নুজাইরাহ,৩য়_পর্ব

0
665

#নুজাইরাহ,৩য়_পর্ব
#written_by_Liza

দিলজাহান বেগম চাইতো শুধু জুরাইনাহ’ই নাফিজের মেয়ে হিসেবে থাকুক৷ জুরাইনাহ যেনো নাফিজের চোখের মনি হয়।

মেহেরীমা বাপের বাড়ি যাচ্ছে তড়িঘড়ি করে, দিলজাহান বেগম ফোন করে বলেছে “তোর বাবাকে হসপিটালে ভর্তি করিয়েছি জলদি আয়,সাথে অলক্ষীটাকে আনবিনা।তোর বাবার এই দুঃসময়ে”

মেহরীমার কথা বলার জো নেয়,দ্রুত গতিতে ফোন রেখে মেহরীমা জুরাইনাহ ও নুজাইরাহকে তৈরি করিয়ে দিলো, শত হলেও নুজাইরাহ’র মা মেহেরীমা। মেহেরীমা নুজাইরাহকে চোখের আড়াল করে না। নুজাইরাহ যেতে না চাইলেও মেহেরীমা বাড়িতে নুজাইরাহকে রেখে যেতে ভরসা পায় না তার মেঝো ননাসের জন্য।

নুজাইরাহ বলে উঠে তার মাকে “আম্মু তুমি যাও,আমি যাবো না নানুর বাড়ি। আমি দাদির কাছে থাকবো।”

তোর নানা অসুস্থ মা, দেখতে যাবি না? (মেহেরীমা)

নানুভাইয়ের কথা শুনে নুজাইরাহ দেরী করলো না,তড়িঘড়ি করে জুতো জোড়া পড়ে নিলো।নুজাইরাহ’র প্রিয় খেলার সাথী তার নানুভাই।

নুজাইরাহ ও জুরাইনাহ একে অপরের হাত ধরে আছে। মেহেরীমা তাদের নিয়ে হসপিটালে পৌছে গেলো। মুখে অক্সিজেন লাগানো অবস্তায় রফিক সাহেব শুয়ে আছে। বুকের হাড্ডিগুলো ভেসে উঠেছে। নুজাইরাহ দৌড়ে গিয়ে নানুভাইয়ের পাশে দাড়ায়। জুরাইনাহ ড্যাব ড্যাব চোখে নানুভাইকে দেখছে। মেহেরীমা রফিক সাহেবের কপালে হাত রাখতেই রফিক সাহেব চোখ মেলে দেয়। মেহেরীমার মুখের দিকে তাকিয়ে দুফোঁটা চোখের পানি ছেড়ে দেয়। মেহেরীমা কাঁদতে পারছে না কারণ তার বাবা দুর্বল হয়ে পড়বে। মেহেরীমা মনকে শক্ত করে বলে
“বাবা কাঁদছো কেন? এইতো আমি।আমি তো সুখেই আছি তোমাদের দোয়ায়। আমার দুইটা মেয়েই আমার জান্নাত। এদের নিয়ে সুখে আছি। তুমি চিন্তা করোনা। শুধু দোয়া করো আমি যেনো এই পরীক্ষায় পাস করে যেতে পারি। আমার সামনে অনেক পরীক্ষা বাকি।এই দুটো মেয়েই আমার জীবনের ঢাল”

রফিক সাহেব কাঁপা কাঁপা হাতে মেহেরীমার মাথায় হাত রেখে দোয়া করে। ইশারায় বারবার পানির বোতলের দিকে তাকাচ্ছে রফিক সাহেব।নুজাইরাহ বুঝতে পেরে টেবিলে থাকা বোতলটি হাতে নিয়ে নানুভাইয়ের পাশে দাড়ায়। মেহেরীমা নাফিজকে ফোন দিয়ে হসপিটালে আসতে বলে, “বাবার অবস্তা আমার মোটেও ভালো লাগছে না শীঘঘীর এসো”

নুজাইরাহ গ্লাসে পানি ঢেলে নানুভাইয়ের সামনে গ্লাস ধরে দাড়িয়ে আছে। রফিক সাহেব অক্সিজেন খুলে গ্লাস ধর‍তে গিয়ে গ্লাসটা ফেলে দেয়।অমনি দিলজাহান বেগম এসে নুজাইরাহ’র গাল টেনে চিমটি দেয় আর বলে
“এই তোরে বলছিনা না আসতে? আসলি কেন? আমার জামাইরে মারতে বসছিস অলক্ষী মেয়ে”

নুজাইরাহ চোখ মুছে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে।রফিক সাহেব পানির তেষ্টায় ছটফট করছে।নুজাইরাহ তার নানুভাইয়ের দিকে চোখ পরতেই পানি ঢেলে গ্লাসে গ্লাসটা মুখের সামনে নিয়ে দেয়। রফিক সাহেব নুজাইরাহ’র হাত ধরে ঢকঢক করে পানিটুকু একটানে খেয়ে নেয়। পানি খেয়ে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় মাথা ফেলে দেয়। দিলজাহান বেগম স্বামীর পাশে বসে কাঁদছে।

রফিক সাহেব ইশারা দিয়ে তার দুই মেয়েকে ও ছেলেকে ডাকছে।নুজাইরাহ মেহেরীমাকে টানতে টানতে নানুভাইয়ের কাছে নিয়ে আসে। ততক্ষণে নাফিজ আলম এসে গেছে। দুই মেয়েকে প্রাণভরে দেখছে রফিক মিয়া। নাফিজ আলমের হাতে মেহেরীমাকে শেষবারের মতো সঁপে দেয়। নুজাইরাহ ও জুরাইনাহকে দুইপাশে আগলে জড়িয়ে ধরে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। দিলজাহান বেগম আঁড়চোখে নুজাইরাহকে চোখ গরম করে তাকিয়ে দাঁতে কিড়মিড় করছে।নাফিজ আলম হসপিটালে আসাতে দিলজাহান বেগম নুজাইরাহকে কিছু করতে পারছে না।

রফিক সাহেবের চোখ বেয়ে ঝড়ছে অজস্র পানি। এই বোধহয় শেষ কান্না তার দুনিয়ার মায়া ছেড়ে যাওয়ার। নুজাইরাহ চোখ মুছে দিয়ে ফিসফিসিয়ে তার নানুভাইয়ের কানে কানে বলছে “নানু কেঁদোনা। আমি আছি তো”

রফিক সাহেবে নুজাইরাহ’র দিকে একপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।নুজাইরাহ তার নানুভাইকে ডাকছে। নানুভাইয়ের চোখ দুটো স্থীর তার দিকে তাক করে তাকিয়ে আছে নড়ছে না আর। নুজাইরাহ তার মা মেহেরীমাকে বলছে “আম্মু নানুভাই আর নড়ছেনা, ঠান্ডা হয়ে গেছে হাত পা,কাথা দাও নানুকে। ঠান্ডা লাগছে নানুর”

মেহেরীমার বুক মুচড়ে উঠে সাথে সাথে, মেহেরীমা রফিক সাহেবের মাথা সোজা করতেই ঢলে পড়ে মাথা, মেহেরীমা এক চিৎকার দিয়ে বাবার বুকে লুটিয়ে পড়ে, দিলজাহান বেগম জ্ঞান হারায়।

নুজাইরাহ তার নানুকে চুমু দিচ্ছে ডাকছে কিন্তু তার নানুভাই আর উঠছে না। নুজাইরাহ সবার কান্না দেখে বুঝে নিয়েছে তার নানুভাইয়ের কঠিন অসুখ হয়েছে। নুজাইরাহ জানতো না যে তার নানুভাই তাকে ছেড়ে চিরতরে চলে গিয়েছে। নুজাইরাহ জুরাইনাহকে জড়িয়ে ধরে একপাশে দাড়িয়ে আছে।আস্তে আস্তে হসপিটালে আত্মীয়দের ভিড় বাড়ছে। লাশ নিয়ে যাওয়ার জন্য বড় অ্যাম্বুলেন্স চলে এসেছে। রফিক সাহেবের মর*দেহ নিয়ে যাওয়া হয় বাড়িতে।

দাফন করা হয় তাকে। মেহেরীমা বাবা হারানোর শোকে পাথর হয়ে আছে। ছোট্ট নুজাইরাহ বুঝতে পেরেছে তাকে আর কেউ বাঁচাতে আসবে না। কেউ আগলে নেবে না বুকে৷ যে নেওয়ার ছিলো সে তো দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। আর কেউ নুজাইরাহ’র জন্য দিলজাহান বেগমকে বকবে না। কেউ আর বাঁচাবে না তাকে।

নুজাইরাহ একপাশে গুটিসুটি মেরে বসে আছে। চোখ বেয়ে পানি ঝড়ছে। নানুভাইকে আশেপাশে খুজঁছে। খালি বিছানার দিকে তাকিয়ে নুজাইরাহ অপেক্ষা করছে, এই বোধহয় তার নানুভাই ডাক দিয়ে তাকে বলবে “নুজাইরাহ আয় নানার পাশে বস”

আজ তিনদিন হয়ে গেলো নুজাইরাহ নানুর বাড়িতে, নুজাইরাহকে নাফিজ আলমের অবর্তমানে ঘর মোছায়, কাঁপড় ধোয়ায়। নুজাইরাহ ছোট্ট ছোট্ট হাতে সব করার চেষ্টা করে। কাজ করতে না পারলে দিলজাহান বেগম বাথরুমে নিয়ে গিয়ে নুজাইরাহকে মারধর করে।

মেহেরীমা প্রতিবাদ করতে আসলে দিলজাহান বেগম মেহেরীমাকে বলে “তোর বাড়িতে বসিয়ে খাওয়াস,আমার বাড়িতে বসিয়ে খাওয়াতে পারবো না। আমার বাড়িতে থাকলে কাজ করে খেতে হবে।”

দিলজাহান বেগম যেনো স্বামী মারা যাওয়ার পর একদম শান্তি হয়ে গেছে, আগে স্বামীর জন্য নুজাইরাহকে মনের তৃপ্তি মিটিয়ে মারতে পারতো না৷ এখন যেনো তার মনের সব ক্ষোভ এক এক করে মিটছে।

মেহেরীমার ছোট বোন নুজাইরাহকে ডেকে বলতো “কেন থাকিস এখানে? এত কষ্ট পেয়ে এখানে কেন পরে আছিস? চলে যা এই বুড়ির কাছ থেকে। নয়তো তোকে মেরে ফেলবে৷ তুই তোর বাবাকে সব বলে দিবি”

নুজাইরাহ ভয় চোখে তার খালামনির দিকে তাকিয়ে আছে। নুজাইরাহ তার বাবাকে বলতে গেলেই নুজাইরাহ’র মনে পড়ে দিলজাহান বেগমের কথা। দিলজাহান বেগম বলেছিলো
“যদি তোর স্বামীকে(বাবাকে জামাই বানিয়ে) বলিস,এমন হাল করবো। উঠে দাড়াতে পারবি না”

নুজাইরাহ মার খাওয়ার ভয়ে কেউকে কিছু বলে না গোপন করে যায়, নুজাইরাহ শরীরে বিভিন্ন মারের দাগ বিদ্যমান। নাফিজ আলমের চোখের পরলে দাগগুলো, নুজাইরাহ বলে “খেলতে গিয়ে হয়েছে বাবা”

নাফিজ আলম মেয়ের কথায় আর কিছু বলে না।
নুজাইরাহ’র পেটে কালো কালো দাগ পরেছে আগুনে পুড়ে যাওয়ার। রাত হলে ব্যথায় নুজাইরাহ ঘুমাতে দেয় না তার দাদিকে।

মনের কথা নিমিষে পড়তে পারতো নুজাইরাহ’র দাদি। নুজাইরাহ মুখ ফোটে কিছু বলতে না পারলেও নুজাইরাহ’র দাদি সব বুঝতো। নুজাইরাহকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতো আল্লাহকে বিচার দিতো।

নুজাইরাহ বড় হতে থাকে। নুজাইরাহ’র বয়স ষোলো ছুই ছুই। কিশোরী যৌবনে পা রেখেছে। জুনাইরাহ’র বয়স তেরো। দুজনেই একে অপরের সুখ দুঃখের সাথী।

নুজাইরাহ’র দাদীর বয়স বেড়েছে, অসুখ ধরা দিয়েছে। আগের মতো চলতে ফিরতে পারে না। বিছানায় শয্যাশায়ী হয়ে পরছে দিনের পর দিন।

নাফিজের মেঝো বোনের মেয়েগুলোকে নাফিজ নিজ হাতে বিয়ে দেয়। নাফিজ আলমের মাথায় চিন্তার পাহাড় বেড়েছে। নাফিজ আলমের বড় বোন অসুস্থ হার্টের একপাশ ক্ষয় হয়ে গিয়েছে। নাফিজ আলম তার মাকে এই কথা জানায় নি,চিন্তায় ভেঙ্গে পরবে বলে।

এদিকে নুজাইরাহ’র মনে ভয় ঢুকেছে নুজাইরাহ ভাবছে “দাদি না থাকলে আমার জীবন তো শেষ। আমি কার সাথে থাকবো? কার ভরসায় বাঁচবো?মেঝো ফুফু তার নিজের মেয়েদের ছাড়া আমাকে দেখতে পারে না। সম্পত্তির লোভে আমার বাবার সাথে যোগাযোগ রেখেছে। দাদি চলে গেলে আমি এতিম”

নুজাইরাহ দশম শ্রেনীর ছাত্রী। নুজাইরাহ যেই পথ দিয়ে আসাযাওয়া করে সেই পথে বখাটে ছেলেপেলের আস্তানা। নুজাইরাহ পড়তে যাওয়ার সময় রোজ বখাটে ছেলেগুলোর ইভটিজিং সহ্য করতে হয়৷ নুজাইরাহ তার বাবাকে এ ব্যপারে জানালে,তার বাবা তাদের সাবধান করে।

নাফিজ আলমের কথায় ইভটিজিং করা যেনো আরো বেড়ে যায়।নুজাইরাহ পড়াশোনার উপর ব্যঘাত আসতে শুরু করে। কারণ বখাটে ছেলেপেলে গুলো সেখানকার দাপটে নেতার নাতির বন্ধু।

নিরবে সহ্য করে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে লাগলো নুজাইরাহ। দিলজাহান বেগম সবটা জানার পর সেখানকার বখাটে ছেলেকে ফুসলিয়ে নুজাইরাহ’র পেছনে লাগিয়ে দেয়। বাড়তে থাকে এভাবে নুজাইরাহ’র জীবনে সমস্যা।

একদিন নুজাইরাহ সাহস করে দাড়িয়ে সেই ছেলেকে বলে উঠে “ভাইয়া আমাকে এভাবে বিরক্ত করিয়েন না। আপনার নিজেরো বোন আছে। আপনার বোনকে কেউ এমন করলে আপনি চুপ থাকতে পারতেন?”

ছেলেটি নুজাইরাহ’র কথায় ইভটিজিং করা বন্ধ করে দিলো। ছেলেটি সেই নেতার একমাত্র নাতি। ছেলেটির নিষেধে পুরো বখাটে দল আর নুজাইরাহকে বিরক্ত করে না। নুজাইরাহ এবার নিশ্চিন্তে আসাযাওয়া করতে শুরু করলো।

বিপদ যেনো নুজাইরাহকে ছাড়েই না। সেদিন দাড়িয়ে ছেলেটির সাথে কথা বলার ছবি কে যেনো নুজাইরাহ’র বাবাকে রাস্তায় পথ আটকে দেখায়। নাফিজ আলম ছবিটি দেখে রাস্তায় আর দাড়ালো না দ্রুত গতিতে বাসায় এসে কেউকে কিছু না বলে নুজাইরাহকে চড়ের ওপর চড় দিতে থাকে। নুজাইরাহ কিছু বলতে যাবে তার আগেই নুজাইরাহ’র চুলের মুঠি ধরে নাফিজ আলম বলে উঠে “খাইয়ে কালসাপ পুষছি। বাহিরে ছেলে নিয়ে প্রেম? তোর প্রেম আমি ছোটাচ্ছি দাড়া”

মেহেরীমা দৌড়ে এসে নুজাইরাহকে নাফিজ আলমের হাত থেকে ছাড়িয়ে বলে “কি সমস্যা মেয়েটাকে মারছো কেন? তোমার কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলো ওকে মারছো কেন এভাবে?”

তোমার মেয়েকে জিজ্ঞেস করো। বাহিরের লোক এসে বিচার দিচ্ছে এই মেয়ের নামে। এই মেয়ে বখাটে ছেলের সাথে প্রেম করছে দাড়িয়ে দাড়িয়ে। মান সম্মান আমার রাখলো না। (নাফিজ)

লোকের কথা তোমার কাছে অতি বিশ্বাসের হয়ে গেলো? বাহ বাহ। (মেহেরীমা)

নাফিজ আলম কিছু না বলে হনহন করে রুমে চলে গেলো। মেহেরীমা নুজাইরাহকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো সেই ছেলেটির উদ্দেশ্যে। ছেলেটিকে দাড় করিয়ে মেহেরীমা সবটা জিজ্ঞেস করে। ছেলেটি উত্তরে বলে “না আমাদের মধ্যে কোনো প্রেম ভালোবাসা নেই। সেদিন ও আমাকে বিরক্ত করতে নিষেধ করেছিলো। সেদিন’ই কে যেনো ছবি তুলে আমাদের। আংকেল সেই ছবি দেখে হয়তো এতটা রিয়েক্ট করেছে। নুজাইরাহ’র কোনো দোষ নেই”

মেহেরীমা সব বুঝতে পেরেছে আসল দোষি কে। মেহেরীমা কেউকে কিছু না বলে নুজাইরাহকে নিয়ে বাপের বাড়ি যায়, মেহেরীমা তার মাকে বলে “তুমিই আমার মেয়ের পেছনে ছেলে লাগিয়েছে তাই না মা?শুনে রাখো। আমি একজন মা।আমি মা হয়ে আমার মেয়ের উপর অন্যায় সহ্য করবো না। পরবর্তীতে এমন কিছুর হদীস পেলে ভুলে যাবো তুমিও আমার মা ছিলে”

এই বলে মেহেরীমা নুজাইরাহকে নিয়ে বাপের বাড়ি থেকে চলে আসে

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here