অস্তিত্বের খোজে,পর্বঃ ৪২

0
2289

অস্তিত্বের খোজে,পর্বঃ ৪২
নাফিসা মুনতাহা পরী


– ফোনের অপর পাশে আর কেউ নয় সেটা ছিল অর্নব মুখার্জী। যে কিনা মাধুরীর বাবা। যাকে শুভ্র এতদিন স্যার বলেই ডেকে আসছে।


– অর্নব অনেকক্ষন চুপ করে থেকে তার ওয়াইফ আশাকে জোড়ে ডাক দেয়। আশা কাছে আসলে অর্নব বলল,,,,,, আশা শুভ্র কল দিয়েছে কথা বল।


– কেন নানুভাই আপনি আমার সাথে কথা বলবেন না?

– অর্নব থমকে যায় নানু ডাক শুনে। কারন কখনও শুভ্র তাকে এই নামে ডাকেনি। শুভ্র তো জানেনা সে তার নানু হয়।
অনিতা আর অনিলের সাথে মাঝে মাঝে কথা বলে শুভ্রর খোজ নেয় কিন্তু শুভ্রের নাম্বার থাকা সত্বেও কল দিতে পারেনি কোনদিন অর্নব।


– কেমন আছো শুভ্র! শুনলাম তোমার নাকি মেয়ে হয়েছে তাকে দেখাবা না?( অর্নব)


– এবার শুভ্র কল কেটে দিয়ে ভিডিও কল দিল অর্নবকে।


– অর্নব চোখের জল মুছে কল রিসিভ করে। আশা আর অর্নব অনেক দিন পর শুভ্রকে দেখছে। শুভ্র তুমিতো শুখে গেছ অনেক। তুমি নিশ্চয় খাবার ঠিকমত খাওনা!


– না ঠিক আছি আমি বলে শুভ্র ওদের দিকে চেয়ে থাকে অনেকক্ষন। তারা যে কান্না করছে এটা শুভ্র বুঝতে পারে। স্কীনের উপর শুভ্র হাত দেয়।


– স্কীনের উপর শুভ্রর হাত দেখে চোখ বন্ধ করে ফেলে আশা। শুভ্রকে অনুভব করার চেষ্টা করে।
শুভ্র তোমার মেয়েকে দেখাও!(আশা)


– জ্বী অবশ্যই বলে রুমে এসে লাইট জ্বালিয়ে শুভ্র জান্নাত কে কোলে নিয়ে সোফায় বসে ওকে দেখাল।


– আশা তো জান্নাতকে দেখে চমকে ওঠে। এটা কিভাবে সম্ভব।
শুভ্রর মেয়ে ঠিক ওর মেয়ের মত অনেকটা দেখতে। এটা তো আমাদের মাধুরীর মত দেখতে বলেই কেঁদে উঠল আশা।

– অর্নব একটু দুরে সরে গিয়ে চোখের পানি ফেলছে হয়ত শুভ্রর সামনে কাঁদতে লজ্জা পাচ্ছে। কিন্তু আশা জান্নাতকে দেখছে আর কাঁদছে। বার বার চুমা খাচ্ছে ফোনে। শুভ্রও কথা বলতে পারছেনা।

– শুভ্র এবার ঘুমন্ত পরীর কাছে নিয়ে গিয়ে বলল নানু আপি এটা আমার ওয়াইফ।


– আশা অনেকক্ষন পরীকে দেখল। অনেক সুন্দর হইছে তোমার ওয়াইফ। কি নাম ওর?


– ওর নাম পরী। নানুকে ডাকেন তো কিছু কথা ছিল।

– আশা অর্নব কে ইশারা করল কাছে আসতে।অর্নব কাছে আসলে শুভ্র বলল আমাদের অর্পিতার বিয়ে নানু আপনাদের অবশ্যই আসতে হবে কিন্তু…….


– তোমার বাবা মা বলেছে শুভ্র। কিন্তু আমরা শেষ যেদিন বাংলাদেশে গিয়েছি। সেদিন তুমি আমাদের সাথে ছিলে। আমি একা যেতে পারবনা বাবা তুমি এসে নিয়ে যেও আমায় কোন একদিন সেই অপেক্ষায় রইলাম।

– তার মানে আপনারা আসবেন না?

– আমি শূন্য হাতে ওখান থেকে ফিরে এসেছি তাই যেতে মন কাঁদে। তুমি সময় করে আমাকে নিয়ে যেও।


– নানু কথা বলে আমার নাম্বারটা ডিলেট করে দিয়েন। মিতালী যেন আমার নাম্বারটা না পায়। তাহলে ও আমার সংসার শেষ করে দিবে।

– জানি শুভ্র। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো তোমার নাম্বার ও পাবেনা।
তুমি সময় করে এখানে এসো। ( আশা)


– জ্বী ইনশাল্লাহ্ অবশ্যই যাব। অনেক কথা হল তাদের মাঝে দেন শুভ্র কলটা কেটে দিয়ে চুপ করে বসে রইল। ওর কিছুই ভাল লাগছেনা। জান্নাত কে রেখে আবার বেলকুনিতে গিয়ে একের পর এক সিগারেট টানতে লাগল। আর চোখ দিয়ে পানি ঝড়তে লাগল।



– বিয়ের দিন এগিয়ে আসছে। শুভ্র অর্পিতাকে কথা দিয়েছিল ওর বিয়েতে একটা কনসাট করবে। তাই প্রায় ২ বছর পর সব ফ্রেন্ডদের এক করল এবং সবাই মিলে শুভ্রদের বাসায় রিয়ারসেল এর ব্যবস্থা করে ফেলে। শুভ্র অফিস থেকে এসে ওদের সাথে জয়েন্ট করে।


– অনেক দিন পর নিশু শুভ্রদের বাসায় আসে। এসেই পরীর কাছে যায়।

– পরী! কেমন আছো?

– পরী পিছন দিকে তাকিয়ে নিশুকে দেখে চমকে উঠে বলে ভাইয়া আপনি?

– হুমহ্ তুমিতো আর খোঁজ নাওনা তাই নিজেই চলে আসলাম বলে বেডে বসে পড়ল নিশু।

– আঙ্কেল – আন্টি, নুরজাহান খালাম্মা কেমন আছে। আর ইশিতা আপু?

– ওরে বাব্বা এত্ত গুলো প্রশ্ন এক সাথে? কোনটা রেখে কোনটার জবাব দিব বলো!

– একটা একটা করে দেন। আপনি বসেন আমি আপনার জন্য নাস্তা নিয়ে আসি।

– এই ওয়েট ওয়েট আমি নিশ্চয় নাস্তা খেতে আসিনি এখানে! তোমার সাথে গল্প করতে আসছি। তোমার মেয়ে কই?

– দোলনায় ঘুমিয়ে আছে।

– আচ্ছা যাও নাস্তা নিয়ে এসো কিন্তু তুমি নিজের হাতে বানিয়ে নিয়ে আসবা।

– ওকে বলে পরী চলে গেল।

– নিশু জান্নাতকে কোলে নিতেই ওর ঘুম ভেঙ্গে যায়। আজব তো কান্না অবদি করছেনা। নিশুর দিকে তাকিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছে। নিশু জান্নাতের কপালে চুমু খেয়ে ওর মাকে কল দিল।


– রেশমা কল রিসিভ করতেই একটা বাচ্চাকে দেখে অবাক হল। নিশু এটা কে?

– মা! আমাদের পরীর মেয়ে জান্নাত। খুব সুন্দর না?

– মাশাআল্লাহ,,,,,, অনেক সুন্দর বলে নিশুর বাবাকে দেখাল আর নুরজাহানকে ডেকেও দেখাল।

– নুরজাহান তো কেঁদেই ফেলল। পরীর সাথে মাঝে মাঝে কথা হয় কিন্তু দেখা হয়নি তার জান্নাতকে আর। একেই নুরজাহান কষ্ট করে ৬ মাস অবদি দেখাশুনা করেছে।

– এই তোমরা কান্না কাটি থামাও তোহ্ আমি রাখছি বলেই নিশু কল কেটে দেয়।

– পরী নাস্তা এনে নিশুর পাশে দাড়িয়ে বলল ও জেগে উঠেছে?

– হুম অনেক আগে উঠে গেছে। পরী! তোমার মেয়েকে দাও আমি নিয়ে যাই। আর তাছাড়াতো তোমার মেয়েকে আমায় দিতে চাইছিলা না?

– আমি চুপ করে ওনার কথাগুলো শুনে বললাম,,,,,, ভাইয়া শুভ্র আমাকে শেষ করে দিবে এই কথাটা আর একবার শুনলে। তাই আর বলেন না।

– শুভ্রর সাথে তোমার সব ঠিক হয়ে গেছে পরী?

– কোন দিন আবার কি হল ভাইয়া যে ঠিক হবে! আমরা তো ♥ আল্লাহ্♥ র রহমতে অনেক ভাল আছি।

– তুমি আগের থেকে আরও কিউট হয়ে গেছ পরী বলেই ইশিতাকে কল দিল নিশু।


– ইশিতা দেখ! আমাদের পরীর জান্নাত বলে অনেক কথা বলল। পরীও ইশিতার সাথে কিছুক্ষন কথা বলল।

– এর মধ্য নিশু সব নাস্তা খেয়ে বলল দারুন নাস্তা বানাতে পারো তুমি।
পরী! এবার তো প্রতিদিন তোমার সাথে আমার দেখা হবে। আর শোন ভুলেও যেন আমাদের রিয়ারসেল রুমে যেওনা তাছাড়া শুভ্র তোমায় আস্ত রাখবে না।

– পরী শুধু মুচকি একটা হাসি দিল।

– ওকে তুমি থাকো আমি গেলাম বলে নিশু চলে গেল।


– আমি আর রুম থেকে বের হই! বাসায় মানুষজন আসতে শুরু করে দিছে বিভিন্ন ডেকোরেশনের কাজ গুলো করতে। খুব প্রয়োজন ছাড়া রুম থেকে একদম বের হইনা।

– জান্নাতের নখ গুলো বড় হয়ে গেছে আমি রুমে বসে ব্লেট দিয়ে নখ কেটে দিচ্ছিলাম। জান্নাত শুধু নড়ে যাচ্ছে।
মা! নড়ো না হাত কেটে যাবে।
এমন সময় নিদ্রা আপু রুমে ঢুকে সেদিকে তাকাতেই জান্নাত মাম বলে কান্না করে উঠল।

– আমি ওর দিকে তাকিয়ে দেখি ওর হাত দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। আমার বুকের ভিতর মোচর দিয়ে উঠল ওর হাত কাটা দেখে। আমি কি করে ফেললাম।


– নিদ্রা দৌড়ে এসে পরীকে বকতে লাগল। কি তুমি সাবধানে কাজ করবেনা। আর ব্লেট কেন ব্যাবহার করছো নেইল কাটার কি হইছে! তোমার হুস কবে হবে?

– পরীর চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়তে লাগলো। জান্নাতের আঙ্গুল মুখে নিয়ে পরী বলল স্যরি বাবা আমি তোমার খেয়াল রাখতে পারিনা। ওর কান্না থামানো চেষ্টা করতে লাগল পরী।

– পরী! শুভ্র দেখলে তোমার কি হাল করবে জানোই তোহ্ সাবধানে কাজ করবেনা?

– আমার ভুল হয়ে গেছে আপু বলেই পরী জান্নাতকে ফিডিং করাতে লাগল। এবার জান্নাত থেমে গেল এবং দুধ খেতে লাগল।



– বাবা বা শুভ্রর কাছে ওকে নিয়ে যেওনা কিন্তু তাহলে তোমার অবস্থা খারাপ করে ছাড়বে বলে জান্নাতের নখের দিকে তেকেই দেখল রক্ত নেই বা কাটা বুঝা যাচ্ছেনা।
পরী! তুমি ওর সব রক্ত চুষে খেয়ে নিছো! আজব তো?



– আমি এরকমই। প্রিয় জনের রক্ত নষ্ট করিনা এভাবেই খেয়ে ফেলি।


– রাতে শুভ্র এসে ফ্রেস হয়ে ওযু করে নামাযে দাড়াবে এমন সময় জান্নাত বাবা বলে ডেকে ওঠে।


– শুভ্র জান্নাতের কাছে যেতেই জান্নাত শুভ্রের কোলে উঠে গলা জড়িয়ে ধরল।


– আমি জান্নাতকে কোলে নিতে গেলে ও আসবেই না। শুভ্রর গলা জড়িয়েই ধরে কান্না করতে লাগল। ধমক দিতে গিয়েও দিলাম না আর। কারন শুভ্র আমাকে জান্ত কবর দিবে ওকে যদি ওর সামনে ধমক দেই।
জান্নাত! বাবা নামায পড়বে তোহ্ আমার কাছে আসো মা।


– শুভ্র বলল আচ্ছা থাক বলেই ওকে বুকে নিয়েই এক হাতে ধরে নামায পড়ল।


♥আল্লাহ্♥ শুভ্র কিভাবে একে নিয়ে নামায পড়ল। জান্নাতের মনে হয় মজা লাগছিল যখন শুভ্র সেজদাহ্ তে যাচ্ছিল।


– শুভ্র কে বললাম তুমি কি! এটা কিভাবে করলা এত্ত সহজে । আমার মাথায় এই বুদ্ধিটা আসতো না কখনও।


– তোমার মাথায় কিছু থাকলে তো আসবে। কুবুদ্ধির জাহাজ তোহ্ তুমি আবার।


– শুভ্র ইনসাল্ট কেন করো হুম। আমিও কোন না কোন দিক থেকে স্পেশাল।

– আমাকে নাস্তহাল করার স্পেশালিষ্ট তুমি। ভালবাসার খুনশুটি যাকে বলে। দিনরাত এভাবেই অনেকটা কেটে যায়।


– এর মধ্য একদিন অর্পিতাকে ওর শশুর বাড়ীর লোকেরা আর্শীবাদ করে গেল।



– একরাতে আমি কানে ইয়ারফোন দিয়ে ইউটিউবে একটা গানের নাচ দেখছি। নিদ্রা আপু দেখতে বলছিল তাই ।

– শুভ্র রুমে এসে বলল,,,,,, কি দেখছো পরী?


– কিন্তু পরী শুভ্রর কথা শুনতে পায়না। বসে গানই দেখছে।

– শুভ্র আর কিছু না বলে ফ্রেস হয়ে এসে সুয়ে পড়ল।

– পরীর কছে শুভ্র এসে সুয়ে পড়তেই পরী ফোনটা রেখে বলল,,,,,,,, শুভ্র তুমি কখন আসলে?


– সারাদিন ওটা কানে দিয়ে থাকলে আর শুভ্রকে দেখতে পাবে তুমি! ওগুলোই নিয়ে থাকো।


– স্যরি আমি বুঝতে পারিনি তুমি আসছো।

– তুমি চেঞ্জ হয়ে গেছ পরী। তোমার চেঞ্জ আমার জন্য অনেক কষ্ট দায়ক। শুভ্র পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল।


– পরী সুয়ে পড়ে পিছন দিক থেকে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে বলল হুম আমি নিজেও বুঝতে পারছি আমি চেঞ্জ হয়ে গেছি শুভ্র। বিয়েটা শেষ হয়ে যাক সব ঠিক করে নিব। নিদ্রা আপুর কথা ফেলতে পারিনা যে।


– আমার থেকে বউদি তোমার কাছে বড় হয়ে গেল?

– একদম নাহ্। তুমি তো তুমি। তোমার সাথে কোন কিছুর তুলনা হয় নাকি! শুভ্রর ঘাড়ে বার বার মুখ ঘুষছে পরী।


– প্রয়োজন পড়লে আমার কাছে আসো তাই না? শুভ্র পাশ ফিরে পরীর দিকে তাকাল।

– নাহ্,,,,,, কিসের প্রয়োজন? তোমার উপর একমাত্র আমার অধিকার তাহলে শুধু প্রয়োজন কেন? এমনিই যখন তখন তোমার কাছে আসতে পারব। পরী শুভ্রর বুকের মধ্য ঢুকে পড়ল।


– শুভ্রর বুকের স্পন্ধন শুনতে পাচ্ছে পরী। যেটার শব্দ পরীর কাছে সব চেয়ে প্রিয় অনুভূতি।

– শুভ্র পরীর কাছ থেকে নিজেকে ছেড়ে নিয়ে বেড থেকে উঠে এসে বক্সে একটা ঠান্ডা গান চালু করল। পরী! আসো তোমায় কাপল ডান্স শিখায়।

– পরী শুভ্রর কাছে এসে বলল,,,,,,তুমি এটাও জানো?

– হুম,,,,,, আমেরিকায় থাকতে বান্ধবীদের সাথে এই নাচ টা কয়েক বার করেছিলাম। ওখানে এগুলো সিম্পল ব্যাপার বলেই পরীকে এক টানে বুকে টেনে নিল শুভ্র।

– শুভ্র! তোমার গার্লফ্রেন্ড ছিল ওখানে?

– গার্লফ্রেন্ড তোহ্ অনেক ছিল কিন্তু প্রেমিকা ছিলনা বলেই পরীকে নিয়ে কাপল ডান্স করতে লাগল শুভ্র।

– তুমি কি ড্রিংক করতা আগে?

– অনেক করেছি। এমনকি ড্রিংক করে দুর্ঘটনাক্রমে ৫ দিন হসপিটালে ছিলাম বলেই শুভ্র পরীর হাত ধরে ঘুড়ালো।

– আমি ভুলে ড্রিংক করেছিলাম তার জন্য তুমি কেন শাস্তি দিয়েছিলে আমায়!

– পরী ওটা আমার অতীত ছিল। যেখানে ওগুলো কাজ করা স্বাভাবিক আমার কাছে ছিল। কিন্তু এটা আমার বর্তমান বলেই শুভ্র পরীর কোমড়ে হাত দিল।

– তুমি কোন নারীর সাথে শারিরীক সম্পর্ক করেছো?
আমি বাদে……..

– পরী! তুমি কি আমার সাথে বিয়ে হওয়ার আগে অবৈধ ভাবে এই কাজটি করেছিলে কারো সাথে ?

– ছিহ্ তুমি কি সব বলছো ! আমি কেন এগুলো কাজ করতে যাব। তোমার মাথা ঠিক আছে?

– তাহলে তুমি কেন আমাকে এধরনের প্রশ্ন কর? আমার নারীর প্রতি কোন আসক্তি জাগেনি কখনো। আমি পৃথিবীর কয়েকটা হাইফাই বারে ড্রিংক করছি। ভার্সিটিতে অনেক ওকেশনে বান্ধবীদের সাথে ডান্স করছি। প্রচুর ট্রাভেল করেছি। আরও অনেক কিছু কিন্তু সেগুলো সব ওপেন প্লেসে করেছি।

আমি একটা ফ্যামিলি থেকে পড়াশুনা করতাম। ফ্যামিলিটা অনেক মার্জিত ছিল। তাই আমি কখনও লিমিট ক্রস করিনি। তুমি হয়ত জানোনা আমার এসবের সাথী ছিল ঐ পরিবারের ৫০ বছর বয়সি আমার একটা আঙ্কেল। আমার ভার্সিটির শিক্ষিক ছিল সে। তার সন্তানদের সময় দিতনা যতটা আমাকে উনি সময় দিতেন। এখন বুঝি কেন উনি আমার সাথে সব সময় থাকতেন। তাই নোংরা কাজ করা আমার জন্য অসম্ভব।

আমি পড়াশুনার ফাঁকে ফাঁকে করতাম এগুলো। আমার টার্গেট ছিল অন্য কিছু হওয়ার। কিন্তু পড়ালেখা শেষ হওয়ার পর মা আমাকে একদিনেরও বেশি সেখানে ইনজয় করার সুযোগ অবদি দেয়নি। দেশে ফিরে আসি। আমি এখন যেই পেশায় আছি এটা আমার পছন্দ হয়। তাই এটার জন্য ট্রাই করতেই প্রথমে চান্স পেয়ে যাই।

তুমি যেহেতু পবিত্র তাই বিয়ের আগে আমিও এই ব্যাপারে পবিত্র ছিলাম। যে যেমন তার জিবন সঙ্গী তেমন হবে এটা কি তুমি জানোনা?


– তুমি মেয়েদের এভাবেই ছুয়ে ডান্স করেছিলা?

– হুম কাপল ডান্স এভাবেই করতে হয় পরী। কথাটা শুনার পরই পরী শুভ্রকে একটা জোড়ে ধাক্কা দিয়ে নিজের কাছ থেকে সরে দিয়ে বলল আমাকে একদম ছুবেনা। আমার কাছে আসবা না একদম। পরী রুম থেকে বের হয়ে যায়।


– শুভ্র স্তব্ধ হয়ে গেল পরীর এমন আচরনে।


– এই রাতে পরী বাসা থেকে বের হয়ে সুইমিং পুলে বসে পানিতে পা ডুবে বসে রইল। আজ আর তার কোন ভয় করছেনা। কারন ও খুব কষ্ট পাইছে। চোখের পানি মানছেনা। শুভ্র অন্য মেয়েদের সাথে,,,,,,,,,,বলেই কান্না করতে লাগল।


– শুভ্র বেলকুনিতে দাড়িয়ে পরীকে দেখছে। পরীর ব্যবহারে শুভ্র অত্যন্ত কষ্ট পেয়েছে। শুভ্র একটা সিগারেট ধরিয়ে টানছে আর পরীকে দেখছে।


– অনেকক্ষন পর পরী পুল থেকে উঠতেই শুভ্র বেলকুনি থেকে রুমে এসে লাইট অফ করে দিয়েই সুয়ে পড়ল।

– পরী রুমে এসে দেখে শুভ্র ঘুমিয়ে পড়ছে। শুভ্র তুমি খুব খারাপ বলে আর একটিও কথা না বলে সুয়ে পড়ল।




– আজ অর্পিতার গায়ে হলুদ। ২ জনের হলুদ কমিনিউটি সেন্টারে হচ্ছে একসাথে। কিন্তু বিয়ে হবে শুভ্রদের বাসায় আর বৌভাত রনকদের বাসায়।


– সন্ধায় সবাই রওনা দিল কমিনিউটি সেন্টারে। কিন্তু পরী আর নিতাইকে কোথাও দেখা গেল না। অনিল জান্নাতকে নিয়ে আছে। জান্নাত একটা হোয়াইট ফ্রক পড়েছে। অসম্ভব সুন্দর লাগছে।


– শুভ্র পরীকে বার বার কল দিচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছেনা। শুভ্র এখানে আকিক কে দেখেছে এটাই শুভ্রের চিন্তার বিষয়।


– পরী নিতাইয়ের সামনে বসে আছে সাদা একটা লেহেঙ্গা পড়ে। এটা শুভ্র দিয়েছে। ম্যাচ করে সব ভারী গহনা অবদি। শুভ্র ড্রেসটা বেডে রেখে দিয়েছিল আর পরী ওটা নিয়ে নিতাই এর সাথে পার্লারে এসেছে।


– দাদু যেভাবে বলবে ওভাবেই সাজিয়ে দেন। কারন এর আগের বারও নিতাই সাজের ব্যাপারে খুব দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিল।


– এবারও তাই হল। খুবই হালকা মেকআপ। যেহেতু শীতের আমেজ চলে আসছে তাই চুলগুলো ছেড়ে দিতেই বলল নিতাই। শুধু কয়েকটা সাদা গোলাপ গেথে দিল চুলে। ব্যস কমপ্লিট। ম্যাম আপনাকে দারুন লাগছে। হাতের চুড়িটা খুলে ফেলি?


– না না ওটা আমার বিয়ের চুরি থাক ওটা। এর সাথে মাচিং করে চুড়ি পড়ে দেন।


– দাদু! আমাকে ভাল দেখাচ্ছে তো?

– এককথায় চমৎকার।

– শুভ্রের পছন্দ হবেতো! শুভ্রকে সারপ্রাইজ দিবতো তাই……..

– পরী! এটা কিন্তু ঠিকনা আমি থাকতে শুভ্রকে নিয়ে টানছো কেন? আমি গাছ বড় করলাম আর শুভ্র নিয়ে যাবে!


– যার জিনিস সে তো নিবেই দাদু। পরী আর নিতাই গাড়ীতে চড়ে রওনা দিল।


– তন্নীকে দেখে নিদ্রা ভিষন ভয় পায়। একে তো ইনভাইট করে নি তাহলে এ কেন সবার সাথে আসছে।

– নিদ্রা! কেমন আছিস?
.
– তুই এখানে কেন?
.
– বিনা দাওয়াতে শুভ্রর বউকে দেখতে এলাম। টেনশন নিসনা দেখেই চলে যাব।
..
– কিন্তু নিদ্রার টেনশন বেড়েই গেল। একে বিশ্বাস নাই।



– আমি দাদুর সাথে এসে পড়লাম। বাবা গো এত্ত মানুষ! এত্ত মানুষ দেখে আমার হাত পা কাঁপছে।


– দাদু এখানে কত মানুষ হবে?

– হাজার পার হয়ে যাবে। ২ পরিবারের তো তাই।

– আমি পার্স থেকে ফোন বের করে দেখি শুভ্রর কল ১৫+ বার। আমাকে আজ আর আস্ত রাখবেনা। দাদু শুভ্রকে কল দেনতো ও কোথায় আছে।

– ঐ যে সামনে দেখ রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে। হয়ত তোমাকেই খুজছে।

– পরী দৌড় দিল। পরীর দৌড় দেখে নিতাই হেঁসে বলল এভাবে দৌড়াও না কারো সাথে ধাক্কা খাবে। কে কার কথা শোনে এক দৌড়ে শুভ্রর পিছনে এসে দাড়ালো।

– শুভ্র ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছে আর একহাত রেলিং এ দিয়ে দাড়িয়ে আছে।

– পরী চট করে এক হাতের নিচ দিয়ে শুভ্রর একদম বুকের কাছে গিয়ে দাড়াল।

– শুভ্র চমকে ওঠে পরীর এমন কান্ডে।

– শুভ্র তোমাকে যা লাগছেনা আমি পুরোই ফিদা হয়ে গেছি। উম্মাহ্ বলে একটা ইশারায় কিস দিল শুভ্রকে।

শুভ্র তুমি আমাকে খুজছো তাইনা! আমাকে কেমন লাগছে?


– শুভ্রতো অবাক পরীর কান্ড দেখে। কি শুরু করছো এতগুলো মানুষের সামনে বলেই শুভ্র সরে আসল। কিন্তু ঐ অবস্থায় দুজনে ক্যামেরা মানের ক্যামেরায় বন্দী হয়ে গেল।


– পরী পার্স থেকে একটা ছোট্ট বক্স বের করে শুভ্রর সামনে ধরে বলল এটা আমাকে একটু পরে দিবা? আমার খুব সখ তোমার হাতে পরে নিব।

– বিয়েতে যে ৭ পাথরের ছোট্ট ডায়মন্ডের নাকফুল শুভ্র পরীকে দিয়েছিল এটা সেটা। শুভ্র রেগে গিয়ে বলল,,,,,,,, পরী কি ভিমরতি শুরু করছো হুম!
এত্ত গুলো মানুষের সামনে আমি তোমাকে এটা পড়ে দিব?

– এখানে কোন রুম নেই? তাহলে সেখানে গিয়ে পরে দিবা চল।

– শুভ্র প্রচন্ড রেগে গিয়ে বলল,,,,, এক থাপ্পড়ে সব ভিমরতি তোমার ছুটাইবো। কি শুরু করছো এসব। আর এভাবে এত্ত সাজছো কেন । তুমি জানোনা সাজগোজ আমি একদম পছন্দ করিনা ! সিম্পল ভাবে আসতে পারোনি? নিজের রুপ সবাইকে দেখাইতে হবে……


– এবার পরী মাথা নিচু করতেই শুভ্র বলল একফোটা পানি যদি আজ তোর চোখ থেকে পড়ছে তাহলে কিন্তু আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।


– স্যার! এটা কি আমাদের ম্যাম বলেই একটা ফটোগ্রাফার পিছন দিক থেকে ওদের সামনে আসল।


– হুম….. সী ইজ মাই ওয়াইফ।

– ম্যাম প্লিজ স্যারের সাথে একটু দাড়ান তো কয়েকটা পিক উঠাই বলে শুভ্র আর পরীর কতগুলো পিক উঠালো এবং চলে গেল।


– এবার শুভ্র পরীর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
তোকে কতবার কল দিছি ফোন বের করে দেখ। ইচ্ছা করছে তোকে কি যে করি জাষ্ট ভেবে পাচ্ছিনা।

– স্যরি বুঝতে পারিনি। দাদুর সাথে ছিলাম।

– এবার শুভ্র কিছুটা ঠান্ডা হল। আচ্ছা ঠিক আছে,,,,,,একা একা একদম থাকবানা। মার কাছে কাছে থাকবা সবসময়। কেউ ডাকলে একা যাবা না। মার কাছে যাও এখন।

– আমি মাকে খুজে পাচ্ছিনা। নাকফুল টা একটু টুপ করে একটু পড়ে দাওনা। বেশি সময় লাগবেনা তো….

– পরী! দাতে দাঁত চেপে ধমক দিল শুভ্র। আবার শুরু করছো? নিজে পড়ে নাও।

– পড়বো না বলেই শুভ্রর কাছ থেকে চলে এসে পরী অনিতাকে খুজতে লাগল।

চলবে——

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here