#তবু_কেন_এত_অনুভব_সিজন_২?,১০ম_পর্ব
#written_by_Liza
দোয়াকে তানাফের মা বলছে “এখন একটু বিশ্রাম নে,দুপুরে আমি ডাকলে তারপর নিচে আসবি কেমন?”
দোয়া মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সম্মতি দেয়,তানাফের আম্মু কিচেনে চলে যায় কাজ করতে। দোয়া না ঘুমিয়ে ঘুরে ঘুরে পুরো ঘরটা দেখছে।
এদিকে তানাফ ঘুমে বিভোর,টেবিলে থাকা তানাফের সকল জিনিসপত্র দোয়া নেড়েচেড়ে দেখছে।
রুমে তানাফের বাবা চিৎকার চেচামেচি করছে,শব্দ
আসছে ভাঙ্গচুরের। দোয়া ভয়ে খাটের একপাশে বসে পরে, ঠিক ঐসময় ঘরে কে যেনো প্রবেশ করে। পুরো বাড়ি সাথে সাথে নিস্তব্ধ।
তানাফের মা কিচেন থেকে বের হয়ে শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে তানাফের বাবা (আজমাইন খান) এর রুমে যেতে লাগলো।
গিয়ে দেখে অনু এসে স্বান্তনা দিচ্ছে আজমাইন খান’কে। তানাফের মা রাগে ফুঁসছে এসব দেখে৷ অনু আড়চোখে সবটা দেখে স্যাড স্যাড ফেইস করে তানাফের মা’কে বলছে “আন্টি তানাফ কোথায়? আমার সাথে ঝগড়া করে মোবাইল অফ করে রেখেছে। শুনেছি ঘরে নাকি কিছু হয়েছে?”
অমনি আজমাইন খান বলে উঠেন কথার মাঝখানে “হয়েছে মানে? গাইয়া উজবুক একটাকে কোত্থেকে ধরে এনেছে তানাফ। আমার ছেলে বলতেই লজ্জা লাগছে।তানাফ এতটা চেঞ্জ হলো কী করে ভাবতে পারছি না। ওরা আমার ছেলের মাথাটা খেয়েছে। অনু তুমি তানাফকে বোঝাও একটু”
অনু,’ আজমাইন খানের কাছে গিয়ে বলছে “অবশ্যই আংকেল, আমি তানাফকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করবো একদম চিন্তা করবেন না”
তানাফের মা কোনো কথা না বলে সোজা তানাফের রুমে চলে গেলো, দোয়া ভয়ে তানাফের পাশে এক কোনায় চুপচাপ বসে আছে। তানাফের মা গিয়ে তানাফকে টেনে ঘুম থেকে তুললো, আর বলতে লাগলো
“এই অমা–নুষ ওঠ বলছি, এক্ষুনি গিয়ে সবার সামনে সবটা পরিষ্কার করে বলবি নয়তো তোর একদিন কী আমার একদিন।”
তানাফ ঘুম ঘুম চোখে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বিরক্তির স্বরে বলে “কী হয়েছে,ঘুমাতে দাও আজব।”
তানাফের মা অনুর নাম মুখে নিতেই তানাফ লাফিয়ে ওঠে, দোয়া তানাফের এমন আচরণে রীতিমতো অবাক। যে লোকটি একটু আগে ঘুমে চোখ মেলতে পারছিলো না,সেই লোকটি অনু নাম শুনতেই তড়িঘড়ি করে ওঠে হাজির।
তানাফের মা তানাফের হাত ধরে আজমাইন খানের রুমে নিয়ে যায়। তানাফ অনুকে দেখে হায় তুলতে তুলতে বলে “এত সকালে তুই এখানে? তোকে না বলেছি আমি দুপুরে দেখা করবো? ঘরে আসলি কেন?”
অনু সবাইকে দেখিয়ে কাঁদতে কাঁদতে তানাফের হাত ধরতে যায় অমনি তানাফ হাত সরিয়ে বলে ” দূর থেকে কথা বল।”
অনু কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে “এভাবে আমাকে দূরে ঠেলে দিতে পারলি তানাফ? এতটাই পর করে দিলি আজ, যে আমি কেন ঘরে এসেছি তাতেও তুই কৈফিয়ত নিতে লাগলি”
তানাফের এমন আচরণে আজমাইন খান রাগে কাঁপছে, অনুর এমন নাটক দেখে তানাফের মা বলে ওঠে
“মেয়ে মানুষ কোমল নম্র ভদ্র হয় জানতাম,পুরুষের গায়ে ঢলে পরতে দেখেনি।এর চেয়ে গ্রামের মেয়ে ঢেড় ভালো,অন্তত মুরুব্বি, চক্ষু লজ্জা এদের আছে। এরা এসব মানে”
অনু দাঁতে কিড়মিড় করে রাগ কন্ট্রোল করে তানাফের মা’কে বলছে “আসলে আন্টি তানাফ আমার ছোট বেলার বন্ধু,তাই বুঝতে পারিনি আমাদের মধ্যে এত বড় দেয়াল উঠে গেছে।”
তানাফের মা, তানাফকে বলছে “তানাফ রুমে মেয়েটা একা,যা ফ্রেস হয়ে বউকে সময় দে।”
আর হে অনু তুমি তানাফের মাথা খেয়ো না,আমার ছেলে এখন বিবাহিত ওঁকে ওর মতো থাকতে দাও (তানাফের আম্মু)
তানাফের মা কথাগুলো বলে তানাফকে নিয়ে দ্রুত গতিতে রুম থেকে প্রস্থান করলো৷ অনু আর আজমাইন খান রুমে একা। অনু,’ আজমাইন খানকে দেখিয়ে কান্না করছে আর বলছে
“আমার জীবনটা শেষ হয়ে গেলো,যাকে এত ভালোবেসেছি সে আমাকে ধোকা দিলো। কেউ সূখী হবে না কেউ না”
কথাগুলো বলে অনু রুম থেকে বেরিয়ে পরে,আজমাইন খান অনুর বলা কথাগুলো ভাবতে লাগলো। মনে মনে আজমাইন খান বলছে “যে করেই হোক এই গাইয়া মেয়েকে আমার ছেলের ঘাড় থেকে নামাতে হবে”
দুপুরে এক টেবিলে সবাই খেতে বসেছে,দোয়া ও তাদের সাথে আছে।
আজমাইন খান খাবার টেবিলে বসতে গিয়ে দোয়াকে দেখে চেচিয়ে ওঠে আর বলে “কে এখানে গাইয়া মেয়েটাকে বসতে বলেছে? কে? এক্ষুনি চলে যেতে বলো আমার চোখের সামনে থেকে”
অমনি তানাফ খাওয়ার টেবিল থেকে উঠে দাঁড়ায় আর বলে ” দোয়া আমার স্ত্রী, ঠিক করে কথা বলো বাবা। তুমি কাকে গাইয়া ডাকছো? তুমিও কিন্তু একসময় গাইয়া মেয়েকেই ভালোবেসে ঘরে তুলেছিলে”
আজমাইন খান টেবিলে থাকা কাঁচের গ্লাস মাটিতে ছুড়ে দিয়ে বলে “বেয়াদব আমার মুখে মুখে তর্ক? এই শিক্ষা দিয়েছি তোকে?”
তানাফ দোয়ার হাত ধরে খাবার টেবিল থেকে ওঠে রুমে চলে যায়, দোয়া এত অপমান জীবনে কখনো সহ্য করে নি। দোয়া কাঁদছে নীরবে।
তানাফ দোয়াকে রুমে নিয়ে গিয়ে বলে “ঐ লোকটার সামনে আর যাবেন না আপনি৷তৈরি হোন আজ আমরা বাহিরে খাবো, ঘুরবো”
দোয়া,’ তানাফকে বলে
“কেন আমায় বিয়ে করেছেন? কেন? আপনি আমার আব্বাকে কেন সত্যি কথাটা বললেন না?আপনার জীবনে কেউ আছে এটা অন্তত বলতে পারতেন তাহলে আমি এই নরক থেকে বেঁচে যেতাম। এভাবে তিলে তিলে আমাকে অপমান সহ্য করতে হতো না”
তানাফ কী বলবে ভেবে পাচ্ছেনা,তানাফের কাছে কোনো উওর নেই।তানাফ মনে মনে ভাবছে
“ঠিকই তো, দোয়ার তো দোষ নেই! তাহলে কেন আমার জন্য দোয়া এভাবে অপমান সহ্য করবে? দোয়া তো বলে নি আমাকে বিয়ে করতে। আমিই তো তার আব্বুর এমন অবস্তা দেখে বিয়ে করেছিলাম,সেই বিয়ে করে তাকে কতটা সুখ দিলাম? সেই ঘুরেফিরে তাকে অপমান হতে হচ্ছে৷”
তানাফের বাহু ঝাঁকুনি দিয়ে দোয়া বলে “উওর দিন, আমি পারছিনা। এভাবে আমি বড় হইনি। আমি কী করবো? কোথায় যাবো? আমাকে কেন এত শাস্তি দিচ্ছেন? নাকি আমার উপর প্রতিশোধ নিতেই আপনি বিয়েটা করেছিলেন?”
তানাফ দোয়াকে শান্ত করিয়ে বলে
“আসলে অনু আমার বেস্টফেন্ড,আমি ওঁকে ভালোবাসি না, আব্বু চেয়েছিলো আমার আর অনুর বিয়ে হোক যেহেতু ছোট থেকেই চেনাজানা। আমিও চাইনি অনুকে বিয়ে করতে,কারণ তার জন্য আমার ফিলিংস কাজ করতোনা। তবুও বাবার কথা রাখতে আমি চুপচাপ রাজি হয়েছি। আমি গ্রাম থেকে ফিরেই অনুকে বিয়ে করার কথা৷ যদিও আমার মত নেই,তবে ভেবেছিলাম সে আমার ভালো বেস্টফ্রেন্ড, একদিন না একদিন ভালো জীবন সঙ্গী হয়ে ওঠবে। এই আশাতেই আমি রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু সব কিছু উলোটপালোট হয়ে গেলো। একদিকে ভালো হয়েছে অনুকে বিয়ে করতে হয় নি আমার,আমার আম্মুর ও পছন্দ ছিলো না অনু। আপনিই বলুন কেউকে মন থেকে মেনে নিতে না পারলে তার সাথে সংসার করে লাভ আছে?”
দোয়া চোখ মুছে অস্ফুট স্বরে তানাফকে বলে “মন থেকে তো আমাকেও মেনে নিতে পারেন নি,তাহলে কেন চড়ুইপাখি সংসার বুনছেন? না ভালোবেসেছেন আপনি? না আমি পেরেছি ভালোবাসতে? ভালোবাসা কী তা ও জানিনা। আমার জীবনে এসব আসে নি,আসবে ও না দুঃখ ছাড়া”
তানাফ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দোয়ার গাল টেনে দিয়ে বলে “আমাদের যেটা হয়েছে সেটা একটা এক্সিডেন্ট, আমরা কেউ’ই চাইনি এটা হোক। তাই অনুর ব্যাপারের সাথে আমাদেরটা মিলিয়ে লাভ নেই। আমরা তো পারি তাই না? হাসবেন্ড ওয়াইফের মতো সবার সামনে নাটক করতে৷ এতে তো ক্ষতি নেই। আর হ্যাঁ আপনি এখনো পিচ্চি এসব ভালোবাসা বুঝে আপনার কাজ নেই। আপনার তো ধান্ধা কবে কাকে জ্বালিয়ে মার–বেন। জানি আপনার মত টনের্ডোর সাথে আমার কীভাবে কাটবে। আপনি টর্নেডো সুনামি থেকেও কম না”
তানাফ কথাগুলো বলে দ্রুত রুম থেকে চলে গেলো,দোয়া,’ তানাফের কথায় রাগে ফুঁসছে আর বিড়বিড় করে বলছে “আবার আমাকে টর্নেডো বলা?এই লোকটাকে তো আমি সুযোগ পেলে দেখে নিবো”
এদিকে তানাফের মা তাদের কথোপকথন সবটা শুনে ফেলে,তানাফের মা মনে মনে বলে
“তানাফ তুই এই মেয়ের প্রেমেই হাবুডুবু খাবি,আমি সেই ব্যবস্থা করছি দাড়া”
__________________________
তানাফ দোয়া বেরিয়েছে বাহিরে,তানাফ দোয়াকে নিয়ে ক্লিনিকে গেলো, ক্লিনিকের বাকি ডক্টররা দোয়াকে দেখে খুশিতে গদগদ করছে আর বলছে “তানাফ স্যার নাকি প্রেম ভালোবাসায় বিশ্বাসী না,একি দেখছি আমরা।তানাফ স্যার তো দেখি বিয়ে করে বউ নিয়ে হাজির”
তানাফ মুচকি হেসে দোয়ার দিকে তাকিয়ে বলে ” প্রেমে না পরার মতন কিছুই পাইনি। তাই পরে গেলাম কী বলেন দোয়া?”
দোয়া ক্যাবলার মত তানাফের কথা শুনে থ বনে গেলো,দোয়া মনে মনে বলছে
” হে খোদা এই মক্কেল তো দেখি আস্ত গিরগিটি। এত সুন্দর অভিনয় কীভাবে করে মানুষ। গিরগিটি একটা”
দোয়া মৃদু হাসি দিয়ে তানাফের হাত জড়িয়ে ধরে বলে “আসলেই মানুষটার প্রেমে আমিও কীভাবে পরলাম জানি না।মানুষটা অমায়িক, ডাক্তারি চিকিৎসা করতে গিয়ে আমার মনের চিকিৎসা করে ফেললো আর কি হেহে”
তানাফ দোয়ার কথায় কাশতে শুরু করেছে,তানাফ চোখ বড় বড় করে দোয়াকে দেখছে। দোয়া চোখ টিপে দেয় তানাফকে। তানাফ মনে মনে বলে
“এই টর্নেডো আমার চেয়ে দুইধাপ এগিয়ে, বাহ বাহ দোয়া চালিয়ে যান”
ক্লিনিকে অনু ঢুকতেই দোয়ার সামনে পরে অনু,অনু দোয়াকে পা থেকে মাথা অব্দি দেখছে ভালো করে। দোয়া বুঝতে পেরেছে এই সেই অনু। দোয়া ইচ্ছে করে তানাফের হাত নিজের হাতের সাথে মুষ্টিবদ্ধ করে তানাফের সাথে হাসছে।
তানাফ বুঝতে পেরেও কিছু বলে না,তানাফ চাইছে মনে প্রানে অনু সবটা বুঝে দূরে সরে যাক।
চলবে….