শুষ্ক_পাতার_ভাজে?১৭.
#লাবিবা_তানহা_লিজা?
বিদায় বেলা দু বোন দু বোনকে জড়িয়ে প্রচুর কান্না করে । সাথে যোগ দেয় রবিন । এই বাড়ির ছাদে আর তিনজন এক হয়ে যখন তখন আড্ডা দিতে পারবেনা । একজন চলে যাচ্ছে পরের বাড়িকে নিজের বাড়ি করে নিতে। সাথে নিতে যাচ্ছে পরিবারের বড় দায়িত্ব । সাথে হচ্ছে এক মা । সব পরিবর্তন হয়ে যাবে জীবনের । চাইলেও সব সময় এক হতে পারবেনা তিনজন । মনোয়ার দুজনকে সরিয়ে তৃনাকে বুকে আগলিয়ে কয়েকফোটা জল ফেলে । এই মেয়ের সাথে কত খারাপ ব্যবহার করেছে অথচ একটি বার জানতে চায়নি তার মেয়ে কত কষ্ট বুকে নিয়ে আছে । শেষ পর্যায়ে শিল্পিকে ছাড়তেই চায় না । সাপোর্টিপ হিসেবে মাকেই সব সময় কাছে পেয়েছে তৃনা । রবিন মনোয়ার দুজনে ধরে জোর করে গাড়িতে উঠিয়ে দেয় তৃনাকে । গাড়ি চলে যেতেই বাড়ির ভিতরে চলে আসে সবাই। তৃষাকে বলা হয় দরজা খুলে দিতে । তৃষা গিয়ে রুমের দরজা খুলতেই পারুল বেরিয়ে এসে তৃষাকে দেখে মরা কান্না শুরু করে দেয় ।
” আজ আমার তৃষার বিয়ের কথা ছিলো । স্বার্থপর গুলো আমার মেয়েটার বিয়েটা হতে দিল না। ঐ শাকচুন্নির সাথে বিয়ে দিয়ে দিলো । পেত্মী টা জাদু করেছে ঐ ছেলেকে তাই ঐ বিয়ে করেছে । আমার তৃষাটাকেও জাদু করেছে । আমার তৃষার সুখ কোনকালেই দেখতে পারেনি । আমার তৃষার সাথে হিংসা করে পেত্মীটা । পেত্মীটা সারাটাজীবন আমার তৃষার থেকে বেশি বেশি পেয়েছে সব সময় । ও ভাই তুমিও আমার তৃষাটার সাথে চিট করে নিজের মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিলে । এই তুমি আমার মেয়েকে বাবার মতো ভালোবাসো ? এই ছিলো তোমার মনে !”
“আম্মু যার যার বাবা তার তার কথাই ভাববে । আমার বাবা আমার কথা ভাববে আপুর বাবা আপুর কথা ভাববে।পরের জিনিসে আমাকে ঠেকিয়ে বসাও কেনো ? যা নিজের না তাতেই যা পেয়েছি কোন মামা তার ভাগনীকে দেয় দেখাতে পারবে ?”
” ঐ তুই চুপ থাক। জাদু করছে তোকে জাদু তাই কিছু বুঝতে পারছিস না । ওরে আল্লারে আমার মেয়েরে কে বিয়ে করবে এবার ? “বলেই প্রলাপ বকতে থাকে ফ্লোরে বসে হাত দিয়ে মাথা চাপড়াতে চাপড়াতে। রবিন ওয়েটারকে দিয়ে একবাটি চিকেন ললিপপ এনে সোফায় বসে খাচ্ছে আর পারুলের বিলাপ দেখছে। পারুলের কথাতে মনোয়ার নাখুশ হয়ে যায় । বোনের জন্য যে টুকু মায়া ছিলো সেটুকুও উঠে যায় । নিজের কপাল চাপড়ে বলতে থাকে ” হায় হায় রে এ আমি দুধ কলা দিয়ে কাল সাপ পোষলাম এতোদিন । যার মেয়ের কেউ নাই দেখে এতো আদরে বড় করলাম সে দেখি আমার সন্তানদের ই সহ্য করতে পারে না । ছেলেটা ভুল করেছিলো বলে মেনে নিলেও আমার ফুলের মতো মেয়েটাকেও নিয়ে এতো সমস্যা ওর ? যে মেয়ে ফুপি বলতেই পাগল এতো আদর করে এতো জিনিসপত্র এনে দেয় তাকেও হিংসা করে । অনেক হয়েছে । আমি আর এই কালসাপকে পোষবো না । ”
ও ভাইজান বলে দৌড়ে এসে মনোয়ারের পা ধরে পারুল । বলে, ” ভাই আমার তৃষাকে কে বিয়ে করবে এবার ? সব শেষ হয়ে গেলো। কিছু একটা করো । এতো নির্দয় হয়ো না। ”
” পা ছাড় পারুল । আমি নির্দয় না শুধু আমি এবার স্বার্থপর হবো । ”
“ও রবিন বাপ …”
” ফুপি তোমার মেয়েকে নিয়ে চিন্তা কিসের ? আরেকটা বাচ্চা ওয়ালার সাথে প্রেম করলেই চলবে । বিয়ে দিয়ে দিও । ”
তৃষা রবিনের দিকে তাকিয়ে । রবিন একবার তাকানোতেই চোখা চোখি হয়ে যায় । চোখ নামিয়ে নেয় রবিন কিন্তু তৃষা তাকিয়েই আছে ।
” রবিন বাবা এমন কথা বলো না । তুমি তো ..”
“বাবা আমি চাইনা আর নিজের ঘরে শত্রুকে পালতে।”
বলেই রবিন উপরের দিকে হাটা দেয় । তৃষা সহ সেই পথের দিকে তাকিয়ে থাকে । মনোয়ার বলে , “সব গুছিয়ে নে । দুইদিনের মধ্যে চলে যাবি আমার বাসা থেকে । ”
” ও ভাইজান কোথায় যাবো বলো । আমার যে কেউ নাই । ও ভাইজান । …”
মনোয়ার রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয় । ড্রয়িং রুমে বসে কাদতে থাকে পারুল।
সারা রাস্তায় কেদেছে তৃনা । তৃনার মন কিছুতেই সায় দিচ্ছে না এই বিয়েতে । রুমু রায়ানের কোলে বসে টিসু দিয়ে চোখ মুছিয়ে দিয়েছে তৃনার । বাসর ঘরে বসেও কাদছে তৃনা । সাজানো ফুল গুলোকে বিষফুল মনে হচ্ছে তৃনার । পা ঝুলিয়ে বসে আছে খাটে । কিছুক্ষন পর রায়ান ঢুকে রুমে । তৃষাকে এখনো কাদতে দেখে বারান্দায় চলে যায় । কিছুক্ষন নিরবতায় আওড়ায় নিজেকে। তারপর রুমে চলে আসে । তৃনার কান্না থেমে গেছে সেই কখন রায়ানকে দেখেই। তৃনার সামনে দাড়িয়ে রায়ান বলে , ” আমাকে মেনে নিতে সমস্যা হবে জানি । কিন্তু কোন কারনে আমাকে মেনে নিতে পারবেনা সেটা জানার রাইট আছে আমার । প্লিজ বলো । আমি ডিভোর্সি নাকি আমার বেবি আছে নাকি আমার সাথে তোমার বোনের রিলেশন ছিলো ঠিক কোন কারনে ? ”
চোখ তুলে তাকায় তৃনা ।
” আপনি আমাকে কেনো বিয়ে করলেন ?”
” আমার লাইফে তোমাকে প্রয়োজন ।”
” তৃষার সাথে চিট করলেন কেনো বিয়ে পর্যন্ত এগিয়ে?”
“তৃষা নিজেই পিছিয়ে গেছে আমি কিছু করিনি । ”
” আমাকে আপনার জীবনে প্রয়োজন বলে আপনি বিয়ে করেছেন । ভালো করেছেন। কিন্তু আমার জীবনে আপনার কোন প্রয়োজন নেই । আমি চলে যাচ্ছি । বাই । ”
তৃনা উঠে যেতেই রায়ান পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে । তৃনা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলে ” ঐ অপবিত্র হাতে একদম ধরবেন না আপনি আমাকে । পেছন থেকে জড়িয়ে ধরা হচ্ছে তাই না ? রোমান্স করা হচ্ছে ? আমাকে প্রয়োজন তাই না ? ফুরিয়ে গেলেই ফেলে দিবেন । কত নাম্বার আমি আপনার লাইফে ? বলুন উত্তর দিন । ”
রায়ান চুপ ।
” চুপ করে আছেন কেনো ? উত্তর নেই তাই না ? আসলে আপনি নিজেই তো জানেন না আপনার লাইফে কত গুলো মেয়ে আছে । আমি কত নাম্বার জানবেন কিভাবে ? ”
রুম থেকে বেরিয়ে যায় রায়ান । তৃনা ফ্লোরে বসে কাদতে থাকে ।
মাসুদ ছাদে এসে দেখে রায়ান হুইস্কি বোতল হাতে নিয়ে বসে আছে ।বোতল কেড়ে নিতেই দেখে এখনো মুখ খুলা হয়নি । মাসুদ জোরে শ্বাস নেয় । রায়ান মাসুদকে দেখে বলে, ” আমার খাওয়ার দিন শেষ দোস্ত। তোর জন্য এনেছি । ইনজয় কর আমার আর তৃনলতার বিয়ের জন্য । ”
” থ্যাংক ইউ সো মাচ । এবার বল এখানে কেনো এখনো তুই ?”
” তোর ভাবি একটু হাইপার হয়ে গেছে । শান্ত হোক তারপর যাবো । ”
” কি বলে ? ”
” তৃনলতা আমার জীবনে কত নাম্বার ?”
” তৃনলতার জায়গায় তৃনলতা ঠিক । এরকম না করলেও পারতি ।”
” মেন্টালিটি পরিস্তিতি ঘোলাটে ছিলো একদম । কি করবো বল? ”
” কই পারলি নাতো কাউকে তৃনলতার আসনটা দিতে । দুই বছর সংসার করে বউকেও দিতে পারলি না ।”
” ঐ মেয়ের কথা বলবিনা আমার সামনে । কেউ নেই আমার জীবনে শুধু তৃনলতা ছাড়া । ”
” বলেছিস ওকে ?”
” বলবো । ”
” আজ প্রথম তোর তৃনলতাকে দেখলাম । আর এটাও বুঝলাম যে কেনো তার মায়া থেকে বের হতে পারিসনি ।”
রায়ান মুচকি হাসে । আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকে ।
রুমে এসে দেখে তৃনা কাদতে কাদতে ঘুমিয়ে পড়েছে। ফ্রেশ না হয়ে ভাড়ি শাড়ি পড়েই কি সুন্দর কুজো হয়ে শুয়ে ঘুমুচ্ছে । বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে আসে রায়ান । কিন্তু তৃনাকে কিভাবে চেঞ্জ করাবে ? অন্তত হিযআপটা খুলা দরকার ভেবে পিন খুজে খুজে হিযআপ খুলে দেয় । চুল গুলো আধশুকনা দেখেই বুঝা যাচ্ছে । খোপা আগলা করে দেয় । কেদে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে তাও যেনো সুন্দর লাগছে । দু হাতে টেনে বুকে জড়িয়ে নেয় রায়ান । তৃনা একটু নড়েচড়ে উঠে আবার ঠিক হয়ে যায় । ছোট ছোট চুল গুলো কানের পাশে গুজে দিয়ে মায়াবী চেহারা মুগ্ধ হয়ে দেখে রায়ান । কতোনা বছর এই মুখটা দেখার জন্য তৃষ্ণার্ত হয়েছিলো সে । দেখতে দেখতেই লাল টকটকে ঠোটজোড়ায় গভীর ভাবে চুমু খায়। তারপর বুকের মাঝে নিয়ে ঘুমের দেশে পাড়ি জমায় ।
বাড়িতে কারো চোখে ঘুম নেই । যে যার অবস্থানে যেমনটি ছিলো তেমনটিই চলছে । নিচতলা পারুলের কান্নায় মুখোরিত । উপরতালা শুনশান । ছাদে দাড়িয়ে ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে রবিন। তৃনার মেসেজ ” আমার জীবন টা নয় গুছিয়ে দিলে এবার আমাকে তোমার জীবনটা গুছিয়ে দিতে দাও।”
ভেবে কুল কিনারা পায়না রবিন । তৃনা কি বিয়ে করতে বলবে আমাকে ? আমি তো পারবোনা কারো জীবন নষ্ট করতে । যাকে ভালোবাসতে পারবোনা তাকে ঠকাবো কেনো ? এ হয় না । নাকি তৃষাকেই বিয়ে করতে বলবে ? এও যে হয় না । যে পথ থেকে একবার চলে এসেছি সেই পথে আর পা বাড়াবো না ।
ভাবনার বিশ্ছেদ ঘটে তৃষার ডাকে । জবাব দেয় না রবিন । তৃষা এসে দাড়ায় রবিনের পাশে । কোন ভনিতা ছাড়াই বলে
” তোমার অফিসে কোন পোস্ট খালি আছে ?”
” চাকরি করবি নাকি ? ”
” হুম ।একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দাও । থাকার ব্যবস্থা আমি করে নিতে পারবো । ভাবছি বাবাকে আমার কাছে নিয়ে আসবো । বাবার দায়িত্ব নিবো । ”
” আর আম্মুর ?”
” আম্মুর জন্য তো আম্মুর ভাই ই আছে । তুমি কি ভেবেছো মামা মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে বলে মামা সত্যি সত্যি আম্মুকে বের করে দিবে ? নাকি আম্মু কোথাও যাবে ?এতো বছরে সবাইকে চেনা হয়ে গেছে আমার।”
” রবিনকে চিনিস ?”
থমকে যায় তৃষা । চোখ ঘুরিয়ে পাশের বিল্ডিং এর দিকে তাকায় । রবিন বলে, ” যে বিল্ডিং এ দাড়িয়ে আছিস সেই বিল্ডিং এ রবিন নামের কেউ নেই।”
চোখ নামিয়ে নেয় তৃষা । রবিন হালকা হাসে ।
” চাকরি করে কি করবি ? বিয়ে করে ফেল? এখন তো আর তৃনা নেই যে তোর পথের কাটা হবে । ফলো করতি যখন এখন ফলো করে বিয়েটাও করে নে ।”
” আপুর মতো আমারো খুব চাইতে ইচ্ছে করে , বলতে ইচ্ছে করে খুব । ”
” কি ?”
” শুনবে তুমি ?”
” শুনবো ।”
রবিনের একেবারে সামনে এসে দাড়ায় তৃষা । চোখে চোখ রাখে ।
” একটু ভালোবাসবে আমায় ? ”
{আমি অসুস্থ তাই গল্প ঠিক ঠাক কন্টিনিউ করতে পারছি না ।একটু সুস্থ হয়ে নিয়ে গল্প দিবো রেগুলার ইনশাআল্লাহ। }
চলবে ?