অস্তিত্বের খোজে,পর্বঃ ৩৯

0
2012

অস্তিত্বের খোজে,পর্বঃ ৩৯
নাফিসা মুনতাহা পরী



– শুভ্র রাতে আর ঘুমাল না। নামায শেষ করে কোরআন তেলায়াত এবং তসবিহ্ পাঠ করতেই ফযরের আযান দিয়ে দেয়। ফযরের সালাত আদায় করে পরীর পাশে এসে দেখে পরী বেহুশের মত পরে পরে ঘুমাচ্ছে। শুভ্র কয়েকবার ডাকল কিন্তু উঠল না। হয়ত নেশার রেশ কাটেনি এখনো।


– পরীর গায়ে হাত দিয়েই দেখল জ্বরে গা পুরে যাচ্ছে ওর। শুভ্র জলদি মেডিসিন বক্স খুলে দেখে জরুরি মেডিসিন টাই নেই।
শুভ্র আর দেরি না করে বাসা থেকে বের হইল মেডিসিন আনতে।
১০ মিনিটের রাস্তা তাই হেঁটেই গেল দোকানে।


– আরে শুভ্রদা আপনি এত্ত ভোরে! কি মনে করে……
ভাল আছেন?

– জ্বী,,,,,, আপনি ভাল আছেন বলে মেডিসিন নিয়ে বাসায় দ্রুত ফিরে কিচেনে গিয়ে স্যুপ বানাইতে লাগল।


– শুভ্র! সাত সকালে রান্না ঘরে কি করিস?(বিমলা)

– একটু স্যুপ বানাচ্ছি দিদুন। কিছু বলবে?

– তুই তো স্যুপ এমনি এমনি খাসনা। পরীর জন্য বানাচ্ছিস?

– হুম,,,,, বলে কাজে মনোযোগ দিল শুভ্র।

– শুভ্র তুই তো বউ পাগল ছেলে না তাহলে এগুলো বানাতে রান্নাঘর অবদি আসলি! কাল ওতগুলো অন্যায় করার পরও।

– দিদুন ইয়াং বয়সে দাদু কি তোমার একটুও যত্ন নেয়নি?

– এবার বিমলা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল শুভ্রের কথায়। কি বলবে আর ভেবে পাচ্ছেনা।

– দেখছো! নিজেরা সব করছো আর আমরা করলেই যতসব দোষ তাই না?
এত্ত কথা না বলে আমার বউটার যত্ন একটু আমাকেই নিতে দাওনা!।ও অসুস্থ বলেই শুভ্র বাটিতে স্যুপ ঢেলে নিয়ে চলে গেল।

– তোরা সবাই কাপুরুষ। কাল ৩ জনকে কেউ কিছু বলেনি। এত্তবড় একটা অপরাধ করল তবুও কোন শাসন নাই! সংসারে নিয়ম কানুন বলতে কিছুই নাই দেখছি। কথা গুলো অনেক চিল্লায় বলল বিমলা।



– রুমে এসে পরীকে কয়েকবার ডাকতেই চোখ খুলল পরী। অসহ্য ব্যাথায় মেয়েটা কথা বলতে অবদি পারছেনা।

– পরী ওঠো,,,,,, যাও জলদি ফ্রেস হয়ে আসো ।

– পরী শুভ্রর কোন কথা না শুনে চুপ করে ওভাবেই বসে রইল।

– পরী……….. আমি তোমাকে কিছু করতে বলেছি!কথা কি শুনবা না?

– এবার পরী সুর সুর করে ওয়াসরুমে উঠে গিয়ে ফ্রেস হয়ে আসে। মুখে পানি দিতে পারছিল না।
জ্বিভ আর হাতে মারাত্মক ফোসকা উঠে গেছে। পুরো চোখমুখ ফুলে লাল হলে আছে।


– শুভ্র ওকে স্যুপটা এগিয়ে দিয়ে বলল এটা খেয়ে নাও।

– একটু মুখে দিতেই জিহ্বা জ্বলে গেল তাই আর খেতে পারল না। এবার পরীর চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল রাতের ঘটনা মনে হতেই।

– শুভ্র সেটা দেখে আলমারী থেকে ২ টা বক্স বের করল। ২ টাই চকলেটের বক্স ছিল। কাল পরী আর অর্পিতার জন্য এনেছিল। কিন্তু এত কিছু হয়ে যাওয়ার জন্য দিতে পারেনি। একটা চকলেটের বক্স পরীর হাতে দিয়ে বলল এটা খাও। কষ্ট হবেনা আর।



– পরী শুভ্রকে শুধু ভালই বাসেনা অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও করে। এমনি মনমানিল্য হয় কিন্তু কথা অমান্য করে না কখনো শুভ্রর। তাই চকলেট বের করে মুখে পুরে দিয়ে খেতে লাগল।


– শুভ্র মেডিসিন গুলো নিয়ে ওর পাশেই বসে আছে খাওয়া শেষ হওয়ার অপেক্ষায়। খাওয়া শেষ হলে মেডিসিন খাওয়াই দিল।

পরী! আর একটা চকলেটের যে বক্স আছে ওটা অর্পিতাকে তুমি নিজে দিও। ওর ভাল লাগবে তুমি দিলে।

– এবার পরী ফিকরে কাঁদতে লাগল।

– পরী! কান্না বন্ধ করো। কান্না করলে তোমায় ভাল দেখায় না।

– কিন্তু কে কার কথা শোনে বেচারী কান্না করেই চলছে।

– এই কান্না থামাবি! বলেই জোড়ে একটা ধমক দিল শুভ্র।
চোখ মুছে ফেল! আর এক ফোটা যদি চোখ দিয়ে পানি পরে তাহলে কিন্তু…………..

– শুভ্রকে আর কিছু বলতে হয়নি পরী একদম চুপ। চোখে পানি এলেও বার বার চোখ মেলাচ্ছে আর বন্ধ করছে। যাতে চোখ দিয়ে পানি না পরে।

– শুভ্র এটা দেখে একটা মুচকি হাসি দিয়ে পরীকে জড়িয়ে ধরে কয়েকটা কিস♥♥♥♥করল।
I Love You dear………
আমি ভালবাসি কিন্তু প্রকাশ করি কম বোঝই তো!


– পরীও রাগে শুভ্রর কাছ থেকে নিজেকে বার বার ছুটাতে চেয়েও ব্যার্থ হচ্ছিল।

– শুভ্র এবার ওকে চটাস্ চটাস্ করে আরো জোড়ে জোড়ে কিস করতে লাগল।

– পরীও নখ দিয়ে শুভ্রের পিঠ জোড়ে খামচে ধরে আর একদম বুকে কামড় বসিয়ে দেয় ওর।

– শুভ্র তবুও ওর ইচ্ছা মত আদর করেই গেল কোন দিকে না খেয়াল করে। যতক্ষন না ওর নিজের তৃপ্তি মিটে। একের পর এক কিস করতে লাগল।

– পরী এবার ফুফিয়ে কাঁদতে লাগল।

– শুভ্র পরীর কান্না দেখে ছেড়ে দিল। আর কিছু না বলে উঠে গিয়ে সোফায় সুয়ে পরে। আর একটা কথাও বলেনি পরীর সাথে।

– পরীও কিছু না বলে সুয়ে পড়ল। ওর প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে।



– সাড়ে আটটায় এর্লামে শুভ্রর ঘুম ভেঙ্গে যায়। শুভ্র গোসল করে রেডী হয়ে জান্নাত কে কোলে নিয়ে ওর মার কাছে গেল।


– অনিতা নাস্তা বানাচ্ছিল কিচেনে। আর অর্পিতা পাশে দাড়িয়ে আছে। কালকের ঘটনার পর অর্পিতা একদম সাধু হয়ে গেছে। মায়ের পিছে ঘুর ঘুর করছে শুধু।

– মা! জান্নাতকে একটু রাখ তো তোমার কাছে!

পরীর গায়ে জ্বর আসছে। ওর কাছে একটু যেও।আমি ১২ টার দিকেই চলে আসবো।

– দাদা! বউদির আসলে কোন দোষ ছিল না। আমরাই…… বলা শেষ হওয়ার আগেই শুভ্র ঠাশশশ্ করে একটা চড় মারে অর্পিতাকে।


– আনন্দ করা ভাল অর্পিতা,,,,,,, কিন্তু অতিরিক্ত করা মানে এই নয় যে লিমিট ক্রস করে ফেলবি। সব কিছুর একটা সীমা আছে বলেই জান্নাতকে ওর মায়ের কাছে দিয়ে কোন নাস্তা না করেই শুভ্র অফিসে চলে যায়।


– অর্পিতা তো সেই কান্না। অনিতা তো থামাতেই পারছে না অর্পিতাকে।


– অর্পিতার কান্না শুনে বিমলা আর পলা এসে বলল কি হইছে,,,,,, ও কাঁদছে কেন!


– দাদা আমার গায়ে কোন দিনও হাত তোলেনি। আর আজ আমায় এভাবে মারল বলেই ফিকরে কান্না করে বাসা মাথায় তুলল অর্পিতা।

– অনিতার ওদিকে খেয়াল নাই। শুভ্র প্রতিদিন নাস্তা করে যায় আর আজকে না করেই চলে গেল! অনিতার কি আর খাবার মুখে রুচবে?


– ডাইনিং রুমে অর্পিতা জোরে জোরে কান্না করছে। শুভ্র কোন দিনও একটা ধমক অবদি দেয়নি আর আজ গায়ে হাত তুলল! এটা অর্পিতা মেনেই নিতে পারছেনা।

– ওর কান্না শুনে সবাই ওর কাছে এসে বলল কি হইছে ও কাঁদছে কেন।

– এবার বিমলা খেঁকিয়ে উঠে বলল,,,,,, শুভ্র হয়ে ১ টা মারছে আমি হলে গায়ের ছাল তুলে ফেলতাম সব কটার। আর ঐ ২জন বাঁকি থাকল কেন?

ওদেরও শায়েস্তা করা দরকার। মেয়ে মানুষ মেয়ে মানুষের মত থাকবা নাতে কাল নেশা করে বাসায় ঢুকছে। মানসম্মান বলে এদের কিছু আছে!

উমমমম,,,,,,, মনে ফুর্তি জাগছে একেকটার!


– নিদ্রা তো চুপ করে কথা গুলো শুনছে। কাল এত্ত রাত অবদি বাহিরে থাকা একদমই ঠিক হয়নি। আসলেই তো ভদ্র ঘরের মেয়েরা এত্ত রাত অবদি নিশ্চয় বাহিরে থাকবে না!


– সকালে সবাইকে নাস্তা দিয়ে অনিতা পরীর রুমে গিয়ে দেখে ও ঘুমাচ্ছে। হঠাৎ পরীর হাতের দিকে অনিতার নজর যায়। হাত দেখে শিউরে ওঠে অনিতা। আর বুঝার বাঁকি রইল না শুভ্র অর্পিতাকে কেন ওভাবে মারল। অনিতার চোখে পানি এসে গেল।


– জলদি অনিতা পরীর কাছে গিয়ে হাতে জেল লাগিয়ে দিয়ে গায়ে হাত দিয়ে দেখে জ্বরে শরীর পুরে যাচ্ছে। শুভ্র কেমন হুম ওর মনে কি দয়ামায়া বলতে কিছু নাই! কাউকে কেউ এভাবে শাস্তি দেয়?


– অনিতার আর সকালে খাওয়া হল না। সন্তান না খেলে ও কেমনে খাবে। অনিল, কৌশিক, নিতাই এরা যখন নাস্তা করে বাসা থেকে বের হয়ে গেল তখন অনিতা,,,,,,,, নিদ্রা আর অর্পিতাকে ডাইনিং রুমে বসে ইচ্ছা মত ঝাড়ল। বিশেষ করে অর্পিতাকে।


– শুভ্রর একটা থাপ্পড়ে ভ্যাড়ার মত ভ্যাঁ ভ্যাঁ করতে লাগছিস। পরী যে শাস্তি পাইছে এটার তুলনায় কিছু না। আমার তো মনে হচ্ছে তোমাদের ২ জনকেই মাটিতে পুঁতে ফেলি।


– নিদ্রা কোন কথা না বলে দৌড়ে পরীর রুমে গিয়ে দেখল সত্যিই ওর হাত পুরে গেছে অনেকখানি। নিদ্রার চোখের পানি আর আটকাতে পারল না। কাঁদতে কাঁদতে শুভ্রকে কল দিল।


– হ্যাঁ বউদি বল!


– আমাদের ভুলে শাস্তি তুমি পরীকে কেন দিছো!

– বউদি আমার সামনে অনেকে আছে। তাছাড়া একটু পর আমার একটা মিটিং আছে। বাসায় গিয়ে কথা বলি!


– নিদ্রা কল কেটে দিয়ে পরী পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। সবাই রুমে চলে আসে। নিদ্রা পরীকে জলপট্টি দিচ্ছিল আর চোখের জল ফেলছিল।


– কি অর্পিতা বাসা মাথায় তুলে কাঁদ……..।
দাদা মেরেছে তো!
আর পরী! এত্ত শাস্তি পেয়েও চুপ করে সুয়ে আছে।
এ অভিযোগ কাকে করবে । এর তো কেউ নেই যে তাকে অভিযোগ করবে। (বিমলা)


– অনেকক্ষন পর পরী চোখ মেলে তাকিয়ে সবাই কে দেখে বেশ লজ্জা পেয়ে যায়। কারন তাদের স্বামী- স্ত্রীর ব্যাপার গুলো নিজের রুমের ভিতর সীমাবদ্ধ থাকাটাই শুভ্র এবং পরী ২জনেই পছন্দ করে। কিন্তু আজ সব জেনে গেল। পরী হাতটা চট করে লুকিয়ে ফেলে।


– পরী কেন কথা বলছেনা। এরা কেউ জানেনা। কারন ও কথাই বলতে পারছেনা জ্বিভ পুরে যাওয়ার কারনে। শেষে অর্পিতাকে ইশারা করে চকলেটের বক্স দেখিয়ে দিল।


– অর্পিতা বক্সটা হাতে নিয়ে বুঝল শুভ্র এটা হয়ত গতকাল ওর জন্য নিয়ে আসছিল। অর্পিতা রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে দিয়ে অনেকক্ষন কাঁদল। আজ ওর জন্য দাদা – বউদি সবাই কষ্ট পাইল। নিদ্রাকে যদি ও কথাটা না বলত! পরী কে বাহিরে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাহলে এমনটা কখনও হত না।



– মেডিসিন গুলো কাজে লেগে গেছে। পরী অনেকটা সুস্থ। জিহ্বা জ্বলছেনা। কথাও বলতে পারছে। জান্নাতকে কোলে নিয়ে ফিডিং করাতে লাগল।


– ১২ টার পর শুভ্র বাসায় আসল। শুভ্র কেবল ফ্রেস হয়ে বেডে বসছে এমন সময় নিদ্রা সোজা রুমে আসল। সাথে পরীকেও নিয়ে আসলো।


– হুম বল বউদি কি বলবা! তখন ব্যাস্ত ছিলাম। এখন ফ্রী বলতে পারো।

– শুভ্র! পরীর জায়গায় আমি যদি তোমার স্ত্রী হইতাম ২ দিনও তোমার সংসার করতাম না।

– নাউযুবিল্লাহ্,,,,,,, বউদি কি বলো সব!

– আমরা দোষ করছি আর শাস্তি ওকে পেতে হবে!

– শুভ্র এবার পরীর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,, পরী! তুমি কি আমার সাথে সংসার করতে চাওনা?
না তুমিও বউদির কথার মত আমাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যাবে!

————————————?

– পরীর কোন জবাব না পেয়ে শুভ্র নিদ্রাকে বলল,,,,,, বউদি আমি যে ওকে খুন করিনি এটা ওর ভাগ্য। ও যদি ইচ্ছা করে খেত তাহলে সেটাও করে ফেলতাম।

– তুমি এতটা নিষ্টুর? এই তোমার ভালবাসা! পরীর জন্য তোমাকে কাঁদতে অবদি দেখছি শুভ্র! আর আজ এই কথা,,,,,,,, সামান্য ড্রিংক করাতে।

– বউদি তুমি হয়ত জানোনা এমন একজন সাহাবী ইসলামে ছিল মদ খাওয়ার জন্য নিজের সন্তান কেও হত্যা করেছে। আমিতো তার মত না তাই ওতটুকুই পরীকে শাস্তি দিছি।
ইসলামে সম্পূর্ন হারাম এটা।


– শুভ্র! পরীর মা-বাবা নাই দেখে তুমি ওকে,,,,,,,,,, তাই বলে ইচ্ছা মত অত্যাচার করবে!
ওর কোথাও যাওয়ার জায়গা নাই তুমি ছাড়া আর এটার সুযোগ তুমি নিচ্ছ শুভ্র।
এর ব্যবস্থাও আমি নিচ্ছি বলেই পরীর হাত ধরে বের হয়ে আসল রুম থেকে নিদ্রা।


– নিদ্রার কথাটা শুভ্রের কলিজা ভেদ করল। প্রচন্ড খারাপ লাগল শুভ্রের। পরী শুভ্রের জন্য কি সেটা একমাত্র শুভ্রই ভাল জানে।

কিন্তু পুরো রাত না ঘুমানোর জন্য শুভ্র বেডে শুয়ে পড়তেই ঘুম চলে আসল।
“”

– দুপুর ২ টার সময় অনিতার ডাকে শুভ্রের ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ মেলে শুভ্র ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,, মা! আর একটু ঘুমাই না?


– না ওঠ খাবার সময় হয়ে গেছে। সেই কাল সন্ধায় খাইছিস এখন অবদি কিছু খাসনি। চল উঠে পর।

– তুমিও তো খাওনি মা! আচ্ছা ঠিক আছে আমি নামায পড়েই যাচ্ছি।


– এরা মা- ছেলে একে অপরের সমস্যা চট করে ধরে ফেলে। অনিতা আর কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেল।

– শুভ্র নামায পড়ে ডাইনিং রুমে বসে দেখল পরী বসে আছে। আর পাশে নিদ্রাও ।

২ জনেই শুভ্রের দিকে তাকাচ্ছেনা অবদি। শুভ্রও কিছু না বলে ওর মাকে ডাকল।


– অনিতাকে কাছে নিয়ে এক সাথে শুভ্র খেতে বসল। কিন্তু সমস্যা হইল পরীর। ও খেতে পারছেনা। ঝালে জিহ্বা প্রচন্ড জ্বলতে লাগল। অসহায় ভাবে শুভ্রর দিকে তাকালো।


– শেষে শুভ্রর জন্য অঝাল রান্না করা আলাদা তরকারী টা প্লেটে নিয়ে খেতে লাগল। আহ্ শান্তি আর ঝাল লাগছেনা।


– সবাই তো অবাক। এই ঝালখোর মেয়েটা কিনা অঝাল তরকারি অনায়াসে খেয়ে ফেলছে?


– অনিতা ভাবল শুভ্রকে হয়ত শাস্তি দেওয়ার জন্য পরী ইচ্ছা করে এমন কাজ করছে।

পরী! আমিতো এতটুকুই রান্না করেছি। তুমিতো সব নিলা আমার শুভ্র কি খাবে!


– মা! ও খাক,,,,,,সমস্যা নাই ওকে পুরোটাই দাও।

পলা আন্টি দুধ গরম করে নিয়ে আসেন তো। আমি দুধ দিয়েই আজ না হয় ভাত খাব।


– এখন দুধ দিয়ে ভাত খাবি? (অনিতা)

– হুম,,,,, সমস্যা নাই মা। আমি সবসময় খেতে পারি।

– নিদ্রা মনে মনে শুভ্রকে হাজারটা বকা দিয়ে বলল,,,, বেশ হইছে।

– বউদি! তুমি মনে হয় আমাকে বকা দিচ্ছো?

– নিদ্রা বিষম খেয়ে গেল। ও কেমনে জানলো!

– পলা দুধ গরম করে আনলে শুভ্র কিছু মিষ্টি আর দুধ দিয়ে ভাত খেয়ে উঠে গেল।



– শুভ্র রুমে এসে জান্নাত কে নিয়ে আবার ঘুমিয়ে পরে।

– এর মধ্য পরীর সাথে আর কোন কথা হয়নি শুভ্রের।

শুভ্র সন্ধ্যার পর জান্নাত কে নিয়ে বাহিরে ঘুরতে যায়।


– পরী রুমে বসে ফেসবুক এক্টিভ করে চালাচ্ছিল। শুভ্র এমন সময় রুমে আসে ওর মেয়েকে নিয়ে। জান্নাতকে বেডে রেখে ফ্রেস হইতে যায়।

জান্নাত ওর মাকে দেখে খুব খুশি হয়ে দৌড়ে মায়ে কাছে যায়। পরী ওর মেয়েকে কোলে তুলে নিল।
মা! আজ কই গিয়েছিলা বলেই আদর করতে লাগল।
জান্নাত ওর মাকে ছোট ছোট কিস দিয়ে আদর করতে লাগল।
বাব্বা আমার মেয়েটা তো কিসি দিতে শিখে গেছে।


– শুভ্র ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে ল্যাপটপ নিয়ে সোফায় বসে কাজ করতে লাগল।




– নিদ্রা অনিলের কাছে গিয়ে শুভ্রের বিরুদ্ধে নালিশ করল। বাবা! আপনি ওকে কিছু বলেন। গতরাতে পরীকে কি করেছে যানেন,,,,, বলে সব কথা খুলে বলল নিদ্রা।
শুভ্র পরীকে প্রচুর টর্চার করে বাবা। ওখানে অর্পিতাও ছিল।


– অনিল এই প্রথম শুভ্রর উপর প্রচুর রেগে গেল। ও পাইছেটা কী? সবসময় এভাবে ওর সাথে ব্যবহার করবে! দারাও ওর কি হালটায় না করি।
অনিল উঠে সোজা শুভ্রের রুমের দিকে গেল।


– বাবা যে রেগে গেছে আজ দাদাকে আস্ত রাখবেনা। পরীকে কল দিল অর্পিতা।

– পরীর ফোনে কল আসতেই পরী দেখল অর্পিতা কল দিয়েছে।
অর্পিতা! এখন কল দিছে কেন?
রিসিভ করতেই…….


– বউদি! বড় বউদি বাবাকে সব বলে দিছে। বাবা তো সব শুনে প্রচন্ড রেগে গেছে। দাদাকে আর আস্ত রাখবেনা। প্লিজ কিছু করো।
তোমার রাগটা পরে না হয় ঝেড় দাদার উপর এখন কিছু একটা কর বউদি।
বাবা রেগে গেলে সব শেষ করে দেয়।


– শুভ্রর দিকে তাকিয়ে দেখি শুভ্র উঠে গিয়ে আলমারি থেকে কিছু ফাইল বের করছিল। আমি জান্নাতকে রেখে চট করে উঠে গিয়ে দরজা টা খুলে দিয়ে শুভ্রকে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরলাম।
বাবা যেন সরাসরি দেখতে পায় আমাদের তাই দরজাটা একটু খুলে রাখলাম।


– কি ব্যাপার পরী! হঠাৎ জড়িয়ে ধরলা বলেই আমার কাছ থেকে শুভ্র নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ফিরে তাকাল আমার দিকে।


– আমাকে আর পায় কে শুভ্রকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কয়েকটা কিস করতে লাগলাম।


– শুভ্রও পরীর কোমর ধরে একটু উপরে উঠিয়ে ওর ঠোটের কাছে পরীর ঠোট এনে ধীরে ধীরে বলল কি ব্যাপার! এত্ত রোমান্টিকতা আসল কোথা থেকে আমার বউয়ের হুম?
এবার শুভ্র নিজের ঠোট দিয়ে পরীর ২ ঠোট আলিঙ্গল করল আষ্টে পৃষ্টে।


– অনিল শুভ্রর রুমের সামনে এসে থমকে দাড়াল। আর শুভ্রও ওর বাবাকে দেখে ফেলে পরীর ঠোট ছেড়ে দেয়।

পরী বাবা! বলে শুভ্র পরীকে ছাড়াতে গিয়ে পরী আরও জোড়ে শুভ্রকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়। পরীতো এটাই চায় বাবা ওদের এভাবে দেখুক।

চলবে——

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here