তোমার_ছায়া,পর্ব ১৯,২০

0
1020

#তোমার_ছায়া,পর্ব ১৯,২০
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
১৯

আবরার আর ফারহার চলে যাওয়ার দিকে কিছুক্ষন এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো ফারদিন। ল্যাম্পপোষ্টের আলোয় চোখের কোনে জমে থাকা জল চিক চিক করে উঠছে। টলমলে আশ্রু কনা গড়িয়ে পরার আগেই তা টিসু দিয়ে মুছে নিলো সে। ঠোঁটের কোনে একটা হাসির রেখা টেনে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে বাড়িতে ঢুকে গেট লাগিয়ে ঘরের দিকে হাটা ধরলো। হয়তো সব কিছুই আগের মতো ঠিকঠাক হয়ে যাবে একটা সময়। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে হার মেনে ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়ে ফেললে, তা আর কখনো ফিরে পাওয়া যাবেনা। হয়তো কিছু দিন কষ্টে থাকবে সবাই। কেউ ভালো থাকবে না। তবুও সারা জীবন কষ্ট পাওয়ার চেয়ে এই কিছু সময়টা সব সহ্য করে নেওয়াই ভালো। কারণ মায়া শব্দ টা বড্ড জটিল একটা শব্দ। আবার এসব বিসর্জন গুলো আর সব টুকু ভালোবাসা সঠিক মানুষের প্রতি বিনিয়োগ না করলে তার উল্টোটাই হয়। কারণ ভালোবাসা মানুষকে ধোকা দেন না। মানুষ মানুষকে ধোকা দেয়। আর জীবনে সঠিক মানুষকে বেছে না নিয়ে পরে ঠঁকে গেলে অনেকেই বলে ভালোবাসা বলতে কিছু হয় না, সবই বিশ্বাস ঘাতকতা। এই ক্ষেত্রে দোষ টা ভালোবাসায় না। দোষ টা হলো সঠিক মানুষ নির্বাচন করার মাঝে নিজের ব্যার্থতায়।
,
,
গাড়ির ভাড়া মিটিয়ে ফারহাকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো আবরার। বাড়ির সামনে দাড়িয়ে কয়েকবার কলিং বেল বাজালে কিছুক্ষনের মাঝে মা এসে দরজা খুলে দেয়। আবরার মায়ের দিকে চেয়ে বলে,
– ফারহাকে নিয়ে এসেছি মা, একেবারের জন্য।

ফারহা নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে আছে। আজ শুধু এক কাপরে আবরারের হাত ধরে চলে এসেছে এই বাড়িতে। আজ থেকে সারা জীবনের জন্য এই ফ্যামিলিটাই তার নিজের ফ্যামিলি।
আবরার ইশারা করে বললো, মাকে সালাম করতে।
আবরারের ইশারায় ফারহা চুপচাপ তাই করলো। পাশে এসে দাড়ালো বাবা। বাবাকেও সালাম করে উঠে দাড়ায়।
মা ফারহাকে কাছে টেনে নিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বলে,
– আমার ছেলে কখনো ভুল সিদ্ধান্ত নেয়নি আর নিবেও না। ভেবে চিন্তেই সিদ্ধান্ত নেয় সব সময়। তাই তার এই সিদ্ধান্ততেও আমরা দ্বিমত পোষন করছি না। আমাদের একটাই ছেলে, সে সুখি হলে আমরাও সুখি। এক আকাশ সমান সুখ নিয়ে এই বাড়িতে প্রবেশ করো আজ। দুঃখ সব পেছনে ফেলে আসা অতিত হয়ে যাবে। আশা করি আজ থেকে এই বাড়ির সবাইকে আপন করে নিবে। সবাইকে তোমার নিজের মানুষ বানিয়ে নিবে। তোমাদের দুজনের জন্যই রইলো অফুরন্ত দোয়া ও ভালোবাসা।

আবরার কিছুক্ষন এক পলকে মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। ইশ, পৃথিবীর সব বাবা মা যদি তার মতো হতো। তাহলে হয়তো সবার ভালোবাসাই পূর্ণতা পেতো। আজ কাল বেশির ভাগ বাবা মা ই মেয়ের সুখ খোজে ছেলের অর্থ ও উপার্জনের মাঝে। অফুরন্ত অর্থ সম্পদ দিয়ে সংসার সুখি করা যায় না। যদি সেখানে ভালোবাসার অভাব থাকে।

আজ সারা দিন প্রচুর গরম পরেছে। ছোট বেলায় মুরুব্বিদের কাছে শুনতাম, গ্রীষ্মের শেষ সময়ে হুট হাট বেশি গরম পড়া মানেই এর পর অঝড়ে বৃষ্টি নামা।

গরমে সেই সাথে ভয় ও অস্থিরতায় ঘামে সারা শরিরে অস্বস্থিকর অবস্থা সৃষ্টি করেছে ফারহার মাঝে। মা আয়রিনের দিকে তাকিয়ে বলে,
– ফারহাকে তোর রুমে নিয়ে যা। আর ভালো দেখে ফারহাকে পার্ফেক্ট হবে এমন জামা বের করে দে। ফ্রেশ হয়ে পরে নিবে সে। আর কালকে গিয়ে আবরার ওর প্রয়োজনিয় সব কিছু নিয়ে আসবে।
আয়রিন একটু হেসে বললো,
– আচ্ছা সমস্যা নেই, আমার সব জামাই তাকে ফার্ফেক্ট হবে।
আবরার পাশ থেকে বললো,
– তোকে জামা’র কথা বলছে, জামাই’র কথা বলেনি।
আয়রিন এবার হাস্যজ্জল মুখে আবরারের দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকায়। মানে বিরক্তিও প্রকাশ করছে, হাসিও থামিয়ে রাখছে এমন।
,
,
আরো কয়েকদিন কে’টে গেলো। ইদানিং আয়রিনের দিন খুব ভালো কাটছে। প্রথমত ফারহা এখন তার সাথেই থাকে আর দ্বিতীয়ত আর দুই এক দিনের মাঝেই মাহিন দেশে ফিরছে। তাই আয়রিনের খুশির মাত্রা ও আকাশ সমান। অনেক তো দুড়ে ছিলো মাহিন। কাছে থাকলে তো অবশ্যই মায়া বাড়বে। আর মায়া থেকেই তো ভালোবাসার সৃষ্টি হয়।
,
,
– নিজের রুমে তো কখনোই কারো প্রবেশ পছন্দ করতে না ভাইয়া। তাহলে কি ফারহাও সব সময় তোমার রুমের বাইরে থাকবে?
বলেই খিক খিক করে হেসে দিলো আয়রিন।
পাশ থেকে মা বললো,
– কেন, ফারহা তোর সাথে থাকছে বলে কি তোর অসুবিধা হচ্ছে?
আয়রিন এবার সিরিয়াস লুক নিয়ে বললে,
– আমি মোটেও এমনটা মিন করিনি। আমি যাস্ট ভাইয়ার সাথে মজা করছিলাম। আর আমি চলে গেলে তো ফারহা আমার রুমে একাই থাকবে। আমার সমস্যা হবে কেন? আর ফারহা সব সময় আমার সাথে থাকলে তো আমি আরো বেশি খুশি।
পাশ থেকে আবরার বললো,
– আয়রিন চলে গেলে তো ফারহা ওই রুমে একা ঘুমাতে ভয় পাবে, তাই না ফারহা?
এবার ফারহা মুখ খুলে বললো,
– আমি বাচ্চা না যে ভয় পাবো। আগেও আমি একা থাকতাম। তাই প্রব্লেম হবে না।
আবরার কিছুটা ভেবে আবারও বললো,
– আরে ফারহা লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। তুমি যে লজ্জায় কাউকে ভয়ের কথা বলছে না এটা তো আমরা বুঝতে পারছি। ভু’তের ভয় তো তুমি নিশ্চই পাও তাই না?
ফারহা আবারও বললো,
– ভু’ত টুত বলতে কিছু নেই। আমি ওসব বিশ্বাস ও করিনা ভয়ও পাই না।
আয়রিন আবারও বললো,
– ঠিকই তো ফারহা বড় মেয়ে। ছোট বাচ্চা না। আর মা শুনো, অনুষ্ঠান করে সবাইকে জানিয়ে সব কিছু কমপ্লিট করে তারপর ওদেরকে এক সাথে থাকতে দিবে। এর আগে না।
আবরার আর কিছুই বলতে পারছে না। রাগ এবং লজ্জায় মায়ের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে হাসতে হাসতে আয়রিনকে বলে,
– দয়া করে তুমি একটু কম পন্ডিতি করো বোন, নাহলে পরে কিন্তু পিঠের উপর ধুম ধাম ভু’তের থা’বা পরতে পারে।

রাতে ঘুমাতে গেলে আয়রিন বলে,
– কিছু আইডিয়া দে না প্লিজ।
ফারহা পাশ থেকে বললো,
– কি আইডিয়া বল।
– মাহিনের কাছে কিভাবে যাবো?
– তোর জামাই, তুই কি করবি না করবি এটা তোর ইচ্ছা।
– ভাবছি, কালো রং এর শাড়ি পরে ওর সামনে দাড়াবো। ও সব কিছু কালো ব্যাবহার করে, নিশ্চই ওর ব্ল্যাক কালার পছন্দ হবে।
– এমন ভাব করছিস, মনে হয় প্রথম ওর সাথে দেখা করতে যাবি?
– অনেকটা ওরোকমই।
– ওরোকম মানে?
– কাউকে বলিস না হ্যা,, বিয়ের পর যে দশ বারো দিন ওই বাড়িতে ছিলাম, ওই কয়দিন মাহিন আমার দিকে ফিরেও তাকায় নি ভালো ভাবে। রাতেও অন্য কোথাও গিয়ে ঘুমাতো। এখনো ভালোবাসা তৈরি হয়নি দেখে আমার কাছেও আসেনি। ভাবতে পারিস কতো ভালো মানুষ সে? মোট কথা হলো, আমাদের এখনো ঠিক ভাবে কথাও হয় নি। তাই এতো নার্ভাস লাগছে।
ফারহা কিছুটা ভাবুক হয়ে বললো,
– মানে, আমার মাথায় তো কিছুই ঢুকছে না। একটু খুলে বলবি কাহিনি টা কি?
– পরে একদিন বলবো, এখন শুধু তাকে ইম্প্রেস করার কথা ভাবছি। হিহিহি,,,
বলেই শুয়ে পরলো আয়রিন। ফারহা কিছুক্ষণ চিন্তিত ভাব নিয়ে বসে থেকে আয়রিনের দিকে তাকালো। কিছুই মাথায় ঢুকছে না তার।
আয়রিন চোখ বন্ধ করে বলে,
– তুই শুয়ে পরলে লাইট অফ করে দিস।
আয়রিন যে খুব আনন্দে আছে তা আয়রিনের আচরণ দেখেই বুঝতে পারছে ফারহা। তবে আয়রিনের কথা বার্তা গুলো বলছে ভিন্ন কাহিনি। বেশিক্ষন না ভেবে সেও ঘুমানোর প্রস্তুতি নিয়ে নিলো।
,
,
মাহিন আসবে আজ এই বাসা থেকে সবাই গেলো ওই বাসায়। সাথে ফারহাও। মাহিনের বাবা ও আবরার এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করে নিয়ে আসলো।
বাসায় প্রবেশ করার পর সবার সাথে কথা বলে ভেতরে প্রবেশ করলো। আয়রিন সেই সকাল থেকে সাজুগুজু করেও সব যেন পানির জোয়াড়ে ভেসে গেলো। কারণ এতো কিছু করেও মাহিনকে ইম্প্রেস করতে পারলো না।
মাহিন তেমন একটা পাত্তা দিলো না তাকে। এর মাঝেই একটু সন্দেহ ঢুকে গেলো ফারহার মাঝে। তার কেন যেন মনে হচ্ছে, আয়রিন কিছু লুকিয়ে রেখেছে। কারণ আসার পর থেকে আয়রিনকে তেমন একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না মাহিন।
আয়রিনকে কিছু জিজ্ঞেস করলেও বিষয়টা ফানি ভেবে হেসে উড়িয়ে দিলো সে। তার ধারণা আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।
পর দিন আয়রিন কে ওখানে রেখে বাসায় চলে আসে সবাই। সবার মনটা বিষণ্ন। কারণ আয়রিন কে একেবারে দিয়ে এসেছে ওই বাড়িতে। এর পর এই বাড়িতে আসলেও আসবে মেহমান হিসেবে। যাই হোক মেয়েটা সুখে থাকলেই সব কষ্ট মুছে যাবে।

পার হয়ে গেলো আরো কয়েকদিন। ইদানিং মাহিনের চলাফেরা কেমন সন্দেহ জনক মনে হচ্ছে আয়রিনের কাছে। দেখে মনে হচ্ছে কিছু একটা করার জন্য উৎ পেতে আছে। কিন্তু বিষয়টা কি তা বুঝতে পারছে না সে।
সন্ধায় কলিং ব্যাল বাজতেই গিয়ে দরজা খোলে আয়রিন। বািরের দৃশ্য দেখে মুহুর্তেই বুকটা কেঁপে উঠলো তার। সোজা হয়ে দাড়িয়ে থাকার জন্য পায়ের নিচে যেন মাটি খুজে পাচ্ছে না। নিজের চোখ কেই বিশ্বাস করতে পারছে না যে, মাহিন দ্বিতীয় বিয়ে করে বৌ নিয়ে বাসায় এসেছে। আর আরেকটা অবাক করার বিষয় হলো, যেই মেয়েটাকে বিয়ে করেছে তার শরিরের গঠন দেখে মনে হচ্ছে কম করে হলেও ৬-৭ মাসের প্র্যাগনেট মেয়েটা। আর মাহিন মেয়েটাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে অন্য হাতে আয়রিনকে সামনে থেকে সরিয়ে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করলো। আয়রিন যেন এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না নিজের চোখ কে। সব স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে আজ।

To be continue…..

#তোমার_ছায়া (পর্ব ২০)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

মাহিন তার দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে কোনো সংকোচ ছারাই বাসায় প্রবেশ করলো। আয়রিন এখনো দরজার পাশে স্তব্দ হয়ে দাড়িয়ে আছে। কিছুই যেন বুঝে উঠতে পারছে না সে।
মুহুর্তেই তার মা সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসছে। আর হা করে তাকিয়ে আছে মাহিন ও পাশে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটার দিকে। অবাক দৃষ্টিতে এক হাতে মেয়েটার দিকে ইশাকা করে বললো,
– মেয়েটা কে?
মাহিন কোনো সংকোচ ছারাই বললো,
– আমার স্ত্রী। তোমাদের বৌ মা।
মা একটু রেগে বললো,
– এসব কোন ধরনের ফাজলামু মাহিন? বৌ মানে? নিজের বিয়ে করা বৌ এর সামনে দাড়িয়ে আরেকটা মেয়েকে বৌ হিসেবে পরিচয় দিতে তোর একটুও লজ্জা লাগছে না?
মাহিন সোজাসুজি ভাবে বললো,
– বিয়ে করা স্ত্রী’কে স্ত্রী বলে পরিচয় দেওয়াতে তো আমি লজ্জার কিছু দেখছি না।
মা ঠাস করে একটা চ’র বসিয়ে দিয়ে বললো,
– কেন করলি এমন টা? ঘরে বৌ রেখে অন্য একটা মেয়েকে কিভাবে বিয়ে করে আনলি তুই?
মাহিন পুনরায় মাথা উঠিয়ে বললো,
– আমার লাইফ তোমাদের কথায় অনেক চলেছে। বাট, আর না। মাই লাইফ, মাই রুল্স।

বলেই নতুন বৌকে নিয়ে রুমের দিকে চলে গেলো মাহিন। আয়রিন এবার একটা শ্বাস নিয়ে স্ট্রং হয়ে দাড়ালো। মনে কিছু সাহস সঞ্চয় করে দৌড়ে রুমের সামনে গিয়ে দুজনের পথ আটকে দারালো। আর মাহিনের দিকে চেয়ে বললো,
– আপনি চাইলেই যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন না।
মাহিন রাগ ও বিরক্তিতে বললো,
– মাথা এমনিতেই অনেক গরম হয়ে আছে। তাই অজথা সামনে এসে নিজের বিপদ টেনে আনবে না একধম। আর তোমাকে আমি আগেই বলেছি, এই বাড়িতে বৌ হয়ে থাকতে পারবে। বাট কখনো বৌ এর অধিকার চাইতে আসবে না।
– আপনি বললেই হলো নাকি? তাহলে বিয়ে করেছেন কেন আমাকে? দেখেন মাহিন, আমি কোনো ভাবেই আপনাকে অন্য একটা মেয়ে নিয়ে রুমে ঢুকতে দিবো না।
আর কিছু না বলে ঠাস করে একটা চ’র বসিয়ে দেয় আয়রিনের গালে। এর পর বৌ নিয়ে সোজা রুমে প্রবেশ করে মাহিন।
আয়রিন গালে হাত দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
– এসব কি হচ্ছে মা? ওকে কিছু বলুন না। কেন ঘরের মাঝে সতিন নিয়ে আসলো সে? প্লিজ মা, ওকে কিছু বলুন না।

মাথায় হাত দিয়ে ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে আছে মাহিনের মা। আর এক পাশে বসে কাঁন্না করছে আয়রিন। মাহিন রুম থেকে বের হলে আয়রিন ছুটে গিয়ে মাহিনের সামনে দাড়িয়ে বললো,
– বলুন না, আপনি কি সত্যি সত্যিই বিয়ে করেছেন? নাকি কোনো প্র্যাঙ্ক করছেন? দেখুন আমি কোনো ভাবেই অন্য কোনো মেয়েকে আপনার সাথে সহ্য করতে পারবো না।
মাহিনের সোজা উত্তর,
– আমি কেন প্র্যাঙ্ক করতে যাবো?ওর সাথে আমার চার বছরের রিলেশন, আর এখন তাকে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছি।
– তাহলে আমি কে? কেন বিয়ে করেছেন আমায়? বলুন কেন বিয়ে করেছিলেন আমারয়?
– বাবা মায়ের চাপে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিলাম। আর তখন জানতাম না যে মাহি প্র্যাগনেট ছিলো। বিয়ের দিন রাতে জানতে পারি আমি, যে মাহি প্র্যাগনেট। তার পর থেকে যেন সব এলোমেলো লাগছিলো। পারিনি তোমাকে কিছু বলতে, আর পারিনি মাহিকে প্রত্যাক্ষান করতে। তো আমি কি করবো বলো? ওর জীবনটা এভাবে নষ্ট করে দিতে চাইনি আমি। তাই স্ত্রীর অধিকার দিয়ে দিলাম।
– আর আমার জীবনটা কি জীবন না? আমার জীবনটা কেন নষ্ট করলেন? দেখেন মাহিন, আমাকে যতটা ভালো দেখছেন আমি মোটেও এতোটা ভালো মেয়ে না। মে’রে ফেলবো ওই মেয়েকে, তবুও আমার স্বামীর ভাগ কাউকে দিবো না আমি।
মাহিন এবার লাগাতার কয়েকটা চ’র দিয়ে আয়রিনের চুল চেপে ধরে বলে,
– খুব পাখনা গজিয়েছে না? ছোট লো’কের বাচ্চা। কবুতরের খোপের মতো বাসা থেকে এমন রাজপ্রসাদে পা দিয়েই সাহসটা আকাশ ছুয়েছে? বেশি তিড়িংবিরিং করবি তো একধম পাখনা দুটি কে’টে মাটিতে ফেলে রেখে দিবো। ছোট লো’কের বাচ্চা।
বলেই আয়রিনের চুল ছেরে হাটা ধরে মাহিন। আয়রিন রাগে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
– একটাকেও ছা’রবো না আমি। আপনাদের স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই উচিৎ শিক্ষা দিয়ে ছা’রবো আমি। সেই বিয়ের পর থেকে অনেক অপমান সহ্য করেছি। কাউকে কিছু বুঝতে দিই নি। আর না, আমার বাবা ভাইকে এক্ষুনি জানাচ্ছি সব কিছু। একটাও শান্তিতে থাকতে পারবি না। সব কিছু এলোমেলো করে দিবো আমি।

শান্ত আয়রিন কে যেন আজ খুবই হিংস্র দেখাচ্ছে। আসলে অনেক মানুষই এমন। নিজের প্রিয় মানুষটার সাথে অন্য কাউকে কখনোই সহ্য করতে পারে না।
,
,
– আর কতো দিন এভাবে থাকবে বাবা? জানো ফোন দিলে ফারহা ইদানিং খুব কাঁন্নাকাটি করে। আর তারও তো কোনো দোষ ছিলো না। ফারহা কখনোই তোমাদের কথার বাইরে কিছু করতো না। একটা এক্সিডেন্টের মতো ঘটে গেছে বিষয় টা। হয়তো আল্লাহ্ তাদেরকে এক করেই পাঠিয়েছে। আমরা তো চাইলে কপালের লিখন পরিবর্তন করতে পারি না তাই না? দেখবে ওরা খুবই সুখে থাকবে। মেনে নাও না বাবা। ফারহা প্রতিদিন কাঁন্না করে, শুধু একবার তোমাদের সাথে কথা বলার জন্য। তামাদের পায়ে ধরে ক্ষমা চাওয়ার জন্য।

ফারদিনের কথায় বাবা বসা থেকে উঠে বললো,
– ওর কথা আমি শুনতেও ইচ্ছুক না। নেক্সট টাইম কখনো ওর জন্য কিছু বলতে আসবি না। সবাই যার যার মতো ভালো থাক।
বলেই চলে গেলো বাবা। ফারদিন মায়ের দিকে করুন চোখে চেকে বললো,
– মা,,,,
মা ও চলে গেলো উঠে। নিরুপায় ফারদিন নিশ্চুপ হয়ে বসে রইলো কিছুক্ষন। আর তখনই আবরারের ফোন পেয়ে রিসিভ করে কথা বলে সে।
মাকে ডেকে দরজা বন্ধ করতে বলে বেড়িয়ে পরে সে। মা কয়েক বার ডাক দিলেও কিছু বললো না ফারদিন। রাত বাজে তখন ১১ টা।
,
,
অনেক রাত হয়ে যাওয়ায় মাহিনদের বাসায় যায় নি কেউ। আয়রিনকে বললো, কোনো রকম আজকের রাতটা পার করতে। কাল সকালেই আসছে তারা।

পর দিন সকালে রওয়া দেয় আবরার, তার বাবা ও ফারদিন। মেয়ের এমন খবর শুনে বসে বসে কাঁন্না করছে মা। ফারহা শাশুড়ি মায়ের পাশে বসে তাকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে।

ওই বাড়িতে যেতে যেতে সকাল পার হয়ে যায়। মাহিনও আজ বাড়িতেই ছিলো। ওখানে যাওয়ার পর অনেক সিনক্রিয়েট হয়ে যায় তাদের মাঝে।
মাহিন রুম গিয়ে অনেক গুলো টাকা এনে আবরারের গায়ে ছুড়ে মে’রে বলে,
– এই নিন, আপনাদের মেয়ের কাবিনের টাকা।

আবরারের দিকে এভাবে টাকা ছুড়ে মারা মাত্রই ফারদিন মাহিনের বুক বরাবর লা’থি মেরে বললো,
– শু** বাচ্চা, টাকার গরম দেখাচ্ছিস? তোর কি ধারণা টাকা দিয়েই সব হয়ে যায়। একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করে টাকা দিয়ে সব কিছু উড়িয়ে ফেলতে চাইছিস? বেশি বড়লোকি দেখাতে আসবি, একেবারে ফে’রে ফেলবো। শু** বাচ্চা।
লা’থি খেয়ে অনেকটা দুড়ে ছিটকে করে মাহিন। পাশ থেকে ওখানের দুইটা লোক এসে ফারদিনকে ধরে আটকানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু আজ যেন ফারদিনের দু’চোখ জুড়ে আগুন ঝড়ছে। কারণ পাশেই আয়রিনোর কান্না ভেজা মুখ দেখলে সব কিছু এলোমেলো লাগতে শুরু হলো তার।
আবরার নিজেও আজ ফারদিনকে আটকে রাখতে কষ্ট হচ্ছে। এমনই আচরণ করছে ফারদিন।
এসবের মাঝে, ওখাবে কয়েকজন মানুষ এসব থামিয়ে বললো,
– দয়া করে এমন বিশৃঙ্খলা না করে ঠান্ডা মাথায় কথা বলি সবাই। এতে একটা সমাধান খুজে পাবেন। এমন বিশৃঙ্খলা করলে শুধু ঝামেলাই বাড়বে।
,
,
আয়রিনকে নিয়ে চলে এলো সবাই। কারণ জোর করে কিছু করলেও ওই বাড়িতে আয়রিন কখনোই সুখি হতে পারবে না।
বাসায় আসার পর থেকে ফারহাকে ধরে অনেক্ষন কাঁদলো আয়রিন।
– আমার সাথেই কেন এমনটা হতে হলো, বলতে পারবি ফারহা?
আয়রিনকে জড়িয়ে ধরে ফারহা বললো,
– কষ্ট পাবি না একধম। আল্লাহ্ যা করে ভালোর জন্যই করে। আর লাইফে পার্ফেক্ট কাউকে পেলেও অনেক সময় সুখ কপালে থাকে না। এমন কাউকে বেছে নিতে হয় যে সারা জীবন তোর ছায়ার মতো তোর পাশে থাকবে।
– আমার লাইফে কেন এমন একটা মানুষ এলো না। কেন আমার সাথেই এমনটা হতে হলো?
– হয়তো তোর লাইফেও এমন কেউ আসবে যে তোকে সারা জীবন আগলে রাখবে। তোর ছায়া হয়ে তোর সাথে থাকবে সারা জীবন।
আয়রিন আর কিছু না বলে নিশ্চুপ হয়ে কাঁদছে।
,
,
আজ আর বাসায় গেলো না ফারদিন। কারণ এখানে সবই অস্বাভাবিক। কেউই স্বাভাবিক নেই। তাই রাতেও এই বাড়িতেই থাকছে আজ।

রাত তখন গভির। ঘুম আসছে না ফারদিনের। চোখ বন্ধ করে অনেক্ষন শুয়ে থাকার পরও ঘুম আসছে না। কেন যেন এক অজানা কারণে বুকের ভেতর টা টিপ টিপ করছে।
ঘড়ির কাটা তখন রাত ২ টা পেরিয়েছে। রুমের সামনে দিয়ে ছায়া র মতো কিছু চোখে পরতেই উঠে বসে যায় সে। দরজা খোলা থাকায় দেখতে পায় এখনই রুমের সামনে দিয়ে কে যেন হেটে গেলো।
ফারদিনও চুপচাপ রুম থেকে বেড়িয়ে আসে। দেখে ছাদের সিঁড়ি বেচে উপরে উঠে গেলো সে। ফারদিনও দেড়ি না করে ছাদের দিকে হাটা ধরে।

ছাদে আসতেই চাঁদের আলোয় দেখতে পায় আয়রিন ছাদের এক পাশে খুব কিনারায় উঠে দাড়িয়ে আছে। অশ্রু শিক্ত চোখ মুছে কিছুক্ষন আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো সে। চোখ বন্ধ করে নিজের সব ভার নিচের দিকে ছেড়ে দিতেই খেয়াল করে সে হাওয়ায় ভাসছে। কেউ একজন এক হাতে তার কোমড় জড়িয়ে বিড়াল ছানার মতো ছো মেরে কোলে তুলে নিয়েছে। অবাকের চরম সীমানায় আয়রিন। খুব অবাক সে। এই অসময়ে আবার কে এলো?

To be continue……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here