#৫ম_তলার_মেয়েটা,২২,২৩
ফাহমিদা_লাইজু
#পর্ব_২২
ঝড়ের বেগে রুমে ঢুকে গেলেন হাজেরা।লাইট জ্বালিয়ে এমনভাবে তাকাতে লাগলেন যেন স্বামী এবং শাশুড়িকে এই মুহূর্তে আস্ত গিলে খাবেন। তাঁরা হাজেরাকে হঠাৎ এভাবে দেখে একেবারে হতভম্ব হয়ে গেলেন।এই অবস্থায় কেউ যদি তোফাজ্জলকে দেখতো তাহলে এই ভয়ঙ্কর অবস্থাতেও হাসি আটকে রাখতে পারতো না, তাঁর মুখটা মাছি ঢোকার হাঁ না, তাঁর হাঁ হয়েছিল একেবারে ইঁদুর ঢোকার হাঁ।হার্টবিট এখনই বন্ধ হয়ে যাবে এমন অবস্থা।
হাজেরা অতিরিক্ত রাগে ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন।
শুধু একজোড়া বিস্ফোরিত চোখ জ্বলজ্বল করছে।
তাঁর পাশ থেকে উঠে আসার সময়ই হাজেরা টের পেয়েছিলেন, তখনই তোফাজ্জলের পিছু নিয়েছেন। তাঁর স্বভাবই হচ্ছে গোপনে আড়ালে দাঁড়িয়ে মা-ছেলের কথা শোনা। আজ অবশ্য এই স্বভাবের জন্য লাভই হল। এমন না যে তাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মাখোমাখো ভালোবাসা। তারপরও এত বছরের সংসারে একটা অভ্যাস তৈরি হয়ে গেছে। তাঁরা যে তাদের সন্তানদের পিতা মাতা! সন্তানদেরকে ভালোবাসার মাধ্যমে দুজনের মধ্যে একটা সেতুবন্ধন তো আছেই।
তোফাজ্জলের বাবার পছন্দে তোফাজ্জল বিয়ে করেছিলেন। বিপরীত স্বভাবের দুজনের মধ্যে কখনোই ভালোবাসাটা তৈরি হয় নি। শুধুমাত্র দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
কিন্তু তাই বলে এত বড় প্রতারণা এটা কিছুতেই হাজেরার মন মানতে পারছে না।
হাজেরার মুখ থেকে শুধু একটা কথাই বের হলো-
—এত বড় প্রতারণা?
তোফাজ্জল বলতে চাইলেন কিছু, তার আগেই হাজেরা যেই গতিতে এসেছিলেন সেই গতিতেই চলে গেলেন।
তোফাজ্জল অসহায় ভাবে তার মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন।জালেরা বেগমকেও এই মুহূর্তে অসহায় লাগছে কারণ তাঁর ছেলেকে কোন রকম সাহায্য করতে পারবেন না বলে।যেই সমস্যা তোফাজ্জল নিজেই তৈরি করেছে আর সেটা তাঁর নিজেকেই সমাধান করতে হবে। তিনি দোয়া করছেন এই সমস্যার যেন সুষ্ঠু সমাধান হয়।এখন নওমির উপর হাজেরা ঝাঁপিয়ে পড়বে।তবে যত যাই কিছু হোক জালেরা বেগম নওমিকে রক্ষা করবেন। ওর তো কোন দোষ নেই।আহা বেচারী সে তো জানেই না তোফাজ্জল তার বাবা।তাই নওমির উপর কোন অনাচার তিনি হতে দেবেন না। আর হাজেরা, তোফাজ্জলকে যেই শাস্তি দিতে চায় দিতে পারে কারণ তোফাজ্জলের কর্মফল তো তাঁকে ভোগ করতেই হবে।
জালেরা বেগম বললেন-
—তুমি এহন রুমে যাও। সমস্যা থাইকা পলাইলে তো হইবো না,যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই সমস্যার সামনাসামনি হও, মোকাবেলা কর।
—আম্মা হাজেরা তো আমাকে কোন ভাবেই বিশ্বাস করবে না।
—বিশ্বাস না করবার মতোই কাজ করছ,তো বিশ্বাস করবো কেমনে?
তোফাজ্জল গিয়ে দেখেন বেডরুমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। অনেকবার নক করলেও দরজা খুলল না হাজেরা। ভেতর থেকে কথার কোন উত্তরও দিল না। তোফাজ্জল গেস্ট রুমের দিকে পা বাড়ালো। হাজেরা তার ছেলেদের সাথে যোগাযোগ করে সব কথা বললেন। ছেলেরা পারলে তখনই বাবাকে জেরা শুরু করে দেয়।এর মধ্যে কল ও করে ফেলেছে তারা কিন্তু তোফাজ্জলের মোবাইলটা তাঁদের বেড রুমের ভেতরেই।
হাজেরা তাঁর লাগেজ গুছিয়ে ফেললো।ছেলেরা বলেছে, খুব তাড়াতাড়ি তাদের মাকে তাঁদের কাছে নিয়ে যাবে।
এখন আপাতত হাজেরা তাঁর বাবার বাড়ি চলে যাবেন সকালে।যদিও তার বাবা মা বেঁচে নেই,ভাই আছে ওখানেই যাবেন। তাঁর মনে হলো যাওয়ার আগে নওমিকে একটা শিক্ষা দিয়ে যাওয়া উচিত।
কিন্তু মেয়েটা তো কিছুই জানে না।কিই বা শিক্ষা দিবেন এই মেয়েকে?এই মেয়ের মা বেঁচে থাকলে একটা কথা ছিল। তাঁর মনে হতে লাগলো এইটা তো মাত্র একটা ঘটনা সামনে এলো, এমন ঘটনা হয়তো তোফাজ্জলের আরো আছে। আর কোন অবৈধ সন্তান না থাকলেও আরো অনেকের সাথে অবৈধ সম্পর্ক হয়তো ছিল আর এখনো হয়তো আছে।এমন একটা লোকের সাথে এত বছর কাটিয়েছেন কিভাবে, কিছু টেরও পেলেন না কখনো?আর না ,আর কোন ভাবেই এই লোকের সাথে থাকা যায় না।এই সংসারটা তাঁর নিজের হাতে সাজানো , গোছানো।টাকা পয়সার ব্যপারে তোফাজ্জল কখনো মানা করেননি।এই বিল্ডিংয়ের সম্পূর্ণ ভাড়া তাঁর কাছেই থাকে। ইচ্ছে মতো খরচ করেন তিনি।যখন যেভাবে ইচ্ছা ঘর সাজান।এটাই হাজেরার একমাত্র শখ।এই সংসার ছেড়ে কিভাবে যাবেন ভাবতেই বুকটা মুচড়ে উঠলো। কি আশ্চর্য বিষয় , মানুষের প্রতি ভালোবাসা না থাকলেও জিনিসের প্রতি তীব্র ভালোবাসা জমে আছে।
তোফাজ্জলের সাথে কোন কথাই তিনি বলবেন না তাঁর চেহারাও দেখতে ইচ্ছে করছে না। তোফাজ্জলকে তিনি ভালোবাসেন না এই কথা কিভাবে মানেন? তিনি তাঁর সন্তানদের বাবা,কত সুখ স্মৃতি তাঁকে নিয়ে। বাসর ঘরে ভয়ে কাঁপছিলেন হাজেরা, তোফাজ্জল অভয় দিয়ে বলেছিলেন,’ভয় পেও না,আমি কি বাঘ না ভাল্লুক,আমাকে ভয় কিসের?’
হাজেরা মুখ ফুটে বলতে না পারলেও মনে মনে বলেছিলেন,’বাঘ,সিংহ দেখলে তো দৌড়ে পালানো যায় আপনি তার থেকেও ভয়ঙ্কর, আপনার কাছ থেকে পালানোর পথ নেই।’অবশ্য তোফাজ্জল সেইরকম ভয়ঙ্কর কিছু করেননি। বরং দুজনের জন্যই সেই রাতটা সুন্দর হয়ে উঠেছিল।’
এখনও স্পস্ট মনে আছে সব কিছু,চোখের সামনে সব কিছু জ্বলজ্বল করে ভাসে।বিয়ের কিছু দিনের মধ্যেই বুঝতে পারলেন তাঁদের চিন্তা ভাবনার মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ। তাঁদের মতের মিল কখনো হয়নি, এই নিয়ে দুজনের মাঝে মাঝে ঝগড়া হতো প্রথম প্রথম। এক সময় দু’জনেই চুপ হয়ে গিয়েছিলেন। তোফাজ্জল ব্যবসার মধ্যে আর হাজেরা সংসারের মধ্যে ডুবে গিয়েছিলেন।নিজেদের মতো নিজেরা থাকতে পছন্দ করতেন। তবুও তো সংসারটা দুজনের।
তোফাজ্জলের নির্ঘুম রাত কাটলো। বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালেন, ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে।এর আগে তিনি ফজরের নামাজ আদায় করেছেন,আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছেন, নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। আগে তো এমন ছিলেন না,কতটা দৃঢ় মানসিকতা সম্পন্ন ছিলেন তিনি তবে কি বয়স জানান দিচ্ছে, তার উপস্থিতি।এই এক রাতে তাঁর বয়স যেন এক লাফে অনেক বেড়ে গেছে। যতটুকু বুঝতে পারছেন হাজেরা আজ চলে যেতে চাইবে। তবে ওকে আটকানোর সর্বাত্বক চেষ্টা তিনি করবেন। এই জন্য লিভিং রুমে বসে আছেন,গেলে তো এইদিক দিয়েই যেতে হবে।সন্তানরা কি বলবে সেটার জন্যও তিনি প্রস্তুত হয়ে আছেন । সারারাত ভেবেছেন।যা হবার হবে সবকিছুর জন্যই প্রস্তুত আছেন তিনি।
হাজেরা বড় একটা লাগেজ টানতে টানতে এলেন।
তোফাজ্জলকে দেখে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলেন।
তোফাজ্জল সামনে এসে দাঁড়ালেন-
—এভাবে তুমি চলে যেতে পার না।
—আমি কোন কথা বলতে চাই না।
—কথা বলতেই হবে ,এভাবে চলে যেতে দেবো না।যা শুনেছ আরো কিছু শোনার বাকি আছে।
—থাকবেই তো,আরো কত জনের সাথে তোমার সম্পর্ক সেই সব শোনাতে চাও?
—একটা ভুলের জন্য এত বড় অপবাদ দিও না।
তুমি বসে মাথা ঠান্ডা করে আমার কথা শোন একটু।
—মাথা আমার ঠান্ডাই আছে।এখানে আর এক মুহূর্তও না।
—এটা তোমার সংসার। নিজের হাতে গোছানো এই সংসার ফেলে যাবে কোথায়? বরং আমিই চলে যাই। আমার ভুলের শাস্তি তো পেতেই হবে।
—আমার ছেলেদের কাছে চলে যাচ্ছি খুব তাড়াতাড়ি।
—ওদেরকেও সব কিছু জানিয়েছ? আচ্ছা জানাও, তাতেও যদি তোমার একটু শান্তি হয়।
—তোমাকে আমি সুখি করতে পারিনি এই জন্য ক্ষমা করো।
এই কথাটা বলতে গিয়ে হাজেরার গলা ধরে এলো। তোফাজ্জল একেবারে কাছে এসে হাজেরাকে জড়িয়ে ধরলেন।
—আমাকে ক্ষমা কর হাজেরা। তোমার কাছে ক্ষমা চাই।
এভাবে গভীর আলিঙ্গনে আবদ্ধ হাজেরা কাঁদতে থাকলেন।একটু শান্ত হলে বললেন-
—তোমাকে ক্ষমা করতে পারলে আবার আসবো। মনে ঘৃণা নিয়ে এক ছাদের নিচে বসবাস করা যায় না।এখন আমাকে যেতে দাও।
তোফাজ্জলের আলিঙ্গন হালকা হয়ে গেল।
—আচ্ছা যাও,তখন সব কিছু আর হয়তো আগের মতো থাকবে না।
—যা কিছু সত্যিই আমার, আমার জন্য সেটা, এখন হোক আর পরে হোক আগের মতোই থাকবে।আর যা আমার না সেটা থাকা না থাকা সমান কথা।
—আচ্ছা তবে যাও।ড্রাইভারকে কল দিয়েছ?
—না।ভাইয়া গাড়ি পাঠিয়েছে।
—ও আচ্ছা!
—তুমি প্লিজ আমার পেছন পেছন এসো না।
চোখ মুছতে মুছতে হাজেরা বেরিয়ে গেলেন।
তোফাজ্জল ধপাস করে বসে পড়লেন।
কি আশ্চর্যের বিষয় !দেখা হলো তো হলো তাও আবার নওমির সাথে। হাজেরার সাথে নওমির সিঁড়িতে দেখা।মনে প্রাণে মেয়েটাকে ঘৃণা করতে চাইলেন কিন্তু কিছুতেই তা পারছেন না হাজেরা। নওমি সালাম দিল মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে। উত্তর দিবেন না ভাবলেও তাঁর মুখ থেকে উত্তর বেরিয়ে গেলো।
—আন্টি কোথাও বেড়াতে যাচ্ছেন?
—হু,ছেলেদের কাছে যাবো কানাডায়।
—ও আচ্ছা।আঙ্কেলও যাচ্ছেন?ভালো লাগবে ঘুরে আসেন।
—তোমার আঙ্কেল যাচ্ছে না।আমি একাই যাচ্ছি।
তুমি ভার্সিটিতে যাচ্ছ?
—জ্বী।
—একটা কথা জিজ্ঞেস করি তোমাকে?
—কি কথা আন্টি?
—তোমার মা কিভাবে মারা গিয়েছিলেন?
নওমির মুখটা মলিন হয়ে গেলো এই কথা শুনে।
—মা অনেক দূর্বল হয়ে যাচ্ছিলো দিন দিন। গ্রামের ডাক্তার বলেছিল রক্তশূন্যতা।
—তুমি আমার সাথে চল। তোমাকে ভার্সিটিতে নামিয়ে দেই।
—না না আন্টি আপনার কষ্ট করতে হবে না।
—যা বলছি শোন,গল্প করতে করতে যাবো।
দারোয়ান এসে হাজেরার লাগেজটা উঠিয়ে দিলো গাড়িতে।
—নওমি তুমি খুব লক্ষ্মী একটা মেয়ে। আচ্ছা বল তো তোমার পড়ার খরচ কিভাবে চলে?
—একজন সাহায্য করেন?আমি জানি না কে উনি।
—তুমি জান না কে সে?
—না।মামা বলেছেন,ঐ লোক নিঃশব্দে সাহায্য করেন। নিজের নাম অন্য মানুষ জানুক সেটা চান না।
—ও আচ্ছা। কিন্তু কোন স্বার্থ ছাড়া কেন কেউ প্রতিমাসে এতগুলি টাকা তোমাকে দেবে? এই কথা একবারও চিন্তা করেছো?
—করেছি, অনেকবার চিন্তা করেছি।মামাকে অনেকবার জিজ্ঞেসও করেছি। মামা বলেছে ওই লোক অনেক ধনী ব্যক্তি। এই টাকা ওনার কাছে কিছুই না। এতে ওনার কোন স্বার্থ নেই।
তোমার বাবার কি হয়েছিলো?
—ক্যান্সার।
—ও আচ্ছা।
—তোমাকে যদি দেশের বাইরে পড়তে পাঠানো হয় তুমি কি যাবে?
—আমি?আমি কিভাবে যাবো আন্টি?
—আমার শাশুড়ি, আমার হাসব্যান্ড তোমাকে খুব পছন্দ করে।আমি তোমার জন্য কিছু করতে চাই।
তুমি যদি চাও আমিই ব্যবস্থা করবো।
নওমির খুব জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করলো আপনি আমাকে পছন্দ করেন না? কিন্তু জিজ্ঞেস করতে পারলো না।
—আন্টি আপনি কেন আমার জন্য এত কিছু করবেন?
—ধর এমনিই করবো।
— একটু আগে যে আপনি বললেন স্বার্থ ছাড়া কেউ কিছু করেনা।
—আর তুমিও তো বললে ওই লোক তোমাকে সাহায্য করে কারণ ঐ লোকের অনেক টাকা। তোমাকে যে পরিমাণ টাকা দেয় সেটা উনার কাছে কিছুই না। আর তোমাকে দেশের বাইরে পাঠাতে যেই টাকা লাগবে আমার কাছে ঐ টাকার পরিমান খুব বেশি না। আল্লাহ আমাকে অনেক দিয়েছেন। আমার বাবার কাছ থেকে অনেক পেয়েছি আর তোমার আঙ্কেলও যথেষ্ট পরিমান অর্থ-সম্পদ আমার নামে দিয়েছে।
হঠাৎ হাজেরার মুখে এমন কথা শুনে নওমি কি বলবে বুঝতে পারছেনা। সে ভাবতে লাগলো দেশের বাইরে পড়তে যাওয়া অনেকের কাছেই একটা বিরাট স্বপ্ন। এমন স্বপ্ন অনেকেই দেখে কিন্তু সে কোনদিন ভুলেও এমন স্বপ্ন দেখেনি। তার মনে হতো এমন স্বপ্ন দেখা বিরাট এক বিলাসিতা যেটা তার মত মানুষের পক্ষে কোনদিনও পূরণ হওয়া সম্ভব নয়। এতদিন হাজেরা সম্পর্কে তার ধারণা ছিল এই মানুষটা টাকা ছাড়া কিছুই বোঝে না, শুধু তার ধারণাই না এটা এই বিল্ডিং এর সবারই ধারণা হাজেরা সম্পর্কে।একদিন পারু আন্টি এমনটাই বলছিলেন। কারণ প্রত্যেক ভাড়াটিয়ার ঠিক সময় মত ভাড়া দিতেই হবে, বাসার একটা জিনিস নষ্ট হয়ে গেলে ভাড়াটিয়াদের নিজের টাকায় ঠিক করে নিতে হয় বাড়িওয়ালী ঠিক করে দেয় না। এত হিসাব করে চলে যে মানুষ সেই মানুষ তাকে দেশের বাইরে পড়তে পাঠাতে চায় এই কথা কোনভাবেই বিশ্বাস করতে মন চাইছে না। হাজেরা কে দেখে মনে হচ্ছে উনি খুব কেঁদেছেন এখনো চোখ বন্ধ করলে টুপ করে চোখ থেকে পানি পড়বে।বড় কোন সমস্যা হয়নি তো? তাঁকে দেখে নওমির কেন যেন খুব খারাপ লাগছে।
হাজেরা নিজেই অবাক হয়ে যাচ্ছেন নওমিকে তিনি কেন ভার্সিটিতে পৌঁছে দিচ্ছেন কেনই বা দেশের বাইরে পড়তে যাওয়ার কথা বলছেন?
চলবে…
#ফাহমিদা_লাইজু
#৫ম_তলার_মেয়েটা
#পর্ব_২৩
হাজেরা অসম্ভব ঘামছেন আর তাঁর দম বন্ধ বন্ধ লাগছে। গাড়ীর গ্লাস সব খুলে দেয়া হলো। তবুও খারাপ লাগছে হাজেরার। হাজেরা নওমির হাত চেপে ধরলো যেন একটু উষ্ণতা পাবার চেষ্টা। নওমিও আরেকটা হাত হাজেরার হাতের উপর রেখে বোঝাতে চাইছে আমি আছি তো।নওমি বুঝতে পারলো হাজেরার খুব কষ্ট হচ্ছে।কষ্টে হাজেরার চোখ,মুখ কুঁচকে যাচ্ছে বারবার।
ড্রাইভারকে নওমি বলল-
—মামা একটা হসপিটালে নিয়ে চলেন, যেইটা সব চেয়ে কাছে হয়।আন্টিকে এখনই ডাক্তার দেখাতে হবে। তাড়াতাড়ি।
ড্রাইভার, হাজেরার ভাই হাফিজকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিলো।উনি চলে এলেন।
নওমি কিছু করতে পারবে না জেনেও অপেক্ষা করতে লাগলো।তার কিছুতেই হাসপাতালের বাইরে পা রাখতে ইচ্ছে করছিল না।ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে হাজেরার ভাই সব কিছু ব্যবস্থা করলেন।
ড্রাইভার, নওমিকে দেখিয়ে হাফিজকে বলল-
—স্যার উনি ম্যাডামের সঙ্গে ছিলেন। উনিই বলেছিলেন তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে আসতে।
হাফিজের চোখে কৃতজ্ঞতা।
হাফিজ বললেন –
—তুমিই তাহলে হাজেরার সাথে ছিলে? খুব ভালো করেছ হসপিটালে তাড়াতাড়ি নিয়ে এসেছ।ডাক্তার বলল ,দেরি হলে অনেক খারাপ কিছু ঘটে যেতো।
কিন্তু আমি তোমাকে চিনতে পারছিনা।কে তুমি বলো তো।
—আমি নওমি।আন্টিদের ৫ম তলায় থাকি।
এবার হাফিজের চোখের রং পাল্টে গেল। ধমকের স্বরে বলতে লাগলেন-
—তুমিই নওমি? তোমার জন্যই হাজেরার এই অবস্থা! তোমার সাহস কি করে হয় ,এখনো দাঁড়িয়ে থাকার?
নওমি একেবারে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। অসম্ভব ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পরল। কেন এই লোক তার সঙ্গে এমন করছে বুঝতে পারলো না।
তার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে যাচ্ছিলো।
—এই মেয়ে তোমার বাবা কই?
নওমি আমতা আমতা করতে লাগল।
—আমার বাবা.. আমার বাবা তো অনেক আগেই মারা গেছে।
এবার হাফিজের মনে পড়লো মেয়েটা তো কিছুই জানে না। অতিরিক্ত রাগে মাথা গুলিয়ে গেছে তাঁর।
এমন সময় সে দিক দিয়েই হেঁটে আসছিলেন স্বর্ণার বাবা।নওমিকে দেখতে পেয়ে কাছে এলেন-
—আরে নওমি মা!তুমি এখানে? তোমার কোন পেশেন্ট এখানে ভর্তি আছে?
নওমি কথা বলতে পারছিল না।
স্বর্ণার বাবা ডাঃ সিরাজুল ইসলাম নওমির মাথায় হাত রেখে বললেন-
—আরে মা কাঁদে না। আল্লাহতালা রোগ দিয়েছেন তিনিই ভালো করে দিবেন।
তিনি ভাবছেন নওমি কাঁদছে তার আত্মীয় অসুস্থ বলে। ডাক্তার সিরাজুল ইসলাম একজন হার্ট স্পেশালিস্ট।ডাক্তারের পেছনে একদল ইন্টার্ণ ডাক্তার।
ডাক্তার সিরাজুল ইসলাম হাফিজের সাথে কথা বলে হাজেরার অবস্থা জেনে নিলেন।হাজেরা বেগমের জরুরী কিছু টেস্ট করা হচ্ছে এর পরেই বোঝা যাবে প্রকৃত অবস্থা। সন্দেহ করা হচ্ছে হার্টের কোন সমস্যা।এর আগে কখনো হার্টের সমস্যা বুঝতে পারেননি তবে ব্লাড প্রেসার সবসময় হাই থাকত। ডাঃ সিরাজুল ইসলাম উনাকে বললেন, এখন উনি রাউন্ডে আছেন। একটু পরেই হাজেরা বেগমকে দেখতে যাবেন।
সিরাজুল বললেন-
—নওমি তুমি বাসায় চলে যাও। এখানে শুধু শুধু থাকবে। পেশেন্টের সঙ্গে দেখা করতে পারবেনা।
উনার জন্য দোয়া করতে থাক।ও জানা হলো না তো উনি তোমার কে হন?
—আমার বাড়ীওয়ালা আন্টি।
ডাক্তার মনে মনে কিছুটা অবাক হলেন, বাড়িওয়ালির জন্য নওমি এভাবে কাঁদছে!
স্বর্ণার বাবা ডাঃ সিরাজুল ইসলাম অনেক ভালো একজন মানুষ। বেশ কয়েক বার ওদের বাসায় গেলেও ওর বাবার সঙ্গে দেখা হয়েছে হাতে গোনা দুই বার। তাতেই উনি নওমিকে মনে রেখেছেন! তার মানে কি তাশফি যে তার মাকে তার কথা বলেছিল।তার মা নিশ্চয়ই ডাক্তার সিরাজুল ইসলামকে বলে দিয়েছেন নওমিকে তাঁদের ছেলে পছন্দ করে।
হসপিটাল থেকে বের হয়ে নওমির এলোমেলো লাগছে।এখন আর ভার্সিটিতে যাওয়ার মানেই হয় না ,ইমপোর্টেন্ট ক্লাসগুলো শেষ হয়ে গেছে। হঠাৎ মনে হলো বাড়ীওয়ালা আঙ্কেল তো এলো না, তাঁকে কি খবর দেয়া হয়নি? কিন্তু নওমির কাছে তো উনার নাম্বার নেই। দারোয়ানের নাম্বার আছে। দারোয়ানকে জানালেই খবর পৌঁছে দিবে বাসায়।
নওমি দারোয়ানকে ফোন করে সব কিছু বলল। আর খুব তাড়াতাড়ি খবরটা পৌঁছে দিতে বলল।
নওমির এলোমেলো ভাবে হাঁটছে, তার মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না হাজেরার ভাই কেন তাকে এমন ভাবে ঐ সব কথা বলল। কেন তাকে দোষারোপ করছে। হাজেরার অসুস্থ হওয়ার পেছনে সে কিভাবে দায়ী হতে পারে?আর তার বাবার কথাই জিজ্ঞেস করলো কেন? এমনভাবে বলল যেন তার বাবা বেঁচে আছে।কি জানি, কিছুই বুঝতে পারছে না।
বাসায় যাওয়ার সময় দোতলায় একবার দেখা করে যাবে ঠিক করলো ।দাদু তো নিশ্চয়ই আছে। কিছু হলেও তো বুঝতে পারবে।বাড়ীওয়ালার বোন জামাই রশিদের ঘটনার জন্যই কি তাকে দোষারোপ করছে তাঁরা?এটা নিয়েই কি বাসায় ঝামেলা হয়েছে?আর বাড়ীওয়ালা আন্টি রাগ করে চলে যাচ্ছেন? এমনটা হলে খুব খারাপ হবে।সে তো এমন কিছু করেনি যে তাকে দোষ দিচ্ছে।তার মামা হোসেন কি কিছু বলেছে তাদের?হাজারো চিন্তা নওমির মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল।
নওমির মাথাটা কেমন ভোঁতা হয়ে আছে।কারো সাথে কথা বললে মনে হয় ভালো লাগতো।তাশফিকে কল দিলো সে।
নওমি এই প্রথম তাশফিকে কল দিলো।তাশফি কল দিলে সে কথা বলে।কখনো তাশফিকে সে কল করেছে কিনা মনে করতে পারলো না। তাশফি খুব অবাক হয়ে জানতে চাইলো-
—নওমি তুমি ঠিক আছ?কোন সমস্যা হয়নি তো?
—না কোন সমস্যা হয়নি,ঠিক আছি।
—তুমি কি কাঁদছিলেন?আমাকে সত্যি করে বল তো কি হয়েছে?
—আমার ল্যান্ডলর্ড হসপিটালে।আমি এতক্ষণ সেখানেই ছিলাম।
—এই জন্য কাঁদছ?
—এখন কাঁদছি না।একটু আগে কেঁদেছিলাম।
—উনার অবস্থা বেশি ক্রিটিক্যাল?
—জানি না।ডাক্তার বলেছেন ,টেস্টের রিপোর্ট দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন।
—কোন হসপিটালে?
—পি জি -তে। আঙ্কেলের সাথেও দেখা হলো।
—বাবার সাথে দেখা হলো?
—হু
—একদম চিন্তা করো না।সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।
—আমার একদম ভালো লাগছে না।সবাই শুধু আমাকেই দোষারোপ করে।আমি কি করেছি? কারো কোন ক্ষতি তো কোনদিন করিনি।
তুমি বলতে পার সব সময় কেন আমাকে সবাই দোষারোপ করে?
নওমি এর আগে কখনো তাশফিকে তুমি করে বলেনি।তুমি শুনে তাশফির খুব ভালো লাগছে কিন্তু আবার চিন্তাও লাগছে খুব ,কারণ মনে হচ্ছে নওমি কোন কারণে খুব কষ্ট পেয়েছে।সে এখন নিজের মধ্যে নেই।তার মনের ভিতরে লুকানো কথাগুলোই বেরিয়ে আসছে।
নওমি এখন কোথায় জেনে নিল তাশফি।নওমিকে বলল,’কাছাকাছি কোন কফি শপে গিয়ে ওয়েট কর।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি আসছি।’
—না তোমাকে আসতে হবে না।আমি বাসায় চলে যাচ্ছি।
—নওমি একটু ওয়েট করো প্লিজ।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি আসছি।
অফিসে এই মুহূর্তে অনেক কাজের চাপ। তার পরেও ইমার্জেন্সির কথা বলে দুই ঘণ্টার ছুটি নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে গেলো তাশফি।নওমি এক কাপ কফি নিয়ে আস্তে আস্তে চুমুক দিতে লাগলো।মনে হচ্ছে কোন দুষ্প্রাপ্য জিনিস সে খাচ্ছে । তাড়াতাড়ি কিছুতেই শেষ করা যাবে না। এই সময় কফি শপে তেমন একটা ভিড় নেই। ওয়েটার বার বার জিজ্ঞেস করছে আর কিছু লাগবে কিনা?নওমি একা বসে আছে তাকে ডিস্টার্ব করার জন্যই এমন করছে। আবার দূরে দাঁড়িয়ে দুইটা ছেলে মিলে কি যেন বলছে আর পিট পিট করে হাসছে। নওমির একটু একটু ভয় লাগছে।
নওমির মনে হলো বাসায় চলে গেলেই ভালো হতো। খুব অস্বস্তি লাগছে তার।একা একা কখনও সে এই সব জায়গাতে আসেনি। এইজন্য হয়তো আরো বেশি ভয় আর অস্বস্তি লাগছে। এখন মনে পড়লো তাশফির তো অফিস আছে। ছুটি ম্যানেজ করে আসতে হয়তো কষ্ট হবে। শুধু শুধু তাশফিকে কল করতে গেলো।
তাশফি শপের দরজায় দাঁড়িয়ে চোখ বুলিয়ে নিলো ।এর পরে নওমির সামনে বসেই জিজ্ঞেস করল-
—কিছু অর্ডর করেছ?
—এই কফি খেলাম।আর কিছু খাবো না।আপনি কিছু খেতে চাইলে অর্ডার করেন?
তাশফি তাকিয়ে রইল নওমির দিকে।একটা মেয়ে, যাকে সে ভালোবাসে সেই মেয়েটা তার জন্য অপেক্ষা করছে এটা ভাবতেই সে রোমাঞ্চিত হচ্ছে। তাশফি তার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।নওমি এটা খেয়াল করে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিলো।
নওমির কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে।
—তুমি কিছুক্ষণ আগে ফোনে আমাকে তুমি করে বলেছিলে।এখন আবার আপনি করে বলছ কেন?
—আপনার এভাবে অফিস ফেলে আসা ঠিক হয়নি।
—এটা আমার প্রশ্নের উত্তর হলো না।
নওমি মাথা নিচু করে বসে রইলো। খুব সুন্দর মিষ্টি একটা ঘ্রাণ নাকে লাগছে, তাশফির পারফিউমের ঘ্রাণ।তার মনে হতে লাগলো,চুলটা কি ঠিক আছে আমার,আজকের ড্রেসটাও খুব বেশি সুন্দর না, কেঁদে কেটে চোখও মনে হয় ফোলা ফোলা-দেখতে খুব বিশ্রী লাগছে মনে হয়।
আর তাশফি ভাবছে এই মেয়ে কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে বাচ্চাদের মত আদর আদর চেহারা বানিয়ে ফেলেছে। খুব ইচ্ছে করছে গালটা টিপে দিতে। কিন্তু নিজের কথা মনে হতেই, ড্রেসআপ, হেয়ার সব কিছু ঠিক আছে কি না কে জানে।এই প্রথম তাদের ডেটিং।যদিও এটাকে ডেটিং বলা ঠিক হবে কিনা কে জানে। সে এসেছে নওমিকে মানুষিক সাপোর্ট দিতে।এখন ব্যপারটা অন্য রকম লাগছে।ফোনে কথা বলার সময় যেমন মনে হয়েছিল এখন সেই দূঃখী ভাবটা নওমির মধ্যে নেই।ওকে দেখে মনে হচ্ছে খুব লজ্জা পাচ্ছে।
নওমির আসলেই খুব লজ্জা লাগছে।এভাবে তাশফিকে ফোন করা ঠিক হয়নি।কি জানি ভাবছে তাশফি। নিশ্চয়ই খুব নির্লজ্জ মেয়ে ভাবছে।
—নওমি কিছু এটা খাও।মেনু দেখ কি খাবে।
নওমি মাথা ঝাঁকিয়ে মানা করলো।
—এই প্রথম আমরা একসাথে বসেছি, একসাথে দুজনে কিছু খাই।
—তাহলে কফি খাই?
—আচ্ছা ঠিক আছে।
স্বর্ণা আর তাশফি দুই ভাইবোন তাদের লাইফের প্রতিদিনের ঘটনাই কমবেশি শেয়ার করে। এভাবে মুখে মুখে শুনে অনেকটা পরিচিত হয়ে গিয়েছিল নওমি। একদিন স্বর্ণার মোবাইলে ছবি দেখেই ভালোলাগা ঘিরে ধরলো তাশফিকে।এরপর স্বর্ণার সাথে ওর ভার্সিটিতে গেল শুধু নওমিকে দেখতে।
ছবির থেকে ওকে আরো বেশি ভালো লাগলো। এবার যেন ভালোলাগা ঘিরে ধরলো না একেবারে চেপে ধরলো।দম হাঁসফাঁস লাগতে লাগলো নওমির জন্য।
মনে মনে কত কল্পনা করে রেখেছিল প্রথম ডেটিং কেমন হবে, কোথায় হবে, কিভাবে নওমিকে সারপ্রাইজ দিবে। আচ্ছা যা হবার হয়ে গেছে এর পরেও এই সব করা যাবে।
একটা মানুষ কতটা ভালোবাসলে আরেকজনের মন জয় করে ফেলতে পারে , নওমি এটা ভাবলে অবাক হয়ে যায়।তাশফি আর তার বেলায় মেটা হয়েছে ।সেটাই হয়তো ভালোবাসার শক্তি আর সেই শক্তিই নওমিকে ভালোবাসতে শিখিয়েছে তাশফিকে।আজকের আগে তাশফিকে এতটা অনুভব করেনি নওমি।হসপিটাল থেকে বেরিয়ে আর কাউকে না কেনই বা শুধু তাশফির কথা মনে হবে?
নিজের কঠিনতম সময়ে বা দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে মানুষ নিজের অজান্তেই চায় তার সবচেয়ে কাছের মানুষ, ভালোবাসার মানুষ যেন তার পাশে এসে দাঁড়ায়। কিছু কথা না হোক চোখে চোখ রেখে একটু সান্ত্বনা,একটা হাত হাতের উপর রেখে একটু উষ্ণতার পরশ ,এটাই তো যথেষ্ট।
নওমির মোবাইল বেজে উঠলে দেখলো স্বর্ণা কল করেছে।নওমি , স্বর্ণার কাছে ধরা পড়ে গেছে এমন একটা ভাব নিয়ে তার তাশফিকে বলল-
—স্বর্ণা কল করেছে। এখন ওকে আমি কি বলবো?
—আগে দেখো কি বলে? আর যেটা সত্যি সেটাই বলো।
নওমি অবাক হয়ে বলল-
—আমি আপনার সঙ্গে আছি, বসে বসে দু’জন কফি খাচ্ছি এটা স্বর্ণাকে বলবো?
চলবে…
#ফাহমিদা_লাইজু