একটু_ভালোবাসি,১১,১২

0
1634

#একটু_ভালোবাসি,১১,১২
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
#পর্ব- ১১

ইলা, অর্ণব আর সীমান্ত খাটে গোল হয়ে বসে আছে।কিছুক্ষণ আগেই ইলা আর অর্ণবের ঝগড়া শেষ হলো তবুও এখনও দু’জন দু’জনের তাকিয়ে কিছুক্ষণ পর পরক ফোস ফোস করছে।

“এই তোরা এই ফোঁস ফোঁস বন্ধ করবি?”

অর্ণব রেগে সীমান্তকে বলে,”দেখ সীমান্ত যাই হয়ে যাক।আমি এই মেয়েকে কখনোই বিয়ে করবো না।”

ইলা অর্ণবের কথা শুনে আরও চেঁতে বলো,”ওহ হো আমি মনে হয় বিয়ে করার জন্য বসে আছি।লিসেন আমিও আপনাকে বিয়ে করবো না।”

অর্ণব কিছু বলার আগেই সীমান্ত থামিয়ে দেয়,”এই তোরা কি ঝগড়া করেই দিন কাভার করবি নাকি বিয়েটা ভাঙার চেষ্টা করব?”

“কিভাবে ইয়ার? আমি কিছুই বলতে পারবো না।”

ইলা তেড়ে এসে বলে,”তো আমিও কিছু বলতে পারবো না।”

সীমান্ত বিরক্ত প্রকাশ করে বলে,”তাহলে আর কি দু’জনে ঝগড়া করে বিয়েটা করে ফেলো।তবে যাই বলিস কাপল তোরা ভালো হবি বেস্ট ঝগড়ুটে কাপল ইন দ্য ওয়াল্ড।”

অর্ণব আর ইলা একসাথে চিৎকার করে বলে,”নোওঅঅঅঅঅঅঅঅঅঅঅঅঅঅঅঅ।”

ইলা বুদ্ধি বের করে বলে,”ওকে ফাইন একসাথে দু’জনে বলবো যে বিয়েটা আমরা করতে চাই না।”

এতে সীমান্ত আর অর্ণব সায় দেয়।সীমান্ত বলে উঠে,”তাহলে দেরি কিসের আংকেল আর বড় আব্বুকে এখুনি গিয়ে বলে আসি।”

“হে সীমান্ত ভাইয়া, চলো।”

সীমান্ত অর্ণব আর ইলা একসাথে রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িং রুমে যেতেই অবিশ্বাস্য ঘটনা দেখে।যা দেখে ইলা ধপ করে মাটিতে বসে পড়ে।

ইলা দেখতে পায় ইসতিয়াক শেখ আর আশরাফ চৌধুরী হাতে হাত রেখে কথা দিচ্ছে।আশরাফ চৌধুরী বলে,”তোর মেয়ে আজ থেকে তোর শুধুর একার মেয়ে না আমারও মেয়ে।আগামী সপ্তাহেই ইলা আর অর্ণবের বিয়ে হবে এটা আমাদের প্রতিজ্ঞা।”

অর্ণব এটা শুনে থ হয়ে গেছে মুখ দিয়ে কথা বলার কোন বোধই অর্ণবের নেই।ইলা মাটিতে বসে মাথায় হাত দিয়ে বলে,”ইলা, তু তো গায়া।”

সীমান্ত ইলা আর অর্ণবের এমন হাল দেখে মুচকি হেসে মনে মনে বলতে থাক,”যাক বাবা,তাহলে ইলা আর অর্ণব হবে এখন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ঝগড়ুটে কাপল।যা হলো মন্দ নয় কিন্তু।”

পারভীন শেখ ইলাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে বলে উঠে,”কি রে ইলা এভাবে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছিস কেন?”

ইলা মায়ের কথা শুনে তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ায়।এভাবে বসে থেকে নিজে আর লজ্জা পেতে চায় না।আশা চৌধুরী ইলার কাছে এসে ইলার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”মামনি এভাবে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকা ভালো না এতে যে অকল্যান হয়।”

ইলা বিড়বিড় করে রেগে বলে,”আর অকল্যান অকল্যানের সাথে বিয়েই হচ্ছে এখন কল্যানটাই বাহ কি আর অকল্যানটাই বাহ কি?”

“কিছু কি বললে মামনি?”

“না…না আন্টি।”

“এ’মা বোকা মেয়ে কিসের আন্টি আমাকে মা বাহ আম্মু বলে ডাকবে।”

ইলা নার্ভাসনেসে বলেই ফেলে,”ওকে মম আন্টি।”

আশা চৌধুরী ইলার কথা শুনে হেসে বলে,”ওকে তোমার যা ইচ্ছা তাই বলো।”

অর্ণব ইলার কাহিনি দেখে বিড়বিড় করে বলে,”উহহহহ এখানে এসে আমার মমের কাছে সাধু সাজা হচ্ছে আর আমার কাছে পাক্কা ঝগড়ুটে রাণী।”

কথাটা কেউ নাহ শুনলেও ঠিকই ইলা শুনে ইলাও বিড়বিড় করে বলে,”কেন আপনার জ্বলে?”

“না তুমি কি হাইড্রোজেন নাকি যে আমাকে জ্বালাবে?”

“তা আপনিও কি দাহ্য পর্দাথ যে তেল দিতে ছিটছিট করে জ্বলে উঠতাছেন।”

“এই তুমি…….”

“কি রে অর্ণব আলাদা কথা বলেও মন ভরে নি এখানেও ফুসুর ফুসুর।”

আশা চৌধুরী এই ফিসফিস আওয়াজ শুনতে পারছিলেন তাই একটু লজ্জায় ফেলতেই এমন কথা বলে।অর্ণব মাথা চুলকাতে চুলকাতে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে। অর্ণব ভালো করেই জানে তার মা এসব কেনো করছে?কিন্তু সে তো এই বিয়ে কখনোই করবে না।

তারপর সবাই মিলে লাঞ্চ করে নিলো।লাঞ্চ করার সময় ইলা আর অর্ণব মুখোমুখি বসে ছিলো।ইলা অর্ণবের দিকে তাকিয়ে কটমট করে খেতে থাকে মনে হচ্ছে খাবার না অর্ণবকেই গিলে খাবে।অর্ণব ইলার তেজ আরও বাড়াতে বলে,

“আন্টি মাছটা নিশ্চয়ই তাজা ছিলো তাই নাহ?”

পারভীন শেখ সবিনিময়ে উত্তর দেয়, “হে বাবা তাজা বলতে কাটার পরেও অনেক লাফিয়েছে।”

“আসলে আন্টি কিছু কিছু মাছ থাকে তেজ কোন মতে যায় না। মরে গেছে তাও দেখুন কিভাবে তেজ দেখাছে।”

সম্পূর্ন কথাটাই অর্ণব ইলাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল।ইলাও পালটা উত্তরে বলে,”আসলে কি বলো তো আম্মু।মাছটা তেজ দেখিতেছে দেখেই না এতো ইয়াম্মি হয়েছে।তেজ দেখিয়েছে বলেই লবণ মরিচ দিয়েছো ভাজা ভাজা করেছে।তবে কি বলো তো জ্যান্ত অবস্থায় মাছটা খুব সাংঘাতিক ছিলো। ধরতে এলেই তার ক্ষতি হয়েছে।তাই এসব মাছের থেকে না দূরে থাকাই ভালো।”

অর্ণব যেনো ইলার কথায় আরও রেগে গেলো তাও নিজের রাগটা সংবরণ করলো।এদিকে উপস্থিত সবাই যেনো এই মাছের কাহিনি কিছুই বুঝছে না।

________________________

ইলার মাথায় এখন বোম ফেটেছে।অর্ণবরা চলে গেছে অনেকক্ষন আগে। পারভীন শেখ বলে গেছে যে আগামী সপ্তাহেই তাদের বিয়ে সেটা শুনেই ইলার মাথায় বাঁশ পড়েছে।ইলা কিচ্ছু ভাবতে পারছে না কি করবে নাহ করবে?তখনই ইলার ফোনে একটা আননোন নাম্বার থেকে কল আসলো।

ইলা আননোন নাম্বার রিসিভ করে না তাই ফোনটা ধরলো না।ফোনটা বাজতে বাজতে কেটে গেল কিন্তু তারপর আবার ফোন বাজচ্ছে এভাবে ৩ বার বাজতেই ইলা বিরক্তি নিয়ে ফোন ধরতেই অপরপাশের ব্যক্তি কন্ঠস্বর শুনে রাগ আরও এক ধাপ বেড়ে গেল।

“হ্যালো।”

অর্ণবের কন্ঠস্বর শুনতেই ইলা রেগে উত্তর দেয়,”আপনি আমায় কেন ফোন করেছেন?বাসায় দেখে যাওয়া বুঝি এখন হজম হচ্ছে না।”

“এই একদম বাজে কথা বলবে নাহ।”

“তাই তো আপনার সাথে কি আমার বেয়াইনের সম্পর্ক নাকি যে বাজে কথা বলবো?”

“উফফ এই মেয়েটার সাথে কথা বলাই মানে ঝগড়া। ”

“হ্যালো মিস্টার আপনি কিন্তু আমায় ফোন দিয়েছেন আমি না।সো ডোন্ট টক টু এনিথিং এবাউট মাইসেল্ফ।”

“আমি মনে হয় তোমার কথা বলার জন্য ফোন দিয়েছি।”

অর্ণব একটু শান্ত হয়ে বলে,”ইলা।”

অর্ণবের শান্ত স্বরে ইলা একটু অবাক হয়।ইলা কোনরুপ ঝগড়া না করেই শুধু হুম বলে।তারপর অর্ণব ঝড়ের বেগে বলে,

“তুমি বিয়েটা না করে দেও।”

“আমি পারবো না। আব্বু নিজে কথা দিয়েছে এখন দুনিয়া উল্টে গেলেও আব্বু কথার খেলাপ করবে না।”

“আর আমার ড্যাড মনে হয় শুধু বসে আছে।দেখো আমি ড্যাডের মুখের উপর কথা বলতে পারব না।”

“আমিও পারবো না।”

“তো কি বিয়ে করে বসে থাকো।”

ইলা অর্ণবের রাগে পেট্রোল ঢালতে বলে,”জ্বি না বসে থাকবো না আপনার মাথা খাবো।”

অর্ণব রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বলে,”কাল ভার্সিটিতে সঠিক সময়ে চলে আসবে।”

বলেই অর্ণব কট করে ফোনটা কেটে দিলো।এতে ইলা রাগ হয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠল,”লেজকাটা হনুমান কোথাকার।”

_______________________

ভার্সিটি সবাই গোল হয়ে বসে আছে।মেঘা আর পিহু কিছুক্ষণ আগেই সব জানতে পেরেছে। এতে পিহু অবাক হলেও মেঘা প্রচন্ড রেগে যায়।মেঘার কথা তুই আমার ব্রেস্ট ফ্রেন্ড তুই কাল কেন আমাকে জানাস নি?আজ কেনো বুক ফুলিয়ে জানাতে এলি?

অনেক কষ্টে ইলা মেঘাকে শান্ত করেছে।এখন ইলা,পিহু,মেঘা,অর্ণব,সীমান্ত গোল হয়ে বসে আছে।তারা প্রধানত ভাবছে কি করে বিয়েটা ভেস্তে দেওয়া যায়।তবে এই ৫ জনের মধ্যে ২ জনের মনে তো অন্য কিছুই ঘুরছে।

ইলা অনেক ভেবে চিন্তে বলল, “আপনি বাড়ি থেকে পালিয়ে যান।”

অর্ণব অবাক কন্ঠে উচ্চারণ করে,”কি?”

“হে এছাড়া আর যে কোন উপায় নি।”

“তা তোমার এই ষ্টুপিড মার্কা বুদ্ধি নিশ্চয়ই তোমার ব্রেন দিয়েছে।”

“মানে আপনি আমার ব্রেনকে ইনসাল্ট করছেন?”

“আজ্ঞে হে কি মাথা তোমার ইনসাল্ট করছি তাও বুঝো না।”

ইলা উঠে অর্ণবকে মারতেই যাবে তার আগেই মেঘা আর পিহু ইলাকে ধরে শান্ত করবে।অর্ণব টিটকানি মেরে বলে,”যেই না চুনোপুঁটি আমাকে আসছে আবার মারতে।”

ইলা রেগে বলে,”তার মানে আপনি স্বীকার করছেন আপনি জলহস্তি।”

অর্ণব রেগে বলে,”কি আমি জলহস্তী?”

“তা নয়তো কি?”

“তোমাকে আমি……”

“চুপপপপপ।”

সীমান্তের ডাকে অর্ণব শান্ত হয়।সীমান্ত রেগে বলে,”হে রে তোরা কি দেখা হলেই ঝগড়া করতে হবে?নইলে বুঝি তোদের পেটের ভাত হজম হয় না নাকি।”

ইলা এতে বলে উঠে,”ঠিক বলেছেন ভাইয়া।এর তো আমার সাথে ঝগড়া না করলে পেটের ভাত হজমই হয় না।”

অর্ণব রেগে সীমান্তকে বলে,”তুই দেখছিস না এই মেয়েটা কি রকম ফাউল মার্কা আইডিয়ে দিচ্ছে।”

“ফাউল কই ভালো আইডিয়াই তো দিলাম।”

“আজ্ঞে না একেবারে ফাউল আইডিয়া।আর এতোই যদি পালানোর শখ থাকে তো নিজে গিয়ে পালাও না।”

“আমার বয়ফ্রেন্ড থাকলে সেই বুদ্ধি আর দিতে হতো না।”

“তা আমার মনে হয় ডজন খানেক গার্লফ্রেন্ড।”

“কেন মেয়েরা আপনার নাম শুনলেই ফিদা সেখানে ডজন খানেক তো কমই।”

“ওহ তোমার বুঝি জ্বলছে মেয়েরা আমাকে দেখে ফিদা তাই।”

ইলা হেসে বলে,”লাইক সিরিয়াসলি আপনার মতো হনুমানকে দেখে আমার জ্বলবে।আমার মতে সেসব মেয়েদের চয়েজ খারাপ তারাই আপনাকে চয়েজ করে।”

“হুউউ বোঝাই যাচ্ছে তোমার জ্বলছে।আমার উপর এতো মেয়ে ফিদা বলে কথা।”

“পাগলে কি না বলে ছাগলে কি না খায় এসব দশা আপনার ভিতরে প্রকাশ পায়।”

“ইউউউউ……”

#চলবে

#একটু_ভালোবাসি
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
#পর্ব- ১২

ইলা হাতের নখ কামড়াচ্ছে।এটা ইলার একটা বদ অভ্যাস বটে যখনই বেশি টেনসন করে তখন ইলা হাতের নখ কামড়ায় যেমন একটু আগে সে বাড়িতে টর্নেডো বাধিয়েছে তাও বাড়ির লোকের কোনো হুস নেই।

একটু আগে,

ইলা বাড়িতে এসেই রাগ করে ফ্রেস না হয়ে সোফার উপর বসে পড়ে।আসলে ইলা রাগ করে নি কিন্তু তার মা’কে তো দেখাতে হবে যে সে খুব সিরিয়াস আর গম্ভীর মুডে আছে তাই এমন রাগের ভঙ্গি।

পারভীন শেখ মেয়ের এমন গম্ভীর মুখ দেখে এগিয়ে এসে বলে,

“কি হয়েছে ইলা?এভাবে ভার্সিটি থেকে এসেই গম্ভীরভাবে বসে আছিস কেন?”

ইলা মনে মনে বলে,”ইলা এই তো সুযোগ এখন তোকে তোর এক্টিং এর বেস্ট পার্ফোমেন্স দিতে হবে।”

“কি হইছে মানে?কি হওয়াতে বাকি রাখছো তোমরা?”

ইলার উচ্চ কন্ঠ শুনে পারভীন শেখ একটু অবাক হয় তারপর নিজেকে সংযত করে বলে,

“ইলা বাড়িতে এসে এ’কি অশান্তি তুই লাগিয়েছিস?”

“হে এখন তো আমাকে অশান্তিই লাগবে এই জন্যই তো আমাকে বাড়ি থেকে বিদায় করতে চাচ্ছো।কি ভেবেছো আমি কিছু বুঝি না।”

পারভীন শেখ এবার কিছুটা আন্দাজ করে ইলার পাশে বসে বলে,”ইলা কি হয়েছে ভার্সিটিতে আর তুমি এমন কেন ব্যবহার করছো?”

ইলা এবার কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে,”আম্মু আমার কোম ফ্রেন্ড এর বিয়ে হয় নি।আর তুমি কি এই নিষ্পাপ অবলা শিশুকে এখুনি বিয়ে দিচ্ছো।আম্মু এই নিষ্পাপ শিশু কি করে তার মা-বাবাকে ছাড়া থাকবে বলো।”

এবার পারভীন শেখ বলে ইলার কানটা ধরে বলে,”তবে রে তাহলে এতোক্ষণ আমার সাথে অভিনয় চলছিলো।ভালো সমন্ধ পেয়েছি এতে আপত্তি কিসের ছেলে দেখতেও ভালো আর তুই তো দেখার আগ পর্যন্ত ঢিং ঢিং করে নাঁচছিলি তো এখন না কেন?তোর বাবার এক কথা বিয়ে তোকে করতেই হবে।”

বলেই পারভীন শেখ ইলার কান ছেড়ে রান্নাঘরের দিকে গেলো।ইলা চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলতে লাগলো,

“দেখো আম্মু জোর করে সব হলেও পড়া আর বিয়ে হয় না আম্মু আমি বিয়ে করবো না।আম্মু ও আম্মু শুনো এ্যাাাা ধুর ভাল লাগে না।”

ইলা বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,”আগে যদি জানতাম ওই লেজকাটা হনুমান আমাকে দেখতে আসবে তাহলে আমি রাতেই বাড়ি ছেড়ে পালাতাম।”

ইলা আবার বলতে লাগলো,”আম্মু আমি কিন্তু বিয়ে করবো নায়ায়ায়ায়ায়া।”

“বিয়ে তুই করবি তোর বাপ করবে।”

“তবে তুমি আব্বুকেই আরেকটা বিয়ে দিয়ো।”

পারভীন শেখ খুন্তি হাতে নিয়ে বেরিয়ে বলো,”তবে রেএএএ”

ইলা চিৎকার করে বলে,”ইলা পালায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া।”

সেই যে ইলা একটা দৌড় দিয়ে ঘরে ঢুকেছে আর এখনো বের হয় নি।

_______________________

ডিনার টেবিলে অর্ণব তার বাবার সামনে বসে আছে।অনেকক্ষণ ধরেই অর্ণব আশরাফ চৌধুরীকে একটা কথা বলতে চেয়েও বলতে পারছে না শুধু আমতা আমতা করছে।

“অর্ণব যা বলার স্পষ্ট ভাবে বলো এমন আমতা আমতা করে কি লাভ?”

“আসলে ড্যাড আসলে……”

“কি আসলে আসলে?”

“ড্যাড তোমার মনে হচ্ছে না আমার একটু আগেই বিয়ে হউএ যাচ্ছে।”

আশরাফ চৌধুরী চোখ বড় বড় করে তাকায়। তারপর গম্ভীর কন্ঠে বলে,

“তোমার কি কাউকে পছন্দ অর্ণব?”

“নো ড্যাড।”

“মেয়ে কি অসুন্দর দেখতে?”

“নো।”

“মেয়ের কোয়ালিফিকেশন কি খারাপ?”

“নো।”

অর্ণব বুঝতে পারছে না তার ড্যাড কেন তাকে এসব প্রশ্ন করছে?অর্ণবের ভাবনার মাঝেই আশরাফ চৌধুরী বলে উঠে,

“তুমি নিশ্চয়ই জানো আমি কথা দিয়েছি আর আমি কথার খেলাপ করি না।”

অর্ণব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,”ইয়েস ড্যাড। আই আন্ডারস্ট্যান্ড হোয়াট ক্যান ইউ সে?”

আশরাফ চৌধুরীর খাওয়া শেষ। খাওয়া শেষে তিনি অর্ণবের কাধে হাত রেখে বলে,”তুমি তোমার ড্যাডের উপর বিশ্বাস রাখতে পারো।তোমার ড্যাড তোমার জন্য ভুল মেয়ে সিলেক্ট করবে না।”

“আই নো ড্যাড।”

_______________________

চারিদিকে উষ্ণ আবহাওয়া প্রবাহমান।পাখির কলরবে ইলার ঘুম ভাঙে। যেনো প্রকৃতি জানান দিচ্ছি আর দু’দিন পরে ইলা আর অর্ণবের বিয়ে।ইলা আড়মোড়া ঘুম ভেঙে উঠে বসে চোখ ঢলতে ঢলতে ভাবতে থাকে।এই কয়দিন যতবার অর্ণবের সাথে দেখা হয়েছে ততবারই ঝগড়া কিন্তু বিয়ে ভাঙার কোন উপায়ই বের করতে পারে নি।আজ ইলা মেঘা অর্ণব আর সীমান্ত শপিং করতে বের হবে।ইলা নিশ্চিত জানে আজও তার সাথে অর্ণবের ঝগড়া হবে। ইলার এসব ভাবতে ভাবতে পারভীন শেখ ইলাকে ডাকতে আসে।

“কি রে ইলা,এতো বেলা হয়ে গেছে এখনো ঘুমাচ্ছিস। জানিস অর্ণব সেই কখন থেকে ফোন করছে?”

ইলা মনে মনে বলে,”ওই লেজকাটা হনুমানের তো কোন কাজ নেই আমাকে জ্বালানো ছাড়া তাই তো সকাল সকাল ফোন দিয়ে আমার মাথা খাচ্ছে।”

“এই তো উঠে ফ্রেস হয়ে নিচ্ছি।”

বলেই ইলা উঠে ফ্রেস হয়ে কিছু খেয়েই রেডি হতে থাকে।ইতিমধ্যেই ইলার মায়ের আবার ডাক এলে ইলা পাত্তা না দিয়ে রেডি হয়ে ফোন টিপতে টিপতে ড্রয়িং রুমে এসে বলে,

“আম্মু আমি কিন্তু রেডি তোমরা কখন বের হবে?”

এই বলেই ইলা ফোন টিপতে টিপতে ধুম করে সোফায় বসলো।ইলা বসার সাথে বুঝলো আজ সোফাটা এতো নরম কেন?ইলা বিষয়টা পাত্তা না দিয়েই ফোন টিপতে লাগলো।

হটাৎ ই পেটে কারোর স্পর্শে ইলা সঙ্গে সঙ্গে পিছনে ফিরলে অর্ণবকে আবিষ্কার করে।অর্ণবকে এতো কাছ থেকে ইলার ধুক করে হার্টবিট বেড়ে গেলো।খোঁচ খোঁচ চাপ দাড়ি,ব্রাউন চোখ,মেয়েলী গোলাপি ঠোঁট,চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করা।এক কথায় যেকোনো মেয়ে অর্ণবের এমন রুপ দেখে ক্রাস খেতে বাধ্য।কই ইলা তো আগে এমন ভাবে অর্ণবকে দেখে নি।

অর্ণব ইলার নার্ভাসনেস বুঝে ইলার আরেকটু কাছে এসে নেশাক্ত কন্ঠে বলে,”এভাবেই দেখতে থাকবেন নাকি উঠবেন নাহ আপনার যে ওয়েট আমার কোমড়ের পক্ষে বহন করা সম্ভব হচ্ছে না হাতি।”

হাতি নামটা শুনেই ইলা তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে তেড়ে গলায় বলল,”কি ব্যাপার সকাল সকাল আমার বাড়ি হামলার কারণ কি?আর আমি হাতি এই বডিকে কেউ হাতি বলবে আমার আম্মু তো আমায় শুটকি বলে আর আপনি কি না আমায় হাতি বলছেন।আমি হাতি হলে আপনি কি হে?”

“কুল মিস হাতি এভাবে হট হলে চলবে না।”

“আমি ওলয়েজ হট থাকবো তাতে আপনার কি?”

অর্ণব ইলার আপাদমস্তক দেখে ইলার কাছে এসে বলে,”সে তো দেখাই যাচ্ছে আপনি ফুল হট।”

ইলা অর্ণবের চাহুনি বুঝে ওড়না ঠিক করতে করতে বলে,”নিজের নজর সামলান আর আপনি আমাদের বাড়ি কি হে?”

আসলে সকাল সকাল অর্ণবের বাবা ইলার বাবা-মার জন্য গাড়ি পাঠিয়ে দেয়। তাই অর্ণব বাধ্য ছেলের মতো ইলার ফ্যামেলিকে রিসিভ করতে ইলাদের বাড়ি আসে।কিন্তু ইলা সেটা জানতো না তাই ইলা অর্ণবকে না দেখেই অর্ণবের কোলে বসে পড়ে।অর্ণব ইলাকে জ্বালাতেই ইলার পেটে হাত দিলেই ইলা পিছনে ফিরে অর্ণবকে আবিষ্কার করে।ইলার মতো অঅর্ণবেরও ইলাকে দেখে হার্টবিট বেড়ে যায় কিন্তু ইলাকে জ্বালাতেই অর্ণব সেটা বুঝতে দেয় না আর তারপর তো ঝগড়া।

“এই যে লেজকাটা হনুমান উত্তর দিন।”

“পাগলের প্রলাপে এই অর্ণব চৌধুরী কান দেয় না।”

“যে নিজেই পাগল সে আর কি পাগলের প্রলাপে কান দিবে?”

“এই তুমি…….”

“অর্ণব বাবা দুঃখিত তোমাকে এতোক্ষণ অপেক্ষা করানোর জন্য।”

ইলা আর অর্ণবের কথার মাঝেই পারভীন শেখ চলে আসে।পারভীন শেখকে দেখে ইলা আর অর্ণব চুপ হয়ে যায়।

“না আন্টি কোন সমস্যা নেই।”

“এই যে দুলাভাই আমিও কিন্তু যাচ্ছি।যাই বলেন আমার একমাত্র বোনের বিয়ে আমাকে কিন্তু স্পেশালি শপিং করিয়ে দিতে হবে।”

“মিলি এসব কি হচ্ছে?”

“আপুউউউ…..”

“তোমার যা লাগবে আমি কিনে দিবো।কাউকে কিনে দিতে হবে না।”

ইলা কথাটা অর্ণবের দিকে তাকিয়েই বলল।অর্ণব প্রতিউত্তরে বলে “তুমি আমার একমাত্র শালী।তোমায় শপিং করিয়ে দিবো না তো কাকে দিবো?”

তারপর সবাই মিলে গাড়িতে করে শপিং মলে পৌঁছে যায়।শপিং মলে গিয়েই পারভীন শেখ সবার সাথে কুশল বিনিময় করে।

অনেকক্ষণ ধরেই ইলা শপিং করে।মেঘা ফোন করে বলে দিয়েছে সে আসতে পারবে না তার কোন একটা সমস্যা আছে।এতে ইলা ভীষণ মন খারাপ করেছে।ইলা ঘুরতে ঘুরতে একটা গাউনের দিকে নজর গেলো।গাউনটা পুরো মেরুন কালারের তার মধ্যে গোল্ডেন স্টোন দেওয়া।ইলার গাউনটা বেশ পছন্দ হলো তবে নিজের জন্য না বরং পিহুর জন্য। পিহুর মেরুন রং খুব পছন্দের তাই।

ইলা গিয়ে দোকানে সেই গাউনের প্রাইজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেই বলে সেটা নাকি সেল হয়ে গিয়েছে।ইলা যখনই জিজ্ঞেস করে কে কিনেছে ঠিল তখনই অর্ণব এসে হাজির।

“আমি কিনেছি।”

ইলা অর্ণবকে দেখে একটু অবাক হয় কারণ ইলার জানামতে অর্ণবের কোন বোন নেই তাহলে এটা কার জন্য।

“তা আপনি এটা কার জন্য কিনেছেন শুনি?”

“তোমায় কেন বলবো?”

“আমি আপনার হবু বউ আমার জানার রাইট আছে।”

“বাহ বাহ বাহ বিয়ে না করতেই অধিকার ফলাচ্ছো বিয়ে হলে কি যে করবে আল্লাহই জানে।”

“আমি জানি এটা আপনি ফাউল কিনছেন কারণ আমার পছন্দ প্লিজ এটা আমার দিন এটা আমি আমার খুব স্পেশাল একজনকে গিফট করবো তাই প্লিজ্জজ্জজ্জজ।”

“এহহহ আমার কি টাকা বেশি পড়ছে যে এটা আমি ফাউল কিনবো।এটা আমি আমার জানুর জন্য কিনছি?”

ইলা ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে,”জানু মানে?”

“জানু মানে জানু আমার জানু।চিন্তা করো না তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো ও আসছে।”

তখনই অর্ণবের ফোনে কল আসে অর্ণব রিসিভ করে বলে,”ওহ তুমি চলে এসেছো বেবি আমি আসছি।”

এই বলেই অর্ণব সামনে আগায়।ইলা বিড়বিড় করে বলে,”যখন তোর জানু আসেই তো আমারে কেন বিয়া করতেছোস।যা না তীর জানুরে বিয়া কর। আর আমিও দেখি কোন শাকচুন্নি মি.এটিটিউডের জানু হয়।ইলা তুই কেনো এসব ভাবছিস?কুল ইলা কুল।”

ইলা নিজেকে নিজে বুঝ দিলেও ইলার মন সায় দেয় না।তাই ইলা অর্ণবের পিছু পিছু যায়।গিয়ে ইলা যা দেখে তা দেখে ইলা চরম বিস্ময় হয়।নিজের চোখকে যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না।ইলা দেখলো……..

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here