মেঘফুল পরিচ্ছেদঃ ১৪,১৫

0
550

উপন্যাসঃ মেঘফুল
পরিচ্ছেদঃ ১৪,১৫
লেখকঃ মিশু মনি
১৪

আজকের দিনটা জীবনের সেরা একটা দিন হয়ে এলো জাহ্নবীর জীবনে। সুন্দর সকালের পর আরও একটা সুখবর দিনটাকে রাঙিয়ে তুলল। চাকরিটা হয়ে গেছে জাহ্নবীর। আনন্দে, খুশিতে, সুখে পাগল হয়ে যাচ্ছে সে। অতীতে কখনো কোনো খবর তাকে এতটা আনন্দিত করতে পারেনি। ভায়োলেট কিনে আনলো মিষ্টি। কিন্তু পারভীন ততটা খুশি হননি। তাকে দেখে মনে হচ্ছে, তিনি এই বয়সে মেয়ের বিয়ে দেয়া ছাড়া আর কিছুতেই আনন্দ পাবেন না ভেবে পণ করে বসে আছেন।

সামার গভীর ঘুমে মগ্ন। জাহ্নবী মনের আনন্দে বাড়ির সব কাজ করল, সামারের জামাকাপড় গুলো সব পরিষ্কার করে ছাদে শুকাতে দিয়ে এলো। আজকের আকাশটাও সুন্দর৷ ঝকঝকে, রৌদ্রজ্বল। এমন একটা দিন জীবনে বারবার কেন আসেনা? প্রতিদিন কেন আজকের মতো সুন্দর হয় না?

জাহ্নবী পুরোটা বিকেল ঘরে শুয়ে বসে স্বপ্নে বিভোর হয়ে কাটাল। এখন থেকে সে প্রতিমাসে মোটা অংকের বেতন তুলবে। সেই টাকা দিয়ে কী করবে সে? বাবা মা, সামার, ভায়োলেট সবার জন্য কেনাকাটা করবে। বাসায় সবসময় ছোটছোট জিনিসপত্র কিনে আনবে। যেমন, সাবান, শ্যাম্পু, ফেসওয়াশ এরকম যাবতীয় সমস্ত জিনিস সে নিজের টাকায় কিনে আনবে, সবার জন্য। বাবাকে মাসে মাসে হাতখরচের জন্য কিছু দেবে, খুব লজ্জা লাগবে জাহ্নবীর। দৃশ্যটা ভাবতেই জাহ্নবী লজ্জায় বিছানার অন্যপাশে ফিরে শুয়ে পড়ল।
সামার যেমন পাহাড়ে ঘুরতে গিয়েছিল, একদিন সেও পাহাড়ে যাবে। সবুজের ওপর মেঘের উড়ে যাওয়া দেখবে। কোনো এক ছুটিতে সে সমুদ্র দেখতে যাবে। সুন্দর একটা শাড়ি পরে সমুদ্রের তীর ধরে হাঁটবে। ইশ! জীবনটা এত সুন্দর কেন?

জাহ্নবী সুখের ভাবনায় উন্মুখ হয়ে রইল। যদিও বারবার মনের কোণে একটা প্রিয় মানুষ উঁকি দিয়ে বেড়াতে লাগল। তার যদি একটা প্রিয়জন থাকতো! কত কী তাকে উপহার দিতো জাহ্নবী। দুজন একসাথে সমুদ্রের তীর ধরে হাঁটত। সূর্যাস্ত দেখত, পাহাড়ের ওপর একটা বেঞ্চে বসে কুয়াশাভেজা সকাল হওয়া দেখত৷ জীবনটা সত্যিই ভীষণ ভীষণ সুন্দর! এই সুন্দরের খোঁজ আগে কেন সে পায় নি, তাই ভেবে দুঃখও হতে লাগল তার।

সামার সন্ধ্যাবেলা ঘুম থেকে উঠে জাহ্নবীর চাকরির খবর শুনে আনন্দ প্রকাশ করল। আজ রাতে পার্টি একটা দিতেই হবে, কথাটা বলে বেরিয়ে গেল সে।

ভায়োলেট রাত নয়টায় বাসায় ফিরল। জাহ্নবীর জন্য একটা চমৎকার র‍্যাপিং পেপারে মোড়ানো গিফট বক্স এনেছে সে। জাহ্নবী উপহার পেয়ে বেজায় খুশি। বাক্স খুলতেই দেখল, একটা চমৎকার ঘড়ি, একজোড়া কানের দুল, একটা নতুন ফোন কভার ও মিশু মনি’র লেখা ‘হৃদমোহিনী’ নামে একটা বই। জাহ্নবীর চোখ ছলছল করতে লাগল। উপহার পাওয়ার আনন্দ খুব কমই পাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে তার।

সামার জাহ্নবীর জন্য নিয়ে এলো একটা পারফিউম। ভীষণ মাতাল করা সুঘ্রাণ পারফিউম টার। জাহ্নবীর গায়ে একবার স্প্রে করে হাসতে হাসতে সামার বলল, ‘ তোমার হ্যান্ডসাম কলিগ’রা শুধু ভাব্বে এমন মিষ্টি ঘ্রাণ কার শরীর থেকে আসছে?’
হেসেই লুটিয়ে পড়ল সামার। জাহ্নবী মুচকি হেসে বলল, ‘তোরা ভারি দুষ্টু। আমি তো তোদেরকে কিছুই দিতে পারলাম না রে।’
‘প্রথম বেতন তুলে দেবে। আমরা তো এখন গিফট পাওয়ার দাবীদার।’
‘ঠিক আছে। তোরা যা চাইবি আমি তাই দেবো।’
‘ছি ছি, নোংরা কথাবার্তা।’

জাহ্নবী হা হয়ে গেল। আবারও হেসেই গড়াগড়ি খেতে লাগল সামার। আজকে তার মনে অনেক আনন্দ। প্রেম হয়ে গেছে তার!
একগাদা বেলুন, ঝিলিমিলি ও হাবিজাবি জিনিসপত্র নিয়ে এসেছে সামার। সেগুলো দিয়ে ভায়োলেট ও জাহ্নবী ঘর সাজাতে লাগল। পার্টি হবে আজ, জম্পেশ পার্টি। বাবাও নেই বাসায়। পারভীন মেয়েদের অনুরোধে রাতে মোরগ পোলাও রাঁধলেন। খেয়েদেয়ে টিভি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়লেন তিনি।
সামার ফোনে কথা বলতে বলতে পুরো বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছে। এত স্বাধীনভাবে কখনোই ফোনে কথা বলার সুযোগ হয় না। একটু পরপর উচ্চশব্দে সামারের হাসির শব্দ ভেসে আসছিল জাহ্নবী ও ভায়োলেটের কানে।
জাহ্নবী বলল, ‘আম্মুকেও জোর করে চট্টগ্রাম পাঠিয়ে দিলে ভালো হতো।’
‘হা হা হা। চলো একটা কাজ করি আপু। দ্রুত পার্টিটা শেষ করে আমরা সামার আপুকে রুম ছেড়ে দেই। সে আয়েশ করে কথা বলুক ফোনে। আমরা তোমার রুমে শুই।’
‘ভাল বুদ্ধি দিয়েছিস। আমি তাহলে মোমবাতি গুলো জ্বালিয়ে দেই।’
‘না না, ওগুলো আগে সুন্দর করে মেঝেতে সাজাতে হবে। তার আগে তুমি সাজগোজ করে নাও তো।’
‘আমি! আমি কেন সাজবো?’

সাজগোজ কথাটা শুনেই যেন আকাশ থেকে পড়েছে জাহ্নবী। সে তো ভুলক্রমেও কখনো সাজগোজ করে না। সাজগোজ করার মতো জিনিসপত্রও তার নেই।
ভায়োলেট সামারকে তাদের আকর্ষণীয় প্রস্তাবটি দেয়ামাত্রই নাচতে নাচতে ঘরে এলো সামার। জাহ্নবীকে নিজ হাতে ভীষণ সুন্দর করে সাজিয়ে দিলো সে। সামারের সাজগোজ করার অনেক জিনিস। ফাউন্ডেশন, কন্সিলার, ব্লাশ, লিপস্টিক আরও কত কী! একটার পর একটা ব্যবহার করে জাহ্নবীকে মনের মাধুরি মিশিয়ে সাজাতে লাগল সে।

জাহ্নবী শান্ত ভঙ্গীতে বসে আছে। তার বুক ধুকপুক করছে। আজকে আনন্দে মরেই যাবে সে। এত আনন্দ কেন চারপাশে! এত ভালো লাগছে কেন বেঁচে থাকতে? অথচ দুদিন আগেও সে নিজেকে একজন মৃত মানুষ ভাবতো।
সামার বলল, ‘আপু, তুমি চেহারাটার একি হাল করেছো বলো তো? এত সুন্দর তুমি। অথচ নিজের যত্ন টত্ন নাও না। খালি ঘর দোর পরিষ্কার করলে হবে? নিজেরও একটু যত্ন নাও।’
জাহ্নবী বলল, ‘আমি অতকিছু পারিনা বাবা। তোরা তোদের যত্ন নিস, তাহলেই আমার হয়ে যাবে।’
‘ধুর আপু। এ ধরনের কথাবার্তা আমার সামনে বলবা না তো। অন্য আরেকজনের কাজ দিয়ে তোমার কিছু হবে না। আমি কখনো কাউকে খুশি করার জন্য নিজে কিছু করি না। আমার মন চাইলে আমি সাজি, আমার মন ভালো থাকে। আমার শরীর সতেজ রাখতে ভালো লাগে তাই আমি নিজের যত্ন নেই। বুঝেছ?’
‘হুম। আর কতক্ষণ লাগবে?’
‘হয়ে এসেছে প্রায়। শুধু হাইলাইটার বাকি।’
‘এটা আবার কি!’
‘এইযে এটার নাম হাইলাইটার।’

জাহ্নবীর চিবুকে হাইলাইটার লাগিয়ে দিলো সামার। মেকআপ ব্রাশের কোমল স্পর্শ পেয়ে জাহ্নবীর ভালো লাগল। নিজেকে দেখার তর সইছে না তার। সামার নিজের ওয়ারড্রব থেকে একটা শাড়ি বের করে পরিয়ে দিলো জাহ্নবীকে। ভায়োলেট বেঁধে দিলো জাহ্নবীর চুল। সবশেষে যখন নিজেকে আয়নায় দেখল জাহ্নবী, চোখে পানি চলে এলো তার। তাকে আজ একটা পরীর মতো লাগছে। নিজেকে দেখার পর এছাড়া আর কিছুই মাথায় এলো না তার।
ভায়োলেট একা একাই সাজগোজ করে বসে আছে। ওরা দুইবোন লিভিং রুমে এসে একে অপরের ছবি তুলতে লাগল। জাহ্নবীর ফোনের গ্যালারিতে দশ বারোটার বেশি ছবি নেই। এরমধ্যে হয়তো দু একটা ছবি তার নিজের। বাকিগুলো বাবা মা কিংবা ইন্টারনেটে প্রাপ্ত দুটো ছবি।
আজ জাহ্নবীর ফোনের গ্যালারিতে তার নিজের কিছু ছবি হবে। সে কোনো মডেলিং জানেনা, শিখিয়ে দিলো ভায়োলেট। সোফায় বসে, দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বেশ কিছু ছবি তোলা হল জাহ্নবীর।

এমন সময় বাসায় পার্সেল এলো। কেক-এর অর্ডার দিয়েছিল সামার। ছোট্ট কিন্তু চমৎকার একটা কেক এসে হাজির। কেকের ওপর লেখা, ‘ Be happy always’
দুইবোন ছবি তোলার পর্ব শেষ করে এসে দেখল সামার এখনও সাজগোজ শেষ করে নি। বসে রইল ওরা। মেঝেতে সাজালো মোমবাতি। সামারের সাজগোজ শেষ হলে ওরা সবগুলো মোমবাতি জ্বালিয়ে দিলো।

অন্ধকার ঘরে মোমের আলোয় সবকিছু এত সুন্দর লাগছিল যে, জাহ্নবী আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল। ভায়োলেট ও সামারকে মোমের নরম আলোয় অপূর্ব দেখাচ্ছে। এই দৃশ্য বাবা মা দেখতে না পারলে তো সবকিছু বৃথা।
জাহ্নবী পারভীনের ঘরে ছুটে গেল। ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তিনি। ডাকাডাকি করে জোরপূর্বক মাকে ধরে নিয়ে এলো জাহ্নবী। মেয়েদের ঘরে এসে মোমবাতির প্রজ্বলন দেখে ভড়কে গেলেন পারভীন। তবে স্নিগ্ধ এই নান্দনিক আলোয় তার তিন মেয়েকে অপূর্ব রূপবতী লাগছে। পারভীন রাগ করতে পারলেন না। তার নিজের পেটে ধরা মেয়েগুলো এত সুন্দর, নক্ষত্রের মতো ঝলমল করছে মেয়েগুলো, দেখেই ওনার বুকটা শান্তিতে ভরে গেল।

জাহ্নবীকে সাজগোজ করা অবস্থায় কখনোই দেখেননি তিনি। এমনকি কখনো দেখেননি ছোট দুই বোনের সঙ্গে আনন্দ ফুর্তি করতে। আজকে ওদের একসঙ্গে উল্লাস করতে দেখে উনি যারপরনাই বিস্মিত।
তিনবোন একে অপরের ছবি তুলে দিলো। সামার পারভীন ও দুই বোনকে সঙ্গে নিয়ে সেলফি তুলে ফেলল। কেক কাটল সবাই মিলে। দুই পিস কেক ও একটুখানি কোক খেয়ে নিজের ঘরে গেলেন পারভীন। তারও ইচ্ছে করছে তিন মেয়ের সঙ্গে পার্টিতে থাকতে। কিন্তু কোনো এক অদ্ভুত কারণে তিনি থাকতে পারলেন না। ঘর থেকে বের হয়ে এসে তার মন খারাপ হয়ে গেল। প্রচণ্ড মন খারাপ, ইচ্ছে করল হাউমাউ করে কাঁদতে।

পারভীন চলে যাওয়ার পর শুরু হল হৈ হুল্লোড়। আজ যেহেতু বাবা বাসায় নেই, মা কিছুই বলবেন না মেয়েদের। মিউজিকের তালে তালে নাচলো সামার। ভায়োলেট নাচতে পারে না, তবে জোরপূর্বক জাহ্নবীকে টেনে নিয়ে সেও সামান্য নাচতে চেষ্টা করল। হাসিতে, আনন্দে, হৈ হুল্লোড় করে মেতে উঠলো তিন বোন। সামারের বিভিন্ন জোকস শুনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছিল বাকি দুজন।
পার্টি শেষ করে জাহ্নবীর ঘরে এলো ভায়োলেট। তার ঘুম পাচ্ছে। এত রাত অব্দি জেগে থাকার অভ্যাস নেই তার। কুসুম গরম জলে একটা গোসল করে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো সে। জাহ্নবীও বিছানায় এলো খানিক পর। দুই বোন পাশাপাশি শুয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল।

জাহ্নবী বলল, ‘ ভায়োলেট, আমার মনে হচ্ছে এটা আমি নই। অন্যকেউ। কিংবা নতুন জন্ম হয়েছে আমার।’
‘ তোমাকে আরও জেগে উঠতে হবে আপু। জীবনটা ভীষণ সুন্দর, পৃথিবীটা ভীষণ সুন্দর। সবকিছু দেখতে হবে তোমাকে।’
‘আজকে তো অনেক আনন্দ করেছি আমরা। তোর মন ভালো। আজকে তোর স্বপ্নের কথা বল?’
ভায়োলেট মুচকি হেসে বলল, ‘না আপু। আমি আজকেও বলতে পারবো না। সময় হলে আমি বলবো তোমাকে। কথা দিলাম।’

জাহ্নবী আজকেও অন্যদিনের মতো হাল ছেড়ে দিলো। জোর করল না সে। চুপচাপ দুজনে শুয়ে রইল পাশাপাশি। সবকিছু নিস্তব্ধ হয়ে এলে হঠাৎ মনে হল মৃদু স্বরে কারও কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। কান খাড়া করল জাহ্নবী। ওর বুকে একটা ধাক্কা লাগল। মা কাঁদছেন। বিছানা ছেড়ে উঠে যেতে উদ্যত হল জাহ্নবী।
ভায়োলেট ওকে বাঁধা দিয়ে বলল, ‘যেও না আপু। মাকে কাঁদতে দাও। অনেকদিন পর গলা ছেড়ে কাঁদছে মা।’
‘কিন্তু..’
‘যেও না। ছেড়ে দাও।’

জাহ্নবী একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। সেও প্রতিরাতে নিরবে এভাবেই কাঁদত। ভীষণ হাহাকার লাগত তার। কিন্তু হঠাৎ করেই তার জীবনে পরিবর্তন এসেছে। মনে হচ্ছে, বেঁচে থাকাটা অর্থহীন নয়।
অনেকটা সময় কেটে যাওয়ার পর জাহ্নবী বলল, ‘ভায়োলেট, তুই বলেছিলি চাকরি হওয়ার পর আলাদা বাসায় থাকতে।’
ভায়োলেট বলল, ‘হ্যাঁ আপু। তুমি অফিসের কাছাকাছি একটা বাসা নাও। এক রুমে একা থাকবা। তোমার রুমে একটা বিশাল জানালা থাকবে, বারান্দা থাকবে। জানালার কাঁচের ভেতর দিয়ে বাইরের দুনিয়া দেখবে তুমি। বারান্দায় গাছের চারা লাগিয়ে রাখবে। ওদেরকে দেখে দিন শুরু করবে তুমি।’
‘ বাবা মাকে কী বলবো রে?’
‘বলবে, অফিসের কাছে বাসা নিলে তোমাকে প্রেশার কম নিতে হবে। ধীরেসুস্থে উঠে অফিসে যেতে পারবে। বাসা থেকে যাতায়াত করাটা কষ্টকর হয়ে যাবে।’
‘কিন্তু ওরা এটা বিশ্বাস করবে?’
‘না, করবে না। ওরা মন খারাপ করবে। আম্মু অভিমান করে থাকবে। তার মেয়ে চাকরি হয়েছে বলে আলাদা বাসা নিচ্ছে এটা ভেবে রেগে থাকবে সে।’

জাহ্নবী খপ করে ভায়োলেটের হাত ধরে ভীত গলায় বলল, ‘তাহলে!’
‘তবুও তোমার যাওয়া উচিৎ। তোমার নিজের মতো জীবনটাকে দেখা উচিৎ আপু। আব্বু এতে একটুও বাঁধা দেবে না। উনি চান, ওনার মেয়েরা স্বাধীনভাবে বাঁচুক।’

জাহ্নবী ভায়োলেটকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘ আমাকে একটা বাসা খুঁজে দিবি?’
‘হ্যাঁ আপু, দেবো।’
‘ভায়োলেট, জানিস আজ আমার মনটা অনেক ভাল। আমার ছোটবেলার একটা ছবি আছে। কক্সবাজার সৈকতে বালুর ওপর বসে আছি। তখন আমার বয়স দেড় বছর। সমুদ্র কেমন আমার মনে নেই। আমি একবার সমুদ্র দেখতে যাবো রে।’

গলা ধরে এলো জাহ্নবীর। আর কথা বলতে পারল না। গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল নোনা জল। ভায়োলেট জাহ্নবীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রইল। মৃদু স্বরে বলল, ‘অবশ্যই যাবে তুমি। তোমার সব ইচ্ছে পূরণ হবে।’

জাহ্নবী নিঃশব্দে কাঁদছে। ভায়োলেট বাঁধা দিলো না জাহ্নবীকে। মাঝেমাঝে কেঁদে ভেতর থেকে সমস্ত যন্ত্রণা দূর করে দিতে হয়। জাহ্নবী কাঁদতে কাঁদতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ল। গভীর ঘুমে তলিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার মনে হল সে মেঘের ভেতর উড়ছে। তার পাশাপাশি উড়ছে সেই মেঘের মানুষটা। স্বাস্থ্যবান একটা মানুষ। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার, এটা যে স্বপ্ন সেটা নিজেও বুঝতে পারছে জাহ্নবী। অথচ চাইলেই স্বপ্ন থেকে বের হতে পারছে না!

চলবে..

উপন্যাসঃ মেঘফুল
পরিচ্ছেদঃ ১৫
লেখকঃ মিশু মনি

দরজা খুলে জাহ্নবী দেখল অর্ণব ও জাভেদ আলী এসেছেন। আজ অর্ণবকে স্বতঃস্ফূর্ত মনে হচ্ছে না। যেন জোর করে তাকে ধরে নিয়ে এসেছেন বাবা। অর্ণবের হাতে একটা ছোটখাটো বস্তা।
জাহ্নবী জাভেদ আলীকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘কেমন আছো আব্বু?’
‘ভাল আছি মা। অর্ণব ভেতরে এসো।’

অর্ণবের পায়ে কালো রঙের কেডস। জুতা খুলতে গিয়ে বেচারা কাৎ হয়ে পড়ে যাবার জোগাড়। জাহ্নবী দ্রুত সেখান থেকে চলে গেল। অর্ণব দরজায় এক হাত রেখে জুতা খুলে ভেতরে এসে বসল। আজ ক্লিন সেভ করে এসেছে সে। চাকরি জীবন শুরু করার আগে মানুষের মাঝে হয়তো আলাদা একটা মাধুর্য চলে আসে।

‘কী অবস্থা অর্ণব ভাইয়া? শুনলাম চাকরি পেয়ে গেছেন?’

অর্ণব প্রশ্ন শুনে মাথা ঘুরিয়ে দেখল সামার দাঁড়িয়ে। হাসিমুখে অর্ণব উত্তর দিলো, ‘হ্যাঁ। কেমন আছেন সামার?’
‘ভাল আছি। কেমন আছেন সামার বাক্যটা কেন জানি ভালো শোনাচ্ছে না। হয় জিজ্ঞেস করুন কেমন আছেন আপু? আর নয়তো, কেমন আছো সামার?’

অর্ণব লাজুক হাসি দিয়ে বলল, ‘আপু ডাকবো আপনাকে? এটাও ঠিক মানানসই হচ্ছে না। আর তুমি ডাকতে তো অনুমতির প্রয়োজন আছে।’
‘অনুমতি দেয়া হল। শুনলাম আপনি নাকি একটা ইয়া বড় বস্তা নিয়ে এসেছেন?’
অর্ণব লজ্জা পেলো। মাথা চুলকে বলল, ‘না মানে আম্মু জোর করে দিয়ে দিলো।’
‘কী দিয়ে দিলো শুনি!’
‘কাথা, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। আম্মু আমাকে অনেক ভালবাসে।’
‘সেটা সবার আম্মুই বাসে। মিষ্টি এনেছেন আমার জন্য?’
‘ না তো।’
‘আপনার এত বড় বস্তা, এত বড় ব্যাগ, অথচ আমার জন্য সামান্য মিষ্টি আনার জায়গা হল না?’

অর্ণব এবার ভীষণ লজ্জা পেয়েছে। মাথা নিচু করে মুচকি হাসি সমেত উত্তর দিলো, ‘আপনাদের সবার জন্যই মিষ্টি এনেছিলাম সেদিন। আপনি ছিলেন না বাসায়।’
‘আপনি তো জানেনই আমি ছিলাম না। তাহলে আজকে আবার মিষ্টি নিয়ে আসবেন না?’
‘না, মানে.. আমি আসলে ভুলে গিয়েছিলাম।’

সামার মুখ টিপে হাসল। অর্ণবকে বিব্রত অবস্থায় দেখতে মজা পাচ্ছে সে। হাসতে হাসতে বলল, ‘ হয়েছে, আর লজ্জা পেতে হবে না। আমি মজা করছিলাম।’
‘থ্যাংকস।’
‘তাই বলে ভাব্বেন না ট্রিট টা আমি ছেড়ে দেবো।’
‘ভাব্বো না।’

সামার অর্ণবের মুখোমুখি সোফায় বসে রইল। জাহ্নবী নিয়ে এলো চা ও নাস্তা। সামার বলল, ‘জানেন, আমার আপুরও চাকরি হয়েছে?’
‘হ্যাঁ, আংকেলের কাছে শুনেছি। অভিনন্দন আপু।’

জাহ্নবী মুখ তুলে একবার অর্ণবকে দেখল। মুচকি হাসি ফুটে উঠল জাহ্নবীর মুখে। আজকে ‘আপু’ ডাক শুনে মোটেও খারাপ লাগেনি তার। নাস্তা রেখে জাহ্নবী নিজের ঘরে চলে গেলে সামার বলল, ‘ খেয়ে নিন। আমি যাই।’
‘আপনিও বসুন না।’
‘আমি এখন খাবো না। আব্বুর সঙ্গে দেখা করে আসি।’
‘মিস সামার..’

সামার চলে যেতে গিয়েও মুখ ফিরে তাকালো। কৌতুহল ফুটে উঠল সামারের চেহারায়।
অর্ণব বলল, ‘আপনি আমাকে কিছু একটা বলতে চেয়েছিলেন। বলেছিলেন আমার চাকরি হলে কথাটা বলবেন। এখন কী বলবেন সেটা?’
‘না, বলবো না।’
‘কেন?’
‘আগে নাস্তা খেয়ে নিন। খাওয়া শেষ হলে বলবো।’

অর্ণব মুচকি হাসল। সামারকে অনেক উৎফুল্ল দেখাচ্ছে। পরনে গোলাপ ফুল রঙা টি শার্টে ওকে ভীষণ মিষ্টি দেখাচ্ছে। গুণগুণ সুরে গান গাইতে গাইতে বাবার ঘরের দিকে চলে গেল সামার।
অর্ণব নাস্তা শেষ করে বসে রইল। আজকে এখানে আসার কোনো ইচ্ছাই ছিল না তার। জাভেদ আলী রীতিমতো জোর করে নিয়ে এসেছে তাকে। বলেছে, একসঙ্গে দুপুরের খাবার খাবো। তারপর আমি নিজে তোমাকে তোমার নতুন বাসায় রেখে আসবো।’
অর্ণব অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে আছে সামারের কথাটি শোনার জন্য। কিছুদিন আগেও সে সামারের কথাটা শোনার জন্য আগ্রহ নিয়ে এসেছিল। সামার ছিল না বাড়িতে। আজকে সেটা শুনতে পাবে, ভেবেই আনন্দ হচ্ছে। এই বাড়ির মানুষগুলো সকলেই ধীরেধীরে কেমন আপন হয়ে উঠছে তার!

দুপুরের আগ পর্যন্ত আর সামারের সঙ্গে দেখা হলো না অর্ণবের। সে কিছুক্ষণের জন্য জাহ্নবীর ঘরে বিশ্রাম নিতে এসে ঘুমিয়ে পড়েছিল। ঘুম ভাংলে টের পেলো বেলা এগারো’টা বাজে। এরপর আর সামারের সঙ্গে দেখা হয় নি।

জাহ্নবী ভায়োলেটকে বলল, ‘আব্বুকে কখন বলবো নতুন বাসার ব্যাপারটা?’
‘কয়েকটা দিন যাক, তারপর।’
‘এ মাস তাহলে বাদ দিয়ে দিই? কি বলিস?’
‘হ্যাঁ।’

ভীষণ খুশি খুশি দেখাল জাহ্নবীকে। সে আসলে নিজেও এত তারাতাড়ি এ বাড়ি ছেড়ে যেতে চাইছে না। ভায়োলেটের সঙ্গে গল্প করা, সামারের সাথে কাটানো মুহুর্তগুলো, মায়ের সঙ্গে কাজ করা, বাবাকে চা বানিয়ে দেয়া, সবকিছুকেই মিস করবে সে।

দুপুরের খাবার খেয়ে জাভেদ আলীকে সঙ্গে নিয়ে রওনা দিলো অর্ণব। যাওয়ার আগ পর্যন্ত সে উদগ্রীব হয়ে সামারকে খুঁজছিল। সামার কী বলতে চায়, সেটা শোনার জন্য অস্থির হয়ে রইল সে। অথচ সামার ফিরল না। বাধ্য হয়েই জাভেদ আলীকে নিয়ে অর্ণব বেরিয়ে পড়ল। জাভেদ আলী নিজ দায়িত্বে অর্ণবের জন্য কিছু জিনিস কিনলেন। যেমন, একটা লাল রঙের মগ, সাবান, তোশক ও বালিশ, আরও টুকটাক কিছু জিনিস। অর্ণবের রুমে গিয়ে বিছানাপত্র গোছগাছ করা পর্যন্ত তিনি বসে রইলেন। রাতুলের সঙ্গে পরিচিত হলেন তিনি। রাতুলকে বললেন, ‘আমার ছেলের দিকে খেয়াল রাখবেন বাবা। একসঙ্গেই থাকবেন আপনারা।’

অর্ণব অবাক হল। জাভেদ আলী তাকে নিজের ছেলে বলে পরিচয় দিলেন! বিস্ময়ে অভিভূত হল অর্ণব। মানুষটার মনটা আসলেই অনেক ভালো। গত কয়েকটা দিন একসঙ্গে কাটানোর পর ওনার জন্য মনে এক ধরনের টান জন্মেছে। জাভেদ আলী নিজেও নিশ্চয়ই অর্ণবের শূন্যতা অনুভব করবেন।

অর্ণব ওনাকে বাসার সামনে থেকে রিকশায় তুলে দিয়ে বলল, ‘সাবধানে যাবেন।’
‘শোনো বাবা, তোমার যখনই খারাপ লাগবে আমাকে ফোন দিও।’
‘আচ্ছা আংকেল। আপনি আমার জন্য দোয়া করবেন।’
‘তা তো করিই রে বাবা। নিজের যত্ন নিও ঠিকমতো। খাওয়াদাওয়া করবে সময়মত। আর অফিস শেষে যদি কখনো একা একা লাগে, আমাকে কল দিও। আমরা বাইরে বসে এক কাপ চা খাবো, একটু হাঁটবো। এই বুড়ো মানুষের সঙ্গ নিশ্চয়ই ভালো লাগবে না তোমার, তাই না? ভাবছ, এরপর আর দেখা না হলেই ভালো হবে।’
অর্ণব লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলল। জাভেদ আলীর হাত শক্ত করে ধরে বলল, ‘আপনি এরকম কেন ভাবছেন? আমি আপনাকে অনেক মিস করবো আংকেল। আমি যখনই সময় পাবো তখনই আপনার সঙ্গে দেখা করতে যাবো। আপনার মতো একটা মানুষই হয় না।’
জাভেদ আলী বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। ওনাকে বিমর্ষ দেখাচ্ছে। অর্ণবকে তিনি এই কয়েকদিনে নিজের ছেলের মতোই আপন করে নিয়ে ফেলেছেন।

আগামীকাল জাহ্নবীর অফিসের প্রথম দিন। সামার জোরপূর্বক তাকে নিয়ে মার্কেটে গেল। নতুন চাকরি, নতুন জীবন। নতুন নতুন সবকিছু নিতে হবে টাইপের একটা ব্যাপার বারবার জাহ্নবীকে বোঝাচ্ছে সে। জুতা, হ্যান্ডব্যাগ ও একটা ছাতা কিনলো জাহ্নবী। সামারকে কিনে দিলো একটা লিপস্টিক। ভায়োলেটের পছন্দের ব্যাপারে জাহ্নবী’র ধারণা কম। তাই একটা বই কিনলো ওর জন্য।

অফিসের বিভিন্ন জল্পনা কল্পনায় সারা রাত ছটফট করেই কাটল জাহ্নবীর। চোখে ঘুম নেমে এলেও ক্ষণিক পরেই তা ভেঙে যেতে লাগল। বারবার এপাশ ওপাশ করে অবশেষে উঠে পড়ল জাহ্নবী। মোবাইল হাতে নিলো। ভায়োলেট একটা চমৎকার ফোন কাভার উপহার দিয়েছে। ফোনটাকে আকর্ষণীয় লাগছে এখন।

খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে পড়ল জাহ্নবী। ছাদে খানিক্ষণ হাঁটাহাঁটি করল। এতটা অস্থির কখনোই লাগেনি তার। মনে হচ্ছে ঠিক যেন এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন আজকে। পারভীন নিজেও আজ ভোরে উঠেছেন। পরোটা, সবজি ও মাংস রান্না করলেন। দুধ চা বানিয়ে নিজে এক কাপ খেয়ে শুয়ে রইলেন স্বামীর পাশে। জাহ্নবীর চাকরির খবরে তিনি খুশি না হলেও আজকে অদ্ভুতভাবে ওনার আনন্দ হচ্ছে।

নাস্তা খেয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে জাহ্নবী অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। প্রথমদিন আজ, তাই রাইড থেকেই গাড়ি নিলো সে। মনের ভেতর এক ধরনের অজানা আশংকা। ভয়, উত্তেজনা, আনন্দ, সবমিলিয়ে জগাখিচুরি অবস্থা জাহ্নবীর। এই অস্থিরতা ক্রমশই বাড়তে লাগল।
অফিসে প্রথম পা রেখে জাহ্নবী খুব সতর্কভাবে হাঁটা শুরু করল। প্রথমে ওর মনে হলো, সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আজকে সে নতুন, সবার কাছে বিস্ময়ের নাম। সবাই তার জামাকাপড় নিয়ে হাসাহাসি করবে, ওর মুখে মেকআপ নেই দেখে ফিসফিস করে কথা বলবে। অথচ এসব কিছুই হল না। জাহ্নবী মুখ তুলে চারপাশে তাকিয়ে দেখল, কেউই তার দিকে তাকাচ্ছে না। বরং প্রত্যেকেই নিজের মতো ডেস্কে বসে কাজ করছে। সকালের শুরুতে ধীরেধীরে অনেকেই আসছে অফিসে। কেউবা গুছিয়ে নিচ্ছে ডেস্ক, পুরনো কাজ। কারোরই যেন কারও দিকে তাকানোর সময় নেই। বিষয়টা স্বস্তি দিলো জাহ্নবীকে।

নিজের ডেস্কে এসে জাহ্নবী সবকিছু একবার ভালো করে দেখে নিলো। অফিসের সবকিছুই পুরনো, কিন্তু তার কাছে নতুন। এটাই সবচেয়ে আনন্দের বিষয়। জাহ্নবী চেয়ারে বসল, সামনে থাকা ফাইল হাতে নিয়ে তাতে চোখ বুলালো। সবকিছুই তার কাছে সম্পূর্ণ নতুন। কম্পিউটার অন করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হল সে। পাসওয়ার্ড ছাড়া অন করা যাচ্ছে না।

পেছন থেকে কারও গলার আওয়াজ শোনা গেল, ‘হ্যালো ম্যাম?’
জাহ্নবী পেছন ফিরে হাসিমুখে বলার চেষ্টা করল, ‘হ্যালো।’ কিন্তু গলা দিয়ে আওয়াজ বের হল না। নার্ভাস লাগছে তার।

সামনে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন, তার পরনে কালো স্যুট, টাই, ভেতরে উঁকি দিচ্ছে হালকা গোলাপি শার্ট। লোকটাকে অসম্ভব স্মার্ট দেখাচ্ছে। চোখে পাতলা চশমা ওনাকে আরও জিনিয়াস ধরনের লুক এনে দিয়েছে। জাহ্নবী মনেমনে হতাশ হল। নিজেকে নিয়ে বিব্রত লাগছে। মনে হচ্ছে, তাকে দেখতে একদমই এই অফিসের মানানসই লাগছে না। কিন্তু সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটার কথায় ধারণা পাল্টালো তার।
লোকটা বলল, ‘ Welcome to your new office. Our company was waiting for someone extraordinary like you. Hopefully, your journey with us will be very long.
জাহ্নবী সহাস্যে উত্তর দিলো, ‘ থ্যাংক ইউ স্যার।’

লোকটা নিজের পরিচয় দিলো, ‘আমি নাদির, হেড অব বিজনেস ম্যানেজমেন্ট। আগামী এক সপ্তাহ আপনি আমাদের স্পেশাল ট্রেইনিংয়ের আওতায় থাকবেন। আপনার সব কাজ আমি দেখবো এবং আপনাকে সবকিছু বুঝিয়ে দেবো। আপনার আইডি কার্ড ও কম্পিউটারের পাসওয়ার্ড কিছুক্ষণের মধ্যেই পেয়ে যাবেন। আপনাকে সুন্দর একটি ইমেইল পাঠিয়েছি। সেখানে মিটিংয়ের সময়সীমা দেয়া আছে। মিটিংয়ে দেখা হবে।’

জাহ্নবী ধন্যবাদ জানাতেই নাদির নামের প্রচণ্ড প্রফেশনাল লোকটা চলে যেতে যেতেও আরেকবার পেছন ফিরে জাহ্নবীর সামনে এসে দাঁড়ালেন। বললেন, ‘আপনি কি অফিসের প্রথমদিনে একটা ফুলের তোড়া আশা করছেন?’
জাহ্নবী ভড়কে গেল। কী উত্তর দেবে বুঝতে পারল না। নাদির বলল, ‘ সরি। কেউই আপনাকে ফুল দেয়ার অপেক্ষায় নেই।’
‘ স্যার আপনি আমাকে স্বাগত জানিয়েছেন তাতেই আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি।’
‘সৌভাগ্যবতী।’
লাজুক হাসি দিয়ে জাহ্নবী বলল, ‘জি স্যার। সৌভাগ্যবতী।’
নাদির সুন্দর একটি হাসি উপহার দিয়ে চলে গেল। বিস্মিত হল জাহ্নবী। এতটা প্রফেশনাল ব্যক্তিত্বের কাউকে কখনো দেখেনি সে। বড় বড় কোম্পানির ব্যাপারগুলোও হয়তো আলাদা!

চেয়ারে বসে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল জাহ্নবী। এখন তার নার্ভাসনেস কমেছে। সবকিছু ভালো লাগতে শুরু করেছে ধীরেধীরে। অফিসের প্রথমদিনের সূচনাটা দারুণভাবে শুরু হওয়ায় মনটা আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে গেল।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here