছিলাম তোমার মত মেয়ে কোন দিন শুধরানোর না। কিন্তু আমিতো আবার বউ বলতে পাগল কিনা! তাই বউয়ের মিষ্টি ভালবাসায় ভুলে তোমায় সেদিন ছাড় দিয়েছিলাম। যার ফলাফল তো সামনেই।

পরীকে শুকরিয়া জানাইও। ওর জন্য তোমার সম্মান এখনও আছে। আর হ্যাঁ আমি একজন মুসলিম ছেলে। মোঃ শুভ্র আমার নাম। তাই ভুলেও আমার ধারে কাছে আসবে না।

আমার মন, শরীর সব কিছু শুধু ঐ বেহায়া,বেয়াদপ মেয়ে পরীর । তাই আর কিন্তু কোন ধরনের সুযোগ তোমাকে দিবনা এরকম কথা ২য় বার বললে বলেই শুভ্র বের হয়ে চলে আসে।



– আমাকে রেশমা আন্টি এসে বলল চল মা! তোমার আলট্রাসন করে নিয়ে আসি। ৭ মাস তো হয়ে গেল।


– না আন্টি আমি চাইনা বাচ্চা দেখতে। আমি এমনি ঠিক আছি। তাছাড়া এরে আমার চাই না।


– নিশু এসে বলল কেন পরী! যাবেনা কেন? বাচ্চার জন্য সব মা পাগল আর তোমায় দেখি বাচ্চার সম্পর্কে তোমার কোন ফিলিংস নাই……


– আমার বাচ্চা হলে আমি আপনাকে দিয়ে যাব। তখন যা ইচ্ছা করেন। নিবেন তো! I am serious……



– পরীর কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে যায়। এ কেমন মা যে বাচ্চা চায় না?


– পরী তুমি কি শুভ্র কে চিনো?( নিশু)


– আমি কিছু না বলে সেখান থেকে আবার চলে আসলাম। শুভ্র সম্পর্কে কোন মিথ্যা কথা আমি বলতে পারবো না।



– আমার রুমের ছোট্ট বারান্দায় কয়েকটা ফুলের গাছের টব রয়েছে। নিশু এনে দিছে। যাতে আমার মন ভাল থাকে ফুল দেখে।



-গাঁদা, বেলি, ঘাসফুল এই ৩টি ফুলের গাছ কে পরী ৩টি নাম দিছে। পুতুল, দিপা, নিতু। এদের সাথে এক মনে কথা বলে। যত কষ্ট, হাসি সবরকম কথা এই গাছ গুলোর সাথে শেয়ার করে।



– পরী সন্ধার পরে বারান্দায় গাছগুলোর সাথে কথা বলছিল এমন সময় নিশু এসে বলল আমার সাথে কথা গুলো শেয়ার করতে পারতা পরী। এভাবে গাছের সাথে কেউ কথা বলে?

জানো! তোমাকে মানুষ মনে হয়না আমার। হয় তুমি বনের পশু না হয় কোন দেবী। কারন তুমি যেভাবে চল কারো সাথে কথা বলনা। কোন স্বাভাবিক মানুষ এভাবে বাঁচতে পারেনা। তা তুমি কোনটা! মানুষ না কোন দেবী হুম?


– একদম আমায় দেবী নামে ডাকবেন না। আমার বর শুধু আমায় ঐ নামে ডাকে। আমি শুধু তার দেবী তাছাড়া কোন দেবীর অস্তিত্ব আমার কাছে নেই।


– ওপস্ স্যরি,,,,,,,,, ভুল হয়ে গেছে। আসো তোমাকে একটা জিনিস দেখাবো। আমি শিউর তোমার খুব ভাল লাগবে বলে আমাকে নিয়ে রুমে আসল নিশু।


– একটা অ্যালবাম দিয়ে বলল দেখ এটা আমার স্কুল আর কলেজ লাইফের সব পিক আছে। তোমার খুব ভাল লাগবে আশা করি।



– আমি অ্যালবাম খুলে একের পর এক ছবি দেখতে লাগলাম। এখানে আমার শুভ্রটাও আছে। আর চোখের পানি আটকে রাখতে পারলাম না। নিশুর সামনে ফুফিয়ে কাঁদতে লাগলাম।


– পরী আমি কি তোমাকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম নাকি? বল আমায়……….


– না ভাইয়া ছোট বেলার স্মৃতি মনে পরে যাচ্ছে পিক গুলো দেখে তাই খুশিতে কান্না করে উঠলাম। আচ্ছা এই ছেলেটা দেখতে অনেক সুন্দর তাই না! বলেই পরী শুভ্রের পিকে হাত দিল।



– হুম সুন্দর তবে যতটা সুন্দর তার থেকে হাজার গুন ডেন্জারাস্। এর মত ট্যালেন্ট আমাদের স্কুল বা কলেজে একটাও নেই। ফাষ্ট ছাড়া কখনও সেকেন্ড হতে দেখিনি। সব দিকে টপে থাকত। অনেক বড়লোকের ছেলে। আমাদের এই একটাই হিন্দু ফ্রেন্ড ছিল। ক্লাস টেনে থাকতে ওর একটা ফ্রেন্ড ওর গোপন কথা আমাদের বলেছিল। বিশ্বাস ঘাতকতা একদম সহ্য করে না শুভ্র। তাই ঐ ফ্রেন্ড কে সবার সামনে এত্ত মেরেছিল যে ওর হায়াত ছিল বলে বেঁচে গিয়েছিল। তারপর থেকে ওকে সবাই ভয় পেত। ওর অনেক এধরনে রেকর্ড আছে। কোন মেয়েকে কোন দিন পাত্তা দেয়নি ও। আমাদের একটা বান্ধবী রুপা ওকে এতটা লাভ করত যে শেষে ওর জন্য সুইসাইড করে।

যেহেতু এতে শুভ্রের কোন দোষ ছিলনা তাই ওর কিছুই করতে পারেনি। আর তাছাড়া ওর দাদু ব্যারিস্টার আর বাবা একজন বিশাল বিসনেস্ ম্যান তাই কেস করলেও ধোপে টিকতো না।

আমরা অনেক জায়গায় কনসার্ট করতাম। শুভ্র দেশের বাহিরে থেকে এসেও প্রায় ৩ ডর্জন খানেক কনসার্ট করেছে। শুধু পেশাদার শিল্পী নয়। আমাদের একটা ব্যান্ড দলও আছে। জিবনে একসাথে অনেক জায়গায় শো করেছি আমরা।


– অহ্,,,,,,, আপনার তার সাথে আর দেখা হয়না?


– হত কিন্তু গত ১ বছর ধরে কারও সাথে তেমন যোগাযোগ রাখেনি শুভ্র। হয়ত বিজি তাই। পরী! ওর ব্যাপারে এত্ত কিছু জানতে চাচ্ছো কেন! আর বললে না তো শুভ্রকে চিন কিনা?


– ভাইয়া আমার বেবিটাকে আপনি নিবেন? আমি চাইনা ওকে…….


– পরীর কথা শুনে নিশু আবার অবাক হয়ে যায়। কি বলছে মেয়েটা।
পরী! তুমি এধরনের কথা কেন বল,,,,,,,,,এটা কি তোমার বরের সন্তান না? কারো সাথে আকাম কুকাম করছো নাকি!
আর আমি ভেবে পাইনা তুমি এই বয়সে কেন বেবি নিছো?
তোমার বর কি সেফটি বলতে কিছু যানেনা?
কেমন বর তোমার! যে তোমার সেফটির ব্যাপারে উদাসীন ছিল…….
কতটা রিক্স এই বয়সে বেবী নেওয়া সেটা তুমি নিজেও জানোনা। তার ভিতর তুমি কোন ডক্টর দেখাওনি একবারও।



– আপনি আমার রুম থেকে এখুনি বের হোন। আর একটাও কথা বলবেন না আমার বর সম্পর্কে। কি জানেন আর কতটুকু জানেন তার সমন্ধে। যে এধরনের বাজে মন্তব্য করছেন?



– সেদিনের পর থেকে নিশুর সাথে আর একটা কথাও বলেনি পরী। নিশু চেষ্টা করেছে কথা বলার কিন্তু পরীর কাছ থেকে কোন রেসপন্স পায়নি। এমনকি ইশিতা কে দিয়েও কথা বলানোর ট্রাই করছে কিন্তু লাভ হয়নি।



– এভাবে ৯ মাস পার হয়ে যায়। যেকোন সময়ে পেইন উঠতে পারে পরীর।


– সকালে অলিবয়েল ম্যাসেজ করছিল পেটে পরী। কিছু অলিবয়েল নিচে পড়ে যায় যা ও বুঝতে পারেনা। শুভ্রকে বার বার মনে পড়ছে। পরীর মনে হচ্ছে ও বাঁচবে না। হয়ত আর শুভ্রের কাছে যাওয়া হবেনা।



– আমার খুব খারাপ লাগছিল। দুপুরের দিকে বের হলাম রুম থেকে। গাড়ীর ডাইভার কে নিয়ে সোজা শুভ্রের অফিসের সামনে আসলাম। গাড়ী একটা জায়গায় পার্ক করে ডাইভার বলল,,,,
পরী! এখানে আসলে কেন? এটা তো অনেক হাইফাই এলাকা। এখানে কি তোমার কেউ আছে?



– রফিক ভাইয়া চুপ করেন তো। আপনার সমস্যা হলে আপনি চলে যান। আমার এখানে কাজ আছে। আর আঙ্কেল কে কল দিয়ে বলেন আমি আপনাকে নিয়ে বের হয়েছি। চিন্তা করেন না আমি সময় করে আপনাকে এর দাম দিব। আমার কাছে এখন টাকা নাই।



– আমি তোমার কাছে টাকা চেয়েছি নাকি! কথাটা বলেই রফিক একটু দুরে গিয়ে কল দিল নিশুকে। সব কথা বলে এসে আবার গাড়ীতে বসল রফিক। কারন নিশু সবসময় ওর কাছে থাকতে বলেছে।



– দুপুর গড়িয়ে বিকেল হল দেন সন্ধ্যাও হয়ে গেল কিন্তু শুভ্রকে দেখতে পেলাম না। ও কি আজ অফিসে আসেনি! না আবার কোথাও বদলি হইলো।



– অবশেষে বাসায় চলে আসলাম। রুমে এসে বসে পড়লাম। খুব কষ্ট হচ্ছিল। আর নিজেকে কন্টোল করতে পারলাম না। তাই ফোনটা অন করে শুভ্র কে কল দিলাম। ফোন ঢুকছে কিন্তু কল রিসিভ হচ্ছেনা। যতবার কল কেটে যাচ্ছে ততবার আমার মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছিলো।

প্রায় ১ ঘন্টার বেশি সময় হবে ওকে ট্রাই করছি কিন্তু রিসিভ করছে না। আমি রাগে কষ্টে কাঁদতে লাগলাম। শুভ্র আমাকে ভুলে গেছে। শেষে মাসেজ করলাম “””শুভ্র তুমি বাসায় আছো তবুও কেন রিসিভ করছোনা। আমার কষ্ট হচ্ছে তো।””””



– শুভ্র ফোনটা রুমে রেখে ওর মায়ের রুমে এসে বসে আছে এবং কথা বলছে। সাথে আরও একটা ফোন আছে কিন্তু এটা দিয়ে কখনও পরীর সাথে কথা বলেনি।


– এমন সময় শুভ্রর ফোনে কল এল।


– হ্যাঁ বল…… কিছু Information পেয়েছো?


– Sir জলদি ম্যাম কে কল দিন ওনার নাম্বার খোলা প্রায় ১ ঘন্টা ধরে। এই নাম্বারে বার বার ট্রাই করছে। ওনার কল ট্রাক করেছি। আপনাকে ম্যাসেজ করছি লোকেশন।


– শুভ্র নাম্বারটি শুনে হচকিয়ে উঠল। আরে এটাতো আমার নাম্বার। তার মানে এর আগেও আমাকে কল দেওয়ার ট্রাই করছিল।


– Sir শুধু শুধু আমাদের পিছনে এত টাকা খরচ করলেন। ম্যাম আপনাকে এত্ত ভালবাসে যে এর আগেও বার বার ট্রাই করছে। আপনিই বুঝতে পারেননি।



– শুভ্র আর কোন কথা না বলে দৌড়ে রুমে এসে ফোন নিয়ে দেখল ১৫০+ বার কল দেওয়া হয়েছে পরীর নাম্বার হতে। পরীর মাসেজ দেখে শুভ্রর বুকের ভিতর কেমন জানি হতে লাগল।



– অনিতা শুভ্রের দৌড়ানো দেখে অনিতাও শুভ্রের পিছে পিছে এসেছে।


– মা পরী! বলেই শুভ্র কল ব্যাক করল। আল্লাহ্ নাম্বারটা যেন খোলা থাকে।


– অনিতা শুভ্রের কথা শুনে আরও কাছে এলো শুভ্রের।



– আমি কাঁদছিলাম আর এমন সময় কল আসল। আমার আর বুঝতে বাঁকি রইলনা এটা আমার শুভ্রের কল ছিল। বুকের ভিতর হাতুরির একেকটা বাড়ি মনে হয় পড়ছে। আমি কল আর রিসিভ করতে পারলামনা। কয়েক বার বেজে কেটে যাচ্ছে শেষে কল রিসিভ করে বললাম

“””” শুভ্র তুমি আমায় ভুলে গেছ,,,,,, আমার কথা তুমি একটুও ভাবোনা। তুমি খুব খারাপ। খালি খারাপ না একদম নষ্ট খারাপ বলেই কাঁদতে লাগলাম।””””””



– শুভ্র পরীর কথাগুলো কানে আসতেই চোখ বন্ধ করে ফেলে। কত দিন পর শুভ্রের দেবীটার কথা শুনছে শুভ্র। শুভ্রের মনে হচ্ছে ও পাগল হয়ে যাবে। কত প্রতীক্ষার পর এই শব্দ গুলো শুনতে পাচ্ছে শুভ্র। শুভ্র চোখ মেলাতেই ওর চোখ দিয়ে ঝর ঝর করে পানি পড়তে লাগল। অনিতা সেটা দেখে রুম থেকে বের হয়ে গেল। তাদের ২ জনকে একান্ত টাইম দেওয়া উচিত এই ভাবে।



– কি হল শুভ্র কথা বলছো না কেন! তুমি আমাকে সত্যি ভুলে গেছ তাইনা?

শুভ্র! ৬ মাস আমি ঠিক মত ঘুমাতে পারিনা। তোমাকে ছাড়া আমি চলতে পারছিনা শুভ্র। আমি শুধু তোমাকেই চাই এটা ছাড়া আর কিছু আমার দ্বারা সম্ভব নয়। আমি তোমাকে খুব মিস করি। আমার শুভ্রকে আমার খুব প্রয়োজন।

শুভ্র তোমার অনুপস্থিতি আমাকে পাগল করে দেয়, আমাকে বড্ড কষ্ট দেয়, আমার অনুভূতি নিয়ে খেলা করে। আমি আর পারছি না শুভ্র। আমাকে নিয়ে যাও।


—————————–?


– শুভ্র আমার সাথে কথা বলবানা! আমার শরীর খুব খারাপ। আমি মনে হয় বাঁচবনা। তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছে। তুমি আসবা আমার কাছে শুভ্র?
আমার চোখ দিয়ে পানির বাঁধ মানছেনা। শুভ্রটা আমার সাথে কথা বলছেনা শুধু কেঁদেই যাচ্ছে নিশব্দে।


– কোথায় আসিছ এখন?


– শুভ্রের কথা শুনে আমার বুকের ভিতর তোলপাড় করতে লাগল।
এভাবে শুভ্রের কথা শুনে বুঝে গেলাম এখন আমার উপর বেশ রেগে আছে।

শুভ্র! তুমি আমার উপর ভিষন রাগ করে আছো?

My heart I Love you♥ বলেই অনেক গুলো কিস♥♥♥♥করতে লাগলাম।
আমার প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছিল নিশ্বাস নিতে তবুও পাগলের মত শুভ্রকে কিস♥♥♥♥ করতেই থাকলাম।


– কিস♥♥♥♥ করা থামাবি…….কি হলো বল! তুই এখন কোথায়?


– ওকে বলছি। আমি একটু পানি খেয়ে আসি।


– না কোথাও যাবিনা তুই। এখুনি বল বলেই শুভ্র গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে পড়ল রুম থেকে।

– আমি একটু পানি খেয়েই বলছি। আমার গলা তেষ্টাই ফেঁটে যাচ্ছিল তখন।


– কথা কেন শুনিসনা তুই! আমাকে আর কত কষ্ট দিবি। আমি দুনিয়া থেকে বিদায় হলে তুই থামবি।


– পরী কোন কথা না বলে ফোনটা রেখে পানি খাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই অলিবয়েলের উপর পা পড়তেই স্লিপ খেয়ে ড্রেসিং টেবিলের সাথে ধাক্কা খেয়ে জোড়ে মা বলে একটা চিৎকার দিয়ে ফ্লোরে পরে গেল।


– পরীর চিৎকার শুনে শুভ্র স্তব্ধ হয়ে গেল। পরীর আর্তনাদ শুভ্রের কানে এসে ধাক্কা খেল।


– নিশু দৌড়ে এসে দেখে পরী ফ্লোরে পড়ে কেঁপে যাচ্ছে। আর পুরো ফ্লোরে রক্তে ভেসে গেছে। এই পরী এটা কি করে হল তোমার বলে নিশু পরীকে এসে ধরল।



– অনেক কষ্টে পরী বলে উঠল ভাইয়া আমার শুভ্র বলে ফোনের দিকে হাত দেখিয়ে দিল। আর কিছু বলতে পারল না সেন্সলেস হয়ে যায় পরী………..

চলবে——

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here