অস্তিত্বের খোজে,পর্বঃ ৩৫

0
2124

অস্তিত্বের খোজে,পর্বঃ ৩৫
নাফিসা মুনতাহা পরী



– আমি বাসা থেকে বের হওয়ার আগে জান্নাতের মাথার দিকে কোরআন শরীর রেখে গেলাম। দোলনা যেহেতু বড় তাই সমস্যা হলনা রাখতে। মেয়েকে একা রুমে রেখে যাচ্ছি তাই এই ব্যবস্হা। তার মধ্য বাসায় কেউ নেই।

♥আল্লাহ্♥ হেফাযতে রাখবেন। তাই নিশ্চিন্তে চলে গেলাম।



– বাসা থেকে বের হলাম একটা টর্চ নিয়ে। চারদিকে লাইট আছে তবুও নিলাম। আম গাছের দিকে তাকিয়ে দেখি দড়িটা এখনো ঝুলছে ওখানে। তবে অনেক উজ্জল দেখাচ্ছে দড়িটা। আমি কিছু মনে না করে গাছে উঠে দড়ি খুলতেই একটা ঠান্ডা বাতাস আমার শরীর স্পর্শ করল। আমি নিচে নামতে গিয়ে দেখি দড়ি আটকে গেছে। দড়ি আটকালো কেমনে বলেই টানতে লাগলাম।



– পরী! ওখানে কি করছো!


– নিচে তাকিয়ে দেখি বাবা আমায় ডাকছে। বাবা কই থেকে আসলো! সবাই কি বাসায় আসছে নাকি? এখনতো আসার কথা না!


– পরী…… নীচে নেমে আসো এক্ষুনি।
দড়ি ওখানেই রেখে আসো।


– আমি গাছ থেকে নামলাম দড়ি রেখে দিয়ে। বাবার কাছে এসে বললাম,,,,, কখন আসছেন বাবা?


– এই ভর সন্ধায় গাছে কেন উঠছো! যানোনা এই সময়টা খুব খারাপ সময়।


– বাবা দড়িটা নামাতে এসেছিলাম। যদি এদিক দিয়ে চোর আসে তাই।


– মাথায় একবারও বুদ্ধি এল না! এই বাসায় অনেক সিকেরোর্টি গার্ড আছে তারা ব্যাপারটা কি দেখবেনা? এবার গাছের দিকে তাকিয়ে দেখতো! কোন দড়ি আছে নাকি?


– আমি গাছে তাকিয়ে দেখলাম কোন দড়ি গাছে নেই। আমি নিজে হাত দিয়ে দড়ি খুললাম সেটা কই গেল!


– চোখে যা দেখ সবসময় সেটা সত্য হয়না। বাসায় যাও। আগে গোসল করবা। তারপর নিজের রুমে যাবে। তারা তোমাকে ছুয়ে ফেলেছে। তোমার মেয়েকে তোমার কাছ থেকে যতটা সম্ভব পারো দুরে দুরে রাখবে বলে আমাকে এগিয়ে দিল বাসার গেট অবদি।


– বাবা ভিতরে আসেন?


– পরে যাচ্ছি। তুমি জলদি যাও বলে আমার হাতে একটা পাথর দিয়ে বলল,,,,,, এটা বালতির পানিতে রেখে গোসল দিবা ঐ পানি দিয়ে,,,,,,,, জলদি যাও। আর কিছু হলেও পিছে তাকাবেনা।


– এবার আমি অনেকটা ভয় পেয়ে গেলাম। ভিতরে ঢুকতে গিয়ে ওনি বলল,,,,, দোয়া না পরে বাথরুমে একদম ঢুকবা না কিন্তু। আর বের হয়েও পরবা দোয়া।

নিশ্চয় ♥আল্লাহ্♥ উত্তম হেফাযত কারী। তিনিই তোমাকে উত্তম রুপে হেফাযত করবেন।


– উনি সর সর করে আবার বাগানের দিকে চলে গেলেন।


– এর মধ্য শুভ্র বাসায় চলে এসেছে। দরজা খোলা দেখে ওর বুকের ভিতর ধক করে উঠলো। রুমে এসে শুধু জান্নাতকে দেখে। পরী কই গেল। এর মাথায় আবার পাগলামি জাগলোনা তো!
পরী,,,, পরী বলে কয়েকটা ডাকও দিল শুভ্র।

– আমার পুরো শরীর কেঁপে যাচ্ছে ভয়ে। কি বলল বাবা সব। বাসায় কেন ঢুকল না! আমি ডাইনিং রুমে এসে নিচের ওয়াসরুমে দোয়া পড়ে ঢুকে এক বালতি পানি উঠিয়ে পাথরটা পানিতে রেখে গোসল দিলাম।

ড্রেসটা ভাল করে ধুয়ে ওড়না গায়ে জড়িয়ে দৌড়ে সিড়ি বেয়ে উঠতে লাগলাম। যত উপরে উঠছি আর নিচে মনে হচ্ছে,,,,,,রাগে কারা যেন বিশ্রী ভাবে গড় গড় শব্দ করে যাচ্ছে।

শেষ সিড়িতে উঠে পিছন দিকে তাকিয়ে দেখি ৩ টা কালো কুৎসিত প্রানী দাড়িয়ে আছে যাদের পায়ের হাটু অবদি সাদা উজ্জল লাইট জ্বলছে।



– পরী পিছন দিকে তাকাতেই ওরা বিশ্রী ভাবে হেঁসে উঠে মাটিতে এবার বুকে উপর ভর দিয়ে সড় সড় করে টিকটিকির মত এগুতে লাগল পরীর দিকে।


– এটা দেখে জোড়ে একটা চিৎকার দিয়ে রুমের ভিতর চলে আসলাম। শুভ্রকে দেখে ওকে গিয়ে জড়িয়ে ধরেই বললাম শুভ্র আমার মেয়েকে আমার কাছে আসতে দিও না। ওরা আমার পিছে আসছে।


– শুভ্রকে এভাবে পরী অচমকায় জড়িয়ে ধরা দেখে অবাক হয়ে গেল তাও ভিজা অবস্থায়। তুমি কই গিয়েছিলে! আর এভাবে ভিজা গায়ে কেন আসছো। কি হয়েছে তোমার….. এরকম কাঁপছো কেন।


– পরী কোন কথা না বলে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরেই কাঁদতে লাগল। আর শরীরের পানিতে পুরো ফ্লোর পানি দিয়ে ভেঁসে যাচ্ছে।


– পরী! সমস্যা টা কি তোমার? কিছু বলবে তো……


– শুভ্রর ধমক শুনে পরী চুপ তো করল কিন্তু কেঁপেই যাচ্ছে।


– শুভ্র একটা টাওয়াল এনে পরীর চুল গুলো মুছে দিতে দিতে বলল,,,,, ওকে কিছু বলতে হবে না। চুপ করে দাড়িয়ে থাক এখানে বলে ওর ড্রেস এনে হাতে দিয়ে বলল যাও চেঞ্জ করে আসো আগে তার পর শুনবো কি হয়েছে।


– না না ওরা আমার পিছে পিছে আসছে বলেই শুভ্রকে আবার জড়িয়ে ধরল পরী।


– পরী! এবার কিন্তু মাইর শুরু করব। আগে চেন্জ করে আসো বলছি! বলেই শুভ্র ওকে ছেড়ে দিয়ে একটা কাপড় নিয়ে এসে ফ্লোরটা মুছে ফেলে জলদি।


– পরী জলদি চেন্জ করে এসে শুভ্রকে সব খুলে বলল।



– শুভ্র সব শুনে পরীর উপর প্রচন্ড রেগে গেল। এর ভয় বলতে কি! কিছু নেই?

কোন আক্কেলে তুমি এই ভর সন্ধায় গাছে উঠতে গেছ আমাকে একটু বলবে! আমার জিবনে প্রথম কোন এমন একটা মাকে দেখলাম যার কাছে সন্তান রেখে যাওয়াটা ও রিক্স। নিজের মায়ের কাছেও সন্তান নিরাপদ না। স্যতিই তুমি ইতিহাস সৃষ্টি করবা পরী……….

আমার কথা না হয় ভাবনা তুমি,,,,,,,,, কিন্তু মেয়েটার কথা ভাববা তো! বলে ইচ্ছে মত কথা শুনাল শুভ্র। শেষে শুভ্র ওর মাকে কল দিল……


– হ্যাঁ শুভ্র বল……. কেমন আসিছ?

– মা কবে আসছো তোমরা?

– কাল পরশুর ভিতর। কেন সমস্যা!

– না,,,,, দিদুন কে কল দাওতো। আর বাবা কি ওখানে আছে তোমার কাছে?

– হ্যাঁ আমার কাছেই তো আছে তোর বাবা বলে অনিতা ওর শাশুড়ি কে ফোনটা দিল।


– কিরে শুভ্র কেমন আছিস!


– আর ভাল। তুমি এখুনি পলা আন্টিকে নিয়ে বাসায় আসো জলদি বলে সব ঘটনা খুলে বলল শুভ্র।


– বিমলা সব শুনে আর একমুহত্ত্বও দেরি না করে নিতাই আর পলাকে সাথে নিয়ে বাসায় রওনা দিল।


– শুভ্র! ওনাদের কেন ডাকছো? বাবাতো নিচে আছে। একটু পর আসবে।


– এখনও বুঝতে পারছোনা ওটা কি ছিল? ওটা বাবা ছিল না। তোমার মাথায় কি একটুও বুদ্ধি হবে না! তুমি নিজেও জানোনা ঘাড়ে কত বড় বিপদ নিয়ে আসছো?

♥আল্লাহ্♥ এই মেয়েকে একটু হেদায়াত কর। আমাকে শুধু সে জ্বালাতে শিখছে আর কোন গুন তার নাই।


– শুভ্রর কথা শুনে প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায় পরী। শুভ্রকে সেই কখন থেকে জড়িয়ে ধরে আছে ছাড়ার কোন নাম নেই। আস্তে আস্তে পুরো শরীর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসল পরীর। আর বির বির করে বলছে শুভ্র জান্নাত কে আমার পাশে নিয়ে এসো না। ওর ক্ষতি হয়ে যাবে।


– শুভ্রও কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। পরীকে সুয়ে দিয়ে একটা গ্লাসে সুরা দিয়ে পানি পড়ে কিছু পানি পরীকে খাওয়ালো আর গায়ে ছিটে দিল। এই জ্বর মেডিসিন দিয়ে ছাড়ানোর না।


– জান্নাত কে আর পরীর কাছে নিয়ে আসল না শুভ্র। জান্নাতের কাছে কোরআন দেখে শুভ্র মনে মনে বলল,,,,, মেয়ের বিপদ হতে পারে তার আগেই পরী সুরুক্ষার ব্যবস্হা করে গেছে নিজের অজান্তেই।



– দশটার দিকে বাসায় চলে আসল ওরা। শুভ্র পরীকে রেখে নিচে এসে দেখল অনেক জিনিস ছড়ানো ছিটানো। সিড়ি, ফ্লোর পানি দিয়ে মাখানো। শুভ্র দরজা খুলে দিয়ে বলল,,,,, আন্টি পানি গুলো একটু মোছেন তো!

এমন সময় পরীর চিৎকারে শুভ্র এক দৌড়ে রুমে এসে দেখল,,,,, পরী সাপ সাপ বলে চিল্লাচ্ছে।

শুভ্র পরীর কাছে গিয়ে বলল,,,,, কই সাপ আমি দেখছিনাতো। তুমি স্বপ্ন দেখেছো পরী।


– না শুভ্র আমি স্পষ্ট সাপ দেখেছি। আমার পা জড়িয়ে ছিল বলেই কেঁদে উঠল।


– বিমলা রুমে এসে সব শুনে পরীর পা ভাল করে চেক করে দেখে ওর দু পায়ে কিছু জড়িয়েই ছিল। স্পষ্ট মোটা দাগ দেখা যাচ্ছে। বিমলা যা বুঝার বুঝে গেল। এর সাথে এখনো জ্বীন আছে।


– পরী কান্না বন্ধ কর। জান্নাত আছে না! তোমার কান্না দেখে ও কান্না করবে।


– পরীর শরীরে তখন প্রচন্ড জ্বর। শুভ্রের গা অবদি ঘেমে যাচ্ছে। কারন পরীকে জড়িয়ে ধরে আছে শুভ্র।


– সেদিন সবাই পরীর সাথেই থাকল। বিমলা কিসের যেন পানি এনে পরীর গায়ে ছিটিয়ে দিল। পরী আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়ল। সেই রাতে পরী আর জান্নাত ছাড়া আর কারও ঘুম হলনা।


– পরদিন অনিতা আর দেরি করেনি সাবাইকে নিয়ে বাসায় ফিরে আসে। পরীর হাল আস্তে আস্তে খারাপ হতে লাগল। শুভ্রকে একদম সহ্য করতে পারেনা। জান্নাতকে অনিতা ওর কাছে রাখে।

পরীর কাছে ভয়ে কেউ আসতে পারেনা। যেসব কথা বলে পরী ,,,,,, শুনলে এমনি যে কারোর পিলে চমকে যাবে।

বিমলা থাকে অল টাইম পরীর পাশে। বিমলা আগের যুগের মানুষ তাই টুকি টাকি জানে। সেগুলো দিয়ে পরীকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে।


– একদিন শুভ্র ঘুমিয়ে আছে সোফায় আর পরী বেডে। হঠাৎ পরী চোখ মেলে দেখে কেউ তার সামনে দাড়িয়ে আছে।

এমন সময় একটানে কেউ ওকে নিয়ে কোথায় যেন চলে যায়। পরী শুধু একবার চোখ খুলে দেখে ও ওদের বাসার বাহিরে দাড়িয়ে আছে। তারপর আবার চোখ জুড়ে ঘুম চলে আসে। তারপর আবার চোখ মেলে দেখে একটা ছোট্ট কালভাটের সমানে বসে আছে ও।

আবার চোখ বন্ধ হয়ে যায়। তারপর আবার চোখ খুলে দেখে আঠাল মাটির দেশে দাড়িয়ে আছে। যেখানে যতদুর চোখ যায় তত দুর লাল আঠাল মাটির চুলো শুধু। ওকে যেন কেউ কোথাও বার বার নিয়ে যাচ্ছে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়।



– একটা খোলা মাঠে এনে পরী কে নামিয়ে দিল। এবার পরীর হুশ ফিরে আসল। সামনে দেখে সাদা জুব্বা পরা একটা বৃদ্ধ দাড়িয়ে আছে। যার হাতে তসবিহ্ ছিল।



– এবার আমি তাকে দেখে সাহস পেয়ে মুখ খুললাম। আপনিতো বৃদ্ধ নামাজি মানুষ। আপনাকে দেখেতো তাই মনে হচ্ছে।

আমার স্বামী সন্তান আছে তাহলে কেন আমার সাথে এধরনের আচরন করছেন! আমাকে আমার বাসায় দিয়ে আসেন। আমার স্বামীর কাছে যাব আমি।



– বৃদ্ধ এবার বলল,,,,, যেখানেই নিয়ে যাচ্ছি সেখানেই ওরা ধরে ফেলছে।
মা……..! তোমাকে স্বাধে তোমার রুম থেকে নিয়ে আসিনি পিছন দিকে একবার ফিরে তাকাও।


– আমি পিছন দিকে তাকিয়ে দেখি এত্ত ভয়ঙ্কর চেহারার কিছু দাড়িয়ে আছে যাকে দেখে আমি কেঁপে উঠি ভয়ে। বিকট চেহারার কেউ দাড়িয়ে ছিল যা ভাষায় প্রকাশ সম্ভব না।

কয়েক সেকেন্ডের মধ্য আমাকে বিছানায় এনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল। আমার আর কিছু মনে নেই।


– শুভ্র একটা শব্দে জেগে উঠে দেখে পরী এলো মেল হয়ে পড়ে আছে। শুভ্র জলদি পরীর কাছে গিয়ে দেখে ওর দাঁতের সাথে দাঁত লেগে গেছে। শুভ্র চোখ মুখে পানি ছিটিয় দেয় কিন্তু সেন্স ফিরছেনা। শুভ্র এবার প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়। প্যারানরমাল সম্পর্কে ওর তেমন ধারনা নাই।


– শুভ্র নিতাইকে কল দিল। কারন এই অবস্থায় পরীকে রেখে যাওয়া ঠিক হবে না।


– নিতাই ঘুম থেকে উঠে বলল এত্ত রাতে কেউ কল দেয়! বলে স্কীনে দেখে শুভ্রের কল।

পরী! বলেই বিমলাকে টেনে তুলে বলল,,,,,,,,,, পরীর আবার সমস্যা হইছে মনে হয়। শুভ্র কল দিচ্ছে জলদি চল।


– দাদু হয়তো ঘুমাচ্ছে কিন্তু কি করব আমি এখন। কোন কিছু দিয়েই তো ঠিক হচ্ছেনা পরী। (শুভ্র)


– এমন সময় দরজায় নক শুনে শুভ্র জলদি গিয়ে দরজা খুলে দিতেই ২ জনে ভিতরে ঢুকে। শুভ্র লাইট জ্বালায়।


– বিমলা এসে পরী কে দেখে বলল,,,,, শুভ্র! পরী তো দাতি লাগছে। নিশ্চয় ওর সাথে বড় কিছু হয়েছে। বিমলা একটা কর্টন এনে পরীর কানের ভিতর দিতেই পরী ঝিকে উঠল। পরী উঠে শুধু ভুলভাল বকেই যাচ্ছে এটা সেটা।


– শুভ্র শক্ত করে পরীকে জড়িয়ে ধরতেই পরী চোখ খুলে বলল,,,,,, ঐ তুই আবার আমার কাছে আসছোস বলেই শুভ্রকে একটা ধাক্কা দেয় প্রচন্ড শক্তিতে। শুভ্র ছিটকে পড়ে যায়।


– শুভ্র! ওর মত ওকে থাকতে দে বলে বিমলা পরীর পাশে গিয়ে বলল,,,,,, পরী! কি হইছে তোর। শুভ্রর সাথে এরকম ব্যবহার কেন করলি।


– দিদুন শুভ্রকে আমার অসহ্য লাগে। ওকে আমার দেখতে মন চায়না। ও কেন আমার কাছে আসে?


– শুভ্র আর আসবে না কখনও তোর কাছে বলেই বিমলা চলে গেল।


– শুভ্র চুপ করে বসে আছে ট্রী টেবিলে আর পরীর দিকে চেয়ে আছে। শুভ্র তো সব বুঝতে পারছে কিন্তু কি করবে।


– শুভ্র আর দরজা বন্ধ করে দিলনা। কখন কি হতে কি হয়। শেষে রুমের ভিতর আর কেউ ঢুকতে পারবেনা।


– ভোরের দিকে অনেকটা ঠিক হয়ে যায় পরী। শুভ্র নামায পড়ছিল সেটা দেখে পরীও ওযু করে শুভ্রের পাশে এসে নামাযে দাড়িয়ে গেল। পরী কেবল সালাম ডান দিক থেকে বাম দিক ফিরিয়েছে অমনি দক্ষিন দিক থেকে শুধু একটা বিশাল মাথা ভাসতে ভাসতে ওর দিকে হাঁ করে ওকে খেতে আসে। আর এটা দেখে পরী জোরে একটা চিৎকার দিয়ে বেহুঁশ হয়ে জায়নামাযে পড়ে যায়।


– শুভ্র জলদি নামায কমপ্লিট করে ওকে তুলে বেডে সুয়ে দেয়। পরী! এই পরী কি হয়েছে তোমার! এরকম কেন করলে বলেই শুভ্র বার বার ডাকতে থাকে পরীকে। শুভ্র একদম ভেঙ্গে পড়ে। কি হচ্ছে এসব।


– অনেকক্ষন চেষ্টার পর পরীর ঙ্গান ফিরে আসে। কিন্তু প্রচন্ড দুর্বল হয়ে পড়ে। শুভ্র পরীকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,, তোমার কি হইছে সোনা! ওরকম করে কেন চিৎকার দিয়ে উঠলা?


– শুভ্র আমি মনে হয় বাঁচবোনা। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। ঐ যে দেখ দাড়িয়ে আছে বলেই শুভ্রর বুকে মুখ লুকালো পরী।


– শুভ্রর কষ্টে বুক মনে হয় ফেটে যাচ্ছে। কিছু হবেনা সোনা আমি আছিতো! ভাল চিন্তা ভাবনা কর। দুর্বল হয়ে পরোনা। আমি আছি জান্নাত আছে। আমাদের ছেড়ে কই তুমি যাবা বল!


– আমি জানিনা শুভ্র ওরা দেখতে খুব ভয়ঙ্কর। ওরা বাজে ভাবে আমাকে স্পর্শ করে। আমাকে নিয়ে যাবে বলেই পরী প্রচন্ড জোরে কান্না করতে লাগল।


– শুভ্র পরীকে একটা একটা করে কিস করছে আর বলছে ওরা কিছু করতে পারবেনা। ♥আল্লাহ্♥ অবশ্যই আমাদের কিছুনা কিছু পথ দেখাবে সোনা। প্রতিটা মানুষকে ধর্য্যর পরীক্ষা দিতে হয়। এটাও আমাদের সেরকম একটা সময়।


– পরীর চিৎকারে বাসার সবাই রুমে চলে আসে। পরী কান্না করেই যাচ্ছে আর শুভ্র ওকে থামানোর চেষ্ট করছে কিন্তু মেয়েটা থামছেই না।


– এবার শুভ্র পরীকে এত্ত জোরে একটা ধমক দেয় যে রুমের সবাই চমকে ওঠে। কত বার বলছি চুপ কর তবুও শুনছো না কেন? সবাই কে প্যারা দিতে খুব ভাল লাগে তাইনা?


– মা! আপনি এখানে কেন! জান্নাতের কাছে যান। ওকে কখনও একা রাখেন না। ওর ক্ষতি হয়ে যাবে। ওরা বাচ্চা খুব পছন্দ করে। আমি তো আমার মেয়ের কাছে যেতে পারিনা। আপনি দয়া করে ওর কাছে যান বলে আবার পরী কেঁদে উঠল।


– কথাটা শুনে এবার অনিল দৌড়ে ওর রুমে চলে গেল। জান্নাত কে বুকের সাথে জড়িয়ে নিল। বাসার সবাই হতাশায় ডুবে গেল। অনিতা কয়েকটা পুরোহিতের সাথে যোগাযোগ করল। কিন্তু কিছুই হল না। সমস্যা আরও প্রকট হয়ে যাচ্ছে।


– শুক্রবার ছুটির দিনে দুপুরে সবাই একসাথে খেতে বসেছে।
পরীও বসেছে এমন সময় জান্নাতের দিকে এক নজরে তীক্ষ্ণ ভাবে তাকিয়ে থাকে ও। সেটা বিমলার চোখ এড়ায় না। জান্নাত একটু দুরে অনিলের কোলে বসে ছিল আর অনিল ফোনে কথা বলছিল।


– বিমলা সোজা খাবার ছেড়ে উঠে গিয়ে জান্নাতের সোজাসুজি দাড়িয়ে গিয়ে বলল,,,,, পরী! কিছু বলবি?


– পরী রাগী চোখে বিমলাকে ধমক দিয়ে বলল,,,,, তুমি ওখানে কেন দাড়ালা?

– সখে দাড়াইছি। তোর কোন সমস্যা?

– বিমলার কথা শুনে সবাই পরীর দিকে তাকাল। ওর চোখ তখন হালকা লাল হয়ে আছে।

– পরী আর কিছু না বলে ভাত নাড়াচারা করতে লাগল।

– বউদি! তোমাকে কি আবার জ্বীনে ভর করেছে?(অর্পিতা)

– অনিতা চোখ গরম করে অর্পিতার দিকে তাকাল। অর্পিতা চুপ হয়ে গেল একদম।

– অর্পিতা তুমি বড্ড বেশি কথা বল। নিজের খাওয়ার দিকে মন দাও বলেই পরী উঠে চলে গেল না খেয়ে।


– শুভ্রর আর গলা দিয়ে খাবার নামলনা। পরী নামায, খাওয়া দাওয়া সব কিছু দিন দিন বাদ দিচ্ছে। প্রচুর দুর্বল হয়ে পড়ছে পরী।


– সেদিন রাতে শুভ্র ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘুমিয়ে ছিল। এমন সময় পরী এসে হাত দিয়ে শক্ত করে শুভ্রর গলা চিপে ধরে । শুভ্র চোখ মেলে পরীর হাত সরাতে চেষ্টা করে কিন্তু পারেনা। প্রচন্ড শক্তি নিয়ে পরী ওর গলা ধরে আছে। আজ শুভ্রকে যেন মেরেই ফেলবে। শুভ্রর দম আটকে কাঁশি দিতে শুরু করল।

এমন সময় একটা অদৃশ্য শক্তি এসে পরীকে সজোরে ছুড়ে ফেলে দেয়।


– শুভ্র তোমাদের ডাইনিং রুমের বাথরুমে একটা পাথর আছে বেসিনের উপর। ওটা একটা গ্লাসে পানির মধ্য ডুবিয়ে আন জলদি বলেই রুমের সব লাইট অফ হয়ে গেল। আমি একে সামলাচ্ছি।


– শুভ্র জানেনা ওটা কি ছিল তবুও নিচে দৌড়ে এসে বাথরুমে দেখে ঐ পাথরটি। ওটা একটা বড় মগে পানি নিয়ে তাতে পাথরটি ডুবিয়ে জলদি রুমে আসলো।


– রুমের ভিতর এসে দেখল পরী শুয়ে উপর দিকে তাকিয়ে আছে। বাহিরের আবছা আলোতে ওর চোখ গুলো লাল দেখাচ্ছে।


– শুভ্র ওকে ধর এবার। তোমার বিবির সাথে ওরা শারিরীক সম্পর্ক করার চেষ্টা করছে।

শুভ্র গিয়ে পরীর ২ হাত শক্ত করে ধরে ৩৩ আয়াত পড়তে শুরু করল জোড়ে জোড়ে। আর কেউ একজন সুমধুর কন্ঠে পরীর কানে আযান দিচ্ছে।

পরী বার বার ঝিকে উঠছে। এক পর্যায় থেমে যায়। পরী নিস্তেজ হয়ে শুভ্রর বুকে ঢলে পড়ে। চোখ দিয়ে পানি পরে গেল পরীর কয়েক ফোটা।


– তোমার “”বিবি”” খুবই রিক্সে আছে তাই তুমি ভাল কোন রাকিকে ডাকো। আমার দ্বারা এতজন কে আটকানো সম্ভব না। তাছাড়া এখানে ঢুকতে আমার কষ্ট হচ্ছে।

একটু পর আবার আসবে ওরা। পানি গুলো দিয়ে জলদি ওকে গোসল করাও। অবশ্যই দোয়া পড়ে বাথরুমে ঢুকবা।


– শুভ্র অদৃশ্য অবয়কের কথা মত সব কাজ করে পরীকে বিছানায় শুয়ে দেয়। কিন্তু একটু পর আবার চিৎকার দিয়ে ওঠে পরী কিছুক্ষন পর।


– এত্ত রাতে পরীর কন্ঠ অনেক দুর পর্যন্ত যায়। ছটফট করছে পরী শুধু। আমার গা জ্বলে যাচ্ছে কেন। শুভ্র তুমি কি করেছো আমার সাথে জলদি বল। তাছাড়া এর ফল কিন্তু ভাল হবেনা।


– এবার শুভ্র প্রচন্ড ক্ষেপে গিয়ে হুংকার দিয়ে বলল,,,,,, আমি শুভ্র বেঁচে থাকতে তুই জ্বীনদের নিয়ে সংসার করবি! আর সেটা এই শুভ্র বসে বসে দেখব?
এমন অবস্থা করব জন্মের মত সব কিছু ছেড়ে দিয়ে সুর সুর করে আমার কাছে আসবি।

চলবে——

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here