#তোমার_ছায়া,পর্ব ৯,১০
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
৯
বোঁচা মিঞা হাতে একটা সু-দর্শন ছেলের ছবি হাতে নিয়ে অন্য হাতে চায়ের কাপে চুমুক দিলো। পাশেই বসে আছে ফারদিন ও তার বাবা।
বোঁচা মিঞা এক টানে চা টা শেষ করে ছবির দিকে তাকিয়ে ফারদিনের বাবাকে বললো,
– এমন ছেলে হাতে পাওয়াটাও ভাগ্যের ব্যাপার। তাকিয়ে দেখেন, একেবারে হিরের টুকরো। তাছারা পূর্ব থেকেই বংশেরও নাম ডাক অনেক। ফারহা মাকে একেবারে রাণীর মতো রাখবে তারা। ফারহা কলেজ থেকে আসার সময় নাকি ছেলে তাকে দেখেছিলো। তাই আপনার কাছে বার বার পাঠাচ্ছে আমাকে। ওদের একটাই কথা, ওরা শুধু ফারহা মাকেই চায় আর কিছু না। তাছারা এমন সম্মন্ধ ও আর পাবেন না।
এর মাঝেই ফারদিন বললো,
– আর পাবো না মানে কি? আমাদের ফারু দেখতে খারাপ নাকি আমাদের ফ্যামিলি খুব দুর্বল? যে এতোই ছোট মনে করছেন আমাকে।
বোঁচা মিঞা দাত কেলিয়ে বললো,
– আরে আরে রেগে যাচ্ছে কেন বাবা? আমি এভাবে বলিনি। বলেছি ছেলে দেখতে শুনতে ভালো, ফ্যামিলি ভালো, জবও ভালো। তাহলে প্রব্লেমটা কি? একটা মেয়েকে সুখে রাখতে হলে আর কি লাগে বলো।
ফারহার বাবা এবার থামিয়ে বললো,
– আচ্ছা আমি বুঝেছি আপনার কথাটা। ছেলে ও তার ফ্যামিলি সম্পর্কে খোজ খবর নিয়েছি আমি। আর মেইন কথাটা হচ্ছে ফারহা এখনো পড়াশুনা করছে।
কথা শেষ হওয়ার আগেই বোঁচা মিঞা বললো,
– আরো ওসব নিয়ে ভাববেন না। বিয়ের পর ওখান থেকেই পড়াশুনা করাবে তারা।
– হ্যা তা ঠিক আছে, তবে আপাতত ইন্টার টা শেষ হোক। এই সময় টা একটু অপেক্ষা করতে বলুন।
– আচ্ছা তাহলে তাই হোক,,,,,
– আচ্ছা আপনি বসুন, আসছি আমি। একটা ফোন এসেছে।
বলেই ফোনটা রিসিভ করে এক পাশে চলে গেলো ফারদিনের বাবা। ফারদিন বোঁচা মিঞার পেশে গিয়ে বললো,
– আচ্ছা আপনার নামটা কে রেখেছে বলুন তো। বোঁচা আবার কারো নাম হয় নাকি?
লোকটা হো হো করে হেসে বললো,
– অনেক কাহিনি আছে বাবা। আমার জন্মের আগে নাকি আমার চার টা ভাই/বোন মা/রা গেছে। যার কারণে আমি জন্ম নেওয়ার পর আমার নাম রাখা হয় বোঁচা। যেন আমার কিছু না হয়। এর পর আমার ছোট ভাইয়ের নাম রাখা হয় পঁচা।
– তো এসব নাম রাখলে কি হয়?
– জানিনা আমি, ছোট বেলায় দাদির কাছে শুনেছিলাম।
– ওহ্ আচ্ছা।
কলেজ ও কোচিং শেষ করে বাসায় ফিরতে ফিরতে বিকেল হয়ে গেলো ফারহার। এসে একটা লোক ও বাবা আর ভাইকে দেখে কিছুক্ষন থমকে দাড়ালো। এর পর সালাম দিয়ে ভেতরে চলে গেল সে।
সন্ধার পর ফারদিনের কাছে গিয়ে ফারহা বললো,
– লোকটা কে ভাইয়া?
– কোন লোকটা?
– ওই যে বিকেলে এসেছিলো?
– ওহ্ ঘটক, তোর জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলো। কেন মা কিছু বলেনি তোকে?
– কই না তো? আমাকে না জানিয়েই তোমরা আমার বিয়ের কথা বার্তা বলছো?
– আরে না, কে বললো তোকে?
– তা তো দেখতেই পারছি। মেয়ে বলে কি আমার নিজের মন মতো মত দেওয়ার কোনো অধিকার নেই?
– আছে তো, আর আমরাতো বলিনি তোর অমতে কিছু হবে। কয়দিন দরে এক জায়গা তেকে বার বার প্রস্তাব পাঠাচ্ছে তাই বাসায় ডেকে বিস্তারিত জানলো বাবা। ছেলে নাকি আর্মি অফিসার। বাবারও হয়তো পছন্দ হয়েছে ছেলে। তবে এখন কিছু বলেনি। আগে তোর এক্সাম শেষ হোক এর পর সব কিছু বিবেচনা করে কথা এগিয়ে নিবে।
– বাহ্, সময় ও ঠিক করে ফেলেছে সবাই? আর আমাকে একটি বার জানালেও না তোমরা?
ফারহা ুত্তেজিত হয়ে যাচ্ছে দেখে ফারদিন বললো,
– আরে পাগলি বোন আমার, তুই বিষয়টা যেমন ভাবছিস, বিষয়টা আসলে তেমন না। আমরা বলতাম তোকে। এখন যাস্ট প্রস্তাব এসেছে, বেশি কিছু না। তাই এতোটা সিরিয়াসলি নিই নি।
– এক্সামের পর কথা বার্তা আগাবে বলছে, আর তুমি বলছো সিরিয়াস না?
– আরে আবারও ভুল বুঝছিস তুই।
আর কিছু না বলে মায়ের রুমের দিকে গেলো ফারহা।
– তোমরা আমাকে না জানিয়ে আমার বিয়ের কথা বলছো কেন মা?
মেয়েকে পাশে বসিয়ে হাসি মুখে বললো,
– কই বিয়ের কথা বলছি? যাস্ট প্রস্তাব এসেছে।
– আমি এখন বিয়ে করতে চাইনা মা।
– আরে ধুর পাগলি। প্রস্তাব আসলেই বিয়ে হয়ে যায় নাকি?
– আমি এতো কিছু যানি না। আমি বিয়ে করবো না মানে না।
– আচ্ছা তুই চিরকুমারি থাকিস। এবার শান্ত হ।আর বাড়ির সামনে বড়ই গাছ থাকলে লোকে ঢিল মারবে এটাই স্বাভাবিক।
,
,
ফাইনালি টুরে যাওয়ার সেই কাঙ্খিত সময়টা চলে এলো। এই একটা টুর যে ফারহার জীবনটা এমন এলোমেলো করে দিবে তা হয়তো তার চিন্তারও বাইরে ছিলো। নাহলে কি মানুষ বিপদ যেনেও ওই রাস্তায় এগিয়ে যায়? সে নিজেও যেত না। বাট আমরা তো আর ভবিষ্যতে কি হবে তা তো কেউ বলতে পারি না।
সেই টুরে যাওয়ার পর একটা এক্সিডেন্টই তার জীবনকে এলো মেলো করে দিয়েছে।
সন্ধার পর বাসে রওনা দিবে সবাই। পাঁচটা বাস ঠিক করা হয়েছে। সারা রাত গাড়িতে থেকে পর দিন চট্টগ্রাম পৌছাবে তারা। তারপর দুই দিন ব্যাপি এই টুরে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াবে।
সন্ধায় বেগে কিছু কাপর চোপর ও প্রয়োজনিয় টাকা পয়সা নিয়ে কলেজ মাঠের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে গেলো। ফারহা ও ব্যাগে জামা ও নিজের প্রয়োজনিয় জিনিস পত্র নিয়ে নিলো।
তার পর মা বাবার থেকে বিদায় নিয়ে ভাইয়ার সাথে বেড়িয়ে পরলো কলেজ মাঠের উদ্দেশ্যে।
ওখানে গিয়ে দেখে প্রায় সবাই চলে এসেছে। আর আধা ঘন্টা পর রওনা দিবে। আবরারের সাথে কিছুক্ষন কথা বলে ফারহার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো ফারদিন।
ফারহা একটু হেসে বান্ধবিদের কাছে চলে গেলো।
– হেই কখন এলি তোরা?
– অনেক্ষন আগেই এসেছি তোর মতো অলস নই আমরা। আর আধা ঘন্টা লেট করলে আর যাওয়াই হতো না তোর।
– আমি অলস হতে যাবো কেন? আমি সময় মতোই এসেছি। তোদের মতো আগে এসে আজাইরা সময় নষ্ট করি না।
কিছুক্ষন পর স্যার ও টিম লিডার রা এক এক করে সবাইকে গারিতে উঠতে বললো। জিনিসপত্র নিয়ে এক এক করে যার যার সিটে গিয়ে বসলো সবাই। বাসের সামনের দুই তিন সিট পরে বসলো ফারহা ও আয়রিন। আর বাসের সামনের সিটে বসলো আবরার। উঠার পর আয়রিনকে বলে গেলো, কোনো সমস্যা হলে বলবি, আমি এইতো সামনেই আছি।
রাতে আধা ঘন্টা ব্রেক নিয়ে ডিনার করে নিলো সবাই। এর পর আবার গন্তব্যের দিকে ছুটলো সবাই।
ফেনী এসে মহিপাল বাস থামলো তখন রাত প্রায় ১ টা। মহিপাল নামলে দেখে চার দিকে রোড। ফারহা চার পাশে তাকাচ্ছে। আয়রিন বললো,
– এটা হলো, সোনাগাজির রোড, এটা চট্টগ্রামের রোড। এটা ঢাকার রোড যেখান দিয়ে আমরা এসেছি।
এক এক করে সব দিন দেখাচ্ছে।
ফারহা হাই তুলতে তুলতে বললো,
– তুই আগে ফেনী এসেছিলি?
– হুম, সোনাগাজিতে আমার এক রিলেটিভ আছে।
ফারহা চার দিকে তাকিয়ে বললো,
– আচ্ছা আয়রিন, এখানে পশ্চিম কোন দিকে?
পাশে আবরার এসে দাড়াতেই হো হো করে হেসে ফেললো,
– এতটুকু আসতেই উত্তর দক্ষিন হারাই ফেললে?
ফারহা কিছু না বলে লজ্জা মাখা চেহারা নিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। কি বা বলবে সে? নতুন কোথাও গেলে যে সে সত্যিই উত্তর দক্ষিন সঠিক ভাবে খুজে পায় না।
নিজেদের প্রয়োজন শেষ হলে চট্টগ্রামের রোডে ছুটলো গাড়ি।
রাত তখন গভির এতোক্ষন হইহুল্লা করে এখন প্রায় সবাই নিশ্চুপ। বাস চলছে নিরিবিলি। হয়তো সবাই ঘুমিয়ে আছে, অথবা কেউ ঘুমানোর ট্রাই করছে। আবরারের ঘুম আসছে না। নিরিবিলি জায়গা ছারা কখনো ঘুম আসে না তার। পেছন ফিরতেই দেখে ফারহা ঘুমাচ্ছে বেঘোর হয়ে। ঘুমন্ত ফারহা আজ যেন অদ্ভুত মায়ার অধিকারি হয়েছে।
কিছুক্ষন এক দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে পুনরায় সামনের দিকে তাকিয়ে থাকে আবরার। নিজেকে মনে মনে সাষাতে থাকে।
– কার দিকে তাকিয়েছিলি বোকা মন, সেও তো বোন লাগে বোন।
To be continue…..
#তোমার_ছায়া (পর্ব ১০)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
চট্টগ্রাম পৌছাতে সকাল হয়ে গেলো তাদের। কারো ডাকে চোখ মেলে তাকায় ফারহা। বাইরে তাকিয়ে দেখে নতুন একটা শহরে এসে পৌছালো। সবে সকাল হয়েছে, ভোরের আলোয় চার পাশটা এখনো পুরোপুরি পরিষ্কার হয় নি।
সব কিছু আগে থেকেই রেডি ছিলো। যার যার ব্যাগ নিয়ে একটা হোটেলে গিয়ে উঠলো সবাই। আজ সারা দিন পাহারি অঞ্চল ঘুরে এর পর দিন কক্সবাজার। এর পর ডিরেক্ট ঢাকা ব্যাক করবে।
ব্যাগ কাধে নিয়ে ফারহা আয়রিন ও সাথি একটা রুমে গিয়ে বসলো।
সকালের নাস্তা শেষে চার পাশ টা ঘুরে ফিরে দেখছে সবাই। সাথি চার পাশটা দেখে বললো,
– জায়গা টা দারুন। সেই সাথে পরিবেশ ও আতিথেয়তা ও খারাপ না। আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না, হাজার টাকা দিয়ে এতোকিছু করা যায়। আবার এর পর নাকি কক্সবাজার। হাজার টাকায় এতো কিছু কেমনে করছে কে জানে।
পাশ থেকে আয়রিন একটু হেসে বললো,
– তোর কি মনে হয়, তোদের সেই হাজার টাকায় এতো কিছু হয়ে যাবে? আরে টাকা গুলো তো নিয়েছে আমাদের টুকটাক খরচের জন্য। বাকি সব তো কলেজের প্রতিষ্টাতা মুমিন আহমেদ চৌধুরিই দিচ্ছে। নাহলে এতো স্টুডেন্ট নিয়ে দুই দিনের টুরে আসা কোনো সহজ কাজ নয়। আমরাই প্রথম যে কলেজ থেকে এত দুর ও দুই দিনের টুরে এসেছি।
পাশ থেকে ফারহা বললো,
– আমার একটুও ভালো লাগছে না। লং যার্নি করলে আমার মথা ঘুরতে থাকে। মনে হয় যেন চার পাশ টা আমার সাথে সাথে ঘুরছে।
আয়রিন একটা হাসি দিয়ে বললো,
– আচ্ছা ফারহা এখন বলতো পশ্চিম কোন দিকে?
ফারহা একটু ভাব নিয়ে উত্তর দিকে দেখিয়ে বললো,
– এই দিকে।
আয়রিন হাসতে হাসতে বলে,
– তাহলে দক্ষিন দিকে কি সূর্য উঠে? তুই পূর্ব দিকের সূর্য দেখেই তো বলতে পারতি পশ্চিম কোন দিকে।
পাশ থেকে সাথি বললো,
– তাকে নিয়ে তুই এতো মজা নিচ্ছিস কেন আয়রিন? সে তো বললোই তার মাথা টা ঘুরছে।
আয়রিন একটু রাগি ভাব নিয়ে বললো,
– আমার ভাবিকে নিয়ে আমি মজা নিবো না তো, কে নিবে? যান ভাবি, আপনি রুমে গিয়ে বিশ্রাম নিন।
ফারহা একটু রেগে বললো,
– উল্টা পাল্টা কথা বললে চ’র খাবি একটা।
,
,
সারা দিন ঘুরে ফিরে সন্ধার আগে হোটেলে ফিরে আসলো সবাই। রাত টা এখানে কাটিয়ে, পরদিন সকালে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিবে। তারপর সন্ধায় ডিরেক্ট ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবে।
পাশেই একটা বড় লিচু বাগান আছে। ওখানেই সময় কাটাচ্ছে অনেকে। তাদের থেকে ঠিক কিছুটা দুরে একটা বেঞ্চিতে বিষণ্ন মনে বসে আছে আবরার।
কলেজে স্যার হলেও এখানে স্যার নয়, কথা বলাই যায়। তাই এক পা এক পা করে আবরারের পাশে গিয়ে দাড়ালো ফারহা। চার পাশের সবাইকে দেখে আবরারকে বললো,
– সবাই কতো আনন্দ করছে, আর আপনি বিষণ্ন মনে বসে আছেন কেন স্যার? মন খারাপ?
আবরার ফারহার দিকে চেয়ে বললো,
– তোমার যেনে কি লাভ?
ফারহা একটু বিরক্তি নিয়ে বললো,
– সব সময় এতো তেঁতো কথা বলেন কেন? আপনি কি কখনো মিষ্টি খান নি?
– খাই তো কেন?
– তাহলে মিষ্টি আর তেতো কড়লার মাঝে পার্থক্যটা নিশ্চই বোঝেন। আচ্ছা আপনাকে যদি একটা পাত্রে তেতো কড়লা আরেকটা পাত্রে মিষ্টি রাখা হয়, তাহলে আপনি কোনটা বেছে নিবেন?
– অবশ্যই মিষ্টি।
– ঠিক তেমনই তেতো কথা কারো পছন্দ না। একটু মিষ্টি করে কথা বলাটাই সকলে পছন্দ করে।
আবরার এক হাতে ইশারা করে থামিয়ে বললো,
– ওয়েট ওয়েট, তুমি কি আমাকে ইনডিরেক্টলি তেতো কড়লার সাথে তুলনা করলে?
ফারকা ছোট্ট করে জ্বিভে কামর কেটে বললো,
– এই না না স্যার, আমি মোটেও এমনটা বলিনি। একটু মিষ্টি করে কথা বলতে বলেছি যাস্ট।
আবরার একটু হেসে বললো,
– চলো আজ তোমাকে ডিরেক্ট মিষ্টি কিছুই খাওয়াবো।
ফারহা একটু অবাক হয়ে বললো,
– কিভাবে?
আবরার রাস্তার দিকে দেখিয়ে দিয়ে বললো,
– ওই যে দেখছো একটা লোক রাস্তায় দাড়িয়ে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করছে।
ফারহা তাকিয়ে বললো,
– হাওয়াই মিঠাই আমার খুব প্রিয়।
– তাই? তাহলে আসো।
আবরার রাস্তায় দাড়িয়ে তিনটা হাওয়াই মিঠাই নিয়ে বললো,
– একটা আয়রিন আরেকটা সাথি কে দিবে। অন্যটা তোমার।
তখনই একটা গাড়ি এসে তাদের সামনে দাড়িয়ে দুজনকেই মুখ চেপে ধরে গাড়ির মাঝে উঠিয়ে নেয়। তারপর কিছু বুঝে উঠার আগেই এক টানে অনেকটা দুর চলে আসে। গাড়িতে বসে ফারহা হেল্প হেল্প বলে চিৎকার করতেই দুইটা ছেলে দুইটা ছু’রি নিয়ে ফারহা ও আবরারের গলায় ধরে বললো,
– আর একবার আওয়াজ করলে ডিরেক্ট গ’লা নামিয়ে দিবো।
ভয়ে ফারহার সারা শরির থর থর করে কাঁপছে। ইতি মধ্যে কপাল জুড়ে চিকন ঘাম দেওয়া শুরু হয়ে গেছে। কি থেকে কি হয়ে গেলো কেউই বুঝতে পারছে না। চিৎকার করতে পারছে না, বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে শুধু।
,
,
বেশ কিছুক্ষন পর একটা জঙ্গলে এসে গাড়ি থামালো তারা। ফারহা ও আবরারের গলায় ছু’রি ধরে দুইজনকে দুইটা গাছের সাথে বেধে নিলো। তারপর একজন তাদের সামনে এসে বললো,
– দুজনের ফ্যামিলি কেই ফোন কর। আর বল আজকের মধ্যে বিশ লাখ টাকা রেডি করতে নয়তো দুজনকে এই জঙ্গলেই পু’তে রেখে দিব।
ফারহা এখনো থর থর করে কাঁপছে। আবরার পাশ থেকে বললো,
– ফ্যামিলি কোথায় পাবো ভাইয়া? আমরা দুই ভাইবোন এতিম খানায় মানুষ হয়েছি। এর পর কলেজে ভর্তি হয়ে কোনো রকম টিউশনি করে পড়াশুনা ও নিজেরা চলি। এই বিশাল পৃথিবীতে আমার শুধু সে আছে আর তার শুধু আমি আছি। বিশ্বাস করুন, আমাদের আপন বলতে আর কেও নেই। আর আপনারা খুজে ফিরে আমাদের দুইজন এতিম ভাই বোনকেই কেন তুলে এনেছেন বলুন।
ছিনতাইকারীর দলের লোকটা বললো,
– একধম মিথ্যা বলতে যাবি না। তোদের দজনকেই দেখে মনে হচ্ছে ভালো ফ্যামিলির ছেলে মেয়ে। কিসব মিথ্যা নাটক করছিস?
আবরার আবারও কাঁন্নার ভান করে বললো,
– মৃ’ত্যুর মুখে দাড়িয়ে মিথ্যা বলবো কেন ভাইয়া? সত্যিই আমরা এতিম।
লোকটা এবার পাশের একটা ছেলেকে থা’প্পর মেরে বললো,
– কিসব ফকির ধরে আনলি? কোনো কাজ ঠিক ভাবে করতে পারিস না। বললাম বড় ফ্যামিলির কোনো ছেলে মেয়ে থাকলে তুলে আনবি। আকাইম্মার দল সব আমার ঘাড়ে এসে চাপে।
এর পর আবরারের দিকে চেয়ে বললো,
– এই চুপচাপ যা আছে তাই বের কর। এই মিলন, যা কি কি আছে সব নিয়ে নে।
মুহুর্তেই কয়েকটা ছেলে এসে তাদের থেকে সব নিয়ে নিতে লাগলো। আবরারের দুইটা ফোন ও ফারহার একটা ফোন। সাথে আবরারের মানিব্যাগ এ পনেরো হাজারের মতো টাকা ছিলো আর ফারহার পার্সে ছিলো দুই হাজারের মতো।
সব নিয়ে তাদের জঙ্গলে ছেরে দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো তারা।
আবরার ও ফারহার কাছে এই মুহুর্তে জামা কাপর ব্যাতিত আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।
চার দিকে খুটখুটে অন্ধকার নেমে এলো। জঙ্গল জুড়ে ভৌতিক পরিবেশ। ফারহা ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে এসে আবরারকে জড়িয়ে ধরলো। আবরার একটু অবাক হলেও বিষয়টা মাথায় নিলো না। বুঝতেই পারছে ভয়ে ফারহা থর থর করে কাঁপছে। আপাতত এখান থেকে বের হওয়ার রাস্তা খুজতে হবে। তাই ফারহাকে ওভাবেই এক হাতে চেপে ধরে জঙ্গলের পথ ধরে হাটা ধরলো সে। বের হতে কতোক্ষন লাগবে কে জানে। কিছুই চিনেনা এখানকার। কাউকে ফোন দিবে, সেই উপায়ও নেই।
কিছুদুর যাওয়ার পর হটাৎ গাড়ি ব্রেক করে দাড়ায় লোক গুলো। একটা ছেলে বললো,
– বস, এতিম ছেলে, টেনে টুনে সব কিছু চালায়। বিষয়টা এমন হলে তারা একসাথে দুইটা ফোন চালানোর কথা না৷ তাছারা দুজনের কাছেই এতো জিনিস আর এতো টাকা, একসাথে পাওয়া যেতো না। আর আরেকটা বিষয় কিন্তু আমরা মিস করে ফেলে যাচ্ছি।
টিমের বস বললো,
– কি জিনিস?
– মেয়েটাকে দেখেছেন আপনি? চিকন চাকন একটা মেয়ে, যেমন চেহারা তেমন তার ফিগার। আর এতো বড় জঙ্গলে তার সাথে শুধু একটা ছেলে। এমন সুজুগ খুব কমই আসে। প্রয়োজনে ছেলেটাকে মে’রে দিয়ে মেয়েটাকে তু’লে নিয়ে সারা রাত পার্টি হলেও তো মন্দ হয় না।
পাশ থেকে আরেকটা ছেলে বললো,
– গুড আইডিয়া।
এর মাঝে টিমের বস বললো,
– গাড়ি ঘুরা, আর সারা জঙ্গলে ছড়িয়ে খুজে বের করবি দুজনকে। মেয়েটাকে আমার চাই।
To be continue…..