দরিয়া পর্ব – ৩

0
387

দরিয়া
পর্ব – ৩
আমিরাহ্ রিমঝিম

রোকসানা বার বার বলার পরেও আগে কখনো ওদের বাসায় যাওয়া হয়নি আফিয়ার, এবার সময় থাকাতে এসেছে ওদের বাসায়। আফিয়ার বাবাই মেয়েকে নিয়ে এসেছেন। রোকসানা আফিয়াদের বাসায় গিয়ে বার বার অনুরোধ করেছে যেতে, আফিয়াও যেতে চাইছিলো।

রোকসানাদের বাসায় আফিয়াদের আপ্যায়নের কমতি হয়না কোনো। সবাই হাসিমুখেই গ্রহণ করে অতিথিদের। রোকসানার বাবা-মা, ছোট দুই ভাই, দাদা সবার সাথেই পরিচয় হয়। ওর চাচা-চাচীরা পাশের বাড়িগুলোতেই থাকেন, ওনারাও দেখা করতে চলে আসেন। এক ফাঁকে রোকসানার বড় ভাইকে দেখতে পায় আফিয়া, কেউ তাকে হানিফ বলে ডাকছে। উনার নাম তাহলে হানিফ।

রোকসানাদের বাড়িটা আফিয়া যেমন ভেবেছিলো তেমনই। বাড়ির চেহারা দেখলেই বাসিন্দাদের উপার্জনের অবস্থা বুঝা যায়। রোকসানা আফিয়াকে পুরো বাড়ি ঘুরিয়ে দেখায়। আফিয়া দেখে আর ওর মনে মায়া হয়।খাওয়ার পর্ব শেষ হলে রোকসানার সাথে অনেকক্ষণ গল্প করে আফিয়া। এক পর্যায়ে বলে রোকসানাকে ও পড়া বুঝিয়ে দিবে যতদিন এখানে আছে।

দুজন সমবয়সী হলেও রোকসানা আফিয়ার চেয়ে দুই শ্রেণি নিচে। পড়াশোনায় তার খুব বেশি আগ্রহ নেই। প্রতি ক্লাসে কোনোমতে পাশ করে যাচ্ছে, এটাই বেশি। টাকা দিয়ে যে কারো কাছে পড়বে সে সুযোগ তো নেই। তাই আফিয়া চাচ্ছে রোকসানা নিজের সময় সুযোগ মতো ওদের বাসায় গেলে পড়াটা বুঝিয়ে দিতে পারবে ওরা যতদিন আছে। আফিয়ার প্রস্তাবে রোকসানা ভীষণ খুশি হয়। বলে যে বাসায় আজই কথা বলবে এ ব্যাপারে।

চলে আসার আগে রোকসানার হাতে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দেয় আফিয়া।
“কি এটা?”
“তোমার জন্য একটা গিফট।”
খুশিতে রোকসানার চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে। সেই খুশি দেখে আফিয়া মনে মনে আত্মতৃপ্তি অনুভব করে।

বাসায় ফিরে নিজের ঘরে যাওয়ার আগেই বাবার ডাকে থেমে যেতে হয় আফিয়াকে। আফিয়ার বাবা সোফায় গিয়ে বসেন, মেয়েকেও বসতে বলেন একটা সোফায়।
“তুমি কি রোকসানাকে তোমার ওই পুরোনো নীল জামাটা দিয়েছো গিফট হিসেবে?”
“হ্যাঁ বাবা, কেন?”
আফিয়ার বাবা প্রচন্ড হতাশায় কপালে হাত দিয়ে বসে থাকেন কিছুক্ষণ। তার মেয়ে যে এতোটা বিবেচনা ছাড়া কাজ করবে এমনটা তিনি ভাবতেও পারেননি।

আফিয়ার কাছ থেকে ব্যাগটা পাওয়ার পর রোকসানা কৌতুহল দমাতে না পেরে ওরা বের হয়ে যেতে না যেতেই জামাটা বের করে দেখেছে। জামাটা মেলে দেখার সাথে সাথেই উজ্জ্বল মুখটা চুপসে গিয়েছিলো রোকসানার। আর কেউ খেয়াল না করলেও সবটাই নজরে এসেছে আফিয়ার বাবার।

“তুমি কিভাবে ওই পুরাতন জামাটা ওকে উপহার হিসেবে দিলে?”
“পুরাতন তো কি হয়েছে? জামাটা তো খুব সুন্দর। ”
“সে কি তোমার কাছে পুরনো জামা চেয়েছে? চায়নি তো। তুমি নিজে থেকে উপহার দিতে চেয়েছো। তাহলে কিভাবে এরকম একটা পুরনো জামা দিলে তাকে?”
“বাবা উপহার তো যেকোনো কিছু দেয়া যায়। উপহার তো উপহারই হয়, যেটাই দেয়া হোক।”
“এমন হতো যে তুমি পুরাতন জামা কাউকে দিতে চাইছো, তখন কেউ এসে নিতে চাইলো সেটা ভিন্ন কথা। আর এখানে তুমি উপহার দিচ্ছো। উপহার দেয়া হয় সামর্থ্য অনুযায়ী ভালো জিনিসটা। তোমার কি সামর্থ্য ছিলোনা নতুন একটা জামা কিনে দেয়ার? আর না থাকলে সে সামর্থ্যের মধ্যে অন্যকিছু দিবে। পুরাতন জামা কেন?”

আফিয়া তবু নিজেকে সঠিক প্রমাণ করার জন্য নানান যুক্তি দেখাতে লাগলো। এক পর্যায়ে আফিয়ার বাবা ভীষণ বিরক্ত হয়ে ওকে থামিয়ে দিলেন।
“হয়েছে, থামো এবার। একটা বিষয়ে সাধারণ জ্ঞান দিয়ে তো বিবেচনা করবে না, কিছু বোঝাতে চাইলে বোঝার চেষ্টাও করবে না। তোমার যে সুবুদ্ধি কবে হবে আল্লাহ জানেন।”

কেয়ারটেকার আর রত্নাকে বলে দিলেন মার্কেট থেকে সুন্দর দেখে একটা নীল রঙের জামা কিনে আনতে। আর আফিয়াকে বললেন নতুন জামা আনা হলে রোকসানাকে দিয়ে পুরনো জামা ফেরত আনতে, আর বলতে যে ভুলে পুরনো জামাটা রোকসানার কাছে চলে গেছে। আর বললেন রোকসানা পড়তে আসলে একদিন যেন আফিয়া ওই পুরনো নীল জামাটা পরে।

টলমল চোখ নিয়ে নিজের ঘরে আসতেই ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো আফিয়া। লজ্জা আর অপমানবোধ জেঁকে বসেছে ওর মনে। বাবা সবার সামনে এভাবে ওর সাথে কথা বলতে পারলেন? সবাই ছিলো সেখানে, কেয়ারটেকার ভাইয়া, রত্না আপু, মালতী আপু। ওই তুরাগ ভাইয়াও ছিলো, এজন্যই বোধহয় কষ্ট আরো বেশি হচ্ছে। অনেকক্ষণ ধরে কেঁদেকেটে তারপর মন খারাপ করে বসে রইলো।

তবে রোকসানাকে পুরনো জামা উপহার দেয়ায় ভুলটা কোথায় হয়েছে তা কিছুতেই খুঁজে পেলো না আফিয়া।

( চলবে ইনশাআল্লাহ )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here