#তবু_কেন_এত_অনুভব_সিজন_২?,৬ষ্ট_পর্ব
#written_by_Liza
সকাল বেলা নাদিম শেখ বেশ অস্থিরতা ভাব নিয়ে বাড়ির এপাশ ওপাশ পায়চারি করছে,দোয়া ঘর থেকে বের হতেই দোয়াকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর বলছে “কাল রাতকা কই আছলি তুই?”
দোয়া আমতা আমতা করে বলে “কই আবার থাকুম? ঘরো আছলাম”
নাদিম শেখ মাথা নাড়িয়ে পরে দেখবে বিষয়টা এই বলে চলে গেলো,এদিকে তানাফ ধর্ষ**ণ হওয়া সেই মেয়েটিকে ব্লা*ড দিয়েছে ডক্টরদের কাছ থেকে। মেয়েটি নড়াচড়া করতে পারছেনা ব্যাথায়। তানাফ ইঞ্জেকশন পুশ করে দিয়ে মেয়েটিকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।
ইনান তানাফকে বলছে “স্যার আমাদের এখান থেকে চলে যাওয়া উচিৎ, নয়তো ঐ নাদিম ব্যাটা আমাদেরকেও ধর্ষ**ণ করবে”
ইনানের কথায় তানাফ কাঁশতে শুরু করে আর বলে “আর ইউ ক্রেজি ইনান? পুরুষ পুরুষকে কীভাবে? কী যা তা বলছো? যাও এখান থেকে”
ইনান কাঁচুমাচু করতে করতে বলে “স্যার নাদিম ব্যাটা সুবিধার না,সে পুরুষ নারী দেখবে না মিশন শুরু করে দেবে”
ইনানের কথায় তানাফ খিলখিল করে হেসে দেয়, ইনান লজ্জায় পাশ কেটে সরে যায়।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চললো,দোয়া নুন মরিচ বাটি করে নিয়ে পুকুরপাড়ে বসে সবাইকে চেঁচিয়ে ডাকছে, ছোট ছোট ছেলেরা ও ইভা,মায়া সকলে এসে হাজির। দোয়া সবাইকে বলছে
“নে খা,কাঁচা আম কেটে এনেছি সবাই মিলে খা”
ছোট বাচ্চারা বসে দোয়ার সাথে খাচ্ছে,এদিকে নাদিম কপালে হাত দিয়ে কুড়ে ঘরের দিকে তাকিয়ে আছে আর মনে মনে বলছে
” কই গেলো মাইয়াডা,বুঝলাম না কিছু। কেউ তো আছে এর পিছনে। আমার নজর রাখা লাগবো”
______________
তানাফ মেয়েটিকে সুস্থ করিয়ে সব জবানবন্দি ক্যামেরায় রেকর্ড করে। সন্ধ্যায় নাদিম শেখ’কে পুলিশ খুঁজতে আসে। নাদিম শেখ তখন ঘরে চা খাচ্ছে,আজীম শেখ গ্রামের প্রতিবেশীদের নিয়ে আলাপ করছে।
পুলিশকে দেখামাত্র নাদিম শেখ বসা থেকে উঠে গেলো,নাদিম শেখ পালিয়ে যেতে চাইলেই আজীম শেখ বাঁধা দিয়ে বলে “কই যাও নাদিম? বো (বসো) এহানো”
নাদিম শেখ কাঁচুমাচু করতে করতে বসে পরে,আজীম শেখ এগিয়ে এসে বলে ” কী চাই? নাদিম কে কেন খুঁজতেছেন?”
অমনি ধর্ষি”তা মেয়েটি নাদিমের সামনে দাঁড়ায়,গলায় ক্ষত চিহ্ন, ঠোঁটের পাশে র*ক্ত জমাট বেঁধে কালচে হয়ে গিয়েছে। নাদিম মেয়েটিকে দেখে দু কদম পা পেছনে ফেলে যেতেই মেয়েটি বলে উঠে পুলিশকে “এই পিশাচডা আমারে নস্ট করছে সাব,আমার জীবন নস্ট করছে”
পুলিশ কারো সাথে কোনো কথা না বাড়িয়ে নাদিম শেখের ঘাড় ধরে উঠোনের মাঝখানে নিয়ে আসে, নাদিম শেখ আজীম শেখ কে বলে “ভাইজান আমি কী করছি? আমার লগে কী হইতাছে এসব?”
আজীম শেখ কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না, ততক্ষণে তানাফ এসে হাজির, তানাফ আজীম শেখের হাতে সকল ভিডিও প্লে করে দেয়। আজীম শেখ ভিডিও দেখে কাঁপছে রাগে থরথর করে।
নাদিম শেখের স্ত্রী মুখে কাঁপড় গুজে কাঁদছে আর বলছে “আমি জানতাম তুমি আমারে ধোকা দিতেছো,সেদিন রাতকা তুমি যহন ঘর থেইকা বাইরে গেছলা তহন’ই বুঝছি। তুমি কারে জানি টাহা দিতে গেছলা”
আজীম শেখ এসব কথা শুনে শক্ত হয়ে আছে, গ্রামবাসীর সামনে নিজের মান সম্মানের উপর আঘাত আসাতে আজীম শেখ রাগে কাঁপছে। আজীম শেখ দৌড়ে গিয়ে নাদিম শেখের গালে চড়ের উপর চড় দেয়।
পুরো গ্রাম বাসী ভয়ে নিশ্চুপ। তানাফ এবার মুখ খোলে আর বলে
“নাদিম লোকটি প্রতি রাতে একেক নারী এনে নস্ট করে কুপিয়ে মারতো,এই লা//শ গুলো যেখানে সেখানে পঁচে গলে আবহাওয়ার সাথে রোগ ছড়াতো। এখনো বলতে পারছি না সঠিক কতটা নারী মারা গিয়েছে এভাবে। হতে পারে দেড়/দু’শো। পাপের শাস্তি সকল গ্রামবাসী ভোগ করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। আর শুনুন ভুত প্রেত বলতে কিছু নেই। যেই কুড়ে ঘরে ভুত আছে বলে নাদিম লোকটি সবাইকে বিশ্বাস করিয়েছে,সেই কুড়েঘরেই মুলত নাদিম লোকটি মেয়ে রাখতো আর ধর্ষ**ণ করতো। তাই আপনাদের সবাইকে মিথ্যা ভয় দেখিয়ে কুড়েঘরে যেতে নিষেধ করতো যাতে তার কাজকর্ম গুলো প্রকাশ না হয়।”
গ্রামবাসী চিৎকার করে বলে,বিচার চাই বিচার চাই। আজীম শেখ ঘরের ভেতর থেকে লম্বা বন্দুক নিয়ে এসে হাজির। নাদিমের দিকে তাক করে যেই না মারতে যাবে তার আগেই পুলিশ বাধা দিয়ে বলে “এই কাজ আমাদের হাতে ছেড়ে দিন।”
নাদিম শেখ’কে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো,নাদিম শেখ যাওয়ার পর পর’ই আজীম শেখ বুক চেপে মাটিতে বসে পরে।এত বড় ধাক্কা সহ্য করতে না পেরে স্টোক করে।
সাথে সাথে তানাফ চিকিৎসা করতে ল্যাবে নিয়ে যায়। আজীম শেখের শরীরের অবস্তা ভালো না,অতিরিক্ত স্ট্রেসের কারণ হার্টবিট চলছে না।
পুরো গ্রামবাসী আতঙ্কের মধ্য দিয়ে পার করছে জীবন।আজীম শেখের অবস্তা দিন দিন অবনতির দিকে,প্রিয়জনের দেওয়া ধাক্কা নিয়ে কোনোভাবেই মানিয়ে নিতে পারছেন না।
তানাফ এবং বাকি ডক্টররা কোনোভাবে আজীম শেখ’কে ভালো করে তোলে, গ্রামে ছড়িয়ে পরা রোগ ক্রমানুসারে কমছে। আস্তে আস্তে আবার গ্রামবাসী ভালোভাবে জীবন যাপন শুরু করে।
আজীম শেখ বাড়িতে বেডরেস্ট, এভাবে দিন পার হচ্ছে।
___________________________
ইনান খানিকটা মানিয়ে নিয়েছে নিজেকে,রাতে খাওয়া দাওয়া সেরে ইনান আর তানাফ ঘুমাতে গেলেই ঝড় বজ্রপাত শুরু হয়। ইনান জানালার পাশের দিকটাতে ঘুমাচ্ছে, অমনি বাতাসে জানালা খুলে যায়। ইনানের ঘুম ভেঙ্গে যায় আওয়াজে।
বাতাসে জানালার দুপাশে দরজা দোল খাচ্ছে,ভৌতিক সিনেমার মতো।ইনান মনে মনে দো’আ দরুদপাঠ করছে, একটু পর পর বজ্রপাতের আলো চারদিকে ছড়িয়ে পরেছে।
ইনানের ঘুম আসছে না,ইনান তানাফের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে। ইনানের হঠাৎ চোখ পরে দুরের গাছের ঐদিকে।
ইনান বজ্রপাতের আলোতে স্পষ্ট দেখছে সাদা লম্বা কী যেনো ইনানের দিকে তাকিয়ে আছে। ইনানের গলা ভয়ে শুকিয়ে কাঠ। ইনান কাঁপা কাঁপা হাতে জানালার দরজা বাঁধতে গেলেই ইনানের মুখের সামনে জুলন্ত মুখ ভেসে উঠে, দেখতে কালো বিধস্ত। ইনান ভয়ে চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারায়।
পালা পালা মনে হয় হার্ট এট্যাক করেছে (দোয়া)
মায়া টিনের চাল থেকে নেমে প্রান বাঁচিয়ে দৌড়ে পালালো।
এদিকে ইনানের চিৎকারে ল্যাবের সবাই ইউনিটের সবাই জেগে গিয়েছে, ইনানকে অজ্ঞান দেখে তানাফের ভেতর ভয় হতে শুরু করে। তানাফ ইনানকে জ্ঞান ফিরিয়ে বলে “কেন এমন হলো? তুমি কেন জ্ঞান হারালে?”
ইনান তানাফের হাত ধরে কাঁপছে আর বলছে “স্যার বিশ্বাস করুন আমি নিজ চোখে ঐ মৃত আত্মা গুলোকে দেখেছি,আপনাকে আগেক বলেছি বিশ্বাস করেন নি।আজ দেখুন আমার অবস্তা,এখনো যদি বিশ্বাস না করেন তাহলে একদিন ম*রে গিয়ে আপনাদের সব বিশ্বাস করাবো”
তানাফ ইনানের কথায় বুঝতে পারলো, ইনান মিথ্যা বলছে না। ইনানের বেশ জ্বর এসেছে। তানাফ ইনানকে মেডিসিন দিয়ে ঘুম পারিয়েছে।
বাকি ডক্টররা বলছে “ইনান বেশি ভাবে তাই এমন ভয় পেয়েছে, আমরা নাহয় দেখতাম না? খারাপ কিছু হলে?”
তানাফ দোটানায় পরে গিয়েছে সবার কথা শুনে, তানাফ মনে মনে বলছে “বাকিরা যা বললো তা ও ঠিক,ইনান হয়তো বেশি ভাবে এইজন্য এমন অবস্তা। এদিকে ইনানের কথাও মিথ্যা মনে হচ্ছে না৷ ইনান ভয় না পেলে জ্বর আসতো না জ্ঞান হারাতো না। কিছু একটা তো রহস্য আছে। আমার খুঁজে বার করা লাগবে”
সবাই ঘুমিয়ে পরেছে যে যার মতো, তানাফ জেগে আছে,অপেক্ষা করছে ভুত,প্রেতকে হাতেনাতে ধরার জন্য। কিন্তু লাভ হলো না কারো দেখা পায় নি তানাফ।
সকাল হয়ে গিয়েছে ইনান বেশ কিছুটা সুস্থ,তানাফ ইনানকে বলছে “আজ রাতে জানালার পাশে আমি থাকবো, জানালা খোলা থাকবে ঠিকাছে? আমি দেখবো কে এই মানবী”
চলবে