শেষ_বয়সের_প্রাপ্তি পর্বঃ ২

0
1232

#শেষ_বয়সের_প্রাপ্তি
পর্বঃ ২
লেখনীতেঃ আয়েশা সিদ্দিকা (লাকী)

ভালোভাবে রিপোর্ট পড়ে দেখলাম রিপোর্ট পজিটিভ মানে এই বয়সে উনি মা হতে চলেছেন। বুঝতে পারছিনা আসলে খুশি হবো কিনা। এমন একটা খুশির খবর পেয়ে যেখানে আমার খুশি হওয়ার কথা কিন্তু কেনো জানি আমার মধ্যে আতঙ্ক আর ভয় কাজ করছে। মা এই বয়সে প্রেসার ডায়বেটিস নিয়ে এই শরীরে এমন একটা ধকল কি করে সহ্য করবে!! আর রবিন বিষয়টাকে কিভাবে নিবে!!
আমি ওভাবে বসে পড়াতে মা কিছুটা ভয় পেয়ে আমার হাতটা চেপে ধরে বলল,

– বৌমা কি হয়েছে আমার? খারাপ কিছু হয়েছে আমার?

আমি কিছু বলার আগেই ডাক্তার আঙ্কেল বলে উঠলো,

– না ভাবি তেমন কিছু না, আপনি….

মা হয়তো উনার কথা শুনে ইতস্ত বোধ করতে পারে এবং লজ্জা পেতে পারে এটা ভেবে আমি আংকেল কে থামিয়ে দিয়ে বললাম ,

– তেমন কিছু মা না সামান্য প্রেশারটা বেড়েছে আঙ্কেল নতুন কিছু ওষুধ লিখে দিলে সেই ওষুধ গুলো খেলেই কমে যাবে।

– তাহলে রিপোর্ট গুলো হাতে পেয়ে এমন বসে পড়লে কেনো মা?

– মা সকালে আমার তেমন একটা খাওয়া হয়েছিলোনা তাই মাথাটা একটু ঘুরে উঠায় ওভাবে বসে পড়েছিলাম।

– দেখি রিপোর্ট গুলো আমার কাছে দাও আমি দেখি আমার কি এমন হয়েছে!!

– আমরা তো বাসাতেই যাচ্ছি মা চলুন বাসায় গিয়ে সব রিপোর্ট আপনি দেখবেন তেমন কিছু নাই রিপোর্টে।

কথা গুলো বলেই আমি ডাক্তার আঙ্কেলের দিকে তাকালাম। তাকিয়ে দেখি উনি আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি আঙ্কেলকে বললাম,

– আঙ্কেল মায়ের শরীরটা তো খুব একটা ভালো নেই। তাই মায়ের শরীরের ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে প্রেসার আর ডায়বেটিসের ওষুধ গুলো পাল্টে নতুন ওষুধ লিখে দেন যেগুলো খেলে মা তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠেন।

আঙ্কেল কোনো কথা না বলে আমার দিক থেকে চোখ নামিয়ে একটা প্রেসক্রিপশনে কিছু ওষুধ লিখে রিপোর্টের ফাইলে ঢুকিয়ে ফাইলটা আমার হাতে দিতে দিতে বললেন,

– বৌমা তোমার শাশুড়ীরতো বয়স হয়েছে একটু খেয়াল রেখো। আর কোনো প্রয়োজন হলে প্রেসক্রিপশনে আমার নাম্বার দেয়া আছে যোগাযোগ করবে। আর তোমার শশুরের সাথে আমি পরে কথা বলে নিবো।

– আচ্ছা আঙ্কেল।

ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে একটা রিকশায় উঠলাম বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে। রিকশা চলতে চলতে হঠাৎ মা বলে উঠলো,

– বৌমা!

– হ্যাঁ মা বলেন।

– তোমরা কি আমার কাছে কিছু লুকিয়ে গেলে? আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে আমার রিপোর্টে এমন কিছু আছে যেটা আমাকে বলতে চাইছোনা।

– না মা আপনার কাছে আর কি লুকাবো। আর তাছাড়া রিপোর্টতো আমার কাছেই আছে বাসায় গিয়েতো আপনাকে দিয়েই দিবো আপনি নিজেই দেখে নিবেন আমরা কিছু লুকাচ্ছি কিনা।

তারপর দুজনেই চুপ হয়ে গেলাম। আসলে কি যে বলবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না তাই বাধ্য হয়ে চুপ হয়ে যেতে হলো। কখন যে রিকশা বাসার সামনে এসে থেমেছে খেয়ালই করিনি। মা হাত ধরে বললো,

– সোহেলী আমরা এসে গেছি নামো।

আমি কোনো কথা না বলে রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে মাকে ধরে উপরে উঠলাম। বাসায় ঢুকে সোজা মাকে নিয়ে মায়ের রুমে গিয়ে রিপোর্টের ফাইলটা মায়ের হাতে দিয়ে বললাম,

– এই নেন আপনার ফাইল। কিছুক্ষণ রেস্ট নেন আমি ফ্রেশ হয়ে এসে আপনাকে গোসল করিয়ে দিয়ে খেতে দিবো। একা একা কিছু করতে যাবেননা যেনো। কিছু দরকার পড়লে আমাকে ডাক দিবেন।

– ঠিক আছেরে মা এতো চিন্তা করোনা আমাকে নিয়ে। যাও তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও।

আমি আমার রুমে এসে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম ওয়াশরুমে। ফ্রেশ হয়ে এসে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি রবিন পাঁচ বার কল দিয়েছিলো। রবিনকে কল ব্যাক করলাম। ওপাশ থেকে,

– কি ব্যাপার সোহেলী তুমি কোথায়? সেই কখন থেকে কল দিচ্ছি মোবাইল রিসিভ করছোনা আবার ডাক্তারের কাছে গেলে কি বললো না বললো কিছুই তো জানালেনা!!

– রবিন আমি ওয়াশরুমে ছিলাম হাসপাতাল থেকে এসে ফ্রেশ হতে গিয়েছিলাম তাই রিসিভ করতে পারিনি।

– তোমরা ডাক্তার দেখিয়ে চলে এসেছো অথচ কিছুই জানালেনা। কি ব্যাপার কি হয়েছে? আচ্ছা যাই হোক, ডাক্তার কি বললো সেটা বলো। কোনো টেস্ট দেয়নি? মায়ের কি সমস্যা কি বললো আঙ্কেল?

– হ্যাঁ কিছু টেস্ট দিয়েছিলো। সব টেস্ট আমি করিয়েছি।

– সব রিপোর্ট ঠিক আছে তো?

– তুমি এতো চিন্তা করোনা সব ঠিক আছে। তুমি আগে বাসায় এসো তারপর বাকি কথা হবে। আমি এখন রাখছি মাকে গোসল করিয়ে খেতে দিবো।

– আচ্ছা ঠিক আছে।

মোবাইলটা বিছানায় রাখতেই কারও অস্পষ্ট চাপা কান্নার আওয়াজ কানে এলো। ভালোভাবে খেয়াল করে বুঝতে পারলাম কান্নার আওয়াজটা মায়ের রুম থেকে আসছে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here