#একটু_ভালোবাসি,১৭,১৮
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
#পর্ব – ১৭
আজ ইলা, মেঘা আর পিহু ভার্সিটিতে এসেছে।ভার্সিটির কেউই জানে না ইলা আর অর্ণবের বিয়ের কথা।অর্ণব সবাইকে জানাতে নিষেধ করে দিয়েছে তাই।ইলা খুশিমনেই ভার্সিটিতে প্রবেশ করে ঠিক তখনই পিছন থেকে বৃষ্টি ইলাকে ডেকে বলে,
“কি মিস.ইলা ভার্সিটিতে কিছুদিন আসেন নি কেনো?আমরা তো ভাবলাম আপনি আমাকে ভয় পেয়ে পালিয়েছেন।”
ইলা মুচকি হেসে সবিনিময়ে বলে,”এই ইলা শেখ কখনো কাউকে ভয় পাই নি আর পাবেও না।”
তারপরই ইলার মনে পড়লো তার তো এখন বিয়ে হয়ে গেছে সে তো আর এখন ইলা শেখ নেই এখন সে ইলা চৌধুরী। ইলার ভাবনার মাঝেই বৃষ্টি বলে উঠে,
“গুড ভেরি গুড।তবে হে মিস ইলা শেখ অর্ণবের থেকে দূরে দূরে থাকবে।”
ইলা মনে মনে বলে,”দূরে থাকবো দেখেই তো বিয়েটা করেছি তাই নাহ?”
ইলা স্বাভাবিক ভাবেই একটু কিউরিওসিটি জাগে আর সেই থেকেই প্রশ্ন করে,”কেন অর্ণব চৌধুরীর থেকে দূরে থাকবো কেনো?”
বৃষ্টি একটু লজ্জা পেয়ে বলে,”আমি অর্ণবকে অনেক পছন্দ করি। আই থিংক ইট ইজ লাভ।তাই অর্ণবের কাছে কোন মেয়েকেই আমি সহ্য করতে পারি না।”
বৃষ্টির কথা শুনে ইলা থ হয়ে যায়। মুহুর্তেই শান্ত মুখটা ক্রুদ্ধকন্যায় পরিনত হয়।ইলা মনে মনে বিড়বিড় করে,”ওরে শাকচুন্নি,এক লেজকাটা হনুমানকে সামলাতে পারি না আর এদিকে ওই লেজকাটা হনুমানের দিকে নজর দিচ্ছিস।ঝাড়ু দিয়ে পিটিয়ে লেজকাটার হনুমানের ভুত মাথা থেকে নামাবো।”
ইলার পাশে পিহুও দাঁড়িয়ে ছিলো পিহু এতোক্ষণ সব শান্তমতো শুনছিলো কিন্তু অর্ণবের প্রতি বৃষ্টির ফিলিংসের কথা শুনে পিহু খানিকটা অবাকই হয়।কারণ পিহু আজ পর্যন্ত অর্ণবের দিক দিয়ে এমন কোন ফিলিংস পিহু লক্ষ্য করে নি।পিহু অবাক হয়ে বলে,
“মিস.বৃষ্টি অর্ণব চৌধুরী কি আপনাকে লাইক করে?”
বৃষ্টি খানিকটা লাজুক সুরে বলে,”হয়তো করে।”
ব্যস ইলাকে আর বোম হওয়া থেকে কে আটকায়।ইলা রেগে গটগট করে হেটে যায়।পিহু বুঝতে পারে ইলা প্রচুর রেগে উঠে পিহু পিছন থেকে ইলাকে ডাকতে থাকে।
“ইলা এই ইলায়ায়া দাড়ায়ায়ায়ায়া।”
পিহুও ইলার পিছন পিছন দৌড় দেয়।এদিকে বৃষ্টি বোকার মতো দাঁড়িয়ে থাকে।বৃষ্টি বুঝতেই পারে না কাহিনি কি হলো?
______________________________
পিহু আর মেঘার মাথা ব্যাথা করছে।দু’জনেই মাথাই ভনভন করছে ইলাকে না থামালে পিহু আর মেঘার সেন্সলেস হতে বেশিক্ষণ লাগবে না।পাক্কা ৩০ মিনিট ধরে ইলা বৃষ্টি আর অর্ণবের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করেছে।পিহু থামাতে গেলে সেই বেশ ভালো পরিমানের ঝাড়ি খায়।
“ইদুরের চামচিকা,বিড়ালের পার্টনার,কুকুরের শালা তোরে(অর্ণব) আমি।ছাড়মু না।শেষ পর্যন্ত কি না শাকচুন্নির(বৃষ্টি) প্রেমে পড়লি।আর ওই শাকচুন্নিই বাহ কি লেজকাটা হনুমান ছাড়া কি দুনিয়ার আর কাউকে পেলি নাহ?ও এই জন্যই বলি আমাকে বিয়ে করতে তার কি সমস্যা।তলে তলে তুমি টেম্পু চালাও আজ ওই পোলার একদিন নইলে আমার বারোদিন।”
বেশ রেগেই কথাগুলো ইলা বললো।পিহু প্রশ্ন করে,
“ওই পোলা কোন পোলা।”
ইলা পিহুর দিকে অগ্নিদৃষ্টি দিয়ে বলে,”তোর ভাই আবার কে হবে?এক সপ্তাহও হয় নি আর সে কি নাহ ভার্সিটি প্রেমলীলা চালাচ্ছে তার প্রেমলীলা যদি আমি বের না করেছি আমার নামও ইলা নাহ।”
মেঘা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,”ওকে তোকে তাহলে আমি।একটা কিউট নাম দিবো নি।”
ইলা বসা থেকে উঠে বলে,”কিইইই তুই আমার সাইডে নাকি ওর?”
“সবাই আমার সাইডে তাই জায়গাটা এখন খালি করো।”
পুরুষালি কন্ঠস্বরে ইলা মেঘা আর পিহু পিছনে তাকায় তখনই একজন অপরিচিত ব্যক্তির সামনে পড়ে।অপরিচিত ব্যক্তিটি ইলার সামনে এসে বলে,”এই যে মিস. দেখছেন না সবাই জায়গা খালি করছে সো আপনারাও জায়গাটা খালি করুন।”
মেঘা সেই ব্যক্তির প্রতি উত্তরে বলে,”কেন এটা পাবলিক প্লেস এখানে যে কেউ বসতে পারে?আপনাদের বসার দরকার হলে অন্য জায়গায় গিয়ে বসুন।”
“আমাদের পুরো জায়গাটা খালি চাই তাই আপনারা এখন ক্লাসে যান।”
ইলা ক্ষিপ্ত গলায় বলে,”আমরা ক্লাসে যাবো নাকি পার্কে যাবো সেটা একমাত্র আমাদের ব্যাপার। আপনাদের প্রবলেম হলে আপনারা চলে যান।”
পিছন থেকে একটা ছেলে বলে,”বাহ মেয়ের গলায় তো বেশ জোর আছে।”
মেঘাও তাল মিলিয়ে বলে,”মেয়ে দেখে কি চুপ করে থাকবো নাকি?”
“ওকে মিস আমরা ভদ্র ভাবে বলছি প্লিজ এখান থেকে চলে যান আমরা এখানে আড্ডা দিবো।”
ইলা টেবিলে থাকা একটা কাটা চামচ সেই ব্যক্তির গলায় ধরে বলে,”এটা কি জানেন তো?গলায় ফুটিয়ে দিলে মরতে কিন্তু টাইম।লাগবে না।তাই আমরাও ভদ্র ভাবে বলছি আমরা যাবো না এখানে অনেক জায়গা আছে আপনারা সেখানে গিয়ে বসুন।আমাদের আর একবার ডিস্টার্ব করলে ফল কি হবে সেটা বুঝতেই তো পারছেন।”
অপরিচিত ব্যক্তি ইলার দুঃসাহসিকতায় অবাক না হয়ে পারে না।আসলে ইলা তো এতোও দুঃসাহসী না বরং রাগে এখন দুঃসাহসী হয়েছে।অপরিচিত ব্যক্তিটি কিছু বলার আগেই অর্ণব বলে উঠে,
“আবেশ।”
অর্ণব দৌড়ে এসে আবেশকে জড়িয়ে ধরে। আবেশও অর্ণবকে জড়িয়ে ধরে। অর্ণব আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে বলে,”হোয়াট এ প্রেজেন্ট সারপ্রাইজ আবেশ!আমি খুব খুব খুশি হয়েছি তুই এখানে এসেছিস।”
“ভাবলাম অর্ণব চৌধুরী তো আর আমার খোঁজ নেয় না তো আমিই নিই।”
“ওহহ আবেশ ইউ নো আই এম বিজি বয়।”
“ইয়াহ আই নো।বাট হু ইজ দিস গার্ল।”
আবেশ ইলাকে দেখিয়ে বলে।ইলা এতোক্ষণ হতবম্ভের মতো অর্ণব আর আবেশকে দেখছিলো।ছেলেটা গায়ের বর্ণ অর্ণবের চেয়ে কোন অংশে কম নেই।যেমন হ্যান্ডসাম দেখতে তেমনই তার ব্যবহার পুরো চকলেট বয় দেখতে।অর্ণব ইলাকে দেখে আবেশকে বলে,
“আরে আবেশ যার তার সাথে তোমার পরিচিত হতে হবে না।এমনিও এই মেয়ে বহুত ঝগড়ুটে আছে।”
ইলা এবার কাটা চামচটা নিয়ে অর্ণবের দিকে তেড়ে গিয়ে বলে,”এই যে মি.এটিটিউড কিং এটিটিউড নিজের পকেটে রাখবেন আর আমাকে ঝগড়ুটে বলতে আসলে এই কাটা চামচ সোজা গলায় ঢুকিয়ে দিবো যাতে চিরদিনের মতো কথা বলতে না পারেন”
অর্ণব ইলার ব্যবহারে একটা শুকনো ঢোক গিলে।আবেশ হাসতে হাসতে বলে,”হোয়াট এ কিউট নেম।”
অর্ণব অসহায় গলায় বলে,”রিয়েলি তোর কিউট লাগছে।”
“ইয়াহ ব্রো।”
আবেশ ইলার কাছে এগিয়ে বলে,”আই এম ইম্প্রেসড ইউ।বাই দ্য ওয়ে, আমি আবেশ। আপনার সাথে কি বন্ধুত্ব করতে পারি?”
ইলা অর্ণবের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলে,”যদিও আমি এটিটিউড কিং এর কোন ফ্রেন্ডেরই ফ্রেন্ড হই নি কিন্তু আপনি যেহেতু যেচে এসে বন্ধুত্ব করছেন সো হোয়াই নট?”
বলেই ইলা আর আবেশ হ্যান্ডসেক করলো।যা দেখে কিঞ্চিৎ হলেও অর্ণব জ্বলেছে যা পিহু আর মেঘা বেশ ভালো করেই বুঝতে পেরেছে।
__________________________
চৌধুরী বাড়ির ছাদে ইলা আর বিহান দাঁড়িয়ে আছে।দুজনের মধ্যেই খুব গম্ভীর পরিবেশ।ভার্সিটির শেষে ইলা বিহানকে একটা চিরকুট দিয়ে চলে এসেছিল যেখানে লেখা ছিলো বিকেলে অর্ণব আসার আগেই একবার চৌধুরী বাড়ি যেতে যা বিহান করেছে।আর এখন বিহান ইলার সামনে।
“ভাবি কিছু বলবেন?যা এমন গোপনীয় ভাবে ডাকলেন যে?”
“গোপনীয় কাজ আপনি করেছেন তাই ডেকেছি।”
“মানে?”
“কেনো করলেন পিহুর সাথে এমন।ও তো শুধু আপনাকে ভালোই বেসেছিলো এটাই কি ওর দোষ?”
বিহান মাথানিচু করে বলে,”এই সম্পর্কে আমি কোন কথা বলতে পারবো না।আমাকে ক্ষমা করবেন ভাবি।”
বলেই বিহান চলে যেতে নিলে ইলা পথ আটকায়।
“দাড়াও বিহান ভাইয়া।আমি তোমার ছোট বোনের মতো আমায় বলতে অসুবিধা কিসের?আর আমি জানতে চাই।আজ আপনি না বলে কোথাও যেতে পারবেন না।”
“দেখুন ভাবি এই সম্পর্কে কথা না বলাই বেটার।”
“আমি জানতে চাই।”
“কি জানতে চাও তুমি পিহু আমার বন্ধুর বোন সেই হিসেবে সে আমারও বোন আমি কি করে তাকে ভালোবাসতে পারি?আর সত্যি বলতে পিহু যেদিন থেকে আমায় ভালোবাসে আমিও সেদিন থেকেই পিহুকে ভালোবাসি প্রথম দেখাই তার প্রেমে পড়ে গেছিলাম।কিন্তু সব ভালোবাসাকেই যে পূর্ণতা পেতে হবে এমন তো নয়।”
ইলা এতোক্ষণে বুঝতে পারে বন্ধুত্বের খাতিরে বিহান বার বার পিহুকে প্রত্যাখান করেছে।কথা বলতে বলতেই বিহানের চোখে পানি এসে পড়ে।বিহান বলতে শুরু করে,
“জানো ইলা পিহু যেদিন আমায় প্রথম প্রপোজ করে সেদিন আমি।এতো খুশি হয়েছিলাম যে বলার বাহিরে কিন্তু সেই সময়েই পিহুর পিছনে আমি সীমান্তকে কথা বলতে দেখতে পাই।সীমান্ত দেখে নি তার বোন আমায় প্রপোজ করেছে তাহলে হয়তো ওই দিন পিহুর কপালে খুব দুর্ভোগ ছিলো।পিহুর তখন কতো বয়স ওই সময় প্রেমের ভুত ঢুকলে ওর ক্যারিয়ারের ক্ষতি হতো তাই আমি পিহুকে রিজেক্ট করে দিয়েছি।যতবার পিহু প্রপোজ করেছে ঠিক ততোবার রিজেক্ট করেছি।এতে আমার যে কি পরিমাণ কষ্ট হয়েছে এটা আমি বুঝাতে পারবো না।ওর চোখের পানির কারণ ছিলাম আমি তাতে নিজে যে কতোটা জ্বলেছি সেটা শুধু আমিই জানি।আমি পিহুকে ভালোবাসি কিন্তু সেই জন্য আমি আমার বন্ধুত্ব নষ্ট করতে পারবো না।”
এই বলেই বিহান চলে যায়।ইলা ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে।ইলা আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবতে থাকে,
“পিহু ইউ আর সো লাকি গার্ল।সত্যিই বিহান ভাইয়া তোকে কতোই না ভালোবাসে তোর ভালোর জন্য নিজের ভালোবাসা স্যাক্রিফাইস করেছে।এতোদিন তোরা দুজন অনেক কষ্ট পেয়েছিস কিন্তু আর না আই প্রমিজ আমি তোদের এক করেই ছাড়বো।”
বলেই ইলা রহস্যময়ী হাসি দেয়।
#চলবে
#একটু_ভালোবাসি
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
#পর্ব – ১৮
কাতর কন্ঠে ইলা অর্ণবকে বলছে,”অর্ণব প্লিজ ছাড়ুন আমার লাগছে।”
অর্ণব রাগান্বিত ক্ষিপ্ত কন্ঠে বলে,”কেনো আমার ফ্রেন্ডকে চিরকুট দেওয়ার সময় বুঝি লাগে নি।”
ইলা এখনো কিছুই বুঝতে পারছে না।অর্ণব বাড়িতে আসার পরই ড্রয়িং রুম থেকে ইলার হাত শক্ত করে ধরে টেনে রুমে নিয়ে আসে তারপরই এসব কথা।আসলে ইলাকে চিরকুট দিতে অর্ণব দেখে ফেলে আর সেখান থেকেই এতো রাগ।ইলা অবাক চোখে বলে,
“আপনি এসব জানলেন কি করে?”
“কেনো জেনে বুঝি খুব সমস্যা করে ফেললাম নাকি?”
“আপনি এসব কি বলছেন অর্ণব?”
অর্ণব নিজের রাগ কন্ট্রোল করে বলে,”দেখ তোর থার্ড ক্লাস টেকনিক অন্য ছেলেদের উপর দেখাবি আমার আর আমার ফ্রেন্ডের উপর একদম দেখাবি না।”
এবার ইলারও প্রচন্ড রাগ উঠে যায়।ইলা পা দিয়ে সজোরে অর্ণবের পায়ে পারা দেয় যার ফলের হাতের বাধন আলগা হলে ইলা হাত ছাড়িয়ে অর্ণবের কলার টেনে ধরে রাগান্বিত স্বরে বলে,
“খুন খারাপ লেগেছে আপনার বন্ধুকে বাড়িতে ডেকেছি বলে কিন্তু কেনো ডেকেছি তা তো একবারও জানতে চান নি।আর পুরো কথা না জেনেই আমার উপর অপবাদ লাগাতে আসছেন?”
এবার অর্ণব একটু শান্ত হয়।ইলা অর্ণবকে ছেড়ে সমস্ত ঘটনা খুলে বলে। পিহু আর বিহানের সম্পর্ক খুলে বলে।সমস্ত কিছু শুনে অর্ণব কিছুটা অনুতপ্ত হয়।অর্ণব ভেবেছিলো ইলা হয়তো বিহানকে পছন্দ করে তাই লাভ লেটার দিয়েছে কিন্তু আসলে এই জন্য দিয়েছে তা অর্ণব বুঝে নি।অর্ণব অনুতাপের সুরে কিছু বলার আগেই ইলা রাগান্বিত স্বরে বলে,
“কি সবটা শুনেও আমাকে নিয়ে আর কোন ভাবনা আপনার আছে?আশা করি নেই।আর আমি আমার হয়ে কোন তারিফ আপনার কাছে শুনতে চাই না।এরপরেও আমাকে নিয়ে আর কোন অভিযোগ থাকলে সর্যি এতে আমার কোন মাথা ব্যাথা নেই।”
বলেই ইলা রেগে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।অর্ণব ইলাকে কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারে নি।
________________________
আজ বিকেল হয়ে গেলো ইলা অর্ণবের সাথে কোন ঝগড়া করে না।বাড়িটা খুবই শান্ত হয়ে গেছে এক দিনেই।অর্ণব যে ঝগড়ার চেষ্টা করে নি তা নাহ অর্ণব বহুবার চেষ্টা করেছে কিন্তু ইলা অর্ণবের সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথাই বলে নি।ইলা পাশে বসে টিভিতে ডোরেমন দেখছে।অর্ণব ইলাকে ক্ষেপাতে বলে,
“উফফফ মম টিভিতে এসব পিচ্চিদের সো কেনো আসে বল তো?কি বোরিং দেখতে?”
ইলা অর্ণবের কথাটাকে পাত্তা না দিয়ে টিভি দেখায় মনোনিবেশ হয়। অর্ণব ইলাকে আবার ক্ষেপাতে বলে,”ইসস কি রকম দেখতে কার্টুন ক্যারেক্টর গুলো দেখলেই হাসি আসে।”
ইলার কথাটা বেশ লাগলো।ইলা অর্ণবের দিকে না তাকিয়ে আশা চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলে,”মামনি এখানে এক অশিখিত কে বলে দেও কার্টুন মানুষকে বিনোদন দেওয়ার জন্যই নাহ তো গোমড়ামুখো হয়ে থাকার জন্য।”
ইলার কথা শুনে অর্ণব প্রচন্ড চটে যায়।অর্ণব রেগে বলে,
“কিইইই আমি অশিক্ষিত?”
ইলা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,”মামনি আমি কিন্তু কারোর নাম দাগাই নি।”
আশা চৌধুরী কিচেন থেকে সবই শুনছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।অর্ণব রাগে চুপ করে বসে আছে না পারছে ইলাকে কিছু বলতে না পারছে এসব সহ্য করতে।আশা চৌধুরী ইলার জন্য জুস নিয়ে এসে ইলাকে দেয়।অর্ণব তখন রাগে আশা চৌধুরীকে বলে,
” মম এসব ফালতু চ্যানেল টিভিতে কেনো?কালই লোক ডেকে এসব চ্যানেল ডিলিট করে দিবে আর যদি চ্যানেল ডিলিট করা না যায় তাহলে টিভিতে লাইনই থাকার দরকার নেই।”
আশা চৌধুরী অত্যন্ত ঠান্ডা মস্তিস্কে বলে,”আহ অর্ণব এতো চেঁচামেচি করছিস কেনো?আর কার্টুন চ্যানেল থাকলে তোর সমস্যা কি দু’দিন পর এমনিই তোদের বাচ্চা হবে তখন তারাই নাহয় কার্টুন দেখবে।”
বাচ্চার কথা শুনে ইলা যেটুকু জুস মুখে ঢুকিয়ে ছিলো সেটুকুও ফেলে দিয়ে কাঁশতে লাগলো।আর অর্ণব সাথে সাথে বলে উঠে,”হোয়াট?”
“হোয়াট ফোয়াট রাখ তো?তা আমারও কি নাতির মুখ দেখতে ইচ্ছে করে না নাকি?”
অর্ণব এতোই বেশি অবাক হয়েছে যে কথা বলার শক্তি হারিয়েছে।আর এদিকে ইলা এখনও কাঁশতে কাঁশতে মনে মনে বলে,”বাচ্চা তাও এই লোকের?যে কি না সারাক্ষণ ঝগড়াই করে তার দ্বারা বাচ্চা হোয়াট এ মিরাক্কেল কথা?”
ইলা স্থান ত্যাগ করে রুমে চলে যায়।ইলা কাল রাতে এই রুমে ছিলো না আজও থাকবে না তাই এই রুম থেকে ফো৷ চার্জার নিয়ে অন্য রুমে যাবে কাল সারা রাত ফোন টিপে ফোনের চার্জ শেষ তাই চার্জার নিয়ে অন্য রুমে যেতেই যাবে ঠিক তখনই অর্ণব এসে দরজাটা ফট করে বন্ধ করে দরজার সামবে এসে দাঁড়ায়।এবার ইলা বাধ্য হয়েই কথা বলতে শুরু করে,
“এটা কি হলো?আপনি দরজা আটকালেন কেনো?সরুন এখান থেকে আমাকে যেতে দিন।”
“হুম তো যাও তোমাকে আটকিয়েছে কে?”
“আপনার মাথায় কি সাধারণ জ্ঞান টুকুও নেই দরজার সামনে নিজের এমন হাতির মতো শরীর দাঁড় করিয়ে রাখলে আমি যাবো কি করে?”
“দ্যটস ইউর প্রবলেম হোয়াট ক্যান আই ডু?”
“সরুন আমার সামনে থেকে।”
“আমার রুম আমি কোথায় দাড়াবো সেটা আমার ব্যাপার।”
ইলা বিরক্ত হয়ে বলে,”দেখুন অর্ণব আমি আপনার সাথে মজা বাহ ঝগড়া কোন কিছু করার মুডে নেই সরুন সামনে থেকে।”
“ওহহ তাহলে কি রোমেন্সের মুডে আছো।বাই দ্য ওয়ে, তুমি কি মমের কথাটা সিরিয়াললি নিয়ে নিলে নাকি?”
ইলা টিটকানি মেরে বলে,”ওহ রিয়েলি আমি রোমেন্সের মুডে আছি বলে আপনার মনে হয় তাও আবার আপনার সাথে।যে কি না নিজেই একটা নিরামিষ সে আবার বুঝাতে এসেছে আমিষ কি জিনিস।”
অর্ণব ইলার দিকে এক পা এগোতে এগোতে বলে,”বুঝাবো নাকি আমি নিরামিষ নাকি আমিষ?”
বলেই ইলার দিকে আগাতে থাকে।এবার ইলা একটু ঘাবড়ে যায়।ইলা পিছাতে পিছাতে আমতা আমতা করে বলে,”এ’কি আ….আপনি এগোচ্ছেন কেনো?”
অর্ণব নেশাক্ত কন্ঠে বলে,”তুমি পিছাচ্ছো কেন?”
“আপনি এগোচ্ছেন তাই।”
“তো তুমি পিছাচ্ছো তাই আমি এগোচ্ছি।”
“এ…এটা কি..কিন্তু উল্টো লজিক অর্ণব।”
বলেই ইলা খাটের সাথে বাড়ি খেয়ে বসে পড়ে।অর্ণব ইলার দু’পাশে হাত রেখে মাথাটা ঝুকিয়ে বলে,”তাহলে সোজা লজিক তুমিই বুঝিয়ে দেও।”
“আ….আমি জানি না।”
অর্ণব ইলার আরেকটু কাছে এসে বলে,”কেনো জানো না।”
ইলা আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়।অর্ণব ইলার অনেকটাই কাছে চলে এসেছে অর্ণবের নিশ্বাস ইলার চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে।ইলার এমন ভয়ার্ত মুখ দেখে অর্ণব একটু হেসে ইলার কানে কানে বলে,
“আমার চয়েজ এতোটাও খারাপ না যে তোমায় কিস করার কথা ভাববো?”
ইলা কথাটা শোনা মাত্রই চোখ খুলে অর্ণবের দিকে অবাক আর রাগী দৃষ্টিতে তাকায়।অর্ণব সেই তাকানি উপেক্ষা করে ইলার হাত থেকে চার্জার নিয়ে চলে যেতে থাকে ইলা রেগে বলতে থাকে,”অর্ণব আমার চার্জার দিন, অর্ণব।”
বলতে বলতে ইলা দরজার কাছে আগাতে অর্ণব বেরিয়ে ইলার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেয় যার দরুন ইলা নাকে সামান্য একটু ব্যাথা পায়।ইলা রাগে গজগজ করতে করতে বলতে থাকে,
“উহুউউউ লেজকাটা হনুমান একটা।”
_________________________
টানা এক সপ্তাহ ধরে সীমান্ত মেঘাকে ফোন দিয়ে জ্বালাচ্ছে।আজও তার ব্যতিক্রম নয়।সীমান্ত ফোন দেওয়া মাত্রই মেঘা ফোন রিসিভ করে বলে,
“হে সীমান্ত বলুন।”
“বাহ নাম্বারটা সেভও করে রেখেছেন।”
“না রেখে বুঝি উপায় আছে রোজ একই সময়ে একই নাম্বার থেকে আমাকে কল দিন।তা আমাকে কল দিয়ে আপনার লাভটা কি হয় শুনি?”
সীমান্ত ভাবুক গলায় বলে,”লাভ তো অনেক হয় কিন্তু তা প্রকাশ করা যাবে না তাহলে হয়তো পাখি উড়ে যাবে।”
মেঘা অবুঝ মনে বলে,”পাখি কে পাখি?”
“সে আপনি বুঝবেন না এসব কবিরাই বুঝে।”
“বাব্বাহ ব্যবসা ছেড়ে বুঝি কবি হয়ে গেলেন নাকি?”
“হয়তো।তা আপনি কি একটু বেলকনিতে আসতে পারবেন।”
মেঘা স্ট্রেট বলে দেয়,”একদম না।আমি রোজ বেলকুনিতে যাই কিন্তু কই আপনাকে তো দেখি না।তো আজ আমি আর বেলকুনিতে যাবো না।”
“আজ দেখতে পারবেন প্লিজ আসুন।”
“সত্যি তো?”
“তিন সত্যি।”
মেঘা বেলকুনিতে গেলেই সীমান্তকে দেখতে পায়।সীমান্ত আকাশী কালারের একটা শার্ট আর একগুচ্ছ গোলাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মেঘা সীমান্তকে প্রশ্ন করে,”হাতে গোলাপ যে?কাউকে দিবেন বুঝি?”
“হুম খুব প্রিয় একজনকে।”
“ওহ তাই নাকি তাহলে এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?যান আপনার প্রিয় মানুষটির কাছে যান।”
“হুম যাবোই তো কিন্তু আজ নয়।”
“কবে?”
“যেদিন সে নিজ ইচ্ছায় আমার থেকে গোলাপ গুলো নিবে সেদিন।”
মেঘা অবুঝ মনে আবারও প্রশ্ন করে,”সে কি আদোও জানে তার জন্য গোলাপ এনেছেন?”
“হুম জানে কিন্তু সেটা উল্টো। সে জানে এই গোলাপ গুলো অন্য কারোর জন্য তার জন্য নাহ তাই সে নিচ্ছে না।আচ্ছা তাকে কি করে বুঝাই বলুন তো যে এই গোলাপগুলো আসলে তার জন্য।”
“তাকে সরাসরি বলে দিন তাহলেই তো হবে।”
সীমান্ত মুচকি হেসে বলে,”তাহলে নিচে এসে তুমি গোলাপগুলো নিয়ে যাও।”
এতোক্ষণে সীমান্তের হেয়ালি মেঘা বুঝতে পারে।মেঘা ফোনটা হাতে নিয়ে গম্ভীর মুখ করে ঘরের ভিতর ঢুকে যায়।বেশ অনেকক্ষণ হয়ে যায় কিন্তু মেঘার আর হদিস পায় না এয়ে সীমান্ত অনেক হতাস হয়।সীমান্ত হতাস হয়ে সেখান থেকে চলে যায়।
#চলবে