তবু_কেন_এত_অনুভব_সিজন_২?,১৭তম_পর্ব

0
1399

#তবু_কেন_এত_অনুভব_সিজন_২?,১৭তম_পর্ব
#written_by_Liza

ইনান বরফ এর বাক্স এনে ভেঙ্গচি কেটে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে “গালে লাগিয়ে নেন আফা, আজকে আর মেকাপ করা লাগবো না এতটুকুতেই সুন্দর লাগে”

অনু কাঁদতে কাঁদতে রুমে চলে যায়, দোয়া,’ তানাফকে শান্ত করিয়ে বলে “এভাবে গায়ে হাত তোলা টা কী ঠিক? এটা ঠিক করেন নি আপনি।”

আমার সামনে আমার ওয়াইফের গায়ে হাত তুললে আমি চুপ থাকবো? এতটা কাপুরুষ আমি নই দোয়া। আর সে অনেকদিন যাবত আপনার ক্ষতি করার চেষ্টায় আছে। তাকে কী করে ছাড় দেয়? (তানাফ)

দোয়া,’ তানাফের কথায় চুপ করে আছে।

দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে সবাই বেরিয়েছে,সবাই আজকে জঙ্গলের ভেতর হাটতে যাবে বলে প্লান করেছে।

অনুর সাথে আসা বন্ধুগুলোকে অনু বলছে “তৈরি তো তোরা? আজ দোয়াকে কিডন্যাপ করে সরিয়ে দিতে হবে”

অনুর ফ্রেন্ডরা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়। অনু তৈরি হচ্ছে বেরোনোর জন্য। এদিকে সবাই তৈরি যে যার রুমে।

সবাই বেরিয়েছে দল বেঁধে। দোয়ার হাতটুকু শক্ত করে ধরে রেখেছে তানাফ।

তানাফের আব্বু ইনানকে একপাশে নিয়ে গিয়ে বলে “মনে হচ্ছে অনু আজকেই কিডন্যাপ করাবে দোয়াকে। চড় খেয়ে হয়তো প্রতিশোধের আগু-ন জ্বলছে তার”

এক্স্যাটলি আংকেল আমিও এটাই বলতে চাইছিলাম। চলুন দেখি কি করা যায় (ইনান)

সবাই হাটতে হাটতে গভীর জঙ্গলে ঢুকে পরে,দোয়া তানাফের পাশে হাটছে।
অনু তানাফের পেছনে গিয়ে ইট হাতে নিয়ে মাথায় মে-রে দেয়।

তানাফ মাটিতে লুটিয়ে পরে, দোয়া চিৎকার দিয়ে উঠতেই অনু দোয়ার মুখ চেপে ধরে। দোয়াকে হাত মুখ বেঁধে অনুর দলবল নদীর পাড়ে চলে যায়।

ইনান জঙ্গলের ভেতর ধপাস করে পরে যাওয়ার শব্দ শুনে দাঁড়িয়ে পরে। ইনানের মনে কু গাইছে।

ইনান দৌড়ে দৌড়ে ডাকতে লাগলো “তানাফ স্যার,দোয়া ম্যাম। আপনারা কোথায়”

দোয়া নিজেকে ছাড়াতে প্রানপণে চেষ্টা করছে,দোয়ার হাতে থাকা কাঁচের চুড়িগুলো ভেঙ্গে যায় অনুর জোরজবরদস্তিতে।

ইনান হাঁটতে হাঁটতে তানাফের কাছে পৌছে যায়। তানাফকে এভাবে পরে থাকতে দেখেই ইনান বুঝে ফেলে অনুর প্লান।

ইনান ফরেন তানাফের আব্বু আম্মুকে ডেকে নিয়ে আসে।

ইনান দোয়ার খোঁজে চারদিকে দৌড়াচ্ছে দোয়ার কোথাও হদিস নেই। মাটিতে পরে থাকা কাঁচের চুড়িগুলো অনুসরণ করে যেতে লাগলো।

দোয়াকে একটা পাহাড়ের ডিবির নিচে আটকে রাখা হলো, ইনান সেখানে পৌছে গেলো ভাগ্যক্রমে ।

ইনান নিজেকে আড়াল করে তাদের উপর নজর রাখছে। অনু এসিড হাতে নিয়ে দোয়াকে বলছে “এই শরীর দেখিয়ে তুই তানাফকে কেড়ে নিয়েছিস,আজ তোর এই শরীর সৌন্দর্য জলসে যাবে।”

এসিড হাতে নিয়ে যেই না ছুড়ে মারবে অমনি ইনান হাতে লাটি নিয়ে অনুর হাতে ছুড়ে মা-রে।
হাত ফসকে এসিড অনুর পায়ে পরে।

অনু ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠে আর চিৎকার করছে। ছেলেগুলো অনুকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরে। ইনান মাটিতে পরে থাকা সেই লাটি দিয়ে সবাইকে ভয়ঙ্কর ভাবে আঘাত করে।

অনু মার খেয়ে আধম-রা অবস্তা। ইনান দোয়াকে ছাড়িয়ে, তাদেরকে আটকে রাখে।

দোয়া ইনানকে বলছে “কীভাবে সন্ধান পেলেন ভাইয়া? আপনার স্যার কেমন আছে?”

আপনার চুড়ির টুকরো গুলোর সাহায্য পেয়েছি। যদিও ভেতরে ভয় ছিলো এটা সাজানো প্লান ভেবে। পরে আল্লাহ সহায় হলো। চুড়ির ভাঙ্গা টুকরো গুলো জায়গায় জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো তাই অনুসরণ করে চলে এসেছি। আল্লাহ চেয়েছেন তাই পেয়েছি (ইনান)

দোয়া ইনানের কথায় ভয়ে কেঁপে কেঁপে বলে “চুড়ি গুলো অনুর জন্য ভেঙ্গে গিয়েছে,আমার শখের চুড়ি ছিলো। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্য। এই উছিলায় বেঁচে ফিরলাম”

ইনান দোয়াকে নিয়ে হোটেলে পৌছে যায়৷ তানাফ রুমে সেন্সলেস হয়ে পরে আছে। দোয়া দৌড়ে গিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে দেয় তানাফকে দেখে। তানাফের আব্বু দোয়াকে ইঙ্গিত করে বলে “ওঁকে বলে দাও ওর রেস্ট দরকার। পরে যেনো এসব কান্নাকাটি করে”

দোয়া চোখ মুছে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে ” আব্বু আপনিও তো এটাই চান আমি সরে যায় আপনার ছেলের জীবন থেকে। ঠিক আছে সরে যাবো। আমার জন্য আজ এই অবস্তা তার। আপনি ঠিক বলতেন আমার মত গাইয়ার জন্য এমন পরিবার মানায় না। আমি চলে যাবো আব্বু।আর আপনাকে সহ্য করতে হবে না এই গাইয়া মেয়েটাকে”

তানাফের আম্মু চুপ করে তানাফের আব্বুর দিকে তাকিয়ে আছে। তানাফের আব্বু কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারে না। ইনান চেয়েছিলো সবটা বলে দিতে কিন্তু তানাফের আব্বুর জন্য পারেনি। তানাফের আব্বু নিষেধ করে ইনানকে।

সবাই রুম থেকে চলে যায়। দোয়া তানাফের পাশে বসে কাঁদছে, মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। তানাফকে ছেড়ে যাবে ভাবতেই দোয়ার কান্নার বেগ বাড়তে শুরু করে। দোয়া নিজেকে কোনোভাবেই শান্ত করাতে পারছে না

দোয়া বিড়বিড় করে বলে “খুব কষ্ট হচ্ছে জানেন? আমি পারছিনা নিজেকে কন্ট্রোল করতে৷ কী করে আপনাকে ছাড়া থাকবো? যে বাড়ি আমি ছেড়ে এসেছি অভিমান করে সেই বাড়িতে কী করে ফিরে যাবো? তারা তো আমায় বোঝা ভেবে আপনার হাতে তুলে দিয়েছে, আজ আমার সেই ঠাঁই টুকু বিলীন হতে যাচ্ছে। আমার অস্তিত্ব নেই আর। আমি সব হারিয়ে ফেলেছি। যাকে ভালোবেসেছি তাকেও হারাতে বসেছি। আমি চলে যাবো অনেক দূরে আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি চাইনা আমার জন্য আপনার কোনো বিপদ হোক। আপনি আমাকে যেভাবে বিয়ে করে সকলের সামনে সম্মান দিয়েছেন উপকার করেছেন।আমিও আপনার জীবন থেকে সরে গিয়ে আপনাকে বিপদমুক্ত করবো চিরতরে ভালো থাকবেন।”

এই বলে দোয়া চোখ মুছে উঠে পরে,দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তানাফের আব্বু।

তানাফের আব্বুকে দেখে এড়িয়ে চলে যেতে চাইলেই তানাফের আব্বু বলে “এই মেয়ে শোনো।”

দোয়া মাথা নিচু করে চোখের পানি আড়াল করতে ব্যাস্ত। তানাফের আব্বু দোয়ার মাথায় হাত দিয়ে বলে “তুমি চলে গেলে কে আমায় আদা চা করে খাওয়াবে শুনি? আমার তো রোজ রোজ ব্রেড খেতে ইচ্ছা করে না। কে আমার খেয়াল রাখবে হুম? এতদিন আমার মেয়েটা রেখেছে সে যদি চলে যায় আমি তো উপোষ থাকবো,”

দোয়ার কানের পাশে ফিসফিসিয়ে বলে “তোমার শাশুড়ী আমাকে ডিম পাউরুটি খাইয়ে মে-রে ফেলবে এই অত্যাচার থেকে আমাকে বাঁচাও”

দোয়া এই কথা শুনে ফিক করে হেসে দেয়,অমনি তানাফের আম্মু বলে উঠে “কি বললে তুমি? আমি ডিম পাউরুটি খাইয়ে তোমাকে অত্যাচার করেছি?”

দেখলি দোয়া? শেষমেশ আমার নামে গীবত গাওয়া শুরু করলো তোর বাবা। তুই বল মা, যেই লোক ঠাঁঠ বজায় রেখে ভালো খাবার মুখে নেয় না, তাকে ডিম পাউরুটি খাইয়ে শাস্তি দেওয়া উচিৎ নয় কী? (তানাফের আম্মু)

দোয়া তাদের ঝগড়া দেখে কান্না ভুলে গিয়ে হাঁসছে মিটমিট করে৷ তানাফের আম্মু দোয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে “পাগল মেয়ে। কোথায় যাবি তুই? আমার ছেলের কাছেই থাকবি”

তানাফের আব্বু দোয়াকে হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে “কোথায় যাওয়া চলবে না,তোমার বাবার আদেশ। যাও রুমে গিয়ে ফ্রেস হও আমরা রওনা দিবো আজ বাড়ি।”

দোয়া খুশিতে চোখ মুছতে মুছতে রুমে পা বাড়ায়,তানাফ উঠে বেডে বসে আছে। তানাফকে বসা দেখে দোয়া দৌড়ে তানাফকে বুকে জড়িয়ে নেয়।

তানাফের গালে অজস্র চুমু এঁকে দেয় দোয়া। তানাফ শক্ত করে দোয়াকে বুকে আঁকড়ে ধরেছে। এদিকে পুলিশ এসে দরজায় টোকা দিয়ে গলা ঝাড়ি দেয়।
দোয়া তানাফকে ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ায়।

ইনান পুলিশের পেছন থেকে সরে এসে বলে “দোয়া ম্যাম পুলিশ আপনার জবানবন্দি নিবে। কী কী হয়েছে বলুন, ওখানে পুলিশ পাঠিয়েছে ধরে আনার জন্য।”

দোয়া এক এক করে সব বলে,সাথে তানাফ ও বলে। সবার জবানবন্দি নিয়ে অনুকে ধরে আনা হয়৷ অনুকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

______________________________

সন্ধ্যায় সবাই খাওয়াদাওয়া সেরে বাড়ির জন্য রওনা দেয়,বাড়ি ফিরে ইনানকে তানাফের আব্বু বলে “কাল তোমার আব্বু আম্মুকে বাসায় আসতে বলবা, দুপুরে একসাথে লাঞ্চ করবো আমরা”

ইনান মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সম্মতি দেয়। তানাফ ইনানের দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসে।

পরেরদিন ইনানের ফ্যামিলি বাড়ি আসে,ইনান ও তার বাবা-মা সবাই একসাথে বসে আছে।
তানাফের আব্বু ইনানের উদ্দেশ্যে বলে “ইনানের জন্য পাত্রী খোঁজা লাগবে না, আমার দেখা একটা পাত্রী আছে খুব মিষ্টি দেখতে। গ্রামের মেয়ে, যদি আপত্তি না থাকে আমরা দেখতে যাবো কাল”

ইনানের কথাটা শুনে মুহুর্তে বুক মোচড় দেয়। ইনান বসা থেকে দাঁড়িয়ে পরে আর বলে “মা মা মানে? কার পাত্রী, কীসের পাত্রী”

তানাফের আব্বু ইনানকে দেখে বলে “সেটা কাল’ই বুঝবে।আপনারা কী বলেন?”

আমরা আর কী বলবো? মেয়ে ভালো হলেই হয়। গ্রাম শহর ফ্যাক্ট না। হাহাহা (ইনানের আব্বু)

ইনান সকলের মাঝখান থেকে উঠে চলে যায়। ইনান মায়াকে ফোন করে বলে “আমার জন্য পাত্রী দেখছে আম্মু আব্বু, আমি তোমায় বিয়ে করতে চাই।”

পাত্রী যখন দেখেই ফেলেছে তাহলে করে নিন। আমার মত গ্রামের মেয়ের সাথে আপনার কখনোই হবে না। চুপচাপ বিয়ে করে নিন (মায়া)

শাট আপ মায়া,আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকে বিয়ে করতে চাই আমি, এটাই ফাইনাল। আমি এক্ষুনি গিয়ে তোমার কথা বলবো আম্মু আব্বুকে। (ইনান)

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here