#প্রমত্ত_হৃদয়❤️,১৯
#লেখনীতে:সারা মেহেক
সালমা বেগম ছবিটির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। বুঝার চেষ্টা করলেন ছবির মেয়েটি ও রাগীবের মধ্যস্থ সম্পর্ক। কিন্তু ঠিক যেনো বুঝে উঠতে পারলেন না তিনি৷ চিন্তার অতল সাগরে ডুবে রইলেন তিনি। অকস্মাৎ সার্ভেন্টের ডাকে খানিক চমকে উঠলেন তিনি। তৎক্ষণাৎ ছবিটি নিজের কাছে রেখে বইটি কার্টনে রাখলেন সালমা৷ বেগম। সার্ভেন্টকে বললেন কার্টনটি নিয়ে যেতে। সার্ভেন্ট কার্টন নিয়ে চলে যেতেই সালমা বেগমের মুখশ্রীর রূপরেখা যেনো বদলে গেলো। দু চোখে সন্দেহের আভাস পাওয়া গেলো। চিন্তাশক্তি তীক্ষ্ণ হয়ে এলো। মস্তিষ্ক সতর্ক হলো। এ ছবির রহস্য খুঁজে বের করতে তিনি রাগীবের রুমে তল্লাশী অভিযান শুরু করলেন। হয়তো আরো কিছু পাবার আশায়। কিন্তু বিশ মিনিটের চিরুনি তল্লাশী শেষেও তিনি কিছুই পেলেন না। খানিক অবাক হলেন এতে। তবে এ নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে তিনি মনে মনে পরিকল্পনা করলেন, রাগীব ফিরে এলেই ছবির মেয়েটির সম্পর্কে সরাসরি জিজ্ঞেস করবে। কারণ এসব বিষয়ে কাল বিলম্ব করার অর্থ মেয়ের ভবিষ্যত সংকটপূর্ণ মুহূর্তে ঠেলে দেওয়া। সালমা বেগম দৃঢ়চিত্তে সিদ্ধান্ত নিলেন। অতঃপর রুমের অন্য কাজে মনোযোগী হলেন।
.
” হেই সাবিহা। কেমন আছো?”
প্রায় এক মাস পর সেই পরিচিত এবং বিরক্তিপূর্ণ কণ্ঠ শুনে শরীর জ্বলে উঠলো সাবিহার। তার এ অপ্রসন্নতার কারণ যে কণ্ঠ সে কণ্ঠের মালিকের নাম এঞ্জো। সাবিহার সাথে একই ভার্সিটিতে পড়ে সে। পহেলা হতেই সাবিহার রূপে পাগলপ্রায় এঞ্জো সবসময় সাবিহাকে নিজের গার্লফ্রেন্ড বানাতে উন্মুখ হয়ে থাকে। কিন্তু সাবিহা বরাবরের মতোই এঞ্জোকে উপেক্ষা করে চলে। কারণ এঞ্জো কখনোই এক নারীতে স্থির থাকা ব্যক্তি নয়। প্রায় প্রতি রাতেই মেয়েদের সাথে রাত কাটিয়ে তাদেরকে গার্লফ্রেন্ড বানায়। একেকজনের সাথে কয়েক মাস কাটিয়ে নতুন করে অন্য মেয়ের পিছনে পড়ে সে। এসব কারণেই মূলত এঞ্জোকে দু চোখে দেখতে পারে না সাবিহা।
আজ ক্লাস শেষ করে সে ও সোফিয়া ক্যান্টিনের দিকে যাচ্ছিলো। তখনই পিছন থেকে গলা উঁচিয়ে সাবিহাকে ডাকলো এঞ্জো। এঞ্জোর এ সাধারণ প্রশ্নের কড়া জবাব দিতে সাবিহা পিছনে ফিরে এঞ্জো নামক ছেলেটিকে কিছু বলতে যাবে কিন্তু এর পূর্বেই এঞ্জো তার সম্মুখে এসে দাঁড়ালো। সাবিহার দিকে ডান হাত এগিয়ে দিয়ে ভদ্রতাসূচক সুরে বললো,
” দীর্ঘ এক মাস পর তোমার দেখা পেলাম সাবিহা। কি যে শান্তি লাগছে, বলে বুঝাতে পারবো না তোমাকে। ”
সাবিহা চোখমুখ কুঞ্চিত করে ভীষণ বিরক্তির সহিত বললো,
” তোমার শান্তি আমার কাছে অশান্তি লাগে এঞ্জো। এতোদিনেও এটা বুঝতে পারোনি তুমি?”
এঞ্জো সাবিহার প্রথমোক্ত কথাটি পুরোপুরি উপেক্ষা করে বললো,
” তুমি আমাকে এই এক মাসে মিস করোনি সাবিহা?”
সাবিহা জবাব দিলো না। বরং গরম চোখে এঞ্জোর দিকে চেয়ে রইলো। তার এ চাহনিতেই এঞ্জো যেনো ঘায়েল হলো। সোফিয়া তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বললো,
” সাবিহা যে তোমাকে অপছন্দ করে সেটা কি বুঝো না? না কি বুঝতে চাও না এঞ্জো?”
এঞ্জো বাঁকা হাসলো। তার এ হাসি সাক্ষাৎ শ’য়’তা’নের হাসির ন্যায় লাগলো। সে সাবিহার দিকে গভীর দৃষ্টিপাত করে বললো,
” বুঝতে চাই না আমি। শুধু ওকে পেতে চাই। ”
এঞ্জোর শেষোক্ত কথায় সাবিহার মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে এলো। তবুও সে নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রাখলো। এঞ্জোর মুখের উপর কঠোরভাবে জবাব দিলো,
” ইন ইউর ড্রিমস এঞ্জো। ”
এই বলে সে সোফিয়ার হাত ধরে ক্যান্টিনের দিকে পা বাড়ালো৷ ওদিকে এঞ্জো সাবিহার সুডৌল কোমর, নজরকাড়া উরুর দিকে বা’জে দৃষ্টিপাত করলো। যেনো দু চোখ দিয়েই গি’লে ফেললো সাবিহার মেদহীন মেয়েলি শরীরটা।
.
সাবিহার রুমটা সুন্দরভাবে গোছানো হয়ে গিয়েছে। রাগীবের বাড়ি ফেরার পূর্বেই গোছগাছের কাজ সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিলো। বাড়ি পৌঁছানো মাত্রই রাগীব বিছানায় শুয়ে পড়লো। কল লিস্ট হতে এন্ড্রুর নাম্বার বের করে কল করতে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে রুমে সালমা বেগমের আগমন ঘটলো। সালমা বেগম নক করে রুমে ঢুকতেই রাগীব বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। এক গাল হেসে ভদ্রতাসূচক কণ্ঠে বললো,
” এতো কষ্ট করে রুম গুছিয়ে দেওয়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আন্টি। ”
সালমা বেগম প্রত্যুত্তর করলেন না। বরং স্মিতহাস্যে রাগীবকে জিজ্ঞেস করলেন,
” একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবো। একদম সত্য জবাব দিবে তো?”
সালমা বেগমের এহেন প্রশ্নে রাগীব কিছুটা নড়েচড়ে দাঁড়ালো। ঠোঁট হতে সে হাসি উবে গেলো। চেহারায় খানিকটা গম্ভীর ভাব এনে বললো,
” জি আন্টি। সত্য জবাব দেওয়ার মতো হলে অবশ্যই দিবো।”
রাগীবের কথা মাটিতে পড়তে না পড়তেই সালমা বেগম সন্দেহজনক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
” না হলে মিথ্যে জবাব দিবে?”
” তেমন কিছু না আন্টি। আপনি কি প্রশ্ন করতে চান করুন।”
সালমা বেগম তৎক্ষনাৎ হাতের ছবিটি রাগীবের দিকে ধরে বললেন,
” ছবিতে তোমার সাথে এ মেয়েটি কে রাগীব? ”
সালমা বেগমের হাতে ছবিটি দেখে রাগীব যেনো আকাশ থেকে পড়লো। ক্ষণেই সালমা বেগমের হাত হতে ছবিটি একপ্রকার ছিনিয়ে নিয়ে বিস্মিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
” আপনার কাছে ছবিটি এলো কি করে?”
সালমা বেগম রাগীবের সে প্রশ্নের জবাব দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলেন না। উল্টো তাকে প্রশ্ন করে বসলেন,
” এটা তোমার কে হয় রাগীব? তুমি আমার মেয়েকে ধোঁকা দিচ্ছো না তো?”
রাগীব চট করে চোখ তুলে চাইলো। দৃঢ় চিত্তে বললো,
” এসব কি বলছেন আন্টি! আমি সাবিহাকে ভালোবাসি। ওকে ধোঁকা দেওয়ার কথা কখনো চিন্তাই করিনি।”
” তাহলে এ মেয়েটা কে?”
রাগীব কিয়ৎক্ষণ নিশ্চুপ রইলো। অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
” ছবির মেয়েটা আমার বোন। রামিশা।”
সালমা বেগমের সন্দেহ দূর হলো না। তিনি বললেন,
” আমার জানামতে তোমার কোনো বোন নেই। দেশে শুধু তুমি আর তোমার বাবা থাকতে। তাহলে ও তোমার বোন হলো কি করে? মিথ্যে বলছো না তো?”
রাগীব নিশ্চুপ রইলো। কিছুটা পিছিয়ে বিছানায় বসে পড়লো। তার ভেতরটা আবেগী হয়ে উঠলো। আঁখিজোড়া অশ্রুতে সিক্ত হয়ে এলো। তবে সালমা বেগমের সম্মুখে নিজের অশ্রুকে নিয়ন্ত্রণ করে বললো,
” মিথ্যে বলে আমার লাভ নেই আন্টি। যে মানুষের অস্তিত্ব এই পৃথিবীতে নেই সে মানুষটির সম্পর্কে সবাইকে না জানানোই বেটার বলে মনে হয় আমার। ”
সালমা বেগম রাগীবের কথায় খানিক ধাক্কা খেলেন। বললেন,
” এর মানে রামিশা বেঁচে নেই?”
রাগীব পরিপূর্ণ চাহনিতে সালমা বেগমের পানে চাইলো। বললো,
” না। আর ওর মৃত্যুর কারণ না জিজ্ঞেস করলে খুশি হবো আন্টি। আর এ পর্যন্ত যা যা বললাম তার সবটাই সত্য। এ সত্য মানার মতো বিশ্বাস তো করতে পারেন আমাকে তাই না?”
সালমা বেগম জবাব দিলেন না। রাগীবের নিকটে দাঁড়িয়ে সস্নেহে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। শোনালেন সান্ত্বনামূলক কিছু বাণী।
.
রজনীর গভীরতা বেড়েছে। কমেছে পরিবেশের তাপমাত্রা। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ চলছে ভেনিসে। যদিও শীতের প্রকোপ জানুয়ারির তুলনায় কম। তবে এ প্রকোপ বেড়ে যায় রাতে। রাতে যেনো শীতল হাওয়ারা পুরো ভেনিস শহরকে জাপটে ধরে। এমনই এক হিম শীতল মুহূর্তে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে সাবিহা। পরনে তার মোটা উলের সোয়েটার। হাতে এক মগ ধোঁয়া উঠা কফি। তবে কফির উষ্ণতা পূর্বের তুলনায় কমেছে। কারণ মগে আর আছে অর্ধেক কফি। সাবিহা কফিতে চুমুক দিতে দিতেই ব্যালকনিতে রাগীব এসে উপস্থিত হয়। রাগীব তার পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
” একা একাই কফি খেলে?”
সাবিহা মুচকি হেসে বললো,
” আপনি ফোনে কথা বলছিলেন বলে ডিস্টার্ব করেনি। তবে আপনি বললে আপনার জন্য আরেক মগ কফি বানিয়ে নিয়ে আসি। ”
সাবিহার কথায় রাগীব বিস্তৃত হাসলো। অতঃপর আচমকা সাবিহার হাত হতে কফির মগ নিয়ে বললো,
” নো নিড। এই কফিতেই আমার চলবে। ”
এই বলে সে কফির মগে চুমুক দিলো। রাগীবের এ কান্ডে সাবিহা খানিক আশ্চর্যান্বিত হলো। তবে মুহূর্তেই উষ্ণ ভালোবাসায় তার ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসির উদয় হলো। রাগীব কফি খেতে খেতে বললো,
” দারুণ কফি বানাও তো তুমি। কাল সকালে আমাকে মাস্ট বি এক মগ কফি বানিয়ে দিবে। ”
” অবশ্যই। আই হ্যাভ নো প্রবলেম। তবে একদিন আপনার হাতের কফিও খাওয়াবেন আমায়। ”
শেষ চুমুকে কফিটুকু শেষ করে ব্যালকনির ছোট্ট কাঠের টেবিলে কফির মগটা রাখলো রাগীব। অতঃপর বিনা বাক্যে আচমকা সাবিহাকে পিছন হতে জাপটে ধরলো। অকস্মাৎ রাগীবের ছোঁয়ায় কিঞ্চিৎ চমকে উঠলো সাবিহা। ওদিকে রাগীব বললো,
” তুমি চাইলে রোজই তোমাকে কফি খাওয়াতে পারি। তবে একটা শর্ত আছে। ”
” কি শর্ত? ”
” আমাকে এখন থেকে তুমি বলে ডাকবে। এতোদিনে ভদ্রতার খাতিরে, অপরিচিত হওয়ার সুবাদে না হয় আপনি বলে ডেকেছে। কিন্তু এখন আর না। তোমার কণ্ঠে ‘তুমি’ ডাক শুনতে চাই। ”
সাবিহা কিয়ৎক্ষণ নিশ্চুপ রয়ে ভাবলো। অতঃপর মুচকি হেসে বললো,
” ঠিক আছে। শর্ত মানলাম। এখন থেকে তুমি করেই বলবো। ”
” দ্যাটস লাইক আ গুড গার্ল। ”
এই বলে রাগীব নীরবে দাঁড়িয়ে রইলো। কথা বললো না সাবিহাও। কিয়ৎ বাদে রাগীব সাবিহার কাঁধে থুতনি রাখলো। তার এ ছোঁয়ায় অল্প বিস্তর কেঁপে উঠলো সাবিহা। ধীরে ধীরে গভীর হলো রাগীবের স্পর্শ। তার এ স্পর্শে আপাদমস্তক কেঁপে উঠলো সাবিহা। রাগীব লঘু কণ্ঠে ধীরে ধীরে বললো,
” জানো সাবিহা? তোমার ঠোঁটের হাসিটা আমাকে স্নিগ্ধ আবেশে আচ্ছাদিত করে। তোমার ঐ হাসির প্রেমেই যে আমি কতবার পড়েছি তা বলে বুঝানো সম্ভব না।
আচ্ছা, তোমাকে কি আমি স্নিগ্ধময়ী নামে ডাকতে পারি?”
এই বলে রাগীব সাবিহার কাঁধে অধর ছোঁয়ালো। সাবিহার অঙ্গ প্রত্যঙ্গে বয়ে গেলো শিহরণ। আবেশে আঁখিজোড়া বন্ধ করে ফেললো সে। নিম্ন কণ্ঠে ছোট্ট করে জবাব দিলো,
” হুম।”
” আজ কি আমি স্নিগ্ধময়ী স্নিগ্ধতায় নিজেকে আবিষ্ট করতে পারি?”
সাবিহা জবাব দিলো না। রাগীবের স্পর্শ গভীর হলো। সাবিহা কোনোমতে মাথা নাড়িয়ে বললো,
” হুম। ”
অতঃপর রাগীব সাবিহাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো। তার দৃষ্টিতে মা’দ’কতা মিশ্রিত। সে দু চোখ ভরে তার স্নিগ্ধময়ীর লাজুক রূপ দেখতে লাগলো। এদিকে সাবিহা ভীষণ লজ্জায় নত মস্তকে দাঁড়িয়ে রইলো। তার এ লাজুক চাহনি দারুণভাবে ঘা’য়েল করলো রাগীবকে। অতঃপর রাগীব বিনা বাক্যে সাবিহাকে পাঁজাকোলে তুলে রুমে দিকে পা বাড়ালো।
.
সকালের নাস্তা সেড়ে রিডিং রুমে বসে এক ধ্যানে বই পড়ছিলেন সালমা বেগম। হঠাৎ আশপাশ হতে স্ফুলিঙ্গের মৃদু শব্দ শুনতে পেলেন তিনি। তার মস্তিষ্ক সতর্ক হলো। দ্রুত উঠে রিডিং রুমের বৈদ্যুতিক সংযোগগুলো দেখলেন। পুরো রুম ঘুরে সবই ঠিকঠাক পেলেন। এবার তার সন্দেহ হলো রিডিং রুমের ঐ ছোট্ট রুমটিতে স্ফুলিঙ্গের শব্দ হচ্ছে। তিনি দ্রুত পায়ে ঐ রুমটির দিকে এগিয়ে গেলেন। দরজায় আড়ি পেতে শুনলেন ভেতরের অবস্থা। হ্যাঁ, স্ফুলিঙ্গের শব্দ ভেসে আসছে। ক্ষণেই আতঙ্কিত হয়ে পড়লেন তিনি। দ্রুততার সহিত ফোন এনে কল দিলেন নিকটস্থ মেকানিককে। জরুরি ভিত্তিতে তাদের বাড়ি আসতে বললেন। ততক্ষণে সালমা বেগম বাহির হতে এ স্ফুলিঙ্গের শব্দের উৎস খুঁজতে লাগলেন। খোঁজার এক পর্যায়ে তিনি নিচে ঝুঁকে দরজার নিচ হতে ঠাণ্ডা হাওয়ার উপস্থিতি পেলেন। তৎক্ষনাৎ অস্ফুটস্বরে বললেন,
” নিশ্চয়ই এসির মিটারে স্পার্ক হয়েছে। এখন বার্স্ট না হলেই হয়। ”
এই বলে তিনি রুমটি হতে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখলেন। এ ঘটনা জানাতে তিনি ফোন লাগালেন আফসার সাহেবকে। কিন্তু জরুরি মিটিং এ ব্যস্ত থাকায় আফসার সাহেব কল রিসিভ করলেন না।
এদিকে দশ মিনিটের মাঝেই মেকানিক এসে উপস্থিত হলো। তারা দরজা খোলার জন্য সালমা বেগমের নিকট চাবি চাইলো। কিন্তু আফসার সাহেবের এ রুমের চাবি তার কাছে নেই। ফলে আর উপায় না পেয়ে বিপদাপন্ন পরিবেশে মেকানিকরা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলো। দেখলো এসির মিটারে স্ফুলিঙ্গের সৃষ্টি হয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে ফেটে যেতে পারে এসি। পরিস্থিতি সংকটপূর্ণ দেখে নেকানিকরা তৎক্ষণাৎ কাজে নেমে পড়লো। খানিক বাদে তারা জানালো, এ স্ফুলিঙ্গের কারণ হলো আটচল্লিশ ঘন্টারও বেশি সময় একটানা এসি চলমান থাকা। সালমা বেগম অনুমান করলেন আফসার সাহেব রুম হতে বেরিয়ে যাওয়ার পূর্বে এসি বন্ধ করেননি৷ তারই ফলাফল স্বরূপ আজ এ স্ফুলিঙ্গের সৃষ্টিপাত।
মেকানিকরা তাদের কাজ করে চলে যেতেই সালমা বেগম আফসার সাহেবের সেই রুমে ঢুকে পড়লেন। এতোক্ষণ বেশ কষ্টে নিজের কৌতূহল দমিয়ে রেখেছিলেন তিনি। আফসার সাহেবের এ রুমের প্রতি তার কৌতূহল পহেলা হতেই। তিনি খুব করে জানতে চাইতেন আফসার সাহেব তাদেরকে এ রুমে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলো কেনো। কি আছে এ রুমে যার জন্য এতো নিষেধাজ্ঞা!
সালমা বেগম পুঞ্জীভূত কৌতূহল মেটাতে রুমে ঢুকলেন। একনজের পুরো রুম ভালোভাবে দেখলেন। রুমে অবস্থিত ডেস্কের ফাইলগুলো দেখলেন। তবে বুঝতে পারলেন না কিছুই। এক পর্যায়ে ডেস্কের ড্রয়ারগুলো খুলতে লাগলেন তিনি। প্রথম ড্রয়ারেই পেয়ে গেলেন একটি বাক্স। বাক্সটি সুন্দর নকশা করা কাগজে মোড়ানো। লাল রঙের একটি ফিতা দিয়ে বাক্সের মুখ কোনোমতে আটকে রাখা। বাক্সটি দেখে সালমা বেগমের কৌতূহল পূর্বের তুলনায় আরো বেড়ে গেলো। তিনি বাক্সটি ডেস্কে রেখে প্রথমে সেটির ফিতা খুললেন। অতঃপর বাক্সটি উন্মুক্ত করতেই তিনি আশ্চর্যান্বিত হলেন। বাক্সে রাখা জিনিসগুলো দেখে তিনি যেনো আকাশ হতে পড়লেন।
#চলবে