একটু_ভালোবাসি,০৩,০৪

0
1797

#একটু_ভালোবাসি,০৩,০৪
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
#পর্ব – ০৩

অর্ণব ইলার কান্ড দেখে রেগে জোরে চিল্লিয়ে বলে,”স্টপ ইট।”

সাথে সাথে সবাই স্ট্যাচু হয়ে যায়। আর ভয়ে ইলার হাত থেকে ফোনটা পড়ে যেতে নিলে ইলা কোনমতে সেটা বাঁচিয়ে নেয়। অর্ণব ইলার সামনা এসে রাগান্বিত অবস্থায় ইলার হাত থেকে ছো মেরে ফোনটা নিয়ে নেও। তারপর উঁচু গলায় বলে,”হাও ডেয়ার ইউ টু টাচ মাই ফোন।”

ইলা বুঝতে পারছে যে অবস্থা ভালো না।তাই ইলা শান্ত না থেকে উল্টো গলা চেঁচিয়ে বলে,”ফোনই তো নিয়েছে আপনার বউকে তো আর ধরি নি। উফফফ যেমন ভাবে ঝাড়তে এসেছেন তাতে মনে হচ্ছে ফোন আপনার বিয়ে করা বউ।নিন নিন আপনার ফোন আপনার কাছেই রাখুন।চল তো মেঘা।”

বলেই অর্ণবের রাগের কবল থেকে বাঁচতে এক প্রকার দৌড়িয়ে পালায়। অর্ণব পিছন থেকে ইলাকে অনেক ডাকে কিন্তু কে শুনে কার কথা?আগে তো নিজে বাঁচি তারপর।

অর্ণবের রাগটা তরতর করে বেড়ে উঠল। কিছুক্ষন ভাবতেই মনে পড়ে গেল এই সেই মেয়ে যার সাথে সকালে রাস্তায় তার ঝগড়া হয়েছে।ব্যস!আরেক দফা রাগ উঠে গেল অর্ণবের। অর্ণব রাগ বুঝতে না পেরেই সীমান্ত এসে অর্ণবকে জিজ্ঞেস করে।

“হে রে অর্ণব, কে রে মেয়েটা?এভানে এসেই তোকে জড়িয়ে ধরল?”

“আমি কি জানি?তবে হে ওই মেয়ে এখানে বেশিক্ষন থাকলে আমি যে কি করতাম আমি নিজেও জানি না।”

সুজাতা ঠাট্টার ছলে বলে,”কি আর করতি যেভাবে এসে কিস করলো তুই হয়তো রিটার্ন কিস করতি।”বলেই সুজাতা বৃষ্টি সীমান্ত বিহান অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। অর্ণব রেগে সবাইকে বলে, “স্টপ।”

এবার সীমান্ত বিহান সুজাতা বৃষ্টি যেন অর্ণবের রাগটা বুঝতে পারে। বৃষ্টি বলে উঠে,”হয়তো মেয়েটা নতুন।তাই এসব করেছে।”

এর পরিপ্রেক্ষিতে বিহান বলে,”মেয়েটা নতুন না পুরান সেটা বিষয় না বিষয় হচ্ছে সে অর্ণবকে চিনে না তাই এসব করেছে।”

অর্ণব এদের কথার মাঝে বলে,”কে কাকে চিনে আর কে কাকে চিনে না সেটা ব্যাপার না। ব্যাপার টা হলো মেয়েটা আজ যা করল তাতে ওকে খেসারত দিতে হবে।”

বলেই অর্ণব একটা ডেভিল হাসি দেয়। তারপর সবাই মিলে ওখানেই আড্ডা দিতে লাগল।

_________________

ইলা অর্ণবের হাত থেকে বেঁচে মেঘাকে বলতে লাগে,”ওরে আল্লাহ আজ যা বাঁচাটাই না বাঁচলাম।”

মেঘাও বলে,”হে রে,ওই ভাইয়াটা যেভাবে রেগে গেছিলো আমি ভয়ই পেয়ে গেছিলাম সাথে আবার কিভাবে ধমক দিলো।”

ইলা এতে টিটকানি মেরে বলে,”আরে গলা আছে ওনার সেটা দেখিয়েছে আমিও দেখিয়ে দিয়েছি এই ইলা শেখের দম আছে।”

বলেই ইলা আর মেঘা হাই ফাইভ করল তারপর সোজা মারুফের কাছে চলে আসে। মারুফ এখন ইলাকে দেখেই মাথানত করে দাঁড়িয়ে আছে। ইলা চুটকি বাজিয়ে মারুফের দৃষ্টি আর্কষণ করেই বলে,”কি রে,দেখলি তো কিভাবে তোর টাস্ক করে দেখালাম।”

মারুফ ছোট মুখে শুধু হুম বলে।মারুফ ভেবেছিল মেয়েটা এতোকিছু করতে পারবে না কিন্তু মেয়েটা যে করে দেখিয়েছে তা দেখে এখন মারুফের মাথায় বাজ ভেঙে পড়েছে। ইলা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,”কি রে মাথা নিঁচু করে আছিস কেন?যা এখন নিজের টাস্ক কম্পিলিট কর।”

“প্লিজ ইলা ভার্সিটিতে আমাদের সবার একটা রেপুটেশন থাকে। প্লিজ এবারের মতো ক্ষমা করে দেও। আমি আর জীবনেও র‍্যাগিং করবো না প্লিজ।”

“সেটা অন্যদের বেলাও বুঝা উচিত ছিলো যে ভার্সিটিতে তাদেরও রেপুটেশন থাকে। কিন্তু তুমি সেটা ভাবো নি ইভেন আমার ক্লোজটিকেও(পিহুকে দেখিয়ে বলে) তুমি র‍্যাগ করেছো তোমার তো কোন মাফই নেই।”

ইলার সাথে সাথে মেঘাও বলে,”কেন যখন অন্যদের মুরগী বানিয়ে মাঠ ঘুরাতে তখন তোমাদের বুঝি খুব রেপুটেশন বাড়তো। এখন কোন কথা নেই সোজা গিয়ে নিজের টাস্ক কম্পিলিট করো।আর আমিও সেটা সুন্দর মতো ভিডিও করছি।”

মারুফ আর তার সঙ্গীরা আর কোন উপায় না পেয়ে সোজা প্যান্ট শার্ট খুলে জাস্ট আন্ডার প্যান্ট আর সেন্টু গেঞ্জি পড়ে মাঠে ঘুরতে লাগলো। আর মাঠের সবাই জড়ো হাসি ঠাট্টা করতে লাগল কেউ কেউ তো ভিডিও করতে লাগল। কিন্তু যারা ভিডিও করছে তাদের গিয়ে ইলা আর মেঘা বাধা দিচ্ছে কারণ ভিডিও গুলো পাবলিক হলে প্রবলেম হবে।

অর্ণব আর বিহান দূর থেকেই দেখল কিছু ছেলেকে কয়েকটা মেয়ে এমন অবস্থা মাঠ ঘুরাচ্ছে। সেসব মেয়ের মধ্যে ইলাকে দেখে এবার আর চিনতে অসুবিধা হলো না।বিষয় টা কি হচ্ছে তা দেখতে সামনে এগিয়ে একটা ছেলেকে অর্ণব জিজ্ঞেস করে,”এই ছেলে শুনো?”

একটা ছেলে অর্ণবের সামনে এসে সবিনিময়ে সালাম বিনিময় করে বলে,”জ্বি ভাইয়া বলুন।”

সীমান্ত জিজ্ঞেস করে,”ওখানে কি হচ্ছে।”

“ভাইয়া কয়েকটা ছেলেকে ওই মেয়েগুলো র‍্যাগিং করছে।”

এই কথা শুনে অর্ণবের মাথায় দপ করে আগুন জ্বলে উঠে শুধু অর্ণব না সীমান্ত বিহান সবাই যেমন অবাক হয় তেমন রাগও উঠে। অর্ণব ডেভিল হাসি দিয়ে বলে”বার বার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান এবার তোমায় ঘুঘু বধিবো পরাণ।মিস.ঝগড়ুটে জাস্ট সি হোয়াট ক্যান আই ডু।”

অর্ণব, বিহান,সীমান্ত, সুজাতা এবং বৃষ্টি মিলে ইলা, মেঘা আর পিহুর সামনে দাঁড়ায়। অর্ণব সোজা ইলার হাত ধরে প্রশ্ন করে,”ওদেরকে র‍্যাগিং করার সাহস তুমি কোথা থেকে পেলে?”

ইলা বুঝতে পারে অর্ণবের সামনে এখন টেকা যাবে না তাই ইলা ইনোসেন্ট ফেস করে বলে,”আরে আরে আমার লাগছে।ছাড়ুন আমার হাত।”

মেঘাও সমান তালে বলে,”এ’কি ভাইয়া ওর হাতে লাগছে তো ছাড়ুন।”

অর্ণব মেঘার কথা অগ্রাহ্য করে বলে,”লাগছে তো আমার কি?ওদের র‍্যাগিং করার সময় বুঝি লাগছিলো নাহ?”

“না লাগছিলো না।এখন ছাড়ুন। আপনি জানেন না আপনি কার হাত ধরেছেন?”

“তাই বুঝি তা কার হাত ধরেছি মিস.ঝগড়ুটে?”

“হেই ডোন্ট কল মি মিস.ঝগড়ুটে। আমার নাম ইলা, ইলা শেখ।”

“সে আপনি যে ক্ষেতেরই কচু হোন তাতে আমার কি?”

“আপনি জানেন না আমি কে?”

“তাই বুঝি কে?”

“আমি বিখ্যাত চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির ওনারের সান ইন লো।”

অর্ণব জেনো একটু অবাক হলো। তার মতে তার বাবার একটাই ছেলে আর সেটা হচ্ছে সে তাহলে এই মেয়েটার আবার কার কথা বলছে?অর্ণব আগ্রহের সাথে বলে,”মানে?”

“মানে আমি বিখ্যাত অর্ণব চৌধুরীর উডবি ওয়াইফ।”

কথাটা শুনে অর্ণব সহ সীমান্ত বিহান সুজাতা বৃষ্টি সবাই অবাক। কেননা অর্ণব চৌধুরীই ইলার হাত ধরে রেখেছে।

আসলে ইলা চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির অনেক নাম শুনেছে। ইভেন চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির ওনার আবরার চৌধুরীর ছবিও দেখছেন সাথে তার ছেলে অর্ণব চৌধুরীর অনেক নাম শুনলেও কখনো ছবি দেখে হয়ে উঠা হয় নি। অল্প বয়সে বিজনেসে কিভাবে উন্নতির শিখরে উঠেছে তা সবই ইলা জানে কিন্তু কখনো দেখে নি।তাই সামনে অর্ণব চৌধুরী থাকতেও তাকে চিনতে পারে নি। আর বিপদে কারোর কথা মাথাও আসছিলো না ইলার তাই ইলা অর্ণব চৌধুরী নামটাই নিয়ে ফেলে।

“কি হলো হাত ছাড়ুন। আমার উডবি হাজবেন্ট যদি জানতে পারে না কোনো পরপুরুষ আমাকে স্পর্শ করেছে তো তাকে গুলি করে মেরে ফেলবে।”

অর্ণব সাথে সাথেই হাতটা ছেড়ে দিয়ে বলে,”ওহ সর‍্যি মিস. আমি তো জানতামই না আপনি চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রি ওনার আবরার চৌধুরীর একমাত্র ছেলে অর্ণব চৌধুরীর উডবি ওয়াইফ। আমাকে ক্ষমা করবেন প্লিজ।”

অনেকটা অনুতাপের সাথেই অর্ণব কথাগুলো বলল।অর্ণবকে এভাবে অনুতাপ করতে দেখে সীমান্ত এসে বলে,”ব্রো হোয়াট আর ইউ সেয়িং।”

“আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি ব্রো ওনাকে স্পর্শ করে আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি।মিস.ঝগড়ুটে ওহ সর‍্যি মিস.ইলা শেখ আই ইম সর‍্যি।দয়া করে আমাকে মাফ করবেন।”

ইলা অনেক ভাব নিয়ে বলল,”ঠিক আছে ঠিক আছে।দ্বিতীয়বার আর সেম ভুল করবেন না।”

বলেই ইলা মেঘাকে নিয়ে যেতে যায় তখনই আবার পিছন থেকে অর্ণব ডাক দেয়।ইলা বিরক্তি নিয়ে পিছনে তাকাতেই অর্ণব বলে,

“দেখুন তো মিস ঝগড়ুটে এই কি আপনার উডবি হাজবেন্ট নাকি?”

বলেই অর্ণব তার ফোন থেকে একটা ছবি বের করে ইলার দিকে এগিয়ে দেয়। ইলা ফোনটা হাতে নিয়েই কাঁপতে শুরু করে কারণ ফোনে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আবরার চৌধুরী অর্ণবের চৌধুরী মানে তার সামনে থাকা ছেলেটার কাধে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর ছেলেটাও হাসছে। ইলার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে তার সামনে স্বয়ং অর্ণব চৌধুরী দাঁড়িয়ে আছে।

ইলাকে এমন স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মেঘা এসে বলে,”কি রে,কি এমন দেখচ্ছিস দেখি?”

বলেই মেঘা ছবি টা দেখতে লাগল।মেঘাও আগে কখনো অর্ণব চৌধুরীকে দেখে নি তাই তার অবস্থাও ইলার মতোই হয়েছে।

ইলা আমতা আমতা করে বলে,”আ…আ…আপনি অর্ণব চৌধুরী।”

অর্ণব মেকি হাসি দিয়ে বলে,”জ্বি আমিই অর্ণব চৌধুরী।”

ইলা আর মেঘা দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে মেকি হাসি দিয়ে চিল্লিয়ে বলে,”ভাগোওঅঅঅঅঅঅঅঅঅঅ।”

বলেই দৌড়াতে নিলেই সীমান্ত বিহান এসে মেঘা আর ইলার পথ আটকায়।অর্ণব কোন কথা না বলেই আবার ইলার হাতটা ধরে নেয়।

“সীমান্ত ওই মেয়েটার হাত ধর যাতে পালাতে না পারে।”

সীমান্ত অর্ণবের কথা মতো মেঘার হাত ধরে রাখে। ইলা অর্ণবকে বলে,”দেখুন কোথাও একটা মিস্টেক হচ্ছে,আমি বুঝিয়ে বলছি।”

“কোথাও ভুল হচ্ছে না। সকালে আমাকে বয়ফ্রেন্ড বানানো এখন আবার উডবি হাজবেন্ট আজ তোমার সব মিথ্যার খেল আমি বের করছি।আজ চোর হাতে নাতে ধরা পড়েছে। যা তো সুজাতা প্রিন্সিপাল স্যারকে ডেকে নিয়ে আয়।”

ইলা বুঝতে পারে এই ছেলেটাই সেই সকালের ছেলেআরও বুঝতে পারে যে এখন তার আর রক্ষে নেই।ইলা নিজের মনে মনে গালি দিতে থাকে,”এই ইলা এবার বোঝ ঠেলা, বাঘের ঘরে বাঘের সাথে সেল্ফি নেওয়ার কি জ্বালা?উফফ ভাল লাগে না।”

#চলবে

#একটু_ভালোবাসি
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
#পর্ব- ০৪

সুজাতা প্রিন্সিপালকে না পেয়ে অন্য একটা স্যারকে ডেকে আনে যে খুব কড়া ছিলো। স্যার এসে অর্ণবের সমস্ত কথা শুনে যেখানে অর্ণব এ এই মেয়েটা প্রথম দিব এসেই র‍্যাগিং শুরু করে দিছি।স্যার তো র‍্যাগিং কথা শুনে প্রচন্ড রেগে যায়। তিনি অর্ণবের কথা মতো ইলা আর মেঘাকে ভরা রোদে মাঠে এক ঘন্টা দাড় করিয়ে রাখায়।

প্রথম দিন ইলা ভার্সিটিতে এসেছে তাই কিছু বলতেও পারে না সবকিছু সয়ে নিতে হয়। অর্ণব যাওয়ার আগে ইলার কানে কানে বলে,”তুমি বুনো ওল হলে আমিও বাঘা তেতুল।আমার সাথে মিথ্যা বলার ফল আর পাঙ্গা নেওয়ার ফল তুমি হাড়ে হাড়ে টের পাবে মিস.ঝগড়ুটে অরুপে ইলা শেখ।”

কথাটা বলার সাথে সাথে ইলা অর্ণবের দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে।যা দেখে অর্ণব বেশ মজা পায়।

বর্তমানে,

“আচ্ছা ইলা তুই কি করতে চাইছিস বল তো?তোর হাফভাব আমার কিন্তু ভালো লাগছে না।”

“আমি কিচ্ছু জানি না।আগে চল ক্যান্টিনে যাই। ওখানে পিহু অনেকক্ষন ধরে অপেক্ষা করছে।”

ইলা আর মেঘা ক্যান্টিনে গিয়ে দেখে পিহু নেই।ইলা বুঝতে পারে পিহু ক্লাস করতে গেছে।কিছুক্ষণ পরে পিহু এসে দেখে ইলা আর মেঘা একসাথে কফি খাচ্ছে।

“কি রে,কোথায় ছিলি তোরা?আর ক্লাস করতে এলি না কেনো?”

ইলা স্ট্রেট বলে,”আজ ক্লাস হয়েছিল?”

“না রে,আমি তো শুধু ক্লাসে এমনিই বসে ছিলাম।আজ কোন ক্লাস হয়নি আর হবে বলে মনে হয় না। কিন্তু তোরা কোথায় ছিলি?”

পিহুকে মেঘা তাদের সাথে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা বলে।পিহু বলে উঠে,”এতো কিছু হয়ে গেছে এই টুকু সময়ের মধ্যে?”

“আমি ওই অর্ণব চৌধুরীকে ছাড়বো না। ওকে যদি আমি কেটে লবণ মরিচ দিয়ে মাখিয়ে না খেয়েছি আমার নামও ইলা না।”

“আর আমিও ওই সীমান্তকে ছাড়বো না। ব্যাটা বুইড়া যেমনে আমার হাত ধরছে মনে হচ্ছিল হাতটা ভেঙ্গেই দিবে।”

পিহু মেঘার কথার মধ্যেই বলে,”ওয়েট ওয়েট সীমান্ত ভাইয়া যফি বুড়ো হয় তো কি করে তোর হাত ভাঙতো।”

“আরে ওটা তো কথার কথা বাট অনেক জোরে ধরছিলো ওই সীমান্ত।”

“হুম বুঝলাম”

ইলা বিরক্ত হয়ে বলে,”চল আজ আর আমাদের ভার্সিটিতে কোন কাজ নেই।”

বলেই ইলা আর মেঘা একসাথে বাড়ি যাওয়ার পথে রওনা হলো।

_______________

অর্ণব নিজের কাজ করছে তখনই অর্ণবের কাছে একটা ভয়েজ মেসেজ আসে। অর্ণব ভয়েজটা শুনে বুঝতে পারে যে আজ ইলা যে শাস্তিটা পেয়েছে তার জন্য সম্পূর্ণ দোষটা ইলার ছিলো না।কিন্তু তাই বলে ইলার যে কোন ভুলই নেই সেটা বলা বাহুল্য।

অর্ণব নিজেই নিজেকে বলতে থাকে,”তুমি হয়তো ওদের র‍্যাগিং করো নি কিন্তু তুমি আমাকে যেভাবে নাকানিচুবানি খাইয়েছো তাতে যতই শাস্তি দেই না কেন সবই আমার কম লাগবে?বাই আই লাইক ইউর এটিটিউড।”

বলেই অর্ণব নিজের কাজে মন দিলো।

___________________

ইলা সন্ধ্যা থেকে ঘরে খিল মেরে বসে আছে। ভাবতে লাগলো কি করে অর্ণব চৌধুরীকে হেনস্তা করা যায়। ইতিমধ্যে ডিনারের টাইম হয়ে গেছে। তাই মিলি(ইলার বোন) এসে ইলাকে ডাকতে লাগল।মিলির ডাকে ইলা দরজা খুলে দাড়ালেই মিলি বলে,”কি রে,ঘরের দরজা বন্ধ করে কি করছিলি?প্রেম ঠ্রেম করছিলি নাকি আবার?”

“না রে তোর বোন এতো সুন্দর না যে কোন ছেলে তোর বোনকে গার্লফ্রেন্ড বানাবে।”

“সেটা তুই একদম ঠিক বলেছিস।”

মিলির কথায় ইলার রাগটা আরও বেড়ে যায়।তাও নিজের রাগ সংযত করে বলে,”কি বলতে এখানে এসেছিলি সেটা বল?”

“আম্মু তোকে ডাকছিলো ডিনারের জন্য।”

“ওকে, তুই যা। আমি আসছি।”

“আচ্ছা আপু। তুই প্রেম করবি কবে?”

ইলা মিলির দিকে গরম চোখে তাকিয়ে বলে,”তুই কি যাবি নাকি স্কেলের বাড়ি খাবি?”

মিলি ইলাকে পাত্তা না দিয়ে বলে,”জানিস আপু আজ সিক্সের স্টুডেন্টকে দেখলাম তার বিএফকে নিয়ে ঘুরতে অথচ আমাকে দেখ নাইনে পড়েও একটা বিএফ জোগাতে পারলাম না।”

মিলির আফসোসের সুর শুনে ইলা ফট করে হেসে দেয় তারপর মিলির গলা জড়িয়ে বলে, “ঠিক আছে আম্মুকে বলব নি আম্মু তোমার ছোট মেয়েটা বড্ড পেকেছে। ওকে বিয়ে দিয়ে দেও।”

“এই এই একদম না।জানিস আপু আজ আমাদের ক্লাসের একটা মেয়ে একটা ছেলেকে মেরেছে। ছেলেটা মেয়েটাকে বড্ড বেশি জ্বালাতন করছিলো পরে মেয়েটা সবার সামনে ছেলেটাকে যা মেরেছে না পুরা হিরো থুক্কু হিরোইন লাগছিলো।”

মিলির কথায় ইলা আইডিয়া পেয়ে যায় যে কিভাবে অর্ণবকে শায়েস্তা করা যায়। ইলা মিলিকে জড়িয়ে মিলির দুই গালে কিস করে বলে,”সোনা মোন্টু বোন আমার থিংকুউউউউউউ।”

“এই এই ছাড়। তোর বড্ড খারাপ স্বভাব হয়েছে।আমি মোটেও মেয়েতে ইন্টারেস্ট না।”

মিলিএ কথায় ইলার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে মিলি তাকে লেসবিয়ান বলেছে। ইলা মিলির পিছু করতে করতে বলে,”তবেরেএএএএএ”

ইলা আর মিলি দৌড়াতে দৌড়াতে ডিনার টেবিলে পৌছে যায়।পারভীন শেখ দুই মেয়ের এমন দৌড়াদৌড়ি দেখে তাদের আটকাতে গেলে উল্টো সে নিজেই তাদের মধ্যে পড়ে যায়।

মিলি ইলার হাত থেকে বাঁচতে পারভীন শেখকে ঢাল বানিয়ে বলে,”আম্মু গোওঅঅঅঅ তোমার এক মেয়ের হাতে তোমার আরেক মেয়ে আজ শহীদ হবে।বাঁচাও গো আমায়।”

“না আম্মু দেখো না তোমার মেয়ে সেই কখন থেকে আমার পিছু পড়েছে। আজ তো আমি ওকে শিক্ষা দিয়েই ছাড়বো।”

“চুপ্পপ্পপ্পপ।”

পারভীন শেখের কথায় ইলা আর মিলি সোজা দাঁড়িয়ে যায়।পারভীন শেখ রেগে বলে,”একদম চুপ দুজনে।বাড়িটাকে তোরা দু’জনে চিড়িয়াখানা বানায় রেখেছিস।এখন চুপচাপ দু’জন খেয়ে নে।”

মায়ের কথায় মেয়েরা শুধু মাথা নাড়িয়ে হ্যা নির্দেশ দেয়। তারপর চুপচাপ খাওয়া শুরু করে কিন্তু চুপচাপ কি আর থাকতে পারে সেই ফিসফিস করে কথা চলেই যায়।খাওয়া শেষে ইলা গিয়ে তাড়াতাড়ি মেঘাকে ফোন দেয়।

“হ্যালো শুনচ্ছিস।”

“হুম বল কি বলবি?”

“শোন আমার কাছে একটা প্ল্যান আছে।”

“কিসের?”

“অর্ণব চৌধুরীকে শিক্ষা দেওয়ার।” বলেই ইলার মুখে ডেভিল হাসি ফুটে উঠে।ইলা মেঘাকে সমস্ত প্ল্যান বুঝিয়ে দেয়।

“বাট ইলা ধরা পড়ে যাওয়ার রিস্ক আছে।”

“আরে চিন্তা নট ইলা যেখানে সেখানে বিপদের কোন চিন্তাই নেই।”

“তোর মনে হয় না ডায়লগ টা উল্টো হবে।”

“জানি না। আমার কথা শোন তুই পারবি তো?”

মেঘা একটু ভেবে বলে,”পারবো তো বটে কিন্তু শুনেছি অর্ণব ভাইয়া রোজ নাকি ভার্সিটিতে যায় না। কাল যদি না যায়।”

“আরে নো টেনসন। ওদের গ্যাং এর তো কেউ থাকবে তাতেই কাজ হবে।”

মেঘা একটু ভীত হয়েই বলে,”ওকে। যেহেতু সব অকাজে তোর সাথ দিছি এটাও দিতে হবে।”

ইলা কিঞ্চিৎ অবাক হয়ে বলে,”কেন তুই চাস না ওদের শিক্ষা দিতে?”

“চাই তো বিশেষ করে ওই সীমান্ত বুড়োকে।”

“ওকে তো ঠিক টাইমে ভার্সিটিতে চলে আছিস।”

“ওকে।”

এরপরে আরও কিছুক্ষণ কথা বলে ইলার ফোন কেটে দিল। ইলার চুল আচড়াতে আচড়াতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলতে লাগল,”অর্ণব চৌধুরী খুব শখ না বাঘা তেতুল সাজার।ওকে ফাইন আপনি বাঘা তেতুলই হোন।আমিও দেখিয়ে দিব কিভাবে সেই বাঘা তেতুল চটকিয়ে রস বানাতে হয়।”

বলেই ইলা মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো।ইলা সেই ব্যবস্থাও করে রেখেছে যে অর্ণব ভার্সিটিতে না গেলে কি কি করবে?তখনই ইলার ফোনে একটা মেসেজ আসে।ইলা ফোন চেক করে মুচকি হেসে বলে,”অর্ণব কাল তুমি দেখবে এ ইলা কেয়া চিজ হে।”

_______________

ভোরের তীক্ষ্ণ সূর্যের আলোয় রুমটা ভোরে উঠেছে। পাখির কিচিরমিচির শব্দে পরিবেশটা মুখর। স্নিগ্ধ আলোয় ফুটে উঠেছে একজনের মুখ, এমন সময় সেই পুরুষের মুখ দেখলে যে মেউ যে প্রেমে পড়তে বাধ্য তা মানা যায়। অর্ণব ঘুমুঘুমু চোখ খুলে দেখে কেউ একজন অতি সযত্নে জানলার পর্দা গুলো দিয়ে দিচ্ছে যাতে অর্ণবের চোখে আলো না পড়ে। অর্ণব হাফ শোয়া অবস্থায় চোখ ঢ ঢলতে ঢলতে বলে,

“তুমি?”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here