অস্তিত্বের খোজে,পর্বঃ ৩২

0
2142

অস্তিত্বের খোজে,পর্বঃ ৩২
নাফিসা মুনতাহা পরী

– শুভ্র খুব ভাল করেই জানে পরীর জন্য কতটুকু ব্যাথা সহ্যকর আর শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই চট করে হাত সরিয়ে নিয়ে পরীকে শুয়ে দিল।

বেসিনে হাতটা ধুয়ে শার্ট পরে নার্স কে ডাকতে লাগল শুভ্র।



– নার্স এসে দেখে পরীর সেন্সলেস হয়ে গেছে। এটা কি করে হল বলেই নার্স পরীর কাছে ছুটে এল।


– আপনি নার্স হতে পারেন কিন্তু আপনার অভিঙ্গতা অতিব কম। জায়গাটা চট করে ড্রেসিং করে দেন। অল্পক্ষনের মধ্য সেন্স ফিরে আসবে বলে শুভ্র রুম থেকে বাহির হতেই নিশু আর ইশিতাকে দেখে।


– শুভ্র! তুমি কি মানুষ,,,,,,,, কেউ কাউকে এতটা আঘাত করে?( ইশিতা)


– নিশুর চোখ দিয়ে পানি পড়েই যাচ্ছে। কোন কথা বলতেই পারছেনা।


– আমার স্ত্রী! আমিই ওকে বার বার আঘাত করব বার বার ভালবেসে সেটা পূর্ন করে দিব। ওর উপর শুধু একমাত্র আমার অধিকার। মায়ের থেকে মাসীর দরদ দেখতে মোটেও ভাল দেখায় না ইশিতা। তাই আমাকে উপদেশ দিতে এসো না।


– শুভ্র! আমি ওকে ৪ টা মাস আমার চোখের সামনে দেখেছি। ওর মত মেয়েকে কেউ না ভালবেসে থাকতে পারবেনা। আর তুই ওকে এতটা আঘাত কি করে করিস। বুঝতে পারছি ওর চরম দোষ আছে তাই বলে এধরনের শাস্তি!

তোর যদি ওকে নিয়ে এতই সমস্যা হয় তাহলে আমরা নিয়ে যাচ্ছি ওকে। কোনদিন তোর কাছে আসতে দিবনা। ওর কষ্ট আমার সহ্য হচ্ছেনা।(নিশু)


– নিশু! তোর কথার যুক্তি আছে। আচ্ছা ঠিক আছে,,,,,, তোরা আমার পরীকে এতদিন আগলে রাখছিস তাই তোদের একটা ওর উপর অধিকার আছে। পরী যদি যেতে চায় আমি শুভ্র ওয়াদা করছি নিজে তোদের বাসায় পরীকে পৌছে দিয়ে আসব। ২য় বার তোদের মুখও দেখাব না।



– শুভ্রর কথার নড়চড় হয়নি আজ পর্যন্ত। তাই নিশু বেশ খুশি হল। পরীকে যতটা আঘাত করেছে পরী নিশ্টয় শুভ্রর সাথে থাকবেনা। শুধু পরী কেন কোন মেয়েই থাকবেন্ এই পরিস্থিতিতে। আমরা আজ পরীকে নিয়ে যাচ্ছি তাহলে।



– ইশিতাও বেশ খুশি হল। শুভ্রর কাছে পরীকে রাখা যথেষ্ট রিক্স আছে।



– ডাক্তার এসে পরীর অপেরেশনের জায়গাটা আবার ভাল করে ড্রেসিং করে দেয়। আর একটা ইনজেকশন দিয়ে চলে যেতেই নার্স বলল,,,,,, স্যার পেসেন্টের সমস্যা হবে না তো!


– আরেহ না। কিন্তু এটা হল কিভাবে! পেসেন্ট তোহ্ ভালয় ছিল।



– শুভ্র পরীর পাশে বসে আছে। একটু পর পরীর সেন্স ফিরে আসে। চোখ খুলে শুভ্রকে পাশে দেখে অনেক ভাল লাগছে পরীর।



– আমি শুয়ে থেকেই শুভ্রর কোমর জড়িয়ে ধরলাম। শুভ্র আর কিছু বললনা। ওভাবেই বসে আছে। তাই সাহস পেয়ে গেলাম। আস্তে আস্তে উঠে ওকে ভাল করে জড়িয়ে ধরে বসলাম।


– পরী কি করছো! ছাড়ো এখানে সবাই আছে। সবাই দেখে কি ভাববে বল………


– নাহ্ ছাড়বনা। যে যা পারে ভাবুক। আমার এতে যায় আসেনা। আমি কি পরপুরুষ কে ধরে আছি নাকি হুম!


– নিশু আর ইশিতা রুমে ঢুকে পরীকে ওমন ভাবে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরা দেখে অবাক হয়ে যায়। এই মেয়ে কি! এর মধ্য সব ভুলে গেল?

এবার নিশু ভাল করেই বুঝতে পেরেছে শুভ্র কেন এত্ত কনফিডেন্স এর সাথে বাজি ধরেছে।

নিশু নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,,,,,, পরী কেমন আছো?


– জ্বী ভাইয়া ভাল আছি। আপনারা ভাল আছেন!


– ইশিতা এসে বলল আমাকে চিনো পরী?


– দেখিনি কখনও বাট কথা বলছি আপনার সাথে।
আমি নিশুকে বললাম ভাইয়া এটা আমার শুভ্র।


– ওকে তোমরা কথা বলো আমি আসছি বলেই শুভ্র চলে যেতেই পরী ওর হাত ধরে বলল,,,,,, না কোথাও তুমি যাবা না। এখানে থাকবা তুমি। তাছাড়া আমিও কিন্তু যাবো তোমার পিছে পিছে।


– শুভ্র আর কিছু না বলে পরীর পাশে আবার বসে পড়ল।


– পরী তোমার বেবিটাকে আমাদের বাসা দেখাবা না? চলনা আমাদের বাসায়,,,,,,, তোমার ইশিতা আপুও যাবে আমাদের সাথে।


– ভাইয়া আমার বেবিটাকে একেবারে নিয়ে যান। আমার ওকে লাগবে না।


– এবার শুভ্র পরীর উপর প্রচন্ড ক্ষেপে গিয়ে রাগীত চোখে পরীর দিকে তাকাতেই পরী চুপ হয়ে গেল।


– শুভ্র তোর বউ যে এত্ত এত্ত চঞ্চল,,,,,, ওকে কেউ আটকাতে পারেনা। কিন্তু কি আজব তোর কাছে একদম ভিজে বিড়াল। ( নিশু)


– পরী তুমি থাকো,,,,,, আমি সব formality কমপ্লিট করে আসি। আজই বাসায় নিয়ে যাব তোমায় বলে শুভ্র চলে গেল।


– আমি আর কিছু না বলে মনে মনে খুব খুশি হলাম। আমি আমার সংসারে যাব। কত্ত দিন বাসায় যাইনি।


– পরী কি হল! আমাদের সাথে যাবা?( নিশু)


– ভাইয়া আপনি পাগল হয়ে গেছেন! আমি শুভ্রকে ছাড়া আপনাদের বাসায় যাবো? চিন্তা করেন না আপনার টাকা সব ফেরত দিয়ে দিব।


– নিশু পরীর বাচ্চামো কথা শুনে কেঁদে ফেলে। কতটা অবুঝ বাচ্চা মেয়ে পরী।

পরী! তুমি বুঝতে পারছোনা শুভ্র তোমার জন্য খুবই রিক্স। ও তোমাকে বাঁচতে দিবেনা। ওকে যত বড় আঘাত দিছো তুমি,,,,,,,,,, এর প্রতিটা হিসাব তোমায় পাই পাই করে দিবে।
তুমি আমাদের সাথে চল। শুভ্র কিচ্ছু বলবেনা। ও ওয়াদা করেছে আমাকে। বুঝার চেষ্টা কর পরী!


– ইশিতা আপু! ছোট বেলায় মায়ের হাতে মাইর খাইছেন?


– ইশিতা হেঁসে বলল,,,, প্রচন্ড খাইছি মাইর আম্মার হাতে। এত্ত দুষ্ট ছিলাম যে মাইর ছাড়া আমার ভাত হজম হইত না পরী।


– এত্ত মাইর খাইছেন,,,,,, মাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছা করেনি আপনার?


– কি বল পরী! মায়ের মত কিছু হয় নাকি। মাকে কেন ছেড়ে যাব?


– তাহলে শুভ্র নামে আমার পাগল অস্তিত্বটাকে ছেড়ে আমি কেন যাব!
সেটা বলতে পারেন?


– মায়ের সাথে কখনও শুভ্রের তুলনা করনা পরী?


– কিন্তু আমিতো আমার মায়ের কোনদিন আদর পাইনি। শুভ্রের ভালবাসার স্বাধ আমি প্রথম পেয়েছি। তাই সব কিছুর উদ্ধে আমি শুভ্রকে চাই। কোন আপোস না কারো সাথে আমার জাষ্ট শুভ্রকেই চাই। আশা করি বুঝবেন। এমন কোন কথা বলেন না যে আমি আপনাদের সাথে রুড ব্যবহার করি।


– বুঝলাম তুমি শুভ্রকে ভালবাস অত্যাধিক। শুভ্রও কি তোমাকে চায় এভাবেই? (ইশিতা)


– আমার থেকেও হাজার গুন শুভ্র আমাকে ভালবাসে আপু। আমি কখনও ওর সমান হতে পারবনা। তাই এত্ত মূল্যবান জিনিস আমিতো ছাড়তে রাজি না!
আমি ওকে আঘাত দিছি আমিই ওর ক্ষত পূর্ন করব। বিষেই বিষক্ষয় হয় আপু। শুভ্রর এই স্বভাবটা আমায় পরিবর্তন করতে হবে না!


– ইশিতা শিখো এই ছোট্ট মেয়ের কাছ থেকে ভালবাসতে হয় কেমনে। আমি একটু কল রিসিভ না করলে তুমি কত্ত কথা শোনাও।


– হুম ওর কাছ থেকে শিখার অনেক কিছু আছে দেখছি। (ইশিতা)




– শুভ্র অনেকক্ষন পর এসে বলল,,,,,, পরী হেটে যেতে পারবে না হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করব?


– কেন তুমি কি হইছো? কোলে নিয়ে চল আমাকে।


– পরী বাজে কথা বলবানা একদম। চল ওঠো বলেই শুভ্র পরীর কে আস্তে আস্তে করে উঠিয়ে রুম থেকে বাহির করল।


– শুভ্র! নিশু ভাইয়া এই অবদি ১ লাখ ২৮ হাজার আমার পিছে ব্যয় করছে আর নুরজাহান খালাম্মা ৩২ হাজার। ওনাদের টাকা দিয়ে দিও।


– নিশু হাসবে না কাঁদবে পরীর কথা শুনে বুঝতে পারছেনা। এই মেয়ে তোমার থেকে কি আমি টাকা চাইছি!


– না ভাইয়া কথার খেলাফ আমার একদম পছন্দ না। আমার আপনার সাথে একটা চুক্তি হইছিল। সেটা ভুলে যাবেন না দয়া করে।



– পরী নিশুদের থেকে বিদায় নিয়ে শুভ্রের সাথে গাড়িতে উঠল। এবং বাসার পথে রওনা দিল। অনিতা আগেই পরীর বেবিটাকে বাসায় নিয়ে গেছে।


– পথের মধ্য আমি শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে ছিলাম। কিন্তু ও একটা কথাও বলেনি। না বলুক তাতে আমার কি। আমিতো আমার শুভ্রের কাছে আছি। আর কিছুর দরকার নাই আমার।



– কত দিন পর বাসায় আসলাম । অনেকটা চেঞ্জ চেঞ্জ লাগছে বাসাটা। এবার শুভ্র আমাকে কোলে নিয়েই ওর রুমে নিয়ে গেল।


– শুভ্র! এখন থেকে কি আমি এখানেই থাকবো?


– হুম বলে শুভ্র আমাকে বেডে রেখে বাহিরে চলে গেল।


– রুমটা পুরোটাই চেঞ্জ। অনেক সুন্দর করে নতুন করে সাজানো হইছে। একটা বিশাল পেইন্টিং,,,,,, “শুভ ও পরীর নীড় ” মাঝখানে লেখা। ওয়াও দারুন লাগছে।


– মা এসে আমার কাছে বেবিটাকে দিয়ে বলল পরী ওর হয়ত ক্ষুদা লেগেছে তাই কান্না করছে। তুমি খাওয়াও ওকে।


– আমার প্রচন্ড রাগ হল বেবিকে দেখে। আমি দেখতে চাইনা ওকে। মার জন্য কিছু বলতে পারলাম না। মা চলে যেতেই ওকে কোল থেকে নেমে পাশে রাখলাম। আর ও কেঁদেই চলছে।


– শুভ্র রুমে এসে সব কিছু দেখে বুঝল পরী কেন বাচ্চাকে ছুতে চাচ্ছেনা। এবার শুভ্র দরজা লাগিয়ে দিয়ে বলল,,,,, বাবু কাঁদছে শুনতে পাচ্ছিস না!


– কাঁদুক আমার ওকে ভাল লাগেনা। ওটার সাথে এটাও কেন চলে গেলনা। অহস্য লাগছে।


– এবার শুভ্র এসে পরী কে ঠাশশশ্ ঠাশ করে কয়েকটা থাপ্পড় মেরে বলল,,,,,,, ভিমরতি শুরু করছিস আমার কাছে! এখুনি ওকে কোলে নিয়ে ওর কান্না থামা তাছাড়া আমার থেকে কেউ খারাপ হবেনা কিন্তু?


– আমি কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললাম আমি ওকে নিবনা শুভ্র,,,,, ওর জন্য এত্ত দিন তোমাকে ছেড়ে ছিলাম। আমার ওকে চাইনা।


– পরী! আমাকে কিন্তু একদম বিগড়াবি না। তাছাড়া তোর কপালে কিন্তু আজ দুঃখ আছে। এমন মাইর দিব এমনি সব সোজা হয়ে যাবি।


– আমি সুড় সুড় করে ওকে কোলে নিলাম। বুকে নিয়ে বললাম থামছে না তো। আমি কি করব।


– ওর খুদা লাগছে।(শুভ্র)


– তোহ আমি কি করবো?


– সেটাও শিখে দিতে হবে তোকে!
বাচ্চার মা হয়ে গেছিস আর তুই নিজে বাচ্চামো শুরু করেছিস বলে শুভ্র পরীর কাছে এসে বলল একটা ৭ দিনের বাচ্চা কি খায় জানিস না! জামা খোল!


– আমি ঠোট উলটিয়ে ওর কথা মত কাজ করে বেবিকে ফিডিং করাতেই বেবি চুপ করে খেতে লাগল।


– শুভ্র তুমি বেবিকে কেন কোলে নাও না! বিকাশের বেবি বলে?


– পরী! ও আমার বাচ্চা তাই ফালতু কথা একদম বলবা না। ওটা জাষ্ট শুভ্রের অস্তিত্ব।


– শুভ্র তুমিতো মিথ্যা কথা বলনা তাহলে কেন বলছো মিথ্যা কথা?


– শুভ্র কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। চট করে উঠে গিয়ে ল্যাপটপ টা এনে ভিডিও টা বের করে পরীর সামনে রাখল।


– এমা ছিহ্ তুমিতো আচ্ছা পাজি। এই কাজ করে কেউ করে!


– হুম কাজটা করে ছিলাম বলেই আজ প্রুভ দিতে পারছি। তাছাড়া তো তুমি আমাকে বিশ্বাস করবানা ,,,,,, কারন শুভ্রতো আবার মিথ্যা কথা বলতে শিখে গেছে।
ভাল করে দেখতো যেদিন বিকাশ তোমাকে মিষ্টি খাওয়ায় সে দিন এই ড্রেস পড়ে ছিলে নাকি!


– আমি শুভ্রর কথা শুনে আবার ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে ভাল করে সব খুটে খুটে দেখতে লাগলাম। এটা আবার কবে করলাম। মাথায় কিছু আসছেনা। আর শুভ্রকে এত্ত আঘাত করছি যেটা দেখে আমারই খারাপ লাগছে। তার মানে সেদিন বিকাশ না শুভ্র ছিল বলেই শুভ্রের দিকে তাকালাম।


– সেদিন একাধিক বার তোমায় শান্ত করতে হয়েছে
আমাকে। সেদিন ও আমাকে আচড়ে কামড়িয়ে দেহ শেষ করেছো আর এখন আমার মন শেষ করে দিয়েছো। তোমায় আমি কোনদিনও ক্ষমা করবনা পরী বলেই শুভ্র চলে গেল রুম থেকে।


– আমি সব কিছু বুঝতে পেরে মাথা নিচু করে চোখের জল ফেলতে লাগলাম। আমার ক্ষমা পাওয়ার কোন যোগ্যতাই নেই। এতটা কষ্ট দিছি শুভ্রকে! নিজেই নিজের প্রতি ঘৃনা হতে লাগল। আমার মেয়েটার দিকে এবার ভাল করে তাকালাম। আমি ডুকরে কেঁদে উঠলাম আমার এক সন্তান মারা গেছে এটারও মৃত্যু কামনা করছি। শুভ্রর তাহলে কতটা কষ্ট হইছে ঐ সময়। আমি একটা নিষ্ঠুর মা। না হলে এমন কাজ করি আমি।



– প্রায় এভাবে ৬ টা মাস কেটে যায়। শুভ্র আমার সাথে একটা কথাও বলেনি সেদিনের পর থেকে। আমি সম্পূর্ন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসি। আমার মেয়েটাকে নিয়ে আমার সময় কাটে বেশিভাগ। আমার বেবীর নাম “জান্নাত” রাখি আমি। আর বাবা ওকে মাধুরী বলে ডাকে। আমি বুঝতে পারিনা বাবা জান্নাত কে কেন এই ওল্ড নামে ডাকে! বাবার চোখের মুনি জান্নাত। বাহিরে থেকে এসে আমার মেয়েটাকে তার চাই।

নিদ্রা আপুর বাচ্চাটা হঠাৎ করেই নষ্ট হয়ে যায়। আপুর কান্নায় সেদিন সবাই কেঁদেছিল। আমি জান্নাত কে ওনার কোলে দিয়ে বলেছিলাম,,,,,আপু আবার হবে ইনশাল্লাহ্। আমারও তো একটা বেবী মারা গেছে।



– শুভ্র কথা না বলুক আমার কাছে তো আছে! এটাই আমার কাছে অনেক সুখের। শুভ্র এখনও জান্নাতকে কোনদিন কোলে নেয়নি। আমাদের ২ জনের কাছে ঘুমাইনা অবদি। সোফায় ঘুমায়। আমি শাড়ী পড়তে শিখে গেছি। কারন শাড়ী পড়া শুভ্রের খুব পছন্দ। কিন্তু শুভ্র আমার দিকে ভুলেও তাকায় না।



– আমি একদিন এশারের নামায পড়ছিলাম। জান্নাত প্রচন্ড কান্না করছিল। আমি নামায ছেড়ে উঠতেও পারছিলাম না।



– হঠাৎ ওর কান্না বন্ধ হয়ে যায়। আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে নামাযের সালাম ফিরে পিছন ফিরে দেখি শুভ্র অফিস থেকে এসে জান্নাত কে আদর করছে। আর জান্নাত হেঁসেই চলছে। আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ে গেল। জলদি ২ রাকাত শুকরিয়ার নামায পড়ে নিলাম। অবশেষে কন্যা তার পিতার বুকে ঠাই পেল এত দিনে। “”আল্লাহ্”” দয়া করে সব ঠিক করে দাও জলদি।



– শুভ্র ওর মেয়েকে নিয়ে বেলকুনিতে গেল। পরীর সামনে কিছু বলতে পারছেনা বলে এখানে নিয়ে এসে মেয়েকে বুকের সাথে জড়িয়ে কান্না করতে লাগল শুভ্র। ওর আর একটা সন্তানের কথা বার বার মনে পড়ে। কিন্তু আল্লাহর জিনিস উনি নিয়ে নিছেন।


– আমি সব বুঝতে পেরে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। কারন সময়টা ওদের বাবা মেয়ের।

নিচে এসে মাকে কাজে হেল্প করতে লাগলাম। আমি তরকারি টেষ্ট করে দেখলাম আমি যেমন ঝাল খাই তেমন ঝাল হইছে তরকারি তে।


– মা! হঠাৎ আজ এরকম তরকারি রান্না করলেন?


– রোজ তো আমাদের মত রান্না হয়। আজ তোমার আর নিদ্রার মত রান্না করলাম। তোমরা আমাদের জন্য এত্ত sacrifice করো আমরাও না হয় একদিন করলাম। কি বল পরী!



– মার কথা শুনে আমি অনেক চিন্তায় পড়ে গেলাম। সবাই খাইতে পারলে শুভ্র এক লোকমাও খাইতে পারবেনা। ও কেমন করে খাবে এই খাবার?


– খাবার টেবিলে সবাই খাবার খেতে বসেছে। কাজের ৩ টা লোক সবাইকে সার্ভ করছে। অনেক গুলো আইটেম দেখে নিদ্রা আপুতো সেই খুশি হল। কিন্তু আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল।


– শুভ্র খাবারের দিকে শুধু তাকিয়ে আছে। কিন্তু কিছু বলতে পারছেনা। মায়ের হাতে রান্না বলে কথা। এমনি দুপুরে কিছু খাওয়া হয়নি ওর তার ভিতর এত্ত স্পাইসি খাবার ও কি করে খাবে।


– অনিতা ইচ্ছা করে কাজটা করেছে। শুভ্রের জন্য পরী এত্ত কিছু করতে পারলে শুভ্র কেন পারবেনা?


– শুভ্র ভাত নিয়ে নাড়াচারা করছে কিন্তু মুখে তুলছেনা। সবাই মোটামুটি খাবার প্রসংসা করছে।


– কি শুভ্র খাচ্ছিস না কেন! সবার ভাল লাগছে তোর ও ভাল লাগবে খা। (অনিতা)


– দাদা দারুন হয়েছে খাবার। টেষ্ট করতো!(অর্পিতা)



– মায়ের কথা শুনে শুভ্র খেতে শুরু করল। ও চুপ করে খেয়ে যাচ্ছে। চোখমুখ লাল হয়ে গেছে ওর। আমি আর সহ্য করতে না পেরে উঠে গিয়ে ফ্রিজ থেকে দই আর মিষ্টি এনে শুভ্রের পাতে দিলাম। শুভ্র একবারও আমার দিকে আর তাকালো না। চুপ করে খেতে লাগল।


– সব প্লান মাঠে মারা গেল অনিতার।
পরী! শুভ্রকে কেন মিষ্টি আর দই দিলা।
তুমি আর নিদ্রা আমাদের জন্য অঝাল তরকারি মুখে তুলতে পারলে আমরা কেন তোমাদের ভালবাসে একদিন এই রকম তরকারি খেতে পারবনা?


– আসলে মা শুভ্রতো একদমই ঝাল খেতে পারেনা। খেতে ওর খুব কষ্ট হচ্ছিল তাই ওগুলো দিলাম।


– খুব খারাপ কাজ করেছো। উচিত হয়নি বলেই অনিতা খেতে শুরু করল।


– যে যার মত খেয়ে চলে গেল। কিন্তু শুভ্রর খাওয়া এখনো শেষ হয়নি। আমি পলা আন্টিকে হেল্প করছিলাম।


– শুভ্র যেন সবার চলে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিল। বাটির সব তরকারি ঢেলে নিয়ে খেয়ে উপরে চলে গেল।


– আমার এতটা কষ্ট লাগল বোঝানো দায়। আমার উপর রাগ করে কেন এই কাজ করল! আমাকে কি ও কখনও ক্ষমা করবেনা?


– আমি বাটিতে কিছু পায়েশ নিয়ে রুমে গেলাম। মেয়েটা আমার ঘুমিয়ে আছে। পায়েশের বাটিটা রেখে
শুভ্রকে খুজলাম। কিন্তু ও রুমে নেই। সব জায়গায় খুজলাম কিন্তু কোথাও নেই। কই গেল বলে খুজতে শুরু করলাম শুভ্রকে।

শেষে ছাদে গিয়ে দেখলাম দোলনায় ও বসে আছে। আমি গিয়ে ওর পাশে বসতেই ও উঠে গিয়ে ছাদের কিনারায় দাড়িয়ে সিগারেট ধরিয়ে টানতে লাগল।

নিজেকে খুব ছোট মনে হতে লাগল। শুভ্র আমার মুখও দেখতে চায় না। কতটা কেউ কাউকে ঘৃনা করলে এই অবস্থায় এসে পৌছে যায়।




– আমি আবার শুভ্রের কাছে যেতেই শুভ্র বলে উঠল পরী! প্লিজ আমার কাছে এসো না। তোমাকে দেখলে আমার অতীত মনে পড়ে যায়। তাই আমার কাছ থেকে যত দুরে থাকবা ততই তুমি সেভ থাকবা।



– শুভ্র আমার সাথে কত্ত দিন পরে কথা বলল। আমার চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা পানি ঝরে গেল। আমি ওর আরও কাছে গিয়ে বললাম শুভ্র আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ। তুমি যেভাবে আমাকে বলবে আমি সেই ভাবে চলব। আমার খুব কষ্ট হয় শুভ্র। আমি আর পারছিনা এই যন্ত্রনা সহ্য করতে।
I’m addicted to you. I’m all about you. you are my dream. I’ ve got feeling for you।



– আমি এর থেকেও অনেক যন্ত্রনা সহ্য করেছি পরী তাই আমার সামনে থেকে চলে যাও। আমি তোমাকে কোন দিনও ক্ষমা করবনা।


– আমার জিদ উঠে গেল। আমি ওর ট্রী শার্টের কলার ধরে বললাম,,,,,, এই! আমার কষ্ট হয়নি। আমি না হয় একটা ভুল করছি তার জন্য এত্ত শাস্তি কেন আমাকে দিবা! আমাকে কি তোমার মানুষ মনে হয়না বলেই ওকে জড়িয়ে ধরলাম। তোমার উপর শুধু আমার হক আছে। কেন বুঝনা শুভ্র! আমার ভালবাসা শুধু তোমার জন্য….. I Love you Suvro♥♥♥♥
প্লিজ আমাকে দুরে সরিয়ে দিও না বলে শুভ্রের গলায় একটা কিস♥♥♥♥ করলাম।


– শুভ্র এবার যা করল সেটা আমার ধরনার বাহিরে ছিল। শুভ্র ওর সিগারেটটা আমার কোমরে চেপে ধরল।

আমি কি করব একে ছাড়া যে আমার চলেনা তাই আমি নিজেই আরও জোরে জলন্ত সিগারেটটা চেপে ধরলাম আমার কোমড়ে। অসহ্য যন্ত্রনায় আমায় চামড়া পুড়ে যাচ্ছিল।


– শুভ্র চট করে সিগারেটটা ফেলে দিয়ে নিচে নেমে যায়। আমিও একটু পর নেমে গেলাম নিচে। আজকে আমি ওকে দেখেই ছাড়ব। রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে যা দেখলাম এতে আমার কলিজাটা মনে হয় ফেটে গেল।

” শুভ্র জলন্ত সিগারেটটা ওর কোমড়ে ধরে আছে। যেখানে আমাকে ছ্যাকা দিছে। এরকম ২ জায়গায় অলরেডি ছ্যাকা দিয়ে ফেলছে।

আমি দৌড়ে গিয়ে ওর হাত থেকে জ্বলন্ত সিগারেটটা বাহিরে ফেলে দিয়ে এসে ওর পা ধরে কাঁদতে লাগলাম।

আমার ভুল হয়ে গেছে শুভ্র আমি আর কখনও তোমার কাছে যাবনা। আমি থাকতে পারিনা একা,,,, আমার খুব কষ্ট হয় তোমাকে ছাড়া থাকতে তাই বার বার তোমার কাছে যাই। আজকের পর থেকে আর কখনও তোমার কাছে যাব না আমি। প্লিজ তবুও এই কাজ গুলো করনা। আমি তোমার কষ্ট সহ্য করতে পারিনা। আমি মরে যাব তোমার কিছু হলে।



– শুভ্র এই বার পরীর কাছে বসে বলল,,,,,, আমার কাছে একদম ঘেষার চেষ্টা করবেনা। তাহলে আমি বা জান্নাত কেউ তোমার কাছে থাকব না। কথাটা মাথায় ঢুকে নাও বলে ,,,,,,, ফ্লোর থেকে উঠে গিয়ে ঘুমন্ত জান্নাত কে বুকের মধ্য নিয়ে শুভ্র সুয়ে পড়ল।

চলবে——

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here