শুষ্ক_পাতার_ভাজে?১২.

0
1881

শুষ্ক_পাতার_ভাজে?১২.
#লাবিবা_তানহা_লিজা?

মাসুদ পুরো বিরক্ত রায়ানের উপর । তার মধ্যে রোহান শপিং এর দায়িত্ব মাসুদের উপর দিয়েছে । উশখোশ করছে বার বার । রায়ান ব্যপারটা খেয়াল করে । রাতে মাসুদের বাসায় ডিনারের পর বের হওয়ার সময় মাসুদ কে সাথে আসতে বলে । দুজনে ফ্লাইওভার ব্রিজের উপর উঠে । সিগারেটের আগুন ধরিয়ে ফুক দেয় দুজনেই । ধোয়ার সাথে বেরিয়ে যায় বিরক্তি গুলো ।
রায়ান বলে ,” তোর কি হয়েছে রে ? এমন মুড অফ কেনো ? খুশি হস নি আমার বিয়েতে ?”
” তুই খুশি ?”
রায়ান চুপ।
” তৃনলতা ছাড়া তোর কারো সাথে বিয়ে হলে আমি খুশি না । ”
” বার বার কেনো এই একটা নাম বলিশ তুই আমাকে বলতো ? পারবি তাকে এনে দিতে ? আমি হারিয়ে ফেলেছি আমার তৃনলতা কে । হারিয়ে ফেলেছি । ”
“তোর বোকামোর জন্য এসব ।”
” আমি কিন্তু বোকামো করি নি । আমি ছিলাম পরিস্তিতির শিকার । তুই জানবি কিভাবে ? তুই তো এসেছিস অনেক পরে । এসেই আমার মুখে তৃনলতা তৃনলতা শুনে শুনে এখন তোর মনে হয় আমার সাথে তৃনলতাই থাকবে আর কেউ না । ”
” সব থেকে মজার ব্যপার কি জানিস দোস্ত? তোর আর তৃনলতা সম্পর্কের দৌড় কতদূর পর্যন্ত গড়িয়েছে সেটাই জানি না আমি । অথচ যত বার তুই তৃনলতা নামটা বলেছিস ততবার তোর মুখে অদ্ভুদ একটা আলোর ঝলক দেখেছি যা ভেতর থেকে এসেছে । ”
রায়ান হেসে ফেলে ।
” এখনো দেখতে পাচ্ছি । ”
” তৃনলতা কি জানিস ? আমার একটা শান্তির জায়গা । তৃনলতাকে আমি আমার জন্য আকুল হতেই বেশি দেখেছি । একটা মেয়ে এতো ভালোবেসেছিলো আমি এখনো ভেবে শান্তি পাই । তার সেই অফুরন্ত ভালোবাসা পাওয়ার মনে হয় যোগ্য ছিলাম না আমি । তাই সৃষ্টিকর্তাও চায় নি । দমকা হাওয়ায় সব উলট পালট করে দিয়েছে সব । আমার যে তৃনলতা কে খুব প্রয়োজন দোস্ত । ”
” তাহলে তৃষাকে বিয়ে করছিস কেনো ?”
” তৃষার মাঝে আমি তৃনলতাকে দেখতে পাই । তৃষার আচার ব্যবহার পছন্দ ৮০% তৃনলতার সাথে মিলে যায় । তৃনলতা আমাকে জেনেও আমাকে ভালোবেসে বার বার আমার কাছে এসে বলেছে একটু ভালোবাসতে ।
তৃষাও তেমনি একজন যে আমার সম্পর্কে জেনে আমার মেয়েকেও মেনে নিয়েছে আমাকে ভালোবাসার জন্য। আমার উচিত তৃষাকে ভালোবাসা”
” মেনে নিলাম । চল হাটি । ”
দুজনে হাটতে থাকে ব্রিজের উপর দিয়ে । মাসুদ বলে ,
” কবে বুঝেছিলি যে তুই তৃনলতার উপর উইক ?”
” স্টাডি টুরে গিয়েছিলাম পাহাড়ে বড়ারের কাছে । বন্ধুদের সাথে বাজি ধরে বড়ার পাস করার রিস্ক নিয়েছিলাম । জায়গাটা খালি দেখেই কাটাতারের বেডা টপকালাম । তখন ছিলে গিয়েছিলো শরীরের কিছুটা অংশ। কয়েক মিনিট পর বিএসএফ চলে আসে । এসেই গুলি তাক করে গালি দিতে থাকে । কোন মতে প্রান নিয়ে যখন দৌড়ে এপাশের ভিতর দিকে চলে এলাম তখন আমি ব্যথায় কাতরাচ্ছি । চোখ দিয়ে পানি পড়ছে । বন্ধুরা চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিয়েছে । এর মধ্যেই গালে নরম দুটো হাতের ছোয়া পাই । তাকিয়ে দেখি আর্তনাদ করে কাদছে আমার তৃনলতা । ব্যথা যেনো আমার নিমেষেই দূর হয়ে যায় । কাদতে ভুলে যাই আমি । তৃনলতার কান্না , সেবায় সব ভুলে যাই আমি । চিরে যাওয়া জায়গায় যখন পানি দিচ্ছিলো তখন আরে জালা করে । ডক্টর যখন অষুধ লাগাচ্ছিলো তখন আরো জালা করে । তৃনলতাকে বুকে মুখ গুজে যন্ত্রনা সহ্য করছিলাম আমি । সেই প্রথম আর শেষ বারের মতো আমার তৃনলতাকে আকড়ে ধরা । তার পর থেকে আমার তৃনলতা ছাড়া অন্যকাউকে সহ্য হতো না । মেয়েটা আমার সামনে আসতো কম । কিন্তু আমিই যেনো দেখার জন্য ছটফট করতাম । বড্ড উইক হয়ে পড়েছিলাম । উইক হয়েই বা কি লাভ হলো ? যখন সব ছেড়ে লিনার সাথে ব্রেকাপ করে তৃনলতার কাছে আত্মসর্পন করতে চাইলাম তখনিতো ঝড়টা উঠলো । একটাই আফসোস কি জানিস ? কখনো বলতে পারিনি যে তৃনলতা তুমি ঠিক ই আমার হৃদয়ে হানা দিয়ে কেড়ে নিয়েছিলে আমাকে । ”
” বাসায় চল । অনেক রাত হয়ে গেছে । ”
সেদিন বাসায় গিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে ছিলো কতক্ষন । জীবনের কি রুপ! একটা অবহেলা করা ভালোবাসা তার অবহেলার জবাব দেওয়ার জন্য বার বার স্মৃতিতে ফিরে ফিরে আসে। অথচ একজনের সাথে রিলেশন ছিলো তাকে বিয়ে করে সংসার ও হলো , ফুটফুটে একটা মেয়েও হলো , সংসারটা ভালোবাসায় ভরপুর ও ছিলো কিন্তু হায় তার কথা একটি বারের জন্য মনে পড়ে না । আজ বাদে কাল যার সাথে বিয়ে হবে যার সাথে দুই বছর থেকে রিলেশন যে তাকে এতোটা ভালোবাসে তার কথা মনে পড়ে না একটি বারের জন্য । অস্থির লাগছে রায়ানের । এই অস্থিরতা কাটানোর জন্য তৃষাকে প্রয়োজন । ফোন দেয় তৃষার ফোনে । দু বার রিং হওয়ার পর ও যখন রিসিভ না হয় তখন রায়ান ধরেই নেয় তৃষা ঘুমুচ্ছে । ডায়রিটা হাতে তুলে নেয় রায়ান । একের পর এক পৃষ্টা উল্টোতে থাকে । সেদিনের শেষ করা পৃষ্টার পরের পাতা পড়ে
” আমি জানি তুমি সত্যিই আমাকে ভালোবাসো । কিন্তু সব সময় প্রকাশ পায় না ভালোবাসাটা । হয়তো তুমি এমনি । কিন্তু জানো যখন এই ভালোবাসা বিন্দুমাত্র প্রকাশ হয় তখন নিজেকে সব থেকে সুখী মনে হয় । তোমার ছোয়ায় আমার মন শরীর দুটোই জুড়িয়ে যায় । তুমি হয়তো জানো না তুমি অনেক সুন্দর করে জড়িয়ে ধরতে পারো । ”
পরের পৃষ্টায়
” তোমাকে ব্যান্ড গুলো জানিয়ে দিলাম যেগুলো আমি ইউজ করি । আলতার ব্যান্ডের কথা ভুলে গেলে অনেক কাদবো কিন্তু আমি । আমি চাই বিয়ের পর প্রত্যেকদিন তোমার হাতে পায়ে আলতা পড়তে । আলতা রাঙা পায়ে যখন চুমু দিবে তখন মুখ ঢেকে রাখবো কিন্তু হাত দিয়ে। ভীষন লজ্জা লাগবে আমার।”
এটুকু পড়েই হাসে রায়ান । তৃষাকে এতো এতো কসমেটিকস কিনে দিয়েছে যে কোন নাম ই মনে নেই আর পাগলীটা আলতায় পড়ে আছে । পরের পৃষ্টায়-
” হিরোর মতো দেখতে হওয়ায় অনেক মেয়েই তোমার পিছে পড়ে থাকে । রুপ দেখে হয়তো তুমিও দুর্বল হয়ে যাও । এতে আমার কোন অভিযোগ নেই । যতদিন উড়বে ততোদিন আমি উড়তে দিলাম আমি । যেদিন পুরোপুরি আমার হবে তখন থেকে পুরোটা আমারি থাকবে । আমি জানি এখনো তুমি আমার । তোমার গার্লফ্রেন্ডকে পেছনে ফেলে আজ বা কাল আমার কাছেই আসবে । অপেক্ষায় রইলাম । ”
ঘুম এসে গেছে ক্লান্তিতে দুই চোখে । ডায়রিটা বন্ধ করে বলে ” তুমি জিতে গেছো তৃষা । আর আমিও হাপিয়ে গেছি । চার পাচঁটা মানুষের মতো আমিও স্বাভাবিক জীবন চাই । ”

চলবে?
{ আজ ছোট করে দিতে হলো । কাল বড় করে দিবো ইনশাআল্লাহ । ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন ।}

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here