অস্তিত্বের খোজে,পর্বঃ ৩১

0
2156

অস্তিত্বের খোজে,পর্বঃ ৩১
নাফিসা মুনতাহা পরী

– নিশু পরীর ফোনটা পকেটে নিয়ে পরীকে ফ্লোর থেকে তুলে নিল। একটু দাড়াতেই রক্তে পা স্লিপ খেয়ে পড়ে যায় নিশু। কিন্তু নিশু পরীকে ঠিকি সেভ করে নেয়। নিশুর শরীর ব্লাডে মেখে গেছে। সে
দিকে ওর কোন খেয়াল নেই।

নিশু উঠে মা বলে একটা চিৎকার দিয়ে পরীকে নিয়ে দৌড়ে গাড়ির কাছে এসে রফিক কে ডেকে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যায়।



– নিশুর বাবা-মা আর নুরজাহান নিশুর চিৎকার শুনে ডাইনিং রুমে এসে দেখে রক্তের ছোপ ছোপ অনেক গুলো দাগ। যেটা বাহির অবদি চলে গেছে।



– নুরজাহান জলদি পরীর রুমে এসে দেখে সারা ফ্লোরে রক্তের ছড়াছড়ি। নুরজাহানের আর বুঝতে বাঁকি রইল না কি ঘটেছে। আল্লাহ্ বলে একটা চিৎকার দিয়ে বাহিরে এসে বলল আপা আমার পরীটা শেষ বলে কাঁদতে লাগল।



– শুভ্রর দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কি হয়ে গেল। শুভ্র জলদি পরীর নাম্বার ট্রাক করে গাড়িতে উঠে স্টার্ট দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেল। রাত ৮ পার হয়ে গেছে। আল্লাহ্ আমার পরীটাকে ভাল রেখ। আমার ওকে ছাড়া আর কিছু চাইনা বলে অনেক বিপদের দোয়া গুলো পড়তে লাগল শুভ্র।




– নিশু পরীকে নিয়ে বসে আছে আর ওর সেন্স ফিরানোর চেষ্টা করছে। পরী পরী বলে বার বার ডাক দিচ্ছে কিন্তু ওর কোন রেসপন্স নাই। গা হাত পা সব মনে হয় ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। নিশুর চোখ দিয়ে পানি পড়েই যাচ্ছে।



– ১৫ মিনিট পর হসপিটালে এসে পৌছালে নিশু দ্রুত পরীকে নিয়ে হসপিটালে ঢুকে গেল। কিন্তু বাঁধ সাধল ওর চিকিৎসা নিয়ে। নার্স এসে বলল আপনি পেসেন্টের কে হন। আপনি কি তার হাসবেন্ড হন?



– না আমি ওর husband নই। বাসার লোক হই।


– দেখেন সিরিয়াস কেস্ তাই সিগনেচার দরকার husband এর। পরে কোন সমস্যা হলে আপনারা যে আমাদের বিরুদ্ধে একশন নিবেন সেটা আমাদের জন্য ক্ষতিকর। তাই জলদি ওনার husband বা বা-মা কে ডাকুন। যত দ্রুত পারেন বলেই নার্স চলে গেল।



– নিশু পরীকে নিয়ে ঢুকার ৫ মিনিটে শুভ্র হসপিটালে ঢুকল।


– শুভ্র দৌড়ে এসে নার্স কে জিঙ্গাসা করল পরী নামে পেসেন্ট কে কোথায় এডমিট করা হয়েছে। পেসেন্টটি প্রেগন্যান্ট ছিল।


– স্যার পরী কে জানিনা কিন্তু একজন পেসেন্টের অবস্থা খুবই খারাপ একটু আগেই এডমিট করা হয়েছে বলে শুভ্রকে নিয়ে গেল পরীর কাছে নার্স।


– ICU রুমে ডাক্তারগন ছুটাছুটি করছে। পেসেন্টের অবস্থা খুবিই খারাপ।


– Sir আপনাকে বললাম না জলদি ওনার আপন কাউকে ডাকুন বলে নিশুর কাছে এগিয়ে এল নার্স।
নিশু ভেবে পাচ্ছেনা কি বলবে। কেবল বলতে যাবে আমিই ওর husband কিন্তু কারো কথা শুনে নিশু থমকে যায়।



– নার্স আমার ওয়াইফ সিরিয়াস কন্ডিশনে আছে আর আপনারা formality নিয়ে বসে আছেন বলেই একটা ধমক দিল শুভ্র নার্সকে।


– নার্স একদম হচকিয়ে ওঠে শুভ্রর ধমক শুনে। নিজেকে সামলিয়ে বলল sir এটাই নিয়ম বলে শুভ্রকে নিয়ে গেল।


– পরীর ভিতরে চিকিৎসা চলছে। শুভ্র সব কমপ্লিট করে এসে ওর মাকে দ্রুত কল দিয়ে হসপিটালে আসতে বলে। শুভ্র ঠান্ডা মাথায় চুপ করে বসে আছে মাথা নিচু করে। একদম ঠান্ডা।



– নিশু কিছুতেই ভাবে পাচ্ছেনা পরী কি করে এর স্ত্রী হতে পারে। পরীকে এই কয়েক মাসে কাছ থেকে দেখেছে নিশু। নামায কালাম পড়া সহ সব ধার্মিক কাজে কমতি রাখে না। আর তার স্বামী শুভ্রর মত একজন অন্য ধর্মের ছেলে হয় কিকরে। নাহ্ মাথায় কিছু ঢুকছেনা নিশুর।

এই জন্য পরী বার বার শুভ্রর কথা জিঙ্গাসা করে। তাহলে পরী বাসা থেকে কেন বের হয়ে আসছে! এমন একটা শশুর বাড়ী রেখে! যেরকম সব মেয়েই চায় এমন একটা উচ্চ পরিবার।

শুভ্র কি তাহলে পরীকে জোড় করে বিয়ে করেছে!
নাহ্ শুভ্র তো এমন না,,,,,,, কোন মেয়ের প্রতি আলাদা ফিলিংস নাইতো। কি সব হচ্ছে।



– শুভ্রর মনে হচ্ছে বার বার,,,, পরীকে ছাড়া ওর দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পরীকে কতটা চায় শুভ্র…….. সেটা শুভ্র আর আল্লাহ্ই ভাল জানে।



– অনিতা সহ বাসার সবাই হসপিটালে এসে যায়। এমন সময় ডাক্তার এসে বলে প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছে পেসেন্টের। কোন ভাবেই থামানো যাচ্ছেনা। পেসেন্টের টুইন বেবী ছিল। কিন্তু একটা মারা গেছে অপর জনের অবস্থা আর পেসেন্টের অবস্থা খুবই জটিল। সিন্ধান্ত নিতে পারছিনা আমরা।



– একটা গেছে অন্যটাকেও মেরে দিন। কোন দিন যদি বাচ্চা নাও হয় তবুও খুশি আমি কিন্তু আমার স্ত্রীকে যে কোন মূল্য ফেরত চাই। আর যত রক্তের প্রয়োজন আমি ব্যবস্থা করছি। প্রথমে আমার থেকে রক্ত নেন আমারও O+ পজেটিভ ব্লাড গ্রুপ। বাঁকিটা আমি ব্যবস্হা করছি।



– অনিতা চট করে এসে বলল যদি বাচ্চা না বাঁচে তাহলে পেসেন্টের বাঁচার কোন দরকার নেই।


– ডাক্তার তো এদের মা ছেলের কথা শুনে আকাশ থেকে পড়ল। এরা এত্ত উচ্চ একটা পরিবার তবুও এদের মুখে এমন কথা। শুভ্র শুধু চুপ করে আছে।



– অনিতা ভাল করেই জানে আজ যদি পরী সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে যায় তাহলে পরী বাঁচবে তো ঠিক কিন্তু জিবন্ত লাশ হয়ে বাঁচবে। শুভ্রের সম্পর্কে অনিতা খুব ভাল জানে। শুধু অনিতা কেন শুভ্রর আসে পাশে সবাই জানে শুভ্র কি জিনিস। তাই পরীর জন্য শুভ্র কতটা রিক্স। বাচ্চার মুখ দেখে যদি শুভ্রের মন গলে তাই অনিতা এই কথা বলেছে।



– নিশু অনিতার কথা শুনে চুপ করে যায়। কারন শুভ্রকে দেখার পর থেকে নিশু একদম স্থির থাকতে পারছেনা। পরীকে যে শুভ্র কতটা ভালবাসে সেটা নিশু বুঝতে পেরেছে এতক্ষনে। আর সেই শুভ্রকে পরী আঘাত করেছে তার ফলাফল যে কতটা খারাপ হবে সেটা ভেবেই নিশুর শরীর শিউরে উঠছে।

নিশু সিন্ধান্ত নিয়ে নিছে পরী সুস্থ হলে ওকে নিয়ে নিশু চলে যাবে সেটা যেভাবেই হোক না কেন। প্রয়োজন হলে সারা জিবন পরীর দায়িত্ব নিবে নিশু তবুও শুভ্রর কাছে এক মুহুত্বও রাখা যাবেনা।



– নিশু বাসায় কল দিয়ে হসপিটালে আসতে বলল সবাইকে।


– নিশু অনিতার কাছে গিয়ে বলল আন্টি কেমন আছেন!

– অনিতা নিশুর দিকে তাকিয়ে বলল নিশু! তুমি এখানে,,,,, আর তোমার শরীরে এত্ত রক্ত কেন?


– এগুলো পরীর রক্ত আন্টি। ও আমাদের বাসায় ছিল এতদিন বলেই নিশুর চোখ ছলছল করে উঠল।


– নিশু তোমার ঋন কিভাবে শোধ করব আমরা জানা নেই বাবা। আমাদের প্রিয় জিনিসকে তোমরা আগলে রাখছো এতদিন,,,,,,, এটা আমাদের কাছে অনেক।



– আন্টি ওকে পেয়ে আমরা অনেক খুশি। অন্য ধরনের একটা মেয়ে। আমি জানতাম না পরী শুভ্রর ওয়াইফ।

পরীও কখনও বলেনি আমাদের। মেয়েটাকে কোনদিন হাঁসতে দেখিনি। জানিনা কেন সে এমন একটা কাজ করল আর শুভ্রের সাথেই বা কেমনে বিয়ে হল! এটা তো সম্ভব নয়। কিচ্ছু মাথায় ঢুকছেনা।



– নিশু অনেক ইতিহাস। এখন বলা সম্ভব নয় বাবা।


– কিন্তু আন্টি আমি যতটুকু শুভ্রকে চিনি পরী যদি আজ বেঁচেও যায় তাহলে শুভ্রর হাত থেকে বাঁচবেনা। আমি শুভ্রকে ভাল করে চিনি তাই বললাম।

আপনাদের সমস্যা হলে আমি পরীকে আমাদের বাসায় রাখতে পারি।


– নিশু কথাটি আমাকে বলেছো ঠিক আছে শুভ্র বা পরী কাউকে বলো না। তোমার সাথে কোন যোগাযোগ রাখবেনা পরী। আর শুভ্রের কথা তো বাদ দিলাম তোমায় এখানেই খুন করবে কথাটি শুনে। তুমি জানো না সব কিছুর উর্দ্ধে শুভ্র পরীকে শুধু চায়।
তাই পরিস্থিতির উপর সম্পূর্ন ছেড়ে দাও।



– শুভ্র,নিশু এবং অনিল মিলে পরীকে রক্ত দিল। তবুও পরীর কন্ডিশন খুবই খারাপ। পরীর টুইন বেবী ছিল যার মধ্য ছেলে বেবিটা আঘাত পাওয়ার সাথে সাথেই মারা গেছে। মেয়ে বেবিটা এখনও বেঁচে আছে। ওকেও লাইফ সার্পোটে রাখা হয়েছে।



– অনিতা বার বার ভাবছে শেষে মাধুরীর মত পরীও চলে যায় কিনা। আর কিছু ভাবতে পারছেনা অনিতা ২ চোখ ছলছল করে উঠল।


– অনিল সব থেকে বেশি কষ্ট পাচ্ছে এখানে। মাধুরীর ও একই সমস্যা হয়েছিল। আজ যদি পরীর ও এই অবস্থা হয় শুভ্রটার কি হবে। জিবন বড়ই কঠিন। প্রভু আমার ভুলের শাস্তি আমার ছেলেটাকে দিওনা। পরীকে ঠিক করে দাও।



– বিমলা কেঁদেই চলছে হসপিটালে আসার পর থেকে। বাসায় সব থেকে পরীকে কেউ কষ্ট দিলে,, সেটা বিমালা দিয়েছে। মেয়েটা সব সময় হাঁসিখুশি মনে সব কথা মেনে নিছে। কোন দিন প্রতিবাদ টুকু করেনি। কথা গুলো মনে করে কেঁদেই চলছে বিমলা। পরীকে এই অবস্থায় দেখবে সেটা সে কখনো কল্পনাতেও ভাবেনি।



– মা! কান্নাকাটি না করে প্রর্থনা করুন। পরী যেন জলদি আমাদের বাসায় সুস্থ হয়ে ফিরে যেতে পারে। আমাদের সবার কষ্ট হচ্ছে মা……. চলেন বাসায়। অনেক রাত হয়ে গেছে। (অনিতা)


– নিদ্রা প্রেগন্যান্ট তাই ওকেও জলদি হসপিটাল থেকে বাসায় যেতে বলা হল। এর মধ্য রাত ১২ টা বেজে গেছে।


– নিতাই সেন সেই তখন থেকে চুপ করে আছে। নিতাইয়ের হাত ধরে পরী এখানে আসছে। আর আজ চোখের সামনে পরীর নিস্তেজ হয়ে পরে আছে। সেটা নিতাই কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা।


– কৌশিক সবাইকে নিয়ে চলে যায়। অর্পিতা থাকতে চাইছিল কিন্তু অনিতা ওকেও দিয়ে পাঠায়। শুভ আর অনিতা শুধু রয়ে যায় পরীর পাশে।


– নিশুর বাবা-মা ও আসে। নুরজাহান তো এক কান্নায় আছে। ওর কান্না দেখলে কেউ স্থির থাকতে পারবেনা। নিজের মেয়ের মত আগলে রাখছে এতদিন পরীকে। নুরজাহান ও থেকে গেল। নিশু ওর বাবা মাকে নিয়ে বাসায় আসলো।



– নিশু ওয়াশরুমে এসে সাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে কান্না করতে লাগল। নিশুর শরীর থেকে পরীর রক্ত গুলো ধুয়ে ফ্লোরের পানি লাল হয়ে যাচ্ছে।


– নিশু গোসল শেষ করে এসে ইশিতাকে কল দিল। কারন অনেকবার ইশিতা এর মধ্য কল দিয়েছিল।

– জান,,,,,,,,,,, তোমায় কত্ত বার কল দিয়েছি। তুমি এমন কেন!

– ইশিতা পরীর কন্ডিশন খুবই খারাপ। নিশু সব কিছু খুলে বলল।
আচ্ছা ইশিতা পরীকে আমাদের সাথে রাখলে কি তোমার সমস্যা হবে!

– না জান,,,,,, আমার কোন সমস্যা নেই। পরীকে যদি ওর স্বামীর কাছে রাখা না যায় তাহলে ওকে আমাদের কাছেই রখব।


– এবার নিশু কেঁদে বলল ইশিতা জানো পরীর বর কে?


– না তো! কে ওর বর,,,,,, তুমি কি ওর বরকে চিনো?


– আমাদের ক্লাস মেড শুভ্র ওর বর। এবার বুঝছো পরী কতটা রিক্সে আছে।


– ইশিতা চমকে ওঠে নিশুর কথা শুনে। কিহ্ শুভ্র পরীর বর!


– আমি এমনি আমাদের কাছে রাখতে চাচ্ছি!


– শুভ্রর কাছে পরীকে আমরা রাখবনা একদম। আমি জানি শুভ্রটা কি জিনিস। পরী হয়ত চিনেনা ওকে।


– পরীর আর্তনাদ শুধু আমার কানে ভাসছে ইশিতা। আমি ঠিক থাকতে পারছিনা বলেই নিশু কল কেটে দিল। আর ফোন সাইলেন্ট মোডে রেখে পরীর ফোনটা অন করল।

আশ্চার্য পরীর একটা সিঙ্গেল পিক নেই। সব শুভ্রের সাথে পিক। না হয় বাসার কারো না কারো সাথে পিক উঠানো।

নিশু এটাও দেখল পরী সেলফি ওঠাচ্ছে আর শুভ্র ওর গালে কিস করছে না হয় ওকে বুকে নিয়ে আছে। কেউ কাউকে কতটা ভালবাসলে এধরনের সব পিক থাকে। কোন সিঙ্গেল পিক নাই। যতই পিক দেখছে ততই নিশু শিউরে উঠছে। পরী কে শুভ্র কতটা ভালবাসে। আর সেই শুভ্রের সাথে পরী এই কাজ করেছে। তার মানে শুভ্র ওর কি অবস্থা করবে। পরী নিজেও জানেনা ওর সাথে কি হতে চলছে।

শেষে নিশু পরীর একটা ভিডিও দেখল যেখানে পরী কান্না করতে করতে বলছে আমার এই বাচ্চা চাইনা শুভ্র। এই বাচ্চার জন্য আমি তোমার কাছ থেকে এত্ত দুরে।

নিশু কোন কিছুই বুঝতে পারছেনা। বিশাল জট আছে এর ভিতর।

নিশু এবার পরীর রুমে এসে দেখল রুমের রক্তগুলো জমাট বেঁধে কালো রং ধারন করেছে। এটা দেখে জলদি নিজের রুমে এসে নিশু নামাযে দাড়িয়ে যায়।

“”আল্লাহ্”” ছোট্ট একটা মেয়ে পরী,,,,, ওকে সুস্থ করে দাও। আমি ঠিকমত নামাযও পরিনা। কিন্তু আজ বড় বিপদে পরে তোমাকে ডাকছি হয়ত। তুমি পরীকে ঠিক করে দাও।



– শুভ্র পরীকে দেখছে অপলকে। হৃদয়ে ক্ষত যেন বেড়েই চলছে। শুভ্র ওর মেয়েকে একটি বারের জন্যও দেখেনি।
সবাই দেখেছে কিন্তু ও একবারও তাকায়নি ভুলেও। যার জন্য এত্ত কিছু তার মুখও শুভ্র দেখতে চায়না।



– বাসার সবাই দেখে যায় পরীকে। পরীর মেয়েটাকে সব সময় নুরজাহান পরিচর্যা করে। কারন একে নুরজাহান আগলে রেখেছে তাই ওর হক বেশি।



– শুভ্র রাতদিন হসপিটালে থাকে। পরীর কাছে কাছে একদম। শুভ্রর মনে হয় শুভ্র এখান থেকে চলে গেলেই পরী আবার হারিয়ে যাবে।



– ৭ দিন পর পরীর সেন্স আসে। প্রথমে নুরজাহান কে পাঠাইয়ে দেওয়া হল পরীর কাছে। নুরজাহান ওর মেয়েকে নিয়ে পরীর কাছে নিয়ে যেতেই পরী অন্য দিকে মুখ ফিরাল।


– পরী এটা তোমার মেয়ে আর তুমি মা হয়ে ওর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছো?


– খালাম্মা ওকে আমার কাছ থেকে সরান এখুনি। আমি ওকে দেখতে চাইনা। ওকে দেখলে আমি ওকে হয়ত মেরেই ফেলব। সরান ওকে আমার কাছ থেকে বলেই পরী চিৎকার করে ওঠে।


– নুরজাহান বেশ ভয় পেয়ে যায়। বাচ্চাকে নিয়ে বের হয়ে বলল আজব তো! বাবা মা ২ জনেই বাচ্চার মুখ দেখতেই চায়না। কথাটি শুনে অনিতা বলল কিছু মনে করেন না। সব ঠিক হয়ে যাবে বলে বাবুকে কোলে তুলে নেয় অনিতা।

বাবুকে দেখার পর থেকে অনিতার মনে হয় বাবুটি দেখতে একদম মাধুরীর মত হয়েছে। সবকিছুর মধ্য মাধুরীর ছোয়া এসেছে। মাধুরীর শেষ কথা ছিল “আমি শুভ্রকে তোমার কাছে আমানত হিসেবে রেখেছি।”‘”

তার মানে মাধুরীর কি ২য় জন্ম হয়েছে? ( হিন্দু শাস্ত্রীয় মতে)

এটা অনিল ও নোটিস করেছে অনিতাকে। অনিল বাবুটাকে মাধুরী বলে ডাকে। কি আজব সব কিছু।



– একে একে সবাই পরীকে দেখে যায়। বিমলা তো কান্না করে পরীর হাত ধরে। এই ছুড়ি আমাকে মাফ করে দিস। এমন কান্ড কেউ করে! কি এমন হল যে বাসা ছেড়ে বের হয়ে এলি?



কি বলবে পরী সময়টা মনে হচ্ছে ওর হাতের মুঠোয়। শুভ্রর কথা অক্ষরে অক্ষরে ফলে যাচ্ছে। সবাই ওকে চায়। মেনে নিছে সব। কিন্তু শুভ্রকে দেখতে পাচ্ছেনা পরী। বাচ্চাটা ওর নয় বলে কি আমার মুখও দেখতে চায় না শুভ্র? শুভ্রকে চিরদিনের জন্য হারানোর ভয়টা ওকে পেয়ে বসে।

না না আমি আর শুভ্রকে ছাড়া থাকতে পারবনা। অনেক কষ্ট পেয়েছি ওকে হারানোর জন্য। ও রকম হাজার টা সন্তান আমি ত্যাগ করতে পারব শুভ্রের জন্য। আমি ওকে কিছুতেই ছাড়তে আর পারবনা।



– বউদি,,,,,, যানো আমি এখন কলেজে পড়ি?(অর্পিতা)


– অর্পিতার মুখে বউদি ডাক শুনে আমার মনে হয় কলিজা ঠান্ডা হয়ে গেল। এরা তাহলে শুভ্রর এই পরী নামক অস্তিত্ব টাকে মেনে নিয়েছে। কিন্তু আমার শুভ্রটা কই। ও কেন আসছেনা।


– বউদি তোমার রেজাল্ট বের হয়েছে ৩.২৮ পাইছো ফাষ্ট ইয়ারে। দাদা সেদিন তোমাকে খুব বকেছিল। তুমি নাকি পড়ই নি। কোনমতে ঠেলেঠুলে ফাষ্ট ক্লাস পাইছো বলে অর্পিতা হেঁসে উঠল।


– দেখ অর্পিতা! এই রেজাল্ট আমার কাছে অনেক। তোমার দাদার মত আমার এত্ত মেধা নাই যে টপে থাকব।


– বউদি তুমি কি রাগ করছো?


– না না তোমার উপর কেন রাগ করব! তোমার টপে থাকা দাদার উপর রাগ হয় মাঝে মাঝে বড্ড। আমাকে সবার মাঝে বেইজ্জতি না করলে তো তার একদমই চলে না।


– নিদ্রা আপুকে দেখে বললাম আপু তুমি প্রেগন্যান্ট!


– হুম ৫ মাস চলছে। কিন্তু আমার আগে তুমি তো এই পরিবারে বংশ ধর দিলে। এদিক থেকে তুমি আমার থেকেও অনেক বড়।


– বংশধর মাই ফুট। ওরে দেখলেই গলা টিপে মেরে ফেলতে মন চাচ্ছে,,,,,,, কথা গুলো মনে মনে বেশ ক্ষোভের সাথে বলে উঠলাম।



– নিতাই দাদু, বাবা,মা, খালাম্মা, নিশু ভাইয়া, আঙ্কেল আন্টি সবাই দেখে গেছে। শেষে পলা আন্টিও দেখে গেল কিন্তু শুভ্র! ও কেন আসছেনা। আমার এতটা কষ্ট হচ্ছিল যে ফিকরে কাঁদতে লাগলাম।



– একটা নার্স জলদি এসে বলল ম্যাম আপনার কি কোন ধরনে পেইন হচ্ছে! স্যার কে ডাকব?


– আমার বর শুভ্র কই বলেই উঠতে লাগলাম বেড থেকে।


– ম্যাম কি করছেন। সব শেষ করে দিবেন দেখছি। আপনার husband বাহিরে কথা বলছে,,,,,, যিনি আপনাকে এখানে নিয়ে আসছিল ওনার সাথে।


– নিশুর সাথে কথা বলছে হয়ত। শুভ্র তাহলে সব জেনে গেছে এতদিন আমি নিশুদের বাসায় ছিলাম।


– ম্যাম আপনার স্বামীকেই দেখলাম যে, আপনাকে এই কয়েকদিন চোখে হারা করে নি। আপনার বাচ্চা মারা গেছে একটা এটারও বাঁচার সম্ভবনা ছিলনা। আপনার স্বামী সরাসরি বলে দিল এই বাচ্চাটাকেও মেরে দিতে। শুধু আপনাকে চায়। অদ্ভুদ ভাল বাসা।


– আমি মনে মনে বললাম এটাও কেন বাঁচল। এটাও গেলে ভাল হত।


– জানেন আপনার বাঁচার আশা একদম ছিলনা। সবাই হাল ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু এই মানুষটা এতটুকু আশা ছাড়েনি। সব সময় আপনার পাশে থেকেছে। শেষে ওনার কান্না দেখে আমরা সবাই বাধ্য হইছি কান্না করতে আপনার জন্য। এত্ত ভাল স্বামী কোন মেয়ে পায়! আপনি বড়ই ভাগ্যবতী একটা মেয়ে।



– দেখেন আমি জানি আমার বর আমায় কতটা ভালবাসে তাই লেকচার বন্ধ করে দয়া করে শুভ্রকে ডাকুন। তা না হলে আমি এখুনি এখান থেকে উঠব বলে কান্না করতে লাগলাম। আমার শুভ্রকে চাই বলে সালাইনের পাইপ একটানে খুলে ফেললাম।


– ম্যাম কি করছেন,,,,, আপনার ক্ষতি হয়ে যাবে তো।


– আমার স্বামীর ভালবাসা দেখেছেন আমারটা দেখেননি বলেই এককেটা করে খুলতে লাগলাম শরীর থেকে। পাইপটা খোলার সাথে সাথে পরীর হাত থেকে চিরিক দিয়ে ছিটকে রক্ত বের হতে লাগল।

আমি বলছিনা শুভ্রকে আমার সামনে আনতে! আপনি কথা শুনছেন না কেন?


– পরীর চিৎকারে ডাক্তার ছুটে এসে দেখল পেসেন্ট চরম মাত্রায় পাগলামি করেই যাচ্ছে। এর পেসার খুবই লো তার ভিতর এগুলো শুরু করেছে লাইফ রিক্স হয়ে যাবে।


– শুভ্র কই,,,,, আমাকে হয় ওর কাছে নিয়ে যান না হয় ওকে নিয়ে আসুন বলে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠল পরী।


– এমন সময় দরজার কাছে এসে শুভ্র দাড়াল। শুভ্রকে দরজার সামনে দেখতে পেয়ে পরী একদম স্বাভাবিক। কোন কথা না বলে শুভ্রকে দেখতে লাগল পরী।


– শুভ্র কাছে এসে বলল আপনারা যান বাঁকিটুকু আমি দেখছি।


– এত্ত জেদি বউকে যে কেমনে সামলান আপনি “”আল্লাহ্”” ভাল জানেন বলেই সবাই রুম থেকে চলে গেল।


– শুভ্র এসে অগোছালো বিছানার চাদর ঠিক করছে আর আমি চুপ করে ওকে অপলক দৃষ্টিতে দেখতে লাগলাম।

শুভ্র আমার কাছে পুরোটা একটা নেশার জিনিস। আমার পুরো শরীরে নেশা লেগে গেল শুভ্রকে দেখে। দাড়ি গুলো বড় হয়ে গেছে। অনেকটা উশকু খুশকোর মত লাগছে শুভ্রকে। চুল ঠিক নাই অগোছালো। তবুও জাষ্ট ওয়াও লাগছে। এ এক অন্য ধরনের ভাল লাগা।



– শুভ্র পরীর পাশে বসে পরীর কপালে অনেক টাইম নিয়ে একটা গভীর কিস করে। শুভ্রর চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল পড়ল পরীর কপালে।



– আমি উন্মাদের মত শুভ্রের শার্টের বোতাম একটার পর একটা খুলতে লাগলাম। দেহ থেকে শার্টটা আলাদা করলাম,,,,,, এতে অবশ্যই শুভ্র একটু সাহার্য্য করল আমাকে। ও ভাল করেই জানে আমি কি করব এখন।

শুভ্রর ফর্সা উন্মুক্ত লোমে ভরা বুকে আমার মুখ ডুবিয়ে কয়েকটা দীর্ঘ কিস করলাম এবং আমার বুকের ভিতর জড়িয়ে নিলাম শুভ্রকে।

আমি পেয়েছি আমার অস্তিত্ব,,,, আমার ভালবাসা,,,,,,আমার বাঁচার একমাত্র অবলম্বন,,,, আমার নিঃশ্বাস নেওয়ার অক্সিজেন,,,,,আমার হার্ড,,,আমার জিবন বলেই আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম শুভ্রকে। আর পাগলের মত কিস করতে লাগলাম ওকে।

শুভ্র! আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবনা। আমার খুব কষ্ট হয় তোমাকে ছাড়া থাকতে। আমার ভুল হয়ে গেছে তোমাকে ছেড়ে এসে। আমাকে ক্ষমা করে দাও শুভ্র। আর কখনও এধরনের কাজ করবনা আমি বলেই কেঁদে উঠলাম।



– পরী! আমাকে ছাড়া যদি তোর একা থাকতে এতই কষ্ট হয় তাহলে ছেড়ে গেলি কেন এই শুভ্রকে….

আমাকে এত্ত কষ্ট দিলি কেন? তোর শারিরীক ও মানুষিক সমস্যা হচ্ছে আমার সাথে কেন শেয়ার করলি না।

তুই জানিস না তোকে ছাড়া শুভ্রের একদম চলে না বলেই পরীর পেটে সিজারিয়ান জায়গায় শুভ্র একটা খামচা দিয়ে ধরল।

কয়েকদিনের অপারেশন তাই শুভ্রের পুরো হাত রক্ত দিয়ে মেখে গেল।


– পরী ব্যাথায় কুকড়ে উঠল এবং ওর চোখমুখ নীল হয়ে গেল।


– পরী কষ্ট হচ্ছে তোর! এরকম কষ্ট প্রতিদিন আমি পেয়েছি। আমি শেষ হয়ে গেছি পরী। আমাকে শেষ করে ফেলছিস তুই। আমার আবেগ নিয়ে খেলা করেছিস তুই। এর শাস্তিতো তোকে ৩ গুন আমি শুভ্র ফিরে দিব। জাষ্ট ওয়েট এ্যান্ড সী বলে আরও জোড়ে চাপ দিল শুভ্র।


– আমার প্রচন্ড ব্যাথা করছিল। মনে হয় জিবন বের হয়ে যাবে বুঝি।

আমি প্রস্তুত শুভ্র তোমার সব শাস্তি সহ্য করতে। যত পারো আঘাত দাও তুমি আমাকে ধর্য্য শীলই পাবা বলে আমার ঠোট দিয়ে শুভ্রের ২ ঠোট আবদ্ধ করে ফেললাম আরও শক্ত করে জড়িয়ে নিলাম শুভ্রকে আমার বুকে।


– কিন্তু কতক্ষণ সহ্য করতে পারবে পরী,,,,,,, চিনচিনে অসহ্য ব্যাথার চোটে একসময় সেন্সলেস হয়ে শুভ্রের বুকের উপর ঢলে পড়ে গেল পরী। আর চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল শুভ্রর বুকে।

চলবে——

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here