একটু_ভালোবাসি,১৩,১৪

0
1456

#একটু_ভালোবাসি,১৩,১৪
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
#পর্ব- ১৩ (বিয়ে)

ইলা নিজেকে নিজে বুঝ দিলেও ইলার মন সায় দেয় না।তাই ইলা অর্ণবের পিছু পিছু যায়।গিয়ে ইলা যা দেখে তা দেখে ইলা চরম বিস্ময় হয়।নিজের চোখকে যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না।ইলা দেখলো অর্ণব একটা মেয়ে জড়িয়ে ধরেছে।আর মেয়েটাও অর্ণবকে জড়িয়ে ধরেছে।

ইলা মেয়েটাকে ভালো করে দেখার জন্য আরেকটু এগিয়ে যেতেই দেখে মেয়েটা পিহু।পিহুকে দেখে ইলা ৪৪০ ভোল্ট শক খায়।ইলা পিহুকে ইনভাইট করেছিলো শপিং এর জন্য কিন্তু পিহু একটা কাজ আছে বলে আসতে পারবে না বলেছে।আর এখন কি না পিহু অর্ণবকে জড়িয়ে ধরেছে।ইলার বেশ রাগ লাগছে।ইলা নিজের রাগ দমিয়ে রাখতে না পেরে অর্ণব আর পিহুর সামনে চলে যায়।

ইলাকে দেখে অর্ণব আর পিহু ভুত দেখার মতো চমকে যায়।পিহু আমতা আমতা করে বলে,

“ই….ইলা তুই?”

ইলা কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে,”শেষে কি না তুই এই লেজকাটা হনুমানের জানু?লাইক সিরিয়াসলি?”

পিহু অবুঝ মনেই উত্তর দেয়,”হে কেনো?”

এটা শুনে ইলার আরও বেশি রাগ উঠে যায়।ইলা রেগে বলে,”কি এটা আবার তুই বড় মুখে স্বীকারও করছিস যে তুই ওনার জানু।মানে তুই ওনার জানু এটা আমাকে জানালেই হতো।”

“এটা জানানোর কি ব্যাপার?”

পিহুর কথার মাঝেই অর্ণব ইলার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়,”তুমি এখানে কি করছো?তোমাকে না আমি দূরে থাকতে বলেছিলাম।ও আই সি আমার উপর গোয়েন্দাগিরি চলছে।বাহ বাহ বিয়ের আগে জামাইয়ের উপর জাসুসি।”

ইলা রেগে গিয়ে অর্ণবের কলার চেঁপে ধরে বলে,”হে জাসুসি করছি কারণ আপনার সাথে আমার বিয়ে ডোন্ট ফরগেট দিস।আমি বিয়ের আগে অবশ্যই আমার বরকে যাঁচাই করে নিবো।আর তুই যখন অন্য মেয়েকেই জানু বানাস অন্য মেয়ের সাথেই চিপকাস তো আমাকে বিয়ে করছিস কেন?সেকেন্ড হ্যান্ড রাখতে?”

ইলার এসব কথাবার্তায় অর্ণব থ হয়ে যায়।অর্ণব কখনো ইলার এমন ক্রুদ্ধকন্যার রুপ দেখে নি।অর্ণব বুঝতে পারছে এখন অর্ণব যদি ইলার সাথে মজা নেয় তো ইলা তাকে খুন করতেও পিছপা হবে না। তাই বুদ্ধিমানের মতো ইলাকে শান্ত করতে অর্ণব বলে,

“ই…ইলা লিসেন…..”

“জাস্ট শাট আপ।”

ইলাকে এমন রেগে থাকতে দেখে পিহু বলে,”ইলা তুই ভুল ভাবছিস। আমি সীমান্ত ভাইয়া আপন বোন অর্ণব ভাই আমার কাজিন।আর দু’জনেই আমাকে আদর করে জানু আর পিউ বলে ডাকে। দ্যটস ইলস এর থেকে বেশি কিছু না।”

পিহু অর্ণবের কাজিন এটা শুনে ইলা একটু শান্ত হয়।আর অর্ণবের কলার ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়।অর্ণব হাফ ছেড়ে ইলাকে উদ্দেশ্য করেই পিহুকে বলে,

“বুঝছি পিহু।এখনই একটা নিষ্পাপ ছেলে ক্রুদ্ধরাণীর কাছে শহীদ হতো।”

ইলা কথাটা বুঝতে পেরে আড়চোখে অর্ণবের দিকে তাকায়।পিহু বুঝতে পেরে মুচকি হেসে বলে,”তোরা আয় আমি ভিতরে গেলাম।”

পিহু যাওয়ার পরই অর্ণব ইলার কানে কানে ফিস ফিস করে বলে,”মিস ঝগড়ুটে কি এই লেজকাটা হনুমানের প্রেমে পড়লো নাকি?”

ইলা অর্ণবের দিকে তাকাতেই অর্ণব আবার বলে,”না এমনিই।আর কি জিজ্ঞেস করছিলাম।”

বলেই অর্ণবও চলে যায়।ইলা নিজেও বুঝে পারছে না সে কেন এমন রিয়েক্ট করলো।ভিতরে ঢুকেই ইলা আরেক লজ্জার সম্মুখীন হলো। ইলা আর অর্ণব দেরিতে আসছে দেখে পিহু সবাইকে সবটা বলে দিয়েছে।

পিহু ইলাকে ফিসফিস করে বলে,”কি রে ভালো করেছি না তোদের বন্ডিংটা সবাইকে দেখিয়ে?”

ইলা রাগান্বিত হাসি দিয়ে বলে,”ফ্রেন্ডরা হারামি হয় তুই তার উদাহরণ।”

পিহু হাঁসতে হাঁসতে বলে,”বাব্বাহ কত্তো রাগ আমার ভাইকে কোন মেয়ের সাথে দেখে হি হি।”

“এহহহ তোর ভাইয়ের উপর আমার রাগ দেখাতে বয়েই গেছে।”

“হুম তা তো দেখলামই তাই তো তখন কলার ধরে ওপেন থ্রেট।তা হে রে তুই তো আমার ভাইকে পছন্দ করিস না তাহলে ভাইয়ার পাশে অন্য মেয়েকে দেখে জ্বলিস কেন হে?”

ইলা কথা এড়ানোর জন্য বলে,”ধুর রাখ তো এই কথা।দেখ এই শাড়িটা কেমন দেখতে?”

পিহু মিটমিট হেসে বলে,”বাব্বাহ ভালোই কথা এড়াতে পারিস?তুমি তলে তলে টেম্পু চালাও আর আমি বললেই হরতাল।”

“উফফফ রাখ তো এই কথা।”

আসলে ইলা নিজেও জানে না কেনো অর্ণবের বিষয়ে তখন সে পসিসিভ হয়ে গেল।

______________________

সন্ধ্যার আলো ঘরে পড়েছে।গোধুলির আলোয় ঘরটা আলোকিত।সবাই খুব ক্লান্ত এখন একটু রেস্ট নিচ্ছে।ইলা জানলা দিয়ে বাহিরে একজনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।মায়াবী তার চেহারা,যেকোনো নারীকে মোহিত করতে বাধ্য এই মুখটি।

ইলা অনেকক্ষন ধরে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে আছে।কিছুক্ষণ আগেই ইলা আর অর্ণবের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।বিয়েটা খুব সাদাসিধে ভাবেই হয়েছে।অর্ণব ব্যবসা জগতে পা রাখতেই ইলা আর অর্ণবের বিয়েটা সুন্দর করে হবে।

ইলা অর্ণবের দিকে তাকিয়ে ভাবে যে ছেলেটার সাথে আজ পর্যন্ত তার ভালো করে কথাই হলো না তার সাথে ইলা কি করে সংসার করবে?এটা কেমন ভাগ্য তার?

ইলা যখনই এসব ভাবছে ঠিক তখনই মেঘা ইলাকে ধাক্কা দিয়ে বাস্তবজগতে ফিরায়।মেঘা ইলাকে উদ্দেশ্য করেই পিহুকে বলে,

“দেখেছিস পিহু,আমাদের যেই ইলা কি না অর্ণব ভাইয়ের সাথে শুধু ঝগড়ায় মত্ত থাকে আজ কি না সেই অর্ণব চৌধুরীর দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।”

পিহু প্রতিউত্তরে বলে,”আরে এভাবে মেয়েটাকে পঁচাচ্ছিস কেন?ও তো নিজের স্বামীকেই দেখছিলো।আর এসব ঝগড়া হলো দেখানোর বিষয় আসলে তো তলে তলে গভীর প্রেম।”

“আসলেই গভীরররররররররর প্রেম।”

ইলা বিরক্ত হয়ে বলে,”তোরা থামবি।এই কয়দিন তো আর আমাকে আস্ত রাখিস নি।এই প্রেম প্রেম করে মাথা খেয়েছিস আর এখনো।থাম এবার আর নিতে পারছি না।”

পিহু ইলার কাধে হাত রেখে বলে,”কেন নিতে পারছো না?সেদিন তো ওপেন থ্রেট দিছিলা তাও শপিং মলের সামনে তাইলে আ কেন নিতে পারছো না বৎস্য।”

ইলা মেঘা আর পিহুকেই বলে,”দেখ যেই লোকটার সাথে আমার দেখা হলেই ঝগড়া হয় তার সাথে আমি কি করে সংসার করব?”

মেঘা বলে উঠে,”মনের মিলে?”

ইলা আর পিহু একসাথে বলে,”মানে?”

মেঘা রহস্যময় হেসে বলে,”কোন এক গোধুলী আভায়,হাজোরো প্রজাপতির সম্মুখে হবে মনের মিলে।”

“এইসব হেয়ালী বাদ দিয়ে সোজা ভাবে বল।”

তখনই মেঘার ফোনে একটা কল আসে।যার দরুন মেঘা বাহিরে চলে যায় কথা বলতে তখন পিহু ইলাকে প্রশ্ন করে,

“হে রে ইলা মেঘার কি কোন বয়ফ্রেন্ড আছে?”

“না তো কেন?”

“না আর কি ভাবি বানাতাম।”

ইলা অবুঝ মনে প্রশ্ন করে,”মানে?”

পিহু দুষ্টুমি হাসি দিয়ে বলে,”না মানে আমার ভাই আছে নাহ।সীমান্ত ভাই।”

এবার ইলা সমস্ত কিছু বুঝতে পারে।মুহুর্তেই ইলার মুখে রহস্যময় হাসি ফুটে উঠে।

__________________________________

মেঘা কথা বলা শেষেই কারোর সাথে ধাক্কা খায়।মুহুর্তেই মেঘার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।মেঘা চেঁচিয়ে বলে উঠে,

“কোন খাম্বা এ…..?”

তখনই মেঘার নজর যায় সামনের ব্যক্তির দিকে।আসমানী রঙের পাঞ্জাবিতে তাকে যথেষ্ট সুন্দর লাগছে।চোখে বিস্ময় আর ঠোঁটে লেগে আছে নজরকারা হাসি।মেঘার কথার মাঝেই সীমান্ত বলে উঠে,

“আরে বেয়াইনসাহেবা জ্বি।কেমন আছেন বেয়াইনসাহেবা?”

মেঘাও সবিনিময়ে উত্তর দেয়,”এত্তোক্ষণ তো ভালোই ছিলাম কিন্তু আপনি যে সজোরে আমারে ধাক্কা মারলেন তারপর আর কেমনে ভালো থাকি বলেন?”

“আহারে আহারে আমি তো বেয়াইন সাহেবার মুড খারাপ করে দিলাম এবার কি হবে?”

“এই ফালতু বকা বাদ দিয়ে যা বলবেন সোজাসাপটা বলুন দেখি।”

“তা আপনি যে সারাক্ষণ আমাকে কানা বলেন আর এখন যে নিজে এসে ধাক্কা খেলেন তার বেলা।তো এখন কি আপনি কানা?”

“সেম কথা আমিও তো বলতে পারে?আমি তো ফোনে কথা বলছিলাম আর আপনি এসে ধাক্কা দিছেন তো আপনি কি চোখগুলো আকাশে নিয়ে হাটেন।”

“না বেয়াইন সাহেবা আমি চোখ গুলো জমিনে নিয়ে হাটি তা আপনি কি চোখগুলো রসগোল্লার হাড়িতে নিয়ে হাটেন নাকি?”

“আমি যদি রসগোল্লার হাড়িতে নিয়ে হাটতাম তাহলে আমার হাতে এখন একটা রসগোল্লার হাড়ি থাকতো।”

“তার মানে আপনি স্বীকার করছেন আপনি রসগোল্লার হাড়িতে চোখ রেখে হাটেন।”

মেঘা অবাক হয়ে বলে,”আরে আজব আমি কখন স্বীকার করলাম?”

“স্বীকার না করলে এই কথা বললেন কেমনে?”

“এই আপনি আমাকে কথায় ফাঁসাছেন বুঝছি।”

“বাব্বাহ আমি আবার ফাঁসাতেও পারি নাকি? আমি তো জানতাম শুধু মেয়েরাই ছেলেদের ফাঁসাতে পারে।”

“কিইইইই?”

“বাহ রে আমি তো আপনাকে শুধু কানা ভেবেছিলাম এখন তো দেখি আপনি বয়রাও।”

“ইউ ষ্টুপিড। সরুন তো এখান থেকে শুধু শুধু মেজাজ গরম করেন।”

এই বলেই মেঘা সীমান্তকে ধাক্কা মেরে চলে যায়।

#চলবে

#একটু_ভালোবাসি
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
#পর্ব- ১৪ (বাসর রাত)

চারিদিকে অন্ধকার প্রস্ফুটিত। রাতের শহরটা দেখতে বেশ সুন্দর লাগে।গাছের পাতায় পানি জমেছে যা দেখতে আরও সুন্দর লাগছে।তবে শহুরে রাতে এখনো সব জায়গায় আলো নিভে নি।কিছু কিছু জায়গায় এখনো আলো জ্বলছে।কেউ কেউ তাগিদ নিয়ে বাড়ি ফিরছে প্রিয়জনের দেখা পাওয়ার জন্য। আর এদিকে একজন সেই প্রিয়জনের মায়া থেকে বাঁচার জন্য ছাদে এসে মুখ লুকিয়েছে।

অর্ণব আজ পণ করেছে। যত যাই বাধা আসুক সে আজ কিছুতেই ঘরে যাবে না দরকার হলে সারারাত এই ছাদে রাত কাটাবে।অর্ণবের সাথে সাথে বিহান আর সীমান্তও আছে।বিহান অসহ্য হয়ে বলে,

“হোয়াট ইজ দিস অর্ণব? রাত ১১ টা বাজতে চললো তুই ঘরে যাচ্ছিস না কেন?নিজে তো যাচ্ছিসও না আমাদেরও যেতে দিচ্ছিস নাহ।দিস ইজ রিডিকিওলাস।”

অর্ণব রেগে বলে,”রিডিকিউলাস নাকি জানি না তবে তোরা আজ রাত আমার সাথে থাকবি তাও সারারাত জেগে।আমি আর কিচ্ছু জানি না।”

সীমান্তও এবার রেগে বলে,”অর্ণব তুই কি পাগল?মানুষ এই রাতের জন্য পাগল আর তুই কি না এভাবে ওয়েস্ট করছিস?আর তুই জাগলে জাগ ভাই আমাদের ঘুম পাচ্ছে আমরা যাবো।”

“মানেএএ তোরা আমার কেমন ফ্রেন্ড হে?আমার জন্য একটা রাতও জাগতে পারছিস না।”

বিহান রেগেই বলতে লাগলো,”না পারছি না।সারাদিন খেটেছি এখন কি না তুই বলছিস রাত জাগতে মানে?আর আংকেল যদি জানে তুই এখনও ঘরে যাস নি তাহলে প্রথমে তো তুই ঝাড়ি খাবি তারপর আমরা। সর‍্যি ব্রো আমরা ঝাড়ি খেতে রাজি না।”

অর্ণব টিটকানি মেরে বলে,”আগে তো বলতি আমার জন্য জানও দিতে প্রস্তুত আর এখন কি না সাধারণ একটা রাত আর ঝাড়ি খেতে প্রস্তুত না?”

সীমান্ত অধৈর্য্য হয়ে বলে,”দেখ ভাই,বড় আব্বু যেকোন সময় এসে পড়বে তখন তুই ই ঝাড় খাবি?চল এখান থেকে।”

“ড্যাড কি করে জানবে আমি এখানে?”

“কারণ তোমার ড্যাড তোমার মতো বোকা না।”

আশরাফ চৌধুরীর কথা শুনতেই ৩ জনেই পিছনে ফিরে তাকালো।অর্ণব রীতিমতো ভয় পাচ্ছে আশরাফ চৌধুরীকে দেখে।আশরাফ চৌধুরী অর্ণবের কাছে এসে গম্ভীর গলায় বলে,

“অর্ণব এতো রাতে তুমি ছাদে কি করছো?”

“আ….আ…আসলে ড্য….ড্যাড আমি……..সীমান্ত বলছিলো আজকে যেনো ছাদে রাতে পার্টি করি যেহেতু আজ আমার বিয়ে হয়েছে তাই আরকি আমি আর না করতে পারলাম না।”

অর্ণব এভাবে সীমান্তকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে এটা দেখতেই সীমান্ত আর বিহান একে অপরের দিকে তাকিয়ে হা করে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে আছে।সীমান্ত ভাবতেও পারে নি অর্ণব এভাবে তাকে ফাঁসিয়ে দিবে। আশরাফ চৌধুরী সীমান্তকে জিজ্ঞেস করে,

“সীমান্ত তুমি কি জানো না আজ অর্ণবের বাসর রাত?”

সীমান্ত আমতা আমতা করে বলে,”আসলে বড় আব্বু আমরা বলেছিলাম যে কাল ভাবিকে নিয়ে একেবারে পার্টি করবো কিন্তু অর্ণব নিজেই বলল ছেলেদের পার্টিতে মেয়েদের কি?আর আজ রাতেই নাকি অর্ণব পার্টি করবে তাই আমরাও কিছু বলতে পারলাম না।এটা ডাহা সত্যিই বড় আব্বু বিহান সাক্ষী।কি রে বিহান বল?

এবার সীমান্ত বিহানকে ফাঁসিয়ে দেয়। বিহানের আর কি বলার আছে?সীমান্তের বিরুদ্ধে গেলে সীমান্তের হাতে মার খাবে আর অর্ণবের বিরুদ্ধে গেলে অর্ণবের হাতে মার খাবে। এমনিতেই অর্ণব সীমান্তকে ফাঁসিয়েছে তাতে অর্ণবের কপালে মাইর একেবারে ফরজ হয়ে গেছে এখন সীমান্তের বিরুদ্ধে গেলে সীমান্তের কপালেও মাইর ফরজ হবে তা নিশ্চিত। তাই বুদ্ধিমানের মতো।বিহান সীমান্তের হে তে হে মিলায়।

এবার তো অর্ণব পড়েছে মহাবিপদে।বিপদ থেকে বাঁচতে সীমান্তকে ফাঁসিয়েছিলো কিন্তু উল্টো সীমান্ত এখন অর্ণবকে ফাঁসিয়েছে।অর্ণব পপরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বলে,

“আ…..আসলে ড্যাড…….. ”

“অর্ণব এ নিয়ে আমি দ্বিমত পোষণ করতে চাই না।অনেক রাত হয়েছে যাও ঘরে যাও ইলা মা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।”

অর্ণবও আর কিছু বলতে পারলো না।আশরাফ চৌধুরীর গম্ভীর গলার সামনে অর্ণব আজ পর্যন্ত কিছু বলার সাহস পায় নি।অর্ণব যাচ্ছে আর বিড়বিড় করে বলছে,

“কি সুন্দর বলে দিলো ইলা মা অপেক্ষা করছে এদিকে ড্যাড ভুলেই গেছে আমিও তার ছেলে হই।তুমি তোমার ছেলের মনের ফিলিংস টা বুঝতে ড্যাড।দিস ইজ নট ফেয়ার।”

বিড়বিড় করতে করতেই অর্ণব ইলার রুমের সামনে পৌছায়। অর্ণব বুঝতে পারছে না অর্ণব ঘরে ঢুকবে কি ঢুকবে না?তখন অর্ণবকে কেউ সজোরে ধাক্কা দিয়ে রুমের বাহির থেকে দরজা আটকিয়ে দিলো।

“আরে কে রে?এতো জোরে কেউ ধাক্কা দেয়?আমি বের হবো দরজা খুলো।”

অপরপাশ থেকে মেঘা বলে,”মেরি দোস্ত ওর তুম এক কামরে মে বান্ধ হো ওর চাবি খো যায়েএএএএএ।”

পিহু মেঘার সাথে তাল মিলিয়ে বলে,”একদম আজ সারারাত এখানেই থাকো সকাল বেলা সময়মতো দরজা খুলে দেওয়া হবে।”

বলেই মেঘা আর পিহু চলে যায়।ওদিকে অর্ণব চিল্লিয়ে বলতে থাকে,”আমি থাকবো না এই দজ্জাল মেয়ের সাথে।দরজা খোলো প্লিজ।”

“কিইইইইই আমি দজ্জাল?”

অর্ণব পিছনে ফিরতেই ইলাকে বধূ সাজে দেখতে পায়।মুহূর্তেই অর্ণবের হার্টবিট বেড়ে যায়।সাথে এটাও দেখতে পায় বধূ সাজে ইলাকে যত বেশিই না সুন্দর লাগছে তার চেয়ে বেশি রাগলে সুন্দর লাগছে।ইলা ভ্রু কুচকে আবারও প্রশ্ন করে,

“কি হলো উত্তর দিন?”

“দজ্জালকে দজ্জাল বলবো না তো কি বলবো?”

ইলা তেড়ে এসে বলে,”কিইইইইইইইই।”

“এই একদম কাছে আসবে না।আমাকে টার্চ করার দুঃসাহস দেখাবে না আমি চাই না রেপ হতে।কেউ বাঁচাও এই নিষ্পাপ অবলা শিশুকে এই দজ্জালের হাত থেকে।”

রেপের কথা শুনে ইলা মাথায় হাত দিয়ে বলে,”কিইইইইই আপনি আর রেপ।”

অর্ণব আমতা আমতা করে প্রকাশ করে,”তা নয়তো কি?আজকাল পুরুষাও নির্যাতিত ও রেপ হয়।কিন্তু লজ্জার ভয়ে কাউকে বলতে পারে না।”

ইলা অর্ণবের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। মনে হচ্ছে ইলা অর্ণবের কথায় কোমায় চলে গেছে।ইলার এই নিরবতা অর্ণবের কেন জানি ভালো লাগলো না তাই অর্ণব আবার বললো।

“দেখো আমি কিন্তু ভদ্র ছেলে। আমাকে খবরদার টার্চ এন্ড রেপ করবে না তাহলে আমি কিন্তু সেটা প্রচার করবো।”

এবার ইলা রেগে বলে,”চুপপপ।কি তখন থেকে রেপ রেপ লাগাইছি আস্তাগফিরুল্লাহ নাউজুবিল্লাহ মার্কা কথা।আর একবারও যদি রেপ রেপ বলেন না তো মুখে টেপ লাগিয়ে দিবো।আর এই দেখছেন ছুড়ি(ইলার হাতে ছুড়ি দেখিয়ে) এই ছুড়ি দিয়ে আপনার পেট ফুটো করে দিবো।”

“ইন্না-লিল্লাহ কি বলে এগুলা।এই শিশুকে মারতে কষ্ট লাগবে না।”

“হে শিশুই তো বুড়া দামড়া শিশু।একবিন্দুও কষ্ট লাগবে না।এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আপনার এসব কথা শুনতে আমি নারাজ।আমি গিয়ে ফ্রেস হয়ে আসি।”

এই বলেই ইলা নিজের জামা কাপড় নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।আর অর্ণব বিড়বিড় করে বলে,”উফফফ বাঁচা গেলো।দজ্জাল তো নয় দজ্জালের রাণী।তবে যাই বলি আজ ইলাকে যথেষ্ট সুন্দর লাগছিলো ওর ওই কিলার লুকেই আমি ঘায়েল হতাম।অর্ণব এসব তুই কি ভাবছিস?তুই আবার এই দজ্জাল রাণীর প্রেমে পড়লি না তো?নো অর্ণব নোওঅঅঅঅ ভুলেও ওই পথে পা দিস না এই দজ্জাল রাণী তোর ওই পা কপাট করে কেটে ফেলবে।”

ইলা ফ্রেশ হয়ে এলে অর্ণব ফ্রেশ হতে ঢুকে।ইলা সুযোগ বুঝে চুপটি করে খাটে শুয়ে পড়ে।অর্ণব বেরিয়ে ইলাকে শুয়ে থাকতে বলে,”এটা কি হলো?তুমি এখানে শুয়েছো কেনো?”

“বাহ রে,আমার ঘর আমার বিছানা আমি তাহলে কোথায় ঘুমাবো?”

“মানে আমি তাহলে তোমার সাথে ঘুমাবো। নো ওয়ে,আমি বেড শেয়ার করতে পারব না।”

“তাহলে ওপাশে পাপোস আসে ওটা বিছিয়ে নিচে শুয়ে পড়ুন।”

“আর ইউ ক্রেজি।আমি মানে অর্ণব চৌধুরী কি না নিচে ঘুমাবে?”

“হে তা নয়তো কি?আমার সাথে বেড শেয়ার করতে প্রবলেম হলে আপনাকে নিচেই ঘুমাতে হবে।”

“সারাজীবন মুভিতে,গল্পে পড়লাম এমন সিচুয়েশনে মেয়েরা নিচে ঘুমায় আর তুমি কি না আমাকে নিচে ঘুমাতে বলছো?”

ইলা ভাব নিয়ে হালকা উঠে বলে,”ইয়ো ব্রো ইটস ডিজিটাল যুগ।এখন আর নারীরা পুরুষের কথায় নিচে ঘুমাবে না।আপনার যদি আমাকে নিয়ে এতোই প্রবলেম তো নিচে ঘুমান।বাই দ্য রাস্তা, আমার বহুত ঘুম পাইছে সো বায়।”

এই বলেই ইলা পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল।এদিকে অর্ণব পড়েছে ভীষণ ঝামেলায় সে তো আগে কখনো নিচে ঘুমায় নি আর অর্ণব চায়ও না ইলার সাথে বেড শেয়ার করতে কিন্তু কিছু করারও তো নেই।তাই অর্ণব বাধ্য হয়ে ইলার পাশে শুয়ে পড়ে।কিছুক্ষণের মধ্যেই ইলা গভীর ঘুমের সাগরে ডুবে যায়।

ইলা ঘুমানোর সাথে সাথেই হাত পা ছুড়তে শুরু করে আসলে ইলা ঘুমের মধ্যে প্রচুর হাত পা ছুড়ে যা সে অর্ণবকে বলতে ভুলে গেছে।অর্ণবের ঘুম আসতেই ইলা হাত দিয়ে সজোরে অর্নবের বুকে ছুড়ে মারে।ঘুমের মধ্যে এমন আক্রমণের জন্য অর্ণব মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।অর্ণব কিছু বুঝে উঠার আগেই ইলা হাত পা দিয়ে আষ্ঠেপৃষ্ঠে অর্ণবকে বেধে ফেলে।ইলা এতো শক্ত করেই অর্ণবকে জড়িয়ে ধরেছিলো যে অর্ণবের শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে।

অর্ণব কোনমতে ইলাকে ছাড়িয়ে ওকে ঠিক মতো শোয়ায় কিন্তু ইলা তো আর ঠিকমতো ঘুমানোর পাত্রী নয় সে আবার অর্ণবের গায়ের উপর উঠে পড়ে।এভাবে বেশ কয়েকবার ইলাকে সামলাতে সামলাতে অর্ণব হাপিয়ে গেছে।অর্ণব মনে মনে ইলা সেই পরিমাণে ঝাড়ছে।

“কোন দুঃখে যে সেদিন ইলাকে দেখতে আসতে রাজি হলাম।উফফ এই মেয়ে তো দিনে মুখ খোলে আর রাতে হাত পা।ঘুমাচ্ছে তো না মনে হচ্ছে আমার সাথে ক্যারাটে খেলছে।”

বিড়বিড় করতে করতেই অর্ণবের চোখ ইলার দিকে পড়লো।ঘুমন্ত ইলাকে খুব মায়াবি লাগছে। মনে হচ্ছে কোন এক পিচ্চি মেয়ে ঘুমিয়ে আছে।অর্ণব ইলার দিকে চোখ নিয়েও আবার ফিরিয়ে নেয়।

“অর্ণব এটা তুই কি করছিস?নিশ্চয়ই তুই এই মেয়ের মোহে পড়েছিস।লাভ এট ফাস্ট সাইড হলো না তো আবার।না না এই মেয়ের থেকে দূরে থাকতে হবে মেয়ে তো নয় যেনো ধানি লঙ্কা।”

কিন্তু অর্ণব যেনো কিছুতেই ইলার থেকে চোখ ফিরাতে পারছে না। মনে হচ্ছে অনেক দিনের দেখার তৃষ্ণা মিটাচ্ছে।এক পর্যায়ে দেখতে দেখতে অর্ণব নিজেও ঘুমিয়ে পড়ে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here