একটু_ভালোবাসিসি,৯,১০

0
1642

#একটু_ভালোবাসিসি,৯,১০
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
#পর্ব- ০৯

ইলা সকাল থেকেই লক্ষ্য করছে তার মায়ের হাবভাব ভালো না।কেমন যেনো ঘর দুয়ার সব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করছে।মনে হচ্ছে কোন বিশেষ মেহমান আসবে।ইলা আজ ভার্সিটিতে যায় নি কিছু বিশেষ কাজ ছিলো আর সকাল থেকে তার মা একবার সোফা মুছাচ্ছে তো একবার জানলা।

ইলা এতোক্ষণে একটু ফ্রি হলো।ইলা কিউরিওসিটি নিয়েই প্রশ্ন করল,”আম্মু এতো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কার জন্য?”

“তোর আব্বুর বন্ধু আসবে তাই।”

“ওহহহ।”

“হুম”

“তো সে কে?তার জন্য এতো খাটতে হচ্ছে।”

পারভীন শেখ মেয়ের কথা শুনে অবাক।তার রুষ্ট কন্ঠে বলে,”সে আমাদের বাড়ির অতিথি।ভুলে যেয়ো না।”

“আচ্ছা।বাট আমি আর খাটতে পারবো না।”

“চুপচাপ কাজ করো।”

ইলা দেখলো ১০ টা বেজে গেছে।ইলা তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে নিলো।৩০ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে বের হতেই মেঘা কল করলো।

“হে রে সব ঠিক ঠাক করে নিয়েছিস তো।”

“হে আর তুই আবির, জয়,কুনাল,ইশান আর পিহুকে বলেছিস তো।”

“হে সবাইকে বলেছি সবাই রাস্তার মোরে অপেক্ষা করবে।”

“ওকে আমি এখুনি আসছি।”

আসলে ইলা আর মেঘা পথশিশু আর বৃদ্ধদের জন্য টাকা কালেক্ট করে তাদের কিছু কিনে দেয় বাহ ভালো কিছু খাওয়ায়।ইলা তাড়াহুড়া করে বের হতেই পারভীন শেখ ইলাকে ডাক দেয়।ইলা জানে এই মুহুর্তে কেন তার মা ডাক দিয়েছে।

“দুপুরে যেনো এসে খাওয়া হয়। আর এই নে।”

বলেই পারভীন শেখ ইলার হাতে ৩০০০ টাকা ধরিয়ে দিলো।ইলা জানে তার মা তার সব কাজে তাকে সাপোর্ট এবং সাহায্য করে।

“দুপুরে আসতে পারবো কি নাহ জানি নাহ?”

“তা বললে হবে না।আসতেই হবে।”

“দেখা যাক।”

ইলা কোনমতে পারভীন শেখকে ম্যানেজ করে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে।

_______________________

“আজ প্রচন্ড রোদ রে?কি করে এই রোদের মধ্যে চাঁদা তুলবো?”

“কিচ্ছু করার নেই মেঘা এটাই করতে হবে।”

পিহু রেগে বলে,”এই কুনালটা কি আজ আসবে না নাকি?”

মেঘা পাশ থেকে বলে উঠে,”নে শয়তানকা নাম লিয়া ওর শয়তান হাজির।”

সবাই দেখে কুনাম দৌড়াতে দৌড়াতে এসে পৌছায়।কুনাল ক্লান্ত স্বরে বলে,”সর‍্যি রে,ঘুম থেকে উঠতে লেট হয়ে গেলো।”

“তুই কোনদিন ঠিক টাইমে আসিস শুনি?”

কুনাল ইনোসেন্ট ফেস করে বলে,”কেন কোনদিন নাহ?”

মেঘা ডোন্ট কেয়ার ফেস করে বলে,”কোনদিনও নাহ।”

“তো ভালো ওলয়েজ লেটের খাতায় এটলিস্ট নাম লিখাতে তো পারলাম।”

মেঘা আরও কিছু রেগে বলতেই যাবে তার আগেই ইলা থামিয়ে বলে,”এখানে আমরা ঝগড়া না চাঁদা উঠাতে এসেছি। সো যে যার কাজ করো।”

আবির ইলাকে উদ্দেশ্য করে বলে,”ছেলেরা শপিং মলে চাঁদা উঠাতে যাবে আর মেয়েরা রাস্তায় কারণ মেয়েদের দেখলেই ছেলেরা চাঁদা আরও বেশি দিবে।”

এতে পিহু চিল্লিয়ে বলে,”হবে না।শপিং মলে তোমরা ছায়ায় ছায়ায় ঘুরবে আমরা এই রোদে ঘুরবো অসম্ভব।”

পিহুর সাথে তাল মিলিয়ে ইলাও বলে,”হে হবে না। আমরা শপিং মলে ঘুরবো আর ছেলেরা রাস্তায়।”

ইলা সবাইকে থামিয়ে বলে,”থাম তোরা। আমি আবির কুনাল একসাথে রাস্তায় চাঁদে তুলবো।মেঘা, পিহু,ইশান আর জয় শপিং মলে তোল। তোদের শপিং মল থেকে চাঁদা তোলার ইচ্ছা তো তোরা সেখান থেকেই তোল।”

মেঘা বুঝেছে ইলা রাগ করেছে তাই ইলাকে মানানোর জন্য বলে,”আমিও তোর সাথে রাস্তায় রাস্তায় চাঁদা তুলবো।”

আবির কথার প্রসঙ্গেই বলে,”আচ্ছা ইলা দেখো। একসাথে দুই কাজ হবে না।আজ বরং শপিং মল থেকে তুলি কারণ প্রচন্ড রোদ এতে আমরা বেশি ক্লান্ত হয়ে যাবো।অন্য একদিন যেদিন ওয়েদারটা একটু উষ্ণ থাকবে সেদিন না হয় রাস্তা থেকে তুলবো।”

ইলাও বিষয়টা বুঝে সায় দিয়ে তার পর পাশেরই একটা শপিং মলে চলে গেল।শপিং মলটা বেশ বড় তাই ইলা আবির ইশান ডান দিকে যায় আর কুনাল জয় পিহু মেঘা বাম দিক থেকে তোলা শুরু করে।

ইলা একটা দোকানে ঢুকে তাদের চাঁদা তোলার বিষয় পরিষ্কার করে বলে। সবকিছু শুনে দোকানদার তার হাতে ১০ টাকা ধরিয়ে দিলো।বিষয়টা ইলার ততোটা খারাপ লাগে না কারণ এসবে সে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।কিন্তু আবির দেখে প্রচন্ড রেগে যায় আবির কিছু বলার আগেই ইলা আবিরকে নিয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যায়।

“তুই এভাবে আমাকে টেনে আনলি কেন?আমাদের কি ওই ব্যাটা ফকির পেয়েছে নাকি?”

“উফফফ ছাড় তো আবির?ইশান কোথায়?”

ইলা আর আবির এদিক ওদিক খুঁজে দেখে ইশান একটা কসমেটিক দোকানের মেয়েকে ইম্প্রেস করতে চাইছে।

“দেখ ইলা, ইশান ফ্ল্যাট করা শুরু করেছে তাও এখানে?”

“ওর ধান্দাই তো এটা।চল এই দোকান থেকেই চাঁদা তুলবো।”

ইলা সেই কসমেটিকের দোকানে ঢুকে সেই মেয়েটাকে সব বললে মেয়েটা তাদের সাহায্যের জন্য ৫০০ টাকা দিয়ে দেয়।যা দেখে ইলা আবিরও খুশি হয়।

“তা মিস. আপনার নাম্বারটা কি পেতে পারি?”

“ইশানননন।”

ইলার ডাকে ইশান আবিরকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।

“ধন্যবাদ আপু সাহায্য করার জন্য।”

এভাবে ইলা ইশান আর আবির চাঁদা তুলতে থাকে।চাঁদা তোলার সময় অনেকে ইলার বাড়ির ফোন নাম্বারও চাচ্ছে তাদের বাড়ির লোকের সাথে কথা বলবে তাই।বাধ্য হয়ে ইলাকে নাম্বারও দিতে হয়েছে তবে ইলা ভুল নাম্বার দিয়েছে।তা নিয়ে মজা করতেও আবির ইশান ইলার পিছু ছাড়ে নি।চাঁদা তুলতে তুলতে ইশান আর ইলা ছেলেদের জামা প্যান্টের দোকানে ঢুকে।আবির মেঘা পিহুর খবর নেওয়ার জন্য ফোন করে বাহিরে কথা বলতে থাকে।

_________________

অর্ণবের কিছু স্টাইলিস ড্রেস কিনার ছিলো তাই সে আজ শপিং করতে এসেছে।কোন জামাই যেনো অর্ণবের পছন্দ হচ্ছে না।অর্ণব দোকানদারের সাথে কথাই বলছে তখনই একটা মেয়েলী স্বর শুনলো।

“আসসালামু আলাইকুম। শুনছেন আমরা একটা সংগঠন থেকে এসেছি।আমরা সাধারণত পথশিশুদের সাহায্য নিয়ে কাজ করি।আপনি যদি কিছু সাহায্য করতেন।”

অর্ণব পিছনে ফিরে ইলাকে আবিষ্কার করে।ইলা তো অর্ণবকে দেখে অবাকের চরম শিখরে উঠে।অর্ণব অবাক কন্ঠে বলে,

“তুমিইইইই?”

“আপনিইইই।”

ইশান দু’জনের দিকে তাকিয়ে বলে,”তোমরা একে অপরকে চিনো নাকি?”

ইলা বিড়বিড় করে দাঁত কিড়মিড় করে বলে,”চিনবো না।এতো আমার জাত শত্রু।যেখানেই যাই কুকুরের মতো আমার পিছু পিছু চলে আসে।আর ইলা তোর কি ভাগ্য রে?সবসময় এই লেজকাটা হনুমানটার সামনেই তোকে পড়তে হয়।”

“হেই এরকম বিড়বিড় করে কি বলছো হে?”

“আমার যা ইচ্ছা তা বলবো কেন?আপনার সমস্যা হচ্ছে নাকি?”

“আমার নামে নিন্দা করছো আর আমাকে জিজ্ঞেস করছো আমার সমস্যা কি নাহ?বাহ ভাই বাহ।”

“এই আপনি ছোটবেলায় জেন্ডার পড়েন নি নাকি?নাকি আপনার চোখ কানা।আমি মেয়ে তা দেখতে পারছেন না।বাহ বোন বাহ হবে?”

“সাধে কি আপনার নাম মিস.ঝগড়ুটে দিছি।একটা কথাও মাটিতে পড়তে দেন না।”

“সাধে কি আপনার নাম মি.এটিটিউড কিং দিছি।এটিটিউডের কি বাহার হুউউ।”

ইশান দু’জনের ঝগড়ায় পাগল হয়ে বলে,”চুপপপপপ। ইলা আমরা ঝগড়া না কাজ করতে এসেছি এটা কিন্তু তুই বলেছিস।”

“তো আমি কি কাজ করছি না নাকি?বরং যে কাজে বেগড়া দিতে আসছে তাকে আমি কথা শুনাচ্ছি।”

“আমারও কোন ইচ্ছা নেই কারোর কাজে বেগড়া দেওয়া।”

ইলা অর্ণবকে আর পাত্তা না দিয়ে দোকানদার কাকুকে সব খুলে বললে তিনি তাদের সাহায্যের জন্য কিছু টাকা দেয়।তারপর দোকানদার কাকুটা সবিনিময়ে জিজ্ঞেস করে,

“মা তোমার নাম কি?”

“জ্বি আংকেল ইলা শেখ।”

“তোমার বাবা কি করে?”

“জ্বি বিজনেস করে।”

“বলছি তোমার বাবার নাম্বারটা দেওয়া যাবে।”

এবার যেনো ইলা একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায়। পাশে দাড়িয়ে অর্ণব সবই দেখছিলো। অর্ণব দোকানদার কাকুর উদ্দেশ্য বলে,

“আংকেল খবরদার বাড়ির বউ করার উদ্দেশ্য নাম্বার নিবেন না।”

দোকানদার কাকু কিছু না বুঝেই বলে উঠে,”কেন বাবা?”

“আরে আংকেল মেয়ে পাক্কা গুন্ডি।আমাদের ভার্সিটিতেই পড়ে।এই তো ক’দিন আগে একটা ছেলে প্রপোজ করায় ছেলেটাকে বেধারম মারলো।ছেলের বাবা সুপারিশ করতে আসায় তাকে কি মারটাই না মারলো।”

ইলা অর্ণবের এসব কথা শুনে হতবাক।সে কবে কাকেই বাহ মারলো।অর্ণব দোকানদার কাকুকে ইশারা করে কাছে আসতেই বলে,”এখানে সাধু সাজছে কিন্তু পাক্কা গুন্ডি কতো যে খুন করেছে তার হুস নেই।এছাড়া ওর বাবা একজন পুলিশ। কিন্তু ও সবাইকে বলে বেড়ায় বিজনেস করে মিথ্যা বলে কাকু মিথ্যা। মোটেও মেয়েটাকে বিশ্বাস করবেন না।আমি আপনার ছেলের বয়সী তাই আপনার ভালোর জন্যই বলছি।”

এবার যেনো দোকানদার কাকুটা ভয় পেয়ে গেলো।ইলা অর্ণবের দিকে একবার অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে তারপর কাকুর উদ্দেশ্য বলে,

“কাকু নাম্বার দিবো?”

“না মা লাগবে না।তুমি এবার আসতে পারো।”

“জ্বি কাকু।”

ইলা আর ইশান বেড়িয়ে গেলো।অর্ণবও সুযোগ বুঝে বেরিয়ে পড়ল।আবির এসে খবর দিয়েছে ওরা বাহিরে অপেক্ষা করছে।তখনই পিছন থেকে অর্ণব ইলাকে ডাক দেয়।

“এই যে মিস.ঝগড়ুটে।”

ইলা পিছনে ফিরে কপট রাগ দেখিয়ে বলে,”কি হয়েছে দোকানি লোকটার কাছেও আমার বদনাম করেও শান্তি হয় নি বুঝি?”

অর্ণব ইলার কোন কথা না শুনে কিছু টাকা আবিরকে দিয়ে বলে,”আমিও চাই যাতে তোমরা পথশিশুদের হাসাতে পারো। আর তাতে আমার কিছু টাকা তোমাদের সাহায্যে করবে।”

ইলা ভাবতেও পারে নি অর্ণব তাদের কাছে সাহায্যের জন্য এসেছে।অর্ণব ইলাকে আড়চোখে তাকিয়ে বলে ইশানকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“তোমাদের লিডারকে বলে দিয়ো সব জায়গায় তেজ মানায় না।কিছু কিছু জায়গায় শত্রুও মিত্র হয়।”

বলেই অর্ণব চলে যায়।এদিকে অর্ণবের কথাগুলো ইলার মাথার উপর দিয়ে যায়।

#চলবে

#একটু_ভালোবাসি
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
#পর্ব- ১০ (পাকা দেখা)

“কিইইই কাল আমাকে ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে মানে?”

ইলা যেনো হকচকিয়ে সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলো।ইলা আর মিলি দুজনে মিলে কার্টুন দেখছিলো।পারভীন শেখ এসেই ইলার পাশে বসে বলেছিল যে কাল তাকে ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে এতেই ইলা এমন রিয়েক্ট করে।

“মানে কোন ছেলে আমায় দেখতে আসবে আর কেন আমায় দেখতে আসবে?”

“বোকার মতো কথা বলিস না ইলা?ছেলেপক্ষ কি জন্য দেখতে আসে তা কি তুই জানিস নাহ?”

“মানেএএএএএ?”

“এতো রিয়েক্ট কেন করছিস?তুই তো নিজেও চাইতি যাতে কেউ তোকে দেখতে আসুক আর তোর বিয়ে ঠিক হোক।”

“হে চাই কিন্তু…… ”

“তাহলে তোর সমস্যা কোথায়?তুই কি কাউকে পছন্দ করিস?”

“আরে না না আমি আবার কাকে পছন্দ করবো।তুমি আমাকে আগে বলবে না তাহলে আজই পার্লারে গিয়ে সাজা শুরু করতাম।”

“এতো সাজাসাজির দরকার নেই।”

“উফফফ আম্মু জীবনে প্রথম আমাকে কোন ছেলে দেখতে আসবে উফফ আমার তো ভেবেই লুঙ্গি ড্যান্স দিতে ইচ্ছে করছে।আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে।”

মিলি পাশ থেকে পারভীন শেখের উদ্দেশ্য বলতে লাগলো,”আচ্ছা যে দেখতে আসবে তার কি ছোট কোন ভাই আছে?”

ইলা আর পারভীন শেখ দু’জনেই আড়চোখে মিলির দিকে তাকালো।মিলি দু’জনের নজর দেখে আমতা আমতা করে বলতে লাগলো,”না মানে আপুর সাথে যদি আমারও সেটিং হয়ে যায়।”

ইলা মিলির মাথায় একটা চাট্টি মেরে বলে,”আম্মু দেখেছো তোমার ছোট মেয়েটা কেমন পেকেছে?”

“হুম তা তো দেখছি।যতই হোক বড়দের থেকেই তো ছোটরা শিখে। যেখানে বড় বোন লজ্জায় মুখ ঢাকার বদলে নাঁচছে সেখানে ছোট বোন বিয়ের কথাই বলবে এটাই স্বাভাবিক। আমার হয়েছে কপাল কি মেয়ে যে জন্ম দিলাম।”

ইলা পারভীন শেখকে নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে বলে,”উড়নচন্ডী,গুন্ডি আর লজ্জাহীন মেয়েকে।”

“এই এই ছাড় আমাকে।আমি মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যাবো।”

“আ’ম সো হ্যাপি জীবনে প্রথম কেউ আমায় দেখতে আসবে। ওই ঢিঙ্কা চিকা ঢিঙ্কা চিকা।”

“পৃথিবীতে মনে হয় তুই প্রথম এক মেয়ে যে লজ্জায় মুখ ঢাকার বদলে এভাবে নাঁচছিস।”

ইলা মা’কে অগ্রাহ্য করে আগের মতোই নাঁচতে শুরু করল।

________________________

অর্ণবকে জোর করে আশরাফ চৌধুরী আর আশা চৌধুরী আশরাফ চৌধুরীর বন্ধুর বাসায় নিয়ে যাচ্ছে।অর্ণব বেশ ভালো করেই জানে তারা তাকে মেয়ে দেখাতে নিয়ে যাচ্ছে।এতে অর্ণব তার বাবার উপর কথাও বলতে না।অর্ণবের সাথে সাথে সীমান্তও যায়।

ইতিমধ্যেই তারা আশরাফ চৌধুরীর বন্ধুর বাসায় পৌঁছে গেছে।আশরাফ চৌধুরীর বন্ধু ইসতিয়াক শেখ তার বন্ধুর ফ্যামেলিকে খুব ভালো ভাবে সম্মান জানিয়ে বাড়িতে করায়।

ইলা একটা নীল শাড়ি পরেছে,চুল গুলো হালকা কার্ল করা।মুখে হালকা মেকআপ,গায়ে হালকা কিছু জুয়েলারি পড়া,হাত ভর্তি চুড়ি।ইলাকে দেখতে আজ অনেক সুন্দর লাগছিলো।

“বাহ আপি, তোমায় তো আজ খুব সুন্দর লাগছে। নজর না লেগে যায়।”

ইলা আবার মিলির মাথায় এক চাট্টি মেরে বলে,”বেশি পাকনামি কথা বলিস না।”

পারভীন শেখ ইলাকে দেখে ঘাড়ে চুলের আড়লে কাজল পড়িয়ে দেয়।

“মাশাল্লাহ আমার মেয়েটাকে তো আজ ভারি সুন্দর লাগছে।নজর না লেগে যায়।”

“আরে আম্মু নজর না লাগলে ছেলের আমাকে পছন্দ হবে কি করে?”

“এই আবার কথার ঝুড়ি ছুড়লো।ছেলেপক্ষের সামনে বেশি বকবক করবি না।”

“ওকে মাই সুইট ডার্লিং।”

পারভীন শেখ মেয়েকে এমন ভাবে ধরে নিয়ে যাচ্ছে যাতে মনে হচ্ছে ইলা সবে নতুন নতুন হাঁটা শিখেছে।ইলা বিষয়টা বেশ মজার লাগছে। পারভীন শেখ ইলার হাতে একটা জুসের ট্রে ধরিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে ধরে। ইলা হাটতেই পারছে না শাড়ি পড়ে আর বিড়বিড় করে,

“আল্লাহ আমি কি শাড়ি সামলাবো নাকি ট্রে।এটা শাড়ি না মশারি সামলাতেই তো পারছি না।আল্লাহ কোন মতে এই পুলসিরাত পাড় করে দেও প্লিজ।”

ইলা খুব সাবধানে ট্রে টা নিয়ে একটা একটা করে জুস সবাইকে দিতে লাগলো।এমন সময় একটা গ্লাসের জুস অর্ণবের দিকে এগিয়ে দিতেই অর্ণবের মুখ দৃশ্যমান হলো।মুহুর্তেই অবাকের আধার তার মুখে ধরা দিলো।ইলাকে যেনো এই মুহুর্তে বোবায় ধরেছে এতোটাই অবাক হয়েছে যে কোন কথাই মুখ থেকে বের হচ্ছে না।

এদিকে অর্ণব অনেকক্ষন ধরে মেয়েটাকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুখ তুলে দেখে ইলা।মুখ থেকে অস্ফুটস্বরে বেড়িয়ে গেলো,

“তুমিইইইইই।”

পাশে সীমান্ত ফোন টিপছিলো।অর্ণবের ডাকে সীমান্ত তাকিয়ে দেখে ইলা। সীমান্তও সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে পড়ে।আশরাফ চৌধুরী এভাবে নিজের ছেলের ডাকে বলে উঠে,

“অর্ণব তুমি কি ইলা মামনিকে চিনো?”

ইলা নিজে বিড়বিড় করে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বলে,”চিনে মানে হাড়ে হাড়ে চিনে।জাত শত্রু বলে তো কথা।”

কথাটা কেউ না শুনলেও অর্ণব ঠিকই শুনেছে।ইসতিয়াক শেখ স্বানন্দে বলে,”ছেলেমেয়ে হয়তো আগে থেকে পরিচিত।তাদের একটু আলাদা কথা বলার ব্যবস্থা করলে কেমন হয়?”

এতে আশরাফ চৌধুরী খুশিতে গদগদ হয়ে বলে,”আরে বন্ধু এতে পারমিশন নেওয়ার কি আছে?যাও অর্ণব তুমি গিয়ে ইলার সাথে আলাদা ভাবে কথা বলো।”

ইসতিয়াক চৌধুরী নিজের মেয়ে ইলাকে বলে,”যাও ইলা অর্ণবকে নিজের রুমে নিয়ে যাও।”

ইলা রাগে বলে,”চলুন আমার সাথে।”

অর্ণব ইলার পিছু পিছু গেলে সীমান্তও যেতে ধরে কিন্তু পরক্ষনেই মনে পড়ে ছেলে আর মেয়েকে আলাদা ভাবে কথা বলতে বলেছে কোন তৃতীয় ব্যক্তি না তাই সীমান্ত আর যেতে পারে নি।

অর্ণব ইলার পিছু পিছু ইলার রুমে যায়।ইলা ঘরে ঢুকিয়েই গগন চিৎকার দিয়ে বলে,”আপনি আমাকে দেখতে এসেছেন?”

“আমি যদি জানতাম মেয়ে তুমি তো কোনদিনও আসতাম নাহ?”

“এহহহ আমি কোনদিনও আসতাম না হইছে।”

তারপর কিছুক্ষণ থেমে ইলা অর্ণবের দিকে আঙুল তুলে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে বলে,”এই এই আপনি আমায় ফলো করছেন নাকি?না মানে যেখানেই আমি থাকি দেখি আমার পিছু পিছু আপনিও চলে আসছেন।মানে টা কি মি.লেজকাটা হনুমান।”

“হেই হোয়াট ইজ লেজকাটা হনুমান।”

“লেজকাটা হনুমান মিনস যার লেজটা কাটা আর মুখটা লালে ভরা ঠিক আপনার মতো।যখনই দেখি তখনই রাগে মুখ লাল। হুম ঠিক এমন।”

ইলা মুখ ফুলিয়ে অর্ণবকে ব্যঙ্গায় যা দেখে অর্ণব আরও রেগে যায়।অর্ণব রেগে বলে,”এহহহ আইসে সেলিব্রেটি ওনার আমি ফলো করবো।কেন ভাই দুনিয়ার কি মেয়ের অভাব পড়ছে।”

“আপনাকে দেখে তো বোঝাই যায় না যে আপনি একটা মূর্খ।”

“মানে?”
______________________

সীমান্ত অনেকক্ষন ধরে উসখুস করছে।সীমান্ত বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে যে ওই ঘরে এখন সুনামি চলছে।তাই সীমান্ত আর নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে উপরে চলে যাওয়ার জন্য ইসতিয়াক শেখকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“আংকেল আমি ছাদে যাই।আসলে এখানে একা বোর হচ্ছি তো তাই।”

“হে বাবা,ওদিকে ছাদ যাও।”

ইসতিয়াক শেখের বলতে দেরি সীমান্তের যেতে দেরি না।সীমান্ত চলে গেলেই আশরাফ চৌধুরী বলে,

“দেখ বন্ধু আমি চাই আমাদের বন্ধুত্বটা সম্পর্কে পরিণত হোক।”

“আমিও তাই চাই বন্ধু।”

“তাহলে শুভ কাজে দেরি কিসের?আমি চাই এক সপ্তাহের মধ্যেই বিয়েটা হোক।”

এতে পারভীন শেখ আশরাফ চৌধুরীকে বলে উঠে,

“দেখুন ভাইসাব,মেয়ে ছেলের মতামতটাও তো দরকার। আর এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে।”

আশা চৌধুরী পারভীন শেখকে বলে,

“ভাবি আমি জানি আমার ছেলে দ্বিমত থাকবে না।সে আমার মুখের উপর কোন কথাই বলবে না।আর আপনার ভাই একটা প্রজেক্টে ২ সপ্তাহ পরে বাহিরে যাবে।আবার সেই কবে ফিরবে তা বলা যাচ্ছে না। বছর খানেকও লাগতে পারে আবার মাসখানেক তাই আমরা আর দেরি করতে চাইছি না।”

ইসতিয়াক শেখ পারভীন শেখকে বলে,

“আহা তুমি এতো চিন্তা করছো কেন?আমাদের মেয়ে ওই বাড়িতে ভালোই থাকবে আর ইলা তো সবসময়ই বলতো বিয়ে করবে বিয়ে করবে।দেখো ওর এই বিয়েতে দ্বিমত থাকবে না।”

“তোমাদের যা ভালো মনে হয় তাই করো।”

পারভীন শেখ আর কিছু বললো না।সে নিজেও চাচ্ছে না এতো ভালো সমন্ধ হাত ছাড়া করতে।এছাড়া ইলা যে ওই বাড়ি গিয়ে ভালো থাকবে তা সে নিজেও জানে।

__________________________

সীমান্ত ইলার রুমে ঢুক্স দেখে দু’জনেই একদম মারপিট করার অবস্থা। ইলা অর্ণবকে বলে

“এই যে স্বয়ং মেয়েকে আপনি ছেলে বানিয়ে দিয়েছেন।”

“এই তোমার মাথায় কি কমন সেন্সটুকুও নেই নাকি।ভাই সবাইকে বলা যায়।”

“তাই বুঝি তো যান না নিজের বাবাকে গিয়ে ভাই বলুন আমাকে কেন বলতে আসছেন।”

সীমান্ত রুমে ঢুকে বলে,”এই তোমরা একটু শান্ত হও।”

কিন্তু কে শুনে কার কথা যে যার মতো ঝগড়া চালিয়েই যাচ্ছে।

“এই তুমি এতো ঝগড়ুটে কেন বলো তো?”

“আপনি এমন ঘাড়তেড়া কেন বলুন তো?”

অর্ণব বিরক্ত কন্ঠে বলে,”ওহ আল্লাহ তুলে নেও আমায় নইলে মই দেও আমি উপরে উঠে যাই।এই মেয়ের জামাই হওয়া থেকে মরে যাওয়া অনেক ভালো।”

“এহহ আমি মনে হয় আপনার বউ হওয়ার জন্য এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছি।”

“তো বাহিরে গিয়ে বলো না বিয়েটা তুমি করবে না।”

“কেন আপনি বলতে পারছেন না।”

“আমি কেন বলবো?”

ইলা হকচকিয়ে উঠে বলে,”তার মানে আপনি বিয়ে করতে রাজি?”

অর্ণব অপ্রস্তুত গলায় বলে,”একদমই না।তোমার মতো জাহেল মেয়েকে বিয়ে করার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো।”

সীমান্ত আর সহ্য করতে না পেরে বলেই উঠে,”চুপপপপপপপ।”

সাথে সাথে ইলা আর অর্ণব চুপ হয়ে যায়।

“কি শুরু করেছিস তোরা?যখনই দেখা হয় টম এন্ড জেরির মতো ঝগড়া করিস?আর কেউ কারোর থেকে কম নাহ?আর অর্ণব তুই বলেছিলি নাহ আল্লাহ আমায় উঠায় নেও এখন আমি কই আল্লাহ এই ঝগড়ুটের হাত থেকে আমায় উঠায় নেওঅঅঅঅঅঅঅঅঅঅ।”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here