তোমার_ছায়া,পর্ব ১৫,১৬

0
893

#তোমার_ছায়া,পর্ব ১৫,১৬
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
১৫

ফারদিন আজ আয়রিনের সামনে এমন স্বাভাবিক আচরণ করছে, দেখে মনে হচ্ছে তার মনে কষ্টের পরিমান টা বালি কণার চেয়েও ক্ষুদ্র।
ওদের দুজনের কথার মাঝে ফারহা বললো,
– ভাইয়া তুমি না ইন্টারভিউ দিয়ে আসলে? নিশ্চই শরির ক্লান্ত তাই না? বাসায় গিয়ে রেষ্ট নাও। আমি কোচিং শেষেই চলে আসবো।
ফারদিন আর কিছু না বলে চুপচাপ ‘হ্যা’ সুচক সম্মতি জানিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

আয়রিন ফারহা সাথি সবাই রওনা দিবো আবরার স্যারের কোচিং সেন্টারে। আইসিটি ক্লাস নেয় আবরার। দুটি ব্যাচ, একটা ফাস্ট ইয়ার, আরেকটা সেকেন্ড ইয়ার।
দুইটা থেকে সেকেন্ড ইয়ারের ব্যাচের ক্লাস শুরু হয়, আর তিনটা থেকে ফাস্ট ইয়ারের।
তারা দ্রুত কোচিং সেন্টারে গিয়ে তাদের তিন জনের একটা নির্দিষ্ট টেবিল আছে ওখানে বসে পরলো। ক্লাস শুরু হতে আর ৫ মিনিট বাকি।
আজ পাঁচ দিন পর কোচিং-এ এসে সবচেয়ে অবাক হয় ক্লাসে ফাস্ট ইয়ারের ছেলে দেখে। তাও আবার সেই জুনিয়র আবরার। হয়তো নতুন ভর্তি হয়েছে সেকেন্ড ইয়ারের ব্যাচ এ।

বেঞ্চে বসে সেই জুনিয়র আবরারের দিকে তাকিয়ে আছে ফারহা। এই ছেলের মতলব টা কি? এখানে তো ফাষ্ট ইয়ারের ছেলে থাকার কথা না। কারণ, প্রতি ইয়ারের সিলেবাস অনুযায়ি ক্লাস হয়।
ফারহাকে দেখেই ছেলেটা আঙুলের ইশারায় ‘হায়’ জানায়। চোখ বড় বড় করে তাকায় ফারহা। এই ছেলে কি এবার এখানেও মান ইজ্জত খাবে নাকি? এখানে তো অন্য কলেজের স্টুডেন্টও আছে।
ছেলেটা হাতের ইশারায় বুঝালো আমি আসছি, ওয়েট।
আর এক মুহুর্ত দেড়ি না করে ফারহার কাছে এসে পাশের একটা বেঞ্চিতে বসে পরে সে। ফারহা একটু ভ্রু কুচকে বলে,
– এই ছেলে, তুমি সেকেন্ড ইয়ারের ব্যাচে কি করছো?
ছেলেটা একটু ভাব নিয়ে বলে,
– সে অনেক কাহিনি। স্যারকে কতো রিকুয়েষ্ট করে বুঝালাম, যে সেকেন্ড ইয়ারের ক্লাস করলে সামনের পড়া গুলোর সম্পর্কেও ভালো আইডিয়া থাকবে। প্রথমে রাজি হচ্ছিলো না। পরে অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছি। আমার পড়ার আগ্রহ দেখে পরে স্যারও আর না করেনি।
ফারহা একটু তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললে,
– পড়ার প্রতি এতো আগ্রহ বেড়ে গেলো কবে থেকে।
ছেলেটা সোজাসুজি ভাবে বললো,
– তোমাকে দেখার পর থেকে। তোমাকে কাছ থেকে দেখার জন্য বাড়তি ক্লাস কেন? সারাদিন ক্লাসে বসে থাকলেও একটু বিরক্ত হবো না।
ফারহা একটু রেগে গিয়ে বললো,
– দাড়াও আমি স্যারকে বলে দিবো তোমার আসল উদ্দেশ্য কি?
ছেলেটা একটু ভাব নিয়ে বলে,
– আমিও সবাইকে বলে দিবো। তোমার সিক্রেট বিষয় টা।
ফারহা এবার একটু থৎমৎ খেয়ে বলে।
– সি,, সিক্রেট বিষয় মানে?
– হিহিহি আমি সব জানি।

কথার মাঝেই আবরার স্যার ক্লাসে চলে আসলো। ফারহাকে আর জুনিয়র আবরারকে একসাথে দেখে বললো,
– যে যার যার টেবিলে গিয়ে বসো।
মুহুর্তেই পুরো ক্লাসের স্টুডেন্ট সব নিরব হয়ে গেলো। এদিকে ফারহার মাথায় ঢুকলো ভিন্ন চিন্তা৷ জুনিয়র ছেলেটা বিষয় টা জানলো কিভাবে?

ক্লাস শুরু হলেই আবরার স্যার ফারহাকে দাড় করালো। কারণ তার ক্লাসে দুই দিনের বেশি কেউই অনুপস্থিত থাকা তার রুল্সের বাইরে। সেই জায়গায় ফারহা পাঁচ দিন। তাই শাস্তি স্বরুপ ক্লাসের বাইরে গিয়ে দাড়িয়ে থাকা।
শাস্তি স্বরুপ চুপচাপ দরজার বাইরে গিয়ে দাড়িয়ে রইলো ফারহা। আবরার ক্লাস নিতে শুরু করলো।
তখনই ক্লাসের মাঝখানে জুনিয়র আবরার দাড়িয়ে গেলো হাতের ছোট কনে আঙুল টা দেখিয়ে। যার অর্থ সে পশ্রাব করতে চায়।
স্যারের অনুমতি পেয়েই বাইরে চলে গেলো। ফিরে এসে ক্লাসে না ঢুকে ফারহার পাশে দাড়ালো। ফারহার পাশে দাড়িয়ে বললো,
– ডেরি মিল্ক পছন্দ করো?
ভেতর থেকে আবরার স্যারের কন্ঠ শোনা গেলো।
– তুমি ভেতরে না এসে বাইরে কি করছো?
একটু গরম লাগছে এমন ভাব নিয়ে ছেলেটা বললো,
– স্যার হুট করে মনে হলো দমটা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই একটু বাইরে স্বস্থির নিশ্বাস নিচ্ছি।
তারপর ছেলেটা আবার ফারহার দিকে চেয়ে বললো,
– দেখো তুমি চকলেট না নিলে আমি সবাইকে বলে দিবো।
বাধ্য হয়ে ফারহা চকলেট নিয়ে বললো,
– হুম খুব পছন্দের এটা।
ছেলেটা একটু গাল টেনে হেসে বললো,
– আমারও এটা খুব পছন্দের। দোখছো, আমাদের মনেরও কতো মিল।

ওদের এমন কান্ড দেখে ক্লাস করানোয় মন বাদ দিয়ে ভেতরে ভেতরে অস্থিরতা শুরু হলো আবরারের। একটা বিরক্তিকর নিশ্বাস নিয়ে ফারহাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– ফারহা যাও, নিজের সিটে গিয়ে বসো।
ফারহা খুশি মনে চুপচাপ ক্লাসে ঢুকে গেলো। পেছন থেকে জুনিয়ার আবরার বললো,
– স্যার, আমিও আসবো?
– না, তোমার আসার দরকার নেই। তুমি বাইরের প্রাকৃতিক হাওয়া খাও।
,
,
রাতের বেলায় খেতে বসলো সবাই। সেই দুপুরে বাসায় ফিরে শাওয়ার নিয়ে খেয়ে দেয়ে শুয়ে থাকলো ফারদিন। তাই বাসায় কোনো কিছু জিজ্ঞেস করেনি কেউ।
খাওয়ার সময় বাবা ইন্টারভিউ’র ব্যপারে জিজ্ঞেস করলে ফারদিন বলে,
– আমি মানা করে দিয়েছি, ওদের জব করবো না আমি।
পাশ তেকে মা বললো,
– মানে কি? তোর বাবা তো আগেই তোর কথা বলে দিয়েছে। ওরা বললো, ইন্টারভিউ তে টিকলেই চাকরি কনফার্ম।
ফারদিন খেতে খেতে বলে,
– হুম বলেছিলো। আর আমি টিকেছিও। স্যালারিও বলেছে ৬০ হাজার দিবে।
– তাহলে না করলি কেন?
– কারণ ওরা ১০ লাখ ঘুষ চায়। ভেবে দেখো ১০ লাখ ঘুষ দিয়ে চাকরিটা নিলে, এক হিসেবে প্রায় দেড় বছর আমাকে বিনা বেতনেই খাটতে হবে ওখানে।
বাবা খেতে খেতে বললো,
– তোকে কি টাকার কথা ভাবতে বলেছি?
– তবুও বাবা, আমি কেন ঘুষ দিয়ে চাকরি নিবো? আমি ভাইবায় ও ভালো করেছি। আমাকে তারা জোগ্য মনে করে সিলেক্ট করেছে। তবুও কেন ঘুষ দিতে হবে আমায় বাবা? হোয়াই? এতো কষ্ট করে লেখাপড়া করলাম কি ঘুষ দিয়ে চাকরি নেওয়ার জন্য?
বাবা আর কিছু না বলে চুপচাপ খেতে লাগলো। মা প্লেটে তরকারি দিতে দিতে বললো,
– একটা চাকরি ছারা তোর কাছে কোন বাবা তার মেয়েকে তুলে দিবে? সারা জীব দেবদাসের মতোই কাটা।
ফারদিন কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে শান্ত ভাবে বললো,
– দেবদাসের মতোই মনে হয় মা নিজেকে। বিয়ে করার ইচ্ছে টা তো অনেক আগেই ম’রে গেছে।
বলেই খাবার টেবিল থেকে উঠে চলে গেলো ফারদিন। বাবা মা দুজনই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
,
,
ঘুমানোর আগ মুহুর্তে ফোন টা বেজে উঠে আয়রিনের। ফোন টা রিসিভ করে খাটের উপর বসলো সে। ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠ ভেষে উঠে,
– আয়রিন বলছেন?
– জ্বি বলছি, আপনার পরিচয়?
– আমার পরিচয় জেনে আপনার লাভ নেই। আমার বয়ফ্রেন্ডকে ছারছেন না কেন?
– মানে?
– এখন কিছুই বুঝছেন না তাই না? মাহিন আপনাকে বলেনি আমার কথা?
আয়রিনের মাথা যেন মুহুর্তেই ভন ভন করতে লাগলো। কি সব বলছে এই মেয়ে।
হতবম্ভ হয়ে মেয়েটাকে বলে,
– আপনি তার কি হোন বললেন?
– গার্লফ্রেন্ড। আমাকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখিয়ে আপনাকে করে ফেললো। ছারছেন না কেন আমার বয়ফ্রেন্ডকে?
আর কিছু না বলেই ফোন কে’টে দিলো আয়রিন। দুই হাতে চুল গুলো পেছনের দিকে চেপে ধরে বসে আছে। সারা শরির জুড়ে অস্থিরতার ভাব ফুটে উঠেছে। কান জুড়ে একটা শব্দই ভাসছে। ‘আমার বয়ফ্রেন্ড কে ছাড়ছেন না কেন?’

To be continue…….

#তোমার_ছায়া (পর্ব ১৬)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

‘আমার বয়ফ্রেন্ডকে ছারছেন না কেন?’
কথাটা শুধু দু’কান জুড়ে বাজছে আয়রিনের। তাহলে মাহিনের ইগনোরের কারণটা কি এটা ছিলো?
সে এবার মাহিনের নাম্বারে ফোন দেয়। দেখে ফোন বিজি। মিনিট দশেক পর ফোন দিলেও দেখে বিজি।
এদিক ওদিক পায়চারি করতে করতে এক রাশ দুশ্চিন্তা নিয়ে ধপাশ করে বিছানায় বসে পরে সে।
,
,
– বাহ্, সিগারেট খাওয়াও ধরেছো দেখছি ভাইয়া?
হটাৎ ফারহার এমন কথায় উল্টোদিকে ঘুরে মুখ থেকে সিগারেট ফেলে তা পায়ের নিচে পিষে ফেলে ফারদিন। হাত দিয়ে ধোয়া তাড়িয়ে ফারহার দিকে তাকিয়ে বললে,
– এতো রাতে তুই এখানে? কিছু হয়েছে?
ফারদিনের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ফারহা রেগে বলে,
– তার আগে বলো, তুমি সিগারেট খাওয়া শুরু করেছো কবে থেকে? কেন এসব পাগলামি গুলো নিজের মাঝে তৈরি করছো? সে হারিয়ে গেছে, নিজের জীবনটা গুছিয়ে নিলে এমন আরো অনেক আয়রিন আসবে। বিষয় টা কেন বুঝছো না তুমি ভাইয়া?
ফারহার কথায় একটু হেসে দেয় ফারদিন। তারপর বলে,
– তার মতো অনেক পাবো এটা সত্য রে। কিন্তু তাকে তো আর ফিরে পাবো না।
ফারহা কিছুক্ষন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে শান্ত ভাবে বললো,
– আর কখনো সিগারেট খাবে না। আমার এটা পছন্দ না। আর কখনো খেলে তোমার সামনেও আসবো না আমি।
বলেই ঘরের দিকে চলে যায় ফারহা। তার মনেও যেন মুহুর্তেই একটা শব্দ কাঁটার মতো গেথে গেলো। কাউকে হারিয়ে ফেলার পর তার মতো অনেক মানুষকে লাইফে পেলেও, ওদের মাঝে সেই মানুষটাকে তো আর ফিরে পাবো না।
,
,
কলেজে আসার পর থেকেই আবরার একটা বিষয় খুব ভালো করে লক্ষ করছে। আর তা হলো ছোট আবরারের সাথে ফারহাকে। সকালে দেখলো একসাথে কলেজে আসলো। ক্যান্টিনেও দুজনকে একসাথে দেখলো। এর পর ছুটির পরও দুজনকে একসাথে কোচিং-এ আসতে দেখলো।
ইদানিং ফারহার প্রতি আবরারের নজরটা আগের থেকে থেকে অনেকটাি বেড়ে গেছে। ফারহা কখন কি করে, কার সাথে থাকে। এসব বিষয় গুলো কেন এতো লক্ষ করে তা সে নিজেও বুঝে উঠতে পারে না।

কোচিং শেষে ফারহাকে একপাশে ডেকে নেয় আবরার। আজ খুব অধিকার খাটানোর মতো করেই প্রশ্ন করে,
– ওই জুনিয়র ছেলেটার সাথে তোমার এতো কি?
ফারহা কিছুক্ষন আবরারের দিকে চেয়ে থেকে বলে,
– আপনি জেলাস?
আবরার একটু বিরক্তি নিয়ে বললো,
– একধম কথা ঘুরানোর চেষ্টা করবে না। ওই ছেলেটার সাথে তোমার এতো কি? কেন তোমার সাথে ওই ছেলে সারা দিন আটার মতো লেগে থাকে? আর তুমিও তার সাথে সময় কাটাও?
ফারহা এবার একটু সিরিয়াস ভাব নিয়ে বলে,
– ওই ছেলেটা আমাকে ব্লেকমেইল করে। তাই চাইলেও তাকে কিছু বলতে পারি না।
– হোয়াট? (আবরারের রাগটা একটু বেড়ে গেলো)
ফারহা আবারও বললো,
– হুম, সে বলে তার সাথে বন্ধুত্ব না করলে আমাদের বিষয়টা সবাইকে বলে দিবে।
আবরার এবার একটু অন্য রকম হয়ে বললো,
– মানে কি? ও এসব জানে কি করে?
– আমি নিজেও জানিনা, শুধু বলে আপনার সিক্রেট টা সবাইকে বলে দিবো।
আবরার একটু রেগে বললো,
– ওই ছেলেটাকে ডেকে আনো তো।

ফারহা ছেলেটাকে ডাক দিলে পাশে এসে দাড়ায় সে। আর হাসি মুখে বলে,
– দেখছেন স্যার, বলছিনা বয়স কোনো বিষয় না, ভালোবাসাটাই আসল। এখন তো আমাদের খুব ভালো ফ্রেন্ডশিপ হয়ে গেছে।
কিন্তু আবরার বিষয়টা ফানি মুডে না নিয়ে সিরিয়াস ভাবে বললো,
– ওর কি সিক্রেট জানিস তুই বল।
ছেলেটা নিশ্চুপ পাশে দাড়িয়ে থাকলে আবরার ঠাস করে একটা থা’প্পর বসিয়ে দেয় ছেলেটার গালে। গালি দৃষ্টিতে বলে,
– চুপ করে আছিস কেন?
চ’র খেয়ে ছেলেটা গালে হাত দিয়ে এবার ভয়ার্ত গলায় বললো,
– আসলে কিছুই জানিনা। আপুকে এটা বললে দেখলাম খুব ভয় পেয়ে যায় তাই বলতাম।
আবরার অপর গালে আরেকটা চ’র দিয়ে বলে,
– এই বয়সে মেয়েদেরকে ব্লেকমেইল করা শিখেছিস না? সোজা ক্লাসে যা, আর এমন কোনো কান্ড করলে সোজা তোর বাবার কাছে কমপ্লেইন জানাবো।

ছেলেটা দুই গালে হাত দিয়ে চুপচাপ চলে গেলে ফারহার দিকে তাকিয়ে আবরার বলে,
– তুমি এতোটা বোকা, তা আগে জানা ছিলো না। সোজা বাসায় যাও। আর কোনো ছেলের সাথে দেখলে তোমার অবস্থাও এই ছেলের মতো হবে।
,
,
আজ দুইবার কল হওয়ার পর রিসিভ করলো মাহিন। আয়রিন প্রথমেই সোজাসুজি ভাবে বলে,
– দয়া করে আজ কোনো ব্যাস্ততা দেখাবেন না। আপনার সাথে কিছু জরুরি বিষয়ে কথা বলার আছে।
ওপাশ থেকে মাহিন একটা শ্বাস নিয়ে বলে,
– দ্রুত বলো কি বলবে। সময় কম।
– আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে, যেই কারণে আমায় মেনে নিতে পারছেন না। বিষয় টা আমাকে সোজাসুজি ভাবে বললেই পারতেন।
মাহিন কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে বলে,
– কিসব যা তা বলছো, আমার গার্লফ্রেন্ড মানে?
– দেখুন একধম না বুঝার ভান করবেন না। আমি আপনার সাথে ক্লিয়ারলি কথা বলছি। আপনার গার্লফ্রেন্ড গত কাল আমায় ফোন দিয়েছিলো।
– মানে কি, আমার কোনো গার্লফ্রেন্ডই নেই, আর তুমি কিসব বলছো ওটাই তো বুঝতে পারছি না। কে ফোন করেছিলো,আর কি বলেছিলো?
আয়রিন কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,
– সত্যিই আপনার কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই?
– না।
– তাহলে কালকে কে ফোন দিয়ে বললো যে, আমার বয়ফ্রেন্ডকে ছারছেন না কেন?
– নাম কি ঐ মেয়ের?
– নাম বলেনি।
– বয়ফ্রেন্ডের নাম তো নিশ্চই বলেছিলো।
– জ্বি না, তাও বলেনি। শুধু বলেছিলো আমার বয়ফ্রেন্ড।
– তাহলে হয়তো কোনো রং নাম্বার ছিলো। নয়তো কোনো প্রাঙ্ক কল ছিলো।
– হুম, হতে পারে।
– আর এসব আজাইরা বিষয় নিয়ে একধম আমার সময় নষ্ট করবে না। বায়।

বলেই ফোন রেখে দিলো মাহিন। আয়রিন কিছুক্ষন স্থির হয়ে বসে থেকে গতকালকে আসা সেই নাম্বারে ফোন দিলো। কিন্তু ফোন ব্যস্ত দেখাচ্ছে। তাই হতাশ হয়ে ফোন রেখে পড়তে চলে গেলো সে। আর কয়েক মাস পরই এক্সাম।
,
,
সব কিছু খুব স্বাভাবিকই ছিলো এই কয়েক মাস। এক্সামটাও শেষ হলো সুন্দর ভাবে। এক্সাম শেষ হওয়ার সাথে শুরু হলো ফারহার বিয়ের কথা বার্তা। এই মাসেই বিয়ে নিয়ে উঠে পরে লেগেছে ছেলে পক্ষ।

আর এই কয়েক মাসে আবরারের সাথে মোটামুটি একটু ফ্রি হয়েছে ফারহা। এখন আর কথা বলতে আগের মতো ভয় বা জড়তা তেমন একটা কাজ করে না৷
তাদের বিয়ের বয়স এখন পাঁচ মাস। এর এক মাস পর চাইলেই দুজন আলাদা হয়ে যেতে পারবে। কিন্তু সমস্যাটা হলো এই মাসেই ফারহার বিয়ের কথাবার্তা চলছে। ছেলে পক্ষের খুব তাড়া। ছেলে বিয়ের জন্য এক মাসের ছুটি নিয়ে বাড়িতে এসেছে। হয়তো এই কয়েক দিনের মাঝেই সব ঠিক টাক হয়ে যাবে।

এপ্রিলে এক্সাম শেষ করে এখন মে মাস চলছে। কয়দিন পর পর বৃষ্টি নামে শহর জুড়ে। মাঝে মাঝে মেঘাচ্ছা পরিবেশে কেটে যায় বেলা। এক্সামের পর তেমন একটা দেখা হয়নি আবরার ও ফারহার মাঝে।
আজ এক হালকা পরিষ্কার মেঘাচ্ছন্ন বিকেলে একসাথে হলো দুজন। তাদের বিয়ের এখনো সমাপ্তি ঘটেনি। আর এমন অবস্থার আরেকটা বিয়ে কেমন করে হবে তার? তাই বিষয়টা নিয়ে আবরারের সাথে কথা বলতে ডেকেছে আজ।
মেঘাচ্ছন্ন এই বিকেলে বাড়ি থেকে কিছুটা দুরে ছোট নদীটার পাড়ে ঘাসের চাদরে বসে আছ দুজন। কিছুটা দুরেই মেইন রোড। নদীর দিকে মুখ করে বসে আছে দুজন। কারণ এই একমাসের ভেতরেই হয়তো দুজনের এই গোপন বিষয়টা নিয়ে ঝামেলা তৈরি হয়ে যাবে।

ফারদিন নতুন চাকরি পেলো আজ দুই মাস। নিজেকে গুছিয়ে নিতে শুরু করেছে সে। আজ অপিস থেকে ছুটি নিয়ে আজ তারাতারিই বাসায় ফিরছিলো সে। রিক্সা দিয়ে আসার সময় চোখ পরে পাশের নদীটির তীরে আবরারের উপর। তার সাথে একটা মেয়ে। মুখটা ভালো ভাবে দেখা যাচ্ছেনা পেছন থেকে।
ফারদিন রিক্সা থামিয়ে ওদিকটায় কিছুটা হেটে যেতেই স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে গেলো। কারণ আবরারের পাশে মেয়েটা অন্য কেও না, তারই ছোট বোন ফারহা৷

To be continue…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here