#গল্পঃ সংসার
#পর্বঃ ৪
#লেখাঃ কামরুল ইসলাম ইথান
ইথানের কথা শুনার পর কেন জানি মনটা মোচড় দিয়ে উঠলো। নতুন অনুভতি জাগ্রত হলো মনে। এটা কি বন্ধুত্বের প্রতি টান নাকি ভালোবাসা? আজ আমার মনে ইথানের জন্য মায়া তৈরি হলো।
হঠাৎ একদিন জরুরী কাজে ইথান শহরের বাহিরে গেল। আমি যেন একাকিত্ব বোধ না করি তার জন্য ইথান তার ছোট বোন তানহাকে আমার কাছে দিয়ে গেলো। তানহা ক্লাস এইটে পড়ে। অনেক মিষ্টি মেয়ে। ইথান যাওয়ার সময় শুনেছি ইথান তানহাকে বলছে,
– তানহা, তুই কিন্তু তোর ভাবিকে চোখের আড়াল করবি না। কোন কটু কথা বলবি না আর তোর ভাবী একটু অসুস্থ তাই পারলে খাইয়ে দিস।
– ওকে ভাইয়া, তুমি কোন টেনশন করো না।
এদিকে আমি রুমের ভিতর বসে শুনছি। আমি ইথানের কাছে গিয়ে ওকে যে বলবো যে সাবধানে যেয়েও সেই ইচ্ছা থাকা সত্তেও আমি বসে আছি। ইথান চলে যাওয়ার সময় আমার কাছে এসে বলে গেলো,
– তায়্যিবা আমি চিটাগাং যাচ্ছি, আসতে যেতে দুইদিন লাগবে। এই দুইদিন তানহা আর তুমি সাবধানে থেকো।
আমি তখন ওর দিকে না তাকিয়েই বললাম,
– হ্যাঁ, সাবধানে যেও।
ইথান আমার কথা শুনে মুচকি হাসি দিয়ে বের হয়ে গেলো। তারপর আমি আর তানহা বাসায় একা। তানহা খুব ভালো মেয়ে। আমি ওর সাথে গল্প করতে করতে কখন যে সময় কেটে যেতো বলাই যেত না। কিন্তু এমনটা নয় যে আমার ইথানের কথা মনে পড়ে না। হ্যাঁ অবশ্যই মনে পড়ে।
তানহা একদিন ইথানের ওই ডায়রিটা পড়ছিলো যেটা ইথান রোজ রাত্রে লিখে। দেখলাম তানহা ৫ সেকেন্ড পর পর শুধু ডায়েরির পাতা উল্টাচ্ছে। এটা দেখে আমি হাসছিলাম কিন্তু ওর সামনে না, যদি আবার মন খারাপ করে।
মনে হয় তানহা ডায়েরি টায়েরি পড়তে ভালোবাসে না তাই এইভাবে শুধু পাতা উল্টাচ্ছে। আমি তখন ওইখান থেকে রান্নাঘরে চলে গেলাম। তার কিছুক্ষন পর দেখি তানহা আমার কাছে আসলো আর বললো,
– ভাবী, একটা কথা রাখবে।
– কি কথা?
– আগে বলো রাখবে।
– আচ্ছা রাখবো এবার বলো।
– এই যে ভাইয়ার ডায়েরীটা তুমি যখন সময় পাবে তখন একটু কষ্ট করে পড়বে।
– আচ্ছা সময় পেল পড়বো।
– যতক্ষন না পড়বে ততক্ষন কিন্তু ভাইয়াকে দিবে না।
– আচ্ছা দিবো না।
আমি ডায়েরিটা নিয়ে ড্র্রয়ারে রেখে দিলাম। আমার সত্যি বলতে ডায়েরী পড়ার কোন ইচ্ছা নেই।
পরদিন ইথান বাসায় আসলো। বাসায় এসেই চিৎকার দিয়ে বললো,
– এক গ্লাস পানি দাও তো।
আমি এক গ্লাস পানি নিয়ে ওর কাছে গেলাম। আর ইথান তখন বললো,
– তুমি কেন আনলে? তানহাকে বলতে তুমি তো অসুস্থ।
ইথানের কথা শুনে আমার একটু রাগ ই হলো। সাথে সাথে আমিও বললাম,
– একটু কাজ করলে আমি মারা যাবনা।
বলেই চলে আসলাম। পরদিন তানহা চলে গেলো। আমার ইচ্ছা করছিলো ওকে রেখে দিতে। কিন্তু ইথানকে বলতে কেমন যেন লাগছে। কারন ওর বোন যদি ও না রাখে তাহলে আমার কি। তানহা চলে যাওয়ার পর বাসায় কেমন জানি হাহাকার ছেয়ে গেলো।
রাতে শুভর কথা খুব মনে পড়ছিলো। দুইদিন পর শুভর মৃত্যুবার্ষিকী। গত দুইবছর ধরে আমি খিচুড়ি রান্না করে মাদ্রসায় দিতাম। তখন তো শুভর বিধবা স্ত্রী ছিলাম তাই দিতাম। কিন্তু এইবছর আমি ইথানের স্ত্রী কিভাবে দিবো? এইসব ভেবেই কান্না করছিলাম।
#চলবে