সংসার #পর্বঃ ১

0
2357

#গল্পঃ সংসার
#পর্বঃ ১
#লেখাঃ কামরুল ইসলাম ইথান

দ্বিতীয় বারের মত আজ আমার বিয়ে হয়েছে। তাও আবার, প্রথম স্বামীর মৃত্যুর বছর না ঘুরতেই। আমাকে দুই ননদ বাসরঘরে বসিয়ে দিয়ে গেছে। বাসর ঘরটা ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজানো, যদিও এই সৌন্দর্য আমার কাছে অর্থহীন। সেই সকাল থেকে বসে আছি, কোমর টা ব্যথা করছে। একটু হাটা হাটি করতে খাট থেকে নামলাম। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আয়নায় নিজেকে লক্ষ করলাম, আজ খুব সুন্দর লাগছে কিন্তু প্রথমবারের মত না।

শুভর সাথে ৩ বছর প্রেম করে বাবা মায়ের মতামত নিয়েই বিয়ে করেছিলাম। প্রথম বাসর রাতে চোখে লজ্জা ছিলো। কিন্তু শুভর ভালোবাসার ছোয়ায় সব ভুলে গিয়েছিলাম। আজ আমার দ্বিতীয় স্বামীর বাসর ঘরে শুভর কথা মনে পড়ছে, হায় রে জীবন। হঠাৎ কার যেন পায়ের শব্দ পেলাম। ছুটে খাটে উঠে বসলাম। নতুন বউ যেহেতু এভাবে ত আর ঘোরাঘুরি করতে পারি না।

বাবা খুব অসুস্থ ছিল বলতে গেলে মারাই যাবে কিন্তু মারা যাবার আগে আমার খুশি দেখতে চায় সে। তাই ছোট চাচা আমার জন্য ছেলে খুঁজে বিয়ে দিলো তাও এক সপ্তাহের মধ্যে! শুনেছি ছেলেটা নাকি বিয়ে করেনি, ছেলেটার এটা প্রথম বিয়ে। তাই আমি বিয়েতে একটু অমত করেছিলাম।

চেয়েছিলাম যার স্ত্রী মারা গেছে এমন কাউকে বিয়ে করতে সে হয়তো হারানোর ব্যথা বুঝবে। তাহলে দুজন দুজনকে সান্তনা দিতে পারতাম। এখন কাকে দিব? সে কি আমার কষ্ট বুঝবে? নাকি রাতে শুধু আমার শরীর খুঁজবে আর দিনে কাজের মেয়ে। এসব কথা মাকেও বলেছিলাম। কিন্তু মা তখন বলেছিল,

– জামাই মানেই এমনরে মা, তোকে মানাইয়া লইতে হইবো।
আমিও মাকে উত্তরে বললাম,
– মা শুভ তো এমন ছিল না।
আমার কথা শুনে মা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
– বেশী সুখ কপালে সই না’রে মা তাই আল্লাহ নিয়ে গেলো জামাইবাবাকে।

আমিও মায়ের কথা শুনে চোখের জল ধরে রাখতে পারতাম না। তাই আর কথা বাড়ায় নি তাদের কথানুযায়ী রাজী হয়ে যাই। আমাকে বাবা ছেলের ছবি দেখাতে চেয়েছিল কিন্তু আমিই দেখি নি। অবশ্য ছেলে দেখাও করতে চেয়েছিল আমিই দেখা করি নি। এমন কি ছেলের নাম পর্যন্ত শুনতে চাই নি। বাবা বলেছিল, ছেলে নাকি খুব ভালো। আমাকে অনেক খুশী রাখবে।

আমি আমার মনকে রেডি করলাম, এই দেহ নিয়ে সে যতই মাতুক কিন্তু এই মনে কখনোই ঠায় হবেনা তার। এই মন আর ভালোবাসা শুধুই শুভর জন্য। এসব চিন্তা যখন মাথায় ঘোরপাক খাচ্ছিলো তখন কে যেন দরজা খুলে ভেতরে আসলো? কে আর হবে হয়তো আমার নতুন স্বামী। আমার খুব ভয় লাগছিলো কারণ আজ আমি আর শুভর থাকব না। তারপর সে আমাকে ডাক দিলো,

– তায়্যিবা…
ডাক শুনে আমি চমকে উঠলাম। কারন এটা আমার পরিচিত কন্ঠ। কিন্তু কে সে? আবারও সে ডাক দিলো,

– এই তায়্যিবা?
এবার আমি রীতিমত অবাক! কে ইনি? এইভাবে তো আমাকে শুধু শুভ ডাকতো। এখন আমার শুভর কথা খুব মনে পড়ছিল। চোখেরজল আর ধরে রাখতে পারলাম না। কান্না করতে শুরু করলাম তখন সে এসে আমার কাধে হাত রাখলো। কিন্তু আমি ক্রমশ কান্না করে যাচ্ছি। এক পর্যায়ে আমার মনে হল আমার কাধে টপটপ পানি পড়ছে। আমি কান্না থামিয়ে মাথা উঠিয়ে দেখলাম। ও আমার ক্লাস ফ্রেন্ড ইথান।

স্কুল লাইফ থেকে ওকে আমি ছিনি। ছেলেটা আমাকে ভালোবাসতো, তবে কি সে এখনো আমায় ভালোবাসে? স্কুল কলেজ লাইফে এত অবহেলা করার পরও সে কেনো আমায় বিয়ে করলো? ভার্সিটি লাইফে আমার আর শুভর সর্ম্পক হওয়ার পরই ও ওর পরিবারের সাথে বিদেশ চলে যায়। যদিও ওর হঠাৎ চলে যাওয়াতে আমার খারাপ লেগেছিল।

কিন্তু আজ এমন সময় ওর সাথে আবার দেখা যখন আমি ওর স্ত্রী! এই মুহুর্তে আমি বুঝতেই পারছি না কি করবো। ক্লাস ফ্রেন্ডকে ফিরে পাওয়ার আনন্দে খুশী হবো? না কি নতুন স্বামী হিসেবে ওকে সালাম করবো?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here